অচেনা শহর পর্ব এক্সট্রা

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–(বোনাস পর্ব)

আতিক চৌধুরী কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে চোখ বন্ধ করে নিজের ইজি চেয়ারে বসে আছে। সে এতটা শান্তভাবে কখনোই বাসায় বসে থাকার মানুষ না। কিন্তু আজকে বসে আছে। আর বসে থাকবে না কেন তার একমাত্র ছেলে নিখোঁজ? এক সপ্তাহ যাবত যে তার ছেলের খোঁজ পাচ্ছে না।
এদিকে তামান্না বেগম বিছানার কোনে বসে হু হু করে কেঁদে যাচ্ছে। স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
কোথায় আছে কে জানে এক সপ্তাহ আগে তার বন্ধুর থেকে জানতে পেরেছে আদ্র বাংলাদেশে এসেছে খুব হন্তদন্ত হয়ে। সবাই জিগ্গেস করেছে কিন্তু কিছুই বলেনি আমার বন্ধু যখন তাকে থামাতে পারলো না আমাকে জানাতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি তার ছেলে জায়েন এর জন্য সে আমার আদ্রকে বাংলাদেশ এ আসতে সাহায্য করেছে। তার মানে ওই জানে আদ্র কোথায় আছে কিন্তু ওকেই আমি পাব কোথায় সে নিজেও তো আদ্রর সাথে বাংলাদেশের এসেছে।শুনেছি জায়েনের বাংলাদেশ এ আশার ইচ্ছে আগে থেকেই এতো দিন ধরে ওইখানে ছিলো তবুও তার দেশের প্রতি টান। আর এদিকে আমার লোক মিলে ওদের খুঁজে হয়রান হচ্ছে পাচ্ছে না। কোথায় ঘাপটি মেরে আছে কে জানে? এদিকে মাইশা মেয়েটা জ্বালিয়ে খাচ্ছে সে বিদেশে গিয়ে আটকে গেছে তার পাসপোর্ট হারিয়ে এখন দেশে ফিরতে পারছে না।কোন দিকে যাব।

ওগো তুমি আমার আদ্রকে খুঁজে দাও। কোথায় গেল আমার আদ্র ও নিশ্চিত জেনে গেছে আমি স্নেহা কে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। আর তাই জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে না বিদেশ থেকে এভাবে চলে এসেছে। কোথায় আছে আমার ছেলে ওর খুব অভিমান? যদি বিপদ আপদ কিছু হয় তোমার তো শত্রুর অভাব নাই।

বলে হু হু করে কেঁদে উঠলো। আতিক চৌধুরী বিরক্ত হয়ে তাকালো স্ত্রীর দিকে। তারপর থমথম মুখে বলল,

সরো তো এখান থেকে। কানের কাছে ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদবে না বিরক্ত লাগছে। আমাকে কিছু ভাবতে দাও।

তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে আমার ছেলের জন্য কষ্ট হচ্ছে না বুঝি আমি কাঁদবো না।

তো কাঁদো আমার মাথা খাচ্ছ কেন?রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে কাঁদো।

স্বামীর দিকে রেগে তাকিয়ে বেরিয়ে এলেন তামান্না বেগম।স্নেহার ওপর তার স্ত্রী রাগের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে এই মেয়েটার জন্য আমার ছেলে আমার থেকে একদম দূরে চলে গেল। এতকিছু করে মেয়েটাকে তারলাম বাসায় থেকে এখন কিনা আমার ছেলে নিরুদ্দেশ।কোথায় আছে আমার ছেলে কে জানে মেয়েটা আমার ছেলেটাকে সত্যি বশ করে ফেলেছে মায়ের সাথে কি বলেছিল? ওই তো বলেছিল ওই মেয়েটা কোনদিন মা হতে পারবেনা। ওমন একটা মেয়েকে কী আমি আমার বাড়ির বউ রাখবো যে আমার বংশধর দিতে পারবে না।
তার উপর মেয়েটার চরিত্রের দোষ আছে তা আমাকে মাইশা দেখিয়েছে। গরীব মেয়ে আপন বলতে কেউ নাই তাই টাকার জন্য হাজার ছেলের সাথে তার সম্পর্ক আছে।

সোফায় এসে কাঁদতে লাগলো তখন আশা এসে বসলো মার কাছে।
নিজের মায়ের কান্না দেখে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বকতে বকতে ওঠে নিজের রুমে চলে গেল। মায়ের এমন কান্না দেখলে বিরক্ত লাগে ওর। এই সব কিছু হয়েছে আম্মুর জন্য ভাবিকে যদি বাসা থেকে বের করে না দিত তাহলে এসব কিছুই হতো না।
নিজের রুমে এসে আবার ব‌ইয়ে মুখ গুজলো।আশা এবার এইচএসসি দিবে। পড়ার প্রতি খুবই সিরিয়াস পড়া ছাড়া আর কোন দিকে তাকায় না। চোখের চশমাটা ঠিক করে লাগিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে পরতে লাগলো।কিন্তু পারাটা মাথা ভালোমতো মাথাতে ঢোকাতে পারছেনা ভাইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে কিন্তু আশা জানে ওর ভাই একদম ঠিক আছে কিন্তু তবুও চিন্তা হয়।
__________

অফিসে ঢুকতে সবার সামনে মুহিত এসে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে এক পা পিছিয়ে গেলাম মুহিতের এমন কাজে। বিস্মিত হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি।

আমি চমকে উঠে বললাম,,
কি করছেন এসব? আমার পা কেন ধরেছেন?

মুহিত আমার পা ধরতে না পেরে নিচে বসেই বলল,,
স্নেহা আমাকে ক্ষমা করে দাও। কালকে তোমার সাথে ওরকম বিহেভ করার জন্য।

আমি অবাক হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছি,,
কালকে অমন ব্যবহারের পর আমি সারারাত ডেবেছি। অফিসে কিভাবে আসবো? মুহিতের মতো লম্পট ছেলের সামনে কিভাবে যাবো ওর মুখ দেখলে আমার ঘেন্না হয়। ছেলেটাকে প্রথম থেকে আমরা খারাপ লেগেছিল আর আমি তো সিওর হয়ে গেলাম।
কিন্তু আজকে কি এমন হল যে একদিনে এতটা পরিবর্তন। আর অবস্থায় বা এরকম কেন শরীরে ব্যান্ডেজ মাথায় বিশেষ করে হাতের অবস্থা খারাপ ওই ব্যথা হাত নিয়ে আমার পা ধরে ছিল। চোখেমুখে ভয়ের আবাস আকুতি-মিনতি করছে আমার কাছে ক্ষমা পাওয়ার জন্য।

প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।সরি সরি তোমাকে আর কোনদিন আমি তুমি করে বলবো না প্লিজ স্নেহা ম্যাডাম আমাকে ক্ষমা করে দিন।আপনার সাথে যা করেছি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিন।

আমি মুহিত কে বললাম,,

আপনি উঠে দাঁড়ান এইভাবে অফিসের সবার সামনে বসে না থেকে সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে।

মুহিত আমার কথা শুনে সবার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো,
মাথা নিচু করে রইল।

একদিনে এতটা পরিবর্তন কিভাবে?
ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে বললাম।

প্লিজ বোন ক্ষমা করে দিন। না হলে ওরা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে।
হাতজোড় করে বলল।

মেরে ফেলার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। অবাক হয়ে বললাম,,

কি বললেন আপনি? কছ আপনাকে মেরে ফেলবো আর আপনার এই অবস্থা কে করেছে?

মুহিত আমার দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বলল,,
সেসব আমি কিছু জানি না।শুধু এটুকুই জানি কালকে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ আমাকে চোখ হাত-পা বেঁধে কোথায় যেন নিয়ে যায়। তারপর প্রচুর মারে। আর বলে তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে। তুমি ক্ষমা না করলে নাকি আমাকে জানে মেরে ফেলবে।

স্তব্ধ হয়ে মুহিতের কথা শুনলাম। এমন থ্রেট কে দিল মুহিতকে। ক্ষমা করে দিলাম মুহিতকে
আর তাছাড়া মুহিত এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। অন্যায় করেছিল আর তার শাস্তি পেয়েছে যার দ্বারা এই হোক। তাই আমি চাইনা আমার জন্য ও প্রাণহারাক।
দুশ্চিন্তা নিয়ে কাজ করছি আসলে কাজ করতে পারছি না। এই সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

বিকেলে হন্তদন্ত বুশরা আপু আমার কেবিনে এলো,
এইসময় আপুকে আমার কেবিনে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম,,
আরে আপু কিছু বলবে এতো হাপাচ্ছো কেন?

স্নেহা তাড়াতাড়ি সাত তলায় যাও।

কেন কী হয়েছে আপু? বিশ্মিত হয়ে বললাম।

আপু উত্তেজিত হয়ে বলল,, আমি জানিনা হঠাৎ করে আজকে বস বলল তোমার সাথে নাকি দেখা করবো তোমাকে যেন তারাতারি তার কেবিনে পাঠায়।

কিন্তু কেন আপু আমি কি কিছু ভুল করেছি।

আপু বললো,,
সেসব কিছুই আমি জানিনা স্নেহা তুমি স্যারের কেবিনে যাও ইমিডিয়েটলি। স্যার কেমন চিৎকার করে ধমক দিয়ে আমাকে বলল রেগে আছে বোধহয় কেন আমি কিছুই জানিনা। তুমি যাও।

স্যারে রেগে আছে।(ভয়ার্ত মুখ করে বললাম।) তাহলে আমি একা কি করে যাব তুমি আমার সাথে চালাও প্লিজ।

ইম্পসিবল স্নেহা আজকে আমি যেতে পারবো না আর স্যার তোমাকে একা যেতে বলেছে।

আমি কিভাবে,,

না প্লিজ যাও অমান্য করো না। চল আমি তোমাকে সাত তলায় স্যারের কেবিন পর্যন্ত এগিয়ে দিচ্ছি।

আপু আমার হাত ধরে টেনে লিফটে উঠলো।
আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে নিফটে মাঝে দাঁড়িয়ে আছি।
কথা বলতে চাইছে আপু আমাকে কথা বলতে বারণ করছে তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
তার ও নাকি খুব চিন্তা হচ্ছে।
আপুর চিন্তা হচ্ছে তার মুখে বলে দিচ্ছে তার মুখে চিন্তার আবাস আমার জন্য আপু তোমাকে ভালোবাসে তার চিন্তা আছে কিন্তু তিনি নিরুপায়।
কেবিন ফর্যন্ত দিয়ে চলে গেল সাহস দিয়ে যেন ভয় না পায় দরজা খোলাই আমি ভয়ে ভয়ে হাত মুচড়াতে মুচড়াতে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। নক করার কথা আমার মনে নেই। ভেতরে ঢুকে দেখলাম একটা লোক কপালে হাত থেকে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে তার মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না
আমি ভীতু মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি ভুল করলাম আমার শুধু একটা কথাই মনে পড়ছে তা হলো এক সপ্তা ধরে আমি বেশি চিন্তা মাথায় কাজ হয়তো ভুল করেছি আর তাই স্যার হয়তো আমার উপর রেগে আছে।

চাকরি থেকে আমাকে বের করে দিবে না তো। আমি যে দাঁড়িয়ে আছি স্যারের সেদিকে খেয়াল‌‌ই নাই। এদিকে আমি ভয়ে তাকে ডাকতেও পারছিনা। তবুও ভয়ে কাপা কাপা গলায় বললাম,,
স্যা–র

আমার ডাক শুনে চমকে মুখ থেকে হাত শরীরে আমার দিকে তাকালো আমি পিটপিট করে তাকিয়ে আছি তার দিকে মুখটা স্পষ্ট হতে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। বিষ্ময়ে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে। সামনের লোকটাকে
দেখে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম।আমার চোখ দুটো জ্বলে উঠলো টপটপ করে পারি মতো লাগলো শেষে কিনা তার মুখোমুখি হতেই হল। প্রায় তিন বছর পর তাকে দেখলাম। হ্যাঁ সে আর কেউ না আমার নিজের ভাই যে আমার সামনে এখন সুট বুট পড়ে অফিসের বস হয়ে আমার সামনে বসে আছে। আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে হয়তো আমাকে আশা করিনি। আমি তাড়াতাড়ি পিছন ঘুরে গেলাম তার মানে ভাই আমার অফিসের বস। আর এতদিন আমি ভাইয়ের অফিসে জব করেছি। এত বড়লোক হয়ে গেছে ভাইয়া আগে থেকে কত হ্যান্ডসাম হয়েছে কে বলবে এই লোকটা বিবাহিত কত সুখে আছে।
এইসব সুখের মূলে আছে টাকা। যেসব আমার ভাইকে দিয়েছে রাজা বানিয়ে রেখেছে। পেছন থেকে আমাকে দেখেও উঠল,,

স্নেহা দাড়া কোথায় যাচ্ছিস আমাকে চিনতে পারিস নি?

বলে ছুটে এসে দারালো আমার সামনে।

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তারপর বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে মুখে হাসি এনে বললাম,,

সরি স্যার আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি।আসলে কি বলেন তো আপনি এত ধনী হয়েছে গিয়েছেন তবু আপনার মুখটা একি রকম রয়ে গেছে।

আমি চিনেছি সেটা যেন ভাইয়া শুনে খুশি হয়েছে তার মুখ উজ্জ্বল লাগছে। সাথে অন্ধকার দেখছি। সেটা কেন বুঝলাম না,

স্নেহা তুই আমাকে আপনি আপনি করে বলতেছিস কেন আর স্যার বলছিস কেন আমি তোর ভাই?

সরি স্যার আমার কোন ভাই নাই। আপনি ভুল করছেন।

কি সব বলছিস? আমি জানি তুই এখন আমার উপর রেগে আছিস?কিন্তু বিশ্বাস কর তাদের আমি খুব ভালোবাসি কিন্তু একটা ভুল বুঝা বুঝির জন্য কি সব হয়ে গেল? এতটা রেগে থাকিস না আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি তো। আমার ভুল হয়েছে ক্ষমা করে দে ।আর তুই এত কষ্ট করে সব কেন করছিস তুই আমার সাথে চল বাবাকে নিয়ে তোর আর বাবার দায়িত্ব আমার।

বাবার কথা’ ভাইয়ের মুখে শুনে তাকালাম ভাই কি জানে না বাবা আর নাই। হঠাৎই নিজের মনে নিজেকে ধিক্কার দিলাম। ও জানবে কি করে ওকে আমাদের খোঁজ খবর নেয় নাকি।মনে পড়লো ও তো বাবার সম্পত্তি নিতে চাইছিলো।শেষ সম্বল বাবার বাড়ি এত বড় বিজনেস এর মালিক হয়েছে তাও সেই টুকো কেন নিতে চেয়েছিল।
আজকে সেই প্রশ্নটা আমি করবই,

আপনার তো এখন অনেক টাকা পয়সা তাহলেই গ্রামের ওই একটুখানি জায়গা নেওয়ার জন্য এত পাগল হয়েছিলেন কেন?
খানিকটা রাগ নিয়ে বললাম।

ভাই আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে যেন আমার কথা বুঝতে পারছ না,

গ্রামের কীসের জায়গা?

গ্রামের কীসের জায়গা জানেন না আমার বাবার বাড়ি।

কি বলছিস সেটা আমি কেন নিতে চাইবো?

ভাইয়ার কথা শুনে আমি শকড হলাম।
ভাইয়া নিতে চায় নাই মানে,
মিথ্যে বলছেন কেন আপনি তো নিতে চেয়েছেন কিছুদিন আগে আমাদের হন্যে হয়ে খুঁজেছেন?

তোদের খুঁজেছি ঠিক আছে কিন্তু বাড়ি নেওয়ার জন্য না তাদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য।আর দেখতেই তো পাচ্ছিস আমার এখন অনেক আছে আমি গ্রামের একটুখানি জায়গা নিয়ে কি করব?আর আমি এখানে এসে আমার ভুল কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছি কিন্তু তোরা তো আমাকে কম শাস্তি দিস নি। কিন্তু যতই হোক তুইতো আমার বোন তোর জন্য আমার কষ্ট হয় বাবার এই অবস্থা তাই আমি তাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য গ্রামে গিয়ে তাদের খুঁজেছি কিন্তু তোরা তো শুনলাম এখানে আসছিস কিন্তু এখানে তো তোদের পেলাম না ঢাকা শহর তো আর কম বড় না। খোজা বড় দায়। আজকে তোকে আমি সিসিটিভিতে আমার অফিসে দেখে তো অবাক। আমাকে ক্ষমা করে দে আর চল আমার সাথে।
বলে ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরল। ভাইয়া চোখেও পানি টলমল করছে।

আমি ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ইমোশনাল হয়ে পড়লাম, আর বললাম বারবার বাবার কথা বলছিস কেন আমি বাবাকে কোথায় পাবো?

আমার কথা শুনে ভাইয়া হবে হকচকিয়ে গেল,
বাবাকে পাবি কোথায় মানে কি বাবা তো তোর সাথে?

ছিল এখন নেই?

ভাই আমার দু কাধ ধরে বলল,,
যেসব কি বলছিস এখন নাই মানে।

আমি ভাইয়া কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম নিজের থেকে,
তারপর উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বললাম,,
বাবার নাই মানে বাবা আর আমাদের মাঝে নাই বাবা আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। যেখানে গেলে আর কেউ ফিরে আসে না।আমাকে একা করে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেছে এতিম করে দিয়েছে
আর এসব কিছুর জন্য দায়ী তুই তোর জন্য আমি এতিম হয়েছি বাবা মাকে হারিয়েছি। আর এখন বলছিস তুই আমাদের দায়িত্ব নিবি।সব সময় তুই বকিছু শেষ করে ধ্বংস করে তারপরে আসিস ক্ষমা চাইতে দায়িত্ব নিতে। কোন কিছুই তোর হাতের কাছে থাকতে তুই সেটার মর্যাদা বুঝিস না হারিয়ে যাওয়ার পর তুই আসিস তোর ক্ষমা কান্না এইসব নিয়ে। এখন এসএসএস বাবার খোঁজ করতে কিছুদিন আগে তুই গ্রামের বাড়িটা নেওয়ার জন্য আমাদের হন্যে হয়ে খুঁজছি না আমি সেইটা নিয়ে কতটা আপসেট ছিলাম জানিস। তুই আমাদের ছেড়ে দূরে ছিলি তাও তোর আতঙ্কে আমরা ভয়ে থেকেছি। কোন সময় তুই আমাদের আতঙ্কের বাইরে ছিলিনা।কি বলছিলে ক্ষমা করে দেব কক্ষনো না কোনদিন আমি তোমাকে ক্ষমা করব না। আমি তোর মুখটা দেখতে চাই না আমার যে ভাই আছে তাকে আমি মৃত বলে জানি।আমি একা আমার কেউ নেই আমার বাবা-মা ছিল যখন আমায় ছেড়ে আকাশের তারা হয়ে গেছে এখন এই পৃথিবীতে আমি আর আমার হাজবেন্ড ছাড়া আমার আপন বলতে আর কেউ নেই।

ভাই আমাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে ভাইয়া চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
আমি ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। কান্না দলা পাকিয়ে আসছে লিফটের ভিতর ঢুকে মুখে হাত দিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
কাঁদতে কাঁদতে ওইখানেই বসে পরলাম।
#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–(সারপ্রাইজ পাট)

আপন মানুষের থেকে পাওয়া আঘাত গুলো সহজে ভোলা যায় না অন্তরে সেই ক্ষত নিয়ে সব সময় বয়ে বেড়াতে হয়। না সহ্য করা যায়। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছি। কতদিন পর ভাইয়াকে চোখের সামনে দেখলাম। কত রাগ পুষে রেখে ছিলাম ভাইয়ার জন্য কিন্তু এখন কোন রাগ হচ্ছে না শুধু কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়ার চোখে জল ছিল কেন?ভাইয়ারে অসহায় দুঃখী দুঃখী মুখটা দেখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মন চাইছে ছিল দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলি। কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলি ভাইয়া একবারও কি আমাদের জন্য তোর মন খারাপ হয়নি আমাদেরকে মিস করিস নি।

তুই খুব বেহায়া স্নেহা খুব বেহায়া। এতকিছুর পরও কি সব ভাবছিস? চতুর্থ পিয়টে নামতেই মনে ছিল না একদম নিচ তলায় চলে এসেছি। দেয়ালে হাত রেখে দুর্বল পায়ের লিফটের বাইরে এসে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করছে না সারা শরীর অসার হয়ে আসছে। এই অফিসে আর এক সেকেন্ড আমি থাকবো না। এখানে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না আমি বারবার ঐ মানুষটার মুখোমুখি হতে পারব না। বারবার নিজের ইমোশনাল লুকাতে পারবেনা।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এখন এমনিতেও অফিস ছুটি দিয়ে দেবে। আমি ধীর পায়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম।
আর কখনো কোনদিন এই অফিসে আসবেনা। গেটের বাইরে সে সাত তলায় তাকালাম আমি নিচে থেকে সাততলায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ভাইয়া সেখানকার জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে-মুখে অসহায়ত্ব। আমি চোখ নামিয়ে হাঁটা দিলাম অজানা পথে। একটা পার্স নিয়ে এসেছিলাম সেখানে 50 টাকা ছিল বোধহয়। ওইটা আনার জন্য আর যায় নাই ওইটা পরে কেবিনেই রয়ে গেছে।
আবসা অন্ধকারে রাস্তায় একা হেটে চলেছি চোখ একটু পরপরই ঝাপসা হয়ে আসছে আর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিচ্ছি। বারবার ভাইয়ার মুখটা ভেসে চোখের সামনে।নানান কথা ভাবতে ভাবতে কখন অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। গাড়ি হর্ন শুনে আমার সম্মতি ফিরল। ভালো করে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে একটা মাইক্রো গাড়ি আসছে বারবার হন বাজিয়ে যাচ্ছে আমাকে সরার জন্য।আমার থেকে কিছুটা দূরে আছে তবু আমি সরতে পারছিনা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভয়ে আমার হাত পা কাপছে সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে একটু শক্তি পাচ্ছি না শরীরে যে শক্তি টুকুর দিয়ে আমি সরে যেতে পারবো।

আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি এখন কি তাহলে এই গাড়ির তলে পরে নিজের সমাপ্ত হবে কিন্তু আমি তো মরতে চাইনা আমি মরে গেলে আদ্রর কি হবে? গাড়ির আওয়াজ তীব্র হচ্ছে তারমানে কাছে চলে এসেছে আমি থরথর করে কাঁপছি চোখ বন্ধ করে।
এমন সময় কেউ একজন আমার বাহু শক্ত করে ধরে হেঁচকা টানে রাস্তায় কোনে নিয়ে আসে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমি এখন ও চোখ বন্ধ করে তার বুকের সাথে লেপ্টে আছি। ভয়ে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। আস্তে আস্তে আমার ভয় কাটে আর বুঝতে পারি কারো বাহুডরে আবদ্ধ হয়ে আছি। বুঝতে পেরেই চমকে উঠি কে আমাকে এইভাবে জরিয়ে ধরে আছে। অদ্ভুত তার হার্টবিট ও শব্দ করে লাফাচ্ছে। আমি সরে আসতে চাইছি কিন্তু পারছি না এমন ভাবে ধরছে যেন ছারলেই হারিয়ে যাব।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আমি তার থেকে ছুটতে চাইছি। অদ্ভুত তার স্পর্শ আমার পরিচিত লাগছে।যেন এই স্পর্শ আমার চেনা কিন্তু কীভাবে? আমি ছুটার জন্য ছটফট করছি অনেকক্ষন সে ছারছেই না। অবশেষে সে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি আগুন্তক এর মুখ দেখার জন্য তার দিকে তাকাতেই সে আমার গলা চেপে ধরে শক্ত করে আচমকা আক্রমনে আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে যায়। গলা শক্ত করে ধরায় আমার দম বন্ধ হ‌ওয়ার উপক্রম।
আমি নিজের হাত বারিয়ে তার হাত চালাতে চাইছি আর মনে মনে ভাবছি লোকটা কি আমাকে মেরে ফেলতে এসেছে । আমি ভয়ে ভয়ে মাথা উঁচু করে পিটপিট করে সামনের লোকটার দিকে তাকায়।
আবসা অন্ধকারে তার মুখ হালকা বুঝা যাচ্ছে।
তা দেখেই আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে। তার মুখটা চেনা মুখ শুধু চেনা নয় আমার সব চেয়ে আপন মানুষ তাকে এভাবে দেখে আমি থমকে যাই। আমার হাত নিচে পরে যায়।চোখে জল ভড়ে আসে। আমি কি ঠিক দেখছি নাকি ভুল। এসব কিভাবে সম্ভব। হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি চোখ ছলছল করছে। আমাদের পেছনে কোন গাড়ি যাচ্ছে বোধহয় যার আলো এসে সামনের লোকটার দিকে পরতেই আমি স্পষ্ট তার মুখ দেখতে পাই সে রাগে লাল হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে তার চোখ দুটোও লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আমার তাদের বিন্দু মাত্র কষ্ট নেই আছে শুধু আনন্দ ‌ খুশিতে আমি আত্মহারা হয়ে যাচ্ছি এটা আদ্র কিন্তু কিভাবে আসলো ওই তো।
আমি জরানো কন্ঠে বললাম,,

“আদ্র আপনি…

আর বলতে পারলাম না আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আর পারছি না আদ্র আমাকে ছেড়ে দেয় এবার।
আমি গলা ধরে কেঁশে উঠি।

“হুম আমি। তোর সাহস হলো কি করে এতো বড় ডিসিশন নেওয়ার।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

আমি কথা বলতে পারছি না। আদ্র বুঝতে পেরে কাউকে চিৎকার করে বললো,
“গাড়ি নিয়ে এদিকে আয়।”

বলেই আমার কাছে এসে আমাকে পাঁজাকোলা তোলা নিলো আমি চমকে উঠলাম আর হাত বাড়িয়ে উনার গলা জরিয়ে ধরলাম। আদ্রর দিকে তাকালাম সত্যি উনি কিভাবে আসলো এতো তাড়াতাড়ি আমি স্তব্ধ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি তাকাচ্ছে না সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।আমি চোখের পলক ফেলছি না হা করে তাকিয়ে আছি কতোদিন পর দেখছি উনাকে।
তীব্র আলো চোখের পরতে সেদিকে তাকালাম একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে এসে থামলো ও ভেতরে থেকে একটা ছেলে নেমে এলো।
আমাদের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আদ্র ইশারায় গাড়ির দরজা খুলতে বললো ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলে দিল।আদ্র আমাকে নিয়ে ভেতরে বসে পানির বোতল দিল।
আমি পানি পেয়ে গপগপ করে কিছুটা খেয়ে নিলাম।এখন ভালো লাগছে।

ওই ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল,
“ব্রো ফাইনালি ধরা দিলে। আর আমাকে একটা সিনেমার দৃশ্য ও দেখালে।ও মাই গড কি….

আদ্র ধমকের সুরে বললো,,
“স্টপ। গাড়ি চালা তাড়াতাড়ি।

ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
হাই ভাবি, ইউ লুকিং সো বিউটিফুল।
বলেই একটা হাসি দিল।

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।আদ্র রেগে তাকাতেই,
“যাচ্ছি একটু কথাও বলতে দিবিনা‌।

মন খারাপ করে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।আর ড্রাইভ করতে লাগলো আমি আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।আমার চোখে বিষ্ময় ভড়া হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন করতে পারছি না আদ্র সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আর গাড়ি চলতেছে একটু পর পর সামনের ছেলেটা পেছনে তাকাচ্ছে আর আদ্রর কড়া চাহনি দেখে আবার সামনে তাকাচ্ছে। আদ্র মাথা পেছনে নিয়ে সিটে রাখলো আর চোখ বন্ধ করলো। মনে হচ্ছে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
আমি কাঁপা হাত আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দিলাম আদ্রর দিকে আবার নিয়ে এলাম ভয় পাচ্ছি।
কি করবো কি করবো ভেবে আস্তে আস্তে আমি এগিয়ে গেলাম আদ্রর দিকে আর নিজের মাথা রাখলাম আদ্রর বুকে তার পর শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।আর মৃদু কন্ঠে বললাম,

“আই মিস ইউ আদ্র। আমি আপনাকে অনেক মিস করেছি।আপনি কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি আসলেন কিছু বুঝতে পারছি না।

আমি আদ্রর বুকে মাথা রেখে কথা বলে চলেছি আদ্র চোখ খুলে আমার কাঁধ ধরে নিজের থেকে ছারিয়ে নিলো।
আমি অবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম।

আদ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ডোন্ট টাচ মি। চুপচাপ দূরে সরে বসে থাক।

আমি হতদম্ব হয়ে আদ্র দিকে তাকিয়ে আছি।
এমন সময় আবার সামনের ছেলেটা আমাদের দিকে তাকালো। আদ্র তার দিকে তাকিয়ে বলল,

আর একবার এ দিকে তাকালে কিন্তু তোকে.

আমি কিছু দেখি নি ব্রো।তোমরা রোমান্স করতে পারো।

বলেই শয়তানি হাসি দিয়ে সামনে তাকালো।
আদ্র রেগে ছেলের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“মরার খুব শখ তাই না।

আদ্রর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।মরার শখ মানে। আমার ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি‌।

“একদম অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকবে না।
মরতে চাইলে আমাকে বলো গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। কাজ শেষ।

বলেই আদ্র আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার পেছনের দরজা খুলতে চাইলো।আমি চমকে উঠলাম।
আমি সামনে এগিয়ে এসে দুহাতে আদ্রর বুক জরিয়ে ধরলাম।

~~চলবে~~

(৮ পার্ট এর পর বোনাস পর্ব দিয়েছি। ৯ দেয় নি। আগামী পর্বে দেখেছি অনেকে লিখেছেন ৯ পর্ব কোথায় তাদের বলছি ৯ পর্ব এখন ও দেওয়া হয় নাই‌। ধন্যবাদ)
~~চলবে~~

আজকে পর্বটা কিন্তু অনেক বড় দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here