অচেনা শহর পর্ব ৫

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[৫]

চোখ বন্ধ করতেই গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়লো। আমি কথা বলতে পারছি না গলায় যেন সমস্ত কথা আটকে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে আদ্রকে আমি এসব বলবো না।
ও তাহলে এক সেকেন্ড ও ওইখানে থাকবে না। বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিজের গাল মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আদ্র ও পাশে চুপ করে আছে আমিও চুপ করে আছি দুজনে নিশ্চুপ। দুজন দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনছি।

“আপনি ঠিকভাবে পৌঁছেছেন তো?”

অপর পাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা গভীর নিঃশ্বাসে শব্দ পাচ্ছি শুধু। আমি কান খাড়া করে উৎসুক হয়ে আছি আর আদ্রর আওয়াজের।
ফট করে কোন সাড়াশব্দ আসছে না নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি না। ফোন কানে থেকে নামিয়ে দেখি ফোন কেটে দিয়েছে। আমি ছল ছল ছল চোখে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছি।

আদ্র আবার আমাকে ভুল বুঝলো। আবার আপনি ভুল বুঝলেন তো আমাকে। আপনাটে এখন আমার খুব দরকার ছিল আপনি এখন আমার কাছে থাকলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আপনার বুকে মাথা দিতে একটু শান্তিতে কাদতাম। আমার যে এভাবে নিঃসঙ্গ ভালো লাগছেনা। খুব মিস করছি আপনাকে। সত্যি বলেছিলেন আপনি চলে গেলে আমার আপনাকে দরকার হবে খুব কাছে পাওয়ার জন্য ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাবে। ভরসার একজন মানুষকে খুব করে চাইছি যার বুকে মাথা রেখে শান্তি নিঃশ্বাস ফেলতে পারব।

কিন্তু পারছিনা সেই আপনি তো আমাকে ছেড়ে বহুদুরে পড়ে আছেন।এজন্য আমি দায়ী আমি যদি আপনাকে যাওয়ার জন্য জোর না করতাম আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যেতেন না। আমি নিজের কপার নিজেই খেয়েছি এখন আমাকে নিজের এই দুর্দশা সহ্য করতেই হবে।

ফোনটা বুকের মধ্যে চেপে ধরে চোখের অশ্রু ফেলছি। এত তাড়াতাড়ি ফোনটা না কাটলেও পারতেন। আপনি খুব কষ্ট পেয়েছেন আমি জানি। আমি শুধু আপনাকে কষ্ট দিলাম সুখ দিতে পারলাম না। আই প্রমিজ আপনি ফিরে আসার পর আমি আর আপনাকে কষ্ট দেবনা।
আপনি যা চাইবেন তাই হবে।

________

আদ্র লন্ডনে এসে পৌঁছেছে চারটার দিকে। এয়ারপোর্টে গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিল মিস্টার ইশতিয়াক হোসেন। যিনি বাংলাদেশী কিন্তু 10 বছর ধরে লন্ডন আছে। যার সাথে আব্বুর বন্ধুত্ব অনেক দিনের দেশে থাকাকালীন থেকে। তো আমি এখানে আসছি শুনে তিনি আব্বুকে অফার করে তার বাসায় যেন আমি থাকি দু বছর। এতে আব্বু খুশি হয়ে রাজি হয়ে যায়। তার পরিচিত বন্ধুর কাছে আমি থাকবো এতে হ্যাপি হ‌ওয়ারি কথা।
উনার সাথে ওনার বাসায় আসলাম নিজস্ব বাসা করেছে এটা নিজেরই অবস্থা ভালোই আছো অনেকদিন ধরে এখানে আছে ভালো মানের ব্যবসা করে।
ওনার দুইটা ছেলে আমার বয়স একজন আর একজন বড়। যিনি একজন খৃষ্টান মেয়েকে বিয়ে করেছে।লাবমেরিজ তারা মেনে নেয়নি তাই ছেলে এখন তাদের থেকে আলাদা থাকে। আরেকজন জাইন।
কার সাথে আমি রুম শেয়ার করতে পারিনা এ জন্য আমি আলাদা রুম নিলাম।
জাইনের সাথে থাকার কথা বলেছিল কিন্তু মানা করে দিয়েছি।
আসার পর থেকেই স্নেহের নাম্বারে কল করেছি কিন্তু ফোন বেজে কেটে গিয়েছে শেষে বন্ধ। রাগে আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরক্ষণে ভাবলাম এত সকালে হয়তো ঘুমিয়ে আছে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার জন্য ‌জেগে বসে থাকবে কখন আমি পৌঁছে ওকে কল করব।
কিন্তু আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল।
সকালে উঠে আবার নাম্বার বন্ধ পেলাম তাই আম্মুর সাথে কথা বলে ওর কথা জিজ্ঞেস করলাম আম্মু বলল আমি কিছু জানি না। ও হয়তো ঘুমিয়ে আছে।
কাকার সাথে কথা বলার সময় কাকা বলল বৌমার সাথে কথা বলবি। শত রাগ হলেও স্নেহাকে ইগনোর আমি করতে পারবোনা এজন্যই কাকার ফোন থেকে ওর সাথে কথা বলতে হল।ও এত কাদলো কেন ওই কি আমাকে অনেক মিস করছে? আদ্রও তুই বারবার ভুল ভাবিস কেন?স্নেহা তোকে মিস করেনি করলে তো স্বীকার করত আমি তো কতবার জিজ্ঞেস করলামও তো কিছুই বলল না।
আজকে তোমার সাথে কথা বলা শেষ আমার তোমাকে আমি আর কল করবো না না কারো ফোন দিয়ে কথা বলবো না তোমার ফোন দিয়ে। দুই বছর তোমার জন্য এটাই শাস্তি।আমি দেখতে চাই তুমি আমার ভালোবাসাটা উপলদ্ধি করতে পারো কিনা কথা যদি বলি তাহলে তুমি আমার শূন্যতা কখনো ফিল করবে না। কখনো করবে না।
কিন্তু আমি তো এটা চাই না আমি চাই তুমি আমার থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসো পাগলের মত ভালবাসো। তুমি আমার জন্য কষ্ট পাও কাঁদো প্রতিটা মুহুর্তে তুমি আমাকে ফিল করো। করবে তো।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আদ্রর গ্রিলের উপর হাত রেখে কথাগুলো ভাবছিল।
বাম চোখের কনিষ্ঠে জল চিকচিক করছে। মনে মনে একটা কথাই আওড়াচ্ছে,, তোমাকে আমায় ভালবাসতে হবে জানেমন।মিস করতেই হবে আমার জন্য তোমাকে চোখের জল ফেলতে হবে আমাকে পাওয়ার জন্য তোমাকে কাঁদতে হবে।

কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকবো।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এখনি ভাবতেই দু’বছর আমি কিভাবে কাটবো।কিন্তু আমাকে তো কষ্ট সয্য করতেই হবে তোমাকে বোঝাতে হবে তুমি আমাকে ভালোবাসো যেটা তুমি স্বীকার করতে চাওনা।
কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ ঘাড়ে পড়তে চোখের হাসি মুখ করে পেছন ফিরলো আদ্র।
জাইন পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
জাইন দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে বলল,,

“কী ব্যাপার ব্রো এত সকাল সকাল উঠে পরছো যে?”
জাইন বড় হয়ে বিদেশ এসেছে এজন্য বাংলা কথা ঠিকঠাক ভাবে পারে।

একটা জরুরি কল করার ছিল।

ব্রো শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করেছ।

হ্যাঁ।

লাভ মেরেজ?

লাভ কিনা জানিনা?

জাইন ভ্রু কুঁচকে বললো মানে?

মানে আমি ওকে ভালোবাসি তো আমার দিক থেকে লাভ কিন্তু ও আমাকে ভালবাসে কিনা জানিনা?

তোমাদের কি ফ্যামিলি থেকে বিয়ে হয়েছে?

না আমি ওকে জোর করে বিয়ে করেছি। ফ্যামিলির বাদে একা।

ও মাই গড বলো কি? তুমি জোর করলে আর ও বিয়ে করে নিল? অবাক হয়ে বলল।

করল বলেই তো এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী।

তাহলে তোমার বুঝতে ভুল হচ্ছে আমার বিশ্বাস সে তোমাকে ভালোবাসে।ভালো না বাসলে শত জোর করলেও সে তোমাকে কখনো বিয়ে করতে না।

আমারও তাই মনে হত কিন্তু দিনদিন ধারণা পরিবর্তন হচ্ছে।

তোমার চোখ মুখ দেখে বোঝা আছে তাকে তুমি খুব ভালোবাসো এবং কি এখনো তোকে খুব মিস করছো।

হ্যাঁ আমার আত্মার সাথে মিশে আছে। ওকে আমি লিমিট ছাড়া ভালোবাসি। যে ভালোবাসা শুরু আছে শেষ নাই।ওকে যেমন আমি জোর করে নিজের কাছে নিয়েছি তেমনি ও যদি আমায় ভালো না ও বেসে তবুও ওর সারা জীবন আমার কাছে থাকতে হবে।কারণ আছে আমি এক সেকেন্ডের জন্য নিজের কাজ ছাড়া করতে পারো না।

তাহলে এখানে এলে কিভাবে?

আছে ব্রো এখন এতো কথা বলা সম্ভব না চলো আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।

ওহে যাও ঘুমিয়ে পড়ো আর হ্যা অবশ্যই পরে তোমাদের লাভ স্টোরি আমাকে জানাবে।

আমি জাইনের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

_________

নিচে এসে কাকাকে ফোন টা দিয়ে দিলাম। আর কাকাকে বললাম আমার ফোনটা যেন কোনভাবে আমাকে এনে দেয়।
কাকা কাকিমা আর নিশাতকে সব জানিয়েছে।
নিশাত আর অফিসে গেল না সকালের খাবার খেয়ে আমি চলে যেতে চাইলাম তখন অন্তরা এসে হামলা করল।
ও নিশাতের থেকে ফোনে সব জেনে হন্তদন্ত হয়ে এসেছে। আর আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলছে। ও সব সময় একটুকাঁদুনি টাইপের একটু কিছু লিখে দে ভাসিয়ে দেয়।ও বলতে লাগল আমাকে ওর বাসায় নিয়ে যাবে তখন আমি বললাম আন্টি এতে রাগ করে তখন আর কিছু বলার সাহস পায় না সবাই মিলে আমাকে নিশাতদে বাসায় রাখার জন্য জোর করতে লাগলো। কিন্তু আমি কারো ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। আমি যেটা নিজে বুঝে নেব।
তখন কাকিমা এসে আমাকে বলল,,

আজকে আমি যদি তোমার মা হতাম তাহলে কি তুমি আমার কথা এভাবে ফেলতে পারতে প্লিজ আমাদের বাসায় থাকো এইভাবে চলা যায় না তুমি এখানে থেকে নিজে না হয় কিছু করো। শুধু আশ্রয়দান হয়ে থাকো আর যদি চাও ভাড়া দিতে পারো।
ওনার কথার ভাল লাগল এতে ওনার আশ্রিতা হতে হবে না উনি নানা কথা আমার যুক্তি দিল আমি রাজি হলাম। একটা চাকরির ব্যবস্থা করতেই হবে।

কিন্তু অন্তরাকে নিজের ঘরে এসে জিজ্ঞেস করলাম।

অন্তরা আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা তোর ফুপি উনি কিভাবে হয়। উনারা ভাইবোন কিছুই নিয়ে আমি শুনেছি আর তোর বাবার ভাইরা ও আছে আরেক বড় বোন আছে।

আমি জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে অন্তরা দিকে তাকিয়ে আছি। তখন আন্তরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

স্নেহা ফুপি আমার নিজের আপন ফুপি না।

সে তো আমি জানি কিন্তু তাদের ফুপি উনী হলেন কিভাবে?

সে অনেক কথা।

কিসে কথা বল না আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

মার কাছে শুনেছি যেআমরা যখন প্রথম ঢাকা শহরে ছিলাম তখন নতুন নতুন চাকরি হলো তা বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য কোন বাসা পাচ্ছিলনা কোথায় থাকবে দিশেহারা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল।তখন এই পপি নাকি এক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছিল তাকে বাঁচায় তো উনি খুবই খুশি হয় আর আব্বুকে জিজ্ঞেস করে যে উনার পরিচয়। আব্বু তার অসহায়ত্ব বলে। এসব শুনে ফুপি আব্বুকে নিজের বাসা আশ্রয় দেয় তারপর থেকে আমরা ফুপির বাসায় ছয় বছরের মতো থাকি।আমার বয়স যখন 13 বছর তখন আমরা আলাদা বাসা নেই ফুপি অনেক মানা করে কিন্তু আব্বু আর থাকেনা বলে অনেক করেছ আর না এবার আমরাই থাকবো আমাদের সম্পর্কটা থাকবে সারা জীবন আমরা ভাই বোন হয়ে থাকো তুমি আমার বোন আজকে থেকে।

~~চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here