#অজানা__-__তুমি
#রুবাইতা___রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব – ৮
গালে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে শিউড়ে উঠলাম।লোকটা আমার গাল হাতরে ধীরে ধীরে গলার কাছে আসতে লাগলো।আমি শক্ত হয়ে বসে আছি,হৃদ স্পন্দন থেমে থেমে চলছে।হাত মুঠ করে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে চলেছি।লোকটা নিজের ঠোঁট দিয়ে আমার গাল চাটতে লাগলো।আচমকাই আমার সারা শরীর ঘৃণায় গুলিয়ে উঠলো।লোকটি আমার বুকের উপর থেকে কম্বল সরাতে নিলেই আমি ধপ করে চোখ খুললাম।নিজের বাম হাতের ধারালো আর বড় বড় নখ দিয়ে তার হাতটি খামচে ধরলাম।লোকটি কিছুটা না অনেকটাই ঘাবড়ে গেলো।হয়তো এরকম আশা করে নি!আমি শোয়া থেকে উঠে যেই না লাইটটা জ্বালাতে যাবো তখনই লোকটি আমাকে ঘুরিয়ে কাছে নিয়ে গলার কাছে ধারালো জাতীয় কিছু চেপে উঠলো।আমি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই আমার মুখ চেপে ধরলো।আমি লোকটির হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেই চলেছি।আরো কিছু সময় এভাবে থাকলে হয়তো দম আটকে মরে যাবো।আচমকা লোকটি আমাকে ছুড়ে ফেলে দৌড়ে বারান্দার গ্রিল দিয়ে লাফ দিলো।আমি কাশতে কাশতে বারান্দায় গিয়ে লোকটিকে ভালোভাবে পরখ করলাম।এই তো সেই অবয়বটি।মাথায় হুডিওয়ালা কালো জ্যাকেট আর কালো প্যান্ট,সাইজে অনেক লম্বা।ব্যাক সাইড থেকে কিছুটা অপরিচিত লাগছে।কিন্তু মনে করতে পারছি না।যাহ ধরতে পারলাম না!অবশ্য কোনো পুরুষের শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছুই না।ভিতরে গিয়ে দেখি খালা এখনও ঘুম।আসলে সবকিছু এতো নিঃশব্দে হয়েছে যে কিছু টের পাওয়ার কথাই না।ঘেমে নিয়ে একাকার হয়ে গেছি।টেবিল কাছে যেতে নিলেই পায়ের কাছে কিছুর গুঁতো খেলাম।নিচে তাকিয়ে একটা ক্ষুদ্র এয়াররিং চোখে পড়লো।লোকটা আবার কানে রিংও পড়ে??।এক কানের জন্য।হাতে নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলাম।তারপর এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম।জ্বর কিছুটা কমেছে।
________________
আষাড়-শ্রাবণ মাসের এই বর্ষাকালের আমেজ এখনো যায়নি।কিন্তু মাস প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।মাঝে মাঝেই গগন কাপিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়।কিন্তু আজ দুই তিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না।কড়া রোদ ছিলো এই কয়েকদিন।তবে আজকের আবহাওয়া বলে দিচ্ছে ধুম বৃষ্টি নামবে এবার।আকাশে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা তো আছেই সাথে তীব্র বাতাস।যেকোনো সময়ে ঝরঝর করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। এই আবহাওয়াই আমি বারান্দায় বসে উপভোগ করছি।খালা প্রায় ভোর ৬টায় চলে গেছে।আজকে কলেজে যেতে হবে।কালকে রাতের পর থেকে মন মেজাজ একদমই ভালো না।কিন্তু এভাবে তো জীবন চলবে না।এই মাসে বাড়ি ভাড়া দিতে হবে।ভোরে খালা আমাকে জোর করে উঠিয়ে ভাত খাইয়ে ঔষুধ গিলিয়ে তারপর গেছে।আর পইপই করে কতোগুলো আদেশ-উপদেশ দিয়ে গেছে।আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে চলে গেলাম।কালকে ঘড়ি সহ চশমাটাকেও হারিয়ে এসেছি।উফ বিরক্তিকর পরিস্থিতি একটা।নিজের ছোট রান্নাঘরে গিয়ে এক মগ কফি নিয়ে টেবিলে বসলাম।ছোট ছোট দুইটা রুম নিয়ে ভাড়া থাকি।ছোট একটা রান্নাঘর, বেডরুমের সাথে বাথরুম আর ছোটখাটো একটা বারান্দা।বিল্ডিংটা দোতলার।নিচে এক ফেমেলি থাকে।আপাতত ছাদটাকে অনেক মিস করছি।কতদিন হয়ে গেলো একটু ছাদে যাওয়া হয় না।এই বিল্ডিয়ের পাশে একটা বড় আম গাছ আছে।তো কয়েকদিন ধরেই কলেজ থেকে আসার সময় ওই গাছের বড় পাকা পাকা আম নজরে পড়ে।সত্যি কথা বলতে প্রতিদিন মন চায় ছাদে গিয়ে কয়েকটা পেরে নিয়ে আসি।কারণ ছাদের সাথেই গাছটা একদম হেলান দিয়ে দাড়ানো।হঠাৎ ব্রিটিশটার কথা মনে পড়লো।বেটা আমার চশমা ভেঙে একটা সরিও বলে নি।তবে ওইদিন রাস্তায় ওই জানোয়ারগুলোর কাছ থেকে আমাকে বাঁচিয়েছে।এসব ভাবছি আর গরম ধোয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিচ্ছি।হঠাৎ ঘড়িতে চোখ পড়তেই উঠে গেলাম।কলেজে যাওয়ার উদ্যেশে রেডি হতে লাগলাম।একটা হলুদ রংয়ের লং কুর্তি আর নিচে ব্লাক জিন্স পড়ে গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।আজকে আবার চশমা কিনতে হবে।এই ছাতার চশমা কিনতে কিনতেই ফকির হয়ে যাওয়া লাগবে।
_______________
লান্চ ব্রেক চলছে এখন।সবাইকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছি।এই মুহুূর্তে খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে রিহা আর উষা কথা বলছে।যেহেতু কলেজের সাথে ভার্সিটিও আছে সেহেতু আজকে নাকি অনার্ষে একটা খুবই হ্যান্ডসাম ছেলে ভর্তি হয়েছে।তাই উষা আর রিহা সেটা নিয়েই কথা বলছে।আমি আর তীব্র,সৌরভ নীরব দর্শক হয়ে শুনছি।আমাদের আশেপাশে আরো অনেক স্টুডেন্টস আছে।
রিহা — আমি না জাস্ট ফিদা হয়ে গেছি ছেলেটার হাটার স্টাইল দেখে।দেখ কেউ নজর দিবি না।ও শুধু আমার ক্রাশ।
উষা — ইসস তোর আগে আমি ওকে দেখছি সো ওই চিকনা আমার।ওর সাথে শুধু আমাকেই মানায়।আর এই বারোভাতারি!তুই আগে কয়টা ছেলেকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিস?এইটা নিয়ে মনে হয় ৫০নাম্বার হলো।ছি!
রিহা — না আরগুলো শুধু ক্রাশ ছিলো এটা আমার জামাই।আর তুই যদি আমার সতিন হতে চাস না!তাইলে তোর পিঠের ছাল আমি উঠাবো।শয়তান!
উষা — এইইইইইইইই তুই প*******
তীব্র — গাইস স্টপ ইট।তোরা কি পাগল??একটা ছেলেকে নিয়ে তোরা এইভাবে ঝগড়া করছিস কেনো??এতোই যখন লুতুপুতু করার ইচ্ছা তো চল ওই বান্দরের সাথে তোদের দেখা করিয়ে দেই….
রিহা — না না থাক।এতো দরকার নেই!
আমি — ওহ বাবা!কেন কেন?দরকার আছে তো!যা দেখা করে আয়!সাথে বিয়ের প্রপোজাল টাও দিয়ে আয়।
উষা — নারে বাবা!ছেলেটা নাকি প্রচন্ড বদরাগী।
সৌরভ — এই কলিজা নিয়ে প্রেম করতে নেমেছিস??
রিহা — ধুরর সর যা!
সবাই এই দুইজোনার কান্ড দেখে হাসছে।রিহা জুস খাচ্ছিলো।তীব্রর পেট ফাটা হাসি দেখে অর্ধেক জুস তীব্রর মাথায় ঢেলে দিয়ে হাসতে হাসতে ভো দৌড়।তীব্র রেগে বোম হয়ে রিহার পিছনে দৌড় লাগালো ওকে ধরার জন্য।এদিকে এদের কান্ড দেখে উষা হাসতে হাসতে উল্টিয়ে পড়ছে।আমি মুচকি হেসে সৌরভকে জিগ্যেস করলাম
– আচ্ছা সৌরভ রিজু কোথায়??ওকে কোথাও দেখছি না যে??
সৌরভ – আরে ওর দেখা পাবি কি করে??ওতো এখন প্রেমে পড়ে খুব মারাত্মকভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে।
উষা – ওও আচ্ছা এই ব্যাপার!দোয়া করি খুব শীঘ্রই যেন একটা বিয়ের দাওয়াত পাই।
হঠাৎ কোথা থেকে একটি ছেলে উদয় হয়ে সৌরভ আর উষার উদ্যেশে বলতে লাগলো – “এই প্রিন্সিপাল তোমাদের দুইজনকে ওনার কেবিনে ডাকছে।বলে চলে গেল ছেলেটি।সৌরভ আর উষা আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
আমি চারপাশে দেখতে লাগলাম।আকাশের কালো মেঘগুলো গুনগুন করে ডাকছে।ফোনের ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর ১২:০০ টা।এখনো আরো ১০মিনিট বাকি আছে লান্চ ব্রেক শেষ হওয়ার।আমি আর কি করবো ভেবে,কানে ইয়ারফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে নিজের সবথেকে ফেভারিট সিংগার অরিজিৎ সিং এর গান শুনতে লাগলাম।
Thodi jagah🎶
de de mujhe🎶
tere pas kahi rah jao ma🎶
apni khushi de ke ma tujhe🎶
tere dard se jur jaoo ma🎶
mela jo tu eaha mujhe🎶
হঠাৎ টেবিলে কারো আঙ্গুলের টকটক আওয়াজে আমি বিরক্তি সহকারে ভ্রু কুঁচকে ফেললাম।এতো রোমান্টিক একটা পয়েন্টে এরকম ডিস্টার্বে খুবই রাগ উঠছে আমার।তবুও কান থেকে ইয়ারফোন খুলে কপালে ভাজ ফেলে মাথা তুললাম।তাকিয়ে হালকা অবাক হলাম।আমার মুখোমুখি একটা ছেলে মাস্ক পড়ে দাড়ানো।পরনে লাল টি-শার্ট, নিচে ব্লাক জিন্স,হোয়াইট কের্স।চুলগুলো খুবই স্টাইল করে সেট করা।কপালের উপর কয়েকটা চুল উড়ে বেড়াচ্ছে।জিম করা বডি।দুটি ফুলো পেশিবহুল হাতে একটা কোবরা ট্যাটু করা।পিঠে ব্যাগ।খুবই স্টাইল মেরে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে সে।শারীরিক গড়ন দেখে হালকা পরিচিত কারো কথা মনে পড়ছে।কিন্তু ঠিক মনে করে উঠতে পারছি।উষা আর রিহার বর্ণনা অনুযায়ী একেই আমার ওই নতুন ভর্তি হওয়া ছেলে মনে হচ্ছে।যাক তাতে আমার কি?ছেলেটি হালকা ঝুকে বললো
– বসতে পারি??
আমি কিছুটা চমকে মাথা হালকা পিছে নিয়ে ছোট করে বললাম
– জ্বি।
– থ্যাংকস।
বলে ছেলেটি বসে পড়লো।আমি ইয়ারফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে মাথা হালকা নুইয়ে প্রশ্ন করলাম
– ঠিক চিনলাম না আপনাকে!
ছেলেটি হালকা নড়েচড়ে মাস্ক ঠিক করে বললো
– পরিচিত হওয়ার জন্যই তো এসেছি মিস.হোয়াটএভার!
বলে ছেলেটি আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো।
ছেলেটির তাকানোতে বেশ অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো।ছেলেটি চেয়ার দুইহাত দিয়ে হালকা সামনে এনে এক হাত আমার দিকে বাড়িয়ে বললো
– আমি রিদ্রিশ!এন্ড ইউ??
আমি হালকা গুটিয়ে চোখ দুটো টেবিলেই সীমাবদ্ধ রেখে হাত না মিলিয়ে বললাম
– রুহি!
ছেলেটি হাত সরিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো।তারপর বললো
– হুমম নাইস নেম।তো মিস.রুহি আপনি কোন ইয়ারে??
– ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার!
– ওও আই সি!পিচ্চি!!
– কিহ??কি বললেন আমাকে?
– নাথিং! আব আমি নতুন এই ভার্সিটিতে।কেউকে ঠিকভাবে চিনি না।তবে তোমাকে একটু চেনা চেনা লাগলো তাই তোমার কাছে বসলাম।ডোন্ট মাইন্ড!
– হুম!!
ছেলেটি ব্যাগটাকে টেবিলের উপর ঠাস করে আমার দুইহাতের উপর ফেলে।আমি লাফ দিয়ে হাত দুটোকে সরিয়ে ডোলতে লাগলাম।হয়তো ভুলবশত দিয়ে ফেলেছে। সে হাত দুইটা মাথার পিছন দিকে নিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে বললো
– আজকে Weather টা অনেক sad!! right???
আমি দৃষ্টি এদিক ওদিক চলমান রেখে হালকা বিরক্তি নিয়ে একবার আড়চোখে তাকিয়ে তারপর বললাম
– “হুম”
– আচ্ছা তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছোনা কেন??আমি কি দেখতে এতোটাই খারাপ??
– ন না!
– তাহলে??আচ্ছা তুমি চশমা পড়তে তাই না??
আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালাম।বুঝলো কিভাবে??
– বুঝলেন কিভাবে??
ছেলেটি বিনোদন মূলক হাসি দিয়ে বললো
– তাহলে আমার কথাই ঠিক!আসলে যারা অলওয়েজ চশমা পড়ে তাদের চোখ হালকা ফোলা ফোলা থাকে।চশমা না পড়লে সেটা দেখতে পাওয়া যায়।
আমি মুখ বাঁকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।অলরেডি লান্চ ব্রেক শেষ।
– দেখুন আমাদের লান্চ ব্রেক শেষ।এখন আমাকে উঠতে হবে।
বলে ছেলেটিকে কিছু বলতে না দিয়ে হরহর করে হেটে চলে আসলাম ক্লাসে।এর ফালতু কথা শোনার ইচ্ছা আমার নেই।
___________________
ক্লাস শেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে গেটের বাইরে চলে এলাম।তারপর পিছন ফিরে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম।হার্ট বিট ফাস্ট হতে লাগলো।
_
_#অজানা__-__তুমি
#রুবাইতা__রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -৯
কারণ আমার সামনে সয়ং ইংরেজ মানে ব্রিটিশটা গাড়িতে হেলান দিয়ে শাহরুখ খান ওয়ালা পোজ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।পরনে একটা হোয়াইট ডেনিম জিন্স,উপরে স্কাই কালারের একটা শার্ট।চোখে সানগ্লাস,মাথায় হোয়াইট ক্যাপ।দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।আমি একটা মুখ ভেংচি দিলাম।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কয়েকটা মেয়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে,কেউ আবার ফ্লাইং কিস ছুড়ে মারছে।অসহ্য!!তবে হঠাৎ এইখানে?আছে হয়তো কোনো গার্লফ্রেন্ড। বেটা এমন ভাব নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে যে আমি তার সামনে একটা জ্বলজেন্ত মানুষ দাড়িয়ে আছি সেটা তার চোখেই পড়ছে না।হুহ ঢং!আমি ব্যগ নিয়ে রাস্তার ওপার পার হতে নিলেই কেউ হাত ধরে আমাকে আবার রাস্তার এপার আনলো।আমি বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে দেখি আবার ওই ব্রিটিশটা।আরে আমাকে একটু শান্তিতে রাস্তাতে হাটা চলাও করতে দেবে না নাকি??ইংরেজটা চোখ থেকে সানগ্লাসটাকে সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা ছোটখাটো হাসি দিয়ে জিগ্যেস করলো
– হেই নুরিপাথর!হোয়ার্টস আপ??
– নাথিং আপ টু সেয়!আপনি এখানে কেন??
– ওইযে আমার ঋণের কথা মনে আছে??সেইটা তোমার কাছ থেকে শোধ নিতে এসেছি!শুনলাম তুমি নাকি এই ভার্সিটিতে পড়ো??তাই চলে আসলাম।
– কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন মানে শুনলেন আমি এখানে পড়ি??
তখনই ইংরেজটার পিছন থেকে কানে ব্লু টুথ গোঁজা একটা ছেলে বললো
– “স্যারকে সব খবর আমি এনে দেই ম্যাম”।আপনার টাও…..
তখনই ব্রিটিশটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো
– “তোমাকে আমাদের মাঝখানে থার্ড পার্সন হয়ে কথা বলতে আমি নিষেধ করেছিলাম।সো মুখ বন্ধ!
– ওকে স্যার…
– আবার!
আর কথা বললো না ছেলেটি।মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম
– “আপনি শুধু শুধু ওনাকে বোকছেন কেন”??
-“কেন? দরদ উতলে পড়ছে??তোমাকে এতোকিছু বুঝতে হবে না”।ওহ!ওয়েইট,তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
বলে গাড়ির ভিতর থেকে একটা গিফট প্যাকেট আমার সামনে ধরলো।আমি হা করে তাকালাম।
– কি হলো?ধরো!
– কেনো ধরবো??কি আছে ওটার মধ্যে?
– তোমার চশমা ভাঙার জন্য কিছু জিনিস!!খুললেই বুঝতে পারবে।আশা করি তোমাকে ব্যাপারটা বোঝাতে পেরেছি!নাও…
বলে জোর করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।আমি কিছুটা শকের মধ্যেই আছি।উনি শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে আমার পিছনে একবার তাকিয়ে বললো
-” হেই চলো গাড়িতে উঠো।অনেক গরম পড়েছে”।
-“মানে কি গাড়িতে উঠবো কেন?”
-“আরে আমার ঋণগুলো তোমার কাছ থেকে শোধ নিতে হবে না?”উঠো বড্ড বেশি পকপক করছো তুমি”!
বলে আমার পিছন দিকে আবার একবার তীক্ষ্ণ চোখ তাকিয়ে তারপর আমার হাত ধরে জোর করে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিলো।আমি কিছু বলতে নিলে আমার মুখে নিজের ডান হাত চেপে তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে বললো
-” হেই চুপচুপ!বেশি কথা বলবে না।আগে এখান থেকে চলো।তোমার জন্য জায়গাটা এই মুহুূর্তে নিরাপদ নয়!”
ওনার হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে আমি বললাম
-“নিরাপদ নয় মানে কি?”
ওনি বারবার আমার কলেজের গেটের দিকে দেখছেন। কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে।ফর্সা ঝলমলে মুখটা রক্তীম বর্ন ধারণ করেছে।দেখে তো মনে হচ্ছে ভিতরে ভিতরে রাগে এটোম বোম হচ্ছেন!কিন্তু আমার সাথে এতো হাসোজ্বল হয়ে কিভাবে কথা বলছেন?আমি ওনার দৃষ্টি লক্ষ করে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখি রিদ্রিশ মানে আজকের নতুন পাতানো ছেলেটা আমাদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।ব্রিটিশটা মুখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।মানে টা কি??বুঝলাম না একদমই!
-“আচ্ছা আপনি……
কথাটা বলার আগেই উনি সামনের প্যাকেট থেকে একটা মার্সম্যালো আমার মুখে পড়ে দিলেন।
-“মুখটা দয়া করে বন্ধ করো।এতো বেশি কথা বলতে হয় না।এতে খুদা বেশি লাগে”!
আমি খেতে খেতে ওনার দিকে তাকালাম।উনি মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছেন।হঠাৎ আমার একটা কিছু মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি চকলেটটা গিলে বলতে লাগলাম
– উহুম আপনার সাথে যেই লোকটা এসেছিলো সে কোথায়??
উনি কিছুটা সময় চিন্তা করে কপালে হাত দিয়ে বলতে লাগলেন
– ওহহ!!ড্যাম ইট!!একটু আগে মনে করতে পারলে না??শিট ম্যান!!
বলে গাড়ি থামিয়ে আবার ব্যাক করতে লাগলেন।আমি গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি লোকটা দৌড়ে দৌড়ে আসছে।আর চিৎকার করে বলছে- “স্যার আমাকে নিয়ে যান!”স্যার গাড়ি থামান!!
উনি একদম গাড়ি পিছনে নিয়ে লোকটার সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে বললেন
-“হেই উঠো গাধা!”
লোকটা মুখ ফুলিয়ে হাতের ট্যাবটা আর কানের ব্লু টুথটা ঠিক করতে করতে পিছনের সিটে বসে গেলেন।ইংরেজটা আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।আমি ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর জানালার বাইরের দিকে তাকালাম।মেঘ সরে গিয়ে সূর্যের একটু দেখা পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু পরক্ষনেই আবার এই ঘন কালো মেঘ সূর্যের আলোকে পৃথিবীতে পড়তে দিচ্ছে না।পরিবেশটা আপাতত শান্ত আছে।
– “হেই নুরিপাথর!!জিগ্যেস করবে না??তুমি কি করলে আমার ঋণ শোধ হবে??”
আমি কপাল কুঁচকে দুইহাত বুকে ভাজ করে ওনার দিকে তাকালাম।লোকটাতো আচ্ছা কি বলবো??অসহ্যকর! কিভাবে নিজে যেচে এসে নিজের ঋণ শোধ নিচ্ছে!পুরো জীবনে মনে হয় ওই একটা সাহায্য করেই উল্টে ফেলেছে।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম
– “জ্বি বলুন কি করলে আপনার ঋণ শোধ হবে?”
-“হুমম!!তাহলে শোনো!তোমার বাসায় আমাকে নিয়ে যেতে হবে!বুঝলে!”তাহলে শোধ হয়ে যাবে!দেখো কত সহজ কাজ দিলাম”কত ভালো আমি!”,
আমি এই কথা শুনে ছিটকে ওনার দিকে তাকালাম।বাসায় নিয়ে যাবো মানে??কি বলতে চায় এই পাগল??পিছনে লোকটা মুচকি মুচকি হাসছেন।উনি আমার এরকম রিয়েকসন দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিগ্যেস করলেন যে “কি হয়েছে?”।
-“দেখো নুরিপাথর তুমি কিন্তু আবার আমাকে উল্টো মানুষ ভাবছো!”
আমি দোটানায় পড়ে ছটফট করছি।
-“দেখুন অন্যকিছু বলুন”
– “না! না তোমাকে এটাই করতে হবে”নইলে আজকে গাড়ি থেকে নামতে পারবে না”।
মানে টা কি??এইসবের??আমার বাসায় গিয়ে কি করবে??আমি একপ্রকার রাগ নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম।উনি ওনার মতো গাড়ি চালিয়েই যাচ্ছেন।
-“”আচ্ছা আপনি আমার বাসায় গিয়ে কি করবেন??””
-“”সেটা আমার ব্যাপার!””এখন তুমি যাবে কিনা বলো?””
আমি প্রায় ১০মিনিট ভাবার পর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম যে নিয়ে যাবো।কিন্তু একটা শর্তে।
-“”ওকে নিয়ে যাবো!!”তবে একটা শর্ত আছে””
-“”ঋণ শোধ নেবো জাস্ট”!এতে আবার কিসের শর্ত””!?ওকে বলে ফেলো!!””
-“”আপনি গিয়ে মাত্র ৫মিনিট থাকবেন!””আর আপনার নামটা বলুন!””
-“”হেই কিহ??মাত্র ৫মিনিট??””আচ্ছা সেটা দেখা যাবে””কিন্তু তোমার আমার নাম দিয়ে কি দরকার??””
-“”দরকার আছে বলুন””??
উনি কিছু বলার আগেই পিছন থেকে লোকটি বলে উঠলো
-“”দ্যা বিগেস্ট বিজনেসম্যান আয়রান আজহার!””
বিজন্যাসম্যান মানে??উনি ব্যবসা করেন??
-“”হেই ছাগল তোমাকে আমি বেশি চালাক করতে বলেছি??””সবখানে বাম হাত না ঢুকালে তোমার শান্তি হয় না!তাই না??””ইডিয়েট! “”
লোকটা মাথা নিচু করে বললো -“”সরি স্যার আর হবে না!!””
আমি বিরক্তি নিয়ে কপালে ভাজ ফেলে চোখ মুখ কুঁচকে ওনার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম
-“”দয়া করে ওনাকে কথায় কথায় বকাবকি বন্ধ করুন!””আর আপনি ব্যবসা করেন??””
-“”হ্যা কেনো??””অনেক বড় পাপ কাজ করে ফেললাম নাকি??””
-“”আপনাকে জাস্ট একটা সহজ প্রশ্ন জিগ্যেস করলাম!!আর এই হলো উত্তর??””হুহ!!””
-“”তোমার এই সহজ প্রশ্নটাই আমার কাছে কঠিন প্রশ্ন মনে হয়েছে।””বাই দ্যা ওয়ে সরি ফর দিজ মিস বিহ্যাভ!””
আমি “হুহ” বলে চুপচাপ বাইরের দৃশ্য দেখায় মনযোগ দিলাম।প্রায় নিজের বাসার কাছাকাছি এসে গেছি।সত্যি অদ্ভুদ লাগছে এখন সবকিছু!!
-“”হেই কোনো কথা বলছো না যে??””সরি বললাম তো!””
আমি ওনার দিকে ঘুরে ভালোভাবে ওনাকে পরখ করে বললাম
-“”আচ্ছা এখানে কি রোদ আছে??””
-“”কই না তো!””কেন??””
-“”তাহলে আপনার এইভাবে সানগ্লাস পড়ে থাকার কারণটা জানতে পারি??”এবং মাথার ক্যাপটা দয়া করে খুলুন আপনাকে দেখে আমার গরম লাগছে!!””
-“”রাত ছাড়া সানগ্লাস আমি অলটাইম পড়ি!””আর এতো হট হওয়া ভালো না!!ইউ নো এতে তোমার আশেপাশে থাকা মানুষগুলোর ভিতরে প্রবলেম হতে পারে!””আন্ডারস্ট্যান্ড??””
আরে আমি কি জিগ্যেস করলাম আর এ কি বলছে??মাঝে মাঝে কোন মগের মাথা বলে কিছুই মাথার ভিতরে ঢোকে না!!উনি হঠাৎ করে আমার চুলগুলো বাম হাত দিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-“”হেই এই ছোট্ট মাথায় এতো চাপ দিও না!!””যেকোনো সময় ফেটে যাবে!””
আমি ওনার হাতটা মাথা থেকে সরিয়ে দিলাম।এতে উনি একটা মুচকি হাসলেন।কি কিউট!!আরে ধুররর ফকিরের কিউট।আমাকে কি ছোট মনে হয়??যে এভাবে ছোটদের মতো ট্রিট করছে?ফালতু!!আমি নাক ফুলিয়ে বসে রইলাম।
-“”হেই কি হলো এভাবে ফুলে বসে আছো কেন??””
বলে আমার নাক টেনে হাসতে লাগলেন।ওনার হাসি দেখে বুকে ধুক করে উঠলো।যেনো মরুভূমিতে পানি ধমেছে এমন অবস্তা।উনি ড্রাইভিং করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে আবারো সেই মন কেড়ে নেওয়া মুচকি হেসে বললেন
-“”তুমি এভাবে নাক ফুলিয়ে বসলে অনেক বেশি কিউট লাগে জানো??””আর এইভাবে কোনোদিন বসবে না!””এতে ওইযে বললাম না!! তোমার আশে পাশের মানুষগুলো অসুস্থ হয়ে পড়বে””তাই ভেবেচিন্তে ফেইস রিয়েকসন দিয়ো!!””
আবার কি বললেন??অসুস্থ হয়ে পড়বে মানে??আমি আবারও আহাম্মকের মতো হা করে জিগ্যেস করলাম
-“”আচ্ছা আপনি একটু সোজাভাবে কথা বলবেন??এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে অপর পক্ষের ব্যাক্তিটিকে এভাবে কনফিউশনের মধ্যে ফেলে কি মজা পান একটু বলবেন??””
-“”তুমি এইসব এডাল্ট না হওয়া পর্যন্ত বুঝবে না।””সো যেগুলো বলি সেগুল মুখ বুজে শুধু শুনবে!””সময় হলে এমনিটেই মাথায় ঢুকবে!””
-“”মানে টা কি??আমি তো এডাল্ট হয়ে গেছি!””আপনার এরকম কথা যেকারো মাথার ৭ইন্ঞি উপর দিয়ে যাবে।আপনি খালি খালি বয়সের দোষ দিচ্ছেন কেনো??””
-“”হেই তুমি এডাল্ট??এডাল্ট মানে বুঝো??১৮বছরের যাদের পার হয়ে যায় তারাই এডাল্ট!!তোমার তো মনে হয় ১৭ ই হয় নি??””
ভেবে দেখলাম হ্যা আমার তো মাত্র ১৬হয়েছে।ধুরর ভালো লাগে না।তবে মানুষটা প্রচন্ড মিশুক!আমাদের মাত্র অল্পসময়ের পরিচয়!নামটাও আজকেই জানলাম আর তারমধ্যেই মানুষটাকে আমার প্রচন্ড বিশ্বাসযোগ্য এবং ভালো মনে হচ্ছে একদম মনে দাগ কেটে নেওয়ার মতো।কিন্তু না এভাবে হুটহাট বিশ্বাস করে নিলেই বিপদ।তাই রুহি বুঝে শুনে সাবধানে পা ফেলবি।
-“” হেই নুরিপাথর দয়া করে নামবে??””কি এতো ভাবছো?””নাকি এখনো আরো গাড়িতে করে ঘোরার শখ আছে??””এসে গেছি আমরা?””
পিছন থেকে ব্লু টুথে কথা বলতে বলতে নেমে দুইহাত এক সাথে করে ইংরেজটার সাইডের দরজা খুলে দিলো।ইংরেজাটা আবার বের হয়ে আমার সাইডের দরজাটা খুলে দিলো।আমি বের হয়ে গেলাম।নিজেকে এই মুহুূর্তে রাজরানী রাজরানী লাগছে।আগে এভাবে বাবার গাড়িতে থাকলে বাবা বের হয়ে আমার সাইডের ডোর খুলে দিতো।বাবার প্রিন্সেস ছিলাম যে।ভেবে চোখে একফোঁটা পানি জমা হলো।সেটা ইংরেজটার অগোচরে মুছে নিলাম।কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম
-“” আপনি একটু আগে কি বললেন??””আপনি আমাকে এত্তোসময় ঘুরিয়েছেন??””
ওনি দুই পকেটে হাত দিয়ে একদম স্ট্রেট হয়ে নিজের মুখ ভঙ্গি কিছুটা অনুতপ্তময় করে দাড়িয়ে বললেন
-“”ওহ সরি!””আমার ভুল হয়ে গেছে!”অন্য একদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো””ওকে??প্রমিজ!””
সত্যি উনি সবসময় প্রশ্নের উল্টো উত্তর দেন।যাই হোক আমি ব্যাগটা কাধে বাজিয়ে হাটতে লাগলাম।পিছনে ইংরেজটা আসতে লাগলো এবং ইংরেজটার পিছনে ব্লু টুথ লোকটা আসছে।আমি আমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে বাড়িওয়ালার রুমে একবার কান পেতে দেখলাম তিনি আছেন কিনা।নাহলে আমার মতো একা একটা মেয়ের ঘরে এভাবে দুইটা ছেলেকে দেখে তুলকালাম কান্ড হয়ে যাবে।নিশ্চিত হলাম যে উনি নেই।আচমকা পিছন থেকে ইংরেজটা বলব উঠলো
-“”হেই এভাবে আরেকজনের রুমে আড়িপাতছো কেনো??””
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম -“”আপনাকে এতোকিছু বুঝতে হবে না।চুপচাপ চলুন।গিয়ে ৫মিনিট বসে চলে আসবেন।উইথআউট এনি শব্দ।””
উনি পকেট থেকে দুইহাত উঠিয়ে সেলেন্ডার করে বললেন
-“” ওকে,ওকে ম্যাডাম!””
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে আমার রুমের তালাটা চাবি দিয়ে খুলতে লাগলাম।খুলে দরজা ঠেলে পরনে কের্সটা সাউডে রেখে ভিতরে ঢুকে ফ্যানের সুইচ অন করে দিলাম।উনি সারারুম পর্যবেক্ষণ করতে করতে ভিতরে ঢুকলেন তারপর সোফার উপর ধাপাস করে বসে পড়লেন।আমি বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।তারপর ব্যাগটা ডাইনিং টেবিলের উপর ছুড়ে ফেলে ওনার বিপরীত দিকের বাম পাশের সিংগেল সোফাটায় বসে পড়লাম।আড়চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি নাক দিয়ে কিছু শুঁকছেন।কি করছে এই পাগল??কিছুক্ষণ কিছুর গন্ধ শুঁকে নিয়ে বললেন
-“”তোমার রুম থেকে একদম তুমি,তুমি ঘ্রাণ আসছে!!””
শুনে মুহুর্তেই আমার কান গরম হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে এখনই ধোয়া বের হবে।আমি কানদুটোকে দুইহাত দিয়ে চেপে ধরে বসে রইলাম।দেখলাম উনি নিচের ঠোঁটটাকে কামড়ে ধরে দুষ্টু হাসছেন।ওদিকে ব্লু টুথ লোকটা দাড়িয়ে আছে।আমি অবাক হয়ে বললাম
-“”আরে আপনি দাড়িয়ে আছেন কেনো??বসুন?””
তারপর উনি একবার আয়রানের দিকে তাকিয়ে আসতে করে বসে পড়লেন।ইংরেজটা পায়ের উপর পা তুলে হুকুমের ভঙ্গিতে মাথা চুলকে আমার দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে বললেন
-“”হেই আমরা তোমার বাসায় এসেছি।তোমার মেহমান আমরা।কিভাবো একটু আদর আপ্পায়ন করতে জানো না??””একটু চা বা কফিও তো খাওয়াতে পারো!””
আমি তাড়াহুড়ো করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ফট করে দাড়িয়ে লাফাতে লাফাতে ওনাদের হাত দিয়ে উঠতে ইশারা করে বলতে লাগলাম
-“”এই এই উঠুন!! ৫মিনিটের বেশি হয়ে গেছে!””শর্ত অনুযায়ী আপনার ঋণ শেষ!””
-“”ওকে ওকে ফাইন আগে একটু চা বা কফি তো একটু খাওয়াও!””নইলে যাবো না!”এটাকে অতিথি আপ্পায়ন বলে””না দিলে পারলে রাত্রে আজকে তোমার সাথে চন্দ্র বিলাস করতে করতে ঘুমাবো!কি বলো??””
বলে ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলেন।আমি চোখদুটোকে বড় বড় করে হা করে তাকিয়ে আছি।এদিকে কানের সাথে সাথে এখন গালও আবার গরম হয়ে গেছে।কি বলছে??লাগামহীন লোক একটা!অসহ্য!!এখন আবার কফি গিলাও নইলে আপদ বিদেয় হবে না!!আমি কান চেপে ধরে দৌড়ে রান্নাঘরে দৌড়ালাম।
এদিকে রুহি যাওয়ার পর আয়রান ব্লু টুথ লোকটাকে চোখ রাঙানি দিতেই লোকটা ফট করে দাড়িয়ে পড়লো।
আমি ইংরেজটার চৌদ্দ গুষ্টি ভর্তা বানাচ্ছি আর কফি ঢালছি ইচ্ছে মতো।তারপর গড়গড় করে গরম পানি দিয়ে দিলাম।তারপর কফির দিকে তাকিয়ে বিষম খেলাম।এটা তো ব্লাক কফি হয়ে গেছে।যাহ কফি বেশি দিয়ে ফেলেছি!!চামচ দিয়ে একটু মুখে নিয়ে আবার ফচ করে ফেলে দিলাম।ইসসসস কি তিতা!!ওয়াক!যাই হোক ব্লাক কফি যখন হয়ে গেছে তাহলে ভালোই হলো।বুঝবে মজা এতো কফি খাওয়ার শখ!!ঘোচাচ্ছি।তারপর খুশি মনে কয়েকটা বিস্কুট নিয়ে হেলতে দুলতে ডাইনিং রুমে সোফার দিকে চোখ পড়তেই তাকিয়ে লোকটা নেই।সাথে ব্লু টুথওয়ালিটাও নেই।আরে গেলো কোথায়??আমাকে না বলেই ফটে গেলো??আমি ঘুরে বেডরুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখি উনি আর ব্লু টুথ লোকটা আমার জানালা আর বারান্দার কাছে দাড়িয়ে আছে।আরে আমার বেডরুমে কি করছে??আমি তাড়াতাড়ি ঢুকে কফির মগদুটোকে ঠাস করে ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে হালকা কন্ঠ উঁচু করে বললাম
-“”এই আপনারা আমার বেডরুমে কি করছেন??””
–
–
–
–
–
♣______চলবে______♣
_
_