অজানা তুমি পর্ব ১০

#অজানা__তুমি
#রুবাইতা__রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব- ১০

আমার কথায় উনি ফট করে আমার দিকে তাকালেন।তারপর মাথা চুলকাতে চুলকাতে চারদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন

-“”আসলে তোমার সবগুলো রুম একটু ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছিলাম!””

আমি হালকা ছোট ছোট চোখ করে তাকাতেই উনি সিরিয়াস মুখ করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে ভ্রু দুটোকে আড়াআড়ি ভাবে উঁচু করে জিগ্যেস করলেন

-“”হেই আমার চা বা কফি এনেছো??””

-“”হুমম নিন!!খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন আর বিদেয় হোন!!””

-“”হেই এটা কেমন ভাষা??””মেহমানদের সাথে কিরকম বিহেভ করতে হয় জানো না??””

বলে উনি কফিতে চুমুক দিয়ে নাক মুখ কুঁচকে ফেললেন।তবে কথায় কথায় খালি ওনার এই ‘হেই হেই’করাটা আমার মেজাজের বারোটা বাজাচ্ছে।আমি বাকা হেসে দাড়িয়ে রইলাম।উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন

-“”হুমমম ব্লাক কফি!আই লাইক ইট!!”অনেক টেস্ট হয়েছে””এখন থেকে কফি খেতে তোমার কাছে আসতে হবে!!””

যেতুকু হাসি ছিলো সেটাও আমার মুখ থেকে টাটা বাই বাই হয়ে গেছে।কফি টেস্টি হয়েছে??আর এতো টেস্টি যে আমার কাছে আবার খেতে আসতে চায়?!বাহ!!কি করতে চাইলাম আর কি হয়ে গেলো।উনার দিকে তাকাতেই আমার ভিতরে মুচড় দিয়ে উঠলো।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম।ইসস কিভাবে খাচ্ছে দেখো!! মনে হচ্ছে কারো ঠোঁটে কিস করছে।ওয়াক!!আবারও কান গরম হয়ে উঠলো আমার।

-“”হেই ধরো আমার খাওয়া শেষ””

আমি গিয়ে কফির মগটা নিয়ে এলাম।উনি এখনো বের হচ্ছেন না দেখে আমি আবার বললাম

-“””কি হলো??কফিতো খাওয়া শেষ এখন তো জান!!””

উনি আমার দিকে বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে হেটে যেতে যেতে বললেন

-“”যাচ্ছি যাচ্ছি””রিক কাম””

বলে উনি দরজাটা খুলে বের হয়ে যাচ্ছিলেন।আমার কিছু একটা মনে পড়তেই আমি ওনার শার্টের এক সাইড ধরে টেনে জিগ্যেস করলাম

-“”আচ্ছা উনি কে আপনার সাথে??””কি হয় আপনার??””

উনি ওনার শার্টের দিকে আর আমার হাতের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকালেন।আমি থতমত খেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে স্কার্ফ ঠিক করতে লাগলাম।তখনই পাশ থেকে ব্লু টুথ লোকটা বললেন

-“”ম্যাম আমি স্যার এর পিএ।আমার নাম রিক।সর্বদা স্যার এর সেবায় নিয়োজিত!””

উনি এবার আমার দিকে তাকালেন।

-“”বুঝেছো এবার??””

আমি মাথা নুইয়ে “হ্যা” বললাম।উনি ওনার এক পা সিঁড়ির উপরে উঠিয়ে কের্সের ফিতা বাধতে লাগলেন খুবই সিরিয়াস মুখ করে।পাশে রিক দাঁড়ানো হাতে ট্যাব নিয়ে।আমি দরজার কাছে দাড়িয়ে আছি।আর ওনার কান্ডকলাপ দেখছি।আসলে ওনাকে সিরিয়াস চেহারায় খুবই হ্যান্ডসাম লাগে!!এটিটিউডের কিং মনে হয় একদম।যেদিন প্রথম আমাদের দেখা হয়েছিলো উনি সাহায্য চাইছিলেন ওইদিন মনে হয়েছিলো প্রচন্ড বদমেজাজি আর এখন একদম উল্টোটা মনে হচ্ছে।আচ্ছা আমাদের কি আবারও দেখা হবে??নাকি হবে না??উনি তো শুধু ওনার ঋণ শোধ নিতেই এসেছেন।আর তো মনে হয় দেখা হবে না।ভুলে যাবেন আমাকে??ভেবেই বুকের মধ্যে এক প্রকার হাহাকার সৃষ্টি হচ্ছে।হঠাৎ মাথায় কারো আদুরে স্পর্শে আমার হুশ ফিরলো।তাকিয়ে দেখি উনি একদম আমার সন্নিকটে দাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।আর আমি ওনার পশমি বুকের দিকে তাকিয়ে।উনি খুবই লম্বা।আমি ওনার বুক পর্যন্ত মানে কাধেরও নিচে।এতো কাছাকাছি আশায় বুকের মধ্যে অজানা ধুকপুকানি বেড়ে গেছে।পুনরায় কান,গাল সাথে নাকও গরম হয়ে উঠছে।আমি আর বেশিক্ষণ ওনার উদাম বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।বেটা নির্লজ্জ ঢং করে আবার শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা রেখে দিয়েছে।মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে রইলাম।আর বিরক্ত হয়ে ওনার হাতটা মাথা থেকে নামিয়ে দিলাম।ছোটদের মতো মাথায় বুলিয়ে দেওয়া অফ!!উনি মুচকি হেসে পকেটে হাত গুঁজে আমার মুখের দিকে হালকা ঝুকলেন।আমি চমকে মাথা হালকা পিছিয়ে নিলাম।উনি আমার গাল টেনে দিয়ে বলতে লাগলেন

-“”লিসেন!!আমি যেটা এখন বলবো সেটা তোমাকে শুনতে হবে এবং করতে হবে।নইলে তোমার হাল আমি বেহাল করে দেবো।বুঝেছো?শুনো তাহলে তোমার কলেজে অনার্ষে একটা নতুন ছেলে ভর্তি হয়েছে।নিশ্চই জানো?তো তোমার কাজ হলো সেই ছেলেটার কাছ থেকে ১০০ মাইল দূরে থাকা।আর যদি সেটা না করেছো তো পরবর্তীতে বুঝতে পারবে কি হবে তোমার সাথে!!মাইন্ড ইট!!বাসা থেকে দরকার ছাড়া বের হবে না!একদমই না।কলেজ থেকে সোজা বাসায়
আর আমি যেই জিনিসটা দিলাম সেটা একটু কষ্ট করে খুলে দেখো!ওকে নুরিপাথর বাই!ভাগ্য ভালো থাকলে আবার শীঘ্রই দেখা হবে।টেইক কেয়ার!””

বলে উনি পুনরায় আমার দুই গাল জোরে টেনে দিয়ে চলে গেলো।আমি এখনো শকের মধ্যে আছি!আমাকে কি উপদেশ দিলো নাকি আদেশ??নাকি হুমকি??তারপরের কাজটা মনে পড়তেই আমার হাত দুইটা আউটোমেটিক গালে চলে গেলো।কিভাবে গাল টেনে গেলো লজ্জায় পানিতে ঝাপ দিতে ইচ্ছে করছে।অফফ গাল ব্যাথা করছে।কি জোরে টান দিলো!!আমি দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দিলাম।

_____________

বিকালের দিকে আমি ছাদে উঠে হাটাহাটি করছি আর আম খাচ্ছি আজকে শেষ মেষ গাছ থেকে একটা ছিঁড়লামই।বাড়িওয়ালাও নেই,এই সুযোগ তো আর বারবার আসবে না।সকালের মতো আবার মেঘ জমেছে আকাশে।ছাদের একোণা ওকোণা ঘুড়ছি।হঠাৎ এক ফোটা পানি আমার হাতে পড়তেই আকাশের দিকো তাকালাম।আকাশের অবস্তা দেখে মনে হচ্ছে আবার গগন কাপিয়ে ঝুম বৃষ্টি নামবে।আর যেটা ভাবছিলাম সেটাই হলো।তীব্র বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।আমি দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।হালকা একটু ভিজে গেছি।হঠাৎই আমার একটা অদ্ভুদ ইচ্ছা জাগলো।আমি গিয়ে আলামারি থেকে মায়ের নীল রংয়ের একটা শাড়ি বের করলাম।বাবা আর মা চলে যাওয়ার পর তাদের সবকিছু আমি ধুয়ে,স্ত্রী করে খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি।শাড়ি হাতে দাড়িয়ে আছি।শাড়ি থেকে মায়ের মিষ্টি একটা গন্ধ আসছে।কষ্টে চোখে পানি টলমল করছে।শাড়িটা সুন্দর করে পড়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে পড়লাম।আজকে খুব সুন্দর করে আম্মুর মতো সাজবো।মুখে হালকা একটু ফেইস পাউডার দিয়ে চোখে কাজল,কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ,কানে দুটো বড় ঝুমকা পড়ে নিলাম।অবশেষে ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিলাম।চুলগুলো খোলা রেখে দিলাম।তারপর আম্মুর দুইটা নুপুর নিয়ে পায়ে পড়লাম।ছোট থাকতে মা যেইসময় সাজতো সেই সময় দেখতাম কি সুন্দর করে নুপুর পড়তো।কতো স্নিগ্ধ আর মায়াময়ী লাগতো দেখতে।আমি নিজেকে একবার আয়নায় দেখে মুচকি হাসলাম।তারপর রান্নাঘরে চা বানাতে চলে গেলাম।চা বানিয়ে আবার ছাদের দিকে দৌড় লাগালাম।গিয়ে ছাদের সাথে লাগানো কাচের সিড়ির উপরে বসে পড়লাম।উপর থেকে হালকা একটু ওয়াল দেওয়া।কয়েকটা বৃষ্টির ফোটা আমাকে ছুঁইয়ে দিচ্ছে।এতো সুন্দর স্নিগ্ধকর ও সতেজ বৃষ্টি সাথে এক কাপ চা ইস সেইরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।সারা শরীরে ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।খুব ভালো লাগছে।যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

______________

আজকে সারাদিন সেজেগুজে ঘুড়ঘুড় করতে করতেই কেটে গেলো।এখন মোবাইল হাতে বসে আছি কয়েকটা সেলফি তুলবো।তারপর এই আটা ময়দা তুলে নিজের রিয়েল ফর্মে ব্যাক করবো।সন্ধ্যা ৭টা বাজে।ক্ষুদায় পেটে সাপ ছোবল দিচ্ছে।হঠাৎ কলের রিংটোনে তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।আমি অপিরিচিত নাম্বার ধরি না।তাই এটাও ধরলাম না।শাড়ির আচঁল ধরে নাচিয়ে গুনগুন করতে করতে রান্নাঘরে নিজের জন্য খাবার বানাতে চলে গেলাম।আজকে দিনটা ভালোই কেটেছে।সকালের ইংরেজটাকে তিতা কফি বানানোর সময়টা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছি আর নুডুলস বানাচ্ছি।বানিয়ে আমার বেডরুমে চলে গেলাম।শাড়ি-মাড়ি খুলে ফ্রেস হয়ে টি-শার্ট আর স্কার্ট পড়ে বেরিয়ে এলাম।টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে বিছানায় বসে নুডুলসের বাটিটা এক হাতে নিয়ে অন্যহাতে ফোন ধরলাম।তখনই আবার ঠাসঠাস কলের রিংটোন বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখি মোট ৬০ বার ওই একই নাম্বার থেকে কল আসছে।আমি কিছুটা হুমড়ে খেয়ে বিরক্ত হয়ে ধরে গরগর করে বলতে লাগলাম

-“” কি সমস্যা আপনাদের?? খেয়েদেয়ে কাজ নেই??নিজেদের কাজ নেই বলে কি অন্যদেরও কাজ নেই??এই রাত-বিরাতে ফোন লাগান?আর দিয়ে যাচ্ছেন তো দিয়েই যাচ্ছেন?কোনো থামাথামি নেই!!কোন বান্দর বনের বান্দর ফোন দিয়েছে খোদা জানে!!অসহ্য!!বেটা খবিশ!””আরেকবার ফোন দিলে তোর কল্লা কেটে তেল,গরম মসলা দিয়ে গ্রীল করে কুকুরকে খাওয়াবো।”””বেয়াদব!””””

-“”””হেই নুরিপাথর!!”””-

কারো শীতল কন্ঠে আমি থমকে গেলাম।মস্তিষ্ক এখনো ধারণ করতে পারছে না যে একটু আগে কি শুনলো?নুরিপাথর?? এইটা তো একমাত্র ওই ব্রিটিশটাই ডাকে!আর এই ‘হেই হেই’ তো উনিই করেন!তাহলে অপাশ থেকে নিশ্চই এই নামটা ব্রিটিশটা ডেকেছে!!তাহলে এটা সেই আয়রন ম্যানই হবে!!তার পিএ যেনো কি বলেছিলো নামটা??হ্যা!আয়রান আজহার!তাহলে….

-“”হেই কি হলো সাইলেন্ট হয়ে গেলে যে??আমার কি যেনো!হ্যা!কল্লা নাকি গ্রিল করে কুকুরকে খাওয়াবে।তাহলে খাওয়াও!!কি হলো কথা বলো??স্পিক আপ!!”””

ইসস না যেনে শুনে কি বাজে বাজে কথা বলে ফেললাম।লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে ফোনটাকে বাথরুমে গিয়ে ফ্লাস করি।ভিতর থেকে জমে থাকা কথাগুলো বের হতে চাচ্ছে না।জট পাকিয়ে বেজে আছে।আচ্ছা উনি আমার নাম্বার পেলো কোথায়??

-“”হেই এই মেয়ে!!কথা বলছো না কেনো??আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না নাকি??””আমি কিন্তু বেশিক্ষণ এই সাইলেন্সি সহ্য করবো না””সোজা তোমার বাসায় তোমার রুমে এসে এট্যাক করবো!!তখন কিভাবে চুপচাপ থাকো দেখবো!””

আমার কি হলো বুঝতেই পারছি না।মুখ থেকে একটা কথাও বের হচ্ছে না।শুধু ওনার এই পকপকানি শুনতে ইচ্ছে করছে।তাই এখন সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুই বলবো না।দেখি কি করেন!!

-“” বুঝেছি কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছো।আচ্ছা জানো আজকে না তোমাকে একদম পেতনি পেতনি লাগছিলো।তোমাকে হলুদ ড্রেসে একদমই মানায় না।ডাইনিদের মতো লাগে।আর জানো তোমার কাজল লেপ্টে গেছিলো একদম ভুতের মতো লাগছিলো।”””

আমাকে ফোন দিয়ে আবার আমার নামেই আমার গুনগাণ গাইছে।আর সেটা আমাকে শুনতে হচ্ছে।ওরেরে কেউ আমাকে দুই টাকার বিষ দে খেয়ে মরি।উফ!!রেগে বললাম

-“”এই আপনি আমার নামে আমার কাছে আমারই গুনগান গাচ্ছেন?আপনার সাহস তো কম নয়!””

-“”যাক মহারানীর মুখের বুলি ফুটেছে।আমি সফল!””

-“”মানে?””

-“”কিছু না।আচ্ছা তুমি কোথায়??””

-“”সেটা দিয়ে কি করবেন??””

-“”মুড়ি ভেজে খাবো গাধা!!””

-“”ভালোভাবে কথা বলুন।””

-“”আচ্ছা সরি!কোথায় বলো?””

-“”নিশ্চই নিজের রুমে!””

-“”ওহ আচ্ছা ভালো””ওকে আবার পরে কথা হবে!!””

-“”আরেরে আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?””আগে সেটা বলে যান?””

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই কেটে দিলো।যাহ!!কল কেনো দিলো?আর বড় কথা হলো আমার নাম্বার পেলো কোথায়??ধুরর!!

এদিকে নুডুলসের বারোটা বেজে গেছে।ইউউ ছি!!দৌড়ে গিয়ে রান্নাঘরে নুডুলসের বাটিটা রেখে আসলাম।রান্নাঘরের জানালা দিয়ে খুব সুন্দর বাতাস বইছে আর থালার মতো সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে।এখন কফি নিয়ে বারান্দায় বসে চন্দ্র বিলাস করলে খারাপ হয় না।তাই তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে দৌড়ালাম বারান্দার উদ্যেশে।গ্লাস খুলতে গিয়ে হলো আরেক কান্ড।বেলকোনির গ্লাস তো খুলছে না।লক ঘোরালেও খুলছে না।আরে এটার আবার কি হলো?বহুত চেষ্টার পরও হেরে গেলাম।কিছু একটা মনে পড়তেই জানালার কাছে গেলাম।আরে এইসব কি??এটারও গ্লাস খুলছে না??মানে টা কি এইসবের??এভাবে লক কে করে রেখেছে??

♣_____চলবে______♣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here