অজানা_অনুভূতি পর্ব ১২+শেষ

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ১২
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

হাসপাতালের একটি কেবিনে বসে আছে হায়াত। তার পাশেই বেডে বেহুস হয়ে পড়ে আছে আরহাম। হায়াত আরহামের এক হাত তার নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। আরহামের অপর হাতে স্যালাইন লাগানো।
এভাবে আরহামের বেহুস হওয়ায় হায়াত অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।

এইতোহ কিছুক্ষন আগের ঘটনা।
আরহাম দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।

” জোসনার মাকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই না নীলবাবু ”

সেই পরিচিত কন্ঠ সেই পরিচিত নাম শুনেই এক জটকায় আরহাম পাশে তাকায়। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরহাম মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সামনের ব্যক্তিটির চেহারা।

এ যে আর কেউ নয় তার প্রিয়তমা তার ভালোবাসার মানুষ হায়াত। হায়াত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। আদৌ কি এ হায়াত নাকি তার কল্পনা। আলতো হাতে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু সাহস হলো না। আরহাম প্রচন্ড বাতাসেও ঘামছে।

হায়াতঃ কেমন আছেন নীলবাবু।(আরহামের কিছুটা সামনে গেলো)

আরহামঃ হা..য়া..ত (বলেই দু কদম পিছিয়ে গেলো)

কি বলবে বুঝতে পারছে না। হায়াতের সামনে দাড়িয়ে থাকার সাহসটাও আরহামের নেই। কোন মুখে হায়াতের সাথে কথা বলবে এমনকি ক্ষমাই বা কিভাবে চাইবে। হায়াত আরহামকে পিছিয়ে যেতে দেখে। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে আরহামের হার্ট বিট অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমন কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না। চারপাশ ঝাপসা ঝাপসা লাগছে আরহামের কাছে। হায়াত আরহামের সামনে আসতেই আরহাম ঢলে পড়লো। হায়াত যলদি আরহামকে ধরলো আরহাম নিচে পড়ে আছে।

হায়ায়ঃ নীলবাবু ও নীলবাবু কি হলো আপনার।
আদনান ভাইয়া নৌশিন (জোড়ে ডাক দিলো)

অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো আদনান ও নৌশিন। হায়াতের ডাক শুনে দৌড়ে এসে দেখলো আরহাম অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ওকে তারাতারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো।
ডাক্তার বললো। অতিরিক্ত চাপ আর দূর্বলের কারনে এমন হয়েছে। খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেওয়ায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।

হায়াত আরহামের হাত ধরে বসে আছে।
পাশেই নৌশিন ও আদনান দাঁড়ানো।

নৌশিনঃ দেখলেন ওদের মধ্যে কতো ভালোবাসা।

আদনানঃ না মিস কলিং বেল আমি কিভাবে দেখবো আমার কি চোখ আছে নাকি। চোখ তোহ আপনার একাই আছে।

নৌশিনঃ খবরদার আমায় কলিং বেল বলবেন না।

আদনানঃ একশোবার বলবো তুমিই সেই মেয়ে যে আমাদের বাসার কলিং বেল চেপে দৌড় দিতে।

নৌশিনঃ কি প্রমান আছে আপনার কাছে হুম বলেন।

আদনানঃ প্রমান আমার চোখ। আমি নিজে চোখে দেখেছি তোমাকে কলিং বেল চেপে দৌড় দিতে।

নৌশিনঃ সেটা যে আমি ছিলাম জানলেন কিভাবে।

আদনানঃ তোমায় কেনো বলবো।

নৌশিনঃ ঢং দেখে বাচি না।

আদনানঃ হুস আমায় জালাতন করো না তোহ। বেশি জ্বালালে তোমার বান্ধুবি হায়াতকে বলে দিবো যে তুমি প্ল্যান করে ওকে আনিয়েছো।

নৌশিনঃ আমিও আপনার ভাই আরহাম জিজুকে বলে দিবো আপনি আমায় সাহায্য করেছেন।

আদনানঃ অফ এত বাচাল কেন তুমি।

নৌশিনঃ বেশি বক বক করবেন না বলে দিলাম। ৪ বছর আগে একটু ফেসবুক থেকে গেলাম কি আর আপনি একেবারে হিরো হয়ে গিয়েছেন।

আদনানঃ তোমাকে যেতে বলেছে কে। কোন অলক্ষূনির সময় যে তোমার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছিলাম।

নৌশিনঃ চুপ থাকেন তোহ ঝগড়া ছাড়া কিছু তোহ পারেন না।

আদনানঃ আ……

হায়াতঃ তোমাদের ঝগড়া আর ফুসুরফাসুর শেষ হলে সবাইকে খবর দিন

আদনানঃ ইয়ে মানে সবাইকে কি বলবো যে…

হায়াতঃ সবাইকে বলেন Hayat is back.

আদনান কেবিনের বাহিরে চলে গেলো। আদনানের পিছু পিছু নৌশিনও চলে গেলো।
আদনান সবাইকে ফোন করে বলল সবাই নাকি আসছে আদনান জানালো হাসপাতালে আসার দরকার নেই আরহামদের বাসায় আসতে।
নৌশিন আদনানের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

আদনানঃ এইভাবে আমার পেছনে কেন পড়ে আছো বলো তোহ।

নৌশিনঃ তোহ কি করবো আমি কাবাবে হাড্ডি হবো। ওদের এখন একা থাকতে দেওয়া উচিত।

আদনান কিছু বলল না।

★★
হায়াত আরহামের হাত এখনো ধরে আছে। ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে করছেন না। আরহামের জন্য অজানা_অনুভূতি টা জেগে উঠছে এই এক মাসে আরহাম অনেকটা বদলে গিয়েছে চেহারাটাও মলিন হয়ে আছে। হায়াতের মনে আরহাম আছে একটা মানুষের সাথে ৬ মাস একই ছাদের নিচে ছিলো একজন নারী ও পুরুষ এক সাথে থাকলেই প্রেমে পড়তে বাধ্য আর সেখানে এক সাথে একই রুমে থেকেছে। এই ৬ মাসে হায়াত বুঝতে পারেনি যে সে আরহামকে ভালোবাসে বিচ্ছেদের পর ভালো করে টের পেয়েছে। আরহামকে এমন কোনো মূহুর্ত নেই যে মিস করেনি হায়াত কিন্তু তা প্রকাশ করেনি। হায়াত কি মেনে নিবে আরহামকে তাও জানা নেই কারো।

★★
আরহামের জ্ঞ্যান ফিরেছে চোখ মেলে চোখের সামনে হায়াতের চেহারা ভেসে উঠছে। আরহাম আস্তে আস্তে উঠল হায়াত সাহায্য করলো উঠতে। আরহাম নিজের হাত দিয়ে আলতো করে হায়াতের গাল ছুয়ে দেখলো। না সে সপ্ন দেখছে না হায়াত সত্যি তার সামনে আছে।

আরহামঃ হায়াত তুমি..

হায়াতঃজিই আমি।

আরহামঃ কেমন আছো তুমি। আর এভাবে শুকিয়ে গেলে যে খাবার দাবার কি ঠিক মতো খাওনি নাকি।

হায়াতঃআমারও একই কথা। উত্তর আছে কি আপনার কাছে।

আরহাম চুপ হয়ে গেলো।
আদনান হায়াত ও আরহামের জন্য খাবার দিয়ে গিয়েছে। হায়াত আরহামকে খাইয়ে দিচ্ছে। আরহাম চুপচাপ খাচ্ছি আর হায়াতের দিকে চেয়ে আছে। এক হাতে হায়াতের শাড়ির আচল ধরে আছে। হয়তো ছেড়ে দিলে চলে যাবে সেই ভয়ে।
আরহাম হায়াতকে খাইয়ে দিতে চেয়েছিলো হায়াত মানা করে দেয় সে কিছু খাবে না।আরহাম বারবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে হায়াত এতো দিন কোথায় ছিলো, কেমন ছিলো কিভাবে ছিলো কার কাছে ছিল। কিন্তু তা জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না এখনো নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করছে।

★★★
আদনান ও নৌশিন, হায়াত ও আরহাম বাসায় গেল।

সবার সামনে বসে আছে হায়াত সবার নজর হায়াতের দিকে। আয়াত, অর্পা,প্রিসা,আনিশা হায়াতএর পাশে বসে আছে। সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনেক অনেক প্রশ্ন আছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। সবাই হায়াতের কাছে অপরাধ বোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরহামকে তার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরহামও রুমে চুপটি মেরে বসে আছে।

হায়াতঃ আমি সাতক্ষীরা নৌশিনদের বাসায় ছিলাম। নৌশিন আর আমরা একই স্কুলে পড়তাম। ওর বাবার বদলি হওয়ায় চলে গিয়েছিলো। ওদের ওখানেই আমি এতোদিন ছিলাম।

আয়াতঃ তোহ আজ কি মনে করে ফিরে এলে।

হায়াতঃ কোনো এক কারনে আসতে হলো হালকা হেসে নৌশিনের দিকে তাকালো।

ইভানের চোখ ছলছল করছে। কি বলে ক্ষমা চাইবে তার বোনের কাছে তাই ভাবছে।

হায়াতঃ অনেক রাত হয়েছে। এভাবে বসে না থেকে যাওয়া উচিত। বড় ভাই আমি আপনাদের বাসায় কিছুদিন থাকতে চাই।

ইভানঃ সেটা তোমারও বাসা হায়াত। আর তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।

হায়াতঃ আচ্ছা তাহলে আমি আসি। আর হ্যা সুন্দরী রেশমি চুড়ি ধন্যবাদ আমার কথা রেখে আপনার মেয়েকে মেনে নেওয়ার জন্য।

রেশমিঃ তুমি কোথাও যাবে না। এটা এখনো তোমার শ্বশুরবাড়ি। আর আজ যদি চলে যাও তাহলে একেবারের জন্য চলে যাও। তোমার কারনে আমার আরহাম অনেক কষ্ট পেয়েছে( বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো)

আরহামের দাদীর কথায় সবাই অবাক। হায়াত হালকা হাসলো তারপর তার রুমাল বের করে আরহামের দাদীর হাতে দিয়ে চলে গেলো।
আরহাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে হায়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও হায়াতকে আটকাতে পারছে না আরহাম।

নৌশিনও হায়াতদের সাথে ওর বাসায় গেলো। আদনান আরহামের পাশে এসে দাড়ালো। সাথে আরনাবও আছে।

আরনাবঃ ভাই ভাবিকে আটকালি না কেনো।

আরহামঃ হায়াতকে আমি সময় দিচ্ছি স্বাভাবিক হওয়ার ওর যখন ইচ্ছে হবে তখন আসবে তোরা কেউ ওকে জোর করবি না।

বলেই রুমে চলে গেলো। আরনাব ও আদনান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চলে গেলো। ওইদিকে আদনানের মা হায়াত ফিরেছে শুনে অনেক খুশি। আদনান কি মনে করে যেনো নৌশিনের কথাটাও বলল।

নৌশিন আদনানদের প্রতিবেশি ছিলো। আদনান নৌশিনকে খুব কমই চিনতো। একদিন হঠাৎ করে ঠিক দুপুরে কলিং বেল বেজে উঠলো আর দরজা খুলে অবাক কেউ নেই৷ এরপর থেকে প্রায়ই কে জেনো কলিং বেল চেপে চলে যেতো। একদিন আদনান দেখে ফেলে এরপর খোজ নিয়ে জানতে পারে তার নাম নৌশিন।

এরপর একদিন নৌশিন নামের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসে আর আদনান তা এক্সেপ্ট করে কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো ওর আইডিতে কোনো ছবি ছিলো। এরপর নৌশিন নিজ থেকে মেসেজ দিতো আদনান ওর সাথে কথা বলা শুরু করেছে। এক প্রকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল আদনানের ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাটিং করতো। কথা কম ঝগড়া বেশি করতো।

কখনো সরাসরি দেখা করেনি। মাঝে মাঝে দেখা হতো কিন্তু কেউ কথা বলতো না। এক সময় নৌশিনের আইডি থেকে মেসেজ আসা অফ হয়ে যায় আদনান নিজের মেসেজ পাঠায় কিন্তু কোনো উত্তর আসেনি। পরে জানতে পারে নৌশিনরা চলে গিয়েছে এরপর থেকে আর কেউ কলিং বেল বাজিয়ে চলে যায়নি। আদনান নৌশিনকে মিস করতে শুরু করতো যে কেউ কলিং বেল বাজালেই ও দৌড়ে দরজা খুলতো কিন্তু কোনো খোজ পাওয়া যায়নি নৌশিনের।
ঠিল চার বছর পর আজ দেখা তাও হায়াতের কারনে।
এতো বছর পর নৌশিন ফেসবুকে এসে আদনানকে টেক্সট পাঠায়। এরপর ফোনে কথা বলে হায়াতের ব্যাপারে সব বলে এরপর আদনানের কাছ থেকে আরহামের ব্যাপারে জেনে। ওরা প্ল্যান করে হায়াতকে নিয়ে আসে ঢাকায় এরপর ব্রিজের কাছে গিয়ে ওদের দুজনের দেখা করিয়ে দেয় আদনান ও নৌশিন।

*★★
হায়াতকে ফিরে পেয়ে সবাই খুশি। সকালে ইভানদের বাড়িতে ধুম পড়েছে ইভান বাজার করে নিয়ে আসছে। ইশান হায়াতের পছন্দের রুই মাছ কিনে কাটতে বসে গেলো। ইফাত সবজি কাটতে অর্পাদের সাহায্য করছে বাকি তিন বান্ধুবি মিলে রান্না করছে। হায়াত, আয়াত ও নৌশিন মিলে এলাকাটা ঘুরে আসে। হায়াতকে দেখে পারা প্রতিবেশি নানা কথা বলছে সমালোচনা আলোচনা করছে সেদিকে হায়াত ধ্যান না দিয়ে নিজের মতো আছে।

এখন আর হায়াত নিজের ঘরে খাবার খায়না ইভান নিজেই হায়াতকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে নিজ হাতে খাইউএ দিয়েছিলো। আরহামদের সাথেও কথা হয়।
আরহাম হায়তের সাথে কথা কম বলে কিন্তু চেয়ে থাকে সব সময়। নৌশিন তার বাসায় চলে যায়। নৌশিনের চলে যাওয়ায় আদনান অনেকটা কষ্ট পায়।
হায়াত নিজ থেকে আরহামকে কল দিয়ে কথা বলে।
হায়াতকে বারবার সবাই জিজ্ঞেস করছে আরহামকে মেনে নিয়েছে তোহ ওর সাথে থাকছে না কেনো। হায়াত চুপ করে ছিলো আর বলেছিলো সময় হলে বলবে।

এভাবে কেটে যায় কয়েকটা মাস। সবাই আরহামকে বলে হায়াতকে নিয়ে আসার জন্য আরহাম হায়াতকে বলেছিলো। হায়াত তার জবাবে বলে

হায়াতঃ আপনি এখন আমায় নিতে এসেছেন তার কারন হলো আপনি অনুতপ্ত তাই আপনি আমায় মেনে নিচ্ছেন। যেদিন আপনি আমায় ভালোবেসে নিজের মন থেকে নিতে আসবেন তখন আমি আসবো।

আরহাম হায়াতের কথার মানে বুঝতে পারেনি। অনেক চিন্তা করে তারপর বুঝলো।

হায়াতদের এক্সাম শুরু হয়ে যায়।পরিক্ষা দিয়ে হায়াত বের হয়ে দেখলো। আরহাম দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে হায়াত ভ্রু কুচকে তাকালো। কারন আরহাম বাসায় না গিয়ে এখানে কি করছে।

আরনাব আয়াতকে নিয়ে গিয়েছে আজ নাকি ওরা ঘুরে বেরাবে। অর্পারা বাসায় চলে গিয়েছে।
হায়াত হাটছে ওর পেছনে আরহাম হাটছে।

হায়াতঃ কিছু বলবেন।

আরহাম মাথা ঝাকালো। হায়াত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার হেটে সামনে একটা রিক্সায় উঠে গেলো আরহামও লাফ দিয়ে উঠে গেলো রিকশায়। হায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরহাম হালকা হেসে হায়াতের হাত শক্ত করে ধরলো। হায়াত কিছু বলল না। আরহামও চুপ হয়ে আছে। হায়াতদের বাসার সামনে রিকশা থামানো হলো। হায়াত নেমে হেটে চলে গেলো এক বার পেছন ফিরে তাকিয়েছিলো আরহামও চলে গেলো।

রাতে
ইভানঃ হায়াত চলো বাহির থেকে ঘুরে আসি।

হায়াতঃ এতো রাতে। অর্পা তোর বর তোকে রেখে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।

অর্পাঃ যাবে তাতে কি তুই যা তোহ।

হায়াতঃ আরে এতো রাতে আমি কই যাবো বড় ভাই।

ইশানঃ আরে যা না এতো কথা বলার কি আছে।

ইফাতঃ হ্যা যা তোহ বড় ভাই এর সাথে ঘুরে আয়।

আয়াতঃ রাতে বাইকে ঘুরার মজাই আলাদা।

হায়াতঃ আচ্ছা তুই তোহ খুব ঘুরেছিস মনে হয়।

আনিশাঃ দূর তোমার পেচাল পারিস না তোহ।

আনিশা এক প্রকার ঠেলে ঠুলে পাঠালো হায়াতকে।ইভান হায়াতকে নিয়ে ঘুরছে। ঘুরে ফিরে ব্রিজের উপরে গেলো। সেখানে গিয়ে বাইক থামালো।

হায়াত নেমে দাড়ালো
হায়াতঃ বড় ভাই এখানে নিয়ে আসলা যে।

ইভান হায়াতের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো হায়াত বেশ কয়েকবার ডাকলো। হায়াত বোঝার চেষ্টা করছে এরা কি করতে যাচ্ছে। হায়াত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এইদিকে গাড়ি একটু কম আসে।

কিছুক্ষণ পর
কোথা থেকে জেনো বেলি ফুলের স্ম্যাল আসছে। মাতাল করা গন্ধ।হঠাৎ হায়াত টের পেলো কেউ ওর দিকেই দৌড়ে আসছে। অন্ধকার এর কারনে বুঝতে পারছে না। যখন্নহায়াতের সামনে এসে দাড়ালো। হায়াত মুচকি হাসলো। সেই চিরচেনা পারফিউমের স্মেল যেটা হায়াত লুকিয়ে লুকিয়ে স্মেলটা শুকতো।আরহাম এসে দাড়িয়ে আছে হায়াতের সামনে আর হাপাচ্ছে দৌড়ে আসার ফলে।

হায়াতঃনীলবাবু এভাবে দৌড়ে আসলেন যে।।

আরহাম দম নিয়ে বলল
আরহামঃস্যরি আসতে দেরি হয়ে গেলো তোমার বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসতে দেরি হয়েছে আর তুমি একা তাই এক প্রকার দৌড়ে চলে এসেছি।

আরহাম হায়াতের কাছে গিয়ে হায়াতের চুলের কাটাটা খুলে ফেলল মূহুর্তের মাঝেই হায়াতের চুল গুলো পুড়ো পিঠ ছড়িয়ে পড়েছে। আরহাম হায়াতের মুখে ফু দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিলো।

হায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না।এরপর আরহাম বলা শুরু করলো
আরহামঃ কলেজের প্রথম দিন একটা মেয়ের সাথে আমার দেখা।বসে না বুঝে আমায় বকে দিয়ে ছিলো আমি চুপচাপ তার কথা শুনছিলাম প্রচুর হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু কিছু বলিনি। এরপর থেকে নিজের অজান্তেই তার সাথেই ঝগড়া করে ফেলতাম এরপর আস্তে আস্তে তাকে বুঝা শুরু করলাম। অর্পার বার্থডের দিন তার সাহস দেখে অবাক হয়েছিলাম। তার কাছে যেটা ভুল সেটা ভুলই সে বিনা কারনে অত্যাচার সহ্য করার মানুষ নন। যখন আমার মুখের উপর জুস ফেলে প্রচুর রাগ লেগেছিলো। যখন সে আদনান ভাই এর সাথে কথা বলছিলো আমি বারান্দায় ছিলাম তখন কেনো যেনো অনেকটা খারাপ লাগছিলো। তা হিংসাও বলা চলে। এরপর থেকে তার সব কিছুই কেনো যেনো ভালো লাগে কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি যখন তার সাথে আমার বিয়ে হয় আর ফুলসজ্জার রাতে তার ড্রামা দেখে অনেক হাসি পেয়েছিলো। আস্তে আস্তে তার সাথে থাকতে থাকত্ব তার উপত দূর্বল হয়ে পড়ি কিন্তু তখনো বুঝতে পারিনি তার জন্য আমার মনের অজানা_অনুভূতি টা কি ছিলো। যখন তার সাথে আমার বিচ্ছেদ হয় তখন বুঝেছিলাম সে আমার জন্য কি। তখন বুঝেছিলাম তার জন্যে আমার অজানা অনুভূতি টাই বা কি। হ্যা আজ আমি তাকে আমার মনের অনুভূতি টা বলতে এসেছি। হায়াত ভালোবাসি তোমায়। অনেক বেশি ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমার বলা এক একটা শব্দকে। ভালোবাসি তোমার রাগটাকে।, ভালোবাসি তোমার মুখের মিস্টি হাসিকে ভালোবাসি তোমার নীলবাবুর প্রিয়তমাকে। ভালোবাসি তোমায় মোহিনি। তুমি আমার মোহিনী। আমি তোমার নীলবাবু থেকে বরবাবুতে রুপান্তরিত হতে চাই। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকতে চাই। দিবে কি আমায় একটি সুযোগ তোমার নীলবাবু থেকে বরবাবু হওয়ার সুযোগ।

হায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আজ সে খুব খুশি আরহাম তার বলা কথাটা বুঝতে পেরেছে। আরহাম তাকে ভালোবেসে আপন করতে চাচ্ছে। এটাই টহ সে চেয়ে ছিলো। দেরি হোক তাতে কি অবশেষে সে সফল হলো। হায়াত দেরি না করে বলল

হায়াতঃহ্যা আমি রাজি আপনাকে নীলবাবু থেকে বরবাবুতে ট্রান্সফার করতে। এবার জোর করে নয় ভালোবেসে আপনার সাথে থাকতে চাই। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার পাশে থাকতে চাই। আমিও তোমায় ভালোবাসি আরহাম চৌধুরী। (বলেই মিস্টি হাসি দিলো)
হায়াতের মাথায় বেলু ফুলের মালাটা পড়িয়ে কপালে গভীর ভাবে চুমু দিলো।

★★ আরহামের কাদের মাথা রেখে আছে হায়াত। আরো বেশ কিছুক্ষণ থেকে হায়াতকে বাসায় পৌঁছে দেয় আরহাম।

হায়াতদের বাসার গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে দুজন।
হায়াতের হাত শক্ত করে ধরে আছে আরহাম ছাড়তে ইচ্ছে করছে না এই হাতটি। কিন্তু না চাওয়া স্বত্বেও হাতটা ছেড়ে দিলো আরহাম। হায়াত হালকা হেসে আলতো করে আরহামকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে চলে গেলো। আরহাম ৫ মিনিট স্তব্ধ হয়ে ছিলো এরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে চলে গেলো।

পরেরদিন সকালে হায়াত রেশমি চৌধুরীকে কল দিয়ে কথা বলে ফোন রেখে দিলো।

★★
হায়াতদের বাসায় আরহামের পুরো পরিবার আসলো। হায়াত ও আয়াতের বিয়ে ঠিক করা হলো এবার অনেকটা বড় করেই করবে দুই ভাই এর বিয়ের অনুষ্ঠান।

সবাই অনেক খুশি। হায়াত এক পলক আদনানের দিকে তাকিয়ে রেশমি চৌধুরী ও আদনানের মায়ের সাথে কথা বলার জন্য রুমে নিয়ে গেলো তাদের।

তারা কথা বলে বের হলো।
আরহাম ❤️হায়াত, আরনাব♥ হায়াতের বিয়ে ঠিক করলো। যেদিন আরহামের বিয়ে হয়েছে হায়াত ওইদিন বিয়ের ডেট দিলো। হায়াতদের বিয়ের এক বছর হবে ওইদিন আর ওইদিনই হবে হায়াত ও আরহামের আবার বিয়ে। হয়ে যাবে তারা এক।
হায়াত সবার দিকে একবার চোখ ভুলিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো।
#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ১৩(শেষ_পর্ব)
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে নৌশিন। এভাবে হুট করে পাত্র পক্ষ তাকে দেখতে আসবে ভাবতে পারছে না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এই নিয়ে ২১ নাম্বার পাত্র পক্ষের সামনে বসা। ২০ টা বিয়ে আগে ভেঙেছে তাই এইবার তার বাবা তাকে না বলেই পাত্র পক্ষ নিয়ে আসলো মনে হালকা রাগ লাগছে। কারও দিকে তাকাবে না সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মাথা নিচু করে আছে। কেউ কিছু বললে জোর গলায় বলে দিবে সে বিয়ে করবে না। অনেক হয়েছে আর না। এতে যদি তাকে বেয়াদব বলে তাতেও তার সমস্যা নেই। বিয়ে করবে না মানে করবে না। অনেক্ষন চুপ থাকার পর।

” তোহ সুন্দরী রমনি মুখটা একটু তোলো। এত লজ্জা পেলে কি হয়”
একজন মহিলা কন্ঠ শুনে অবাক কন্ঠটা পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে। নৌশিন মাথা উচু করে তাকিয়ে অবাক।

নৌশিনঃ হায়াত (অবাক হয়ে)
সবার দিকে চোখ ভুলিয়ে দেখলো। আদনান, ওর মা বাবা, নানী আর আরহাম এসেছে। সাথে হায়াত নামের ডাইনিটাও এসেছে। নৌশিন ভ্রু কুচকে হায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।

হায়াতঃ জিই আপু আপনার নামটা বলেন তোহ। আমি পাত্রের ছোট ভাইয়ের বউ হায়াত। আপনার ইন্টারভিউ নিতে এসেছি। পাশ করলেও আমাদের বাড়ির বউ না করলেও আমাদের বাড়ির বউ বানাবো।

নৌশিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। বউ মানে কার বউ একবার আদনানের দিকে তাকালো। আদনান নৌশিন এর দিকে তাকিয়ে আছে। নৌশিনের মা বাবা অনেক খুশি। তাদের একমাত্র মেয়ের খুশির জন্য অনেক কিছু করতে পারে তার উপর এতো বছরেও নৌশিনের মনের কথা বুঝতে পারেনি। আগে জানলে তারা নিজে চেষ্টা করে আদনানের মায়ের সাথে কথা বলতো।

আদনান ও নৌশিন ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আদনান এখনো নৌশিনের দিকে চেয়ে আছে। নৌশিনের অনেক ইতস্ততবোধ হচ্ছে।

নৌশিনঃ আপনি এখানে কি করছেন। আপনি কিভাবে পাত্র পক্ষ হলেন আর আমায় জানালেন না কেন। আর হায়াত কার বউ এর কথা বলল কি হচ্ছে আমি তোহ কিছু বুঝতে পারছি না (এক দমে কথা গুলো বলল)

আদনান হালকা হেসে বলল
আদনানঃ আরে আরে দম নেও মেরি জান। তুমি যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো আগে বলবা না তাহলে কি আর এতো বছর সিংগেল থাকি বলো মিস কলিং বেল।

নৌশিনঃ ভ্রু কুচকে কি বলতে চাচ্ছেন সরাসরি বলুন তোহ।

আদনানঃ তোমার আর আমার বিয়ে তাই এসেছি তোমাকে দেখতে। আর সব কিছু হায়াত করেছে তাই তুমি ওকে জিজ্ঞেস করো। ওকে তোহ এবার নিচে চলো।

নৌশিন কিছু বলল না।নিচে গেলো খাবার দাবার খাচ্ছে সবাই। হায়াত নৌশিনের রুমে গেল। নৌশিন চুপচাপ বসে আছে।

হায়াতঃ হবু বড় ভাবিজি কি এতো ভাবা হচ্ছে হুম বলুন তোহ।

নৌশিনঃ হায়াত কি হচ্ছে এগুলো আমার আর আদনানের বিয়ে মানে।

হায়াতঃ কেনো তুমি কি খুশি হওনি। নাকি এই বিয়েও ভেঙে দিবে যদি ভেঙে দেও তাহলে সমস্যা নেই আরো মেয়ে আদনানকে বিয়ে করার জন্য লাইন ধরে আছে আমি তাদের কাছে বিয়ে প্রস্তাব পাঠাবো। অনেক কষ্টে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েছি।

নৌশিনঃ কি বললে তুমি অন্য কারো সাথে বিয়ে দিবে আমিও দেখি কিভাবে দেও। (রাগী দৃষ্টিতে)

হায়াতঃ এর মানে ( হেসে নৌশিনের দিকে তাকালো)

নৌশিন মুচকি হাসলো। হায়াত নৌশিনকে জড়িয়ে ধরলো।
হায়াতঃস্যরি নৌশিন আমি তোমাকে না বলে তোমার ডায়েরি পড়ে ফেলছিলাম। যেখানে তুমি তোমার প্রথম প্রেমে পড়া কলিং বেল বাজানো মেসেজ দেওয়া সব লিখেছিলে।

নৌশিন অবাক হয়ে আছে সে রাগবে নাকি খুশি হবে বুঝতে পারছে না।

হায়াতঃ আচ্ছা সব বুঝলাম ৪ বছর ধরে তার সাথে কন্টাক্ট করোনি কেনো।

নৌশিনঃ আমি ভেবেছিলাম তার মনে অন্য কেউ আছে। আর আমি তাকে নিজ থেকে মেসেজ দিতাম সে আমায় অনেক ইগনোর করতো তাই তার উপর অভিমান হয়েছিলো। শেষ ফলে ওই এলাকা ছেড়ে চলে আসায় ফেসবুক থেকে বিদায় নিলাম। আসলে বিদায় নেইনি ওই আইডি বাদ দিয়ে আরেক আইডি চালাতাম হুহ।

হায়াত মুচকি হাসলো। যাক ওর এই কাজ হয়ে গেলো। হায়াত বুঝতে পেড়েছিলো আদনান ওকে পছন্দ করে তাই এভাবে বিয়েটা ঠিক করলো। আদনানের সাথে কথা বলে আদনানকে রাজি করানো হলো। আদনানের মনে নৌশিনের জন্য অনুভূতি আছে এক অজানা_অনুভূতি সেই অনুভূতিটা হায়াত জানিয়ে দিলো। আর আদনানও নাকোজ করেনি বরং খুশি হয়েছে।

★★★
হায়াত সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে ওরা বিয়ে করবে তাও এক সাথে বিয়েতে বর থাকে ৬ জন কনে থাকবে ৬ জন। একদম ইউনিক স্টাইলে বিয়ে। হায়াত অনেক ভেবে এমন আনকমন ভাবে বিয়ে করার প্ল্যান করে। আর তার এই প্রস্তাবে কেউ মানা করেনি।

হায়াত❤️আরহাম, আয়াত❤️আরনাব, আদনান❤️নৌশিন, ইভান❤️অর্পা,ইশান❤️প্রিসা,ইফাত❤️আনিশা

৬ টা জুটির বিয়ে তাও এক সাথে এই বিয়ে দেখার জন্য এলাকাবাসি অপেক্ষা করছে। সাতক্ষীরা থেকে নৌশিনের বাবা মা এসেছে সাথে আত্নীয় স্বজন ও। হায়াত বলেছে বিয়েটা এখানেই হবে হায়াতদের বাড়ি থেকেই ইভান ইশা ইফাত নতুন করে আবার বিয়ের সাঝে সাজবে।

হায়াত বলেছে ছেলে মেয়ে এক সাথেই সব করতে। তাই গায়ে হলুদ, মেহেদী সব এক সাথে করার বন্ধবস্ত করছে আরহাম।

দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলে আসলো

হলুদে বাসন্তী কালারের শাড়ি পড়েছে কনেরা আর বররা পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবি। অনেক মানুষ অনুষ্ঠান দেখতে এসেছে। একটা বড় খোলা জায়গায় অনুষ্ঠান করানো হচ্ছে। আর অনেক বড় খালি জায়গা স্কুল মাঠ ছাড়া হবে না তাই স্কুল মাঠে বড় করে সাজানো হয়েছে। ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষ সবাই আছে। বিয়েতে আত্নীয় স্বজন, ববন্ধুবান্ধব, কলিগ বিয়েতে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর পর পর ৬ টা বাইক নিয়ে এন্ট্রি দিলো ছয় জুটি। ছেলেরা বাইক চালাচ্ছে আর মেয়েরা তাদের পেছনে বসে আছে। ক্যামেরা ম্যান নানা এংগেলে ছবি তুলছে আশে পাশের সবাই এই দৃশ্য গুলো ক্যামেরা বন্ধি করছে।

হলুদে স্টেজে বসেছে ছয় জুটি। একে একে সবাইকে হলুদ দিচ্ছে সবাই। এদিকে হায়াত কতো শত ছবি। মাঝে মাঝে ক্যামেরা ম্যান বকছে।

হায়াতঃ আয়াত বেবি।

আয়াতঃ কি হয়েছে।

অর্পাঃ কি হবে সামনে দেখ।

প্রিসাঃ আহা কতো সুন্দর লাগছে হাহাহ।

আনিশাঃ কিসের কথা বলছিস তোরা।

হায়াতঃ নাস্তা থুক্কু নাতাশাকে দেখ। ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আয়াতকে চাবিয়ে খাবে।

আরহামঃ এই নাতাশা কি করেছে।

হায়াতঃ এমা আপনি জানেন না। ওফ জানবেন কিভাবে আমি বলি। এই নাতাশা আয়াতকে বলেছে নাতাশা আর আরনাব ভাইয়া নাকি রিলেশনে আছে তাই আয়াতকে বলেছে আরনাবের কাছ থেকে দূরে থাকতে।

ইভানঃ আর তোরা কি করেছিস ওর সাথে।

অর্পাঃ আমরা কি করবো।

ইশানঃ সত্য করে বল তোহ হায়াত কি করেছিস।।

প্রিসাঃ আমরা কি কিছু করতে পারি।

ইফাতঃ হ্যা সব পারিস তোরা বলতো।

আনিশাঃ বাথররুমে লক করে দিয়েছিলাম।

আরনাবঃ মানে কি। কখন কবে কোন বাথরুমে।

হায়াতঃ নাতাশা আয়াতকে বাথরুমে লক করে দেওয়ার প্ল্যান করেছিলো। আর তা আমার কানে বাতাসের গতিতে এসে পড়ে আর আমি যে যেমন তার সাথে তেমন করে দিয়েছি।

আয়াতঃ আর আজ আমায় ও আরনাবকে দেখে মুখ টা কে গরিলার মতো করে রাখছে।

সবাই হেসে দিলো। অনেক রাতে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। ছেলেরা সবাই রাতে ঘুমায়নি কাজ করেছে এরপর শেষ এ গিয়ে একটু ঘুমিয়েছে। সবাই অনেক খুশি। সব ঝামেলার অবসান ঘটে এক হতে যাচ্ছে ছয় ছয়টা জুটি। কারো মনে কারো জন্য কোনো রাগ অভিমান নেই।

পরেরদিন মেহেদীর অনুষ্ঠান রাখলো। হায়াত, আয়াত, আনিশা, অর্পা, প্রিসা,নৌশিন হালকা সবুজ রঙের ডিজাইনার থ্রিপিস পড়েছে। সাথে গর্জিয়াছ সাঝ। হায়াত সবাইকে বলে দিয়েছে। বিয়ে যতবারই হোক অনুষ্ঠানে পার্লারের সাঝ মিস দেওয়া যাবে না।

আয়াত,প্রিসা হায়াতকে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। অর্পা নৌশিনকে, আনিশা নিজেরটা নিজে। সবাই নিজে নিজে মেহেদী পরতে পারে হায়াত বাদে তাই তোহ জোর করে সবার আগে মেহেদী পড়েছে। ছেলেদের আগেই মেহেদী দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাদের হাত ধুয়ে কালকে বিয়ের জন্য কাজে লেগে গিয়েছে।

হায়াত সেই কখন থেকে বসে আছে বিরক্ত হাতের এক কোনাও বাদ রাখেনি সবা যায়গায় মেহেদী দিয়ে রেখেছে। আয়াতের হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে মেহেদী পড়াতে পড়াতে।

কিছুক্ষন পর
আরহাম হায়াতের পাশে এসে বসলো।
হায়াতঃ কোন চিপায় ছিলেন আপনি আপনার তোহ কোনো দেখাই পাইনি।

আরহামঃ কাজ করছিলাম। তোহ দেখি তোমার মেহেদী।

হায়াতঃ মেহেদীকে সাইডে রাখেন। আগে আমার সাইড ব্যাগটা নিন আর ম্যাংগোবার আছে বের করুন সেই কখন থেকে ম্যাংগোবার খাই না।

আরহাম মুচকি হেসে ম্যাংগোবার ছিড়ে হায়াতকে খাইয়ে দিচ্ছে। এই মেয়েটা এতো ম্যাংগোবার পাগলি।
কিছুক্ষন পর ইভান একটা প্লেটে করে হায়াতের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে এসেছে আর তা আরহামের হাতে দিয়ে চলে গিয়েছে। আরহাম হায়াতকে বিরিয়ানি খাইয়ে দিচ্ছে। হায়াত খাচ্ছে এরুর ইশান হায়াতের জন্য পানি দিয়ে গেলো। আর যাওয়ার আগে হায়াতের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলো। অবশেষে তার বোন হ্যাপি তা দেখে তার খুব ভালো লাগছে।

ভাই যতই ব্যস্ত থাকুক বোনের কথা মনে পড়বেই। ইফাত আয়াতকে বিরিয়ানির প্লেট দিয়ে এসেছে।আর আরনাবকে পাঠিয়েছে আয়াতকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য।

রাতে সবাই বসে বসে ঝিমাচ্ছে। হায়াত তোহ আড্ডা দিতে দিতে অর্পার কোলেই ঘুমিয়ে গিয়েছে।

আয়াতঃ এ তোহ ঘুমিয়ে গিয়েছে ওকে জাগাও বাসায় যাবো তোহ কালকে সকালে পার্লারে যেতে হবে।

প্রিসাঃ না জাগানোর দরকার নেই।এমনি দৌড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত ওকে ঘুমাতে দে। ইভানকে ডাক দে তোহ।

আনিশাঃ আমি ডেকে নিয়ে আসছি।

নৌশিনঃ এর দৌড়াদৌড়ির অভ্যাস যায়নি এখনো। হাহা আমরা গার্লস স্কুলে ছিলাম তখন আর প্রচুর দৌড়াদৌড়ি মারামারি করতাম মনে আছে তোদের।

আয়াতঃএকদম। মনে আছে বৃষ্টির সময় আনিশা পা পিছলে মাঠে পড়ে যায় সবাই সেকি হাসাহাসি।

প্রিসাঃ হ্যা এরপর হায়াত নিজের ইচ্ছায় মাঠে বসে পড়ে এরপর আমরা সবাই বসে পড়ি হাহা।

অর্পাঃহ্যা কতো তারাতারি সময় পার হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।

নৌশিনঃ তোমাদের ফ্রেন্ডশীপ দেখে অনেকের হিংসা হতো। ধন্যবাদ তোমাদের আমায় সঙ্গ দেওয়ার জন্য।

আয়াতঃ এখন তোহ দিতেই হবে আমাদের জা বলে কথা।

নৌশিন হালকা লজ্জা পেলো। বাকি সবাই হেসে দিলো।হায়াত হালকা নরে উঠায় সবাই চুপ হয়ে গেলো।

কিছুক্ষনপর ইভান আসলো।
ইভানঃকি হয়েছে।

অর্পাঃ হুসসস আস্তে।

ইভান খেয়াল করলো হায়াত ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইভান হায়াতকে কোলে নিয়ে নিলো। আজ অনেক বছর পর নিজের বোনকে কোলে নিলো মনে পড়ে গেলো ছোট বেলার কথা যখন ছোট হায়াতকে কোলে নিয়ে ওর কান্না থামাতো ঘুম পাড়াতো তিন ভাই মিলে।
আজ নিজের বোন বড় হয়ে গিয়েছে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ঘুমানোর কারনে কোলে নেওয়া। হায়াতকে কোলে দেখে ইফাত দৌড়ে আসে।

ইফাতঃ কি হয়েছে ভাই। হায়াত..

আনিশাঃ হুস আস্তে হায়াত ঘুমাচ্ছে।

ইফাতঃ ওহ ঘুমাচ্ছে আমি ভাবলাম বেহুস নাকি।

প্রিসাঃ ঘুম আর বেহুস এর কাছে একই। ডাকাত এসে নিয়ে গেলেও টের পাবে না।

★★★
পরের দিন
৬ জন কনে সেঝে গেট দিয়ে ডুকছে সবাই একই ড্রেস এক সাঝ। আরহাম হায়াতের দিকে চেয়ে আছে। আদনান না চাওয়া স্বত্বেও নৌশিনের দিকে তাকিয়ে আছে।

সবাই গিয়ে বসলো। আদনান ❤️নৌশিন ও আরনাব ❤️ আয়াতের আজকে বিয়ে পরাবে। বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।

★★★
আরহামঃ আজ আমাদের বিয়ের এক বছর হলো মোহিনী। আজকে তোমাকে আমি নিজের করে পাবো। ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য।

হায়াতঃ ঠিক আছে। আসে সেল্ফি তুলি।
আরহাম বিরক্ত হয়ে ছবি তুলছে।

হায়াতঃ নীলবাবু থেকে ট্রান্সফার হওয়ায় বরবাবু ম্যাংগোবার খাবেন।

আরহামঃ অফফো আবার ম্যাংগোবার । নাহ খাবো না তুমি খাও।

হায়াতঃ হ্যা হ্যা জানি তোহ এখন আমার ম্যাকাপ নষ্ট হয়ে যাক সেই জন্য আমায় খেতে বলছেন। আমি খাবো না হুহ।

আরহামঃ আচ্ছা আচ্ছা খেও না।

।হায়াতঃকি বললেন খাবো না আমার খাওয়া নিয়েও আপনার সমস্যা। ম্যাংগোবার পছন্দ করি এতেও কিপটামি করবেন ছি ছি ছি।

আরহাম অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হায়াত জিভ বের করে ভেংচি কেটে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আর আরহাম ওকে মানানোর চেষ্টা করছে।

★★
ইভানঃ এতো সাঝ দিলা কেন আজকে তোমার আমার প্রথম বিয়ে না। আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে গেলো।

অর্পাঃ আমার কোনো দোষ নেই যা বলার তোমার বোনকে বলো হুহহ।

ইভান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কিছু বলল না।

★★
ইশানঃ এই নিয়ে দুইবার বউ সাঝলা। আমার সব টাকা খালি খরচ করার মধ্যে আছে।

প্রিসাঃএই একদম আমার সাঝ নিয়ে কিছু বলবে। যা বলার তোমার বোনকে বলো।

ইশানঃ হ্যা এখন তোহ আমার বোনের নাম দিবা। যাতে আমি কিল ঘুষি খাই তাই না।

প্রিসা রাগি দৃষ্টিতে তাকালো।

★★
আনিশাঃ ইফাত আমাদের বিয়েটা এতো সুন্দর হবে ভাবিনি। এক সাথে ছয়টা জুটির বিয়ে। ভাবো একবার কতো মানুষ আমাদের দেখতে এসেছে বিনা দাওয়াতে।

ইফাতঃ হ্যা দেখবেই তোহ ছয়টা ডাইনি এক সাথে সেঝে এসেছে তাই দেখতে আসছে। ছয় ডাইনি এক সাথে সাঝলে কেমন লাগে।

আনিশাঃ কি বললা আমরা ডাইনি দাড়াও। হায়াত (ডাক দিলো আর ওমনি ইফাত আনিশার হাতে চিমটি কাটলো) আউচ কি করছো আহ আমার হাত।

ইফাতঃ আমাদের মাঝে হায়াতকে কেনো ডাকছো বলো তোহ।

আনিশাঃ ভিতুর আন্ডা।

★★
আয়াতঃ দুই ভাই এমন এক সাঝ দিলেন কেনো আমার প্যাচ লেগে গেছে।

আরনাবঃ আচ্ছা আর তোমরা যে এক ড্রেস এক সাঝ দিয়েছো আমি কি কিছু বলেছি।

আয়াতঃ ঢং এতো সুন্দর করব ব্রাইডাল সাঝ দিলাম কোথায় আমার প্রশংসা করবে তা না করে ঝগড়া শুরু করেছো।

আরনাবঃ আমি ঝগড়া করি না ঝগড়া তুমি করছো ঝগড়াটে দলের মেম্বার।

আয়াতঃ তোমায় একবার একা পাই সিব সুদে আসলে মিটিয়ে দিবো।
আরনাব ঢোক গিলল।

★★
নৌশিনঃএভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন কেনো। আমার দিকে নজর দিবেন না। আমি জানি আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

আদনানঃ ইশ আসছে সুন্দরী আস্ত একটা ডাইনি লাগছে তোমায়।

নৌশিনঃ কি বললেন ডাইনি। হ্যা হ্যা এই ডাইনিকেই আপনি বিয়ে করছেন কিছু করার নেই। আর হ্যা আমার হাতের রান্নায়ই আপনার খেতে হবে তাই বুঝে বুঝে শুনে কথা বলবেন কারন সবজির মধ্যে করলাও আছে লাল মরিচও কাচা মরিচও আছে হুহ।

আদনান ভ্রু কুচকে আছে। নৌশিন মিটিমিটি হাসে।

অতপর ছয়জন জুটি এক সাথে ছবি তুলল।
অবশেষে সব মান অভিমান রাগ দুঃক্ষ কষ্টের অবসান ঘটে। যার যার মনের অজানা_অনুভূতি টাকে জেনে এক সাথে পথ চলার প্রতিজ্ঞা করল। ভাই বোনের ভালোবাসা। বান্ধুবিদের নিয়ে ঝগড়া করা ঘুরাঘুরি। ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে এক সাথে পথ চলা নিয়েই বেচে থাকুক হায়াত ও ওর কাছের মানুষ গুলো।

❤️❤️❤️❤️❤️❤️সমাপ্ত ❤️❤️❤️❤️❤️❤️

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here