অজানা_অনুভূতি পর্ব ৯+১০

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ৯
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

আরহাম চারপাশ পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে। কোথাও হায়াত নেই। সে গাড়ির কাছে এসে দাড়ালো। ভাবছে সবাইকে কি জবাব দিবে। নিজের পরিবার ও হায়াতের পরিবারকেই বা কি জবাব দিবে। এমনটা না হলেও পারতো। হায়াত তুমি কোথায়।
আরহাম ভিজে একাকার হয়ে আছে। হাতে হায়াতের ছাতাটা নিলো। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আরহামের।
আরহাম পকেটে থেকে ফোন বের করলো ফোন ভিজে গিয়েছে। যেকোনো সময় অফ হয়ে যেতে পারে। ফোনের স্ক্রিনে আদনান নাম ভেসে উঠছে। ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। আরহামের শরীর কাপছে। ফোন রিসিভ করলো।

আরহামঃ হ্যালো ভাই

আদনানঃ আরহাম কোথায় তুই।

আরহামঃ হ্যালো হ্যা ভাই শোনা যাচ্ছে না। হ্যালো
বৃষ্টির কারনে নেটওয়ার্ক সমস্যা তার উপর মেঘের আওয়াজে৷ শোনা যাচ্ছে না।

আদনানঃ হ্যা আরহাম তুই যলদি আমাদের এক্সট্রা বাড়িতে চলে আয়। যেখানে আমরা আগে এক সাথে থাকতাম।(জোরে বলল)

আরহামঃ ভাই আমি এখন আসতে পারবো না আমি ব্যস্ত।

আদনানঃ তুই যেই কাজে ব্যস্ত সেই কাজের সমাধান আমার কাছে চলে আয় যলদি। চলে… হ্যালো হ্যালো

ফোন কেটে গেলো।আরহামের ফোন অফ হয়ে আছে। আদনান ভাবছে আরহাম শুনেছে কি না।

১০ মিনিট পর
আরহাম গাড়ি নিয়ে আদনানের বাড়িতে এসেছে। এই বাড়িটা ফাকা থাকে ছোট বেলায় আরহাম, আরনাব ও আদনান এক সাথে এখানে থাকতো আড্ডা দিতো। আরহাম ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে এসেছে। বেশি দূরে না তাই তারাতারি এসে বাড়িটার ভেতরে গেলো। ১ তলা বাড়ি তেমন বড় নয়। ৩ টা রুম আছে।

কলিং বেল চাপার সাথে সাথেই দরজা খুলল আদনান। মনে হচ্ছে আরহামেরই অপেক্ষায়।

আদনানঃ একি আরহাম তুই তোহ একদম ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিস। চল যলদি।

আরহামকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। আরহামের হাতে আদনানের টিশার্ট আর টাউজার দিলো।

আরহাম রুমে গিয়ে অবাক। কারন চাদরে মোড়ানো খাটে নিস্তেজ হয়ে আছে হায়াত। আরহাম তারাতারি হায়াতের কাছে গেলো।

আরহাম কয়েকবার হায়াতকে ডাকলো কোনো সাড়া শব্দ পেলো না। হায়াতের গা একদম গরম হয়ে আছে।

আরহাম যলদি বের হয়ে কিছু বলবে তার আগেই আদনান বলল
আদনানঃ একি তুই এখনো চেঞ্জ করিসনি।ঠান্ডা লাগবে তোহ যা যলদি।

আরহাম কিছু বলতে যাবে তার আগে।

“আদনান বাবা রান্না ঘরে তোহ কিছু নাই তোমরা খাইবা কি “(একজন মহিলা)

আরহামঃ রহিমা খালা।

আদনানঃ খালা সমস্যা নেই আমি দেখছি কি করা যায়।

রহিমাঃ তোমরা আইবা আমারে আগে কইবা না। তাইলে আমি রান্না কইরা তোমাগো খালুর সাথে সাথে তোমগো লিগাও নিয়ে আইতাম।

আদনানঃ আসলে হুট করে আসছি তো।

রহিমাঃ আইচ্ছা আমি আরহামের বউয়ের কাপর বদলায় দিছি৷ তোমরা খেয়াল রাইকো। আরহাম বাবা তোমার বউয়ের খেয়াল রাখোনা নাকি। আর তুমিও তোহ দেখি ভিজে গেছো যাও কাপর বদলাও। বউয়ের কাপরডি আমি ধুয়ে পাশের রুমে শুকাইতে দিছি। আইচ্ছা আমি যাই এইবার।

আদনানঃ খালা আপনি একা কিভাবে যাবেন।

রহিমাঃ চিন্তা কইরো না তোমার খালু আমারে দিয়ে আইবো নে।

আদনানঃ আচ্ছা।
আদনানের বাড়ি দেখাশোনার জন্য একজন লোককে রাখা হয়েছিলো উনার স্ত্রী হলো রহিমা। ভাগ্য ভালো যে ওনাকে আসার সময় পেয়ে গিয়েছিলো। উনি খাবার আর ছাতা দিতে আসছে ওনার স্বামীর জন্য। উনি চলে যাবে এমন সময় আদনানের সাথে দেখা।এরপর আদনান উনাকে একটা টিশার্ট ও টাউজার দিয়েছিলো। কারন এছাড়া মেয়েদের পোশাক নেই আদনানের কাছে রহিমা খালা চলে গেলো।আরহাম পোশাক বদলে হায়াতের পাশে বসলো।

হায়াতের গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। জ্বরে কাপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে। এতো বৃষ্টিতে ডাক্তার আসবেও না। চারপাশ ঝড় শুরু। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো। ফোনও নেই। গাড়িতে হায়াতের ফোন। বাসার সবাই চিন্তা করছে। হায়াতের অবস্থাও ভালো নয়। কি করবে আরহাম চিন্তায় পড়ে গেলো। নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করছে।

মোম বাতি এক হাতে আরেক হাতে একটা বাটি নিয়ে এসে আরহামের পাশে টুল টেনে বসলো।

আদনানঃ এই নে ফোন করে সবাইকে বল আজকে বৃষ্টির কারনে তোরা বাসায় যেতে পারবি না(ফোন এগিয়ে দিলো)

আরহাম ফোন নিয়ে আরনাবকে জানিয়ে দিলো।
আরহাম হায়াতের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।
আরহামঃ আদনান ভাই হায়াতকে তুই কোথায় পেলি।

আরহামের কথার উত্তর না দিয়্ব পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আদনান,
আদনানঃ হায়াতের এই অবস্থা কিভাবে হলো। তুমি কোথায় ছিলে?

আরহাম আদনানের কথা আচ করতে পেড়েছে।
আরহামঃ নিশ্চুপ।

আদনানঃ মিটিং শেষ করে আসছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামালাম বৃষ্টির কারনে চেহারা দেখতে পারছিলাম না। পড়ে খেয়াল করে দেখলাম। হায়াত চুপচাপ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে পাশেই খোলা ছাতা হয়তো হায়াতের সে বাতাসে হালকা দূরে চলে যাচ্ছে সেদিকে হায়াতের কোনো খেয়াল নেই। আমি বের হয়ে হায়াতকে ডাকলাম জিজ্ঞেস করলাম সে শুধু এক নজর আমার দিকে তাকালো আর তোর নাম নিয়ে পড়ে গেল। ওকে গাড়িতে করে নিয়ে আসি বুঝলাম অনেক্ষন ধরে বৃষ্টিতে ভিজতেছে। যার ফলে ঠান্ডায় বেহুশ হয়ে যায়।বৃষ্টির কারনে ডাক্তার ডাকতে পারিনি তাই তোকে বললাম। আর হ্যা মনে হয়না কারেন্ট আসবে। মোম বাতি আরো আছে আমি দিয়ে যাবো আর হ্যা তোদের জন্য কাপ নুডলস আছে এছাড়া আর কিছুই নেই গরম গরম নুডলস খাইয়ে দিস হায়াতকে।

আরহাম মন দিয়ে আদনানের কথা শুনছে। আদনানের কথার উপর কখনো কথা বলেনি আদনান কিভাবে যেনো আরহামের সমস্যা আচ করতে পারে। হয় বড় ভাই বলে সে সব সময় আরহামকে সাহায্য করে। আজকের কথা গুলো আরহাম বুঝে গিয়েছে। তার ভুল বুঝতে পেরেছে।

আদনানঃ মেয়েটা খুব ভালো। ওকে কষ্ট দিস না। আরহাম সব কিছুর সমাধান আছে। যতই সমস্যা হোক তা সুন্দর করে মোকাবিলা করা উচিত। একজনের ভালো করতে গিয়ে আরেকজনের খারাপ করাটা ঠিক হবে না। যাইহোক তোরা থাক আমি বাসায় যাচ্ছি।

আরহাম আদনানকে কে জড়িয়ে ধরলো। আদনান হাসলো।

আদনানঃ তুই আর হায়াত থাক এখানে বাসায় আম্মু আছে তাই যেতে হবে। জানিসই তোহ আমার অপেক্ষায় থাকে। বাবাও বাড়িতে নেই। ৫ বার কল করেছে। আর হ্যা নিজেদের খেয়াল রাখিস।

আরহামঃ ভাই ফুপ্পির খেয়াল রাখিস।আর ওনার সাথেই থাকিস। সাবধানে থাকিস।

আদনান চলে গেলো।আরহাম হায়াতের পাশে বসে আছে। মোমবাতির আলোয় হায়াতের চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে৷ কেমন যেনো মলিন হয়ে আছে। আরহাম রেস্তোরাঁতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৩০ মিনিট লেগেছে আর এই এরপর ওখানে থেকে আসতেও ৩০ মিনিট। আর আদনান ভাই ১০ মিনিট আগে পেয়েছে এরমানে ৪০ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজছিলো। এমনিতেই হায়াতের শরীর দূর্বল ছিলো তাই বেহুস হয়ে গিয়েছে।
আরহামের অনেক খারাপ লাগছে এভাবে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি। বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসলেও পারতো।

হায়াতকে উঠিয়ে জোর করে নুডলস খাইয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তা বমি করে বের করে ফেলে। আরহাম নিজে হাতে তা পরিষ্কার করেছে। হায়াত আরহামকে এক নজর দেখে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।

রাত ১ বাজে আরহাম হায়াতের মাথায় পানি ঢেলে।চোখ মুখ হাত পা মুছে দিয়ে শুয়ে দিলো। গায়ের তাপমাত্রা একটু কমেছে।
আরহাম হায়াতের হাত শক্ত করে ধরে আছে। আজ আরহামের মনে পরলো অনেক দিন আগের কথা।
সে হায়াতকে নানান ভাবে অত্যাচার করেছে আর হায়াত চুপ করে কেনো সহ্য করেছে তাও ভালো করে বুঝেছে। নিজের জন্য যখন কাছের মানুষের ক্ষতি হয় তখন কেমন লাগে তা হারে হারে এই ৫ মাসে টের পেয়েছে আরহাম। নিজের কাছের মানুষকে বাচাতে হলে কতো কিছু করতে হয় তা বুঝলো। তাই তোহ একটু হাসি খুশি দুষ্টু মেয়ে কিভাবে যেনো ধৈর্যশীল হয়ে উঠেছিলো। চুপ থাকাটাকে আপন করে নিয়েছিলো।

অনেক দিন আগে আরহাম বাহির থেকে এসেই খাটে শুয়ে পড়ে। হায়াত তখন কাজ করছিলো। আরহাম চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ নিজের কপালে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে দেখলো হায়াত আরহামের কপাল গলায় হাত দিয়ে দেখছে।

হায়াতঃ একি আপনার গায়ে তোহ প্রচুর জ্বর। সারাদিন এই জ্বর নিয়ে কোথায় ছিলেন বলেন তোহ।

আরহামঃ যেখানেই ছিলাম তোমার কি আমার ঘিম পাচ্ছে তাই বিরক্ত করো না। আরহাম শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর হায়াত হাতে একটা বোল নিয়ে আসলো সাথে বালতি। আরহামকে টেনে উঠিয়ে শার্ট খুলে দিলো। এরপর শুয়ে মাথায় পানি ঢালছে আর বকবক করছে।

হায়াতঃ আমার যখন জ্বর হতো তখন আম্মু নয়তো ভাইয়ারা আমার মাথায় পানি ঢেলে দিতো আর যাদুর মতো আমার জ্বর কমে যেতো। এরপর আম্মু না থাকায় আয়াত আমার মাথায় পানি ঢালতো। জানেন আমার জ্বরের সময় আয়াত কতো কিছু যে রান্না করতো। হাহাহা তখন ওর হাতের রান্না খেতে হতো। এটা সেটা বানিয়ে নিয়ে আসতো আর ওর হাতে যাদু আছে ওর হাতের রান্না খেলে জ্বর কমে যায়। একদিন বলবো নে আপনাকে রান্না করে খাওয়াতে। আরে বলার দরকার কি ও তোহ এবাড়িতেই থাকবে তাই না।

আরহাম চুপচাপ হায়াতের কথা শুনছে। শরীরটা দূর্বল লাগছে।এরপর হায়াত আরহামের শরীর মুছে দিলো হাত পা ধুয়ে শুইয়ে দিলো।
আরহাম ঘুমিয়ে ছিলো ওকে টেনে উঠিয়ে সুপ খাইয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপছে। সারারাত হায়াত আরহামের পাশে বসা ছিলো। সকালে আরহামের ঘুম ভেঙে যায় আর হায়াতকে নিজের কাছে দেখে অবাক কারন হায়াত মেঝেতে বসে খাটে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আরহাম তা দেখে ভাবলো ডাক দিয়ে খাটে শুতে বলবে।

তার আগেই আরহামে ফোন বেজে উঠলো। আর হায়াতের ঘুম ভেঙে গেলো।
আরহামঃ হ্যালো জেসিকা বলো।

জেসিকাঃ কোথায় তুমি এখনো আসোনি কেন।

আরহামঃআসলে একটু জ্বর হয়েছে তোহ।

জেসিকাঃ তোমার ওসব বাহানা শোনার সময় আমার নেই যলদি চলে আসো।

আরহামঃ আমি আসছি ১০ মিনিট…

হায়াত আরহামের কাছ থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিলো।
ফোন নিয়ে বারান্দায় গেল আরহামকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলল।

হায়াতঃ হ্যালো মিস জেসিকা কোনো কি কমন সেন্স নেই। আচ্ছা কেমন ভালোবাসা এটা হ্যা। যেখানে ভালোবাসার মানুষটা অসুস্থ কোথায় জিজ্ঞেস করবে খেয়েছো কি না ঔষধ খেয়েছো কি না তা না করে যলদি চলে আসো।

জেসিকাঃ এই মেয়ে তুমি আরহামের ফোন ধরেছো কেন।আরহামকে ফোন দেও তোমার লেকচার তোমার কাছেই রাখো।

হায়াতঃ আমি মিসেস আরহাম চৌধুরী যেখানে আমার বর অসুস্থ সেখানে আমি তাকে এই শরীর নিয়ে যেতে দিবো ভাবলে কি করে। শোনো জেসিকা। আর একবার যদি আরহামকে কল দিয়ে বলেছো যে আসো তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। অর্পার বার্থডের কথা তোহ মনে আছে নাকি।

বলেই ফোন কেটে আরহামকে দিয়ে দিলো।
এই কথা গুলো আরহামের ফোনে রেকর্ড ছিলো তাই মাঝে মাঝে হায়াতের আড়ালে শুনতো আরহাম।

আজ সেইদিনের কথা মনে পরে গেলো। না চাওয়া স্বত্বেও হায়াতকে কিছু বলতে পারতো না আরহাম।
আরহাম হায়াতের পাশে বসে এইসব ভাবছে কতো কি না করেনি হায়াতের সাথে সে। নিজে ধুয়ে রাখা কাপর ভিজিয়ে তা হায়াতকে দিয়ে ধুয়েছে। সবার সামনে নিজেদের সুখী দেখালেও রুমে চলতো মানসিক অত্যাচার। কখনো শ্যাম্পু ফেলে দিতো তোহ কখনো শাড়ি কেটে ফেলতো।

এইতোহ আরহাম হায়াতের একটা সুন্দর শাড়ি ✂ কাচি দিয়ে কেটে দিয়েছে। হায়াতও আরহামকে নিয়ে শপিংমল এ গিয়ে সবার সামনে মাটিতে বসে পড়েছে। কারন ওর ওই সেম শাড়িই চাই। অনেক খুজে খুজে শাড়িটা কিন্তু হয়েছিলো। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছিলাম। শাড়ির জন্য আম্মু কাছ থেকে কিনা বকা খাইয়েছে হায়াত।

এই ৫ মাসে জেসিকা হায়াতের সাথে কি না করেনি কখনো গরম কফি হাতে ঢেলে দিয়েছে তোহ কখনো চুইংগাম চুলে দিয়ে দিয়েছে সব কিছুর মাঝে হায়াত চুপ করেছিল। আমিও যে নিরুপায় ছিলাম। নিজের বোনের ক্ষতি কে চাইবে তাই তোহ সব অত্যাচার সহ্য করেছিলো। আরহাম ভাবলো হায়াতকে সব সত্যি বলে নিজের সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবে। এই ৫ মাসে হায়াতকে ভালো করে বুঝে গিয়েছে আরহাম। আরহামের মনেও হায়াতকে নিয়ে এক অজানা_ অনুভূতি আছে সেটা বুঝতে পারছে না সে।

পরেরদিন হায়াত ঘুম থেকে উঠে দেখলো আরহাম মেঝেতে শুয়ে আছে। গায়ের জ্বর নেই বললেই চলে সারারাত আরহাম হায়াতের মাথায় জলপট্টি দিয়েছে। জ্বর একদম কমে গিয়েছে। হায়াত উঠে আরহামের গায়ে চাদর দিয়ে বাথরুমে চলে গেলো । ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো। নিজের ড্রেস শুকিয়ে গিয়েছে তা পড়ে আদনানের ড্রেস ধুয়ে রোদে দিলো। বাহিরে অনেক রোদ। বুঝবেই না যে কাল এতো বড় ঝড় গিয়েছে।

আরহামকে ঢেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো হায়াত।

বাসায় পৌঁছে সবাইকে একটা বানোয়াট কাহিনি বলে দিলো। আরহাম অবাক হয়েছিলো সে ভাবলো বাসায় এসে সবাইকে বলে দিবে। আরহামও বলবে কিন্তু হায়াত না বলায় আরহামও বলল না।হায়াতকে স্বাভাবিক দেখে আরহামের অবাক লেগেছিলো।এরমাঝে জেসিকা হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলো। কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।আরহাম মনে মনে খুশি হলো তারপর একটা টেনশন হঠাৎ কোথায় গেলো।

জেসিকার নানী থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করে আসছে। জেসিকার বাবা মা বলেছে এমন অনেকবার জেসিকা করে বেরায় হটাৎ করেই গায়েব হয়ে যায় সে আসলে ঘুরে বেরায় কাউকে কিছু না বলে তাই তারা
নিশ্চিন্তে আছে।

একটা অন্ধকার রুমে বেধে রেখেছে জেসিকাকে মুখে টেপ লাগানো। দুইজন ব্যক্তি আসলো আর জেসিকার সামনে বসলো।
জেসিকা অবাক হয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
গরম গরম ৫ কাপ কফির গ্লাস সামনে রাখা আছে।

একটি মেয়ে অনেক গুলো প্রশ্ন করছে আর হাতে গরম কফি ঢালছে।
জেসিকার চিৎকারে রুম কেপে উঠছে। ওর এই চিৎকার বাহিরে কারো কানে পৌছাবে না।

★★
হায়াতরা কলেজ করে ফুসকার দোকানে বসলো।
হায়াতঃ বান্ধুবিরা চলনা আজকে ব্রিজের উপর ঘুরে আসি।

আয়াতঃ হ্যা অনেক দিন ধরে যাই না।

প্রিসাঃ তোর ভাই জানলে আমাকে পিটাবে।

আনিশাঃ ধ্যাত কেমন বর তোর হ্যা।

প্রিসাঃ তোর ভাসুর হয় রেস্পেক্ট দে।

আনিশাঃ আমার আর ভাসুর হাহাহাহা

অর্পাঃ এভাবে পাগলের মতো হাসতেছিস কেনো।

আনিশাঃ হাসবো না তোহ কি করবো বল।

হায়াতঃ হাওয়াই মিঠাই।

আনিশাঃ হাওয়াই মিঠাই দিয়ে কি করবো।

হায়াতঃ ওই যে হাওয়াই মিঠাইওলা যাচ্ছে চল। অনেক দিন ধরে খাইনা খেয়ে আসি।

হায়াত দিলো এক দৌড়।
অর্পাঃ আজকে হায়াতকে কেমন যেনো লাগছে। এতোদিন তোহ চুপচাপ ছিলো।

আয়াতঃ জেসিকা ডাইনি নাই তোহ তাই ভালো আছে।

প্রিসাঃ তাই হবে চল আমি গেলাম হাওয়াই মিঠাই খেতে।

হায়াতরা হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে। হায়াত হেসে হেসে কথা বলছে। আজকে ইভান ইশান ইফাতকে হায়াত আসতে বলেছে। ওদের টাকা দিয়ে শপিং করবে। আরহাম ও আরনাব ক্লাস শেষ করে চলে এসেছে।

হায়াতরা শপিংমল ঘুরছে।
ইভানঃ আর কতো এতো ঘুরো কেনো তোমরা বলো তোহ কিছু তোহ কিনলা না।এক জিনিস ৫ টা দোকানে ঘুরে ঘুরে কিনো।

অর্পাঃ তুমি বুঝবা না। চুপচাপ চলো।

হায়াত একটা চুড়ির দোকানে গেলো। অনেকগুলো চুড়ি কিনলো আর বিল দিলো ইভান। কানের দুল কিনলো তার বিল দিলো ইশান। দুইটা শাড়ি কিনলো তার বিল দিলো আরনাব। দুই জোড়া জুতা কিনলো তার বিল ইফাত দিয়েছে। আসলে হায়াত জোর করে সবাইকে একে একে বিল দিতে বলেছে।

ইফাতঃ অনেক কষ্টে পকেট মানি থেকে টাকা বাচিয়েছিলাম। আর তা শেষ করে দিলি তুই।

হায়াতঃ হুউহ এখনই এমন করিস বিয়ের পর কি করবি কিপটা।

ইফাতঃ অফ এই এক কথা শুনতে শুনতে আমার কান শেষ।

হায়াতঃ হ্যা হ্যা এখন তোহ আমার কথা ভালো লাগে না।একদিন বুঝবি।

সবাই হেসে দিলো। হায়াতও হাসছে অনেক হাসছে।
এরপর সবাই কেনা কাটা করে একটা রেস্তোরাঁতে গেলো।

প্রিসাঃ কি খাবা সবাই।

হায়াতঃআইসক্রিম খাবো।

আয়াতঃএখন আইসক্রিম খাওয়ার সময় না অন্য কিছু অর্ডার কর।

সবাই অর্ডার করছে। হায়াত খাচ্ছে আর খাবের মাঝে মাঝে ম্যাংগোবার খাচ্ছে।

অর্পাঃ এই তুই কোন স্টাইলের খাওয়া খাচ্ছিস বলতোহ।

হায়াতঃ হায়াতের স্টাইলে। তুই খাবি।

অর্পাঃ সম্মান দিয়ে কথা বল আমি তোর ভাবি হই।

হায়াতঃ তুইও সম্মান দিয়ে কথা বল আমিও তোর ভাবি হই।

সবাই হেসে দিলো। আরহাম হায়াতের আগের রুপ দেখে খুব খুশি হলো।হায়াতের সাথে সব কিছু ঠিক করার প্ল্যান করছে। খাবারের বিল হায়াত দিয়েছে।

হায়াতঃ আমার নজরানার টাকা দিয়ে খাইয়েছি তোদের।হু

ইফাতঃ খুব ভালো আমাকে কিছু টাকা দিয়ে দে।

হায়াতঃ এহ আসছে আমার টাকা নিতে দিবো না।

ইশানঃ ঠিক আছে দিস না সেই টাকা দিয়ে আমাকে কিছু কিনে দে।

হায়াত্নঃ দিবো নে পড়ে ওকে।

আরহাম ও হায়াতের বিয়ের আর ৬ মাস হতে মাত্র ৭ দিন বাকি।
আরহাম বসে বসে টিভি দেখছিলো হায়াত আসলো।
হায়াতঃ শুনুন নীলবাবু থেকে ট্রান্সফার হওয়া বরবাবু।

আরহাম ভ্রু কুচকে তাকালো।
হায়াতঃ আপনার জন্য পাস্তা রান্না করেছি এই নিন(বাটি এগিয়ে দিলো)

আরহামঃ তুমি রান্না করেছো।

হায়াতঃ হ্যা আমি (ভাব নিয়ে) সবাইকে দিয়েছি ইউটিউব থেকে নতুন রেসিপি দেখেছি।

আরহাম খাচ্ছে।হায়াত হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
হায়াতঃ আব বরবাবু বলছিলাম কি আপনি যদি কলেজ থেকে ছুটি নিতেন তোহ ভালো হতো।

আরহামঃ কেনো।

হায়াতঃ আমি কিছুদিন আপনার সাথে সময় কাটাতে চাই। একটু ঘুরবো। অনেক জায়গায়ই তোহ ঘুরা হয়নি তাই। বাসায় আর ভালো লাগছে না।প্লিজ।

আরহাম একটু ভেবে রাজি হয়ে গেলো।
আরহামঃ ঠিক আছে।

হায়াতঃ খুশি হয়ে ধন্যবাদ।

এরপর হায়াত ও আরহাম ঘুরতে গেলো ড্রিম হলিডে পার্ক। সেখানে একদিন ঘুরে। আরো অনেক জায়গা ঘুরলো। আরহাম হায়াতকে প্রথম মন থেকে শপিং করিয়ে দিলো। এরপর সারা রাত লং ড্রাইবে যেতো। রাতে হায়াত ও আরহাম ব্রিজের উপর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতো। আরহামের কাছে দিনগুলো খুব ভালো লাগছিলো। হায়াতকে নিয়ে তার মনের অনুভূতিটাকে বুঝতে শুরু করছিলো।

হায়াত ওর একটা আংটি ছিলো তা বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে সবার জন্য গিফট কিনে গিফট দিলো। সবাইকে মজার মজার নতুন নতুন রান্না করে খাওয়াচ্ছিলো। শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির সবাই অনেক খুশি ছিলো।

আর মাত্র ২৪ ঘন্টা বাকি আছে ৬ মাস হতে। হায়াত বাবার বাড়ি গিয়ে সবার সাথে কথাবার্তা বলে সময় কাটালো। আরহাম হায়াতকে নিজের মনের অনুভূতিটা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

চলবে#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ১০
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat

আজ হায়াত ও আরহামের বিয়ের ৬ মাস পূর্ন হলো।
আরহামের জন্য আজ এক নতুন সকাল সে হায়াতকে তার অনুভূতির কথা জানাবে।

সকালে ৭ টা ঘরির এলামে ঘুম ভাঙ্গলো আরহামের। আরহাম বিরক্ত নিয়ে এলাম বন্ধ করলো। ঘড়িতে ৭ টা বাজে দেখে অবাক।আজ হায়াত তাকে কেনো জাগালো না। তা নিয়ে তার হালকা রাগ হলো সকাল সকাল মুড নষ্ট করতে চায় না তাই ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেলো। গোছল করে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। বের হয়ে অবাক আজ হায়াত তার ড্রেস আয়রন করে রাখলো না কেনো এবার প্রচুর রাগ লাগছে নিজেই ড্রেস বের করে পড়লো। ঘড়ি রুমাল কফি কিছু আজ হায়াত নিয়ে আসলো না তার জন্য রাগ লাগছে আরহামের এই ৬ মাসে হায়াতের কাজ গুলো একদম অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। অভ্যাসের হালকা পরিবর্তন হলে আমাদের রাগ লাগে। তেমনি আজ আরহামের ভালো লাগছে না।

আরহাম রেডি হয়েছে। শার্ট পরবে এমন সময় দরজায় নক। আরহাম ভাবলো হায়াত এসেছে। দরজা খুলে আচ্ছা মতো বকবে ভেবে নিলো।

দরজা খুলে আরহামের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। কারন দরজায় মিনা(কাজের মেয়ে) দাঁড়িয়ে আছে।
আরহাম কিছু বলার আগে মিনা বলল

মিনাঃবড় ভাইজান বউমনির কি শরিল খারাপ নাকি আজকা যে রান্ধন ঘরে আইলো না।

মিনার কথা অবাক হলো আরহাম,। ভাবলো হয়তো অন্য কোথাও হবে।
আরহামঃ হায়াত তোহ রুমে নেই হয়তো বাড়ির পেছনের রাস্তায় হাটাহাটি করছে।

মিনাঃ না ভাইজান পেছনে তোহ বড় নানী(আরহামের দাদী) আর বড় খালাম্মা(আরহামের মা) সেই সকালে হাটতাছে।

আরহামঃ আচ্ছা তাহলে অন্য কোথাও হবে তুমি খুজে দেখো। বাগানে হতে পারে।

মিনা চলে গেলো আরহামের টেনশন হচ্ছে। আরহাম খাটের উপর বসে নিজে ফোন হাতে নিয়ে হায়াতের নাম্বার ডায়েল করলো। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় ফোন বন্ধ। আরহাম টেনশনে পড়ে গেলো। হায়াত কোথায়। কিছুক্ষন পর মিনা এসে জানালো হায়াত কোথায় নেই। আরহাম টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। যলদি অর্পার নাম্বারে ফোন দিলো।

অর্পাঃ হ্যালো হ্যা ভাইয়া কেমন আছো।

আরহামঃ অর্পা হায়াত কি তোর ওখানে গিয়েছে।

অর্পাঃ হায়াত এখানে কেনো থাকবে। কি হয়েছে ভাই তোমার গলা এমন ভারি ভারি লাগছে কেনো

আরহামঃ অর্পা আমি পরে কথা বলছি।

আরহাম যলদি বের হলো সারাবাড়ির আনাচে কানাচে খুজলো। আরহামের চাচী বলল আরহামের দাদী ও মা আসেনি তাই হয়তো ওনাদের সাথে গিয়েছে। আরহাম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রুমে এসে বসলো। প্রচুর ঘামছে আরহাম।। মাথার উপর ফ্যান চলছে। আরহাম উঠে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ালো চুল ঠিক করে হাতের ঘড়ি নিতে গিয়ে চোখ পরলো একটা কাগজে। যা আরহামের ঘরির নিচে ছিলো। অন্যান্য সময় কাগজ ফেলে দিতো কিন্তু আজ হাতে নিলো। খুলে দেখলো চিঠির মতো চোখ ভুলিয়ে শেষ এ হায়াতের নাম দেখলো। তারাতারি বসে পড়া শুরু করলো।

***
প্রিয় নীলবাবু

আশা করি ভালো আছেন। আজ নীলবাবু বললাম কারন কি জানেন আজ আমাদের বিয়ের ছয়মাস পূর্ন হলো। আপনি হয়তো সকালে উঠে প্রচুর রেগে গিয়েছেন আপনাকে কেনো জাগায়নি।তাইতো এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম।এখন থেকে এটাই ব্যবহার করবেন। আর হ্যা আমার চিঠিটাকে গরুর রচনা মনে করবেন না।অনেক কথা তোহ তাই বড় করে লিখলাম। যাইহোক আপনি বলেছিলেন কাগজে সিগনেচার করে কবুল বলে বিয়ে করলেই বিয়ে হয় না মন থেকে মানলে বিয়েটা পূর্ন হয়। আজ আমি বলবো তেমনি কাগজ কলমে ডিভোর্স দিলেই ডিভোর্স মন থেকে মেনে দিতে হয়। অবাক হবেন না আচ্ছা একটা কথা বলুন তোহ আমার কি দোষ ছিলো বলতে পারবেন নাহ পারবেন না। আপনি বলেছিলেন আমি বিয়েতে মানা কেনো করিনি জানেন আপনি যেই পরিস্থিতির শিকার ছিলেন আমিও তেমন পরিস্থিতির শিকার। যাক আমি বেশি কিছু লিখবো না কারন অনেক রাত আর আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন। আপনি কিন্তু ঘুমের মাঝে নাক ডাকেন হু। হাহাহাহা। ওম আচ্ছা আপনি কি সত্যি জেসিকাকে ভালোবাসতেন নাকি মোহে পড়েছিলেন। আচ্ছা জেসিকা যদি অন্য কোনো ছেলের সাথে হেসে কথা বলতো তখন কি আপনার অনেক রাগ লাগরো নাকি স্বাভাবিক ভাবে নিতেন। একবার ভাবুন জেসিকা গায়েব হওয়ায় আপনার কেমন লেগেছে আর আমার ওইদিন গায়েব হওয়ায় তখন কেমন লেগেছে। আমাদের দুজনকে এক ভাববেন না। একটু আমার কথা গুলো ভাববেন। অফ আমিও না। আমি জানি নীলবাবু আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন তা বাধ্য হয়ে করেছেন। আপনি আপনার ফুপ্পিকে খুব ভালোবাসেন৷ জেসিকা ও তার পার্টনার আদনান ভাইয়ার বাড়িতে একটা মেয়েকে কাজের মেয়ে হিসেবে পাঠায় যে জেসিকাকে আপডেট দিতো। ওই তো কিছুদিন আগে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন আর আপনাকে ছোট খাটো ট্রেলার হিসেবে আদনান ভাইয়ার মাকে সিড়ি থেকে ফেলানো হয়েছিলো। আমি আসলে তার জন্যে সত্যি দুঃক্ষিত আমার কারনে ফুপ্পিমায়ের পা মচকে গিয়েছিলো। আমি জানি আপনি যা যা করতেন সব ওই জেসিকা ও ওর পার্টনার আপনাকে দিয়ে করাতো। জেসিকা আর তার বোন জেনির প্রতিশোধ যে নিতে হবে। আমি সব জানি আর আপনাকে তার জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু একবার আমাকে বলতে পারতেন।আচ্ছা আমাকে না বলতেন আরনাব ভাইয়া আছেন যেহেতু আয়াতকেও এর মাঝে আনা হয়েছে, নয়তো আদনান ভাইয়াকে বলতেন। আপনি নিজের কোনো বুদ্ধি খাটালেন না।যেভাবে নাচিয়েছে ওইভাবে নেচেছেন। আপনাকে তোহ মুলার জুস খাওয়ানো উচিত।আবার আমাকে বলেন আমি কম বুঝি ।আর আপনি আমাকে কখনো ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চান নি আপনার মনে আছে কক্সবাজারের কথা জেসিকা রুমে এসে আমায় বের করে দিতো আর আমি সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকতাম আর আপনি দূর থেকে আমাকে পাহারা দিতেন। আমি দেখেছিলাম আপনাকে।জানেন আমার বড় ভাই বলতো আমার চোখ নাকি বাজ পাখির মতো দূর থেকেও দেখতে পাই। আপনাকে জেসিকা অনেক বেশি শাস্তি দিয়েছিলো। আপনাকে দিয়ে কাপর ধোয়াতো৷ রান্না করাতো। সব আমি জানি ভাবছেন কিভাবে বলবো বলবো। ওহ এই পেজ তোহ শেষ আরে আরে দাড়ান আমার গরুর রচনা শেষ হয়নি। আমার বালিশের নিচে আরো ২ পাতা আছে। (আরহাম বাকি পাতা গুলো নিলো ওর চোখ ঝাপসা হয়ে আছে।আবার পড়া শুরু করলো।)
নীলবাবু জেসিকাকে হঠাৎ গায়েব হওয়ার পেছনে আমিই ছিলাম।একেবারে কিডন্যাপ করে ফেলেছি। ওর কাছ থেকে সব জেনেছি। আর জানেনই তোহ আমি হায়াত আর হায়াত ইট এর জবাব ইট দিয়েই দেয় কারন পাথর খোজার সময়৷ এই হাহাহা। জানেন আদনান ভাইয়া অনেক ভালো আমায় অনেক সাহায্য করেছে। এখন আর টেনশনের কিছু নেই আপনার ফুপ্পিকে কিছু করতে পারবে না। জেসিকাকে ওর জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি। জেনি নাকি ওর বাবামায়ের কাছে বিদেশ ভালো জেসিকার কাছে থাকলে হয়তো ওর মতোই হতো। আপনি অনেক ভাবছেন জেসিকা কেনো এমনটা করলো। সত্যি বলতে জেসিকা আপনাকে কখনো ভালোবাসেনি। অনেকটা অহংকারী মেয়ে ছিলো যার ফলে ওর বাবা ওর বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছিলো। জেসিকা তখন বলল আপনার সাথে রিলেশন আছে আপনি কিছু করলে বিয়ে করবে। তাই ও আপনার পেছনে পড়েছিলো। এরপর যখন আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো ওর অবস্থা খারাপ তাই আর কোনো রাস্তা না পেয়ে আপনার উপর জুলুম করেছে। কারন এখন ওকে বিয়ে করতে হবে ও আরহাম একবার আমায় বলতেন যে হায়াত আমি অনেক বেশি সমস্যায় আছি। একবার কাউকে বলতে পারতেন।সাহায্য নিতে পারতেন। আপনি নিজেও হাতের পুতুলের মতো নেচেছেন আমাকেও নাচিয়েছেন। জানিনা চিঠিটা আপনি কখন পাবেন। জানেন আমার বিয়ে নিয়ে অনেক সপ্ন ছিলো কিন্তু হুট করে এভাবে সব এলোমেলো হবে ভাবতে পারিনি। আপনি কখনোই আমাকে বোঝার চেষ্টা করেননি। আপনার অইচ্ছাকৃত অত্যাচার গুলো আমায় বড্ড কষ্ট দিয়েছে। আপনাদের কারনে আমি নিজেকে ভুলে গিয়েছিলাম। যখন আপনি আর জেসিকা মিলে আমায় অপমান করতেন তখন খুব খারাও লাগতো।আমি না কাদতে পারিনা।এই দেখুন এখনো কাদছিনা। যেদিন আপনি আমায় রাস্তায় নেমে দিয়েছিলেন খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। নিজেকে তোহ শেষ করতে পারছিনা।আপনারা আমার মন তিলে তিলে মেরেই ফেলেছেন।ওইদিন আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম।চোখের পানি না থাক বৃষ্টি পানি তোহ আছে। ওইদিন প্রথম আপনি আমার সেবা করেছিলেন। আজকে আমি আপনার দেওয়া শাড়িটা পড়িছি যেটা আপনি কেটে ফেলেছিলেন। যাক কি বলবো আচ্ছা চিঠিতে কি আমার চেহারা ভেসে উঠছে না মানে অনেক ছবিতে দেখা যায়না চিঠিতে চেহারা ভেসে আসে তাই জিজ্ঞেস করলাম। আচ্ছা এতো এতো কথা বলছি আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না আমি এগুলো কেনো বলছি। আসলে অনেকদিন আগে জেসিকাকে আদনান ভাইয়ার সাহায্য নিয়ে গায়েব করে দেই এরপর ওর কাছ থেকে সব ইনফরমেশন নেই। সব খোলাশা হবে। আচ্ছা শুনুন আমি চলে যাচ্ছি অনেক দূর বহু দূর যেখানে থাকবেনা কোনো কাছের মানুষ যাদের বাচাতে নিজেকে করতে হয় ছোট। আমাদের হয়তো এতোটুকু এক সাথে থাকার ছিলো৷ হয়তো আর দেখা নাও হতে পারে। আরহাম চৌধুরী আমাদের বিচ্ছেদ টা জরুরি ছিলো। ভালো থাকবেন প্রিয়। আর হ্যা আমার ড্র‍য়ারে কালো রঙের ডায়েরি আছে। ওটা বের করবেন আর সবাকে বাসায় আসতে বলবেন সবার সামনে আমার বান্ধুবিদের ডায়েরিটা পরতে বলবেন তাতেই সব সমস্যা খোলাশা হবে। সবাই মানে আদনান ভাইয়াও আছে আর হ্যা আমার পরিবারের সবাইকে আসতে বলুন। আমি চলে যাচ্ছি বহুদুর নীলবাবু। ডিভোর্স পেপার কোনো এক সময় পাঠিয়ে দিবো। আমাদের সম্পর্কের তোহ কোনো নামই নেই হয়তো আমাদের বিচ্ছেদই লেখা ছিলো।আমি কোনো অবলা নারী নই আমি বাচতে পারবো। বাচতে চাই নিজের জন্য তাই তোহ সবার আলাড়ালে চলে যাচ্ছি নিজের সপ্ন পূরনের জন্য। ভালোবাসা নামক জিনিস বড় কষ্টের। তা থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারন ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে বিচ্ছেদটা মেনে নেওয়াটা খুবই কষ্টের। আচ্ছা আমাদের জীবনটা এমন কেনো হলো। আমরা কেনো অন্য সব সুখী কাপলদের মতো থাকতে পারলাম। আচ্ছা আমাদের জীবনটা এমন কেনো হলো। ৬ মাসে আমার বর এর কাছ থেকে স্ত্রীর অধিকার, সম্মান,ভালোবাসা কিছুই পেলাম না। আমার সাথেই কেনো এমন হলো। এমনটাও তোহ হতে পারতো আমরা একসাথে সুখে থাকতে পারতাম। হয়তো পারতাম নয়তো না। আপনাকে মেনে নেওয়াটা অনেক বেশি কষ্টকর। আচ্ছা আমার কি স্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই জানি আমাদের বিয়েটা নামে মাত্র বিয়ে ছিলো আচ্ছা আমাকে একটু ভালোবাসা পাওয়ারও কি অধিকার নেই। আমার সাথে এমনটা কেনো হলো আমার দোষটা কোথায় ছিলো বলবেন। আমাকে একটু সম্মান দিলেও পারতেন। আমারও আত্নসম্মান আছে। যাক আর কিছু নাই লিখলাম। আপনাকে একটা গান শুনাই

♩ ♩ ♩ ♩ ♩ ♩ ♩ ♩ ♩

Tujhe kaise pata na chala..

Ke mein tainno payaar kardi aan…

Tujhe kaise pata na chala

Ke Tera intezaaar kardian..

♩ ♩ ♩ ♩ ♩ ♩ ♩

গানটা শুনে নিয়েন। ভালো থাকুন নিজেকে নিয়ে। চলে যাচ্ছি বহু দূর কাছের মানুষ, নিজ এলাকা, পরিচয় শহরকে ছেড়ে এক অজানা জায়গায়। আর হ্যা একটা কথা এমনি এমনি হারিয়ে গেলে তাকে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছে করে হারিয়ে যায় তাকে খুজে পাওয়া অসম্ভব। আমাদের এক সাথে পথ চলা এতোটুকুই ছিলো হয়তো। আর হ্যা নিজের ও কাছের মানুষদের খেয়াল রাখবেন এমন হবে না তোহ যে কাছের মানুষদের অবহেলা নিতে না পেরে চলে যাবে অচেনা শহরে।

ইতি
হায়াত

আরহামের চোখ বেয়ে পানি পরছে। চিঠিটা বুকের সাথে জরিয়ে ধরে নিরবে কাদছে। কোথায় খুজবে হায়াতকে। কেনো সে হায়াতকে এতো কষ্ট দিলো যে তাদের সবাইকে ছেরে চলে গেলো। আরহাম যলদি উঠে হায়াতের ডাইরিটা হাতে নিলো। ডাইরিটা দেখে কান্নার মাঝেও হাসলো। মেয়েটা স্টিকার এতোই প্রিয় যে ডাইরির সব খানে স্মাইলি স্টীকার লাগিয়ে রেখেছে।

★★

আরহামদের বাড়ির ড্রইং রুমে এসে উপস্থিত ইভান – অর্পা, ইশান – প্রিসা, ইফাত- আনিশা আয়াত ওর বাবা মা হায়াতদের দাদী, আদনান আর আরহামের পরিবারের সদস্য।

ইভানঃ কি হয়েছে আরহাম এভাবে সবাইকে ডেকেছিস কেনো।

আরহামঃনিশ্চুপ

অর্পাঃ আরহাম ভাই হায়াত কোথায়।

আরনাবঃ হ্যা ভাবিকে দেখছি না সেই কখন থেকে ভাই ভাবি কোথায়।

আরহাম ডায়রিটা আয়াতের দিকে দিলো।
আরহামঃ তোমাদের চারজনকে হায়াত এই ডাইরি পড়তে বলেছে। সবাইকে পড়ে শোনাও।

আয়াত ডায়রি খুলে পড়া শুরু করলো। সবাই অবাক হয়ে আছে কিছুই বুঝতেছে না।

★★প্রথম পৃষ্ঠা

প্রিয় দাদীমা
হ্যা আমাদের দাদীমা আপনাকে বলছি।আমি আপনাদের হায়াত হয়তোএটাই আমার মনের বলা শেষ কথা। দাদীমা নিজের খেয়াল রাখবেন আর এতো চিন্তার কি আছে হুম আমি তোহ আছি আয়াত আছে আপনার দুইটা নাত বউ আছে। এতো টেনশনের কিছুই নেই শুধু শুধু চিন্তা করে প্রেসার লো করবেন না।আর হ্যা নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনার হাতের ভাপা পিঠা আমার অনেক ভালো লাগে। মনে থাকবে আমার।

★★ পরের পৃষ্ঠা
প্রিয় ছোট আব্বু আম্মু
ভালোবাসা নিও। সত্যি বলতে এমনটা খুব কমই হয় আমরা এতিম হওয়ার পরও আমাদের থেকে তোমাদের ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না। যা চেয়েছি তাই দিয়েছো। আর ছোট আম্মু তুমি যে আমার মাথায় জোর করে তেল দিয়ে দিতে আর আমাকে বকা দিতে তা আমার সব সময় মনে থাকবে। ছোট আব্বু মনে আছে ছোট বেলা আমি আর আয়াত তোমার সাথে বাহিরে যাওয়ার বায়না ধরতাম আর তুমি আমাদের দুজনকেই কোলে নিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে বড় হবার পর আর যাওয়া হতো না কিন্তু আমার মনে থাকতো।

★★
প্রিয় সুন্দরী রেশমি চুড়ি
মানে দাদীমা আপনি এতো সুন্দর কেনো বলেন তোহ। যাক আপনাকে কিছু বলবো ধন্যবাদ আমাকে সব সময় সঙ্গ দেওয়ার জন্য। আপনার দেওয়া বালা গুলো আমি আরহামের রুমে রেখেছি নিজের কাছে রেখে দিয়েন অনেক দামি তোহ। আর হ্যা একটা কথা আদনান ভাইয়ার সাথে আর এমন করিয়েন না। আমি জানি আরহাম ও আরনাবকে যেমন আপনি ভালোবাসেন তেমনি আদনান ভাইয়াকেও। আমি জানি বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে আদনান ভাইয়ার আম্মু পালিয়ে বিয়ে করেছে আর তা আপনারা মেনে নেননি। আচ্ছা দাদী মা ওনারা না হয় ভুল করেছে আপনারা কি ঠিক করেছেন জোর করে বিয়ে দেওয়া মোটেও ঠিক কাজ নয় এর পরিনাম খারাপ হয় তাইতোহ ফুপ্পিমা পালিয়ে গিয়েছিলো। এবার না হয় তাদের মেনে নিন। আর কত ফুপ্পিমাকে শাস্তি দিবেন আর হ্যা জামাই আদরে জেনো কমতি না থাকে। আপনার একমাত্র মেয়ের জামাই হোক বুড়া তাতে কি। আর হ্যা আপনি তোহ একটা ছবিও ফুপ্পিমায়ের রাখেননি বলেছিলেন অথচ নিজের কাছে অনেক ছবি লুকিয়ে রেখেছেন। ছোট বেলার ড্রেসও রেখে দিয়েছেন আবার বলেন রেগে আছেন। এবার রাগটা সাইডে রেখে নিজের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিন।

(সবাই আয়াতের পড়াটা মন দিয়ে শুনছিলো কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। যে হায়াত ডায়রিতে এগুলো লিখলো কেনো) এবার প্রিসা পড়া শুরু করলো।

★★
প্রিয় শাশুড়ী আম্মু শ্বশুর আব্বু
আশা করি ভালো আছে আর ভালো থাকবেন। শাশুড়ী আম্মু জানেন আপনি না একদম আমার মায়ের মতো।আমার মা আমার কোনো কাজে ভুল হলে প্রথমে আমায় বকবে তারপর সুন্দর করে বুঝিয়ে দিবে। আপনার মাঝে আমি আমার মাকে খুজে পাই। আমি অনেক ভাগ্যবতী যে আপনার মতো মা পেয়েছে। আপনাদের ছেলের বিয়ে এভাবে হবে তা মানতে কষ্ট হয়েছিলো জানেন আমরা জানতাম না যে এভাবে আমাদের বিয়েটা হবে। যাক আপনার হাতে পায়েশ কিন্তু অনেক মজা। শ্বশুর আব্বু আপনাকে কি বলবো আপনাদের ভাই বোনের ভালোবাসাটা দারুন লাগে আমার। জানেন এত কিছুর পরও আপনারা আপনার বোনের সাথে থেকেছেন নিজেদের সন্তানের সাথে বোনের সন্তানের মিল করিয়েছেন। এমন ভাই যেনো আল্লাহ সবাইকে দেয়।

★★★
প্রিয় বড় ভাই আর ভাবি
ভাই যেদিন বাবা মা মারা গিয়েছিলো আর তুই আমায় দোষ দিয়ে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলি আমিও তখন তোর উপর রাগ করেছিলাম তখন ভাবতাম নিজের দোষ আমার উপর চাপাচ্ছিস। ভাই তুই যতবার আমার ভালো করতে চেয়েছিস তত বার কেন যেনো সব উলট পালট হয়ে যায়। আগে আসি মা বাবার মৃত্যুর কাহিনি আরিয়ান ভাইয়ার কথা মনে আছে যে তোর দলের তোর কাছের বন্ধু। আসলে তোর বন্ধুই তোর পিঠে ছুড়ি মেরেছে। বাবামাকে আরিয়ান ভাইয়া মেরেছে তার প্রমান আদনান ভাইয়ার কাছ থেকে নিয়ে নিস। আর হ্যা আরিয়ান ভাইয়া কখনোই তোকে দেখতে পারতো না হিংসে করতো। সে চেয়েছিলো নিজে দলের নেতা হবে কিন্তু তোর কারনে পারেনি। সে আমায় পছন্দ করতো তুই রাজি হবিনা তাই দুইবার আমার উপর হামলা করায় কিন্তু তোকে ভয় দেখানোর জন্য আর তুই ভাবতি বিরোধী দলের কারসাজি। বিরোধী দলে আদনান ভাইয়ার বাবা ছিলো তাই তুই ভাবতি আদনান ভাইয়া আমার ক্ষতি করবে নারে ভাই আদনান ভাইয়া খুব ভালো মানুষ তার বাবাও ভালো। তোকে আরিয়ান ভাইয়া যা বলতো তুই তার কথা বিশ্বাস করে ফেলতি। শেষ ফলে কি হলো আমরা এতিম হলাম। তুই সব সময় আমার পাশে থাকতি। এমনকি আমার পেছনে লোক রেখে দিয়েছিলি যে আমার উপর নজর রাখতো আর তোকে খবর দিতো। আর তুই তুফানের গতিতে এসে পরতি। ভাই তোর রাজনীতি আমাকে ডুবিয়ে দিলো। আর অর্পা তোকে কি বলব ভালোবাসি তোরে কিন্তু তুইও ভাইয়ার সাথে থেকে আমার সাথে এমন করলি। ওইদিন বাথরুম থেকে তোর কথা শুনেছিলাম বলেছিলি ১ ঢিলে ৫ পাখি মারা। আমার ও আরহামের বিয়ে দেওয়ার কারন।
১. আরহামকে জেসিকার হাত থেকে বাচানো
২. হায়াতকে আদনানের হাত থেকে বাচানো।
৩. আদনান আরহামকে কিছু বলবে না তাই হায়াতকে আরহামের সাথে বিয়ে দেওয়া। কারন হলো আদনান ভাইয়ার বাবা হায়াতদের বাসায় বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলো।
৪.এমন সময় বিয়েটা দেওয়া যাতে কেউ অমত করতে না পারি।
৫. আরহাম হায়াতকে রক্ষা করবে। সাথে ওদের এক করা।

আরহাম ও জেসিকার সম্পর্ক ছিলো তা জেনেও যে আমাদের বিয়ে দিলি কেনো বল তোহ।
তোদের ধারনা যে কেমন আল্লাহ। তোরা ভেবেছিলি আমা আরহামের সাথে বিয়ে দিলে আদনান কিছু করবে না। তোরা ভেবেছিলি আদনান এর বাবা আমাকে মারার প্ল্যান করছে। যেহেতু দুইবার আমার উপর হামলা হয়েছিলো। আসলে কি বড় ভাই জানিস একবার আমার সাথে কথা বলাটা উচিত ছিলো আমাদেরকে জোর করেই তোরা বিয়ে করিয়েছিস। তোরা আমাদের ভালো চেয়েছিস। সত্যি কি আমাদের ভালো হয়েছি। এভাবে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে আজ পরিস্থিতি কোথায় দাড় করালি। ইভান ভাই আর আরহাম আপনারা না সত্যি গাধা আপনারা আমার ভালো করতে করতে আমার হাল এমন করেছেন যে আমি নিজেই নিজেকে হারিয়ে গিয়েছি। যাইহোক আরহামকে কিছু বলিস না ভাই আরহামও পরিস্থিতির শিকার। জেসিকা ও আরিয়ান একে অপরের সাথে হাত মিলিয়ে আদনানের আম্মুকে মারার প্ল্যান করে আরহামকে ব্ল্যাক মেইল করতো। আর হ্যা সব প্রমান আমি আর আদনান ভাই কালেক্ট করেছি। আর কি লিখবো ভালো থাকিস তোরা। আর আমি জেনো খুব যলদি ফুপ্পি হয়ে যাই। আর অর্পা তোর মেয়ে হলে নাম রাখি অর্না কেমন। আর ইভান ভাই ঝগড়া কম করবি আমার বান্ধুবির সাথে। আর অর্পা আমার ভাইকে কিল ঘুষি কম দিস।

★★
প্রিয় ইশু ভাই আর প্রিসা
তোদের আর কি বলবো। প্রিসা তুই না সত্যি অনেক ভালো আমার কথা সব সময় শুনতি। আর হ্যা আমার ভাই এর খেয়াল রাখিস কিন্তু। তুই যে নতুন কেক বানিয়ে আমাকে খাইয়েছিলি অনেক টেস্টি ছিলো তখন বলিনি এখন বললাম। আর হ্যা সুন্দর মতো মিলে মিশে সংসার করবি। খবরদার আমার ভাইকে জালাবি না। আর ইশু ভাই প্রিসাকে একদম কম টাকা দিবি ও কিন্তু খালি খরচ করে বেরায়। আর ইশু ভাই আমি যে তোকে শার্ট দিয়েছি তোরা তিন ভাই একই রঙের শার্ট গুলো পড়ে আমার বার্থডে পালন করিস। আর হ্যা ভুলেও আমার সুন্দর করে ঘর মুছবি বলে দিলাম। আমার বান্ধুবিকে দিয়ে কাজ করাবি কম।

(প্রিসা কান্নায় ভেঙে পরলো। এসব কেনো পড়তে হচ্ছে ওদের। আরহামও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর চোখ মুছতেছে। এবার আনিশা নিলো)

★★
প্রিয় ইফাত ভাই ও আনিশা
ভাইয়া আমি তোকে খুব ভালো করে চিনি তুই একবার কিছু করার ইচ্ছা জাগলে তা করেই থাকিস তাহলে আজ কি হলো আনিশার বাবা তোর সাথে আনিশার বিয়ে দিতে মানা করায় তুই পেছনে ফিরে গেলি। তুই তোহ এমন না। আর আনিশা খবরদার উলটা পালটা কিছু করবি না। আর প্লিজ বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করিস না। শোন যত কষ্টই হোক না কেনো রাজি করিয়ে দুই পরিবার মিলে বিয়ে করবি। কেমন আর ভাই এটা তোকে করতেই হবে। জীবনে লড়াই করতে হয়।আর আমি জানি ইফাত ভাই আনিশার বাবাকে রাজি করিয়েই ছাড়বে। আর ইফাত ভাই খবদার আনিশাকে খাবার নিয়ে যদি কথা শুনাস তোহ একেবারে তেলাপোকার বাজি বানিয়ে ফেলবো বলে দিলাম।ভালো থাক তোরা

★★
প্রিয় আয়াত ও আরনাব ভাইয়া
তোমারা খুব যলদি বিয়েটা করে ফেল। আর আয়াত তুই না সত্যি অনেক ভালো। মায়ের পরে যদি কেউ আমার খেয়াল রেখেছে সেটা হলো তুই। আর শোন রাতে জোসনার মাকে দেখতে একা একা ছাদে চলে যাসনি। বাকিদেরও নিয়ে যাস। আর তোর হাতের বানানো আইসক্রিম খেয়ে আমি বেহুস ছিলাম। ইয়ে মানে ভালো হয়েছে এক কাজ করিস আইসক্রিমের দোকান দিয়ে দিস। আর যত টাকা কামাবি সব আমায় দিয়ে দিবি কখনো দেখা হলে।

{
প্রিসাঃকখনো দেখা হলে মানে(চোখ বেহে পানি পরছে)
আরহাম নিশ্চুপ করে আছে। সবার চোখে পানি। মন দিয়ে সব শনছে। এবার অর্পা পড়া শুরু করলো}

আরনাব ভাইয়া আমার বোনকে কখনো কষ্ট দিও না। আয়াত অনেক ভালো। আর শাশুড়ী আম্মু আয়াত আমার মতো নয় ও সব রান্না পারে। অনেকয়া গুছানো মেয়ে। চুপ থাকে আপনার মন এক তুড়ি বাজিয়ে জয় করে ফেলবে। আয়াত বোনু ভালো থাকিস আর দেরি না করে বিয়েটা করে ফেলিস। আর আরনাব ভাইয়া আপনারা জমজ ভাই মিলে মানুষকে বোকা বানাতে পারবেন এই কথাটা শেষ বারের মতো বললাম। হয়তো আর কখনো নাও বলতে পারি।

★★
প্রিয় বান্ধুবিরা
তোদের আমি অনেক ভালোবাসি। ছোট থেকে এক সাথে ছিলাম। আর অর্পা তোর সাথে আমাদের হাই স্কুলে দেখা। তোর বাড়ি দূরে হওয়ায় কম যাওয়া হতো। এক সাথে থাকা ফুসকা খাওয়া। মারামারি করা। দেয়ালের উপর দিয়ে হাটা কতো কি করেছি। আর স্কুলে যখন আমাদের মধ্যে একজনকে বাহিরে বের করে দেওয়া হতো বাকি সবাই ঝগড়া করে বের হওয়া পুরো ক্লাস ঘুরে বেরানো। আমাকে জোর করে কলেজে নিয়ে যাওয়া সব কিছু মিস করবো। ভালো থাকিস তোরা। আর মিলেমিশে থাকিস। বেশি বেশি করে ঝগড়া করিস। আর হ্যা অনেক অনেক অনেক বেশি মিস করবো। ভালো থাকি সুস্থ থাকিস আর হায়াতকে মনে রাখিস।

★★
আদনান ভাইয়া
আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো। আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। জেসিকার হাত থেকে আরহামকে রক্ষা করার জন্য আমায় সাহায্য করেছেন তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। আর হ্যা যলদি বিয়েটা করে ফেলেন আর কতো কুমার থাকবেন। আপনার আমাদের এলাকায় মেয়েরা লাইন ধরে আছে হাহাহহ। যাক আপনি যে যে প্রমান পেয়েছেন তা সবাইকে দেখাবেন কেমন। আর সবাইকে বলবেন জেসিকা ও আরিয়ানের ব্যাপারটা। আর জেসিকার বাবা মাকেও জানিয়ে দিয়েন জেসিকা কোথায়।

★★
এবার আসি আসল কথায়। সবাই ভাবছেন সবার জন্য এতো কিছু কেনো লিখলাম।কারন এটাই আমার শেষ কথা। আমি চলে যাচ্ছি বহুদূর। আমাদের বিচ্ছেদ হবে ভাবিনি কখনো। সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো তাও ভাবিনি। আপনারা আরহামকে কিছু বলবেন না আর না ইভান অর্পাকে। আমি একটু খুশি থাকতে চাই নিজেকে নিয়ে। নিজেকে সময় দিতে চাই তাই সবার চোখের আড়াল হচ্ছি। কারো জন্য কোনো রাগ অভিমান নেই আমার। আমি চিন্তা মুক্ত হয়ে খোলা আকাশের পাখির মতো ঘুরে বেরাতে চাই নিজেকে ভালোবাসতে চাই। নিজের জন্য বাচতে চাই। তাই চলে যাচ্ছি বহুদূর এক অচেনা শহরে। যেখানে থাকবে না কোন প্রিয়জন যাকে হারানোর ভয়ে নিজের মনকে মাটি চাপা দিতে হয়। আর একটা কথা হারিয়ে যাচ্ছে নিজের ইচ্ছায়।আমাকে দয়া করে খুজবেন না কারন কি জানেন এমনিতে হারিয়ে গেলে তাকে খুজে পাওয়া যায় কিন্তু ইচ্ছাকৃত চাবে হারিয়ে গেলে তাকে খুজে পাওয়া অনেক বেশি কঠিন। যাক আমি চলেও যাওয়ার জন্য কেউ দায়ি নয় আমি যাচ্ছি নিজের জন্য। নিজেকে নিয়ে ঘুরে বেরানোর জন্য। নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য। আমি কবে ফিরবো তা জানা নেই আমার। এভাবে হুট করে চলেও যাওয়াটা মেনে নিয়েন। আর আমারশেষ বলা কথা গুলো রাখবেন।ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আর হায়াতকে ভুলে যান।

সবাই কাদছেন কেনো কাদছ জানা নেই তাদের। এভাবে হায়াত সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারছে না। কাকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।

ইভান হঠাৎ করে আরহামের কলার চেপে ধরলো।
ইভানঃ বল আমার বোন কোথায়। কি করেছিস আমার বোনের সাথে।

আরহাম চুপ করে আছে কিন্তু ওর চোখ বেয়ে পানি পরছে। ওর যে অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। সবাই ইভানকে ছাড়িয়ে নিলো। ইভান আরহামকে জড়িয়ে ধরে কাদছে। আয়াত তোহ স্তব্ধ হয়ে আছে নিজের বোনের একি হলো। একবারও ওর মনের কথা বুঝতে পারলো না। এতো বেশি কষ্ট পেয়েছে যে এভাবে সবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ইফাত, ইশান কাদছে এমাত্র বোন এভাবে চলে গেলো। কোথায় খুজবে।

★★
বাসে এসে থামলো। বাস থেকে নেমে আসল হায়াত চলে এসেছে এক নতুন শহরে। হায়াত ভাবছে আজ সে স্বাধীন। সবাইকে ভালো থাকার জন্য চলে এসেছে বহুদূর এক অচেনা শহরে। সবাকে নিজের গুরুত্বটা বুঝিয়ে দিলো। হঠাৎ করে এভাবে বিচ্ছেদ হওয়াটা জরুরি ছিলো। নিজেকে ভালোবাসাটাও জরুরি। অবলা নারীর মতো অত্যাচার সহ্য করা উচিত নয়। নিজেকে খেলার পুতুল বানানো উচিত নয় অনেক সময় স্বার্থপর হওয়াটাও জরুরি এর ফলে কাছের মানুষগুলো আপনার গুরুত্ব বুঝবে।

চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here