অতঃপর প্রণয় পর্ব ১২

#অতঃপর_প্রণয়
#অরিত্রিকা_আহানা
#পর্ব:১২

ইরিন আর ইত্তি করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে।দুজনেরই মুড অফ।ইত্তির অবশ্য একটু বেশিই অফ।আজকে আবার মিতুর সাথে ঝামেলা হয়েছে,মিতু ইত্তির গার্লফ্রেন্ড।সপ্তাহে দুদিন ঝামেলা করারাটা মিতুর কাছে কাঁচাবাজার করার মত হয়ে গেছে।এই তো গলকাল রাত দেড়টায় সময় ফোন দিয়ে বলল ওর প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করছে।ইত্তি ভালোমানুষের মত উপদেশ দিল,”একটা নাপা খেয়ে শুয়ে পড়ো।”

—“নাপা বাসায় নেই।”

—“তাহলে মাইল্ড সিডেটিভ থাকলে একটা খেয়ে নাও।”

—“আমাদের বাসায় ঘুমের ওষুধ রাখা হয় না।”

—“ওকে, দেন মাথায় পানি ঢালার পদ্ধতি ট্রাই করতে পারো।”

—“আমার ঠান্ডা লেগে যাবে।”

ইত্তি একটু ভাবলো,তারপর বলল,”তাহলে চা বা কফি বানিয়ে খাও ভালো লাগবে।”
এবার রিপ্লাই এলো,”চা খেলে ঘুম আসবে না।”

ইত্তি ঘুমে কাদা হয়ে ছিলো।ওর খুব ভালো একটা স্বভাব হচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থায়ও সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে।কিন্তু মিতুর কথা শুনে এবার আর স্বাভাবিক থাকতে পারলো না।ভেতরে ভেতরে চটে গেলেও ঠান্ডা গলায় বলল,”তাহলে তো আর কিছুই করার নেই।তুমি চুপচাপ কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করো।”

—“তাতে কোন লাভ হবে না।আমি জানি আমার এই মুহূর্তে ঘুম আসবে না।..তবে একটা উপায় আছে।”

—“কি?”

—“তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।আমার মনে হচ্ছে তুমি এলে আমার মাথাব্যথা ভালো হয়ে যাবে।…প্লিজ আসো না।”

—“কিন্তু এত রাতে?..এখন তো মামা গেট বন্ধ করে ঘুমাচ্ছেন।”

—“সমস্যা নেই,উনাকে ডেকে তুলবে।..এমন করো কেন প্লিজ!”

ইত্তির মাথার মগজ একশো ডিগ্রি সেলসিয়াসে ফুটে উঠলেও মাথা ঠান্ডা রেখে বলল,”ঠিক আছে আসছি।”

এইপর্যন্ত ঠিক আছে।সমস্যা হলো ইত্তিকে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে ওদের বাসার সামনে দাঁড় করিয়ে মিতু জানালো সে আসতে পারবে না।ওর এখন বেশ ঘুম পাচ্ছে।ইত্তিও রাগ সামলাতে না পেরে ওকে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিলো ফোনে।

ইরিন একদৃষ্টিতে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে।কত মানুষ হস্পিটালে ঢুকছে,কতজন সুস্থ হিয়ে কাছের মানুষের নিয়ে হাসিমুখে বাসায় ফিরে যাচ্ছে।কত খুশি লাগছে এদেরকে। অথচ! ইরিন ওর জীবনে কোন আনন্দ নেই।আনন্দ নেই এই কথাটা আসলে ঠিক না। ইরিন আসলে আনন্দ উপভোগ করতে জানে না,যার ইত্তির মত ভালো একটা বন্ধু আছে,ভালো ক্যারিয়ার আছে,ভালো একটা পরিবার আছে, তবুও কেন এত আফসোস?

—“ইত্তি?”

—“বল।”

—“আমি মরে গেলে তোর দুঃখ হবে?”

ইত্তি আটশো আশি ভোল্টের শক খেলো।ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা।প্রচণ্ড বিস্ময় নিয়ে ইরিনের দিকে তাকালো।ইরিন মজা করেও এইধরনের কথা বলার মেয়ে না।তাহলে আজ কি হলো?
ইত্তি জানেনা ইরিনের সেদিনের ঘটনার পর থেকে আয়াজ ইরিনের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।

—“না।”

—“সত্যি?”

—“হ্যাঁ।সত্যি!”

—“আমি খুব খারাপ তাই না?”

ইত্তিহাদ হাসলো।ইরিনের নাক টেনে দিয়ে বলল,”খুব।”

—“মিতুকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”

ইত্তিহাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বিড়বিড় করে বলল,

—“বোকা মেয়েটাতো কিছুই বোঝে না। আমার কি মনে হয় জানিস?”

—“কি?”

—“যারা খুব বেশি ভালোবাসা পায় তারা বোধহয় খানিকটা বোকা হয়।”

—“কি করে বুঝলি?”

—“এই যে তুই? তুইও তো বোকা।”

—“কে বললো আমি বোকা?”

—“তুই বোকা নয়ত কি?তুই জানিস আয়াজ ভাই তোকে কতটা ভালোবাসে?”

—“না রে।তিনি আর এখন আমাকে ভালোবাসে না।

ইরিনের চোখে পানি টলমল করছে। ইত্তিহাদ আবারও হাসলো। মুচকি হেসে বলল,

—“তোর এমন মনে হওয়ার কারণ?”

—“উনি আমাকে কি বলেছে জানিস? আমি নাকি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই। উনি নিজে আম্মাকে বলে আমাদের বিয়েটা ভেঙ্গে দেবেন। উনার এক কলিগ আছে, নাম রেশমা। তাকে বিয়ে করবেন। আমাকে ছবিও দেখিয়েছেন। সেই! মানে একেবারে ককটেল সুন্দরি!”

—“তোর চেয়েও সুন্দরি?”

—“আমি কি ককটেল সুন্দরি?”

—-“ককটেল সুন্দরি কি আমি জানি না,কিন্তু তুই সুন্দরি!খুব সুন্দরি!”

—“এরপর তোর কি মনে হয় আয়াজ ভাই আমাকে ভালোবাসে?”

ইত্তিহাদ আবারো হাসছে। ইরিনের কান্না পাচ্ছে। তার প্রিয়তম বন্ধুটিও তার দুঃখ বুঝলো না? সবাই এত নিষ্ঠুর কেন? বিগত একমাস ছাব্বিশ দিন যাবত আয়াজ ভাই তাকে এড়িয়ে চলছে। ইরিন কি খুব বেশি বড় হয়ে গেছে যে উনি ইরিনকে মাফ করতে পারছেন না? ইরিন তো খুব বেশি ছোটও নয়, সে একবার যখন বুঝেছে তার ভুল হয়েছে সে কি আর দ্বিতীয়বার এমন ভুল করবে? এই সহজ কথাটা আয়াজ ভাইয়ের মত ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রের মাথায় কেন ঢুকছে না?

ইরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও গেটের দিকে তাকালো।কেন জানি লোকজনের আসা যাওয়া দেখতে আজকে খুব ভালো লাগছে।ইত্তি পাশে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাসে চলে গেলো।


বারবার মায়মুনা বেগমের কাছে ফোন দিচ্ছে ইরিন। তিনি ধরছেন না। তিনিও ইরিনের ওপর রাগ! ইরিনের কষ্ট লাগছে, এইমুহূর্তে বাসায় যাওয়া ওর পক্ষে অসম্ভব। পরীক্ষা সামনে। আয়াজও তার ওপর রাগ!
ক্লাস শেষে মাঝেমাঝে বিকেল বেলা যখন ইত্তি আর মিতুর সাথে ইরিন ঘুরতে বের হয়, মনে আক্ষেপ হয় ইরিনের!কি সুন্দর দুজন হাতে হাত রেখে হাঁটে ওরা।চোখে চোখ রেখে মনের ভাষায় কথা বলে! আয়াজ নামক স্বপ্নটা ইরিনকে ভেতর থেকে কতটা কষ্ট দেয় বাইরে থেকে তার ছিঁটেফোটাও কেউ আঁচ করতে পারছে না!

সন্ধ্যেবেলা পড়ার টেবিলে বই খুলে রেখে ঝিমুচ্ছিলো এমন সময় মিতু এসে হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো।আগাগোড়া সাজগোজ করা!এসেই উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল,”আপু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন।বাইরে ইত্তি অপেক্ষা করছে!”

—“তোমারা যাও মিতু,কালকে আমার পরীক্ষা আছে আমি আজকে বেরোতে পারবো না।”

—“আমারও আছে আপ।কিন্তু তাতে কি হয়েছে?পরে দেবো আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন।”

—-“না মিতু!আমার অনেক পড়া জমে গেছে আমি আজকে যাবো না।”

মিতু ওর কোন কথাই শুনলো না।বই বন্ধ করে চেয়ার থেকে টেনে তুলে বলল,

—“আজকে আমার এক কাজিনের বিয়ে,আপনি গেলে আমি খুশি হবো।প্লিজ আপু না করবেন না।

—“তোমার কাজিনের বিয়েতে আমি কেন যাবো মিতু?

—“কিচ্ছু হবে না।চলুন না।

–“আমার বাসায় তো কাউকে না জানিয়ে কিভাবে যাবো?

—“ইত্তি ম্যানেজ করে নেবে।”

—“যেতেই হবে?”

—“যেতেই হবে।”

—“না গেলে হয় না?”

—“না হয় না।আমি জানি আপনার মন খারাপ,আপনাকে একা রেখে আমি ওখানে কিছুতেই মজা করতে পারবো না।”


বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলো! ইরিন যতটুকু বুঝলো তাতে একনিশ্বাসে তিনবারের জায়গায় চারবার কবুল বলে ফেলেছে। আয়াজ অবশ্য সেরকম কিছু করে নি।ধীরে সুস্থে তিনবার কবুল বলেছে। বিয়ে পড়ানো শেষে ইরিন কতবার আয়াজের দিকে তাকালো। যদি একটাবার চোখাচোখি হয়! মানুষটা কতদিন তার সাথে কথা বলে না। কিন্তু আয়াজ বিয়ে শেষেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হলেও মোটামুটি ছোটখাটো একটা জটলার মত বেধেছে। প্রতিটা রুমেই মেহমান। তারমানে বিয়ের কথা সবাইকেই জানানো হয়েছে কেবল ইরিনকে ছাড়া। মায়মুনা বেগম আর সোহেলি হাসাহাসি করছে। রেশমি আপু বারবারই ইরিনকে দেখে মুচকি হাসছে। আর ইরিনের বর মহাশয় মানিব্যাগ পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে নিচে বাবুর্চিদের রান্নার তদারকি দেখতে চলে গেলেন।

খানিকবাদে গম্ভীরমুখে বাসায় এসে ঢুকলো।ইরিনের সমস্ত আশা,আকাঙ্ক্ষা মাটি করে দিলেন এই অসম্ভব খারাপ রকমের ভালো মানুষটা!বিয়ের খুশিতে ইরিন যখন আত্মহারা তখন এই বদ লোক এসে বললো,”খাওয়াদাওয়া শেষ করে নে।কালকে তোর এক্সাম আছে না?..আমি দিয়ে আসবো।” ব্যস! ইরিনের মুখটা বেলুনের মত চুপসে গেলো।কিন্তু তাতে এই আয়াজের কিচ্ছু এলো গেলো না!একটু পর নিজে এসেই থালা ধরিয়ে দিয়ে,দশমিনিটের আল্টিমেটাম দিয়ে গেলো।

—“দশমিনিটের ভেতর শেষ করে নিচে আয়।আমি ওয়েট করছি।”

ইরিনের মেজাজ প্রচুর খারাপ হচ্ছে। নিশ্চই ইত্তির কাছ থেকে তার এক্সামের কথা জেনেছে আয়াজ।
লাজলজ্জার মাথা খেয়ে ইরিন নিজেই বাসার সবাইকে জান লাগিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো এই পরীক্ষা টা না দিলে কিচ্ছু হবে না।পরে দিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
অবশেষে শ্বশুরের কাছে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিলো ইরিন।তাতে অবশ্য কাজও হতো যদি না আয়াজ এসে তাকে থামিয়ে দিতো,উনি ডাক্তার মানুষ, উনি ঠিকই বুঝতেন ইরিন পরেও পরীক্ষাটা দিতে পারবে। এখন না দিলে খুব বড়সড় কোন ক্ষতি হয়ে যাবেনা।
রুমে নিয়ে এসেই আয়াজের ইরিনকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু হয়ে গেলো,

—“তোর লাজলজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই?লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছিস নাকি?..ছি!ছি!তুই আজকে থাকার জন্য বাবাকে বলতে গেছিস?..কাকে বিয়ে করলাম আমি? লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে।….এই তোর এত তাড়া কিসের? আমি পুরুষমানুষ হয়ে যদি ধৈর্য ধরতে পারি তোর কি সমস্যা? ”

ইরিন লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। কানের কাছে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করছে। আয়াজ এভাবে কেন বলছে? ইরিনের বুঝি লজ্জা লাগছে না?
আয়াজ একটু আগে এই নিয়ে সোহেলি বেগমের সাথেও
রাগারাগি করে এসেছে। সোহেলি বেগম যখন ইরিনকে থাকার পারমিশন দিতে চাইলেন আয়াজ তখন কড়া গলায় বললো,

—“খবরদার মা, তুমি ওকে কোন রকম প্রশ্রয় দেবে না। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, দয়া করে, ওর পড়াশোনাটা লাটে উঠিয়ো না। ও আপাতত পড়াশোনায় মনোযোগ দিক, সেই ফাঁকে আমিও একটু গুছিয়ে উঠি। তোমরা যদি এখন ওকে প্রশ্রয় দাও মাথায় উঠে বসবে একেবারে। আর কিছুতেই কন্ট্রোলে রাখা যাবে না। ”

সোহেলি যে ছেলের দৃঢ় সংকল্পের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে এমনটাও নয়, ইরিনের সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানেন তিনি। একবার লাই পেলে ইরিন পড়াশোনা সব গোল্লায় তুলবে। তাছাড়া আয়াজ ঠিকই বলেছে। আয়াজকেও একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। সবে ইন্টার্নি শেষ করেছে, আরেকটু গুছিয়ে নিক। অবশেষে ছেলের মতামতে সম্মতি দিলেন তিনি।

আয়াজ আবারও ধমক দিয়ে বলল,

—“কি সমস্যা তোর? কথা বলছিস না কেন?”

ইরিন মুখ ফুটে ওপর বলল,”আমার অনেক সমস্যা।আমি আপনার মত এত ধৈর্য ধরতে পারবো না।”

আয়াজ চরম আশ্চর্য হলো! সাথে সাথেই ধমকে উঠে বলল,

—“খবরদার ইরিন!..তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলবি না।বিয়ে হয়েছে তারমানে এই না যে তুই অনেক কিছু বুঝে ফেলেছিস!…আমি যেভাবে বলবো সবকিছু ঠিক সেভাবে হবে।আমার কথার বাইরে গেলে পায়ের নালা ভেঙে ফেলবো!”

—“বিয়ে তো শুধু আপনি আমাকে করেন নি? আমিও আপনাকে করেছি? ”

আয়াজের মনে হলো, ইরিন বদ্ধপরিকর, তার অধিকার সে আদায় করে নেবেই। তার জন্য ইরিনকে যদি নির্লজ্জ হতে হয় হবে সে।আয়াজ ডানহাতটা কপালে ছেপে ধরে বড় নিশ্বাস ফেললো। ইরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলো,

—“কি চাস তুই?”

—“সব মেয়ে যা চায়, তাই।

আয়াজের মাথা ঘুরছে। ইরিনের কথাবার্তা ওর হজম হচ্ছে না।বিয়ে করে মস্তবড় মুছিবতে ফেঁসে গেছে সে।বিয়ের আগেই ভালো ছিলো।এই মেয়ে এখন ওর প্রতিটা কথায় মুখ চালাচ্ছে!…কেন যে বোকামি করলি আয়াজ! ওকে শাসনে আটকাতে গিয়ে নিজেই আটকে গেলি।” কাশি উঠে গেছে তার। কাশির চোটে চোখে পানি এসে গেছে। ইরিন কাছে এগিয়ে এসে বলল,

—“পানি দেবো?”

—“দে!”

—“বউকে কেউ তুই করে বলে?..বলুন তুমি!”

—“আমি কিন্তু এবার ঠাস করে তোর গালে চড় বসিয়ে দেবো ইরিন।”

—“বউকে মারবেন?”

আয়াজ গলা চড়িয়ে ডাক দিলো,”মা?…মা?..মাআআ!”

সোহেলি ছুটে এলো ছেলের ঘরে।তারপর উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,”কি হয়েছে বাবা?”

—“ওকে আমার সামনে থেকে সরাও,নাহলে আমি একসেকেন্ডও এখানে থাকবো না।সোজা বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো।”

ইরিনও সমান তেজে মুখ চালালো,

—“হ্যাঁ, আপনি বরং আমাকে হোস্টেলেই দিয়ে আসুন।এখানে বসে বসে আপনার ঝাড়ি খাওয়ার চেয়ে হোস্টেলে শুয়ে মনে মনে আপনার সাথে বাসর করি!”

মুহূর্তেই আয়াজে মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। কান গরম হয়ে গেলো তার! ইরিনের কি কমনসেন্স বলে কিচ্ছু নেই? সে কেন দেখে শুনে এমন একটা গবেটটাইপ মেয়েকে বিয়ে করলো? কেন? সোহেলির ছেলের অবস্থা বুঝতে পেরে দ্রুত ইরিনের হাত ধরে ওকে টেনে বের করে নিয়ে গেলেন। ইরিন এক বুক হতাশা নিয়ে সোহেলির সাথে বেরিয়ে গেলো।
সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে তার কাছে।সত্যিই কি তার বিয়ে হয়ে গেছে? সত্যিই একটু আগে আগের মতই আয়াজের সাথে ঝগড়া করছে? হাসি আসছে তার! ঝগড়া করুক আর যাই করুক হুট করেই আয়াজ নামক কঠিন বস্তুটার ভালোবাসার গভীরতা সে অনুভব করতে পারছে। ইত্তির কথা গুলো মনে পড়ছে তার। কীভাবে মানুষটা তার সম্মান বাঁচানোর জন্য জোড়হাতে সব হ্যান্ডেল করেছে। সত্যিই তো ইরিন যদি সত্যি সত্যি সেদিন পালিয়ে যেত তাহলে সমাজে ইরিনের পরিবারের অবস্থানটা কোথায় হত? সমাজ তো তার বাবা মায়ের মুখে থুতু ছিঁটাতো? এখন বুঝতে পারছে ইরিন সে খুব বড় ভুল করেছে , খুব বড়। সে যখন সোহাগকে পছন্দই করে নি তার উচিৎ ছিলো সরাসরি সেটা জানিয়ে দেওয়া। বিয়ের দিন পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান তারজন্য নেহায়েত ছেলেমানুষি হলেও তার পরিবারের জন্য ভয়াবহ তান্ডব হতে পারতো। কিন্তু আয়াজ সেটা হতে দেয় নি। নিজের খুব বকতে ইচ্ছে করছে। কেন সে এই মানুষটার সাথে ঝগড়া করলো? পরোক্ষনেই ভাবলো, নাহ!করবে সে।আয়াজের সাথে ঝগড়াময় ভালোবাসা তাকে করতেই হবে। আবারো হাসলো ইরিন। অথচ কয়েকদিন আগে সে বোকার মত জীবনে নিয়ে আফসোস করছিলো! যার আয়াজের কঠিন ধরনের প্রেমিক আছে সে কেন জীবনের জন্য হা-হুতাশ করবে? এখন আর অফসোস হচ্ছে না তার,এই মানুষটার ইচ্ছে পূরন করতে তার কাছ থেকে দূরে থাকতে পারবে সে। কারণ আত্মিক প্রণয় তো হয়ে গেছে তাদের!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here