#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২+৩
মেঘালয়ের সীমান্ত ঘেষে তৈরি কাঠের বাংলোতে আফরা ধীর পায়ে প্রবেশ করলো। সাথেই রয়েছে মিঃইফাজ, মিসেস নাবিলা আর ফাহিম নামের ছেলেটি। বলতে হবে পুরোনো ধাঁচের এই কাঠের বাড়িটি অনন্য। চারিদিকে পুরোনো আসবাবপত্রের সমাহারে কেমন যেন একটা জমিদারি ভাব দেখা যাচ্ছে। মিসেস নাবিলার ইশারায় আফরা বসে পড়লো মোলায়েম সোফায়। মিঃইফাজ বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে থাকতে পারেন না। তাই কথা না বাড়িয়েই তিনি তার ঘরে জামা-কাপড় পাল্টাতে চলে গেলেন। মিসেস নাবিলা গেলেন আফরার রুম ঠিক করার জন্য।
আফরা মাথা নাড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে চলছে বারবার।কমন যেন বাড়িটাতে এক ছিমছাম অনভূতি। ফাহিম একমনে আফরার কার্যকলাপগুলো দেখে যাচ্ছে। মৌনতা ভেঙে সে এবার বললো,
‘বাড়িটাকে হরর হাউস মনে হচ্ছে! তাই না………..!’
অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো আফরা। ছেলেটার কার্যকলাপ বড়ই অদ্ভুত। নাহলে কোনো সুস্থ মানুষ নিজেদের বাড়িকে ‘হন্টেড হাউস’ বলে?আফরা ফিচালো হাসি দিয়ে বললো,
‘না ! না ! এমন কিছুই না !’
‘আমার তো মনে হয়না। আপনি যেভাবে চোখ নাড়িয়ে এক্সপ্রেশন প্রকাশ করছেন, ঠোঁটে চাপা ভাব……প্রমাণ হয়ে যায় যে এই বাড়িটাকে নিশ্চিত হরর হাউস মনে হচ্ছে। আফটার অল ব্রিটিশ হরর মুভি আপনারা কম বেশি সবাই দেখেছেন।’
আফরা মিহিয়ে গেলো। ছেলেটি ওর ভাবখানা বুঝে ফেলেছে বলে লজ্জা লাগছে বেশ। ফাহিম তা দেখে আলতো হাসলো। আফরা মানতে বাধ্য যে ছেলেটার সেন্স অব হিউমার চরম লেভেলের। না হলে কেউ কিভাবে জাস্ট এক্সপ্রেশন দেখেই গটগট করে সব বলে ফেলবে।
ফাহিম আবার বললো,
‘এই পুরো বাংলোটাই ব্রিটিশ স্টাইলে বানানো হয়েছিলো ইংরেজদের আমলে। পরবর্তীতে জর্জ নেলসন নামের এক ব্রিটিশ নাগরিক থেকে এই জায়গাটি আমাদের দাদা কিনে নেয়। এত পুরোনো বাংলো পরে সংস্কার করা হলেও ‘নেলসন টি এস্টেট’ নামটি আর পরিবর্তন হয়নি।’
আফরা এবার বুঝলো এর কারন। তবুও কিছু বললো না। অদ্ভুত ভাবে ওদের দুজনকে এখানে রেখেই মিসেস নাবিলা কোথায় চলে গিয়েছে যে এখনও আসছে না? তখনই ট্রে হাতে নিয়ে রানয়নাঘর থেকে আসলো একটি মেয়ে। সে ট্রে থেকে একটি শরবতের গ্লাস নিয়ে আফরার দিকে এগিয়ে বললো,
‘এই নাও আপু।’
আফরা এবার খেয়াল করলো মেয়েটিকে।হলুদ সালোয়ার কামিজ পরিহিতা মেয়েটির ঠোঁটে স্মিত হাসি। মুখে আন্তরিকতার ভাব। আফরা অনুমান করলো যে মেয়েটির বয়স হয়টো ১৮-১৯ হবে। সেই চাঞ্চল্যতাটি যেন স্পষ্ট ফুটে ওঠেছে চেহারায়। আফরা গ্লাসটি নিয়ে বিনয়ী সুরে বললো,
‘ধন্যবাদ!’
আফরার মুখে ‘ধন্যবাদ’ কথাটি শুনে অবাক না হয়ে পারলোনা মেয়েটি। ওর ধারনা ছিলো যে আফরা হয়তো বাংলায় দুর্বল হবে। কিন্ত এক ধন্যবাদে ওর ধারনা পাল্টে গেলো। মেয়েটি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ওঠলো,
‘স্বাগতম আপু। আমি ইলা। তোমার ইফাজ আঙ্কেলের ছোট মেয়ে।’
‘দেখেই বুঝতে পেরেছি। চেহারা তোমার আঙ্কেলের মতোই হয়েছে।’
‘তবে তুমি দেখতে খুবই মিস্টি আপু। ফাহিম ভাইয়া তোমার ছবি আমায় দেখিয়েছিলো। ছবিতে তুমি যতটা না সুন্দর , বাস্তবে এর থেকেও বেশি সুন্দর তুমি।’
ইলার কথা আফরার সামনে বিব্রত হয়ে পড়লো ফাহিম। আফরা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে ফাহিমের দিকে। ইলা আসলেই বোকাসোকা। নাহলে এভাবে এ কথাটা আফরাকে বলতো। ফাহিম বিব্রত কন্ঠে বললো,
‘ফেসবুক থেকে দেখিয়েছিলাম।’
আফরা কিছু বললো না বিনিময়ে। ইলা আবার বলে ওঠলো,
‘তো আপু তোমার কয়দিন থাকার প্ল্যান আছে?’
‘ইলা ! এভাবে কেউ মেহমানদের বলে যে কয়দিন থাকবে? আফরার যতদিন খুশি ততদিনই থাকবে।’
হুট করে সরু সিড়ি বেয়ে নামতে বললো মিস নাবিলা। ইলা চুপসে গেছে। বুঝা গেলো মাকে প্রচন্ড ভয় পায় সে। মিসেস নাবিলা বিনয়ী ভাবে আফরাকে বললো,
‘দুঃখিত! লেট করনোর জন্য। তোমার রুম আমি রেডি করে দিয়েছি। যাও ফ্রেস হয়ে নাও।’
আফরা কথামতো তাই করলো। যাওয়ার আগে ফাহিমের সাথে চোখাচোখি হলো একবার।ফাহিম দেখামাত্রই মুচকি হেসে বললো,
‘হ্যাভ অ্যা গুড নাইট!’
—–
আফরা যেই রুমটিতে থাকে ইলার ভাষ্যমতে এটা ফাহিমের রুম। অন্য রুমগুলোর অবস্থা তেমন একটা ভালো না বিধায় ফাহিমের রুম দেওয়া হয়েছে আফরাকে। এখান থেকে সকালের পূব আকাশে নাকি মেঘালয়ের চরম একটা দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আর পুরো বাংলাোতে এটাই একমাত্র ঘর যেখানে পূর্ব ও পশ্চিমপাশে বারান্দা আছে। প্রতিটা বাঙালি পরিবারেরই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট হলো অতিথিদের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করা। মিসেস নাবিলাও এর ব্যতিক্রম না।
ঘড়ির কাটা এখন সাড়ে বারোটায় ছুই ছুই। এককথায় গহীন রাত। খাওয়া-দাওয়া সেরে জানালার ধারের একটা ডিভানে আফরা বসে আছে অনেকক্ষণ হলো তবুও চোখে ঘুম নেই। বাইরের তুমুল বৃষ্টিতে ঘুম যেন উবে গিয়েছে।জানালা দিয়ে ধেয়ে আসছে হু হু বাতাস। এ যেন এক অন্যরকম সৌন্দর্য।
আফরা এ বাড়ি, এ পরিবেশ কিছুর সাথেই অভ্যস্ত না। অ্যামেরিকায় যেমন লিভিং রুম, ডায়নিং স্পেস-কিচেন সব একসাথে সেখানে বাংলাদেশে তা আলাদা। সব রুমের সাথে এটাচড ওয়াশরুম নেই, রান্নাঘরে আফরা যেমন ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করতো এখানে গ্যাসের চুলার ব্যবহার। অ্যামেরিকার প্রত্যেকটি বাড়িতেই একটি বেজমেন্ট থাকে যেটাএখানেও ছিলো ব্রিটিশ স্ট্রাইলে বাড়ি তৈরি হয়েছিলো বলে। কিন্ত সংস্কারের পর তা বন্ধ করে দিয়েছে।
ডিভান থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়ালো আফরা। ‘নেলসন টি এস্টেট’ এর বিস্তৃত চা বাগানটি দেখা যাচ্ছে জানালা দিয়ে। রাতের আধারে বৃষ্টিস্নাত এ চা বাগানের দৃশ্য আফরার কাছে নতুন। সব উৎপন্ন হওয়া চা পাতার কাচা গন্ধ উন্মাদ করে তোলছে পরিবেশটিকে। আফরা উইকিপিডিয়ায় সার্চ দিয়ে দেখেছিলো যে, জুন-জুলাই মাস নাকি শ্রীমঙ্গলে বেস্ট। তাছাড়া বাংলাদেশে গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টাপাত হয় নাকি শ্রীমঙ্গলে। মমের ওপর থাকা চাপা ক্ষোভটাও ধীরে ধীরে কেমন যাচ্ছে মিলিয়ে যাচ্ছে আফরার।
বাইরে হঠাৎ একটি সুক্ষ্ণ শব্দ শোনাতে আফরার ধ্যান ভাঙলো। একবার নয়, দুবার-তিনবার। এমন গহীন রাতে বাইরে কে আছে?ভাবতেই উত্তেজনা কাজ করে ওঠলো। জানালা দিয়ে অন্ধকার চা বাগানের সরু পথে চোখ বুলিয়ে নিলো কয়েকবার। বৃষ্টির গতি এবার কম। হঠাৎ , আফরার চোখ গেলো দূরে একটি অবয়বের ওপর। একটি ছায়া পথ দিয়ে এগিয়ে আসছে বাংলোর পাশে থাকা ছোট্ট কাঠের ঘরটির দিকে। যতই এগোচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে অবয়বটি।
একবারে কাছে আসতেই একজন কালো রেইনকোর্ট পড়া আগন্তুকটিকে দেখতে পেলো সে। স্পষ্টত অবয়বটি পুরুষের…………মুখে কালো মাস্ক পড়া , হূলস্থূলভাবে কাঠের ঘরের দরজাটির তালা খুলে ফট ঘরে ভেতরে চলে গেলো সে।এর বেশি আফরা কিছু দেখলো না। কালো রেইনকোর্ট পড়া আগন্তুকটিকে দেখে চোর মনে হলো না। এই অন্ধকার পথে যেভাবে হেঁটে ওই কাঠের ঘরে ঢুকলো মনে হলো এখানকারই কেউ। কে জানে কে হবে ! আফরা আর না ভেবে ঘুমোতে চলে গেলো।
—-
পরদিন সকালে আকাশটি পরিষ্কার। ফুরবফুরে হাওয়া বইছে চা বাগানের মধ্য দিয়ে। আফরা দ্রুত পায়ে তাই কাঠের বাংলোর অদূরেই থাকা ছোট্ট কুঠুরির দিকে এগিয়ে চললো। আশেপাশে জংগল-ঝোপ-ঝাড়ে ভরা। মনে হচ্ছেনা যে এখানের যত্ন খুব একটা নেয়া হয় । কিন্ত অদ্ভুত কারনে মাঝ দিয়ে ঘাসগুলো মরে আছে। যেন কেউ এই পথ প্রতিদিন ব্যবহার করে। আফরা কাঠের কুঠুরের কাছটায় গিয়ে আরও একধাপ অবাক হলো। এই পাশটা বেশ পরিষ্কার। পাশ দিয়ে একটি ঢাল নেমে গিয়েছে যেখানে সরু একটা নদী। এটাই মূলত বাংলাদেশে আর ভারতের সীমান্ত। ইলা বলেছিলো যে মাঝে মাঝে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নাকি এখানে এসে সব পরখ করে যায়।
কিন্ত আফরার সেদিকে মাথাব্যাথা নেই। সে ভাবছে যে গতরাতে একজন পুরুষকে সে দেখেছিলো। তাহলে? এখন তালা দেওয়া কেন? এমন তো নয় যে আফরার আসার আগেই সে চলে গিয়েছে?
‘আফরা আপু? তুমি এখানে কি করছো?’
আফরা পেছনে ফিরে দেখলো ইলা। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। আফরা বললো,
‘এভাবেই ! জাস্ট দেখতে এসেছিলাম।’
‘দেখা হলে ফিরে চলো আপু। মা নাস্তা করার জন্য ডাকছে।’
‘আচ্ছা। ‘
‘আর একটা কথা।’
‘বলো।’
‘এখানে এসো না। এখানে আমাদের আসা নিষেধ আছে। তাই না আসলেই ভালো হবে।’
কথাটি ওর অদ্ভুদ লাগলেও কিছু বললো না। ইলার কথামতো তাই চলে গেলো মিসেস নাবিলার কাছে।
—
নাস্তায় বিশাল আয়োজন দেখে আফরা অবাক। চা, জুস, ব্রেড, এগটোস্ট, ওমলেট থেকে শুরু করে ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, রুটি, ভাজি, বুটের ডাল সব আছে। আফরা অবাক হয়ে বললো,
‘এতকিছু?’
মিসেস নাবিলা বললো,
‘তো মেহমান এসেছে আমরা রান্না করবো না? অনেক টাইপ খাবার আছে। তোমার যেটা ভালো লাগে। ওটাই খাও।’
আফরা আর কিছু বললো না। মিঃ ইফাজ, ইলা, ফাহিম সবাই বসে আছে টেবিলে। ফাহিমের ফরমাল লুক দেখে মনে হচ্ছে হাসপাতালে যাবে সে।গায়ের রঙের সাথে পরনে শার্টটি বেশ মানানসই। আফরা একপলক ফাহিম আর ইলার দিকে তাকিয়ে খাবারে মনোনিবেশ করলো। ওদের পরিবারটি আফরাদের মতো না। বেশ উৎফুল্ল আর প্রাণোচ্ছ্বোল ধরনের। তবে আফরা কখনোই সে সুযোগ পায়নি। মম-ড্যাড দুজনেই চাকরি করার কারনে কৈশর জীবন পার করেছে স্কুল-ফ্রেন্ডসদের সাথে। পরবর্তীতে ১৮ বছর হলেই জ্যাকসন হাইটস ছেড়ে ওয়াশিংটন এ শিফট হয়ে যায়। তবে এখানে বাবা-মায়ের প্রতি ফাহিম আর ইলার কেয়ারিংটা আফরার ভালোলাগছে। মিঃ ইফাজ খাওয়ার মাঝে বলে ওঠলেন,
‘তোমার মম-ড্যাড কল দিচ্ছে তুমি জানো?’
আফরা স্তম্ভিত হয়ে পড়লো। নীরবে বললো,
‘না। মোবাইল ডিস্চার্জ হয়ে আছে। চার্জ দেইনি আর।’
কথাটি মিথ্যা। আফরা আসলে চাচ্ছেনা এই মুহূর্তে মম-ড্যাডের সাথে কথা বলতে। মিঃ ইফাজ বললেন,
‘তোমার মম ভোরে কল দিয়েছিলো আমায়। যে তুমি ঠিকঠাকমতো এসেছো কিনা। আমি বলে দিয়েছি কোনো সমস্যা হয়নি। পরে কল দিও। ‘
‘জ্বি ঠিকাছে।’
ফাহিম খাওয়া সেরে উঠলো এবার। মিসেস নাবিলার উদ্দেশ্যে বললো,
‘মা ! আমি হসপিটালে গেলাম। টেক কেয়ার এভরিওয়ান।’
‘ক’দিন একটু ম্যানেজ করতে পারিস না ফাহিম। মেয়েটা অ্যামেরিকা থেকে এলো একদিনও হয়নি। ওকে নিয়ে ঘুরতে হবে তো তোকে।’
‘পারছি না আজ মা। একে তো নতুন জয়েন হলাম। তার ওপর আজ ওভারটাইম ডিউটি আছে। ইলা ! আজ প্রাইভেটে পড়তে যাইস না। গতকাল খবর এসেছে আগামী-পরশুর মধ্যে এখানে হরতাল হতে পারে। ছাত্ররা কি নিয়ে জানি আন্দোলন করছে। তাই বের না হলেই ভালো।’
‘আচ্ছা।’
বলে ওঠলো ইলা। ফাহিম অতঃপর আফরার দিকে একনজর তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ব্যাগ নিয়ে। আফরা খাওয়া-দাওয়া সেরে এবার বাড়িটা ঘুরবে। বাংলাদেশে আসতে প্রথম দ্বিধা জন্মালেও এখন মনে হচ্ছে এখানে এই মৌসুমে না আসলে চরম একটা ভুল হতো।
——
আজ সারাটাদিন মিঃ ইফাজ-মিসেস নাবিলার সাথে বেশ ভালোই কাটলো। বলতে হবে যে এ বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্যই বেশ আন্তরিক। বিকেলের দিকে মিঃইফাজ আর মিসেস নাবিলা একটি জরুরি দাওয়াতের জন্য মৌলভিবাজার গিয়েছিলেন। কিন্ত সন্ধ্যের দিকেই খবরে হঠাৎ শোনা গেল যে শহরে নাকি হরতাল শুরু হয়ে গিয়েছে। সে সুবাদে ফাহিম আর ওদিকে তারাও নিজ নিজ জায়গায় আটকে গেলেন। ইলাকে ফোন করে বললেন যে হরতাল আজ রাতে আর আসতে পারবেন না।
সেই সুবাদে পুরো বাড়িতে এখন ইলা আর আফরা। আফরা দেখে অবাক হলো যে ইলা বেশ সাহসী ধরনের মেয়ে। এককথায় সহজে ভয় পায় না। পুরো সন্ধ্যা রাতটাই ইলার সাথে ওর বেশ ভালো কেটেছে। এখন রাত হয়েছে অনেক,,, ইলা এখন আফরার জামা-কাপড়গুলো আলমারিতে গুছাচ্ছে আর কথা বলছে। কথার একপর্যায়ে বললো ,
‘আপু। আমার না সত্যি খুব ঘুম পেয়েছে।’
‘তাহলে এগুলো রেখে দাও। আর করতে হবে না।’
‘তাহলে ঠিকাছে। তুমি একা ঘুমাতে পারবে তো?’
আফরা হেসে দিলো ইলার কথায়। ইলার গাল টিপে বললো,
‘তুমি পারলে আমি কেনো পারবো না!’
‘তাও ঠিক! আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম আপু। গুড নাইট!’
‘গুট নাইট!’
ইলা চলে গেলো এবার।
বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। হয়তো যেকোনো সময়ই তা বিকট রূপ ধারন করবে। আফরার মনে একপলক চিন্তার বাসা বাধলো হঠাৎ। আজও কি সেই ‘মিঃরেইনকোর্ট বয়’ কে দেখা যাবে। পরক্ষণে মনে পড়লো এটার জন্য আজ সকালের সূর্যোদয়টা সে মিস করেছে। এই ভুল আর করবেনা সে। তাই কম্বল মুড়ি দিয়ে নীরবে ঘুমের রাজ্যে চলে গেলো।
—
গভীর ঘুমের অবস্থাতেই আফরার কানে ভেসে আসলো অতিসরু কিছু শব্দ। ক্রমশ সেই শব্দগুলো আরও জোরে শুনতে পেতেই আফরার চোখ থেকে ঘুম উবে গেলো। ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার। আজব তো ! ডিম লাইট তো জ্বালিয়েই সে ঘুমিয়েছিলো তাহলে এখান তা বন্ধ কেন? মনে হয় কারেন্ট চলে গিয়েছে। বাইরে থেকে খানিকটা ম্লান আলো এই ঘরটাকে রহস্যময় করে তুলছে।
পশ্চিম দিকেই বারান্দার দিকে তাকাতেই আচমকা চোখ থমকে গেলো আফরার।একজনকে দেখা যাচ্ছে আবছাভাবে। বুকে ক্রমাগত ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে। কে এটা? ওর জানামতে এই বাড়িতে ও আর ইলা ছাড়া কেউই নেই। আফরা সন্তর্পণে খাট থেকে নেমে ড্রয়ারের ধারালো নাইফটা ছিলো। প্রথমে নিজের আত্নরক্ষা তারপর সব। ছায়াটি হয়তো বারান্দা দিয়ে ঘরে ঢোকায় প্রচেষ্টায় আছে। আফরা প্রস্তত হয়ে থাকলো ছায়াটি ঢোকামাত্রই তাকে আক্রমণ করবে।
এবং করলোও তাই। সে ঢোকামাত্রই আফরা তার গলায় ছুড়ি আটকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
ঘরে লাইট নেই। যা আলো আসছে সব বাহির থেকে। এতটুকু আলোতে আফরা আন্দাজ করতে পারলো এ পুরুষ।পুরুষ বললে ভুল হবে………..একজন যুবক। নিঃশ্বাস ভারী, যেন আহত হয়ে এখানে এসেছে। নিজের সম্পূর্ণ শরীরের ভর দিয়ে আফরা ছেলেটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। গলা থেকে একফোটাও ছুড়ি সরায়নি।
ছেলেটা তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
‘ছাড়ো আমাকে।’
ইতিমধ্যে ডিম লাইটের আলো জ্বলে ওঠলো ঘরে। বিদ্যুত এসেছে। আফরার সামনে দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামবর্ণের এক যুবক। লাইটের অল্প আলোতে ছেলেটার শক্ত চোয়াল, তীক্ষ্ণ চোখে অদ্ভুত এক টান আছে যা ফাহিম-এরিক বা অন্যকোনো ছেলের প্রতি অনুভব করেনি আফরা। ছেলেটা আহত। হাতে গুলি লাগাতে রক্ত দিয়ে মেখে গিয়েছে। আফরা তবুও ছাড়লো না। গলায় ছুঁড়িটা আরও জোরে চাপিয়ে বললো,
‘কে তুমি?’
দুঃজনের নিঃশ্বাস এককার হয়ে যাচ্ছে। ফারহানের এবার বেহাল দশা। এমনিতেও গুলি লাগার জন্য হাত রক্তাক্ত হওয়াতে ফাহিমের রুমে বারান্দা বেয়ে এসেছে কিন্ত এখানে হলো অন্যকিছু।কে এই মেয়ে?
.
.
.
.
#চলবে…………..ইনশাআল্লাহ
[