#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব-৪+৫
দুঃজনের নিঃশ্বাস এককার হয়ে যাচ্ছে। ফারহানের এবার বেহাল দশা। এমনিতেও গুলি লাগার জন্য হাত রক্তাক্ত হওয়াতে ফাহিমের রুমে বারান্দা বেয়ে এসেছে কিন্ত এখানে হলো অন্যকিছু।কে এই মেয়ে?
ফারহান আহত কন্ঠে বললো,
‘আমি-আমি ফাহিমের কাছে এসেছি। ওর চাচাতো ভাই আমি। ফারহান জুবায়ের।’
অবাক হলো আফরা। এতটাই অবাক যে এখনও ফারহানকে দেয়ালের সাথে পিষে ধরে রেখেছে। ফারহানের মনে চিন্তার দানা বাধঁছে যে কে এই মেয়ে? এত রাতে ফাহিমের রুমে কেন?এমন তো নয় কল গার্ল। এসব উদ্ভট চিন্তা তৎক্ষণাৎ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো ফারহান। কেননা ফাহিম এমন ছেলে নয়। আবার তাই বললো,
‘গলা থেকে ছুড়িটা সরান প্লিজ।’
আফরা সরিয়ে দিলো তৎক্ষণাৎ। ডিমলাইটের আলোতে অন্ধকার ঘরে দুজন যুবক-যুবতীর অস্তিত্ব যেন গ্রাস করে ফেলছে।আফরা লাইট জালালো ঘরের । ফারহান দেয়াল ঘেষে আহতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। গুলিবিদ্ধ বাহুর আশপাশ দিয়ে রক্তে মাখামাখি…………আফরা অবাক হয়ে বললো,
‘আপনার এ অবস্থা কেন?’
‘রাস্তায় স্ট্রাইকের সময় পুলিশ শ্যুট করেছে। আপনি কাইন্ডলি ফাহিমকে ডাকুন। আর প্লিজ , খেয়াল রাখবেন যেন চাচু-চাচীমা কিছুতেই জানতে না পারে আমি এখানে আছি।’
ছেলেটার কথাবার্তায় কেমন যেন এক রহস্য। আফরা তৎক্ষণাৎ বললো,
‘কেউই বাসায় নেই। হরতালের জন্য ফাহিম হসপিটালে আর আঙ্কেল আন্টিও বাসায় আসতে পারেনি।’
দুর্বলতার এক পর্যায়ে নিচে বসে পড়লো ফারহান। রক্ত ঝরে পড়াতে বেশ দুর্বল। আফরা দ্রুতপায়ে ফারহানের কাছে ঝুকে বসে বাহু ধরলো।
‘ওহ নো ! আপনার অবস্থা তো সিরিয়াস। প্লিজ উঠে বেডে বসুন।’
ফারহানের অস্বস্তি হচ্ছে। প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি। এতরাতে একটা যুবতী মেয়ে যে কি-না স্লিভলেস টপস আর কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে ওর সাথে ঘেষেঁ আছে এটা ফারহানের অবচেতন বাঙালী মনে অস্বস্তি ফেলছে।’
কিন্ত এক বিন্দু কথা বলতে পারলো না সে। আফরা যতই হোক একজন মেয়ে। ফারহানের সুঠাম দেহ সে কখনোই টেনে তুলতে পারবে না। অতঃপর কিছু একটা ভেবে সে বললো,
‘আমি এক্ষুণি আসছি……’
বলেই আফরা উঠে ইলার ঘরের উদ্দেশ্যে গেলো। আফরা নক করার পরই বেশ কিছুক্ষণ পর ইলা দরজা খুলে। আফরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
‘ফাহিমের ফার্স্ট এইড কিট আছে?’
‘তা তো আছেই। কিন্ত এতরাতে কি করবে ওটা দিয়ে?’
নিঃশ্বাস ফেলল আফরা। তারপর গহীন স্বরে বললো,
‘ফারহান কে?’
ইলার মুখ শুকিয়ে গেলো ‘ফারহান’ নামটি শুনে। তাই অবাক হয়ে বললো,
‘তুমি চিনো ফারহান ভাইকে?’
‘আজ চিনলাম। সে এসেছে। মে বি স্ট্রাইকে পুলিশের গুলি খেয়েছে। ভয়াবহ অবাস্থা।’
ইলা ঠোঁট চেপে মৃদু শ্বাস নিলো। তারপর বললো,
‘কোথায় এখন?’
‘আমি যে রুমে থাকছি সেখানে।’
—
বৃষ্টির গতি কমে এবার রূপ নিয়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে। বাইরে নিস্তব্ধতার অনুভূতি। আফরা আর ইলা ফারহানকে টেনে বেডে বসিয়ে দিলো। ফারহান সজ্ঞানে কিছু শরীরে জেঁকে বসেছে একরাশ দুর্বলতা। নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রবলভাবে। আফরা একটা চেয়ার নিয়ে ফারহানের ঠিক মুখোমুখি বসলো। ফার্সট এইট কিট থেকে কটন বের করে যেই না ফারহানের শার্টে হাত দিতে যাবে চেঁচিয়ে উঠলো ফারহান,
‘হ্যালো! কি করছেন আপনি?’
বিরক্ত হলো আফরা। দেখছে ওর বাহুর ক্ষত সারানোর উদ্দেশ্যে বসেছে তবুও আফরা বললো,
‘দেখছেন না শার্ট খুলছি?’
‘ওটাইতো………… শার্ট খুলছেন কেন? আপনি কি ডক্টর যে আমার ট্রিটমেন্ট করবেন? ফাহিম আসুক । ওকে দিয়েই করাবো।’
আফরা কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে ফারহানের দিকে তাকালো। তারপর ঠোঁট চেপে মৃদুস্বরে বললো,
‘শরীরের জোর এখন না থালেও গলার জোর ঠিকই আছে। আর এসব ক্ষত সারানোর ট্রেনিং আমাদের স্কুল লাইফেই দিয়ে দেয়। তাই ভয় পাবেন না। এবার তো শার্ট খুলুন? আপনার ডান পাশটা উন্মুক্ত করলেই হবে। নেকড হতে তো আর বলছি না।’
আফরার কাট কট গলা। ফারহান উপায়ান্তর না পেয়েই শার্টের বোতাম খুলে উন্মুক্ত করলো নিজের ডান পাশটি। আফরা এবার অতি সাবধানতার সাথে কটন দিয়ে রক্ত সাফ করে দিচ্ছে। নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে ফারহানের বুক বুরাবর। ফারহানের শ্বাস বেরিয়ে আসার মতো উপক্রম । সেই সাথে অচেনা-অজানা মেয়েটির প্রতি প্রবল ক্ষোভ। কোনোমেয়ে ওর কাছে আসলে হুংকার দিতে দ্বিধাবোধ করতো না সেদিকে এই মেয়ে অবলীলায় কিসব করে চলছে। তার ওপর মেয়েটির পড়নে স্লিভলেস জামা আর কোয়ার্টার প্যান্ট প্রমাণ করে দেয় আর যাই হোক এই মেয়ে অন্য চার-পাঁচটা বাঙালী মেয়ের মতো না।
গুলিটা বের করতেই ফারহানের মুখ দিয়ে ‘উহ্’ করে একটি শব্দ বেরিয়ে এলো। পাশ থেকে ইলা বলে ওঠলো,
‘ভাই……….তুমি…’
‘ঠিকাছি আমি। চিন্তা করিস না………………’
ইলা কে বলতে না দিয়েই বললো ফারহান। আফরা এবার সন্তর্পণে বাহুতে ব্যান্ডেজ করে দিলো। এর মধ্যে ফারহানকে কয়েকবার দেখলো সে। ফারহান যেন অনুভূতিহীন। ব্যাপারটা এমন যে এসব বিষয় ছেলেটার সাথে কমবেশি সবসময়ই হয়ে থাকে। আফরা এবার বললো,
‘আপনি থাকেন কোথায়?’
‘বাংলোর কাছে যেই ছোট ঘরটি আছে ওখানেই।’
ফারহানের তীক্ষ্ণ উত্তর। আফরার কাছে গতকালের রহস্যটি বেরিয়ে এলো জলের মতো। তাহলে সেই মিঃরেইনকোর্টম্যান তবে ফারহান। তবে আফরার মনে একটু খচখচানি চলছে। এই বাড়িতে আসলো একদিন পূর্ণ হয়ে গেলো অথচ মিসেস নাবিলা বা মিঃ ইফাজ কেউই ফারহানের নামটুকু উচ্চারন করলো না। গাড়ি থেকে নেমে ফাহিমের মুখে একবার শুনেছিলো তবে মিসেস নাবিলা তা এড়িয়ে দিয়েছেন সুণিপুনভাবে।
আফরা এবার ইলার উদ্দেশ্যে বললো,
‘ইলা ! তুমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ‘
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
চলে গেলো ইলা। অবশেষে আফরাও ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজটি করে দিলো। ফারহানের কাছ থেকে সরে এসে বললো,
‘প্রথমেই সরি! তখন ওভাবে অ্যাটার্ক করার জন্য।’
ফারহান তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘আপনি আপনার জায়গায় ঠিকাছেন। সরি বলার প্রয়োজন নেই।’
‘তা তো বুঝলাম। তবে আপনি এভাবে বারান্দা বেয়ে ফাহিমের কাছে এসেছেন কেন?দরজায়ও তো নক করতে পারতেন।’
ফারহান প্রখর চোখে তাকালো আফরার দিকে। কই ভেবেছিলো এই মেয়েকে ধন্যবাদ জানাবে আর এই স্পাই মেয়েতো রীতিমতো ওকে হেনেস্তা করছে। না ফারহান একে চিনে আর না এই মেয়ে চিনে ফারহানকে। তাহলে এত অধিকারবোধ কিসের? কিন্ত শরীরে এত দুর্বলতা যে রাগটা প্রকাশ করতে পারলো না। দুরবল পায়ে উঠতে গেলেই আফরা ফারহানের ঘাড় চেপে বললো,
‘এ কি? আপনি উঠছেন কেন?’
‘এই জায়গাটি আমার থাকার জন্য না। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি।’
‘এই শরীর নিয়ে যাবেন?’
‘এগুলো আমার কাছে নিত্যদিনের ব্যাপার। আমি পারবো।’
ফারহান যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আফরা হাত চেপে খাটে বসিয়ে দিলো ফারহানকে। ফারহান কিছু বলতে যাবে আফরা ওর ঠোঁটযুগলে আঙ্গুল স্পর্শ করে বললো,
‘হুশশশঁ। কোনো কথা না।’
আফরার মিহি কন্ঠ। ফারহান আবেগঘন চোখে তাকিয়ে আছে আফরার মিষ্টি মুখটির দিকে। কানের কাছে এই মেয়েটির কন্ঠ বারি খাচ্ছে বারবার। কোনো মেয়ের কন্ঠ কি এতটাই নেশালো হয়.? ফারহানের তা জানা ছিলো না। আফরার বুকের একটু ওপর বরাবর চুলগুলো অগোছালো। গোলাপি শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিচ্ছে বারবার। ফারহানের কেমন যেন নেশা হয়ে উঠেছে। ইচ্ছে করছে এভাবেই অপরিচিতা এই মেয়েকে দেখতে।
অতঃপর ধ্যান এলো ফারহানের। মাথা থেকে উদ্ভট ভাবনাগুলো ঝেড়ে বললো,
‘ঠোঁট থেকে আঙুল সরান।’
আফরা সরিয়ে দিলো তৎক্ষণাৎ। ছেলেটা হয়তো রেগে গিয়েছে ওর স্পর্শ করাতে। শ্যামলা মুখের তীব্র দৃষ্টি তো তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। ফারহান শান্তভাবে বললো,
‘আমার ব্যক্তিগত কাজে ইন্টারফেয়ার করাটা আমি কখনোই পছন্দ করিনা।এইবার প্রথম বলে আর কিছু বললাম না। নেক্সট টাইম যেন এমন না হয়।’
আফরা প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। তবে একটি জিনিস ধারনা করলো , ফারহান ছেলেটা ফাহিমের মতো না………….এক্টু গম্ভীর প্রকৃতির। তবে কাজকর্মে একটা লিডার লিডার ভাব আছে যেন নেতৃত্ব জিনিসটা ওর সবকিছু।ফারহান এবার আর বারান্দা দিয়ে যাবে না। মিসেস নাবিলা যেহেতু ঘরে নেই তাই সদর দরজা দিয়ে যাওয়া যেতে পারে। ফারহান চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই আফরা ডাক দিলো,
‘ফারহান!’
অবাক হলো আফরা। অল্প সময়ের পরিচিতিতে আফরা যে এভাবে ছেলেটাকে নাম ধরে সম্বোধন করে ফেলবে ফারহান তা ভাবতে পারেনি। ফারহান পিছে ফিরলো। গম্ভীর সুরে বললো,
‘বলেন?’
‘আপনি কি করেন?’
সহসাই প্রশ্নটি করে ফেললো আফরা। ফারহান ঠোঁটের কোনে একটা মৃদু হাসি ঝুলানো। আফরা অবাক চাহিনী নিক্ষেপ করলো সেই হাসিতে। ফারহানের পরনে সাদা শার্ট-ধূসর প্যান্ট, চাপ দাঁড়িতে অন্যরকম ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেছে। শতভাগ নিশ্চিত যে হাইট ৬ ফুট না তবে ৫ ফুট ৮ এর কমও না এটাও আফরা নিশ্চিত। এই ছেলে র গায়ের চাপা রংটাই ওকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে। ফারহান মৌনতা ভেঙে প্রতিউত্তরে বললো,
‘অধিকারের জন্য লড়াই করি’
নীরবে প্রস্থান করলো ফারহান। সে হেঁটে চলে গেলো ধীর গতিতে। আফরার কাছে ফারহান মানুষটি একেবারে নতুন। ওর ২৩ বছরের জীবনে কখনোই এমন ব্যক্তির মুখোমুখি সে হয়নি। সবকিছুতে গম্ভীরতা থাকলেও কথাবার্তা কি প্রখর! এক মুহূর্তেই ব্যক্তিটির অন্যের মন-মস্তিষ্ক দখল করার মতো ক্ষমতা আছে। আফরার কাছে ফারহান রহস্যময়! এককথায় ভীষণ রকমের রহস্যময়!
——
পূর্ব দিগন্ত ভেদ করে ছড়িয়ে পড়লো রৌদ্দুরের অবাধ্য রশ্মি।চা বাগানের ছোট ছোট টিলার ওপর এ রশ্মিগুলো পড়লে একে এক মায়াস্বর্গ মনে হয়। বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে অপার নয়নে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুউচ্চু পাহাড়গুলো দেখে যাচ্ছে আফরা। সীমান্তঘেষে বাড়ি থাকার উপকারিতা মনে হয় এটাই। কি সুন্দর সে দৃশ্য।
চা বাগানের একেবারে শেষপ্রান্তে এই বাংলোটি। তারপর একটা খাড়া পাহাড়ি ঢাল নিচে সীমান্তের কাছে মিশেছে যার ওপর দিয়ে বয়ে চলছে সরু একটি নদী। কিন্ত সেখানে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। এককথায় অরক্ষিত। বিষয়টা আফরার ভালো লাগলো না। এসব এলাকায় কম বেশি অনেক অপরাধ হয়ে থাকে তাই প্রাচীরটা দিয়ে দিলো ভালো হতো।
কল আসতেই ধ্যান ভাঙলো ওর। ইন্টারন্যাশনাল নাম্বার দেখে বুঝে গিয়েছে যে কে হতে পারে।কল রিসিভ করে বললো,
‘হ্যালো ড্যাড!’
আলতো হাসলেন মিঃআসিফ। সরু গলায় বললেন,
‘হ্যালো অ্যাফি!’
‘তোমায় আমি বারবার বলেছি যে আমায় ‘অ্যাফি’ বলে ডাকবে না। এই নামটা তারাই ডাকবে যারা আমার ‘আফরা’ নামটা বিকৃত করে ‘অ্যাফরা’ ডাকে!’
ব্যঙ্গ সুরে বললো আফরা। মিঃ আসিস তাই অপরপাশে সশব্দে হেসে ওঠলেন। কোনোমতে তা দমিয়ে বললেন,
‘ইউ মিন ওই সাদা চামড়ার মানুষদের।’
‘হুম।’
‘আচ্ছা এসব কথা থাক। কেমন লাগছে বিডিতে।’
‘উমমম……….ভালো। ‘
‘এখনও রাগ করে আছো?’
আফরা কিছু বললো না। আসিফ তার উত্তর পেয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। কিন্ত এছাড়া আর কোনো উপায় নেই ওকে শুধরানোর। আসিফ আবার বললেন,
‘তো কেমন লাগলো ইফাজ আঙ্কেলের পরিবারকে?’
‘ভালো লেগেছে। তবে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো ড্যাড?’
‘কি প্রশ্ন?’
‘ইফাজ আঙ্কেলের পরিবারে কে কে আছে জানো?’
‘জানি তো! তিনি, তার ওয়াইফ সাথে দুই ছেলে মেয়ে ফাহিম আর ইলা।’
‘আর ফারহান?তাকে চিনো?’
এই প্রশ্নের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন আসিফ। কাঙ্খিত প্রশ্ন পেয়ে মুখে আপনাআপনি এক বাকা হাসি ফুটে উঠলো তার।
‘হুম চিনি। ইফাজ আঙ্কেলের বড় ভাইয়ের ছেলে। শুনেছিলাম ছেলেটার বাবা খুন হয়েছে তবে মা কোথায় জানিনা।’
‘ইফাজ আঙ্কেলের ফ্যামিলিটা অনেক অদ্ভুত………………..সাথে ওই ফারহান ছেলেটাও।’
‘হয়তো………..দেখো সামনে কি হয়। এমনও তো হতে পারে তুমি তোমার সব উত্তর পেয়ে যাবে?’
‘হয়তো?’
‘আমি তাহলে রাখি আফরা। টেক কেয়ার।’
‘ইট টু ড্যাড!’
কল কেটে দিলো আফরা। মনটা এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। তাই আবারও সৌন্দর্যে বুদ হয়ে গেলো সে।
————–
গতকালের মতো আজও নাস্তায় বিশাল আয়োজন। মিসেস নাবিলা ভোরে বাড়িতে এসেই নাস্তার আয়োজন করেছেন। এবার তা পরিবেশন করছে ইলা।মিঃ ইফাজ পত্রিকায় গতরাতের হরতাল সংক্রান্ত বিস্তারিত পড়ছেন। একপর্যায়ে তিনি ফাহিমকে বললেন,
‘ফারহানকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসো তো ফাহিম!’
খাওয়ায় মশগুল ফাহিম থমকে গেলো। সাথে ইলা আর মিসেস নাবিলাও।আফরা এই দ্বিতীয়বার ফারহানের নাম শুনলো। পরে কি হয় তা দেখার জন্য কৌতুহল জমলো মনে। মিসেস নাবিলা চোখ পাকিয়ে বললেন,
‘ফারহানকে আসতে বলছো কেন?’
‘কেন? ও কি আসতে পারবে না? যতই হোক! ফারহান আমাদের ঘরেরই ছেলে।’
ইফাজ সাহেবের কথার পরিপ্রেক্ষিতে নাবিলা কিছুই বললেন না। মুখ খিচে বললেন,
‘ডাকো ওই নেতাসাহেবকে!’
বেশ কিছুক্ষণ পর ফাহিমের পিছু পিছু এলো ফারহান। আফরা খাওয়ার মধ্যে আড়চোখে লক্ষ্য করলো তাকে। ফালহানের পরনে কালো শার্ট…………..কালো প্যান্ট , গলার নিচে দু’টো বোতাম খুলে রেখেছে। হাতে মোটা বেল্টের স্মার্টওয়াচ,কানে ব্লুটুথ এয়ারফোনটা ইতিমধ্যে পকেটে পুরে নিয়েছে। আফরা আশাহত হলো হাতের ব্যান্ডেজ হয়তো সে খুলে ফেলেছে।
ফারহান বিনয়ী গলায় মিঃ ইফাজকে বললো,
‘আসসালামু আলাইকুম চাচু!’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। এখানে বসো। নাস্তা করো আমাদের সাথে।’
‘জ্বি।’
ফারহান বসলো ফাহিমের পাশে । আফরার ঠিক বরাবরই সে বসেছে। আফরা একপলক আবার তাকিয়ে কাটাচামচ দিয়ে সালাদ মুখে নিয়ে নিলো। মিঃ ইফাজ ফারহানকে বললো,
‘ব্যস্ত নাকি তুমি? আজকাল তো দেখাই যায় না।’
‘কাজের চাপ অনেক তাই।’
মিঃ ইফাজ জানে যে ওর কি এত কাজ।তাই কথা না বাড়িয়ে আফরাকে দেখিয়ে বললো,
‘ওর সাথে পরিচয় হয়ে নাও ফারহান। তোমার চাচীর এক আত্নীয়র মেয়ে আফরা। গতপরশু অ্যামেরিকা থেকে এসেছে।আর আফরা ! ও ফারহান। আমার বড় ভাইয়ের ছেলে।’
ফারহান আর আফরা দুজনেরই চোখাচোখি হলো এবার।আফরা যে বাঙালি পরিবেশে বড় হয়নি তা গতরাতেই ফারহান আন্দাজ করতে পারছিলো। মেয়েটার মতো ওর নামটাও সুন্দর। ফারহান মৃদুভাবে ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে বললো,
‘হ্যালো আফরা!’
.
.
.
.
#চলবে………….ইনশাআল্লাহ!