অতল গভীরে পর্ব ১

কখোনো শুনেছেন বাসরঘরে বউয়ের জন্য কোন বর অপেক্ষা করে??আমি করছি, তাও একটা নেশাখোর বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।এই জ্বালা কি আর প্রানে শয়।ইচ্ছা করছে ওই মেয়েকে মদের টাংকিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলি।
আর আম্মুও কেমন এরকম একটা নেশাখোর মেয়ের সাথে বিয়েও ঠিক করে ফেললো আমাকে না জানিয়ে। কালকে মাএ লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসলাম আর আজকেই কিনা বিয়ে দিয়ে দিলো।আজ আম্মু জদি নিজের কসম না কাটতো কখোনই এই মেয়েকে বিয়ে করতাম না। এই মেয়েটা আমাকে ছোট থাকতেও জালিয়েছে আর এখোনো জ্বালাবে।

সব ঘটনা পরে বলছি আগে আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই।

আমি অায়মান জুহায়ের । গত চার বছর যাবোত বাহির থেকে একটা কোর্স করে সবে কালকে দেশে ফিরেছি। আমার ছোট একটা ভাই আছে এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পরে,নাম তানজিল।আমার বাবার নাম ফাহাদুল হক। আব্বু বিজনেস করেন। আমার আম্মুর নাম রোকসানা বেগম আম্মু গৃহিণী।

আমার আব্বুরা তিন ভাই। আমরা সবাই এক সাথেই থাকি।ওখানে আমার আব্বুই সবার বড়। আমার বর কাকা তোফাজ্জল আর ছোট কাকা মাহমুদ। বড় কাকার তিনজন ছেলে মেয়ে, আর ছোট কাকার দুজন মেয়ে। সেই দুজনের থেকে একজন হলো আমার বউ তানহা রহমান ।যাকে কিনা আমি বিয়ে করেছি, আব্বু আম্মুর জোর করাতে।
যে কিনা নাকি সারাদিন নেশা করে নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখতো সেই মেয়েকে। ভাই আমিওতো একটা ছেলে তাওতো কখোনো মদ সিগারেট খাইনি।একেবারেইযে খাইনি তাও নয়। ওই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে এক দুইটান সিগারেট খাওয়াই হতো।কিন্তু তাই বলে এই মেয়ের মতো এতো নেশা হয়ে যায়নি।কেন যে ও এমন হয়েছে কে জানে?

আমি বাহিরের দেশে জাওয়ার এক বছর পর থেকেই শুনতে পাই ও নাকি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে বদলে যাচ্ছে। বাসায় আসে দেরি করে।কথা বলে না কারো সাথে ঠিক মতো খুব রুড বিহেব করে। আসতে আসতে পরিবর্তন হতে হতে আজ ও একজন নাকি ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে গেছে।জানি না এই মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে কেন দিলো আম্মু।জেনে শুনে কেই বা এরকম এডিকটেড মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে।যানি না কোনও দিন এই মেয়ের থেকে ছুটতে পারবো কিনা।

রকিং চেয়ারে বসে বসে এতো কিছু ভাবছিলাম এর মাঝেই দরোজা খুব জোরে খোলার আওয়াজ পেলাম।তাই দরোজার কাছে চোখ রাখতেই দেখতে পেলাম,তানহা হেলে দুলে আসতিসে হাতে একটা কেনের বোতল নিয়ে সম্ভবত বিয়ারের বোতল। বলিকি এই মেয়ের আজকেও বিয়ার খেতে হতো,বিয়ের দিনও কেউ এই ভাবে বিয়ার খায়। যেখানে আমার মজা করে বন্ধুদের সাথে বিয়ার খাওয়ার কথা সেখানে এই মেয়ে মদ খেয়ে এসেছে ফুটা কপাল আমার।

চেয়ারের মধ্যে বসে আছি ও হেলতে দুলতে এসেই সামনে কারপেটের সাথে বেজেই ঠাস করে পরে গেছে, ওর পরে যাওয়া দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো।কি দরকার যদি মদ খাওয়ার পর নিজেকেই না সামলাতে জানে, এসব না খেলেইতো পারে।যাই হোক আমি বসে বসে ওর কান্ড দেখছি,
ও আবার উঠে আমার সামনে এসে নিজের কোমরে হাত দিয়ে বললো,

—-এই এই আয়মান ভাইয়া আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?কে বলেছে আমাকে বিয়ে করতে?

—– ওও আচ্ছা, শোন তোকে না আমার বিয়ে করার কোন সখ বা ইচ্ছে কোনটাই ছিলো না, আমার আম্মু বলেছে তাই তোকে আমি বিয়ে করেছি।

—–আপনার আম্মু বলবে আর আপনিও ডেং ডেং করে আমাকে বিয়ে করতে এসে পরবেন লজ্জা লাগে না।

—–এই কি বলছিস তুই?ঠিক মতো সম্মান দিয়ে কথা বল আমি তোদের সবার বড়।

—–হেহ্ সম্মান? সম্মান মাই ফুট।

—–তানহা বারাবরি করিস না।তুই কিন্তু এখোন আমাকে চিনিস না।

—–চিনে কি করবো আপনাকে?থাকবো না আমি আপনার সাথে।ডিভোর্স চাই আমি আপনার থেকে।

—–ওই হেলো।আমিও তোর সাথে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে নেই।আমিও ডিভোর্স চাই।কে থাকবে তোর সাথে এমন করে।তুই যে একটা নেশাখোর সেটা জানলে বিয়ের আসর থেকেই সব পালিয়ে জাবে। তাও আমি ছিলাম বলে তোকে বিয়ে করেছি বুঝেছিস।

—- লাগবে না এই বিয়ে। মানি না আমি বিয়ে কে আপনি চিনিনা আমি আপনাকে!কার স্বামী আপনি বের হয়ে জান এই রুম থেকে।

—-ও আচ্ছা। তাহলে শুনে রাখ , আমিও তোকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানি না।মানতে পারবোও না কোনদিন।যত তারাতাড়ি সম্ভব আমি তোকে ডিভোর্স দিবো।আমি কালকেই যাবো ডিভোর্স পেপার ঠিক করতে।আর শুনে রাই এই বাড়িও আমার এই রুম টাও আমার যদি বের হয়ে যেতে ইচ্ছে করে তাহলে তুই বের হয়ে যা।আমি পারবো না।

—– হুহ আমার ও ইচ্ছে নাই এই রুমে থাকার । চলে যাচ্ছি আমি আমার রুমে আপনি থাকেন।

—–ওকে রাস্তাটা ওই দিকে।

—–কোন দিকে।

—–সামনে।

—-ওকে।

ওও কিছুদুর হাটতেই বিছানায় কাছে যেতেই ঠাস করে বিছানয়া পরে গেলো।আর আমিও মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম এরকমটা হওয়ারি ছিলো। কারোন এতখোন যেভাবে টলছিলো মনে হচ্ছিল এখোনি পরে যাবে পরে যাবে।এখোন একে আমি কি করি।রুমেই চলে যেতি তুই। না করে এখানেই পরে গেলো।তাও ভালোমতো বিছানায় পরেনি অর্ধেক বিছানয় শুয়ে আছে আর পা দুটো ঝুলে আছে নিচের দিকে। এখোন আমাকেই একে ঠিক করিয়ে শুয়িয়ে দিতে হবে।

তাই হেটে ওর কাছে গেলাম, ওকে পাজকোলে ওঠাতে গিয়ে আমার অবস্থা টাইট ভাইবেন না ওর অনেক ওজন। আসলে এতো পরিমান মদ খেয়েছে যে ওর থেকে প্রচন্ড মদের স্মেল আসছে।যেটাতে আমারি বমি বমি ভাব লাগছে।উফ এতো কি করে খায় এই মেয়েটে।কিসের এতো কস্ট ছিলো যে এমন মদ সিগারেট খাওয়া শুরু করলো আল্লাহ জানে।

যাইহোক আমি ওকে সুন্দর করে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।পরনে বিয়ের শাড়ি ছিলো গহনা গাটি কিছু খোলেনি। হাতে গলার কানের গহনা গুলো খুলে টেবিলে রেখে দিলাম আর আমি লাইট ওফ করে দরোজা লাগিয়ে সোফায় শুয়ে পরলাম।এই মেয়ের সাথে থাকার আমার কোন ইচ্ছে নেই।কবে যে এর থেকে মুক্তি পাবো আল্লাহ জানে।আম্মু এ তুমি আমায় কোথায় ফাসিয়ে দিলে?

যাক এখোন একটু আরামে ঘুমিয়ে নেই সারাদিন মানুষের ক্যেচ ক্যেচ যেনো আমার কানটাকে ঝালাপনা করে দিয়েছে। খুব সুন্দর আরামে ঘুম দিলাম সকাল বেলা দরোজা ধক্কানোর আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো।

তাই উঠে গিয়ে দরোজা খুলে দিলাম দরোজা খুলে দেখি মিলি, সুমি,তাহমিনা দারিয়ে আছে।মিলি সুমি হলো আমার বড় কাকার মেয়ে আর তাহমিনা হলো আমার ছোট কাকার মেয়ে মানে তনহার ছোট বোন এগুলা সব গুলাই এবার কলেজ ফার্স্ট ইয়ারে।আর তানহাতো পরালেখাই ছেরে দিয়েছে যদি করতো তাহলে এবার হয়তো অনার্স থার্ড ইয়ারে থাকতো।মিলি সুমির বর ভাই আছে নাম জাহিদ ও আর আমি একি সমান দুজনেই পরা লেখা শেষ করেছি এক সাথে, ও এখোন প্রাইভেট একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে।আর আমি বেকার এখোনো জব হয়নি।ভিভিন্ন জায়গায় আমার সব সার্টিফিকেট দিয়ে রেখেছি আমার যাকে পছন্দ হবে সে আমাকে চাকরির জন্য ডাকবে। এদেরকেও খুব ভালো করে চিনে নিন, এখোন এদের দুষ্টামি আর ফাজলামি গুলোও দেখে নিন।এদের সবাইকে এই কয়েকটা বছর খুব মিস করেছি। আমার ভাবনার মাঝে তাহমিনা ডেকে উঠলো,

—-ভাইয়া, টাকা দাও (তাহমিনা)

—–কিসের টাকা?

—–বারে এখোনতো তুমি আমাদের দুলাভাইয়া হয়ে গেছো তো শালিকাদের টাকা দিবা না(মিলি)

—–এহ আইসে জাতো যা বের হয়ে যা রুম থেকে।

—–টাকা না দিলে বের হবো না(সুমি)

—–উম ঠিক আছে দিবো,তাহলে আমার সব কাজ তোদের করে দিতে হবে,তোরা আমার অর্ধেক ঘরওয়ালি না।

—–কি কি কাজ করে দিতে হবে??(মিলি)

—–এই ধর আমার রুমটাকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে ওইজে বিছানায় একটা আবর্জনা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে তাকে উঠিয়ে দিতে হবে।তারপর আমার ওয়াশরুমে দেখবি কতগুলো কাপোর আছে সব গুলো ধুয়ে আয়রন করে রাখবি।

—–এতো কাজ।এটা ঠিক না ভাইয়া।আর তুমিতে আমাদের সব থেকে বড় কাজটাই দিয়ে দিসো।(মিলি)

—-কোথায় আবার বড় কাজ দিলাম??

—–ওইজে, নাক ডেকে ডেকে যে ঘুমাচ্ছে তাকে ডেকে উঠানোর কাজ,একে ডেকে উঠাতে গেলে গালির সাথে লাথি ফ্রী দিয়ে দেয়। তানহা আপু এই তিনটে বছর ধরে আমাদের সাথে ভালো মতো কথাও বলে দেখেনি সব সময় আমাদের থেকে দুরে দুরে থাকে।(তাহমিনা)

—–ঠিকি আছে।ও যেই ঝগরুটে বাপরে।ছোট বেলাও আমার সাথে ঝগরা করতো আর এখোনো করে।

—–কি বলেন ভাইয়া রাতে ঝগরা লেগেছিলো নাকি??(সুমি)

—–সেটা আবার বলতে।

—–ওওওও আচ্ছা সরি ভাইয়া আপুর তরফ থেকে আমি সরি বলছি।আসলে কালকে আমি আপুকে অনেকবার না করে ছিলাম বিয়ার খেতে তাও খেয়েছে।আটকাতে পারিনি।(তাহমিনা)

—–আহ্ আমার নতুন শালিকা মন খারাপ করে না।শোন তুই আর তোর বোন আকাশ পাতাল তফাৎ বুঝেছিস।তাই ওর হয়ে তোকে সরি বলতে হবে না।আর ওতো আগে এমন ছিলো না খুব ভদ্র ছিলো খুব নরম, সহজ – সরল ছিলো,ও এরকম হলো কি করে তোরা কি কিছু জানিস??

—–না ভাইয়া কিছু জানি না।(তাহমিনা)

—–আচ্ছা। থাক বাদদে এখোন এসব তোরা নিচে যা আমি আসছি।

—–আচ্ছা ভাইয়া।আর আমাদের টাকা।(মিলি)

——কালকে না তোদের কতগুলা গিফট দিলাম আবার টাকা কেন?

—–বারে দুলাভাই হওয়ার খুশিতে দিবা না।(সুমি)

—–আচ্ছা যা বিকেল বেলা নিস এখোন যা।

—–আচ্ছা। আর ভাইয়া আপুকে এখোন ডেকো না নিজের জখোন ইচ্ছে হবে ও তখোন নিজেই উঠে যাবে। উঠেই কোথাও একটা বেরিয়ে যায়(তাহমিনা)

—–আচ্ছা। কোথায় যায়?

—–জানি না(সুমি)

—-ওওওওও

ওরা চলে গেলো।আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলাম একা একা। গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে বড়রাও বসে আছে।আমাকে একা দেখে সবাই আফসোস এর একটা নিশ্বাস ফেললো,হয়তো আমাকে একাই আসা করেছিলো তাই। সবাই সকালের নাস্তা শেষ করে ড্রইরুমে বসে আছি। প্রায় ঘন্টা খানেক পর ও নেমে আসছে তাও রেডি হয়ে হয়ে লেডিস শার্ট, জিন্স পরা।
ওকে এভাবে নেমে আসতে দেখে ওর আম্মু এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

—–তানহা কোথায় যাচ্ছিস??

—–তুমি জানো না আমি সকালে কোথায় যাই।জিজ্ঞেস করছো কেন?

—–তানহা এখোন তোমার বিয়ে হয়েছে। তোমার হাসবেন্ড আছে।তুমি এইভাবে চলতে পারো না।এতোদিন সব মেনে নিয়েছি এখোন পারবো না।

—–উফ আম্মু চুপ থাকো।আমি বলেছিলাম আমি বিয়ে করবো তোমরাই আমাকে বিয়ে দিয়েছো। বিয়ে দিতে জোর করেছো। তোমাদের কথায় বিয়েও করেছি। এখোন আর কিছু আমার থেকে আসা করো না।পারবো না আমি তোমাদের কথা শুনতে।

—–তানহা।

—–ডোন্ট সাউট আম্মু।আমার সাথে চিল্লিয়ে লাভ নেই। আমি তোমাদের কথা সুনতে বাধ্য নই। আমি গেলাম বাহিরে আমার মাথা ধরে আছে খুব,তাই আমার থেকে তোমরা দুরে থাকাই শ্রেয়।

বলেই হাটতে হাটতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আর ছোট চাচি কান্না করতে লাগলো, দেখলাম সবার চোখেই পানি তানহার এরকম ব্যবাহরে আমিও ভাবছি এই মেয়েটা এতোটা কি করে বদলিয়ে গেলো। যে মাথা তুলে কারো সাথে জোর গলায় কথা বলতো না সেই মেয়ে এরকম কি করে হয়ে গেলো। যাই হোক আমার এর মধ্যে একটা ফোন এলো তাই চলে গেলাম কথা বলতে।

চলবে…….

#অতল_গভীরে
#সুচনা_পর্ব
Eliyana Aara

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here