অতল গভীরে পর্ব ৩

#অতল_গভীরে
#পর্ব৩
Eliyana Aara
–ভা ভাইয়া, বিয়ার মদের বোতল গুলো কই? খ খুজে পাচ্ছি না কেন?
—-আমি সব ফেলে দিয়েছি।(চিল্লিয়ে বলতে লাগলো)
—-ফেলে দিয়েছেন মানে?ক কোথায় ফেলেছেন?আর ওগুলা ধরার সাহস আপনাকে কে দিলো?(বিরক্ত হয়ে বললাম,)
—–ওগুলা ধরার আবার সাহস দরকার হয় নাকি??

—-আগে বলেন কোথায় ফেলেছেন?

—–জানি না।(জোড়ে জোরে বলতে লাগলো)

—-আপনি ফেলবেন কেন?কে বলেছে আপনাকে এগুলা ফেলতে।আপনাকে আমি বলেছিলাম না আমার কোন বেপারে নাক না গলাতে।আপনি আপনার মতো থাকবেন আমি আমার মতো।আর নিজেকে আমার স্বামী ভাববার ভুলেও চেষ্টা করবেন না।

ওর কথায় কর্নপাত না করে আমি সোজা রান্নাঘরে এসে চায়ের জন্য পানি বসিয়ে দিলাম।

ও আমার পিছে পিছে এসে,আবার সেই একি কথা বলতে লাগলো,আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,ও এবার আমার কাছে এসেই আমার কলার ধরে বলতে লাগলো,

—-কি বলছি কানে যাচ্ছে না তোর আমার কথা।আমি তোকে জিজ্ঞেস করেছিলামতো কোথায় আমার বোতল গুলি।
ওর এরকম ব্যাবহারে আমার মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে হয়ে গেলো,তাই আমার কলার থেকে ওর হাত ছুটিয়েই কষে একটা ওর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম,আর বললাম,

—-ছিহ্ তানহা তুই এতো পরিমান খারাপ হয়ে গিয়েছিস।আমার তোকে দেখে ঘৃণা লাগছে।তুই আমাকে কখোন আপনি ছারা কথা বলিসনি আর সেই আজকে তুই কিনা আমাকে তুই তুকারি করছিস।ছিহ্। এখোন আর আজ থেকে তোর যা ইচ্ছে তুই তাই কর।আমি কিছুই বলবো না তোকে আর কোনদিন।আজ থেকে তুই তোর রাস্তায় আমি আমার রাস্তায়।
বলেই রান্নাঘরে নিচের ডেস্ক থেকে ওর সামনে একটা বস্তা ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।
আমি রুমে এসে দরোজা লাগিয়ে বিছানায় বসে রইলাম।

নাহ্ একে, আমার ধারা ঠিক করা সম্ভব নয়।ও যদি নিজ থেকে এগুলা ছারতে না চায় তাহলে কখোনই এইসব ছারানো যাবে না।ও নিজে যেদিন এসে বলবে আমি এগুলা ছারতে চাই সেদিন আমি ওকে সাহায্য করবো এগুলা ছারাতে।ভেবেছিলাম তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো,কিন্তু না থাক চাচি বলেছে তোকে সারাজীবন নিজের করে রাখতে তাই তোকে নিজের করেই রাখবো কিন্তু দুজনে কখোনই এক হতে পারবো না। আমি ওগুলা সরিয়ে শুধু তোর রিয়াকশনটা দেখতে চেয়েছিলাম যে তুই কিরকম ব্যবহার করবি।তুইতো আমার ভাবনার থেকেও নিচে নেমে গিয়েছিস।

সময় চলে, আর ওর থেকে আমার দুরুত্ব বেরে যায়।না ঠিকমতো কথা হয় না কোন কাজে ডাকা হয়।ঘরটাতে যে দুজন মানুষ থাকি মনেই হয় না।ও ওর মতো আমি আমার মতো আমি সকালে অফিস জাওয়ার জন্য রান্না করে নিজে খেয়ে চলে জাই। এরপর ও ওঠে আবার নিজের জন্য নিজে রান্না করে খায়।দেখতে দেখতে এরকম একটা মাস চলে যায়।তাও আমাদের মধ্যে বিন্দু পরিমান ভালোবাসা ছিলো না একে অপরের জন্য। ও যায় একা একা বিয়ার মদ কিনে নিয়ে আসে, বাসায় এনে খায় কিন্তু বাহিরে বসে কখোনই খায় না।

একদিন রাতের বেলা,দেখি ওও রাতের খাবার রান্না করার জন্য, সবজি খাটাকুটি করছে হঠাৎ, তানহা আহ্ করে ওঠলো তাই সামনে গিয়ে দারাতেই দেখি ছুরি দিয়ে হাত কেটে ফেলেছে অনেকটুকু।ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে আছে,আমি গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলাম। এনে ওকে রান্নাঘর থেকে এনে সোফায় বসিয়ে, হাত ধরে যখোনি সেভলোন লাগাতে যাবো,তখনি

ও চিৎকার দিয়ে উঠে গেলো, আমি বললাম,

—-এই কি হলো উঠে গেলি কেন হাত থেকেতো এখোন রক্ত বের হচ্ছে।

—-না ভাইয়া সেভলোন লাগাবো না খুব জ্বলে।আপনি লাগান আমি লাগাবো না।

—-আমি লাগাবো মানে আমার কি আর হাত কাটসে?কাটসে তো তোর!

—-না না লাগাবো না এমনি থাক।রক্ত পরে এমনি বন্ধ হয়ে যাবে।

—-আরে বন্ধ হবে না পরে ইনফেকশন হয়ে যাবে।আমি ফু দিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছি জ্বলবে না।

—-সত্যি তো জ্বলবে না।

—-না।
ও সামনে এসে বসতেই হাত বারিয়ে দিলে আমি ধরে ফু দিয়ে দিয়ে হাতে সেভলোন লাগিয়ে দিলাম আর ওয়ানটাইম বেন্ডেজ লাগিয়ে দিলাম ও চোখ বন্ধ করে রইলো।

—-নে হয়ে গেছে তোর বেন্ডেজ করা।জ্বলেছে একটুও?

—-সেটা আবার বলতে।

—-হাহহাহ।

—-ভাইয়া আপনাকে না একটা কথা বলার ছিলো????

—–কি???

—–আসলে ভাইয়া ওইদিনকার জন্য আমাকে মাফ করে দিয়েন।আসলে ঘুম থেকে উঠে কিছু খুজে পাচ্ছিলাম নাতো তাই মাথা ঠিক ছিলো না।আমি কি করতে কি করেফেলেছি তাও জানি না।যখোন বুঝলাম আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি, তখোন নিজের কাছে নিজেরই খুব খারাপ লাগতে লাগলো,সরি ভাইয়া।

—–হুম ঠিক আছে।

—-হি হি থাংকু থাংকু।

—হু যা হুস।

ও নিজের ব্রু গুলাকে কুচকিয়ে চলে গেলো আর আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম।রাতের খাবার তৈরি করার জন্য। দুজনেরটা আজকে একসাথে বানিয়ে নিলাম।খাওয়াদাওয়া শেষে যে যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম।

কি জীবন আমার!! বিয়ে করে বউ এনেছি একি বাড়িতে থাকার পরেও,এক রুমে থাকতে পারি না।আবার এক বিছানায় তো দুরের কথা।এই মেয়েটা কোন দিন ভালো হবে কিনা আল্লাহ জানে।

সময় যায় তাও আমাদের দুজনের মধ্যে উন্নতি হয় না। এখোন আগের থেকে তাও ইটটু আদটু কথা হয়ে থাকে।তাও স্বামী স্ত্রীর মতো না।খুব বেশি দরকারি জিনিস না হলে কথা হয় না।ও সারাদিন মদ খেয়ে ঘরে পরে থাকে। আর আমি আমার জব নিয়ে বিজি থাকি।

আর এই দিকে বারি থেকে আমাকে ফোন দিয়ে দিয়ে সবাই জালাতন করে ভালোই লাগে না।আবার সবাই বলেছে কালকে নাকি সবাই আসবে আমাদের দেখতে এসে দুই তিনদিন থাকবে।কি আর করার।তানহাকে বলতে ওর রুমে চলে গেলাম।

রুমে গিয়ে আমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখের পাতা একবারো পরেনি, আমতা আমতা করে পেছনো ঘুরে গেলাম।আর বলতে লাগলাম,

—–আব্ সরি সরি নক করে রুমে আসতে ভুলে গেছি।তুমি রেডি হয়ে নাও।আমি পরে আসছি তোমার সাথে আমার কথা ছিলো।

ওর ওখান থেকে ডাইনিং রুমে এসে এক গ্লাস পানি ডক ডক করে খেয়ে নিলাম।

এই রাতের বেলা কে শাওয়ার নেয় বুঝি না।নিয়েছিস ভালো কথা টাওয়াল পরে রুমে ঘুরতে হবে কেন?দাত দিয়ে বসে বসে নক কাটছি, কিছু সময় পর ও এসে চেয়ার টেনে বসে বললো,

—-কি হয়েছে কিছু বলবেন?

—-হুম।

—-কালকে আম্মুরা সবাই আসবে, এখানে এসে দুই একদিন থাকবে।

—-ওওও

—–হুম। এবার কাজের কথায় আসি।

—–কি কথা।

—–এই দুই দিন নো বিয়ার নো মদ।একদম সাদা মাটা হয়ে থাকবি।ওদের সাথে হেসে খেলে কথা বলবি। ঘরের সব কাজ করবি। রান্না বান্না থেকে ঘর গুছানো পর্যন্ত সব।

—-কিহ্ এতো কিছু পারবো না আমি।

—–পারতে তো তোকে হবেই।

—-বললাম তো পারবো না।

—–না পারলে ঘরের মধ্যে যা যা তোর মদের বোতল আছে এবার সব নিয়ে আমি ফেলে দিবো।

—–দিন আমি আবার নতুন কিনে আনবো।

—–টাকা পাবি কোথায়?

—-কেন আমার একাউন্টে আব্বু সব সময় টাকা দেয় ওখান থেকে নিবো।

—–তোর একান্ট ব্লক করা হয়েছে কয়েকদিন এর জন্য। না আছে তোর আর কোন কার্ড!! বাসায়ও যেই টাকা ছিলো সব আমি সরিয়ে নিয়েছি।আর রইলো আমার টাকা।যেখানে আমি সব সরিয়ে ফেলেছি সেখানে তোকে টাকা দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

—– এটা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু ভাইয়া।এর সোদ কিন্তু আমি নিয়েই ছারবো।

—–নিতে পারলে নিয়ে নিস।কিন্তু যা যা বললাম তা জেনো মনে থাকে।খুব সুন্দর করে বউ সেজে থাকবি।আমার কোন কথার নরন চরন হলে খবর আছে।আমি বাড়ির সবাইকে বলেছি তুই ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গিয়েছিস।তাই ওদের সামনে উলটা পাল্টা কিছু করবি না।

—-হুহ।

—–একদম মুখ ভেংচি দিবি না।তোর কি ইচ্ছে হয় না এতগুলো মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে দেওয়ার। তোর জন্য তোর মা কতোটা কষ্ট করে তুই জানিস।ডেইলি চোখের পানি ফেলে তোর একটু ভালো হয়ে চলার জন্য।আর শোন তোর জন্য আমি কিছু শাড়ি কিনেছি আমার রুমে আছে নিয়ে আয়।কালকে থেকে শাড়ি পরবি উনাদের সামনে।যদি এই টপস জিন্স পরেছিস সব নিয়ে পুরিয়ে ফেলবো।

ও দাড়িয়ে আমার কথা শুনে আমার রুম থেকে বেগ গুলো হাতে করে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

আমিও আমার রুমে চলে গেলাম,বিছানয় শুতেই ঘুমিয়ে গিয়েছি কালকে আবার শুক্র বার ভালো মতো ঘুমাতে পারতাম কিন্তু কালকে সবাই আসবে সকালে হালকা কিছুতো রান্না করতেই হবে , নাহলে খাবে কি এসে।তাই তারাতাড়ি শুয়ে পরলাম।ঘরিতে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম, তাই ঝামেলা হলো না,সকালে উঠতে।

হাত মুখ ধুয়ে ডাইনিং এর দিকে যাচ্ছি। কিন্তু রান্না ঘর থেকে কেমন জানো শব্দ আসছে , কাজ করলে যেরকম শব্দ হয় ঠিক সেই রকম।ভাবলাম চোর ডাকাত এসেছে কেননা এতো সকালে কে আসবে রান্না ঘরে তানহার আসার কোন চান্সই নেই।
তাই চুপি চুপি রান্নাঘরে উকি দিলাম।উকি দেওয়ার পর মানুষটাকে দেখে আমি অবাকের নবম পর্যায়ে চলে গেলাম।তার সঙ্গে অসম্ভব রকম ভাবে ক্রাশিত হলাম। মুখ থেকে আপনা আপনি তানু ডাকটা বেরিয়ে এলো,

তানহা, তানহাকে আগে আমি ভালোবেসে তানু বলে ডাকতাম।এই মেয়েটা আগে আমাকে খুব জ্বালাতো।কিছুর প্রয়োজন হলেই আয়মান ভাইয়া এটা আয়মান ভাইয়া ওটা।একটা না একটা আবদার ওর থাকতোই। প্রথম প্রথম এগুলাতে বিরক্ত হলেও, পরে ভালোই লাগতো।এরপর চলে গেলাম বিদেশ ওখানে জাওয়ার পর ওও আমার সাথে একদিনও কথা বলেনি। এরপর ১বছর পর থেকে শুনতে পেলাম ও নাকি ধীরে ধীরে ড্রাগ এডিকটেড হয়ে যাচ্ছে।

ও আজকে সকাল সকাল উঠে সাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে শাড়ির আচল কোমরে গুজে রান্না করছে। ওর পিঠ অবদি চুলগুলা ছেরে দেওয়া। বাতাসের সাথে সাথে ওর চুলগুলো জেন ওকে বড্ড বিরক্ত করছে,হাতের তালুর ওপর পিঠ দিয়ে চুল গুলোকে ঠিক করারা তার আপ্রাণ চেষ্টা আর মুখে কিছুটা তারাহুরো করে কাজ করার ছাপ। মাশাআল্লাহ, ওকে আজ মনে হচ্ছে একটা বউ বউ। কখোন ওকে খুটিয়ে দেখা হয়নি।কিন্তু আজকে খুব ইচ্ছে করছে ওকে দেখতে।দুধে আলতা গায়ের রং তার গোলাপি মিষ্টি ঠোট।জেন পাগোল করার উপায়।কি হতো এই মেয়েটাকে জদি রোজ রোজ এরকম দেখতে পারতাম।নইকি হাতের মধ্যে মদ আর সিগারেটের বোতল।এটা ভেবেই আফসোস এর একটা তিক্ত নিশ্বাস বেরিয়ে এলো।

আমাকে এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তানহা আমাকে বললো,

—–কি হয়েছে জান এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?ভালো লাগছে না বুঝি।

জান,বাপরে এই মেয়ে দেখা জায় আজকেই স্ট্রোক করিয়ে ছারবে।একটা ডোক গিলে আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে, বললাম,

—-বাপরে আজকে এটা কাকে দেখছি।সকাল বেলা সকাল সূর্য উঠার বদলে হয়তো চাঁদ উঠে গেছে আজকে।

—-হি হি কেন আমাকে এই ভাবে দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি জামাই।

—–জামাই,ওরে বইন থাক মাফ চাই।আর অবাক করিস না।

——হাহহা আজকেতো মাএ শুরু দেখেন না কি হয়? বি রেডি ফর মাই মেডনেস।

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম।এর মধ্যে দেখতে পেলাম আম্মুর ফোন এসেছে।তাই রিসিভ করলাম,

—–হেলো আম্মু।

—–হে বাবা আমরা তো এসেগেছি। আমরা বাজারের মোরে আছি।

—– আচ্ছা দারাও আমি আসছি,

বলে তানহাকে সব রেডি করে রাখতে বলে ওনাদের এগিয়ে আনতে চলে গেলাম।

চলবে……

আস্সালামু আলাইকুম। সবাই নাইস নেক্সট কমেন্ট না কর যদি ঘঠন মুলোক কমেন্ট করতেন খুশি হতাম😁😅😅🥰।।ধন্যবাদ হেপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here