অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম পর্ব ২+৩

#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০২
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

আমার চোখে ঘুম নেই, বাসায় কি অবস্থা একটু খবর ও নিতে পারি না। খুব চিন্তা হয় বাসার জন্য।সবাই কেমন আছে খুব জানতে ইচ্ছে করে আমার…..

আপুরা নিশ্চ‌ই শ্বশুর বাড়িতে ভালোই আছে। কিন্তু আম্মু আর ভাই?তারা কেমন আছে?
জানি না কি এমন গুনাহ করেছি যার শাস্তি আমার পরিবার পাচ্ছে। আল্লাহ তা’আলা আমাকে এই বিপদ থেকে হেফাজত না করলে,কারো সাধ্য নেই আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করার। জানা নেই কবে আমার সেই সুদিন আসবে।

আমি তো কখনো আল্লাহ তাআলা কে ডেকে নিরাশ হ‌ইনি। আমি জানি কোথাও না কোথাও কাউকে উছিলা করে আল্লাহ তা’আলা আমার সকল মুস্কিল আসান করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আসর নামাজ আদায় করে সাইফ কে পড়াতে বসি। আমি এ বাসায় আসার প্রায় পনেরো দিন পর থেকে সাইফ কে পড়ানোর দায়িত্ব নেই। সাইফ দুষ্টু হলেও পড়াশোনায় বেশ ভালো। আমার ভালোই লাগে ওরে পড়াতে।

শরীফ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়। সাইফের পড়ার শব্দ শুনে সাইফের রুমে যায়।

আমি সাইফকে অংক করাচ্ছি তখন শরীফ ভাইয়া সাইফের রুমে আসে।
আর দেখে আমি সাইফকে পড়াচ্ছি। শরীফ ভাইয়া বলে এক পিচ্চি আরেক পিচ্ছি কে পড়াচ্ছে?

আমি মোটেও পিচ্চি না। তাই? তুমি পিচ্চি না। না আমি পিচ্ছি না, আপনি জানেন আমি কিসে পড়ি?কিসে আর সিক্স বা সেভেন হবে। মোটেও না আমি এইস.এস.সি এক্সাম দিয়েছি।ওরে বাবা তাহলে তো তুমি অনেক বড়। হুম তাই তো।পুচকি মেয়ে একটা এইস.এস.সি.এক্সাম দিয়েই নাকি ওনি খুব বড়।

আপনি আবার আমাকে পুচকি বলছেন? আপনি একটা বাঁদর।কি!! আমি বাঁদর? হুম আপনি একটা বাঁদর।ওয়েট আমি বাহির থেকে আসছি।আর এসে তোমার সাথে মারামারি ঝগরা হবে।এই বলে শরীফ ভাইয়া চলে গেলেন।

এদিকে আমি বিষ্ময়ে হা হয়ে যাই।আর বলি এই জন্যই আপু বলতো আর্মি, পুলিশ এগুলো নাকি কথায় কথায় বলে আই ক্যিল ইউ,আই সুট ইউ।আপু ঠিক ই বলে।
আমি এগুলো বলতেই সাইফ বলে উঠে কি মজা আমি তোমাদের মারামারি ঝগরা দেখবো।তোর মাথা, তোর ভাই ঝগড়াটে হতে পারে, কিন্তু আমি তো আর ঝগড়াটে ন‌ই। তাই ঝগড়া হচ্ছে না,সো তোর এতো লাফালাফির কোন দরকার নেই পড়ায় মন দে।

সাইফ কে পড়ানো শেষে, আন্টি কি করে তা দেখতে আন্টির কাছে গেলাম।

আন্টি বলল ছেলেটা এতো দিন পর আসলো কি খাবার তৈরি করা যায় বলতো শরীফা? আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে ভাবনার ভঙ্গি করে বললাম_আন্টি পিঠা তৈরি করলে কেমন হয়? আইডিয়া টা খারাপ নয় কিন্তু জানিস শরীফা আমি না তেমন ভালো পিঠা তৈরি করতে পারি না।

তাতে কি আন্টি? আমি অন্য কিছু পারি আর না পারি পিঠা তৈরি করতে খুব ভালো পারি। আচ্ছা তাই?জ্বি তাই।ওলে বাবা আমার মেয়ে টা তো অনেক কাজের, এই বলে আন্টি আমার হালকা করে গাল টেনে দেয়।

আন্টি দুধ ক্ষিলি পিঠা তৈরি করি?তোর যেটা ইচ্ছে সেটাই কর। আচ্ছা তাহলে এটাই করি। আমি বলে দিচ্ছি কিভাবে ময়দা গুলো কাই করতে হবে,,সে অনুযায়ী তুমি ময়দা গুলো কাই করে দাও। আচ্ছা বল।
আমি আন্টিকে বুঝিয়ে বলে দিলাম,আর আন্টি আমার কথা মত ময়দা কাই করে দিল।

অতঃপর আমিও বসে পরি, পিঠা তৈরি করতে।গুলাপ ফুল এবং আরও অন্যান্য নকশা করে পিঠা তৈরি করলাম। আম্মু আর আপুদের কাছে থেকে আমার পিঠা তৈরি করা শিখা। খুব মনে পরছে তাদের, তাই তারাতাড়ি পিঠা তৈরি শেষ করে আমি চলে গেলাম।
আমি এখন যে রুমে থাকি সেই রুমের বেলকনিতে।

এদিকে শরীফ চার মাস পর বন্ধুদের সাথে দেখা হ‌ওয়াতে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
এক বন্ধু বলে কিরে দোস্ত বিয়ে কবে করবি? মনের মতো কাউকে খুঁজে পাই তারপর করবো। মনের মতো খুঁজতে খুঁজতে তো বুরা হয়ে যাবি? এটা বলে সব বন্ধুরা হাসতে থাকে।কেউ তো একজন আছেই,যাকে আমি চিনি না কিন্তু ফিল করি।
শরীফের বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া সবাই বিয়ে করে নিয়েছে। তাই তারা খুব করে চাইছে শরীফ যেন এবার বিয়েটা করে।আর তারা চুটিয়ে মজা করবে।

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে অতিতের কথা গুলো ভাবছি।
তিন বোন,এক ভাই আর আব্বু আম্মু নিয়ে আমার পরিবার। খুব আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলাম। দুই বোনের ই সহিসালামতে বিয়ে হয়েছে।আর বাকি ছিলাম আমি, আমাকে নিয়ে আব্বুর অনেক স্বপ্ন ছিল, আব্বুর মতো একজন আদর্শ ব্যাংকার বানাবেন। আমিও মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ এক কুনজর পরলো আমার পরিবারের উপর, বিশেষ করে আমার উপর।আর ভাবতে পারছি না ভয়ে আমি সিটিয়ে যাচ্ছি।

মাগরিবের আজান হ‌ওয়ায় নামাজ আদায় করে আবার বেলকনিতে গিয়ে,ফ্লুরে বসে দেয়ালে ডেস দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মাঝে মাঝে বিপদে আকাশের দিকে মাথা তোলা। আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের কষ্টগুলো আল্লাহকে বলা। প্রিয় নবীর সুন্নাত।
মুসলিম- ২৫৩১।
আর আমি সুযোগ পেলে তাই করি, আমার বিশ্বাস আল্লাহ তা’আলা একদিন সব ঠিক করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।

শরীফ ভাইয়া বাসায় আসার পর সবাই এক সাথে পিঠা খেতে বসে।
আমাকে অনেক বার আন্টি ডেকে গেছেন, কিন্তু আমি যাইনি। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আপুদের সাথে কতো মজা করতাম, পিঠা তৈরির পর কে আগে খাবে এই নিয়ে দুষ্ট মিষ্টি ঝগরা হতো, তাদের কথা খুব মনে পড়ছে তাই আমি কিছুতেই এখন খেতে পারবো না, আন্টি কে বার বার ই এটা ওটা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

শরীফ পিঠা খেতে খেতে বলে মা, বাবা তোমরা এখনও তো বললে না মেয়েটির সম্পর্কে?
মিসেস সাবিনা বেগম (শরীফের মা) বলে তাহলে বলছি শোন_আমি সাইফ আর তোর বাবা মরিয়মের (শরীফের বড় বোন) শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পথে, আমরা সিএনজি তে বসে ছিলাম।ড্রাইভার একটু দোকানে গিয়েছিল।
তো আমি হঠাৎ দেখতে পাই হলুদ শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে আমাদের দিকে।
তখন সন্ধ্যা সাতটা এরকমই হবে। মেয়েটির হলুদ শাড়ি এবং সাজগোজ দেখে বুঝতে পারলাম গায়ের হলুদ থেকে পালিয়ে এসেছে।

মেয়েটি আমাদের গাড়ির কাছাকাছি আসার আগেই সেন্সলেস হয়ে পরে যায় রাস্তায়।আশে পাশে গাড়ি আর গাড়ির ড্রাইভার ছাড়া কোন মানুষ ছিল না, তাই আমি আর তোর বাবা মেয়েটির কাছে যাই আর গিয়ে দেখি মেয়েটার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে।

তাই আমরা মেয়েটাকে আমাদের গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করাই। টানা এক সপ্তাহ পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরে।তোর বাবা হসপিটালে ওর পাশে সবসময় থাকার জন্য নার্স রাখে এবং ডাক্তার তো আছেই। আমি একদিন পর পর গিয়ে দেখে আসতাম। মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে যেন আমাদের খবর দেওয়া হয় তা ভালো করে বলে দেওয়া হয়েছিল।

আমাদের কথা মতো ওর জ্ঞান ফিরলে আমাদের কল করা হয়।আর ডক্টর বলেন ও এখন বিপদ মুক্ত তাই আমরা ওকে বাসায় নিয়ে আসি।

পরে ওর কাছ থেকে জানতে পারি,কেউ ওর বাবা কে খুন করেছে আর ওকে জোর করে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। আর তাই গায়ের হলুদের দিন রাতে, ও পালিয়ে এসেছে।

ওর কষ্ট হবে ভেবে আর কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। শরীফ সবকিছু শুনে খুবই দুঃখ পায়। এতো টুকু একটা মেয়ের জীবনে এরকম ঝড় বয়ে গেছে, এটা মেনে নেয়া সত্যিই অনেক কষ্টের।

শরীফ বলে মা শরীফা কোথায়?ও তো চমৎকার পিঠা তৈরি করে। আমি প্রথম বার এই পিঠা খেলাম,এর জন্য ওকে ধন্যবাদ দিতে হবে।

ওর রুমের বেলকনিতে বসে আছে, আমি কতোবার পিঠা খেতে আসতে বললাম বলে আন্টি আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

তোমরা খাও আর খেয়ে বলবে কিন্তু কেমন হয়েছে। আচ্ছা আমি ওর সাথে কথা বলি, আমার তো ওর সাথে তেমন কথাই হলো না। আচ্ছা যা, মেয়েটার নিশ্চ‌ই বাড়ির কথা মনে পড়ছে আর সেই জন্যই মনে হয় মন খারাপ।

হঠাৎ শরীফ ভাইয়া বলে উঠে এই পিচ্ছি কি করছো এখানে?আমি হঠাৎ কারো কথা শুনে চমকে যাই আর বসা থেকে উঠতে নিলে। শরীফ ভাইয়া আমাকে বাধা দিয়ে আমার থেকে কিছু টা ব্যাবধানে নিজেও বসে পরে।

আমি অবাক হয়ে যাই। শরীফ ভাইয়া বলে পিচ্চি তোমার মন খারাপ? আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলি, আপনি আবার আমাকে পিচ্চি বলছেন?

আমার কাছে তোমাকে পিচ্চি ই মনে হয়। তুমি মাত্র এইস.এস.সি এক্সাম দিয়েছ।আর আমি এম এ পড়ছি। তাহলে তোমাকে পিচ্চি বলবো না তো কি বলবো?

আপনি না আর্মিতে জব করেন? হুম,জবের পাশাপাশি পড়াশোনা ও করছি। ওহহ আচ্ছা।

হুম, দেখলে তোমার ছোট্ট মাথায় এটাও ঢুকেনি যে,জবের পাশাপাশি পড়াশোনা ও করা যায়।এই জন্যই তুমি পিচ্চি।

আমি এবার লজ্জা পেলাম, ভাবলাম সত্যিই তো এটা আমি কি বোকার মতো কথা বলে ফেললাম।
আচ্ছা যাই হোক তুমি কিন্তু দারুণ পিঠা তৈরি কর। ধন্যবাদ তোমাকে, এতো কষ্ট করে আমার জন্য পিঠা তৈরি করার জন্য। আচ্ছা আমরা জন্যই তো করেছ তাই না? আমি ওনার এরকম প্রশ্ন শুনে কি বলবো খুঁজে পেলাম না, তাই চুপ করে বসে রইলাম।

শরীফ মেয়েটার দিকে আবার ও ভালো করে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর, আল্লাহ পাক যেন নিজ হাতে ওকে তৈরি করেছেন,,,,
#অনাকাঙ্ক্ষিত_প্রেম
#পর্ব–০৩
#লেখিকা—ইসরাত বিনতে ইসহাক

শরীফ মেয়েটার দিকে আবার ও ভালো করে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর, আল্লাহ পাক যেন নিজ হাতে একে তৈরি করেছেন,,,,

শরীফ ভাইয়া এভাবে তাকিয়ে থাকায় আমি খুব অস্বস্তি লাগে। তাই আমি একটু গলা ঝেরে বলি ভাইয়া আপনি বিয়ে করবেন কবে? আন্টির একা একা কাজ করতে খুব কষ্ট হয়ে যায়।ভাবী আসলে আন্টিকে কিছুটা সাহায্য করতে পারবে।

শরীফ ভাইয়া বলে তুমি তো আছ, তুমি মাকে হেল্প করবে,কি পারবে না?
কিন্তু ভাইয়া আন্টি তো আমাকে কোন কাজ করতেই দেয় না।

আচ্ছা তুমি আমাকে ভাইয়া বলছো কেন?
আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া?
আমি শরীফ ভাইয়ার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলিয়ে বললাম আন্টি আর আংকেলের ছেলে তো সম্পর্কে ভাইয়া হয় তাই না?
হুম হয়। কিন্তু তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না। আমি অবাক হয়ে বললাম তাহলে কি বলে ডাকবো?

জানি না তবে ভাইয়া বলে ডাকবে না। আমি মনে মনে বলি আজব লোক তো! ভাইয়া বলে ডাকতে পারবো না আবার কি বলে ডাকবো তাও বলছে না।

শরীফ কেন এরকম বললো নিজেও জানে না। তবে শরীফার ভাইয়া ডাক টা মেনে নিতে পারলো না।

আচ্ছা শরীফা তোমার আর আমার কতো মিল তাইনা? আমি অবাক হয়ে বললাম কোথায় কতো মিল? এই যে আমাদের নামে মিল শরীফ/ শরীফা।

জ্বি,আমি তো প্রথমে বিশ্বাস ই করতে পারিনি। হা.হা.হা… সে জন্যই বলেছিলে আমি নাকি তোমার নাম শুনে আমার নাম বলেছি?জ্বি, হঠাৎ করে শুনে তাই মনে হয়েছিল।

আচ্ছা শরীফা তোমার বাসায় কে কে আছেন? আমরা তিন বোন এক ভাই।আর আম্মু
আব্বু বলেই ডুকরে কেঁদে দেই। শরীফ ভাইয়া অনেক থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু আমি কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা।

তাই শরীফ ভাইয়া ব্যার্থ হয়ে আমার দু’গাল ওনার দু’হাতে জড়িয়ে নেন। ওনার এমন কান্ড দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই আর কান্নাও অটোমেটিক থেমে যায়।

শরীফ ভাইয়া আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন। শরীফা কাঁদে না, আমরা সবাই আছি তোমার পাশে।যারা তোমার আব্বুর সাথে এরকম করেছে তারা তাদের শাস্তি একদিন না একদিন ঠিক পাবে। এটা ঠিক তুমি তোমার আব্বু কে আর ফিরে পাবে না।আর আমি হাজার বললেও তুমি তোমার কষ্ট গুলো ভুলতে পারবে না। কিন্তু তোমার অতিতে খারাপ হয়েছে বলে তো আর তোমার ভবিষ্যৎ খারাপ হবে এমন তো কোন কথা নেই তাই না?

কিন্তু ওরা যে আমায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে।কারা তোমাকে খুঁজছে?যারা আমার আব্বু কে খুন করেছে তারা।
আমি আর আমার পরিবার তোমার কিছু হতে দিব না কথা দিচ্ছি। আমি শরীফ ভাইয়ার কথায় কিছুটা ভরসা পেলাম। আচ্ছা এবার চলো পিঠা খাবে। আমি খাবো না আপনি গিয়ে খান। তুমি না খেলে আমিও খাব না। শরীফ ভাইয়ার কথায় বাধ্য হয়ে খেতে গেলাম।

সবাই পিঠা খেয়ে খুব প্রশংসা করলো। আংকেল তো বলেই বসলো বুঝলে শরীফা আমি একজন অকর্মার ঢেকি বিয়ে করে এনেছি যে পিঠাই তৈরি করতে পারে না। এদিকে আন্টি তো রেগেমেগে আগুন।

আমি বললাম মোটেও না আন্টি খুব ভালো আংকেল।কত্ত মজা করে রান্না করে। আপনার ভাগ্য ভালো আন্টির মতো স্ত্রী পেয়েছেন।

আংকেল বলে তাই নাকি? আমার চোখে তো পরলো না। আন্টি রেগে বলল তোমার চোখে পরবে কিভাবে সারাদিন ব‌ইয়ে মুখ গুজে থাকলে।

শরীফ ভাইয়া বলে উঠে ঠিকই তো বাবা তোমার ভাগ্য ভালো যে মাকে পেয়েছো। না হলে তোমাকে কেউ বিয়েই করতো না।

শরীফ ভাইয়ার কথা শুনে আমারা সবাই হাসতে হাসতে শেষ। হঠাৎ শরীফ ভাইয়া বলে শরীফা তুমি সবসময় এভাবেই হাসবে, তোমাকে হাসলে কতো সুন্দর লাগে, তুমি নিজেও জানো না।

আমি মনে মনে বললাম সবার সামনে এভাবে বলতে হয়,আমি তো লজ্জায় শেষ।

শরীফ ভাইয়ার কথায় আংকেল ও বলে উঠে শরীফ ঠিকই বলেছে। তুমি হাসলে যে আমার প্রাণ টা জুরিয়ে যায় মা। সবসময় এভাবেই হাসি খুশি থাকবা। আন্টি ও বললো তুই এভাবে মনমরা হয়ে থাকলে আমাদের ভালো লাগে বল? আমি কিছুই বললাম না মাথা নিচু করে বসে রইলাম।

শরীফ ভাইয়া বললেন বাবা আমরা সবাই আগামীকাল শীতাকুন্ড যাচ্ছি। সাইফ শুনে লাফাতে শুরু করলো।

শরীফ ভাইয়া বাসায় আসলেই নাকি সবাই কে নিয়ে ঘুরতে যান, তার মতে কাজের বাহিরে একটু ঘুরাঘুরি করলে শরীল মন দুটোই ভালো থাকে।

আন্টি বলে শরীফা তুই কিন্তু আমাদের সাথে যাচ্ছিস। আমি বাড়ির বাহিরে বের হবো এটা শুনেই ভয়ে আৎকে উঠি। আন্টি আ,,,,আ,,, আমি যাবো না,তোমরা যাও ঘুরে এসো।
আংকেল বলেন অসম্ভব তোমাকে ছাড়া আমরা কিছুতেই যাব না। তুমি না গেলে যাওয়া ক্যানসেল। তখন শরীফ ভাইয়া বলেন তুমি যাবে না কেন? তোমাকে যেতেই হবে।

আমি কিছুটা চিৎকার করে বললাম না কিছুতেই না। আমি বাহিরে বের হলেই ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরে পাগলামি শুরু করলাম আর অনবরত কাঁপছি ভয়ে। আন্টি আমাকে শান্তনা দিতে দিতে বললেন এই বোকা মেয়ে আমরা আছি না আমরা থাকতে তোকে কাউকে নিয়ে যেতে দিব না দেখিস। আমি কিছুক্ষণ পর স্থির হতে আন্টি সাইফ কে বললেন সাইফ শরীফা কে নিয়ে তোর রুমে যা আর তোর জন্য ভাইয়া যে খেলনা গুলো আনছে ঐ গুলো দেখা গিয়ে। সাইফ ও তাই করলো আমাকে নিয়ে গেল।

এদিকে আন্টি বলে_বাবাই শরীফাকে বাহিরে নেওয়া কি ঠিক হবে?মা কিছু হবে না। আমি দেশকে রক্ষা করার শ্বপথ নিয়েছি,আর সেখানে কিনা একটা মেয়েকে রক্ষা করতে পারবো না? আমার উপর ভরসা করতে পারো মা।

সবার কথায় আমি যেতে রাজি হলাম ঠিকই কিন্তু আমি জানি আমার কি পরিমান ভয় হচ্ছে।
যারা আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর স্নেহ দিচ্ছে তাদের কথা কি করে না শুনি আমি।

আমি ছাড়া সবাই তৈরি হয়ে নিলো। আমি অপেক্ষা করছি শরীফ ভাইয়ার জন্য। ভাইয়া মার্কেটে গিয়েছে আমার জন্য বোরকা আর হিজাব আনার জন্য যাতে কারো সামনে পড়লেও আমাকে কেউ চিনতে না পারে।

ঘন্টা খানেক পর শরীফ ভাইয়া আসলেন এবং আমার হাতে শপিং ব্যাগ দরিয়ে দিয়ে বললেন তৈরি হয়ে আসার জন্য। আমিও পনেরো মিনিট সময় নিয়ে তৈরি হয়ে আসলাম। আমি খুবই আশ্চার্য হলাম বোরকা টা আমার একদম পারফেক্ট হয়েছে।হিজাব পরে নেকাব করে নিয়েছি।

আমি আসতেই শরীফ ভাইয়া আমার দিকে তাকায় আর আমি তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম ওনার তাকানো তে। তখনি সাইফ এসে বলে ভাইয়া গাড়ি চলে আসছে।

শরীফ ভাইয়া বলে আচ্ছা এবার সবাই চলো। আমি মনে মনে আয়াতুল কুরসি আর দূরদ শরীফ পড়ে নিলাম এবং ঘরকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে পরলাম।

শরীফ ভাইয়া ড্রাইভারের সাথে, আমি আর সাইফ মাঝখানে আর পিছনের সিটে আন্টি আর আংকেল বসলেন। আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। কতোদিন পর আমি বাহিরের পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি!অথচ এই আমি বিকেল বেলা ভাইকে নিয়ে নদীতে নৌকা করে ঘুরে বেড়াতাম।

হঠাৎ খেয়াল করলাম শরীফ ভাইয়া গাড়িতে থাকা গ্লাসে তাকিয়ে আছে আমি তাকাতেই চোখে চোখ পরে গেল দুজনের আমি তো লজ্জায় শেষ। তাই সাথে সাথে চোখ সরিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।

এরপরেই দেখতে পেলাম কিছু দূর গাড়ি থামিয়ে, কিছু লোক গাড়ি চেক করছে। আমার ভয়ে, কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার বুঝতে বাকী নেই যে এরা আমাকেই খুজছে!

শরীফ ভাইয়া হয়তো বুঝতে পেরেছেন বিষয় টা। শরীফ ভাইয়া বললেন শরীফা তুমি নেকাব টা লাগিয়ে ফেল,আর একদম ভয় পাবে না আমি আছি তো।

আমিও ওনার কথা মতো নেকাব লাগিয়ে নিলাম।কারণ গাড়িতে নেকাব খুলে ফেলছি।
তাদের কাছে গাড়ি আসার পর আমি তবুও মাথা নিচু করে লুকিয়ে থাকি আর রিতিমত আল্লাহ তা’আলা কে ডেকে চলেছি।

যারা চেক করছে তাদের সাথে পুলিশ ও আছে। শুনেছি পুলিশ রা নাকি ঘুষখোর তার প্রমাণ আজকে পেলাম।

তো যাই হোক তারা গাড়ি থামাতেই শরীফ ভাইয়া ওনার কার্ড দেখান এবং পুলিশ গুলি বলে স্যরি স্যার অহেতুক ডিস্টার্ব করার জন্য, তারপর আমাদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হলো। বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া আর্মি অফিসার হ‌ওয়াতে তারা আর গাড়ি চেক করলেন না,,,,,,

#চলবে…..
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here