অনিন্দিতা পর্ব -১১ ও শেষ

#অনিন্দিতা
#১১ম_পর্ব_শেষ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

–“তাজওয়ার উঠেছে কি?”

তাজের মায়ের এমন কথায় কিছুটা অবাক হয়ে যায় অনি। ও ভেবেছিলো যে, সকালে উঠতে না পারার জন্য অনেক বকাবকি করবে। কিন্তু তা করলো না।

–“না। আমি ডেকে দিচ্ছি।”

–“আচ্ছা যাও। নাস্তা রেডি। ”

অনি গিয়ে তাজকে ডেকে তুলল। তারপর সবাই একসাথে নাস্তা করলো। নাস্তা শেষে তাজ অফিসে চলে গেলো।

অনি এখন নিয়মিত নামাজ পড়ে। মাঝেমধ্যে সকালে উঠতে পারেনা। তাজকেও পড়তে বলে। তবে লাভ হয়না। পড়বে বললেও পড়ে না নামাজ। তবে নিয়ম করে কয়েকবার ফোন করে অনির খোঁজ নেয়। আর ফেরার পথে ছোট-খাটো উপহার আনতে ভুলে না।

এভাবেই কেটে গেছে দুমাস। অনি অহির থেকে জানতে পেরেছে যে, ইমতিয়াজ আর পিহুর মধ্যে বড়সড় একটা ঝামেলা বেঁধেছে। পিহু নাকি আজ সকালে বাসা থেকে চলে গেছে এই বলে যে, ইমতিয়াজকে ও ডিভোর্স দিবে। ওর পরিবারের কেউ এখনো পিহুকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। তাই পিহু নিজেকে আর ওই পরিবেশে মানাতে পারছে না।

আফিয়া একটু অসুস্থ হওয়ায় তাজের মা ওখানেই যাবে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বেড়িয়ে পড়লো। আর অনিকে বারবার বলে গেলো ভয় না পেতে। তাজকেও ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলে দিয়েছে৷ আফিয়া অসুস্থ না হলে অনিকে এভাবে একা ফেলে যেতো না৷ কিন্তু যেতেতো হবেই!

মাগরিবের নামাজ পড়ে অনি একটু কোরানও পড়লো। এখন মাঝেমধ্যেই কোরান পড়ে। এসব নামাজ-কালাম এখন ওর ভালই লাগে। অহিকেও বলে নামাজ পড়তে৷

একা-একা ভালো লাগছিলো না অনির৷ তাই অহিকে ফোন দিয়ে ইমতিয়াজ এর কথা জিজ্ঞেস করতেই অহি খুশিমনে বলল,

–“বেশ হয়েছে পিহু চলে গেছে! আর যেন এই বাসায় না আসে! খুব অহংকার হয়ে গেছিলো! ইমতিয়াজ ভাইয়া পিহুর সাথে না পেরে বড়মার সাথে রাগারাগি করেছে! বড়মার জন্যই নাকি পিহু চলে গেছে! ওই বউ নিয়ে আবার ঢং!”

অহির এমন কথা শুনে অনি একটা ধমক দিয়ে বলল,

–“এভাবে বলতে হয়না অহি! ওদের সম্পর্কটা এখন এতটাও ঠুনকো নয় যে, এইটুকু ভুল বুঝাবুঝিতেই ভেঙে যাবে! চিন্তা করিস না, আমি নিজে পিহুকে বুঝাবো!”

–“আপু, তুই একদম ওই পিহুর সাথে কথা বলবি না! তোর আত্মসম্মান নেই! ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে চাস কোন মুখে?”

–“এই সম্পর্কের মূল্য তুই বুঝবি না! আমি জানি এখন! নামাজ কি পড়িস?”

–“মাঝেমধ্যে! তোর শাশুড়ী কি করে রে? ”

–“আফিয়া অসুস্থ। ওখানে গেছে।”

–“আর ভাইয়া?”

–“তোর ভাই আবার কোথায় থাকবে এখন! অফিসে!”

–“তারমানে বাসায় তুই একা?”

–“হুম। ”

–“ভয় লাগছে না?”

–“না। এখন আর অতো ভয় লাগে না!”

–“আমার বোনটা সাহসী হয়ে গেছে দেখছি!”

আরোকিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো অনি। সন্ধ্যার দিকে তাজ একবার কল করে। আজ কেন দিচ্ছে না? এসব ভেবে অনি নিজেই তাজকে কল দিলো। কিন্তু তাজ ওর কল রিসিভ করলো না দেখে মন খারাপ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

অনি কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি। মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয়ে-ভয়ে চোখ খোলে অনি৷ সামনে তাকাতেই তাজকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে অনি৷ শুয়া থেকে একলাফে উঠে বসে বলে,

–“তুমি? কখন আসলে? ”

–“অনেকক্ষণ আগেই। তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তাই আর ডাকিনি। ”

–“ভেতরে আসলে কি করে?”

–“জানালা দিয়ে!”

বলেই হেসে ফেলে তাজ৷ অনি বিছানা থেকে উঠে বলে,

–“মজা করছো!”

–“এমন প্রশ্ন কেউ করে? চাবি দিয়ে দরজা খুলে তারপর রুমে এসেছি। দেখলাম আমার বউটা ঘুমাচ্ছে, তাই আর ডাকলাম না।”

–“তুমি নামাজ পড়ো না কেন? মা কত কষ্ট পায়! আর নামাজ পড়লে সবার সাথে-সাথে আল্লাহও ভীষণ খুশি হবে৷ ”

–“তুমি ডাকো না কেন সকালে? বাকি সময়তো পড়ি!”

এটা শুনে অনি খুশি হয়ে বলে,

–“সত্যি বাকি সময় নামাজ পড়ো?”

–“নামাজ নিয়ে কি কেউ কখনো মিথ্যে বলে?”

–“সকালে এত ডেকেওতো তোমায় তুলতে পারি না! আমি কি করবো?”

–“ভালো করে ডাকবে!”

–“কীভাবে?”

–“ভালবেসে। কি ভালবাসো না আমায়?”

অমি লজ্জায় মুখটা নিচু করে ফেলে। তাজ ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তুলে বলে,

–“আমার আর কত পরীক্ষা নেবে? এখন কি ভালেবেসে একটু কাছে টেনে নিতে পারো না? আর কত অপেক্ষা করবো বলো? ”

–“আমিতো তোমার কাছেই থাকি৷ ”

–“এই কাছে না! আমি তোমাকে আরো কাছে চাই৷ যত কাছে থাকলে কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না! কি! দিবে তোমার প্রতি আমার পুরো অধিকার?”

–“আমিতো শুধু তোমার-ই অধিকার! ”

–“ভালবাসো না?”

–“জানিনা!”

–“এখনো? ”

–“তুমি কি আমায় প্রপোজ করেছো?”

–“বউকে আবার কি প্রপোজ করবো?”

–“তা তুমি জানো!”

একথা শুনে তাজ হাটু মুড়ে বসে খালি হাতটা অনির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

–“তুমি কি আমার মনের রাণী হবে?”

–“হুম! আমি প্রতিদিন তোমার সাথেই ফজরের নামাজ পড়তে চাই! রাজি?”

–“আমি তোমাকে প্রপোজ করছি? নাকি তুমি আমাকে?”

–“যেটা তোমার মনে হয়!”

কথাগুলো বলেই অনি নিজের হাতটা তাজের হাতের উপরে রাখলো৷ তাজ এইবার অনির হাতে একটা ভালবাসার পরশ একে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর অনিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

–“আচ্ছা আমি রাজি, তোমার সাথে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য তৈরি। তুমি তৈরিতো আমাকে আপন করে নেওয়ার জন্য? আরতো পর-পর ভাববে না? কোনকিছু প্রয়োজন হলে অকপটে আমাকে বলবে! যখন যা লাগবে শুধু আমাকেই বলবে!”

–“হুম! ”

বলেই অনিও তাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর দুজনে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। দুজনে দুজনকে খাইয়ে দিলো। অনেক মজা করলো! দুজনেই এখন জানে যে, তারা একে অপরকে কতটা ভালবাসে! তাজের এত ভালবাসা অনিকে সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে৷ ইমতিয়াজ বলে কেউ ওর লাইফে ছিলো, এটা যেন ও এখন পুরোপুরি ভুলে গেছে।তাজ-ই এখন ওর জীবনের সব।

কেটে গেছে আরো কটা দিন৷ অনি ইমতিয়াজ আর পিহুর সাথে কথা বলেছে। ওর চাচা-চাচির সাথেও কথা বলেছে যেন পিহুকে মেনে নেয়। কারণ অনিতো এখন অনেক ভালো আছে! তাহলে পিহুকে কেন শুধু-শুধু ওরা কষ্ট দেবে! আর অনি এখন ওসব ভুলেও গেছে! তাই ও চায়না যে, ওর জন্য অন্যকারো জীবনে অশান্তি নেমে আসুক!

কেটে গেছে আরো দুটি বছর।
অনি আর তাজের লাইফে আসতে চলেছে এক নতুন অতিথি! অনি এই সময়টায় তাজ আর ওর মায়ের যে ভালবাসা পেয়েছে তা অবর্ণনীয়! শাশুড়ী যে এত ভালো হয় তা ও কখনো কল্পনাও করতে পারেনি! আফিয়া আর অহিও কম খেয়াল রাখেনি অনির। ও যেন কোন রাজরাণীর মতোই কাটিয়েছে এই নয়মাস!

প্রতিদিনের মতো আজও তাজ অফিসে গিয়েছিলো। হঠাৎ অহি ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলে। অনির অবস্থা ভালো না! তাজ তাড়াতাড়ি ছুটে হাসপাতালে চলে যায়। ও হাসপাতালে পৌঁছে অনির কথা জিজ্ঞেস করতেই অহি ওকে টেনে নিয়ে একটা রুমে নিয়ে গেলো৷ তারপর ফুটফুটে একটা মেয়েকে কোলে দিয়ে বলল,

–“আপনার রোজা! ”

তাজ আর অনি ঠিক করেছিলো যে, ওদের মেয়ে হলে রোজা নাম রাখবে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তাজ ভীষণ খুশি। তারপর অহিকে বলল,

–“অনি কোথায়? ও সুস্থ আছে?”

–“হ্যাঁ, মা আর মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে! ”

তারপর সেখানে অনির বাবা আর তাজের মা আসলো৷ তাজের মা বোরখা পড়ে ছিলো৷ সব ঠিকঠাক করে রোজাকে কোলে নিয়ে তাজকে লক্ষ্য করে বলল,

–“আল্লাহ যে তোকে একটা জান্নাত দিয়েছে! এই জান্নাত এখন তোর আমানত! ”

সেই আমানত নিয়েই হয়তো তাজ আর অনির সারাজীবন কেটে যাবে! নয়তো আরো জান্নাত যোগ দিবে ওদের পরিবারে! অনি খুশি যে, এমন একটা পরিবার পেয়েছে৷ যাদের কারণে ও ইসলামের পথে নিজের জীবন কাটাতে পারবে! আর তাজও ভীষণ খুশি নিজের ভালবাসার মানুষটিকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে৷ আর তাজের মা যেমন বৌমা চেয়েছিলো তেমনি পেয়েছে! আল্লাহ হয়তো উনাদের সবার মনের আশাই পূর্ণ করেছেন! তবুও একটা জায়গাতে অপূর্ণতা রয়েই গেছে! আর সেটা হলো তাজের বাবা! এইজন্যই বলে, কোনো মানুষের জীবন-ই সম্পূর্ণ পূর্ণ নয়! কিছু কিছু অপূর্ণতার মাঝেই যে জীবনের পূর্ণতা খুঁজে নিতে হয়!

সমাপ্ত…
(গল্পটা আর বাড়ালাম না৷ পুরো গল্পটা কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ.. )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here