অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ১১

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১১
.
ভাইয়ার সাথে সেন্টারে গিয়ে আম্মুর কাছে চলে গেলাম। আপু নাকি আমাকে অনেকবার খুঁজেছে তাই আপুকে খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম স্টেজের সাইডে যেখানে ফটোশুট হবে সেখানে। খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। এই ডেকোরেশন এর দায়িত্বে ছিল ভাইয়া। এখানে এসে আপুকে পেয়ে গেলাম। আপুর ফটোশুট চলছিল। আমাকে দেখে আপু এগিয়ে এলো। আমিও হালকা হেসে এগিয়ে গেলাম।

-তুই আমার সাথে কেন যে পার্লারে গেলিনা!

আমি মুচকি হেসে বললাম,
–বাদ দাও তো! পার্লারে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা আমার কর্ম নয়।

আপু হেসে বলল,
-তাতেও আমার বোনকে মাশাল্লাহ সবচেয়ে সুন্দর লাগছে। তোর মাঝে কোন কৃত্রিম সৌন্দর্য নেই! সব প্রাকৃতিক।
আমি মুচকি হাসলাম। আজ মন ভালো নেই। একটু পর আপু তার শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়বো নিজের পড়াশোনা নিয়ে! যাইহোক। সবার সামনে মন খারাপ টা প্রকাশ করতে চাইছি না। যথাযথ চেষ্টা করছি নিজেকে কন্ট্রোল করতে। কালকের ওই বিষয়টা যেন মাথায় ঝেঁকে বসেছে। আসলেই কি ওইরকম একটা ইন্সিডেন্ট ভুলা যায়! কি পরিস্থিতিতে আমি পড়েছিলাম তা ভাবতেই এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। তার উপর ওই বজ্জাত সাদাদ উলটাপালটা কথা বলে আরো মনটা বিষিয়ে দিলো। ভাবনার প্রহর কাটলো আপুর স্পর্শে। আপু আমার হাত টান দিয়ে নিয়ে গেলো ছবি তুলবে বলে। আজ আপুর বিয়ে! কোথায় সে কান্না করবে কিন্তু এই কনেকে দেখলে যেকেউ বলবে মাশাল্লাহ এই মেয়ে যেন কখনো না কাঁদে! আপুকে খুব মিষ্টি লাগছে। আর আপুর কান্না কেন পাবে? কত অপেক্ষার পর আরফান ভাইয়া আর আপু এক হচ্ছে। তাদের খুশির সীমানা নেই। আপু আরফান ভাইয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসে তা আপুর ওই হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখলেই বোঝা যায়। অনেক ছবি তুললাম আমি আর আপু! আমারও অনেক সিংগেল ছবি তোলা হলো। বুঝি না কনে হচ্ছে আপু কিন্তু ওনারা আমাকে নিয়ে কেন মেতে আছে। আজব! কোনমতে এখানটা সামলে আমি বেরিয়ে এলাম। এর পর আম্মু আর আব্বুর সাথে মিলে সব গেস্টদের আপ্যায়ন করছি। বরপক্ষ আস্তে আস্তে আসছে। আমি গিয়ে গেট ধরলাম। ওখানেও ওই শয়তানটা আছে। কি অসভ্যভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর পাশেই সাদিয়া আপু! তার মনটা বেশ ভালো। বারবার ওই লোকটার হাত জড়িয়ে ধরছে। লোকটাও হেসে আপুকে জড়িয়ে নিচ্ছে। আরফান ভাইয়ার সাথে যখন টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি করছিলাম তখন সাদাদ ভাই এসে আরফান ভাইয়ার পাশে দাঁড়ালেন। আমার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন কিন্তু আমি আমার কাজিনদের এখানে রেখে আমি ভিতরে চলে গেলাম। একেতো ওই শয়তানটার কুনজর আমাকে মেরে ফেলছিলো। আর এই সাদাদ ভাইকে এখন আর আমার একদম সহ্য হয় না। জাহান্নামে যাক সব!

.
অবশেষে ১৫ হাজার টাকা নগদ দিয়ে গেট দিয়ে ঢুকেছে তারা। তারা চাইলে এক লাখ টাকাও অনায়াসে দিতো কিন্তু এখানে কেউই টাকার জন্য গেট ধরে নি। মজার জন্য গেট ধরার রীতি। যেহেতু আমার সব কাজিন মেরিড এবং সব চাকরি করে তাই না চাইতেও সব টাকা আমার পকেটে ঢুকলো। কেউই এক টাকাও নিলো না। অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে শুরু হয়ে গেছে। প্রথম ব্যাচ খাওয়াও শেষ। এখন দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হয়েছে। সেই থেকে শয়তানটা আমার পিছে পড়ে আছে। আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে যাচ্ছে। তাই একা কোথাও যাচ্ছিও না। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। এখানে কোন সিনক্রিয়েট হলে একে তো আপু কষ্ট পাবে আর অন্য দিকে সাদিয়া আপুও কষ্ট পাবে। অনেকক্ষণ ধরে সাদিয়া আপুকে দেখতে পাচ্ছি না আর না ওই সাদাদকে! এরই সুযোগ নিচ্ছে এই শয়তানটা। আমি তাড়াতাড়ি আম্মুর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি।

.
আরফান ভাইয়া আর আপুর বিয়ে পর্ব শুরু হয়ে গেছে। আরফান ভাইয়া কাজী সাহেব যা যা বলছেন তার উত্তর দিচ্ছে। বারেবার আপুর দিকে তাকাচ্ছে। আর তাকানোর মাঝে মাঝে আপুকে চোখ টিপ দিচ্ছেন, আর তা দেখে আমার বোন লজ্জায় নত হয়ে যাচ্ছে। আমি এই মিষ্টি মুহূর্তটাকে ক্যাপচার করতে ভুললাম না। ক্যামেরাম্যান ও মনে হয় এটা মিস করে নি।

.
হঠাৎ করেই হাতে টান পড়ায় পাশে তাকাই কিন্তু কিছু বুঝার আগেই সাদাদ ভাই আমার হাত টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। বারবার হাত ছুটানোর চেষ্টা করছি কিন্তু উনি আমার কোন কথাই শুনছেন না।

–আরে আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমার হাত ছাড়ুন। আহ! হাতে ব্যাথা পাচ্ছি আমি!

উনি আমার কোন কথার ভ্রুক্ষেপ না করে হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে বললে ভুল হবে উনি রীতিমতো টানাহিচড়া করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে আমি কন্ট্রোলই করতে পারছি না উনি যেভাবে টানছেন। টেবিলের সাথে এতো জোরে ধাক্কা খেলাম যে মনে হলো জানটা বেরিয়ে যাবে। পায়ে প্রচুর ব্যাথা পেয়েছি। এক হাতে তো আগে থেকেই ব্যাথা আর অন্য হাত এখন উনি যেভাবে ধরেছে তাতে এই হাতও অবশ হয়ে যাচ্ছে।

.
উনি আমাকে একটা রুমে এনে ছুড়ে ফেললেন। আমি উঠে হাত ধরে চোখ বুঝে ব্যাথা সহ্য করার বৃথা চেষ্টা করছি কিন্তু চোখের পানি আর বাধা মানলো না। উনি ঝট করে এসে আমার বাহু চেপে ধরলো। উনার মুখ কঠিন করে আমাকে বলল,

–আমি ভাবতেও পারি না তুমি এতোটা নিচ! কি করে পারো একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে? আবার এমন ভান করছো যেন তোমার কোন ভুলই নেই! বাহ!

আমি উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনার চোখ সম্পূর্ণ লাল। চোখে মুখে কাঠিন্যতায় ঘেরা। আমি ব্যাথাকাতুর শব্দ করে বললাম,

–আহ! আমার লাগছে প্লিজ দূরে সরুন! আমি কারো জীবন নষ্ট করি নি। কেন ভুলভাল কথা বলছেন?

উনি আমাকে আবার দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন,

–ওহ! আমি ভুলভাল কথা বলছি? হ্যাঁ? আর তুমি যা করছো তা সব ঠিক! তাইনা! ইচ্ছে তো করছে তোমাকে এখানে মেরে পুতে দি!

আমি আতকে উঠে ওনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে ওদিক ফিরে আছে। আমি বাকশূন্য হয়ে রইলাম। একটাদিন আগেও আমি মনে করতাম উনি আমায় পছন্দ করেন কিন্তু আমি সম্পূর্ণ ভুল! উনি তো আমাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। আমার ভিতরে আর কোন ইমোশন কাজ করছে না। শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে যাচ্ছে। এরপর উনি যা বললেন তাতে আমার চোখ বড় হয়ে গেলো।

–তুমি এই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করবে। আমি তোমাকে এক বছরের জন্য বিয়ে করবো! এক বছর পর বিনা শর্তে তোমাকে আমি মুক্তি দিবো। তুমি আমার থেকে এক বছর পর মুক্তি পাবে। তখন আমার লাইফে তোমার কোন ভূমিকা থাকবে না। এমনকি তুমি কখনোই আমার থেকে স্ত্রীয়ের অধিকার পাবে না।

আমি কান্না করতে করতে বললাম,

–প্লিজ আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না প্লিজ!

উনি মুখ কঠিন করে বললেন,

–তুমি আমার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছো! এতোটুকু তো তোমাকে সহ্য করতেই হবে, তা নাহলে…..

–তা নাহলে?

উনি রাগে কটমট করতে করতে বললেন,

–তা নাহলে এখানে এমন সিনক্রিয়েট করবো যে তোমার বোনের বিয়ে এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তোমার বোন তো আমার আরফানকে খুব ভালোবাসে তাই না। যদি বিয়েটা ভেঙে যায় তবে তোমার বোনের কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো?

আমি আতকে উঠলাম! উনি আমার সবচেয়ে সেন্সিটিভ জায়গায় আঘাত করেছে। আমি কখনোই আমার বোনের এতোটুকুও কষ্ট আমি মানতে পারবো না। আমি অনবরত কান্না করেই যাচ্ছি! উনি আবার বললেন,

–কি? আমার শর্তে রাজি?

বাধ্য হয়ে রেজিট্রিতে সাইন করতে হলো আমার! শুধু আইনিভাবে না ধর্ম মোতাবেকও আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এক বছরের শর্তের বিয়ের জন্য কেন এতো পরিপূর্ণ ভাবে বিয়ে করতে হবে? আর কপাল খারাপ হলে যা হয়। আমাদের বিয়েটা যেন বাচ্চাদের ছেলেখেলাই ছিলো। একটা বদ্ধরুমে আমার আর সাদাদ ভাইয়ের বিয়েটা হয়। কান্নার ফলে মাথা ব্যাথা করছে তবুও কান্না থামাতে পারছি না। উনার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি আমার উপর চরম বিরক্ত! গাড়িতে বসে ফুঁপিয়েই যাচ্ছি!

.
সাদাদ ভাই আমার হাত ধরে ওনাদের বাসায় প্রবেশ করলেন। এই প্রথম আমি এই বাড়িতে এসেছি। এটা আমার আপুরও শ্বশুর বাড়ি! আপুর তো বরণও হয়ে গেছে সবাই যখন আপুকে নিয়ে ব্যস্ত তখনই আমাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন উনি। আমার চোখ নিচের দিকে কিন্তু না তাকিয়েও বুঝতে পারছি সবার নজর আপাতত আমাদের দিকে। এবং সবাইই চোখে এক সমুদ্র বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাতে উনার কোন ভ্রুক্ষেপ আছে নাকি তার সন্দেহ আছে। আমি অনবরত ফুঁপিয়েই যাচ্ছি! সাদিয়া আপু এসে আমাকে একবার দেখেই বললেন,

-এসব কি সাদ?

উনি ভ্রুক্ষেপহীনভাবে বললেন,

–বিয়ে করেছি আমরা!

সাদিয়া আপু সাথে সাথে এক চড় বসিয়ে দিলেন উনার গালে। উনি অবাক চোখে গালে হাত দিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে আছেন।
,
,#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_অতিরিক্ত
.
সাদিয়া সাদাদকে থাপ্পড় মারতেই সাদাদ অবাক হয়ে তাকালো। সাদিয়ার চোখের পানি সে সহ্য করতে পারছে না। তাই মনে মনে সুবহাকে এইভাবে জোর করে বিয়ে করার একটা ভয়ংকর পদক্ষেপ নিয়েছিল আর তার পরিনতি চোখের সামনে ভাসছে। আচ্ছা সাদিয়া কি তাহলে সুবহাকে মেনে নিবে না? কিন্তু সুবহাকে এভাবে রাখলে আসিফ সুবহার ক্ষতি অবশ্যই করবে। কাল যা দেখেছি তাতে ওকে আর বিন্দুমাত্র বিশ্বাসও আমার হয় না। হ্যাঁ সাদাদ কাল সবটাই দেখেছে! কিন্তু আসিফকে মেরে সিনক্রিয়েট করলে একেতো তার বোন কষ্ট পেতো দ্বিতীয়ত বিয়েবাড়ির পরিবেশটাই নষ্ট হতো। সাদাদ খুবই বিচক্ষন বুদ্ধিসম্পন্ন! তাই একটু নাটক সেও করলো। কিন্তু এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি সুবহাকে বিয়ে করা। যে করেই হোক সুবহাকে রাজি করাতে হবে। অনেকক্ষন সুবহা তার চোখের আড়ালে যদিও লোক ঠিক করা আছে। এদিকে সাদিয়া উঁচু হিল পড়ে পায়ে মচকা খেতেই সাদাদ স্প্রে করতে নিয়ে আসে। তখনই ওইসব আকাশপাতাল ভাবছিলো সে। কয়েকবার ডেকেও যখন সাদিয়া তার ভাইয়ের কোন পাত্তা পেলো না তখন দিলো এক থাপ্পড়। যদিও আস্তে ছিল। হাসতে হাসতে সাদিয়া বলল,

-কিরে ভাই? কাছে থেকেও সুবহার ভাবনায় ডুবে গেলি?

সাদাদ মুচকি হেসে বলল,

–জানিস আপু মনে মনে ভয়ংকর এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছিলাম!

সাদিয়া অবাক হয়ে বলল,

-মনে মনে আবার কান্ড ঘটানো যায় নাকি!

সাদাদ আগের ন্যায় বলল,

–হুম যায়। এটা একটা হ্যালুসিনেশনের মতো!ভাবনা এতো গভীর হয় যে মনে হচ্ছে সবই বাস্তব! এই ঘটনাটা সবচেয়ে বেশি ঘটে ডিপ্রেসড মানুষের।

সাদিয়া হালকা ভ্রু কুঁচকে বলল,

-তুই কি নিয়ে ডিপ্রেশনে আছিস? সাদ! তুই ঠিক আছিস তো?

সাদাদ হালকা হেসে বলল,

–দি আমি বিয়ে করবো! যে করে হোক ম্যানেজ কর! আমি সুবহাকে আর সময় দিতে পারবো না। বিয়ের পর যতখুশি সময় নিক আমার কোন সমস্যা হবে না। প্লিজ দি মানা করবি না।

সাদিয়া বেশ চিন্তিত গলায় বলল,

-ঠিক কি ঘটেছে তা আমি জানি না। কিন্তু তুই যখন বলছিস অবশ্যই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন আংকেল আন্টির এক মেয়ে বিয়ে দিয়ে তারা কি চাইবেন তাদের অন্য মেয়ে কে এতো তাড়াতাড়ি বিদায় দিতে? এমনিতেই সুবহা অনেক বেশি আদুরে!

সাদাদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,

–আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না দি। তোর কাছে আমার এই একটা আবদার। প্লিজ!

সাদিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো। কিভাবে যে তাদের মধ্যে কথা তুলবে তাই ভাবছে সে।

.
রুবাইয়া আর আরফানের বিয়ের সকল রীতি শেষ। এখন দুজনের কবুল বলার পালা। আরফানকে প্রথমে কবুল বলতে বললে সে ধীরেসুস্থেইই কবুল বলে। তাকে রুবাইয়া থ্রেট দিয়ে বলেছে অসভ্যের মতো কবুল বললে খবর আছে তার! তাই নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল করে কবুল বলল। এবার রুবাইয়াকে বলতে বললে তার মুখ থেকে কিছুই বের হচ্ছে না। এটা দেখে আরফান বেশ বিরক্ত। বিড়বিড় করে বলছে,
-আমাকে সভ্য ভাবে কবুল বলতে বলে নিজে একদম চুপ করে আছে। আরে কবুলটা বলে দাও না। তারপর তোমাকে বাসায় নিয়ে চলে যাই!

আমি যে ভাইয়া মুখের কাছে কান নিয়ে ওনার কথা শুনছি তা বেচারা বুঝতে পারে নি।

–এতো সহজে তো আমি আমার রুবাপুকে ছাড়বো না। বললেই হলো কবুল বললেই বাড়ি নিয়ে চলে যাবেন?

আরফান ভাইয়া আমার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে তাকালেনন আর সবাই হেসে দিলো শালীকা আর দুলাভাইয়ের কান্ডে। আপুও হালকা হেসে কবুল বলে দিলো।

.
হঠাৎ সামনে তাকাতেই দেখি সাদাদ ভাইয়ের কাধে ভর করে সাদিয়া আপু এখানে এসে দাঁড়ালেন। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,

–আপু তোমার কি হয়েছে? এভাবে দাঁড়িয়েছো?

আপু হেসে বলল,

-আর বলো না পা টা মচকে গেছে। টেনশন নিয়ো না স্প্রে লাগিয়ে নিয়েছি! শুধু হিলটায় সমস্যা হচ্ছে।

আমি আপুকে বললাম,

–আপু আমিও বেশিক্ষণ হিল পড় থাকতে পারি না তাই সবসময় স্লিপার রাখি। তুমি আপাতত ওইটা পড়ো! পায়ের ব্যাথাটা বাড়বে না।

আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

-খুব উপকার হবে।

আমি তাড়াতাড়ি ভাইয়ার কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে জুতোটা নিয়ে আপুকে দিলাম। ভাইয়া বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো কিন্তু আমি কিছুই বলি নি। ভাইয়ার ভালোবাসা এখানে যদি ভুলে প্রকাশ করে ফেলে তাহলে সমস্যা।

.
বিয়ের পরে বর কনে কে খাবার দেওয়া হলো। তখন থেকে দেখছি এই সাদাদ ভাই আমার দিকে তাকিয়েই আছে। হুহ! উনি কাল আমার সাথে যা ব্যবহার করেছে তার জন্য কোন ক্ষমা নেই। কিন্তু বারবারই আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। আর আমি ওনাকে সমানে এভোয়েড করছি। হিহি! এবার উনি সবার সামনেই বললেন,

–সুবহা তোমার সাথে আমার কথা আছে।

আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সব আমার দিকে তাকিয়ে। আপুর দিকে তাকাতেই আমাকে সাদাদ ভাইয়ের সাথে যেতে বলল। আমিও ভয়ে ভয়ে ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। উনি একটু ফাঁকা জায়গা দেখেই দাঁড়িয়ে গেলেন। আমিতো ওনার পিছু পিছু যাচ্ছিলাম তাও আবার নিজের দিকে চোখ দিয়ে যার ফলাফল হলো ধপ করে ওনার পিঠের সাথে পুরো নাকমুখে বাড়ি খেলাম! নাক ডলতে ডলতে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,

–আমার প্রতি সব ভয় কি চলে গেছে?

আমি তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বললাম,

–না তো! এখন কি বিয়ে বাড়িতেও আপনার থেকে পালাবো?

উনি কেন যেন মুচকি হেসে দিলেন। হেসে বললেন,

–তার মানে তুমি মানছো যে আমার থেকে পালাও?

আমি কিছুই বললাম না। উনি আমার বললেন,

–সেই আসার পর থেকে দেখছি আমাকে এভোয়েড করছো কেন?

,
,
,
চলবে……………….❤️

(আমি জানি আপনারা আমার প্রতি বিরক্ত! অনেকের মনে এটাও আছে যে লেখিকা কপিবাজ! কিন্তু এক পর্ব পড়েই লেখিকাকে জাজ করা কি আসলেই উচিত? আমি কিন্তু আগের পার্টে বলেছি যে ধামাকা বাকি আছে! কিন্তু আমার ধৈর্য্যহীন পাঠকেরা খুবই ক্ষিপ্ত আমার উপর। আমি সিরিয়াল লেখি বাস্তবতা নেই! যাইহোক। আমি এখানে সাদাদের ডিপ্রেশনের বিষয়টা তুলে ধরতেই ওই অংশটা লিখেছি। হ্যাঁ আমি বুঝতে পেরেছি বিষয়টা সিনেমাটিক। আর সিনেমাটিক বলেই দিয়েছি। আমি নিজেও এসব সিনেমাটিক বিষয়ে বিশ্বাসী নই। আর একটা কথা সাদাদের চরিত্রে আগেই দেখিয়েছি যে সাদাদ বিয়েটাকে অনেক গুরুত্ব দেয়! সে সুবহার সিদ্ধান্তের বাইরে তাকে বিয়ে করবে না। অবশেষে বলব, ধৈর্য্য ধরে উপন্যাসটা পড়ুন। এক দুই পর্ব পড়ে সিরিয়াল তকমা দিবেন না প্লিজ! আর ভালো না লাগলে এভোয়ড ইট। আর ভালো লাগলে অবশ্যই বলবেন। আমার জন্য সকল পাঠক সমান। আজকে পর্ব দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আপনাদের জন্য আজকেই দিলাম! আশা করি আপনাদের থেকেও ছোট করে কিছু কথা পাবো!😊)
,
চলবে……………..❤️

(ধামাকা আস্তে আস্তে আরো পাবেন।)

(আজ প্রকৃতি কন্যা গল্প দিবো রাতে। ইনশাল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here