অনুভুতির অন্তরালে পর্ব -৩৮+৩৯

#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️‍🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৮

বাড়ির উঠানে বসে আছে সকলে। বিয়ের বাড়ির মানুষে মানুষে গিজগিজ করছে। তার মাঝখানে কোলে করে নিয়ে এসেছে অরিশ ভাইয়া। গায়ে কাঁদায় মাখো মাখো। খালা জান এগিয়ে এলেন। আমাদের এবারে দেখে বিচলিত হয়ে গেলেন। অগোছালো স্বরে বললেন,
-” অরিশ, তরীর কি হয়েছে? কোলে করে কেন এনেছিস?”

-” শুধু তোমার তরীকে কোলে করে এনেছি সেটাই দেখছো। এদিকে আমাকে সমেত তরী যে কাঁদায় পড়ে গেছে সেটা দেখছো না। তোমার বোন ঝি রাস্তার মাঝখানে কাঁদায় লাফালাফি করছিলো। আমি বারণ করেছি বলে আমাকে ফেলে এই অবস্থা করেছে।”

আমি কখন তাকে ফেলে দিলাম। তিনি অসাবধানতাবশত পড়ে গেছেন। আমাকেও ফেলে দিয়েছে। খালাজানের দিকে তাকিয়ে বললাম,-” বিশ্বাস করো, আমি কিছু করি নি!”

আমাকে আর কিছু বলতে দিলেন না। কোল থেকে না নামিমেই হাঁটা দিলেন। একদম পুকুরের কাছে এলেন। আমাকে সমেত ঝাঁপ দিলেন পানিতে। সেকেন্ড দশেকের মধ্যে ভেসে উঠলাম আমরা। সিঁড়িতে পা রেখে দাঁড়ালেন তিনি। আমার কোমর জড়িয়ে ধরে রইলেন। আমি ভাঁজ করে রাখা পা দিয়ে অরিশ ভাইয়া পা আওড়াতে আওড়াতে নিচে পা রাখলাম। পানির স্রোতে কাঁদা মাটি ভেসে গেছে। অরিশ ভাইয়ার আমাকে ছেড়ে উঠে গেলেন। আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। ওরনা পানির স্রোতে ভেসে গেছে। সাঁতার জানা নেই যে, ওরনা তুলে আনবো। আবার সবার সামনে দিয়ে এই অবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়।

অরিশ ভাইয়া উঠে গেলেন উপরে। ঈষৎ কুঁচকালেন ভ্রু। বললেন,

-“তুই কি হাঁসের বাচ্চার মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি?”

মাথা নিচু করে বললাম, -” আমি সবার সামনে দিয়ে..

আর বলতে হলো না। ধপাধপ পা ফেলে নেমে এলেন পানিতে। পানিতে লাল রঙের ওরনাটা ভাসতে দেখা যাচ্ছে। অরিশ ভাইয়া সাঁতার কেটে তুলে আনলেন। আমার শরীরে পেঁচিয়ে দিলেন। অতঃপর আবার কোলে তুলে নিলেন। সবার সামনে দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন। অস্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
-” তোকে অস্বস্তিতে ফেলার দায়িত্ব যেমন আমার, তেমনি অস্বস্তি কাটিয়ে তোলার দায়িত্বও আমার।”
__________

ভোরে আলো ফুটেছে। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। টিনের কালে শিশির পড়াতে শব্দ হচ্ছিলো। ঘাসের উপর শিশির বিন্দু গুলো মুক্তার মতো আকর্ষণ করছে। আরশি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। তাদের ফুফুর বাড়ি অনেক বড়। বাড়ি এবং আশে পাশের জায়গা গুলো দেখতে দেখতেই দুটো দিন কেটে গেছে। বলা যেত পারে গ্ৰাম প্রধান। তিনি অহেতুক কারো সাথে কথা বলে না। শৌখিন মানুষ।
প্রবেশদ্বার খোলা। তার পাশের ছোট ঘরটায় দাড়োয়ান থাকে। এখন দরজার উপর দিয়ে ছিটকিনি টানা। বাড়িতে গেছেন ঘুমাতে। মূলত তার কাজ রাতে। রাত জেগে বাড়ি পাহারা দেয়। এতোক্ষণ এই সুযোগ টার অপেক্ষা ছিলো সে। দাড়োয়ান চলে গেলে হাঁটতে বের হবে। গ্ৰামের রাস্তা দিয়ে সকালে হাঁটার আনন্দই আলাদা। আরশি সন্তর্পনে পা ফেলে সামনের দিকে অগ্ৰসর হলো। দরজা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে অতি সাবধানে দরজা ভিড়িয়ে রাখলো। পেছন থেকে সামনের দিকে ফিরতে গেলেই কোনো এক মস্তিষ্কের সাথে ধাক্কা খেল। আরশি দ্রুত হাত দিল। চিৎকার করতে গিয়েও করলো না। বাড়ির কেউ যদি উঠে যায়। হাতের ভাজে রাখা মুঠোফোন বের করে টর্চ জ্বেলে নিল। দৃষ্টিগোচর হলো পরিচিত একজন মানুষের। অসন্তুষ্ট হয়ে এলো চোখ মুখ। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ হতেই আটকে দাঁড়ালো পথ। মাথা না তুলেই চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” কি চাই আপনার? বারবার আমার পথ আটকাচ্ছেন কেন? হুয়াই!”
স্যামি টেনে টেনে বলল,
-” আই ডোন্ট ফিল কমফর্টেবল এট হোম, নোবডি সেস মি ইন দিস হোম। আই ডাজেন্ট ফিল গুড টু বি এলন। লেটস ওয়ার্ক।

আরশি তেঁতে উঠলো। তেজ দেখিয়ে বলল,
-” আমার একা লাগছে না। আপনি যান!”

তৃতীয় ব্যাক্তির প্রবেশ ঘটলো। বাইরে থেকে বাড়িতে অন্তর্ভাগে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে গেল। সন্দিহান চোখে আরশি দিকে চেয়ে বলল,
-” তুই এখানে কি করছিস। যা বাড়িতে যা!
আর তুমি এখানে কেন?”

আরশির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। একহাত দিয়ে স্যামির হাত ধরে সৌজন্য হাঁসি দিয়ে বলল,
-” আসলে আমরা একটু রাস্তায় হাঁটতে যাবো। চলো স্যামি!”

বলে হাঁটা দিলো। অপূর্বের ইগোতে লাগলো। আরশির সাথে এই ছেলেটাকে সহ্য হলো না। পেছন থেকে আরশির হাত টেনে ধরলো।-” আমিও যাবো।”

আরশির সায় দিলো। তবে আরশি আর স্যামি হাত ধরে আগে আগে হাঁটছে অপুর্ব পেছনে পেছনে। অপূর্বের রাগ আকাশ ছুঁয়ে গেল। বন্দুক হাতের নাগালে থাকলে এই ছেলেটাকে মেরে গুম করে দিতো। নয়ন গ্ৰথণ করে শ্বাস নিলো। প্যাকেট থেকে মুঠো ফোন বের করে কললিস্ট ঘেঁটে ফোন করলো অরিশের নাম্বারে। রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে বলল,
-” আমরা নদীর ধারে রাস্তায় দিয়ে উত্তর দিকে যাচ্ছি। সময় দুই মিনিট। এর ভেতরে চলে আয়।”

ওপাশ থেকে কিছু বলার পূর্বেই ফোন কেটে দিলো অপূর্ব। স্যামিকে মাঝে রেখে কাঁধে হাত দিয়ে এটা ওটা বলছে। তদানীং প্রবেশ ঘটলো চতুর্থ ব্যক্তির। পেছন থেকে অপু বলে ডাক দেওয়াতে ফিরলো সে। সাথে সাথে স্যামি আরশির হাতের বাঁধন খুলে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গেল। দূরত্ব এসে পঞ্চম ব্যক্তির জায়গা নিলো। থেমে গেল পায়ের গতি। স্তব্ধ হয়ে গেল হাঁটার শব্দ।

তখন পূর্ব আকাশে দিনের সূর্য উদিত হয়েছে। গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ দেখা যাচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে এসে উপস্থিত হলো অরিশ। অরিশের চোখ ফোলা ফোলা। ঠোঁট ফুলে উঠেছে। নাকের ডগায় লাল হয়ে আছে। মুখের উপর তেলতেলে ভাব বিরাজ করছে। রোদের সোনালী আভা তার মুখে পড়তেই কুঁচকে এলো তার চোখ। বাঁধা দিলো চোখে। সাথে সাথে গ্ৰথণ হয়ে এলো নয়ন জোড়া। একদম ঘুমন্ত শিশুর মতো। বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর চোখ মেলে তাকালো অরিশ। হাঁটুতে ভর করে শ্বাস নিতে নিতে বলল,

-” এই ভোর রাতে কি হয়েছে তোর সা’লা। এমন ভাবে বললি মনে হলো বন্যায় তোর চৌদ্দ বউকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

” তা তো নিয়েছেই। তবে চৌদ্দ বউকে না। একটা মাত্র নাবালক বউ। তাকে একটা বিদেশি কু’কু’র নিয়ে যাচ্ছে।” মনে মনে কথা গুলো বলল। অতঃপর শব্দ করে বলল,
-” আসলে সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাই এই কু’ন্মক’র্মা টাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এসেছি হাঁটাতে। সাথে তোকেও ডেকে নিলাম। আর স্যামির সাথেও বাড়িতে দেখা হলো। ভাবলাম ওকেও নিয়ে যাই!”

ঘুমঘুম স্বর অরিশের -” তাহলে তরীকেও ডেকে নিতি। সা’লা আমার বোন আর আমাকে ডেকে নিয়েছিস। তোর বোনটাকে নিলে আরো ভালো হতো!”

-” বারবার সা’লা বলে আমার বোনকে বিয়ে করতে চাইছিস। এটা প্রামাণ করতে চাইছিস। সমস্যা নেই, আমার বোনকে দিয়ে দিলাম।”

অরিশ কান টেনে ধরলো অপূর্বের। অপূর্ব কোনো রকম কান ছাড়িয়ে নদী দেখিয়ে মুখ ধুতে বলল। অরিশ স্যামিকে সাথে নিয়ে নদীর দিকে এগিয়ে গেল। অরিশ আর স্যামি ঝোপ- ঝাড়ের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেলে আরশির কোমর চেপে ধরলো অপূর্ব। গাছের পাতার সাথে লেগে থাকা শিশিরের সাথে আরশির হাত ঘষে ঘষে লাল করে ফেললো। আরশির হাতে আল আল ঠেকছে। তবুও কিছু বলছে না। তার ভালো লাগছে অপূর্বের এমন ব্যবহার। অপূর্বের মতো ভাব নিয়ে বলল,-” আর ইউ জেলাস মিঃ অপূর্ব আহসান!”

ফট করে হাত ছেড়ে দিলো অপূর্ব। আরশির মুখশ্রীর দিকে অবলোকন করলো। সে অপূর্বের উত্তর শোনার জন্য চাতক পাখির ন্যায় হাপিত্যেশ করে রয়েছে। নাক ফুলিয়ে বলল,-” নো!”

-” ইয়েস! ইউ আর জেলাস।”

-” নো! আই সে নো! তুই অরিশের বোন। আমারো বোন। আমি তোর ভালোর জন্য বলেছি।”

আরশি ভেংচি কাটলো। বিরবির করে বলল,-” জানা আছে!”
অপূর্ব শুনলো তার কথা। কদাচিৎ ফাঁক করে কিছু বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু অদৃশ্য শিকড়ে তার জিভ টেনে ধরলো। দলা পাকিয়ে ভেতরের কথাগুলো আঁটকে গেল মুখে। অরিশ আর স্যামি ঝোপ- ঝাড়ের মাঝে থেকে বেরিয়ে এলো। অপূর্ব সময় নিলো না। হুট করে আরশির হাত টেনে উল্টো পিঠে অধর ছুয়ে দিলো। অতঃপর সড়ে গেল অদূরে। না জানার ভান ধরে বসে রইল।
আরশি ধ্যানের মধ্যে রয়েছে। তার শরীর লোহায় পরিনত হয়েছে। আপনাআপনি হাত চলে গেছে অন্যহাতের পিঠে।
#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️‍🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৯

বর্ষার সময় হলেও বর্ষা নেই। মাথা তুলে উপরের দিকে অবলোকন করলেই মেঘ শুন্য অন্তরিক্ষের দেখা মিলে। তারা রা আন্তরিক্ষের বুকে নিভু নিভু জ্বলছে। মাঝখানে পূর্নিমার চাঁদ। কিন্তু তা দেখার মত, আকাঙ্ক্ষা আমার মাঝে নেই। বরযাত্রী হয়ে গেছিলাম। সেখান থেকে ফেরার সময় কনে পক্ষের অনেকে এসেছে। তাই ছাদে ঘুমিয়েছি আমি আর আরশি। সারাদিনের ব্যস্ততার পর ঘুমে চোখ ঢুলু। আরশি ঘুমিয়ে আছে। আমিও ঘুমে শায়িত হবো। হুট করে মনে হলো কোন পুরুষালী শক্তপোক্ত হাত আমার নরম কোমল কোমর জড়িয়ে ধরেছে। ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি। একটু নড়ার চেষ্টা করতেই ব্যর্থ হলাম। মনে হলো কোন দুষ্টু জ্বীন ভর করেছে। যেই জ্বীন শরীরের সংস্পর্শে এলে কথা বলা যায় না, নড়াচড়া করার শক্তিও হারিয়ে যায়। কিন্তু আমি তো দোয়া পড়ে শুয়েছি। আজকে কি সূরায় ভুল হয়েছে। আমাকে এতো নড়াচড়া করতে দেখে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল কেউ। সামনের অগোছালো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,
-” কি হয়েছে ডিঙিরানী! এতো নড়াচড়া কেন করছো?”

স্তব্ধ হয়ে গেল সময়। শিরায় শিরায় জানান দিলো হিম শীতল হাওয়া। আঢ়চোখে পেছনে চেয়ে হুট করে অরিশ ভাইয়ার মুখ চেপে ধরলাম। টেনে মৃদু শব্দে বললাম,
-” হুস! আস্তে কথা বলো। আরশি আছে। উঠে গেলে কেলেংকারি হয়ে যাবে।”

হাতটা সরিয়ে আরো একটু কাছে এলো আমার। নাকের ডগায় নাক ঘসলেন। টেনে টেনে বললেন,

-” কেউ নেই। এখানে তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই।”

পাশ ফিরে তাকালাম। আরশি নেই। গেল কোথায় মেয়েটি। ঘুমে থাকলে স্বপ্ন মনে করতো সবকিছু। কিন্তু এখন তো নিদ্রা ভঙ্গ হয়েছে। অরিশ ভাইয়াকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,-” প্লীজ! চলে যাও। আরশি ওয়াশরুমে গেছে। যখন তখন চলে আসবে।”

-” আসবে না।” একরোখা জবাব তার।

-“মানে?”
-” মানে ও আজকে রাতে নিচে ঘুমাবে আর আমি তোর সাথে। আমার যে, হুট করেই তোকে প্রয়োজন। আমি যে তরীর নেশায় আসক্ত হয়ে গেছি। আমি আমার সাথে চিরতরে লেপ্টে নিতে চাই।”
উঠে বসলাম আমি। শরীরের পশম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যরকম অনুভূতি ছড়িয়ে গেছে সর্বাঙ্গে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
-” প্লীজ নিচে যাও। আমার ভয় করছে।”

-” আমি থাকতে কিসের ভয় ডিঙিরানী? না-কি আমাকে ভয় পাচ্ছিস। ঠিক আছে, তোর অসম্মতিতে কিছু করবো না। শুয়ে পড়।”

করুনতা মাখানো তার কন্ঠ স্বর। কাতরতা ছড়ালো হৃদয়ে। অরিশ ভাইয়া উঠে চলে যাচ্ছিস। কি হলো জানা নেই, পেছন থেকে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম তাকে। পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বললাম,
-” চলে যাচ্ছো কেন?”

-” কারণ তুই আমাকে চাস না। আমি নিজের ভেতরে নেই। যখন তখন তোর কিছু করে ফেলতে পারি।”

ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আরো দৃঢ় করে পেঁচিয়ে নিলাম তাকে। বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর আমাকে নিজের থেকে ছাড়াতে সক্ষম হলেন। আমার মাথা নিচু করে তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছি। এতোক্ষণ বুঝতে না পারলেও এবার সক্ষম হলাম তিনি ডিঙ্ক করেছেন। ডান হাতের সাহায্যে থুতনিটা উঁচু করে বললেন,

-” তুই কি রাজি তরী?’
জরিয়ে ধরলাম তাকে। সম্মতি পেলেন তিনি। পাঁজাকোলা তুলে নিলেন আমায়। নেশালো মানুষের ন্যায় টেনে টেনে বললেন,
-” তাহলে তো তোকে ছাড়ছি না। একদম ছাড়ছি না।”

রাত গভীর হতে লাগল। ফুলিয়ে গেল সময়। আজ মিশে গেল এক আত্মা এক প্রাণ। ছড়িয়ে গেল ভালোবাসার রং। এটাই ছিলো সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। জীবনের পাতায় দিনটা একসময় অমর হয়ে রইল।

_______

মাথা নিচু করে আছি আমি। গালে হাত। চোখের জল মাটিতে ঝরছে। অরিশ ভাইয়া আমার পাশে দাঁড়ানো। খালামণি চেয়ার বসে আছেন। গ্ৰামের লোকেরা চারপাশে ঘিরে রয়েছে। মামুনি একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। অপূর্ব ভাইয়া ইতিমধ্যে দুই চড় বসিয়ে দিয়েছেন। আজ সকালে ভোরের দিকে। আমাকে আর অরিশ ভাইয়াকে ছাদে পাওয়া যায়। আমি তখন নির্বিকার ভাবে ঘুমিয়ে ছিলাম অরিশ ভাইয়ার বুকে। পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে যায় ব্যাপার টা। বিয়ে বাড়ি এমনিতেই মানুষে গিজগিজ করছে আবার খালামণি প্রভাবশালী মানুষ।
আমার ভাবনার ছেদ ঘটল কারো কথায়।
-” মা! আপনার আত্মীয় হোক আর যাই হোক। বিচার সবার জন্য সমান। যদি আপনার আত্মীয় বলে এদের বিচার না করেন। তাইলে আমরা কক্ষনো আপনার বিচার মানমু না।”

-” হ। ঠিক কইছোস। এই মাইয়া পোলাগো বেতের আঘাত দিয়ে জোতার মালা পড়াইয়া গ্ৰাম থেকে বাইর করতে হইবে।”

খালাজান মাথায় হাত দিলেন। কিভাবে নিজের বোনের মেয়ে আর ভাইয়ের ছেলেকে এই শাস্তি দিবে। রুদ্ধ কন্ঠে বললেন,

-” অরিশ আমি তোমার থেকে এমন কিছু আশা করি নি। তরী না হয় ছোট কিন্তু তুমি তো ছোট নয়। তুমি কিভাবে এই ভুলটা করতে পারো?”

-” আসলে ফুফু..

-” আমরা কোনো কথা হুনতে চাই না। এই পোলা মাইয়ার শাস্তি চাই।”

অরিশ ভাইয়া ক্ষিপ্ত হয়। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,-” তরী কাদিস না তুই। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

বলেই ফোন বের করলেন। কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষণ প্রচেষ্টা করে ফোন টা এগিয়ে দিলো খালামনি কাছে। সবার দিকে চেয়ে বললেন,
-” এখন হয়তো আপনাদের আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।”

খালা মনি গলায় ঝুলন্ত চশমা টা চোখে দিয়ে বিরবির করে অধর নাড়িয়ে পড়লেন। অতঃপর আমাদের দিকে চেয়ে অবিশ্বাস্যের স্বরে বললেন,

-” তোমরা বিয়ে করেছো?”

শব্দটা বাতাসের মতো ছড়িয়ে গেল। মামুনি ছুটে এলেন। ফোনটা হাতে নিয়ে তিনিও পড়লেন। মৃদু রোদের মাঝেও তার মাথায় বজ্রপাত পড়লেন। ভাঙ্গা গলায় বললেন,

-” তোরা বিয়ে করেছিস? কবে বিয়ে করেছিস?”

-” টুরে গিয়েছিলাম তখন।” একরোখা জবাব তার।

-” আমি তোর মা অরি। দশ মাস তুই আমার গর্ভে ছিলি। আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না।”

অরিশ ভাইয়া মামুনিকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। মামুনি অসুস্থ হয়ে পড়ে যেতে নিলো। অরিশ ভাইয়া ধরে সামলে নিলেন। চেয়ারে বসালেন। পানির গ্লাস আনতে বললেন আরশিকে। সবার সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বললেন,
-” আমি আর তরী বিবাহিত। আমরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। আর কোন প্রশ্ন আছে আপনাদের। না থাকলে যান।”

পায়ের শব্দ শোনা গেল। সকলে চলে গেলেন। অরিশ ভাইয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। আরশি পানি নিয়ে এসেছে। আরশির থেকে পানি নিয়ে মামুনির মুখে ছিটিয়ে দিলেন। মাথা ধরে মুখের ভেতরে গলিয়ে দিলো পানির ধারা। মামুনি চোখ মেলে চাইলো। পুতুলের ন্যায় বসে রইলাম। অরিশ ভাইয়া হাঁটু গেড়ে বসলেন। অসহায় কন্ঠে বললেন,

-” বিশ্বাস করো মা। আমরা বিয়েটা করতে বাধ্য ছিলাম।
আমি কিংবা তরী কেউ এই বিয়েটাকে আগ্রহ দেখাই নি। এই বিয়েটাকে তেমন গুরুত্ব দেইনি। তাই তোমাকে জানাই নি। আমি চেয়েছিলাম, তরীর ফাইনাল ইয়ারের পরিক্ষা শেষ করে তোমাকে বলতে। কিন্তু কালকে রাতে ডিঙ্ক করে..
আ’ম স্যরি মা।”

মামুনি ইশারায় কাছে ডাকলেন আমায়। মাথার চুল গুলো দুহাতে সরিয়ে দিয়ে ললাটে অধর ছুয়ে দিলো। বললেন,

-” আমি আমার ইচ্ছে আবার তোদের বিয়ে দিবো। ধুমধাম করে বিয়ে দিবো বাড়ি ফিরে। তুই আমার আরেকটা মেয়ে, তোকে কিভাবে অযত্নে রাখি।”

-“আর আমার বিয়ে?” মুখ কালো করে আরশি এসে দাঁড়ালো।

মামুনি ওর কান টেনে ধরলেন।
-” বিয়ের কথা শুনে তোর বিয়ে করতে মন চাইছে। দাঁড়া, আগে যাই বাড়িতে। তারপরে বুড়ো দেখে তোর বিয়ে দিয়ে দিবো।”

-” মা..

মামুনি আরশিকে জরিয়ে ধরলেন। অপূর্ব ভাইয়াকে হাতের ইশারায় ডাকলেন। তার সম্মতি আছে কিনা জানতে চাইলেন। ভাইয়া শুধু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। সেইদিন খুশিটা ছিলো আকাশ ছোঁয়া। মামুনি আবার আমাদের দিতে চাইছিলেন। কিন্তু সময় হয়ে উঠলো না। তার আগেই,

(চলবে ..ইনশাআল্লাহ)
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here