#অনুভূতির_অন্বেষণ
#চন্দ্রিকা_চক্রবর্তী
#পর্বঃ১৩
(৩৮)
ইশরাতকে ছাড়ার আর নাম নেই সাদমানের। সেই কখন থেকে জড়িয়ে ধরে যেভাবে বসে ছিলো, এখনো সেভাবেই আছে। আগের মতোই ইশরাতের কাঁধে তরল কণা গড়িয়ে পড়ছে। আপনা-আপনি ইশরাতের হাত চলে গেল সাদমানের পিঠে।
—-শুনেছেন? কী হয়েছে আপনার? এরকম করছেন কেন?
কোনো জবাব দিচ্ছে না সাদমান।
—-তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন প্লিজ। এভাবে আপনার বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না৷ এমনিতেই না জানি কখন থেকে ভিজে চলেছেন। আপনার যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় গিয়ে গোসল করা প্রয়োজন।
—-একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চললে কী হয় ইশরাত? এতোটা অবুঝ কেন হতে হবে তোমার?
সাদমানের কন্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা লাগছে। এমনকি কথা বলার সময় একাধিকবার ঢোক গিলছে ছেলেটা। কেন? কান্না আটকে কথা বলছে বলে?
—-আমি ঠিক আছি তো দেখুন? নিজের চিন্তাটা একটু করুন দয়া করে? আমার এখন আপনাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি গাড়ি চালান। বৃষ্টি অনেকটা কমে এসেছে দেখুন। এখন গাড়ি চালাতে ততোটা বেগ পেতে হবে না।
ইশরাতকে এতোক্ষণে ছাড়লো সাদমান। সোজা হয়ে নিজের সীটে গিয়ে বসলো। এরপর গাড়ি ছাড়লো।
—-আপনি কাঁদছিলেন?
—-না, হাসছিলাম হা হা করে।
—-ফের আপনার ত্যাড়া কথা বলা শুরু হলো তাই না?
—-তো কী বলবো? যা চোখে দেখতে পাচ্ছো তা আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?
—-আপনি আমার জন্য কাঁদছিলেন?
—-না, তোমার জন্য কেন কাঁদতে যাবো? আমার ফুফাতো ভাইয়ের খালাতো বোনের চাচার মেয়ের বান্ধবীর মামাতো বোনের বাচ্চার জন্য কাঁদছিলাম।
—-কী? কী? কী?
—-এতো কথা জিজ্ঞেস না করে শরীরে শক্তি সঞ্চয় করো। একটু পরে দরকার লাগবে।
—-কেন?
—-আন্টি লাঠি প্রস্তুত করে রেখেছে। এটা কিন্তু যেই সেই লাঠি না। বিশেষ লাঠি। শুধু তোমার উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে শুনলাম।
—-আমি আজকে রাতে আপনার সাথে থাকি?
—-অ্যাঁ!
—-ইয়ে মানে আপনার বাসায় আন্টির সাথে থাকি?
—-কেন? উত্তম মধ্যম পড়বে বিধায়?
—-আপনি মনে হয় খুব খুশি আমাকে মারবে শুনে?
—-আলবাত খুশি! তোমার কিছু শিক্ষা হওয়া দরকার। পিঠে কয়েকটা পড়লেই একেবারে সোজা হয়ে যাবে।
—-আমি শুধুশুধুই আপনাকে কয়েক মুহুর্তের জন্য ভালো মনে করেছিলাম।
ইশরাতের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ উঁচু করে সাদমান বললো
—-মানে?
—-মানে আপনার একটু আগে আমার জন্য চিন্তা দেখে মনে হয়েছে আপনি বোধহয় আসলেই ভালো হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু জাঁদরেল যে জাঁদরেলই থাকে, সেটা এখন বুঝলাম।
—-আমি জাঁদরেল? বাহ্! ভেবেছিলাম আন্টিকে বলে পিটুনি খাওয়া মওকুফ করে দেওয়া যায় কীনা সেটা দেখবো। আন্টি আবার আমার কথা ফেলতে পারে না কীনা! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আন্টিকে বলতে হবে যে অজ্ঞান হওয়ার আগ পর্যন্ত পিটুনি কন্টিনিউ করতে।
অসহায় চোখে সাদমানের দিকে তাকালো ইশরাত। বেচারি তো ভুলেই গিয়েছিলো সাদমানের যেকোনো কথা কে তার আম্মু বিশ্ব শ্রেষ্ঠ উপদেশ বলে মনে করে!
সাদমানের দিকে একটু পরপর তাকিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে ইশরাত। এমনিতেই বিপদে আছে, তার উপর সাদমানকে জাঁদরেল বলে খাল কেটে কুমির আনা একদম উচিত হয়নি।
(৩৯)
সাদমানের পিছনে দাঁড়িয়ে তার শার্ট আঁকড়ে ধরে আছে ইশরাত। কারণ রেণু আক্তার রীতিমতো যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। কীসের যুদ্ধ? আজকে নিজের রুমে যাওয়ার আগে রেণু আক্তারের সাথে যুদ্ধ করতে হবে ইশরাতের। সেই যুদ্ধে রেণু আক্তারের অস্ত্র হলো লাঠি আর ইশরাত নিরস্ত্র। চোখ দিয়ে একাধিকবার অনুনয় করে মিশরাতকে বুঝিয়েছে রেণু আক্তারের কাছে তার শাস্তি লঘু করার আবদার করতে। একটা চড় বা কানমলা ঠিক আছে। তাই বলে লাঠির বাড়ি খেয়ে ঢুকতে হবে নিজের রুমে!
তবে আজকে মনে হয় মিশরাতও রেণু আক্তারের সাথে জুটি বেঁধেছে ইশরাতকে শায়েস্তা করার জন্য। তাই তো তার চোখেমুখে আজ বিন্দুমাত্র কোমলতা প্রকাশ পাচ্ছে না ইশরাতের জন্য। অগত্যা জাঁদরেল টা মানে সাদমান টা-ই শেষ ভরসা তার জন্য।
—-এই, সাদমানের পেছনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন মুখ লুকিয়ে? আয় বলছি? আমার সামনে আয়? কোন আক্কেলে তুই একটাবার অন্তত আমাদের ফোন করে তোর অবস্থা না জানিয়ে বান্ধবীর ভাইয়ের জন্মদিনের খুশি পালন করছিলি হ্যাঁ? এদিকে যে তোর মা আর বোনের জান যায় যায় অবস্থা হয়েছিলো সেটা জানিস? এই যে আমার হাতে আর কপালে ব্যান্ডেজ করা। কার জন্য হয়েছে এসব? তোর জন্য। তোর গাফিলতির জন্য। তোর আব্বু আমার উপর তোদের দুই বোনের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তোর দায়িত্ব নিতে গিয়ে আমার হিমশিম খেতে হচ্ছে। এইতো দু-তিন দিন বাদে তোর আব্বু আসছে। আসলেই বলবো হয় নিজের দায়িত্বে তোকে রাখতে নয়তো বিয়ে-শাদি করিয়ে স্বামীর হাতে তুলে দিতে। তোর মতো বাঁদরকে নজরে রাখা আমার কর্ম না।
সাদমানের পেছন থেকে মিনমিনে গলায় ইশরাত বললো
—-আম্মু, এইবারই প্রথম আর এইবারই শেষ। আর কখনো হবে না আম্মু। প্লিজ, মাফ করে দাও এবারের মতো? ও আপু, কিছু বলছিস না কেন?
—-তোর আপু আজকে কিছুই বলবে না। সব বোঝাপড়া আজকে তোর আমার সাথে। ইশু, সামনে আয় বলছি। নয়তো ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে আসবো!
সাদমানের শার্ট আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো ইশরাত। হাবভাবে তো ইশরাতের মনে হচ্ছে না এই জাঁদরেল তার জন্য কিছু করবে। বরং মনে হচ্ছে তাকে দেওয়া জাঁদরেল উপাধির স্বার্থকতা প্রকাশ করতে অধীর আগ্রহে মুখিয়ে আছে!
—-আপা, কী শুরু করলেন বলেন তো? এই রাতের বেলা বৃষ্টি বাদলের সময় মেয়েটা বাসায় ফিরে এসেছে। কোথায় তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে যাবেন, তা না। আপনি উল্টো বকাবকি করছেন। কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না আপা।
ব্যস! আর পায় কে ইশরাতকে! এইতো পেয়ে গিয়েছে আস্কারা পাওয়ার মানুষ। পারভীন সুলতানাকে দেখেই একটা হাসি ফুটলো ইশরাতের মুখে। সাদমানকে ছেড়ে এবার পারভীন সুলতানার কাছে চলে গেল ইশরাত।
—-আন্টি, তুমি এসেছো? দেখো না আম্মু কী বলছে এগুলো?
—-সব শুনেছি আমি। আপা, অনেক তো হলো। এবার অন্তত মেয়েটা কে বাসায় ঢুকতে দিন?
—-না আপা। এই মেয়ে কতোবড় বাঁদর তা আপনি জানেন না। এর একটা শিক্ষা তো হওয়াই উচিত।
কানে কানে পারভীন সুলতানাকে ইশরাত বললো
—-আন্টি, তোমার কাছে আজকে থাকতে দিবে? আম্মুর হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না। নিশ্চয়ই কয়েক ঘা মেরে তবেই শান্ত হবে।
—-এই তুই পারভীন আপার কানের কাছে কী ফিসফিস করছিস?
—-কিছুই না আপা। আপনি যখন নির্ণয় করেই নিয়েছেন যে ইশরাতকে না মেরে বাসায় ঢুকতে দেবেন না, তাহলে মেয়ে না হয় আজকে আমার কাছেই থাকুক।
—-সে কী! না, না আপা। আপনার প্রশ্রয়ে মেয়ে আরও গাছে উঠবে।
—-দিলাম না হয় মা হয়ে মেয়েকে একটু প্রশ্রয়। ক্ষতি কী তাতে! গেলাম মেয়েকে নিয়ে।
(৪০)
—-আন্টি, নাচতে নাচতে তোমার সাথে চলে তো আসলাম। কিন্তু পরবো টা কী? জামাকাপড় তো কিছুই আনা হলো না। এখন?
—-উমম, থ্রী পিছ তো পরিনা অনেকদিন। তুই শাড়ি পরতে পারিস?
—-পারি তো।
—-আজকে রাতের জন্য তাহলে শাড়ি পরেই কাটিয়ে দে৷ পারবি শাড়ি পরে ঘুমোতে?
—-পারবো, পারবো। শাড়ি পরে গিয়ে শুয়ে যাই। ঘুম পেয়েছে ভীষণ।
—-রাতের খাবার না খেয়েই? সেখানে খেয়ে এসেছিস শুনেছি। তবুও আমি না খাইয়ে তোকে ঘুমোতে দেবো না। কাপড় পাল্টে তাড়াতাড়ি আয়। দু’টো খেয়ে তারপর ঘুমাবি।
ইশরাত পারভীন সুলতানার সাথে রুমে যাওয়ার সময় একবার সাদমানের সাথে চোখাচোখি হলো। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রান্নাঘরের দিকেই আসছিলো সে। বোধহয় খাবারের জন্য। ইশরাত লক্ষ্য করলো তার মুখে গোসলের কারণে একটা স্নিগ্ধভাব আসলেও চোখমুখে অনেকটা লালচে ভাব ছেয়ে আছে।
ইশরাতের হাতে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে পারভীন সুলতানা চলে গিয়েছেন প্রায় পনেরো মিনিট হতে চললো। সাদমান আর তার আব্বুকে পারভীন সুলতানা খাবার বেড়ে দিয়েছেন। সাদমানের আব্বু বা আম্মু কেউ খাবার খাওয়া শুরু করেননি। ইশরাতের অপেক্ষায় আছেন দু’জনেই। তবে সাদমান সেসবের ধার ধারেনি। সে খেয়ে যাচ্ছে আপনমনে। খেতে খেতে তার কানে আসলো পারভীন সুলতানার কন্ঠ
—-এসে পড়েছিস? বস তাড়াতাড়ি। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম আমরা।
খাবার মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে ইশরাতের দিকে তাকালো সাদমান। তাকানোর পর কিছুই হয়নি। শুধু খাবার চিবুতে ভুলে গিয়েছে সে। লাল টুকটুকে এক শাড়ি পরে এলোকেশী হয়ে স্মিত হাসি মুখে লাগিয়ে ঈষৎ অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে ইশরাত। মেয়েদের নাকী শাড়ি পরলে সাধারণ সময় থেকে খানিকটা বড় লাগে। কিন্তু এই পিচ্চি মেয়েকে তার শাড়ি পরলেও দেখতে পিচ্চিই লাগে। দেখতে দেখতে তার চোখের সামনে এসে তার বরাবর মুখ করানো চেয়ারে বসে পড়লো ইশরাত। খেতে বসে কথা না বললে বোধহয় ভালো লাগে না। তাই প্রথম কথা বললেন সাদমানের আব্বু আতিক হাসান
—-পড়াশোনা কেমন চলছে তোমার আম্মু?
—-জি আংকেল। ভালোই।
—-তুমি তো এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিবে?
—-জি আংকেল। কয়েক মাস পরেই পরীক্ষা।
—-বাচ্চা মেয়েটা দেখতে দেখতে কতো বড় হয়ে গেল বলো পারভীন? এইতো সেদিনের কথা, মেয়েটা দু’পাশে দুটো বেনী ঝুলিয়ে এসে সময় অসময়ে বলতো “আংকেল, ডেইরি মিল্ক খাবো। আমি দুই মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করছি, তুমি এক মিনিটের মধ্যে এনে দাও। হাহা।”
ঈষৎ হাসলো টেবিলে বসে থাকা সবাই।
—-বাচ্চা মেয়েটা আমার বড় হয়ে গিয়েছে আতিক। দেখো তো আমার লাল শাড়িতে তাকে দেখতে কেমন নতুন বউ লাগছে! লাল টুকটুকে বউ!
—-হাহা। তা যা বলেছো!
কথা বলতে বলতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করলো চারজন।
(৪১)
—-আম্মু, কী করলে বলো তো? আমার ইশুকে ছাড়া কিছু ভালো লাগছে না। একদমই ঘুম আসছে না।
—-যা করেছি বেশ করেছি। তবে ইশু যে পারভীন আপা বলার সাথে সাথেই এভাবে চলে যাবে তা তো বুঝতে পারিনি।
—-সাদমানের পরিবার তোমার ছোট মেয়েকে যেই আদর করে! মানুষ যেখানে আদর সোহাগ পায় সেখানে ঘেঁষবে সেটাই স্বাভাবিক। তাই ইশু ও চলে গিয়েছে।
—-আচ্ছা, যা হয়েছে, হয়েছে। এখন ঘুমা তুই।
এদিক সেদিক করতে করতে মিশরাতের রাত পার হয়ে যাচ্ছে। ঘুমের ছিটেফোঁটা চোখে নেই তার। জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর মতো মানুষটা, চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে গল্প শোনানোর মতো, প্রাসঙ্গিক হোক বা অপ্রাসঙ্গিক কথা নিয়ে বকবক করা মানুষটা তার সাথে নেই যে আজ!
আরও কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মিশরাতের ফোন বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে বিধায় মিশরাত তিনবার রিং হয়ে যাওয়ার পরেও রিসিভ করলো না। চার বারের সময় ফোন কানে লাগালো।
—-হ্যালো? আমি কী মিশরাতের সাথে কথা বলছি? মিশরাত বিনতে শোয়েব?
—-জি বলছেন। কে আপনি?
—-আপনি আমাকে হয়তো নাম বললে চিনবেন না। চেনার কথাও না। কখনো আমাদের দেখা হয়নি। আমি আরাভ। আরাভ ইসলাম। আরিয়ানের বন্ধু।
পুরো কথা শুনে মিশরাত কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। এরমধ্যেই আরাভ বেশ কয়েকবার অপর প্রান্ত থেকে মিশরাতকে ডেকে গিয়েছে। সেসবের উত্তর সে দেয়নি। হুট করে বলে বসলো
—-আপনার বন্ধু আরিয়ানের হক এর আর খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই তাই না? যেই দেখলো নিজে আমার কাছ থেকে পাত্তা পাচ্ছে না, ওমনি সাঙ্গ পাঙ্গ লাগিয়ে দিলো তো পিছনে?
—-দেখুন, আরিয়ান আমাকে ফোন দিতে বলেনি আপনাকে। আমি নিজে থেকেই আপনাকে ফোন দিয়েছি। তার পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। আমি সবগুলো খুলে বলছি আপনাকে।
—-ফোন কী আপনি রাখবেন না আমি?
—-জি?
—-বললাম ফোন টা কী আপনি রাখবেন নাকী সেই দায়িত্ব আমার পালন করতে হবে? আচ্ছা আপনার বন্ধুর মতো আপনারও কী কমন সেন্স এর অভাব? মানে ভাবলেন কী করে যে আমি আপনার কথায় এতোটুকুও গুরুত্ব দেবো? কে আপনি? চিনি না জানি না এমন কেউ। তাও আবার এমন একজনের বন্ধু বলে নিজেকে প্রথমেই সম্বোধন করলেন, যে আপনার বাকি আর কোনো কথা শোনার মতো ইচ্ছেটাই আমার চলে গিয়েছে। আপনার যেই বন্ধুকে আমি চিনি, জানি তার কথাই যখন শুনছি না, তাহলে আপনি কে ভাই? আপনার কথা আমি কেন শুনতে যাবো?
—-কথাটা আপনার শুনতে হবে মিশরাত। আমি আপনাকে প্রথম থেকে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই একটু কথা বলতে চাইছি।
—-আপনার বন্ধুর হয়ে সাফাই গাওয়া মানেই বুঝি আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলা? স্যরি টু সে, আমার এতো বোঝাবুঝির দরকার নেই। যা বুঝেছি, যথেষ্ট বুঝেছি। আপনি তখন ছিলেন না যে সময়টাতে আরিয়ানের সাথে আমার এরকম সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিলো। তাহলে এখন হুট করে এসে যদি আপনি বলেন যে আমাকে শুরু থেকে সব বুঝিয়ে বলবেন, সেটা কী আমি আদৌও বিশ্বাস করবো? জি না। করবো না, আর করছিও না। প্লিজ ফোন টা রাখুন। প্রথমবার আপনার সাথে কথা বলছি, তাই যথেষ্ট ভদ্রতা বজায় রেখে বলছি। আশা করছি আমার বিরক্তির কারণ হবেন না।
—-অনেক কিছুই আপনার অজানা মিশরাত। অনেক কিছু। একটু আগে বললেন না যে আপনার আর আরিয়ানের মধ্যে অতীতে যা ঘটেছিলো তা আমি জানি না? সত্যিই তাই। তবে একটু ভুল আছে। জানি না নয়, বরং জানতাম না হবে। অর্থাৎ আগে জানতাম না, এখন সবই জানি। তবে আপনি অনেক কিছুই জানেন না অতীত নিয়ে যেটা আমি জানি। আপনি ঠিক ততোটুকু সময়ের কথা জানেন যতোটুকু সময় পর্যন্ত আরিয়ানের সাথে আপনি ছিলেন। কিন্তু তারপর? তারপর কী হয়েছিলো, কেন হয়েছিলো তার কী কোনো ধারণা আছে আপনার?
আমি এখানে একপাক্ষিক কথা অবশ্যই বলতে আসিনি। আমি উভয় পাক্ষিক বিচার করেছি। আমাকে যদি সবটা ঘটনার উপর মন্তব্য করতে বলা হয় তাহলে অবশ্যই বলবো আরিয়ানের দোষ আছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরিয়ান পরিস্থিতির শিকার ছিলো যেটা আপনার অজানা। আপনার জন্য আজকে ছেলেটা এভাবে নিজের পরিবার কাজকর্ম ছেড়ে পড়ে আছে এখানে। এখন প্রশ্ন করতেই পারেন আমি কী বলেছি নাকী এমনটা করতে? না, আপনি বলেননি। কিন্তু কী বলুন তো? সবাই সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারে না। কোনটা তার জন্য ভুল আর কোনটা তার জন্য সঠিক তা ঠিক সময়ে বুঝতে পারে না। আরিয়ানের ঠিক সেই অবস্থাটাই হয়েছে। আজকেও আপনার জন্য এই ঝড়ের রাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। ছেলেটা এখন জ্বরে কাতরাচ্ছে আপনি জানেন? সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন? এখনো জ্বরের ঘোরে সে আমাকে ধরে বলছে “মিশুকে এনে দে না আরাভ। আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো, প্রমিস।” পাঁচ বছর আগে আরিয়ানের ভুলের জন্য আপনি কষ্ট পেয়েছেন। সেই কষ্ট অনেকটা সেরে এসেছে। আপনার কথাবার্তায় মনে হয় আরিয়ানকে ভুলেই গিয়েছেন। কিন্তু আরিয়ান আপনাকে ভোলা তো দূর, দিনকে দিন তার আপনাকে পাওয়ার জন্য পাগলামো আরও বেড়ে চলেছে। আমার বন্ধুটা বড্ড অভাগা বুঝলেন? শুধু সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করে উঠতে না পারায় আজ সে তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে ভেতর ভেতর শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাকে এখানে আংকেল আন্টি পাঠিয়েছেন তার দেখাশোনা করার জন্য। কারণ উনারাও জানেন তাদের ছেলের পাগলামি সম্পর্কে। আমি থাকি তো আরিয়ানের সাথে, তাই তার প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে নিয়ে করা পাগলামি গুলো দেখতে পাই, যা আপনি পান না। তার পাগলামি বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। শুধু তার কারণে আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাইছি। প্লিজ, একটাবার একটু কথা শুনুন আমার?
—-আপনার বন্ধুও সেখানে আসবে কথা বলার সময়? তাহলে অবশ্যই তাকে মোনাকে সাথে করে নিয়ে আসতে বলবেন। আমি মোনাকে স্যরি বলে দেবো। আমার জন্য সেদিন তারা ঠিকমতো রোম্যান্স করতে পারেনি।
—-সেদিন আরিয়ান মোনাকে ডাকেনি মিশরাত। মোনার সাথে এখন আরিয়ানের কোনো সম্পর্ক নেই। আরিয়ান আবারও ষড়যন্ত্রের শিকার। তাছাড়া আপনি জানেন সেদিন আরিয়ান মোনাকে প্রাণে মেরে ফেলতে অবধি যাচ্ছিলো? জানেন না মিশরাত। আপনি কিছু জানেন না। কারণ সবগুলো ঘটনা আপনার যাওয়ার পরেই ঘটে। অতীতেও ঘটেছে আর এখনো ঘটে। তাই জন্য বলছি, একটু আমার কথাগুলো শুনুন।
—-বলুন কী বলবেন।
—-এখানে এভাবে ফোনে নয়। কোথাও বসে কথা বললে ভালো হয়। শুধু আপনি আর আমি। চিন্তা করবেন না। আরিয়ান থাকবে না সেখানে। কারণ তাকে জানিয়ে আমি দেখা করতে যাবো না আপনার সাথে।
(৪২)
আজকে রাতে ইশরাতের সাথে পারভীন সুলতানা ঘুমিয়েছেন। সাদমানের আব্বু অন্য আরেক রুমে।
রাত এখন প্রায় তিনটা বেজে সতেরো মিনিট। ইশরাতের পানির পিপাসা পেল বড্ড। রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো পানি খাওয়ার উদ্দেশ্য। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে কেবল পান করতে যাবে, তখনই গোঙানির শব্দ শুনতে পেল। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে শব্দের উৎস খুঁজতে লাগলো। এরপর বুঝতেও পারলো শব্দটা সাদমানের রুম থেকে আসছে। আবজা দেওয়া দরজাটা আরেকটু ফাঁক করলো ইশরাত। রুমে ঢুকলো ধীর পায়ে। সাদমান এখন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আর তার মুখ দিয়ে ক্রমাগত গোঙানির শব্দ বের হচ্ছে। ইশরাত আরেকটু সামনে গিয়ে সাদমানের কপালে আলতো করে হাত রাখলো। কপাল জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারলো জ্বরের কারণেই এরকম অবস্থা সাদমানের। সাদমানকে সোজা করে শুইয়ে দিলো ইশরাত। রুমে মেডিসিন আছে কীনা খুঁজতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর পেয়েও গেলো। সাদমান ভাত খেয়েছে অনেকক্ষণ আগে। এখন পেট খালি। তাই সাদমানকে কিছু একটা খাওয়াতে হবে। রান্নাঘরে গিয়ে এটা সেটা খুঁজতে খুঁজতে ইশরাত দেখতে পেল রুটি করে রাখা আছে। আগামীকাল সাদমান আর তার আব্বুর জন্যই হয়তো করে রেখেছেন পারভীন সুলতানা। সেখান থেকে দু’টো রুটি নিলো ইশরাত। সবজি খুঁজে পেল না। ফ্রিজে গিয়ে খাবার খুঁজতে গিয়ে মিষ্টি রাখা আছে দেখতে পেল। সেখান থেকে মিষ্টি নিলো দু’টো। চলে গেল সাদমানের রুমের উদ্দেশ্যে। পাশে গিয়ে বসলো সাদমানের।
—-শুনছেন? আপনার অনেক জ্বর উঠেছে। মেডিসিন নেওয়া প্রয়োজন। আমি খাবার নিয়ে এসেছি। একটু হা করুন? আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
কোনোমতে চোখ টেনে খুললো সাদমান। পিটপিট করে তাকিয়ে আছে ইশরাতের দিকে
—-আবারও তুমি এভাবে এসেছো? সবদিন এভাবে আসো আর আমি কাছে গেলেই চলে যাও।
—-অ্যাঁ? আপনি জ্বরের ঘোরে কীসব উল্টোপাল্টা কথা বলছেন এগুলো?
—-তুমি আজকে কথাও বলছো? অন্যদিন বলো না কেন? শুধু হাসো আর হাসো। হাসতে হাসতে আসো আর হাসতে হাসতে চলে যাও।
—-বুঝেছি। মাথা একেবারেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে আপনার। আপনার উঠে বসা লাগবে না। আর এতো কথা বলা তো অবশ্যই লাগবে না। শুধু শুয়ে থেকেই একটু হা করুন আর আমি মুখে যা দেবো তা চিবিয়ে গিলে ফেলবেন।
ইশরাত বললেও সাদমান কথা শোনেনি। সে তার মতো কথা বলা অব্যাহত রেখেছিলো। ইশরাত সেসব শুনে কখনো হেসেছে তো কখনো দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছে। উল্টোপাল্টা ভিত্তিহীন কথা সব। কথা বলতে বলতেই সাদমানকে খাবার খাইয়ে দিয়েছে ইশরাত। এরপর মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে একটা বাটিতে করে পানি নিয়ে খোঁজাখুঁজি করে ছোট্ট কাপড়ের টুকরো নিলো। সাদমানের পাশে বসে কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো।
প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো অতিবাহিত হওয়ার পর সাদমানের বকবক করা থামলো। একেবারে চুপ হয়ে গেল সে। ইশরাতের জলপট্টি দেওয়া প্রায় অনেকক্ষণ আগেই শেষ। তবুও সাদমানের পাশে বসেছিলো তার জ্বর কমার আশায়। এভাবে এই অবস্থায় সাদমানকে একা ফেলে দিয়ে তার যেতে ইচ্ছে করছিলো না। কপালে হাত দিয়ে ইশরাত দেখলো সাদমানের জ্বর এখন অনেকটা কম। বোধহয় আস্তে আস্তে একেবারেই কমে যাবে কিছুক্ষণ পর। ইশরাত বাটি হাতে নিয়ে কেবল বিছানা থেকে উঠতে যাবে, তার আগেই তার হাত ধরে তাকে আটকে দিলো সাদমান।
—-আবারও চলে যাচ্ছো? না, না। তোমাকে আজ আর যেতে দেবো না আমি। সবদিন তুমি কিছু না বলে চলে যাও। তোমাকে স্পর্শ করা তো দূর, কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর পর্যন্ত দাও না। আজ তো কথা ও বলছো, আর এই যে হাত ও ধরতে পারছি। আজকে তোমাকে আর ছাড়বো না আমি।
—-ভাগ্যিস আজকে রাতের ঘটনা আপনার কালকে ভোরে আর মনে থাকবে না। থাকলে যে কী হতো! লজ্জায় তো মনে হয় আমার সামনে দাঁড়াতেই পারতেন না। এখন কালকে যদি আমি বলিও যে আপনি এসব বলেছেন, তাহলে করবেন আপনি আমার কথায় বিশ্বাস? খুব ভালো করে জানা আছে, একফোঁটাও করবেন না। যথেষ্ট হয়েছে জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকা। এখন ঘুমান তো! জ্বর কমে আসছে।
হাত ধরে একটানে নিজের পাশে এনে বিছানায় আবার বসিয়ে দিলো ইশরাতকে সাদমান। চোখদুটো মৃদু খোলা রেখে বললো
—-শাড়ি পরা একদম ঠিক হয়নি তোমার। তা-ও আমার সামনে এভাবে শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ানো। মরুভূমিতে ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পথিকের সামনে একটু পানি রেখে দিলে সেই পানিটুকু পান করতে না পারার জন্য পিপাসায় পথিকটি যেমন করে ছটফট করে, তোমার থেকে এভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়েও আমি ঠিক সেইভাবে প্রতিনিয়ত ছটফট করছি। সেই ছটফটানি আরও বহুগুণে বেড়ে যায় তোমাকে এভাবে নিজের আশেপাশে দেখলে। কেন বোঝো না তুমি? ইশরাত, এতো ছোট কেন তুমি? আরেকটু বড় হলেই তো চলতো৷ পারতে না আরেকটু বড় হতে?
কী মুসকিল! আল্লাহ তাকে যখন এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, সে তখনই এসেছে। এখন বয়সে সাদমানের থেকে না হয় সে অনেকটা ছোট, তার দোষ কী ইশরাতের নিজের? সাদমানের কথায় তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে বসা থেকে কেবল উঠতে নিয়েছিলো ইশরাত, তখনই দু’হাতে তার কোমড় পেঁচিয়ে তার কোলে মাথা রাখলো সাদমান। থতমত খেয়ে ইশরাত কিছুক্ষণ ঝিম মেরে স্ট্যাচুর মতো বসে রইলো। সাদমানের জ্বর পুরোপুরি কমেনি। তাই তার শরীরে থাকা তাপমাত্রার আঁচ ইশরাত তার কোমড়ে অনুভব করতে পারছে তাকে পেঁচিয়ে ধরে রাখা সাদমানের দু’টো হাতের মাধ্যমে। সাদমানের তপ্ত নিঃশ্বাস তার হাতের উপর পড়ছে। ক্ষণে ক্ষণে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ইশরাতের শরীরে। সাদমানকে এখন এই অবস্থা থেকে সরানো প্রয়োজন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ইশরাত বললো
—-আপনি একটু দূরে সরুন প্লিজ। আমি ঘুমোত…ঘুমোতে যাবো।
—-কেন? গাড়িতে বসে বলেছিলে না আজকে রাতে আমার সাথে থাকতে চাও?
দাঁত দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বিভে চাপ দিয়ে রাখলো ইশরাত। ছিঃ ছিঃ! কী লজ্জার কথাবার্তা! আরে সে তো তখন একটা বলতে গিয়ে আরেকটা বলে ফেলেছে। পরে তো বলেই দিয়েছে যে সাদমানের বাসায় পারভীন সুলতানার সাথে থাকতে চায়। তবুও এখন এরকম লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতি তাকে ফেলার কোনো মানে হয়? চুপচাপ এসব কথা ভাবছিলো ইশরাত।
এরপর হঠাৎ তার মনে হলো, সাদমান আজকে কী হয়েছে না হয়েছে সেসব স্পষ্ট বলতে পারছে। সে কী এখন আসলেই জ্বরের ঘোরে কথা বলছে নাকী বাস্তবে?
—-এই আপনি কী সজ্ঞানে কথা বলছেন? জ্বর চলে গিয়েছে নাকী পুরোপুরি আপনার?
—-তোমার পছন্দের জায়গা কোনটা বলো তো? যেখানে ঘুরতে যেতে চাও?
—-এটা আমার প্রশ্নের উত্তর?
—-বান্দরবান? শুধুই বান্দরবান? নাকী আরও আছে?
—-আপনি হুট করে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে পড়লেন কেন? নিজেই তো বলে দিয়েছেন আমাকে ট্যুরে যেতে দেবেন না। তাহলে?
—-ট্যুরে যাওয়া ছাড়া আর কোনোভাবে ঘুরতে যাওয়া যায় না?
—-কেমন ভাবে যায়?
সাদমান আর কিছু না বলে বসা থেকে হাত ধরে টেনে এনে নিজের বুকের উপর ফেললো ইশরাতকে। ডান হাতে জড়িয়ে ধরে বললো
—-তুমি বাচ্চা, বাচ্চাই থাকবে। আমার হয়েছে যতোসব জ্বালা! ঘুমাও। আমার পেছনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছো। এমনিতেই ভোর হয়ে আসছে। রাতে তোমার ভালো ঘুম হয়নি আমি জানি। সকালে বাসায় গিয়ে কিছুটা ঘুমিয়ে নিয়ে পড়তে বসবে। সামনে বোর্ড ফাইনাল এক্সাম। যদি রেজাল্ট এতোটুকুও খারাপ হয়, তাহলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না।
সাদমানের কথাগুলো কিছুই কানে দিয়ে ঢুকছে না ইশরাতের। ঢুকবেই বা কী করে? বেচারি তো এখনো শকড্ হয়ে আছে। মৃদু কাঁপছে পুরো শরীর।
—-আমাকে ছাড়ুন না প্লিজ? রুমে যাই?
সাদমান কিছুই বললো না। শুধু ডান হাতের বাঁধন আরেকটু শক্ত করলো। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ইশরাত বুঝতে পারলো সাদমান তাকে ছাড়বে না। অগত্যা একটা শ্বাস ছেড়ে সেভাবে থেকেই নিজের চোখ বুজলো ইশরাত। মানুষটাকে সে আসলেই চিনতে পারলো না আর!
চলবে…
(]