অনুভূতিহীণ পর্ব -০৭+৮

#অনুভূতিহীন (পর্ব ৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আজ রাতে ফাহিম ভাইয়ার গায়ে হলুদ। আর কালকে বিয়ে। আজ সন্ধায় বের হবো আমরা। ফাহিম ভাইয়ারা ভাড়া বাসায় থাকে। যেখানে বড় বিয়ের আয়োজন করা কঠিন। তাই গায়ে হলুদ আর বিয়ে কোনোটাই বাড়িতে হবে না। কমিউনিটি সেন্টারে হবে সব।
আমরা প্রথমে যাবো ফাহিম ভাইয়াদের বাসায়। সন্ধার পর ওখান তেকে সবাই বের হয়ে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।

একটা লাল পাঞ্জাবি পরেছে সে। আমি একটা হলুদ রংয়ের শাড়ি। গায়ে হলুদ বলে কথা। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করা ঘড়ি ঠিক করা কত ঢং করছে সে। এদিকে আমি রেডি হয়ে বসে আছি। সব সময় শুনতাম মেয়েরা রেডি হতে সময় লাগে। অথচ আমি রেডি হয়ে দেখলাম সে এখনো রেডিই হলো না। আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
– এতোক্ষন লাগে আপনার রেডি হতে?
সে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে রইলো। তার পর বললো,
– কতোক্ষন লাগছে, এই পাঁচ মিনিটেই তো আমি রেডি হয়ে গেলাম।
– তো এর আগে আমাকে রেডি করিয়ে রাখলেন কেন? সেই বিকেল থেকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন।
– কারণ তো নিশ্চই আছে। এই ধরো তোমাকে যদি আমি এখন রেডি হতে বলতাম, তাহলে তুমি রেডি হতে লাগিয়ে দিতে কম করে হলেও এক ঘন্টা। বা আরো বেশিও লাগতে পারে। আর আমি রেডি হয়ে তোমার জন্য বসে থাকবো। যা একধমই বিরক্তিকর। তাই বের হওয়ার দুই ঘন্টা আগে থেকেই তোমায় রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলাম।
ওনার এমন অদ্ভুত যুক্তি দেখে মাথা গরম হলো আমার তাও চুপচাপ দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিশেষ করে তার মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইচ্ছে করছে তার ওই ছোট ছোট দাড়ি গুলোতে গিয়ে নিজের গাল ঘসতে। ইশ ভাবতেই লজ্জায় গাঁ শিউরে উঠে। নিজেকে নিজে বকতে লাগলাম আমি।
‘তোর নজর এতো খারাপ কেন আরু?
তখনি আবার মনে হলো,
‘ধুরু খারাপ হতে যাবে কেন? আমি কি পর পুরুষের দিকে তাকাচ্ছি? আমি নিজের স্বামীর দিকেই তাকিয়ে আছি। আজব।

এর মাঝেই রিদ ভাই আমার মুখের সামনে দুই আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজাতেই আমি চমকে উঠলাম। তার পর তিনি চোখের দৃষ্টি আমার দিকে রেখে একটু হাসলো। এর পর ইশারায় বললো, ‘এবার চলো’।
একটা শ্বাস নিলাম আমি। এই ব্যাটা হটাৎ হটাৎ এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটায় যা দেখলে অযথাই বুকটা কেঁপে উঠে।

আমি আর সে যখন সিড়ি দিয়ে নামছিলাম, তখন মামি দেখি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। হয়তো অবাক দৃষ্টি, নয়তো মুগ্ধ দৃষ্টি এটা।
এর পর এগিয়ে এসে আমার এক হাত রিদ ভাইয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এই হাত ছারবি না।

আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। হুট হাত তার এমন স্পর্শ গুলোয় যেন সারা শরির জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে যায়।
এর পর মামির থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম আমি। আর সে ড্রাইভিং সিটে। আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আমায় ড্রাইভিং শিখাবেন?
তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তুমি ড্রাইভিং শিখে কি করবে?
– এই ধরেন আমরা কখনো এভাবে বের হলাম। তখন বেশিক্ষন চালানোর পর আপনার শক্তি শেষ হয়ে গেলে আমি চালাবো।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– এতো অল্পতেই দম ফুড়িয়ে যাওয়ার চান্স নেই।
তার দৃষ্টির মুখোমুখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে ফেললাম। চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
,
,
ওদের বাড়ি এসে সবার সাথে চলে গেলাম কমিউনিটি সেন্টারে। ওদিক থেকে মেয়ে পক্ষ আসবে। একসাথেই হবে সব। ফাহিম ভাই আজ অনেক খুশি। ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাচ্ছে সারা জীবনের জন্য। ভাবতেই কেমন একটা অদ্ভুত ফিল হচ্ছে আমার। আমি ঠিক তার উল্টো। সারা জীবনের জন্য কাছে পাওয়ার পর তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। আচ্ছা, আমি কি সত্যিই তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? নাকি এটা মাত্রই একটু মোহ। বাড়ি ফিরে গেলে যখন ওর থেকে দুরে চলে যাবো, তখন এই মোহ কেটে যাবেনা তো?

মনকে প্রশ্ন করলাম, প্রেম আর মোহের মাঝে পার্থক্য কি?
মন উত্তর দিলো,
‘বাস্তবে যা প্রেম, তা কোনো মোহ নয়। প্রেমের জন্ম করুনা থেকে হয়। আর মোহের জন্ম, লোভ থেকে। প্রেম মুক্তি দেয়। আর মোহ আবদ্ধ করে। তাই প্রেম আত্মাত্বিক যা আত্মার সাথে মিশে যায়। আর মোহ একটা ঘোর, যা একটু পর কেটে যায়।
দুরুত্বই বলে দিবে, কে কাকে কতটুকু ভালোবাসি?

এখানেও রিদ ভাইয়ার সেই মেয়ে ফ্রেন্ড টাকে দেখে খুব রাগ হলো আমার। রিদ ভাইয়ার সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে। তা মোটেও সহ্য হচ্ছে না আমার।

গায়ে হলুদের পার্ট শুরু হবে ১০ টার পর। এখন কয়েকজন মেহেদী লাগাতে বয়াস্ত আর কয়েকজন ছবি তুলতে।
আর নিরব ভাইয়া সেই কখন থেকে একটা মেয়েকে ফলো করছে। রিদ ভাইয়ার কাছে শুনলাম এই নিরব ভাইয়া নাকি খুব ফাজিল, সাক্ষন মাথায় মেয়ে পটানোর চিন্তা ঘুরে।
হটাৎ ঠাস করে একটা চরের শব্দে আমি পেছনে তাকালাম। দেখি নিরব ভাইয়া গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর সামনে মেয়েটা।
আমার বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে। নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম আমি। নিরব ভাই হুট করে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
– ভাবি যা দেখেছেন প্লিজ কাউকে বলবেন না৷ বিশেষ করে রিদকে তো বলবেন ই না। কারণ এটা তারা শুনলে আমাকে নিয়ে সারা দিন মজা নিবে।
আমি একটু হেসে বললাম,
– কিন্তু আমি তো কিছু দেখিনি।
নিরব ভাই বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

আমিও হাতে মেহেদী দিলাম। মেহেদীর মাঝখানে হাতের তালুতে বড় করে লিখলাম ‘R’।
যা রিদ ভাইয়ার নামকে বুঝায়। আমি হাত একটু শুকানোর পর ধুয়ে নিলাম। এর পর রিদ ভাইয়ার সামনে গিয়ে ঘুর ঘুর করতে লাগলাম। হাতটা বার বাট ওর সামনে ধরতে লাগলাম। যাতে আমার হাতের দিকে তার চোখ পড়ে। কিন্তু ব্যাটা তো কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। খুব রাগ হলো আমার।
এবার নিজে গিয়েই তাকে বললাম,
– আমি হাতে মেহেদী দিয়েছি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না?
ওনি সোজা সুজি বললো,
– তো হাতে মেহেদী দিয়েছো এটা দেখার কি আছে?
– আচ্ছা দেখেন তো কেমন হয়েছে?
– হুম ভালো।
বলেই তিনি আবার ফাহিম ভাইয়ার কাছে চলে গেলেন। ওনার এমন ব্যবহারে পরচুর রাগ হচ্ছে আমার।
আমার মেহেদী রাঙা হাত দেখে প্রশংসা তো করলোই না। আচ্ছা প্রশংসা না হয় বাদ দিলাম। হাতে যে তার নামের প্রথম অক্ষর লিখলাম তা চোখে পড়েনি? একটুও বোঝার চেষ্টা করেনি এটার মানে টা?
মনে মনে তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম।
‘সালা নিরামিষের বাচ্ছা, আবেগ অনুভুতি বলতে কিচ্ছু নাই।’

রাগে সেখান থেকে চলে গেলাম। হাতে পানি দিয়ে ঘসতে লাগলাম জোড়ে জোড়ে। আর মনে মনে বলতে লাগলাম,
‘আমার কপাল এটা। আল্লায় আমারে এমন নিরামিষ একটা জামাই দিছে। ভালোবাসা দুরে থাক, আবেগ অনুভুতিও কিচ্ছু নাই। আজকেই তুলে পেলবো এই অক্ষর।
তখনই পেছন থেকে রিদ ভাইয়ের গলার আওয়াজ কানে এলো,
– এতো ঘসে লাভ নেই। ওটা এতো সহজে উঠবে না। বরং আরো ছরিয়া গিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট করবে।

এটা যেন কাটা গায়ে লবনের ছিটার মতো লাগলো।
,
,
কিছুক্ষন পর সকলের উদ্দেশ্যে নিরব ভাইয়া বলে উঠলো,
– হ্যালো এভরিওয়ান। বিয়ে মানেই হাসি-খুশি, আনন্দ, আর দুটি মানুষের জীবন একই সূত্র পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। চার দিকে এমন ঝাক ঝমক পূর্ণ পরিবেশ টা দেখতেই সুন্দর লাগছে খুব তাই না? হ্যা, আর এই ঝাক ঝমক পূর্ণ পরিবেশটা আরো মধুময় করে তুলতে, এখন সকলের মাঝে গান নিয়ে আসছে আমাদের প্রান প্রিয় বন্ধু রিদ।

আমার যেন খুশিতে হাত তালি দিতে ইচ্ছে করছে। এইবার বুঝো ঠেলা। নিরব ভাইকে আমার হাজার বার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে।
আমি নিশ্চিত, এই অনুভূতিহীন মানুষ টা কখনোই এতো মানুষের সামনে গান গাইতে পারবে না। আর সে গান পারে এটাও কখনো শুনিনি। যাই হোক পরের সিন দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি রিদ ভাইয়ের দিকে।
তখনই ফাহিম ভাইয়ের ছোট ভাই নাঈম একটা গিটার নিয়ে রিদ ভাইয়ের হাতে দিলো।
রিদ ভাইয়া ভ্রু-কুচলে বললো,
– গিটারও রেডি রেখেছো? তার মানে আগে থেকেই প্লেন করেই আমায় এই চিপায় আটকানো হয়েছে?
নাঈম হেসে রিদ ভাইয়ের দিকে গিটার টা দিয়ে সরে গেলো।
গিটার টা নিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে বসলো রিদ ভাই। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তিনি কি এখন সত্যি সত্যিই গান গাইবে?

গিটারের শব্দ কানে আসতেই আমার মনে হলো এটা নতুন নয়। যেন আগে থেকেই প্রেক্টিস করা এই সুর।
আমার দিকে তাকিয়ে রইলো রিদ ভাই। আর গাইতে শুরু করলো,

‘তুমি না ডাকলে আসবো না,
কাছে না এসে ভালোবাসবো না,,,,,
দুরুত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়,,,?
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়,,,,,,,
দুরের আকাশ নীল থেকে লাল, গল্পটা পুরোনো,,,

ডুবে ডুবে ভালোবাসি, তুমি না বাসলেও আমি বাসি,,,,,,,,,,,
#অনুভূতিহীন (পর্ব ৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

পুরোটা সময় ধরে আমি রিদ ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। চার দিকে সবাই হাত তালি দিচ্ছে আমি ছারা। আমি তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার এমন বলদের মতো চাহুনিতে মনে হলো খুব আনন্দ হচ্ছে তার। সে একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে উঠে গেলো।

একটু পর তাদের গায়ে হলুদ শুরু হবে। ফাহিম ভাইয়ার সাথে বসা তার হবু বৌ। এতোটা সুন্দরি নয় সে। গায়ের রং শ্যামলা। তবে মুখটা খুব মায়াবি দেখতে।
এই দিনটা অব্দি আসতে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে তাদের। ফাহিম ভাইয়ার বাবা কিছুতেই বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না। প্রথম’তো তিনি প্রেম করে বিয়ে বিষয় টা পছন্দ করেনা। আর দ্বিতীয়’তো, মেয়ের গায়ের রং চাপা।
সে চেয়েছিলো তার ছেলের জন্য পরীর মতো একটা মেয়ে নিয়ে আসতে। পরে ফাহিম ভাইয়ার জেদের কাছে হেরে বিয়েতে রাজি হয় তার বাবা।

ওদেরকে হলুদ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখি রিদ ভাইয়া দেওয়াল ঘেষে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার এমন চাহোনির অর্থ খুজে পেলাম না আমি। এক প্রকার বিব্রতকর অবস্থায় পরে গেলাম।
এর পর কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– তোমাকে আজ শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে আরশি। ইচ্ছে করছে তোমাকে সামনে দাড় করিয়ে এভাবেই তাকিয়ে থাকি অনন্তকাল।

খুশিতে যেন আজ বাকবাকুম করতে মন চাইছে আমার। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
– আমি জানি শাড়িতে আমায় সুন্দর লাগে। এতোক্ষন পর কেও এসে বলতে হবে না তা।

তাকে একটু রাগ দেখানোর চেষ্টা করলাম। করবো নাই বা কেন? বাড়িতে নিজে গিয়ে তার সামনে অনেক্ষন ঘুরেছি, কিন্তু এভাবে ফিরেও তাকায় নি। আর এখন আসছে পিরিত দেখাতে, হুহ্।

বাসায় যখন সে রেডি হতে বলে বাইরে চলে গেলো, তখন আমি শাড়ি টা নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম।
কারণ কখনো শাড়ি পরা হয়নি আগে। বাসায় যখন কেউ থাকতো না, তখন মায়ের শাড়ি অনেকবার লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের সাথে ধরে আয়নায় দেখতাম আমাকে কেমন লাগে। আবার দ্রুত রেখে দিতাম। কারণ হুট করে কেু এই অবস্থায় দেখে ফেলে তাহলে এর চেয়ে লজ্জা আর কিছু হবে না।
লজ্জায় কখনো মা কে বলিনি আমায় শাড়ি পরা শিখিয়ে দাও। তখন যদি শিখে নিতাম তাহলে এখন এভাবে দাড়িয়ে থাকতে হতো না।
আমি অনেক গল্প পড়েছি, যেগুলোতে হিরো এসে হিরোইনকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আমার বেলায়ও যদি এমন হয়? একটু পর যদি রিদ এসে যদি বলে, দাও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে আমার।
কিন্তু এ লজ্জা বেশিক্ষন থাকলো না এর পর মামি এসে বললো,
– কিরে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন, শাড়ি পরতে পারিস না?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, না মামি।

এর পর মামি একটু হেসে আমায় শাড়ি পরিয়ে দিলো। বললো,
– শাড়ি পরা শিখে নিবি। নতুন বৌ দের শাড়িতেই বেশি সুন্দর লাগে।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালাম।

এর পর যখন শাড়ি পরা শেষ হলো, তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম সত্যিই বেশ লাগছে আমায়। রিদ ভাইয়া ফেরার পর আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সে প্রশংসা লরবে। কিন্তু আমার সব অনুভুতি মাটির সাথি মিশিয়ে দিয়েছিলো ওই অনুভুতিহিন মানুষ টা। আমার দিকে তাকিয়েও স্বাভাবিক ভাবে নিজে রেডি হতে শুরু করলো। প্রশংসা নামক শব্দটা নেই তার কাছে।

তবে এখন পশংসা টা ভালোই লাগলো। আমার ভাবনার ইতি ঘটলো। তখন দেখলাম রিদ ভাইয়া অলরেডি সকলের সাথে মিলে কেক কাটছে। আর আমাকেও ডাকছে।
আমার রাগ হলো প্রচুর। যখন দেখলাম রিদ ভাইয়ার মেয়ে ফ্রেন্ড টা তার মুখে কেল তুলে দিচ্ছে। খুব হিংসে হচ্ছে আমার। কেন যানি মনে হচ্ছে ওই মেয়েটাকে একটা থাপ্পর মারতে পারলে ভালো লাগতো। কারণ আমি মেয়েটা একটু বেশিই জেলাস। নিজের জিনিসে কারো নজর সহ্য হয় না।
,
,
পর দিন বিয়ে হলো তাদের। বেশি মানুষ নেই। অল্প কয় জন মিলে বিয়েটা শেষ করে বৌ কে বাড়ি নিয়ে এলো। ফাহিম ভাইয়াদের বাড়ি এসে নানান কথা কানে আসছিলো আমার।
কেউ বলছে,
– ছবিতে যেম দেখেছিলাম বাস্তবে এতো সুন্দর না।
আবার কেও বলছে,
– এই মেয়ের জন্যই ফাহিম এতো কিছু করলো? যাই হোক কপালে যে আছে সে ই তো আসবে।
পাশে একজন বললো,
-এই মেয়ে আমাদের ফাহিমকে কিভাবে এতোটা বসে আনলো কে জানে? যে ফাহিমের এই মেয়েকেই লাগবে? এ তো ব্রামন হয়ে চাঁদ ছুয়েছে। জাদু টোনা করলো কিনা তাও সন্দেও।

আমার খুব রাগ হচ্ছে তাদের কথা শুনে। নতুন বৌ এসব শুনলে নিশ্চই অনেক কষ্ট পাবে। মানুষ গুলো এমন কেন?
একটা কালো ছেলে যদি কোনো সুন্দরি মেয়েকে বিয়ে করে, তখন তা সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। বলে, তোমাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে। আর যদি কোনো শেমলা মেয়ে ফর্শা ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে সবাই বলে জাদু টোনা করেছে নাকি?
হুম এটাই সমাজ। আমার কিছু বলতে ইচ্ছে হলেও চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। কারণ এখানে সত্য কিছু বললেও সবাই বলবে, মেয়েটার বয়াবহার ঠিক নেই। বড় দের মুকের উপর কথা বলে। এসব ভেবে চুপ করে রইলাম আমি। আর একটু দুড়েই ফাহিম ভাইয়া আর নিরব ভাইয়ার সাথে দাড়িয়ে তাকতে দেখলাম রিদ ভাইকে। আমি ওদিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখেই নিরব ভাই লজ্জায় চুপচাপ ওখান থেকে চলে গেলো। হয়তো কাল রাতের ঘটনাটার জন্য।
আমার হাসি পাচ্ছে খুব। বেচারা কত জোরেই না চর টা খেলো।
,
,
বিকেলে আমায় বাসায় পৌছে দিয়ে সে চলে গেলো হসপিটালে। আমি সব চেন্জ করে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম। গ্রিষ্মের গরম, অস্থির লাগছে খুব।
মামিকে দেখলাম নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। বেলনিতে এসে দেখলাম আকাশে ঘেঙ উড়ে বেড়াচ্ছে। গ্রিষ্ম থেকেই বৃষ্ট শুরু হয়। এর পর তো পুরাই বর্ষা কাল।

কেটে গেলো আরো দুদিন। আমার হয়তো যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এই ৮-১০ দিনে মানুষটা খুব কাছের হয়ে গেছে আমার। ওখানে ফিরে গিয়ে থাকতে পারবো কি না জানিনা। তবে এটা জানি, তাকে খুব মিস করবো আমি। খুব বাজে ভাবে মিস করবো।
আজ সন্ধায় মা ফোন দিয়ে বললো, আমার নিয়ে যেতে আসবে। খুশি হওয়ার বিপরিতে কেন যানি মন খারাপ লাগছে আমার। এখন মনে হচ্ছে বাবা মায়ের মতো এখন এটাও আমার একটা ফ্যামিলি।

সন্ধায়ই বাসায় চলে আসলো সে। আমি সেই সন্ধা থেকেই তার আশে পাশে ঘুর ঘুর করছি। হুটহাট ইচ্ছে করছে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। আবার কোনো এক অজানা কারণে নিজেকে বুঝিয়ে থামিয়ে নিই আমি।

রাতে ঘুমানোর সময় তাকে খুব করে বলতে ইচ্ছি হচ্ছে,
– আজ সোফায় না। আমার সাথে একই বিছানায় থাকবেন? আমি আপনার বুকে মাথা রেখে চুপটি মেরে ঘুমি থাকবো।
কিন্তু তাও বলতে পারছি না। চুপচাপ এক কাত হয়ে শুয়ে আছি।
রাত তখন অনেক গভির। আমার চোখে এখনো ঘুম ধরা দিচ্ছে না। বার বার মানুষটার দিকে তাকাচ্ছি। খুব শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। কিন্তু তার এই শান্ত ভাব যে আমার মাঝে অশান্তের ঢেউ তুলছে বার বার৷ সেটা কি সে জানে?

আর চেয়ে থাকতে পারলাম না। ওর কাছে চলে গেলাম। পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। খুব ঘুমাচ্ছে। কেও হয়তো তুলে নিয়ে গেলেও তার হুস থাকবে না। আমি চুপচাপ তার হাত টা সরিয়ে তার বুকের উপর শুয়ে পরলাম। চুপটি মেরে শুয়ে তার হৃদপিন্ডের শব্দ শুনতে লাগলাম। যা হওয়ার হোক। তার বুকে মাথা রেখেই ঘুমাবো আজ।

To be continue,,,,,,

~ …..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here