অনুভূতিহীণ পর্ব -২৩+২৪

#অনুভূতিহীন (পর্ব ২৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সারা রুম খুজেও ওই দিনের আঁকা নির্জনের স্কেচ টা খুজে পাচ্ছি না। মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে যাচ্ছে আমার। আর অন্য মানুষের পিকচার নিয়ে আমার মাঝেই বা কিসের এতো উত্তেজনা তা নিজেও বুঝতে পারছি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছি, ছবিটা আমার লাগবেই।
হুট করে মনে হলো ছবিটা একটা উপন্যাসের বইয়ের মাঝে রেখেছিলাম। তৎক্ষনাৎ গিয়ে বইটা খুলে দেখি ছবিটা এখনো সুরক্ষিত আছে। ছবিটা বাধিয়ে নিতে হবে। নাহলে কয়দিন পর রং ছড়িয়ে যাবে।

এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। মায়ের ফোন পেয়ে ছুটে বাসায় আসে রিদ। বুকের ভেতর ধুকধুক করছে৷ সারা শরির জুড়ে বিচরন করছে অস্থির উত্তেজনা। দেখে মা চুপচাপ বসে আছে সোফায়। আরশির কথা জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিচ্ছে না। একটু আগে ফোন দিয়ে বললো, আরশির কি যেন হয়েছে। তাইতো পাগলের মতো ছুটে এসেছে রিদ।
মায়ের এমন নিরবতা দেখে ছুটে রুমের দিকে হাটা ধরে সে। দরজা খোলাই ছিলো। রুমে ঢুকতেই চোখ পরলো বিছানায় পরে থাকা একটা রিপোর্টের উপর।
তা হাতে নিয়ে চোখ বুলাতেই স্তব্দ হয়ে যায় সে। উত্তেজিত সারা শরির মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যেতে শুরু করে।
বেলকনির দিকে এগিয়ে দেখে আরশি ময়না পাখি দুটিকে কথা শিখাচ্ছে। কয়দিন আগে তার এক্সামের রেজাল্ট দিলো। এ+ পাওয়ার খুশিতে আরশি বায়না ধরলো তাকে নিয়ে সারা শহর ঘুরাতে হবে।
তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে ফেরার সময় চোখে পরে একটা মানুষ পাখি বিক্রি করছে। তখনি আরশি বায়না ধরে তার ময়না পাখি পোষার অনেক ইচ্ছে। তাখন দুইটা ময়না নিলো একসাথে। একটা ছেলে ময়না আরেকটা মেয়ে ময়না। তার উপমা অনুযায়ি ছেলে ময়না টা রিদ আর মেয়ে ময়না টা সে। একটা খাচার মাঝে দুই জনের ছোট্ট সংসার।

ময়না পাখি নিয়ে ব্যস্ত আরশি। হুট করে পেছন থেকে আরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিদ। কোনো কথা বলছে না, একধম নিশ্চুপ হয়ে আছে।
আরশি তার দিকে ঘুরে বললো,
– কেমন দিলাম ধোকা টা?
– খুব বাজে,, আর একটু হলেই হার্টবিট বেরিয়ে আসছিলো।
রিদের কথায় মন খুলে হাসতে থাকে আরশি। রিদ পূনরায় আরশিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ, আ’ম সো হ্যাপি। থ্যাংক ইউ সো মাচ মাই হার্ট।

আরশিকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতেই দেখে মা ও মিঠি মিঠি হাসছে। রিদ একটু অভিমান নিয়ে বললো,
– এমন একটা বিষয় নিয়ে আমার সাথে মজা করতে পারলে মা? জানো আমি কতোটা টেনশনে ছিলাম? আর প্র্যাগনেন্সির মতো একটা সিরিয়াস বিষয় তোমরা লুকিয়ে রেখেছিলে? নিজেরা নিজেরা কখন টেস্ট করালে, কখন কি করলে আমায় একটিবারও জানালে না?
রিদের কথায় মা হেসে বললো,
– এটাও তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিলো। তাই কেও কিছু বলিনি।
রিদ একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– তোমরা সবাই আমার ইমোশন নিয়ে মজা নিতে পছন্দ করো।
তার কথায় মা আর আরশি দুজনই হেসে উঠলো।
,
,
দুই দিন হয়নি খবর শুনেছে। এর মাঝেই বাসায় আরশির জন্য একজন পার্সনাল নার্স রেখে দিলো রিদ। আর বাসায় কাজের লোক আরো বাড়িয়ে নিলো। আরশি কতো বার বুঝালো যে সে এখনো স্বাবাবিক, এখন এসব কিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
দিন যতই যাচ্ছিলো তার পাগলামি যেন ততোই বারছিলো। টাইমলি ফোন দিয়ে আমি খেয়েছি কি না, কি করছি এইসব নিয়ে ব্যাস্ত। প্রতি ঘন্টায় কম করে একবার ফোন দিতেই হবে তার।

ইদানিং অত্যাচারও বেড়েছে তার। আমার প্রিয় হলো ভাজাপোড়া, আর সে তা এখন আমার কাছেও আনতে দেয় না। ফল মুল দুধ ডিম এগুলোই এখন আমার নিত্য দিনের খাবার।
ওই দিন রাতে খেয়ে শুয়ে পরেছিলাম আমি। আমার পাশের ফ্রিচে ঢাকা এক গ্লাস দুধ পরে আছে।
যার জন্য সে আমায় টেনে বসি বললো ঘুমানোর আগে দুধ খেয়ে নিতে। কিন্তু আমি খাচ্ছিনা দেখে সে দুই আঙুল দিয়ে আমার গাল টিপে ধরে গ্লাস টা মুখের সামনে চেপে ধরে রাখলো। যতক্ষন তা শেষ হলো না ততোক্ষন ধরে রাখলো। ওটা ছিলো সব চেয়ে চরম লেভেলের একটা অত্যচার।
ও যখনই আমার সামনে আসতো তখনই কিছু ফ্রুটস কেটে নিয়ে আসলো। একদিন আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
– এতো খেলে তো আমি অল্প কয়দিনে মুটি হয়ে যাবো।
প্রতি উত্তরে সে বললো,
– মোটা হলেও কোনো প্রব্লেম নেই। এই সময়টায় তো আমার রং ঢং করার সময় না। আর কাউকে গিয়ে বলে বেড়াবো না যে, ভাই দেখেন এটা আমার বৌ। এখন তুমি কেমন তা দেখার বিষয় না। প্রয়োজন হলো তোমার শক্তির। হসপিটালে আমি কতো জনকে দেখেছি এই সময়টায় শক্তির অভাবে,,,,,
ওনি আর কিছু না বলেই থেমে গেলো। আমি একটু আগ্রহ নিয়ে বললাম, কি?
সে আমার মুখের সামনে আপেল ধরে বললো,
– তুমি বাচ্চা মেয়ে ওসব বুঝবে না। ওগুলো বড়দের বিষয়। তুমি চুপচাপ খেয়ে নাও।
,
,
শুধু সে পাগলামি করছে তা না। আমার শশুর রুদ্র চৌধুরী এর চেয়েও বেশি করছে। তার বংশে প্রথম নাতি/নাতনির আগমন। তার খুশির মাত্রাও যেন আকাশ ছোয়া। তার প্রথম নাতি/নাতনি যেই হবে, তাকে সে নিজস্ব হেলিকপ্টারে বাড়ি নিয়ে আসবে। যার জন্য কয়দিন আগে বড় একটা হেলিকপ্টার কিনেছে সে।
এই বাড়ির সবার পাগলামি দেখে আমার মাথা পুরাই হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। সবাই আমায় নিয়ে কি শুরু করেছে? যেমন বাবা তেমন তার ছেলে।

মাঝ রাতে চোখ পিট পিট তাকিয়ে দেখি আমার হাতের তালু পায়ের তালু মালিশ করে দিচ্ছে সে। আমি তৎক্ষনাৎ পা টেনে সরিয়ে নিয়ে বললাম,
– ছি ছি, কি করছেন আপনি।
সে দুই ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারায় বলে,
– চুপ কোনো কথা না। ঘুমাও তুমি।
তবুও আমি নাছোর বান্দার মতো বললাম,
– এমন পাগলামি করেন কেন? সারা দিন যেমন করেন মনে হয় যেন দুনিয়াতে শুধু এক মাত্র আপনার বৌ এর ই বেবি হবে।
সে আমার হাত মালিস করে দিতে দিতে বললো,
– তুমি কি বুঝবে বাচ্চা মেয়ে? আমার বৌ এর ই তো বেবি হবে, তাই টেনশন টা আমার বেশি। তোমার বৌ এর হলে তুমি বুঝতে।
তার কথায় আমি ভ্যাবলার মতো হা করে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– এ্যা,,,, মেয়েদের বৌ হয় কিভাবে? ওদের তো হয় স্বামী।
সে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। একটু হাসি পেলো আমার।
,
,
দিন যত যাচ্ছে শরিরটা ততো ভারি হতে লাগলো আরশি’র। রিদের গুরুত্বটাও বেড়ে গেছে আগের থেকে। আরশি আর রিদের মা বসে আছে সোফায়। টেনশনে এদিক ওদিন পায়চারি করছে রিদ।
রাত প্রায় ১ টা বাজে তখন। বাবার এখনো কোনো খবর নেই। ফোন দিলেও দেখে ফোন বন্ধ। রিদ সোফায় বসে মাকে বললো,
– বাবা কি কিছু বলেছিলো মা? যেমন, কোথাও যাবে বা আসতে দেরি হবে?
মায়ের মুখে টেনশনের ছাপ। সে বললো,
– না তেমন কিছু বলেনি। বললো, নির্জনকে অফিসে রেখে আজ সে তারাতারি ফিরে আসবে। কাল রাতে অনেক কিছুই বলেছিলো, যে আজ নিজে গিয়ে বাবুর জন্য খেলনা কিনে সারা ঘর ভরিয়ে রাখবে। কিন্তু এখন ১ টা বাজে এখনো কোনো খবর নেই।

চিন্তার ছাপ নিয়ে সবাই বসে আছে ঘরে। আর কিছুক্ষন পার হওয়ার পরই ফোন টা বেজে উঠলো তার। আন-নোন নাম্বার থেকে ফোন। রিদ ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে নির্জনের গলার আওয়াজ ভেসে আসে। রিদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
– হ্যা নির্জন বাবা কোথায়? বাসায় ফিরেনি এখনো। ফোনটাও বন্ধ তার।
ওপাশ থেকে নির্জন বললো,
– বাবা তো কিছুক্ষন আগে গাড়ি এ/ক্সি/ডেন্ট করেছে। অবস্থা খুব খারাপ।
রিদ উত্তেজিত হয়ে বললো,
– কিভাবে হলো, আর হসপিটালে নিয়ে যাও নি?
নির্জন আবারও স্বাভাবিক ভাবে বললো,
– অবস্থা খুব খারাপ, আপনিও আসুন। আমি আপনাকে লোকেশন টেক্সট করে দিচ্ছি।
মা আর আরশি বার বার প্রশ্ন করলেও কথা ঘুরিয়ে নিলো রিদ। বললো, অফিসের এক কর্মচারি এ/ক্সি/ডেন্ট করেছে। বাবা ওখানেই গেছে।
রিদের কথায় কিছুটা টেনশন মুক্ত হলো তারা।
রিদ দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,
‘ এতো রাতে বাবা কোথায় এ/ক্সি/ডেন্ট করবে? আর এ/ক্সি/ডেন্ট করলেও নির্জন তো কখনো কারো হ্যাল্প চায় না। নিজেই সব সামলে নেয়। কিন্তু আজ এমন কি হলো, যে নিজে কিছু না করে, আমাকেই ডেকে নিয়ে যাচ্ছে ওখানে? যাই হোক, এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই। বাবাকে বাচাতে হবে।
#অনুভূতিহীন (পর্ব ২৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফাকা রাস্তায় দ্রুত গতিতে ড্রাইবিং করছে রিদ। মনে হাজারও টেনশন তার। এই বুঝি বাবার কিছু হয়ে গেলো। এই বুঝি গিয়ে দেখলো, বাবার চার পাশে মানুষ ভিড় করে আছে, তার মাঝে র/ক্তাক্ত অবস্থায় বাবার লা/শ টা পরে আছে রাস্তায়। না কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সে।

নির্জনের দেওয়া লোকেশনে পৌছে গেলো সে। কিন্তু আশেপাশে তেমন কোনো মানুষ চোখে পরছে না তার। পুরো রাস্তা ফাকা। এ/ক্সি/ডেন্টের কোনো ছাপই বুঝা যাচ্ছে না।
নির্জনকে ফোন দিলেও ফোন ধরছে না সে।

গাড়ি রেখে ব্রিজের উপর উঠে দাড়ালো সে। দেখে একটা বাচ্চা ছেলে কয়েকটা পানির বোতল নিয়ে বসে আছে। হয়তো রাস্তায় হেটে হেটে পানির বোতল বিক্রি করে সে। কিন্তু এই মাঝ রাতে ছেলেটা এখানে কি করছে?
যাই হোক টেনশনে গলা শুকিয়ে আসলো, পিপাসা পেয়েছে খুব। ছেলেটার কাছে এগিয়ে গিয়ে এক বোতল পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো সে। তারপর ঢক ঢক করে কিছু পানি খেয়ে নিলো। ছোট ছেলেটা তাকিয়ে আছে তার দিকে।
রিদ পানির টাকা মিটিয়ে দিতেই সেখান থেকে চলে গেলো ছেলেটা।

ছেলেটার থেকে পানি পান করার পর থেকে মাথাটা প্রচুর ঝিমাতে লাগলো তার। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে বার বার।
ব্রিজের মাঝে দুই হাতে ভর করে দাড়ায় রিদ। ঘাপলা তো একটা নিশ্চই আছে।
ফোন টা বের করে আরশিকে ফোন দিলো সে। একবার, দুইবার,তিনবার রিং হয় কিন্তু ফোন ধরছেনা কেউ। এরপর মায়ের নাম্বারে ফোন দিলেও একই ফল পায়। হয়েছে টা কি সকলের? দ্রুত গাড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটে চলে রিদ।
গেটের সামনে আসতেই দেখে নাইট গার্ট গুলোও সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। আরশির নাম্বারে ফোন দিতে দিতে দৌড়ে ঘরের ভেতর চলে যায় সে।
ঘরে প্রবেশ করতেই দেখে সোফায় পরে থাকা আরশির ফোন বেজে চলছে। সারা ঘর খুজেও মা আর আরশির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা। রাগে মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে রিদের। টেবিলে রাখা কাঁচের একটা জগ আছরে মা/রে ফ্লোরে।
এর মাঝেই আবার ফোন এলো,,
– রিলেক্স মি. রিদ। এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?
– সবাই কোথায় নির্জন?
– আপনাকে তো আমি একটা ঠিকানা দিলামই, এসেছেন আবার চলে গেলেন,,, এতো পিছু ডাকলাম তবুও ফিরে তাকালেন না। হা হা, আবার আসুন,,,,,,
বলেই ফোন কে/টে দেয় নির্জন।

রাত তখন প্রায় ২ টা। গাড়ি নিয়ে আবার ছুটে চলে রিদ। আবার ব্রিজের উপর এসে নির্জনকে ফোন দেয় দেখে ফোন বন্ধ।
এর মাঝেই একটা সুন্দরি মেয়ে এসে দাড়ায় তার পাশে। সেই পানি খাওয়ার পর থেকে মাতাটা প্রচুর ঝিমাচ্ছে তার। ঠিক বেটিক কিছুই নির্নয় করতে সক্ষম হচ্ছে না সে।

মেয়েটা রিদের গালে হাত রেখে বললো,
– একা লাগছে খুব?
রিদ ঝাটকা মেরে মেয়েটাকে দুরে সরিয়ে বললো,
– কে আপনি? আর অসভ্যের মতো আচরণ করছেন কেন?
মেয়েটা আবারও মায়াবি গলায় বললো,
– আহারে,,, এমন করছেন কেন, আমি তো আপনাকে চিনি। এটাও যানি আপনার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। একা লাগাটাই স্বাভাবিক, চাইলে আমার সাথে চলুন। কেও কিছু জানবে না।
– কি সব বাজে বকছেন?
মেয়েটা একটা সিগারেট ধরায়। তারপর ধোয়া উড়িয়ে বললো,
– আপনি চাইলেও যেতে হবে আর না চাইলেও যেতে হবে।
রিদ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
– মানে?
মেয়েটার আর কিছু না বলে একটা স্প্রে ছড়িয়ে দেয় রিদের মুখের সামনে। এর পর আর কিছু মনে নেই তার।
,
,
চোখে মুখে পানি ছিটকে পরতেই চোখ খোলে রিদ। চার দিকে তাকিয়ে দেখে বিশাল।একটা ঘরে বন্ধি তারা। মনে হচ্ছে মাটির নিচে গড়া কোনো লুকানো ঘর। চার পাশে বন্ধুক হাতে দাড়িয়ে আছে অনেক ছেলে। সামনে আরশি আর মা দুজনই বাধা অবস্থায় পরে আছে। আর বিপরিত পাশে বাবা।
পরিস্থিতি বুঝে উঠতেও কয়েক মিলিট সময় লাগলো রিদের।
এর মাঝেই ওখানে প্রবেশ করে নির্জন আর ব্রিজের উপর বাজে অফার করা ওই মেয়েটি। তখন রাত প্রায় সাড়ে তিন টা। ভয়াবহ পরিবেশ। বাধা অবস্থায় ফুপিয়ে কাঁদছে আরশি। আরেক পাশে বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।

হুডি ও মাস্ক খুলে একটা চেয়ার টেনে রিদ ও আরশির মাঝখানে বসে নির্জন। হাতে একটা পি/স্তল তার।
রিদের এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা নির্জন নিজের মানুষ হয়ে এমন আচরণ করছে। রিদ নির্জনের দিকে এগিয়ে যেতেই নির্জনের এক ঘুসিতে মাটিতে ছিটকে পরে সে।
রিদের এমন অদ্ভুত চাহুনিতে হো হো করে হাসিতে সারা ঘর কাঁপিয়ে তোলে নির্জন। হাসি থামিয়ে বললো,
– অবাক লাগছে তাই না? জানি এখন সিনেমার মতো ইমোশনাল ড্রামা করবে। এই সেই হেন তেন,, বাট আই ডোন্ট কেয়ার। এটাই আমার পেশা। অনেক আগে থেকেই এই খেলা খেলে আসছি। মাস দুই মাসে শহরের বড় বড় মানুষ গুলো শেষ হয়ে যেত। কে করতো এতকিছু? জানতে চাও?
এতটুকু বলেই আবার হাসতে থাকে নির্জন। কিছুক্ষন পর হাসি থামিয়ে বললো,
– অনেক অপেক্ষা করেছি এই দিনটার জন্য। শুধু অপেক্ষায় ছিলাম একটু সময়ের। আরশিকেও মা/রতে চেয়েছিলাম অনেক ভাবে। মনে আছে আসিফের কথা? আমাদের ব্যাপারে সব জানার পর আসিফ সাহস করেনি আরশির দিকে চোখ তুলে তাকানোর। তবুও তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। কিভাবে? আমিই হেল্প করেছিলাম। কারণ আমি তখন বুঝে গেলাম আরশির প্রতি তুমি কতোটা দুর্বল। তাই আরশির নির্মম মৃ/ত্যু দেখে তুমি একটু হলেও শক্ড হবে। আর আমার কাজটা সহজ হবে। বাট পারিনি তার ওই বান্ধবি,, কি যেন নাম? ওহ্ হ্যা, সাবিহা। তাই আসিফকে দিয়ে তাকেও সরিয়ে দিলাম। যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি। আসিফের টিমকেও ফাঁসিয়ে নিলাম এর মাঝে। কারণ আরশির প্রতি আসিফের একটু হলেও ভালোবাসা জন্মেছিলো। তাই সেই দিক থেকে হয়তো আসিফও আমার পথের কাটা হতে পারতো। তাই সাবিহার সাথে তাকেও সরিয়ে দিলাম।
তবে তোমার একটা বোকামি কি জানো? যেদিন আরশি আমায় দেখেছিলো, সেদিন আরশির কথা তোমার বিশ্বাস করা উচিৎ ছিলো। তখন আমি চট্টগ্রাম না, ঢাকাতেই ছিলাম। তুমি আসলেই খুব বোকা। তবে আমার কাজ সুন্দরে শেষ হলে তোমাদের মা/রবো না। এমনিতেই ছেরে দিবো। তুমি হয়তো ভাবছো ছেরে দিলেও তোমাকে সব বলে দিচ্ছি কেন? কারণ হলো তুমি এসব জেনেও আমার কিছুই করতে পারবে না। কারণ আমার আসল পরিচয় তোমরা কেউই জানো না। আর যা জানো, তা আমার আসল পরিচয় না। মনে আছে ওই দিনের কথা, যখন তোমার বাবা আমায় অসহায় ভেবে তোমার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো। ওইটাও ছিলো আমার প্লেনে। তবে তখন আমার লিডার ছিলো আরেক জন। বাট এখন তাকেও সরিয়ে দিলাম আমি। এখন আমার কথাতেই চলে পুরো টিম। তবে টিমও এতো ছোট না আমাদের। সারা দেশে ছড়িয়ে আছে আমার লোকজন। সো কোনো প্রমান ছারা পুলিশ ইনফর্ম করেও লাভ নেই।
এর মাঝে রিদের বাবা দাত চেপে বললো,
– আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো তোকে বিশ্বাস করা।
রুদ্র চৌধুরীর কথায় হো হো করে হেসে উঠে নির্জন। কিচু কাগজ রুদ্র চৌধুরির দিকে ছুড়ে মেরে বললো,
– তোদের বাপ বেটার গোলামি করতে জন্ম হয়নি আমার। আমার জন্ম হয়েছে, সারা দেশে রাজ করবো বলে। চুপচাপ সাইন করে দে। কোনো এদিক সেদিক করার চেষ্টা করবি না।৷ এতোক্ষন পর্যন্ত আমার ভালো রুপটাই দেখিয়েছি। আর এখানে শুধু তোর সব পোফার্টির কাগজ। বাড়িটা নিলাম না৷ কারণ এতো বড় বেঈমনি করছি, তোর ছেলেরা থাকার জন্য বাড়িটা ছেরে দিতেই পারি। ওটা সামান্ন একটা জিনিস। ওটা দরকার নেই আমার।
রুদ্র চৌধুরী রাগ চেপে বলে উঠে,
– না করলে কি করবি তুই?
নির্জন হেসে বললো,
– তেমন কিছু না। শুনলাম আরশি নাকি প্রেগনেট, তবুও আমার মায়া দায়া একটা কম। আমার কথার নরচর হলে এখানে সবার সামনে আরশিকে নিয়ে একটু ফুর্তি করবে আমার ছেলেরা।
রিদ রাগে কিছু বলতে যাবে তখনি নির্জন হাত দিয়ে তামিয়ে বললো,
– বললামই তো আমার কথার বাইরে কিছু হলে আমিও খুব খা/রাপ হয়ে যাবো।
এর পর রুদ্র চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললো,
– চুপচাপ সাইন করে দিলে তোদেরই লাভ। আচ্ছা চল একটা ডিল করি। তুই সাইন করে দিলে তোর ছেলে, ছেলের বৌ, তোর স্ত্রী কাউকে কিছু করবো না আমি। ডিল পাক্কা।

চুপচাপ কাঁন্না করছে আরশি। রুদ্র চৌধুরী চোখ বুঝে একটা নিশ্বাস নিয়ে সব গুলো প্যাপারে সাইন করে দিলো।
নির্জন পেপার হাতে নিয়ে আবারও হাসিতে মেতে উঠে। আজ যেন তার জন্য শুধু হাসির দিবস।
হাসি থামিয়ে রুদ্র চৌধুরীর বুকের বা পাশে গুলি চালিয়ে দেয় নির্জন। রিদ চিৎকার দিয়ে উঠে দাড়াতেই কয়েকজন এসে তাকে বেধরম পি/টাতে শুরু করে। নির্জনের ইশারায় থেমে যায় তারা।
রুদ্র চৌধুরী মেঝেতে পরে ছটপট করছে। এক পাশে আরশি আর মা আরেকবাশে বাবা। মাঝখানে পরে আছে রিদ। কোন দিকে যাবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না সে। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বাবা হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,
– আরশি আর তোর মাকে নিয়ে চলে যা বাবা। বেঈমানের বেঈমানি দেখেছিস। কুকুরের মতো মরতেও দেখবি তাকে।
তার কথায় হাসার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো নির্জন।
রিদকে কখনো কাঁদতে দেখেনি কেউ। কিন্তু আজ মেঝেতে পরে অসহায়ের মতো কাঁদছে সে।

To be continue…..
To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here