#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই
#পর্ব-০৭
#লেখনী-সুরাইয়া ইসলাম সানজি।
আলাইনা নেশার ঘোরে আধো আধো কন্ঠে বলতে শুরু করলো-
[ কলেজে উঠতেই বান্ধবীদের দেখে ফুপির কাছে আবদার করেছিলাম একটা মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার জন্য, তখন ফুপিও আবদার রাখতে ফোন কিনে দেয়। বান্ধবীরা অনেক আগে থেকে ফেসবুক ব্যবহার করতে দেখতাম সেই থেকেই আমারও ইচ্ছা ছিলো ফোন কিনে ফেসবুক চালাবো।
হঠাৎ একদিন নিউজফিড ঘুরতে ঘুরতে দেখি কে জানি একটা পাবলিক গ্রুপে এড দিছে। ভীতরে গিয়ে দেখি একটা ভার্সিটির পাবলিক গ্রুপ। অনেক অনুষ্ঠানের ছবি ভিডিও পোস্ট করা তবে প্রত্যেক ছবিতেই একটা ছেলে সব সময় আছে। তখন কমেন্ট বক্সে গিয়ে দেখি হাজার হাজার কমেন্ট শুধু ছেলেটার প্রশংসায় ভড়া।
আগ্রহ নিয়ে অনেক খুজে ছেলেটার আইডি খুজে বের করি, নাম ছিলো “আরিয়ান চৌধুরী আয়াত” ছেলেটার সম্পর্কে জানতে জানতে আস্তে আস্তে ছেলেটার উপর দূর্বল হয়ে পরি, একসময় ভালোবেসে ফেলি, হাজার স্বপ্ন দেখলেও মনের মাঝে ভয়টা থেকেই যেতো হয়তো তাকে স্বপ্নেই পাওয়া সম্ভব, বাস্তবে না।
,
,
শীতের শুরুর প্রথম দিকে ফুপির সাথে প্রতিবারের মতো এবারও দেখা করতে আসি, কে জানতো এবারের গ্রামের আসাটা কাল হয়ে দাড়াবে।
একদিন সকালে রেনু খালার সাথে মাঠে ঘুড়ার সময় হঠাৎ দুটি চোখ দেখে থমকে যায়। মনে মনে আয়াত এখানে কেনো হাজার প্রশ্ন আসলেও তখন কিছু জানতে পারিনা।
আড়চোখে তাকিয়ে দেখি সে আমার ছবি তুলছে। সেদিনের মতো চলে যায়।
তারপর থেকে প্রতিদিন তাকে দেখিয়ে তার সামনে সামনে একই জায়গায় ঘুড়ে বেড়াতাম, তবে আয়াত যে আমার ছবি তুলতো আড়চোখে দেখলেও কখনো তাকে বুঝতে দেয় নাই।
ফুল কুড়াতে গিয়ে তাকে দেখিয়ে অকারনে জগড়া করা। তার সাথে পধ হেটে বাড়ি আসা, তাকে দিবো বলে বেলি ফুলের মালাটা আগে থেকেই বানিয়ে রাখা সবটাই যেন বাস্তব স্বপ্ন ছিলো।
আস্তে আস্তে মনে হতে থাকে সেও আমাকে ভালোবাসে। এতোদিনের লুকানো ভালোবাসা
পূর্নতা পাবে ভেবেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। তবে এ খুশি বেশি দিন রইলো না।
,
,
হঠাৎ একদিন বিয়ের প্রস্তাব আসে ফুপি আমাকে না জানিয়ে সবকিছু ঠিক করে পরে জানতে পারি সে ছিলো আয়াতের ফ্রেন্ড আদ্রিল।
তখন বিয়ের জন্য না করে দিলে আয়াত আমাকে মেসেজ দেয় বিলের কাছে দেখা করতে, কিছু জরুরি কথা বলবে বলে।
ভাবছিলাম হয়তো ভালোবাসে এটা বলবে, সুন্দর করে সেজে উৎফুল্ল মনে তার সামনে গিয়ে শুনে সে আদ্রিলের বিয়ের জন্য রাজী হতে অনুরোধ করতে আসছে।
যাকে ভালোবাসি তার থেকে অন্যকে বিয়ের করার কথা একটা মেয়ের জন্য কতটা কষ্টের তা একটা মেয়েই বুঝে। সেদিন রাগে অভিমানে তার কথায় রাজি হয়ে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দেই।
তারপর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায় আদ্রিলের সাথে, মনের লুকানো ভালোবাসা মাটি দিয়ে বাস্তব মেনে নেয়।
আদ্রিলের সাথে কথা বলা দেখা করা সবকিছু ঠিকই চলছিলো।
একদিন হঠাৎ আদ্রিলকে কিছু না বলে আদ্রিলের বাসায় চলে যায়। রুমের ভিতরে একটা মেয়ে আর আদ্রিলের কন্ঠে শুনে ধমকে দাড়াই।
—“আচ্ছা আয়াত যদি জানতে পারে সবটা, তখন কি হবে?”
—“নীশা তুমিও বড্ড বোকা, আয়াত আলাইনাকে বড্ড ভালোবাসে কখনো ওর সামনেও আসবেনা। আর
জানবে তো দূরের কথা।”
—“কিন্তু তুমি তো আয়াতের বেস্ট ফ্রেন্ঠ ছিলে তাহলে তুমি কেনো ওর ভালোবাসার মানুষ কে ছিনিয়ে নিয়ে কষ্ট দিতে চাচ্ছো?”
—“সুইটহার্ট, রাখো তো বেস্ট ফ্রেন্ড, কখনো ওর জন্য মনের তো করে কিছু করতে পারেনি, আমি যেটা বলতাম সব কিছুতেই ওর একটা বাক্য “না”। ভার্সিটিতে ওর পর সবকিছুতে আমি টপার ছিলাম কিন্তু সবাই ওর জয় গান গায়তো। সবাই আমাকে আমার নামে নয় আয়াতে বেস্ট ফ্রেন্ড নামে চিনতো।”
মেয়েটি আদ্রিলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে আবার জিঙ্গেস করে-
—“কিন্তু জান আয়াত তো আলাইনাকে কখনো বলেনি সে আলাইনাকে ভালোবাসে তাহলে তুমি জানলে কি করে?”
আদ্রিল মুচকি হেসে মেয়েটির কপালে চুমু দিয়ে বলে-
—“গ্রামে থাকার সময় একদিন খুব সকালে সবাই ঘুমিয়ে ছিলো তখন আমি ওঠে পাশে ফিরে আয়াত কে না দেখে খুজতে থাকি, কিছুখন পর আয়াত ফিরলে কোথায় গেছে জানতে চাইলে কথা এরিয়ে যায়, তখন থেকে সন্দেহ হতে থাকে।
আয়াতের হাতে ক্যামেরার উপর নজর যায়, আয়াত ওয়াশরুমে ডুকতেই ক্যামেরার থেকে আলাইনার ছবি দেখি তারপরেই যা করার প্লান মতো করি।”
আদ্রিলের কথা শুনে খিলখিলে হেসে ওঠে আবার গম্ভীর গলায় বলে- “সবাই তো হলো, আয়াতকেও কষ্ট দিলে এখন আলাইনাকে কবে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবে?”
—“আরে কি বলো সবে তো শুরু, আয়াতকে কষ্ট দিছি এবার আয়াতের ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দেওয়া বাকি। এঙ্গেজমেন্টের দিন বোকা আলাইনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওর সমস্ত দলিলে সই করিয়ে নিয়েছি এবার বিয়ে করো যতটুকু রুপ আছে তা কেড়ে নিয়ে তারপর ছেড়ে দিবো। ইফ ইউ নো, যাকে অবৈধ ভাবে পাওয়া যায় না তাকে বৈধ ভাবে পেতে হয়।”
এতোক্ষন বাহিরে দাড়িয়ে সব শুনে আলাইনার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।
তখনই বাসায় এসে ফুপিকে সব জানিয়ে সেদিনই শহরে চলে আসে। আয়াত তাকে এতো ভালোবাসতো তা সত্যেও এমন বন্ধুর বিয়েতে জোর করায় মনের মধ্যে আয়াতের জন্য ক্ষোপ জন্মায়।
তাই শহরে এসে নানান জায়গায় আয়াত কে খুজতে থাকে। একদিন টিভির বিজ্ঞাপনে আয়াতকে দেখে সরাসরি সেখানে না গিয়ে আয়াতের বাবার থেকে কথার ছলে কন্টাক্ট লেটার নিয়ে সেখানে যায়। কারন আলাইনা আগে থেকেই জানতো সে এখানে আসলে আয়াত তাকে রাখতে চাইবেনা।
কিন্তু আজ আয়াতের ফিওন্সি ন্যান্সির কথা শুনে একেবারে ভেঙ্গে পরে।]
আয়াত এতোক্ষন যাবৎ আলাইনার কথা শুনছিলো, সে ভাবতো সে একাই আলাইনাকে ভালোবাসে কিন্তু তার ভালোবাসার পিছনে যে এতোবড় গল্প ছিলো কে জানতো?
,
,
সকাল হতেই আলাইনা মাথায় হাতে দিয়ে ওঠে বসে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। রাতের সব কথা মনে করতেই মনে পরে আয়াত আর ন্যান্সির কথা। আলাইনা তড়িঘড়ি করে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই দেখে বিশাল বড় একটা সাদা রঙের বাড়ি, রাজপ্রাসাদের মতো সব কিছু সাজানো।
—“আয় আয় মা, তুই ওঠেছিস। আয়াত তোর কথা বলে গেছে। কালকে রাতে তুই এখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলি তাই তোকে আর ডেকে তুলেনি।”
আলাইনা সামনে বসা বৃদ্ধ মহিলাকে সালাম দিয়ে জানতে পারে মহিলাটা আয়াতের দাদি। মহিলাটা একটা সাদা কাপড় পড়া অনেকটা লম্বা দুধের মতো আলতো রং মনে হচ্ছে জান্নাতি হুর।
আলাইনা চলে আসতে চাইলে মহিলাটা জোর করে নাস্তা করিয়ে দেয়।
সেদিন আর অফিসে যায়নি আলাইনা যদিও আয়াত কয়েকবার ফোন করেছে কিন্তু আলাইনা ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
আর যাইহোক কারো মাঝে তৃতীয় জন হয়ে ডুকবে না।কালই অফিসে রিজাইন লেটার দিয়ে দিবে।
,
,
আয়াত আলাইনা কাজী অফিসে বসে আছে পাশে রাহি হতভম্ভ ভাবে বসে আছে। বেচারা চোখের সামনে আর কিছু দেখলে জ্ঞান হারাবে।
সকালে আলাইনা আয়াতের হতে রিজাইন লেটার দিতেই আয়াতের কিছুখন আলাইনার দিকে তাকিয়ে থেকে কোলে ওঠিয়ে সোজা বাহিরে গাড়ীর ভিতর নিয়ে আসে। আলাইনা যতবারই কোল থেকে নামতে চাইছে ততবার আয়াত জোর করে শক্ত করে ঝড়িয়ে ধরেছে।
গাড়ীতে বসে রাহিকে ফোন করে কাজী অফিসে আসতে বলে সোজাসুজি আয়াত গাড়ি নিয়ে কাজী অফিসে চলে যায়।
আয়াত জানতো আলাইনাকে বললেই সে বিয়েতে রাজি হবে না তাই রাহিকে দিয়ে আলাইনার উইক পয়েন্ট কাজে লাগিয়ে মেরেজ পেপারে সাইন করায়।
আয়াত আলাইনাকে জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছুয়ায়। আলাইনা এতোখন ছুটাছুটি করলে এখন পাথর হয়ে বসে আছে।
যে বসকে এতোদিন রাগী,অধর্য, রোবট বস বলে জেনে এসেছে সেই বসের আজ এই রুপে দেখে রাহি হতভম্বের মতো বসে আছে। বেচারা আর কিছুখন এখানে বসে থাকলে জ্ঞান হারাবে।
,
,
চলবে,,,,,
[প্লিজ সবাই সবার মতামত দিবেন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন ❤❤]