অন্তরালের কথা পর্ব ১

#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ১
.
.
তিহানের খুব পছন্দের একটি জামা পড়ে, পার্কের এক কোণের বেঞ্চে বসে আছে তানহা। সে যে একা বসে আছে তা না। তার পাশেই বসে আছে তিহান। তিহান যে তানহার খুব কাছের একটি মানুষ। তানহার প্রথম ভালোবাসা। তানহার প্রথম অনুভূতি। তানহার প্রথম প্রেমের পরশ। এই সবকিছুই যে তিহানকে ঘিরে। তবে এসব কিছুর মাঝে আরেকটি অনুভূতিও বিদ্যমান। তা হলো বিচ্ছেদের অনুভূতি। কোনো অনুভূতিরই যেন কমতি নেই তিহানকে ঘিরে তানহার। সবকিছুই যেন ভরপুর।
তানহা ও তিহান একটি কড়ই গাছের নিচে পেতে রাখা বেঞ্চে বসে আছে। তাদের পায়ের কাছে অসংখ্য কড়ই ফুল পড়ে আছে। সেখান থেকে কয়েকটি কড়ই ফুল তানহা হাতে নিয়ে, মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।
এদিকে তিহান এক হাত বেঞ্চের মাথায় মেলে অন্য হাত হাঁটুর উপর রেখে মাথা উঁচু করে কড়ই গাছে দিকে তাকিয়ে থাকে। তানহার যেমন বলার অবশিষ্ট কিছু নেই, তেমনি তিহানেরও যে কিছু বলার ভাষা নেই। চুপ করে থাকা ছাড়া। তারপরও বলতে যে ইচ্ছে হয়। এই দিনটি যদি সে আর ফিরে না পায়! সে কথাটি ভেবে।
মাথা উঁচু করে কড়ই গাছের দিকে তাকিয়েই তিহান বলল,
” বিয়েটা কোনোভাবেই কি আটকানো যায় না তানহা?”
তানহা হাতের কড়ই ফুলের পাপড়ি গুলো নাড়তে নাড়তে শান্ত গলায় বলল,
” এ প্রশ্ন তুমি অনেকবার করেছ আর আমিও বহুবার উত্তর দিয়েছি।কেন বারবার এই একই প্রশ্ন করছ? বিয়ে ভাঙা যাবে না কেন? অবশ্যই যাবে। তবে সেটা এমনি এমনি না। পালাতে হবে এখান থেকে। বুঝতে পেরেছ তিহান?”
” বুঝতে তো আগেই পেরেছি। যেদিন তোমায় প্রথম প্রশ্নটি করেছিলাম। কখনো ভাবতে পারিনি তুমি আমায় এভাবে রিফিউজ করে দিবে এই প্রস্তাবে। পরে ভেবেছিলাম হয়তো সময় পার হতে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। তবে তুমি যে তোমার সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছই না। তাই বাধ্য হয়ে বারবার আমাকে প্রশ্নটি করতে হচ্ছে।”
” বুঝেই যখন ফেলেছ, কেন জিজ্ঞেস করো?”
” ওই যে, ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টানেই যে জিজ্ঞেস করি বারবার। যদি ফিরে পাই তোমায় জীবনের তরে। ”
” সেই সুযোগ যে নেই তিহান। তুমি নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করেছ সেই সুযোগকে। তাহলে কেন সেই সুযোগ কে খুঁজে বেড়াচ্ছো? ”
” আচ্ছা, তুমি বলো। আমি কি আমার বড় ভাইকে রেখে ঘরে বিয়ের কথা বলতে পারবো? পারবো না। কারণ আমার বাবা-মা কখনোই সেটা মেনে নিবে না। এদিকে তোমার ফ্যামিলিও রাজি হচ্ছে না অপেক্ষা করতে। তাহলে আমি কি করবো বলো? আমার কি করার কিছু আছে ? হ্যাঁ একটি উপায় খোলা আছে আমার কাছে। সেটা হলো তোমায় নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। তবে তুমিই তো রাজি হচ্ছো না পালাতে। তাহলে কোন দিকে যাবো আমি বলো? তুমিই আমাকে পথ খুঁজে দাও।”
” কথাটি কি আদৌ ঠিক বলেছ তিহান? আমার ফ্যামিলি কি আমাদের সম্পর্ককে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়নি? সুযোগ দেয়নি? ”
” আমি কি বলেছি যে একেবারেই সুযোগ দেয়নি? তবে…”
তিহানের কথা থামিয়ে তানহা উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” তবে! তবে কি তিহান? তুমি আরও সুযোগ চাইছ তাইতো? কিন্তু.. কিন্তু কতো সুযোগ তিহান? কতো সুযোগ চাও তুমি? তুমি কি বলতে পারবে আমাদের রিলেশন নিয়ে কোনোদিন আমার পরিবার থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে? বলতে পারবে না। কারণ লাভ ম্যারেজ নিয়ে আমার ফ্যামিলিতে কখনোই তেমন কোন সমস্যা ছিল না। তবে হ্যাঁ, একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করা ছিল। যে বরাদ্দকৃত সময় বছর দেড়েক আগেই পার হয়ে গিয়েছে। সেই ইন্টার ১ম বর্ষ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক। আর আজ আমি অনার্স কমপ্লিট করে মাস্টার্সের স্টুডেন্ট। বয়স তো কম হয়নি। তাও বলছ আমার পরিবার অপেক্ষা করেনি! এখন আমি বলবো তুমি একটি স্বার্থপর। তুমি শুধু নিজেরটাই দেখেছ। একটি পরিবারের দুশ্চিন্তা দেখোনি। ”
” তুমি যেভাবে ভাবছো, আমি কিন্তু সেভাবে বুঝাতে চাইনি তানহা।”
” তুমি কি বুঝাতে চেয়েছ সে বেশ ভালো করেই জানি আমি। কমদিন তো হলো না তোমার সাথে আছি। কখন কী বলো এবং কী মিন করে বলো, তা আমার থেকে ভালো হয়তো কেউ জানবে না।”
” এখন তোমার ফ্যামিলি কি সত্যিই কিছুদিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না? বড় ভাইয়ার জন্য অলরেডি মেয়ে দেখা শুরু করেছে। কিছুদিনের মাঝে হয়তো বিয়েও হয়ে যাবে। তারপরই তো আমি তোমার কথা ফ্যামিলিকে বলে বিয়ের বন্দবস্ত করে ফেলবো। সেই অবধি কি অপেক্ষা করা যায় না? মাত্র তো কিছুটা দিন। ”
” তুমি তো খুব সহজেই কথাগুলো বলে দিলে। কিন্তু আমি…আমি কী করে বাসায় কথাগুলো বলব ভেবে দেখেছ? এই নিয়ে কম তো এই ধরনের কথা বলিনি। যখনি কেউ বিয়ের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছে তখনি বলেছি ” এইতো কিছুদিন পরেই বিয়ে করবো। ” কিন্তু কোথায়, আমি তো আমার কথা রাখতে পারলাম না! তাহলে কি করে আবারো বলতে বলছো তুমি? ”
” তানহা প্লিজ আমার কথাটা একটু বুঝার চেষ্টা করো। ”
” আগে আমার কথা তুমি বুঝার চেষ্টা করো তিহান। তুমি বললেই যে সবকিছু তোমার মতো হবে তা কিন্তু ন। হ্যাঁ, তোমাকে আমি ভালোবাসি কিন্তু তাই বলে যে বারবার তোমার হয়েই সাপোর্ট করবো তা কিন্তু নয়। এতো বছর তো তোমার হয়েই সাপোর্ট করে এসেছি। কিন্তু এবার যে না চাওয়া সত্ত্বেও ফ্যামিলির হয়ে সাপোর্ট করতে হবে। ”
কথাটি বলে তানহা হাতে থাকা কড়ই ফুলটি বেঞ্চের এক কোণে রেখে জোরে জোরে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। তার নিঃশ্বাস নিতে যে ভারী কষ্ট হচ্ছে। তানহা যে বেশ খানিকটা সময় ধরে নিজের কষ্ট, অভিমান, কান্না বুকে চেপে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু সে যে এভাবে কষ্ট আড়াল করতে পারে না। আড়াল করতে গেলেই তার বুক ব্যাথা করে নিঃশ্বাস চলাচলে সমস্যা হয়। তাই কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে গলা কাপিয়ে খানিকটা কাশি দিয়ে তিহানকে বলল,
” তুমি জানো বাবা ভীষণ অসুস্থ। এই নিয়ে ২ বার স্ট্রোক করে ফেলেছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন বর্তমানে বাবার শরীরের কন্ডিশন যেদিকে গড়াচ্ছে খানিকটা চাপ পড়লেই যেকোনো সময় আমরা বাবাকে হারিয়ে ফেলতে পারি। তারউপর কিডনি একটা টোটালি ড্যামেজ। আরেকটিও প্রায় ড্যামেজের পথে। আমাদের এতো অর্থও নেই যে কিডনি ট্রান্সফার করে বাবাকে সুস্থ করে তুলতে পারবো। তবে যেটা সামর্থ্যের মাঝে রয়েছে সেটা তো করতেই হয়। হতে পারি মধ্যবিত্ত ঘরে বড় হয়েছি। তাই বলে যে কিছু স্বপ্ন নেই, তা কিন্তু নয়। বাবার একমাত্র মেয়ে আমি। আমায় নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখে এসেছে বাবা। তার মাঝে একটি স্বপ্ন হচ্ছে, বেঁচে থাকতে যেন একটি সুপাত্রের হাতে আমাকে দিয়ে যেতে পারেন। আর আমার চোখে সেই সুপাত্র হচ্ছো তুমি। তবে তোমার পারিবারিক সমস্যার কারণে তুমি পারছো না আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে। আর আমার বাবা-মাও পারছে না তোমায় বিশ্বাস করতে। তারা ভাবছে তুমি হয়তো অন্যান্য ছেলের মতো শুধু সময় কাটাবে কিন্তু বিয়ে করবে না। তাইতো এতো বছর ধরে তোমার পেছনে ঘুরাচ্ছো। কিন্তু আমি তো জানি তুমি কি! আমার জানা যে ভুল নয়। তবে আমার জানা আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকতে বাদ্ধ। চাইলেও তাদের মাঝে বিচরণ করাতে পারবো না। তারা যে বিশ্বাসই করবে না। আর বিশ্বাস না করার কারণেই যে আমাকে আর সময় দিতেও তারা নারাজ। এবার আমাকে তারা বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। আমার মতামত জানার প্রয়োজন বোধও করবে না। এদিকে বাবার শারীরিক যে অবস্থা আমি নিজেও পারবো না বিয়েতে অমত দিতে।সে আমার ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক।”
” সবই বুঝলাম কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, তারা তো আমার হাতে তোমায় দিবে বলেই এতো বছর অপেক্ষা করেছে। তাহলে আমরা যদি পালিয়ে বিয়ে করে, তারপর যদি এসে তাদের কাছে ক্ষমা চাই তাহলেও তো হলো। তাই না? ”
” না, হলো না তিহান। যে বাবা-মা আমাকে এতোগুলো বছর সময় দিয়েছে। আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। সেই বাবা-মা’র মান সম্মান নিয়ে কি করে আমি খেলবো? এটা তখনি করা যেত যদি তারা আমাদের রিলেশন, আমাদের মেলামেশা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতো। কিংবা বিয়ের জন্য অমত করতো। কিন্তু তারা তো এরকম কিছুই করেনি। না দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা আর না করেছে হুকুমজারি। এমনকি তারা তো এখনো রাজি তোমার সাথে বিয়ে দিতে। তবে পরিবার নিয়ে আসতে হবে তোমায়। যেটা তুমি পারবে না। এখানে তো তোমার সমস্যা আমাদের নয়। তাহলে কি করে, কোন কারণে আমি পালাবো? কেন তাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলবো? কেন তাদের সমাজের চোখে ছোট করবো? ”
তিহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
” তারমানে তুমি আসবেই না। ”
” না, কখনোই না। তবে হ্যাঁ, যদি পরিবার নিয়ে আসতে পারো কথা দিচ্ছি ফিরিয়ে দিবো না। কিন্তু সে সময়টা কবুল বলার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। ”
” তুমি তো এতো শক্ত মনের ছিলে না, তবে আজ কেন এতো শক্ত? কিভাবে নিজেকে এতটা স্বাভাবিক রেখে কথাগুলো বলছো? তাও আবার চোখের জল ছাড়া। আচ্ছা তানহা, আগে যখন তোমাকে রাগানোর জন্য দুষ্টুমির ছলে বলতাম ” তোমার বর অন্য কেউ হবে আমি না। ” তখন তো আমাকে ইচ্ছেমত গালাগাল করে বুকের মাঝে হাজারো কিল-ঘুষিতে ভরিয়ে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে বুকের মাঝখানটাতে। বুকের মাঝে মুখ গুঁজে কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে যেতে। তবে আজ…আজ যখন সত্যি তোমার বর অন্য কেউ হতে যাচ্ছে কেন নিজেকে পাষাণের ন্যায় করে রাখছো? কেন নিজের মনের ইচ্ছাকে মেলে দিচ্ছো না? কেন বলছ না, ” আমার বর অন্য কেউ না। শুধু তুমি, তুমি, আর তুমিই। ”
চোখের কোণে জমে থাকা জলের কণাগুলো মুছতে মুছতে তিহান বলল কথাগুলো তানহাকে।
এদিকে তানহা সবকিছু বুঝেও যেন না বুঝার ভান ধরলো। সে জানে তিহান কাঁঁদছে। তারপরও তিহানকে সান্ত্বনা না দিয়ে নিজের মতো করে বলল,
” এখনের পরিস্থিতি যে একদমই ভিন্ন তিহান। আগের সেই পাগলামোর যে কোনো স্থান নেই আমার জীবনে। সবকিছু যে আমার হাতের নাগালের বাহিরে চলে গিয়েছে। তাই হয়তো এতটা স্বাভাবিক থাকতে পারছি। আর আরেকটা কথা কী জানো, যে মেয়ে জানে তার কিছুদিন পর বিয়ে যেখানে কি-না তার মতামতের কোনো ভিত্তি নেই। সেখানে সে কি করে তার পুরনো প্রেমকিকে বলবে যে, আমার বর অন্য কেউ না,শুধু তুমি। এটা যে কখনোই সম্ভব না। আর ঠিক সেই পরিস্থিতিটিতে এই মুহুর্তে আছি আমি। চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবো না, বলতে পারবো না। তাই নিজের মনের বাসনা গুলো মাটি চাপা দিয়ে সবকিছু হাসি মুখে মেনে নিচ্ছি।”
” কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো? সেই সাথে আমাকেও। কেন একটু সময় দিতে চাইছো না? তুমি কি জানো না, তোমায় ঠিক কতটা ভালোবাসি? তোমার জন্য এই আমি ঠিক কি পরিমাণ পাগল? তুমি কি জানো না? প্লিজ ফিরে এসো এই বুকে আমার তানহা হয়ে। ”
তানহার হাত দুটো ধরে তিহান কথাগুলো বলল। তিহানের হাত নিজের হাতের উপর অনুভব করতেই চোখ তুলে তাকালো তানহা। তিহানের চোখের দিকে নিজের চোখ পড়তেই তানহার বুকে যেন এক হাহাকার সৃষ্টি হয়। তিহানের যে এই পরণতি হতে পারে তানহা কল্পনাতেও ভাবেনি। যে তিহান নিজের ইমেজের জন্য সর্বদা ভাবগাম্ভীর্যের সাথে চলা ফেরা করেছে। পরিচিত ছাড়া সহজেই কারো সাথে কথা বলেনি। প্রয়োজন ছাড়া অকারণে হাসেনি। সেই তিহান কি-না পার্কের এই ভরপুর মানুষের মেলায় কাঁদছে! চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। সেকেন্ডের মাঝে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে শার্টের কলারের একপাশে। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তিহানের এই অবস্থা কিন্তু সেদিকে তিহানের বিন্দুমাত্র পরোয়া নেই। সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে ফিরে পাবার জন্য কেঁদেই যাচ্ছে। আর বিভিন্ন প্রলাপ পেরে যাচ্ছে।
তানহা তিহানের থেকে নিজের হাতটি ছাড়িয়ে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে তিহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দু’পা ভাজ করে নিচে বসে পড়ে। তিহান বেঞ্চে বসে আছে আর তানহা ঘাসের উপর। তিহানের হাঁটুর কিঞ্চিৎ পরিমাণ উপরে নিজের দু’হাত রেখে তারউপর মাথা ঠেকিয়ে নিজের মনে জমানো সকল কষ্ট একে একে ঢালতে লাগলো। ডুগরে ডুগরে বলল,
” কেন আমাকে এভাবে দূর্বল করে দিচ্ছো? আমিও যে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমারও যে কষ্ট হয় বুঝো না? আমি তো চাই তোমার বউ হতে। তোমার অর্ধাঙ্গিনী হতে। কিন্তু সে যে তুমি হতে দিচ্ছো না। আর আমিও পারছি না এতো স্বাধীনতা পাবার পরেও, পালিয়ে তোমায় আপন করে নিতে। সবকিছুই যে ভাগ্য তিহান। না এখানে আছে তোমার হাত আর না আছে আমার হাত। ”
তিহান তার দু’হাত দিয়ে তানহার দু’গাল আলতো করে ধরে মাথা উঁচু করে। তিহানের হাতের স্পর্শ পেয়ে তানহাও অশ্রুভেজা চোখে তিহানের দিকে চোখ মেলে তাকায়। তিহানও কাঁদছে অপরদিকে তানহাও কাঁদছে। সান্ত্বনা দেয়ার মতো কেউই নেই। না আছে তিহান সান্ত্বনা দেয়ার পরিস্থিতিতে আর না আছে তানহা সান্ত্বনা দেয়ার পরিস্থিতিতে। দু’জনের চোখ দিয়ে টলটল করে নোনজল পড়ছে। তারপরও তিহান তার ভালোবাসার তানহার দু’গালে হাত রেখে বলল,
” আজ তো আমাদের শেষ দেখা তাই না? আচ্ছা তানহা, পারবে আমায় ছেড়ে থাকতে? পারবে যে বুকের গন্ধ তোমায় পাগল করে সে বুকে হাহাকারে ভরিয়ে চলে যেতে? পারবে এই পথ চলাকে এইখানে থমকে দিতে? পারবে এই পার্কের এই কড়ই গাছটিকে ভুলে যেতে? পারবে নিজের ভালোবাসার মানুষটি ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষকে নিজের…… নিজের সবটা দিতে? ”
” না পেরে যে উপায় নেই তিহান। আমাকে যে পারতে হবে। যে কোনো মূল্যে আমাকে পারতেই হবে। ”
গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছিল তানহার। তারপরও খুব কষ্ট করে দু’লাইন বলে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো তানহা। আবারও বলল,
” আকাশে মেঘ করেছে তিহান। এটা তো বর্ষাকাল। তাই আবহাওয়ার বিশ্বাস নেই। যেকোনো সময় হুট করে বৃষ্টি নেমে যেতে পারে। তাই বলছি কী, বাসায় ফিরে যাও বৃষ্টি নামবার আগেই। আর আমিও চলে যাচ্ছি। কারণ এখানে এসেছি কম সময়তো হয়নি। আবার আকাশও মেঘলা। পরে দেখা যাবে মা-বাবা টেনশন করবে। তাই আগে চলে যাওয়াই ভালো। ”
” হুম,এখন কি তুমি বিদায় নিতে চাচ্ছো ? ”
বিদায়ের নামটি শুনেই তানহার মনে এক ঝড় বয়ে যেতে লাগলো। সেই ঝড়ের বৃষ্টি হিসেবে বয়ে যেতে লাগলো তানহার চোখের জল। এ বিদায় যে ক্ষনিকের বিদায় নয়। এ বিদায় যে আজ গিয়ে আগামীতে আসার অপেক্ষেয়মান বিদায় নয়। এ বিদায় যে চিরতরের বিদায়। যেখানেই কোনো আগামী আর না আছে কোনো আশার আলো।
বিদায় শব্দটি এক অসহ্য কষ্টদায়ক প্রভাব ফেলছে তানহার মনের মাঝে। গলা প্রচুর পরিমাণ ব্যাথা করছে তার। একটি কথাও যেন গলা দিয়ে বের হচ্ছে না। তারপরও আধো ভাঙা গলায় বলল,
.
.
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here