#অন্তরালে_ভালবাসা
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
৪
দুইদিন পর,,,,
অহিন বসে আছে হাসপাতালে ডাক্তারের সামনে।সাথে সিহাব ও আছে।অহিনের মনের ভেতর হাজার মন ভয় আশংকা জমে আছে।মনের মাঝে অসহ্য রকম যন্ত্রনা হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই সময়টা যদি সে মরে যেতো তবে বেশ হতো!একজন জুনিয়র ডাক্তার ভেতরে ঢুকলেন তার হাতে রিপোর্ট ডি এন এ টেষ্টের।অসম্ভব ভয় করছে অহিনের এসির বাতাসে ও ঘেমে যাচ্ছে।অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললেন।
মিঃঅহিন আপনার জন্য সুখবর। এই লাশটির ডিএনএ আপনার বন্ধু রাফিনের সাথে মিলেনি।
রাফিন এতোক্ষন দম বন্ধ করে এই কথাটি শুনছিলো। এতোক্ষনে দীর্ঘ সময় ধরে দম নিয়ে। সিহাবকে জড়িয়ে ধরে বলে বন্ধু আমার বুকের উপর থেকে কি পরিমাণ বোঝা নেমে গেছে তা তোকে বুঝায়ে পারবো না।
ডাক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুই বন্ধু বের হয়ে আসে।
সিহাব বলে, এই লাশটি যদি রাফিনের না হয় তাহলে রাফিনের জিনিস এর কাছে কি করে এলো?
আর রাফিন সেই বা কোথায়?
আমার মাথায় কিছুতে কিছু আসছে না অহিন।
অহিন বলে আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।অহিন কোথায়।আচ্ছা সিহাব অহিনের নাম্বরের লোকেশন লাস্ট কোথায় ছিলো তা তুই জানতে পারবি?
সিহাব বলে,হ্যাঁ অবশ্যই পারবো।
আচ্ছা তুই তাহলে এই নাম্বার গুলো নিয়ে দেখ লোকেশন খুঁজে বের করতে পারিস কি না?
সিহাব বলে আচ্ছা দেখবো।আরিশার কি অবস্থা অহিন?
অহিন নলে,ভালো নেই সিহাব,একদম ভালো নেই আরু।কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকে।আগের সেই চঞ্চলতা,চপলতা সব হারিয়ে গেছে আরুর কাছ থেকে।কেমন মনমরা হয়ে থাকে সবসময়। আমার এক বন্ধু হারিয়ে গেছে অন্যজন চুপচাপ হয়ে গেছে।আমি কেনো এখনো ঠিক আছি বলতে পারিস সিহাব?
তোকে তো ঠিক থাকতেই হবে অহিন।তুই ঠিক না থাকলে সবাইকে দেখবে কে?
আরিশাকে তোকে হাসিখুশি রাখতে হবে। তা যেকোন উপায়ে।কারণ এখন আরিশা যে ধাক্কা খেয়েছে সেটা কাটিয়ে উঠতে তোকেই সাহায্য করতে হবে।
একটা প্রশ্ন করবো অহিন?
হ্যাঁ কর অহিন বলে।
সিহাব জিজ্ঞেস করে তুই কি আরিশাকে আগে থেকে ভালবাসতি অহিন?
অহিন এই প্রশ্ন শুনে কিছুটা চমকায়।কিছুটা সময় চুপ থেকে বলে,স্মিত হেসে বলে ভালবাসা কি সেটাই তো বুঝিনা সিহাব।কাউকে ভালবাসবো কি করে?
সিহাব কিছু একটা ভেনে রহস্যকরে হেসে বলে,ভালবাসা শব্দটার অনেক ক্ষমতা অহিন।এটা ভালবাসা জন্য একদল মানুষ যখন নিজেকে শুদ্ধ করে ত্যাগ করে।
আবার এই ভালবাসার জন্য অন্য একদল মানুষ সংঘর্ষে জড়ায়।ভালবাসা পাওয়ার সুখে মন যতটা আনন্দে ভরে যায়।তারচেয়ে বেশী দুঃখ মানুষ তখন পায়, যখন সে ভালবাসা মানুষ পায় না বা প্রত্যাখান করে ভালবাসার মানুষটি।
তাই এই পৃথিবীতে যত রকম কষ্ট আছে, সুখ আছে, সবকিছুর পেছনে ভালবাসা নামক শব্দটা জড়িত।
অহিন জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকায় সিহাবের দিকে বলে,এসব কথা আমাকে বলার কি অর্থ সিহাব?
সিহাব প্রতিউত্তরে হাসে কিছুই বলে না।
সিহাব কিছু একটা ভেবে বলে,অহিন একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস?রিফানের বাবা মা বা তার পরিবারের কেউ আজ পর্যন্ত থানায় আসেনি তাদের ছেলের খোঁজ নিতে।ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হয় না তোর কাছে?
অহিন বলে,উনারা জানেন সবটা আমি দেখবো হয়তো আসছেন না।যেহেতু উনাদের ছেলে মিসিং তাহলে উনাদের তো কষ্ট আর চিন্তা দুটোই হচ্ছে তাই না?
সিহাব কেন যেন অহিনের মত ভাবতে পারে না।হয়তো সে পুলিশের মত পেশায় আছে বলে সাধারণ বিষয়কে ও জটিল মনে হচ্ছে।
আরিশাকে অহিনের মা সাজেদা বেগম সারাক্ষণ যত্নে রাখেন।একা থাকলে মন খারাপ হবে তাই আরিশার কাছে থাকেন তিনি।
আরিশা বসে আছে তার রুমের বারান্দায়। সাজেদা বেগম এসে পাশে বসে বলে,মারে তুই এমন মন মরা হয়ে থাকলে কেমন দেখায় বল।রাফিন কোথাও না কোথাও ঠিক আছে।কিছু যদি হতো আমরা ঠিম জেনে যেতাম।
একটু ধৈর্য ধর মা সংসারে মন দেয়ার চেষ্টা কর।সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরিশা উত্তরে শুধু উপর নিচ মাথা নাড়ায়।এমন সময় অহিন আসে রুমে।অহিন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা সেই লাশটা রাফিনের না মা।
মা আজ আমার খুব খুব খুশী লাগছে মা।আমার বন্ধু কোথাও না কোথাও ঠিক আছে।
আরিশা উঠে এসে অহিনকে বলে সত্যি বলছিস অহিন রাফিনের কিছু হয়নি?
মাকে ছেড়ে অহিন আরিশার দুইবাহুতে ধরে বলে, সত্যি সত্যি সত্যি!আরিশা খুশীতে অহিনকে জড়িয়ে ধরে। সাজেদা বেগম সেখান থেকে চলে যায় হাসতে হাসতে।
অহিন বলে আরু তুই চিন্তা করিস না।রিফান ঠিক আসবে।আর তুই ঠিক রিফানকে পাবি।
তুই ঠিক রিফানকে পাবি এই কথাটি বারবার বাজতে থাকে আরিশার কানে।
আজ কেমন যেন অপ্রস্তুত লাগছে নিজেকে অহিনের সামনে। কই আগে তো এমন হয়নি! আজ কেনো হচ্ছে! অহিন স্বামী বলে!নিজের মনে একথাটি ভাবতেই অবাক হয়ে যায় আরিশা। তার অবচেতন মন কি তবে নিজেকে অহিনের স্ত্রী হিসেবে ভাবা শুরু করেছে!কিন্তু এটা কি করে মানতে পারে সে কারণ একজনকে ভালবেসে অন্যজনের সাথ সংসার করার মানে তো তাকে ঠকানো। আর এটা কখনোই করতে পারে না আরিশা।
অহিন আরিশাকে নিজের থেকে আলগা করে বলে তুই চিন্তা করবি না আজ থেকে। আমি সিহাবকে বলে এসেছি।গোপন সুত্রে সিহাব রিফানকে খুজে বের করবে।
এই কয়েকটা দিন নির্ঘুম কাটানোতে খুব ক্লান্ত লাগছে অহিনের। তার উপর পায়ের কাটা জায়গাটায় ব্যাথা করছে।
অহিন ফ্রেশ হয়ে এসে বারান্দায় বসে, একটু পর আরিশা আসে দু কাপ কফি হাতে।
অহিনের পাশে বসে,কফির কাপ এগিয়ে দেয় অহিনের দিকে। অহিন চুপ করে কফি নিয়ে চুমুক দেয় কফিতে।
আরিশা বলে একটা কথা বলবি অহিন?
অহিন বলে কি কথা?
অহিন তুই কোন কারণে রাফিনের কিছু করিসনি তো?
কথাটা কানে যেতেই হাত থেকে কফির কাপ পড়ে যায় অহিনের।
অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরিশার দিকে। রাগে দুঃখে কোন কথা মুখ দিয়ে আসে না।
আরিশা বলে বাবা কাল কেনো তোকে বলেছিলো বাবার জন্য তোর এই অবস্থা! তোকে কিসে বাধ্য করেছে বাবা অহিন?
কই কিছু না।
কথাটা বলেই অহিন আরিশার হাত ধরে বারান্দা থেকে রুমে এগিয়ে দিয়ে, নিজে বারান্দায় এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
নিকোটিনের ধোঁয়ায় মনের কষ্টকে কমানোর চেষ্টা করে।আরিশা কি করে এটা ভাবতে পারে আমি রাফিনের কিছু করেছি!এতোটা ভালবাসি আমি তোদেএ দুজনকে আরু এর তুই কি না এমন কঠিন একটা কথা বললি!আমিতো তোদের শুধু এক করে দিতে চাই আর কিছু না।আমার তোদের সাথে কোন স্বার্থ জড়িয়ে নেই।যা আছে তা শুধু কেবলই তোদের এক করে দেয়া।
আজকে তুই আমাকে সর্বোচ্চ কষ্ট দিলি আরু।কেনো মানুষের জীবন এমন হয়ে যায়!যখন আমরা একসাথে কলেজে যেতাম, ইউনিভার্সিটিতে যেতাম।তিন বন্ধু মিলে খেতাম,গল্প করতাম সব কত সুন্দর ছিলো! কিন্তু আজ এই বন্ধুত্বের ভালবাসা কোথায় এনে দাড় করিয়েছে।
ইচ্ছে করছে সব ভেঙে দেই আরু কিন্তু তুক কষ্ট পাবি তাই কিছুই করলাম না।আমার জীবনের শেষ দিনটি ও আমার বন্ধুদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
আজ থেকে একটাই সংকল্প আমার রাফিনকে খুজে বের করা।আর খুজে ফেলেই তোদের দুজনকে এক করে দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো আমি। তোদের নাগালের বাইরে।আমার কোন বন্ধু লাগবে না।আমার কাউকে লাগবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই রাত কেটে যায় অহিনের।
অন্যদিকে এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিকা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার প্রেমিকের জন্য।জীবনের খেলায় কে কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না।
শুধু একটাই প্রশ্ন রাফিন কোথায়?
#অন্তরালে_ভালবাসা
৫
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি
স্কুলে তখন অহিনরা এসএসসি দিবে।টেস্ট পরিক্ষার পর একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় অহিন, রিফান।তাদের বন্ধুত্ব সেই ছোট বেলা থেকে।দুইবন্ধু খুব গাঢ় সম্পর্ক! প্রতিদিন কি ঘটে একে অপরকে বলতে না পারলে তাদের মনে শান্তি আসে না।
প্রথম যেদিন কোচিং যায় সেদিন ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার পর একটা মেয়ে আসে পরনে স্কুল ড্রেস আর দুটি বেনুনি করা।দেখেই মনে হচ্ছে স্কুল থেকে সোজা এসেছে এখানে।তাই চেঞ্জ করে আসতে পারেনি।
সেদিন অহিনের প্রথম নজর পড়ে আরিশার উপর। আরিশার দুই বেনুনি দুহাতে দোলাতে দোলাতে স্যারকে বলে” মে আই কামিং স্যার?
সেদিন ভরা ক্লাসে অহিন ফিক করে হেসে দেয় আরিশার দুই বেনুনি দোলাতে দেখে।এখনকার সময় কোন মেয়েই দুই বেনুনি করে কোচিং করতে আসে না।আর এসএসসি দিবে এমন মেয়ে তো করেই না।
অহিনের হাসির সাথে পুরো ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা সবাই হেসে দেয়।তখন কেউ খেয়াল করলে দেখতে পেতো এই দুই বেনুনি করা মেয়েটি কেমন অগ্নিমূর্তি হয়ে তাকিয়ে আছে অহিনের দিকে।মনে হয় তার দুচোখের অগ্নি দিয়ে অহিনকে পারলে এখনই শেষ করে দেয়।কিন্তু ক্লাসে স্যার আছে বলে তা আর করে না আরিশা!
অহিন আর রিফান পাশাপাশি বসে সবসময় আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।রিফান অহিনকে ইশারা করে হাসি থামাতে। অহিনের কেনো যেন চেষ্টা করেও হাসি থামাতে পারছে না।তারপর স্যারের ধমকে সবাই হাসি থামায়।
সেই প্রথম দেখা কে জানতো যে মেয়েটিকে নিয়ে অহিন এতোটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলো সে মেয়েটি একদিন হয়ে উঠবে তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু!
সেদিন ক্লাসের পর আর দেখা হয়নি তাদের।
পরেরদিন ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই চলে আসে আরিশা। অহিন রাফিন ও চলে এসেছে।আরও অন্যান্য স্কুলের অনেকে এখানে পড়ে তারাও এসেছে।
হঠাৎ অহিন বলা উঠে মেয়েরা পাগল!মেয়েরা ছাগল!
অহিন কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ একজন পেছন থেকে অহিনের হাতে কাঁটা কম্পাস বসিয়ে দেয়।
অহিন ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। পেছনে ফিরে দেখে আরিশা সেই অগ্নি চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে অহিনের দিকে।রিফান ততক্ষণে অহিনের হাতে বের হওয়া রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছে।অহিন আকস্মিকতা কাটতেই বলে এটা কি হলো?
আরিশা একহাতে কোমরে হাত দিয়ে অন্যহাতে কম্পাসটি নিজের জামায় মুছে নিলো। আরিশা তখন খেয়াল করলে দেখতে পেতো তার সাদা জামায় কারো রক্তের দাগ লেগে আছে।
আরিশার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি!কারন সে প্রতিশোধ নিয়েছে।কালকে যেভাবে এই ছেলে তাকে অপমান করেছে আজ তাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে।
আরিশা বলে মেয়েদের পাগল, ছাগল বলার শাস্তি! সুযোগ পেলেই মেয়েদের ছোট করা তাই না?
এরপর কোন মেয়েকে ছোট করার চেষ্টা করলে এই কাঁটা দাগটার দিকে তাকাবে বুঝলে? তাহলে আর কোন মেয়ের পেছনে লাগতে ভয় পাবে!
সেদিন কে জানতো আরিশার সেই কথাই ঠিক হবে তবে অন্যভাবে। অহিনকে সেই দাগ কখনও ঘুমাতে দিবে না।আর এই দাগই তাকে বারবার মনে করিয়ে দিবে।কি এক তেজি,সাহসী, মেয়ে তার জীবনে এসেছে।এই দাগই হয়ে যাবে মনের দাগ!মনের যন্ত্রনা!
এমন এক দাগ যা পৃথিবীর সব ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে ও মুছা যাবে না।এরকমই এক কঠিন দাগ!
অহিন আর রাফিন হা হয়ে আছে এই মেয়ে কতটা ভয়ানক! চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলেকে কম্পাস দিয়ে কেটে দিলো! তাও না বুঝে বিনা অপরাধে!
রিফান বলে আপনি ভুল বুঝছেন, অহিন আপনাকে বলেনি কিছু। অহিনতো,,,, এই কথাটা শেষ করার আগে রিফানকে আরিশা বলে আমাকে না বললে মেয়েদের কথা তো বলছে।সেই একই কথা!
অহিন রেগে গিয়ে কিছুই না বলে ব্যাগ হাতে বের হয়ে যায় ক্লাসরুম থেকে।
অহিন চলে যাওয়ার পর রিফান বলে অহিন না আপনাকে কিছু বলছে, না মেয়েদের,ও শুধু এই টেবিলে লেখাটা পড়েছে আর কিছু না।বলেই রিফান বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে।সেদিন তারা আর ক্লাস করেনি।
আসলে কেউ টেবিলে লিখেছিলো মেয়েরা পাগল! মেয়েরা ছাগল!
অদ্ভুত ব্যাপার হলো সবটা জেনেও এই অদ্ভুত ভয়ানক মেয়েটির একটু খারাপ ও লাগেনি।বরং সে তার কাজের জন্য খুশী হয়েছে।এমন এক হাসি তার মুখে মনে হচ্ছে সে কোন ভুল করেনি বরং অন্যের ভুলের শাস্তি দিয়েছে!
এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়। অহিন, রিফান, ক্লাস করে চলে যায়।কিন্তু আরিশার দিকে তাকায় ও না।
আরিশাও এটা ভেবে খুশী হয় যে ছেলে দুটো তাকে ভয় পেয়েছে।
হঠাৎ একদিন মেয়েটা ড্রেস ছেড়ে সেলোয়ার কামিজ পড়ে আসে।গাঢ় নীল রঙের জামার সাথে সাদা ওড়নায় নানা রঙের ফুল তোলা।সেই ওড়না সারা বুকময় ছড়ানো।
চুলে পেন্সিলের মত!অথবা হতে পারে পেন্সিল এমন কিছু দিয়ে পেছনে খোপা করা।
সামনের থেকে কয়েকটি চুল একটা ছোট ক্লাকছার দিয়ে আটকানো। কপালময় ছোট ছোট কাটা চুলগুলো বেরিয়ে আছে!
ঠিক এই মুহুর্তে অহিন, রিফান ক্লাস থেকে বের হয় পেন্সিল কিনে আনবে বলে।
হঠাৎ দুজনে থমকে দাঁড়ায় সিড়িতে একটা হলুদাভ ফর্সা মেয়ে উপরের দিকে একটা একটা সিড়ি বেয়ে উঠে আসছে।পাশে একটা মেয়ের সাথে কি যেনো বলছে আর হাসছে।অদ্ভুত সুন্দর সেই হাসি!তার হাসির কাছে হয়তো মোনালিসা ও হার মেনে যাবে।এতোটাই অদ্ভুত ভয়ংকর হাসি। সেই অদ্ভুত ভয়ংকর মেয়ের!
যদি অহিনের হাতে ক্যামেরা থাকতো তাহলে হয়তো এই অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যটি ছবি তুলে রাখতো। আর দেখতো বিশ্ববিখ্যাত সেই মোনালিসার হাসির সাথে মিলিয়ে। কেনো এই হাসিটা সেই হাসির চেয়ে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে!
রিফানের কি মনে হলো জানিনা।কিন্তু অহিনের মনে হলো সেই মুহুর্তে সেই দৃশ্যটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য!
এমন সুশ্রী সুন্দর দৃশ্য বুঝি আর হয় না?
সেই মেয়েটি আর কেউ নয় আরিশা।
হঠাৎ কারো কথায় ঘোর ভাঙে অহিন রিফানের।দুটো ভাগিনী চোখ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাদের সামনে।
হঠাৎ অহিনের আর একটি কথা মনে হলো। এই মেয়ের চোখগুলো তো মারাত্মক সুন্দর!
কাজল টানা চোখে কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগছে এই মেয়েটিকে।আজ এমন লাগছে কেনো! কই সেদিন তো এমন লাগেনি! সেদিন এই মেয়ের মাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মেয়েটির ছায়া দেখেছিলো সে।তবে আজ কি হলো? একরাশ মুগ্ধতা কাজ করছে মনে।
আজকে আবার এই অদ্ভুত মেয়েটি তার মাথায় গুজে রাখা পেন্সিলটি হাত দিয়ে টেনে খুলে নেয়।আর মাথাকে ডানে বায়ে নেড়ে চুলগুলো ঠিক করে নেয়!
তার পুরো পিঠময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে তার কোমর অবধি লম্বা চুলগুলো! এই দৃশ্যটা যেনো আরও সুন্দর! আরও আকর্ষনীয়!মেয়েটা হঠাৎ অহিনের চোখ বরাবর পেন্সিলটি ধরে বলে, এই ছেলে এভাবে কেবলার মত তাকিয়ে থাকলে একেবারে চোখ গেলে দিবো!একদম চোখের মনি গুটে বের করে নিয়ে আসবো!
রিফান বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে যায়।এই মেয়ে কি মারামারি ছাড়া কিছু জানেনা নাকি!।
এতো সুন্দর একটা মেয়ে এভাবে ঝগড়া কিভাবে করতে পারে?
আর অহিনের আজ আরিশার এই কথাগুলো ও ভালো লাগছে।যখন কেউ কারো প্রতি মুগ্ধ হয়, তখন বোধহয় এভাবেই তার সব ভালো লাগে!
অহিনের কোন নড়াচড়া না দেখে আরিশা সত্যিই অহিনের পেটের মধ্যে পেন্সিল ঢুকিয়ে দেয়।
অহিন ব্যাথায় আহ!বলে উঠে।
আরিশা কোমরে একহাত দিয়ে,অন্য হাতে পেন্সিল অহিনের মুখের সামনে রাগী রাগী মুখ করে ধরে বলে,কম্পাসের ক্ষত শুকিয়ে গেছে মনে হয়!তাই আবার পেন্সিলের খোচা খেতে ইচ্ছে করছে।
রিফান সরি বলে অহিনকে নিয়ে সরে একপাশে যায় সিড়ির।
আর আরিশা অহিনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচিকেটে উপরের দিকে চলে যায়।
অহিন পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে আরিশা ও তাকিয়েছে।আর সে তাদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের এক কোনের জিহ্বা বের করে ভেংচি কাটে। এক চোখ মেরে উপরের দিকে উঠে যায়!
অদ্ভুত সেই দৃশ্য!উঁহু শুধু অদ্ভুত নয়,ভয়ংকর অদ্ভুত সুন্দর সেই দৃশ্য!!
অহিন তো তখন জানতো না ভালবাসা কি!আর কাকে বলে?
কৈশোরে পা দেয়া সেই তিনটি ছেলে মেয়ে সেদিন কি জানতো জীবন তাদের নিয়ে কত ভয়ংকর খেলা খেলবে!
///////////////////////////////////////////////////////////////////
অহিন এতোক্ষন ভেবেছিলো সেই অতীতের কথা।
পরম যত্নে হাতের সেই কম্পাসের দাগটায় হাত বুলায়।চুমু খায় সেই দাগটায়।চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নেয়।রাফিনের কথা মনে হয়ে অহিনের চোখের কোনে জল গড়িয়ে পড়ে।ছোটবেলা থেকে এতো ভালবাসেছে তোকে রাফিন তারপর ও তুই কেনো হারিয়ে গেলি আমাদের থেকে।আমি সহ্য করতে পারছি না আর।তুই চলে গিয়ে আমাকে আরুর কাছে অপরাধী করে দিলি।আমার পাশে থাকলে তুই। আমি সাহস পেতাম কিন্তু তুই তো আমার মেরুদণ্ডই ভেঙে দিলি চলে গিয়ে।অহিনের হাতে তার ফোনের স্কিনে ভেসে আসছে দুই বন্ধুর ছবি।
অহিন বুকের সাথে সেই ছবি লেপ্টে ধরে কাঁদতে থাকে।
অহিন আজকাল আরিশার সাথে খুব একটা কথা বলে না।এড়িয়ে চলে আরিশাকে।
আরিশা কথা বলতে চায়।কিন্তু অহিন ব্যাস্ত থাকায় সুযোগ হয়ে ওঠে না।আরিশা নিজের মনকে শান্ত করতে পারে না।কখনও মনে হয় অহিনকে সন্দেহ করে খুব ভুল করেছে।আবার কখনও মনে হয় ঠিক করেছে।বড্ড অশান্তি চলে আরিশার মনে।
অহিন রাতের বেশীর ভাগ সময় তার লাইব্রেরী রুমে থাকে।আরিশার ঘুম আসলে তারপর আসে এই ঘরে।
আরিশা পানি আনতে বের হয়েছে ড্রয়িং রুমে যাওয়ার জন্য।হঠাৎ কারো কান্নার ধমক শুনতে পায় সে।ধীর পায়ে এগুতে থাকে লাইব্রেরী রুমের দিকে।দরজা খোলাই ছিলো। অনেক রাত বলে অহিন দরজা লাগায়নি।
আরিশা ধীর পায়ে যায় অহিনের কাছে। অহিন আরিশাকে দেখে চমকে উঠে। চোখের জল লুকানোর ব্যার্থক চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।
আরিশা অহিনের কাঁধে হাত দিয়ে বলে এই অহিন তুই কেন কাঁদছিস?কিরে বল কি হয়েছে?
অহিন হাসার চেষ্টা করে বলে কই কি হবে!তুই ঘুমাচ্ছিসনা এখনো? এতো রাতে কি করিস এখানে?
আরিশা বলে, আমাদের কি দোষ অহিন বলতো নিয়তি কেনো আমাদের এতো শাস্তি দিচ্ছে!আমরা তো খুব ভালো ছিলাম।তিন বন্ধু মিলে জীবন ছিলো চমৎকার! আর এখন আমাদের জীবন এমন কেনো হয়ে গেলো?
রিফান কোথায় চলে গেলো! আমি তোকে সন্দেহ করছি!এসব কেনো হচ্ছে অহিন?
আরিশা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না।জীবন কত সুন্দর ছিলো তাদের।আর আজ তাদের জীবন কোথায় নিয়ে এসেছে তাদের!অহিন আরিশার মুখ দুহাতে ধরে আরিশার চোখে চোখ রেখে বলে তুই কাঁদিস না প্লিজ।আমি সইতে পারি না।তোরা দুজন যে আমার কাছে কি তোরা তা কোনদিন বুঝতে পারবি না।
আরিশা অহিনের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে থাকে বেসামাল হয়ে পড়ে।
আরিশা কান্না থামানোর চেষ্টা করে বলে জানিস অহিন রাফিন থাকলে আমাদের ভালবাসায় পূর্ন একটা সংসার হতো। দুজনের খুনসুটি আর ভালবাসায় জড়ানো সম্পর্ক।আর রাফিনের ভালবাসায় আদরে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হতো!কাঁপা কাঁপা গলায় এটা বলেই আরিশা সামনে থাকা অহিনের ঠোঁটে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়।
অহিন কল্পনা ও করেনি আরিশা এমন কিছু করতে পারে।অহিন চেয়েও আরিশাকে দূরে সরাতে পারলো না।কোন এক অজানা টানে জড়িয়ে ধরে আরিশাকে।
আরিশা অহিনের বুকে নখের আঁচড়ে ক্ষত করে দেয়।অহিনের ব্যাথা লাগলেও অহিন টু শব্দ করে না।আরিশার কষ্টই তার কষ্ট। আরিশার জন্য সব করতে পারে এই নখের আঁচড় তো সেই তুলনায় কিছুই না।
আরিশাতো অহিনকে সবসময় ক্ষতই দিয়ে এসেছে। কখনো কম্পাসের কখনো পেন্সিলের আর কখনো বা নখের!এই আর নতুন কি।
আরিশার এমন আক্রমণে অহিনের বুকের ভেতরটায় কি যে যন্ত্রণা শুরু হয় তা যদি আরিশা জানতো। তাহলে হয়তো এমনটা করতোনা।
আজ অহিন জানলো আরিশা তার কাছে কতটা! আরিশা তার কাছে কি!
ভালবাসার দহনে পুড়ে যাচ্ছে দুটি হৃদয় যে হৃদয়ের কান্না কেউ শুনছে না।
বুকের ভেতরটায় যা স্বস্তি দেয় না।
ভালবাসা এমন কেনো? কেনো এতোটা পোড়ায়? কেনো এতোটা যন্ত্রনা দেগ!
তবে কি ভালবাসার ধর্মই পোড়ানো!
চলবে,,,,,
চলবে,,,,