অন্তিম প্রণয় পর্ব -০১

অচেনা এক রমণী অ’ন্ধ’কা’র বারান্দায় হিয়ানের শ’ক্ত বা’হু দেয়ালের সাথে চে’পে ধ’রা’র চে’ষ্টা চালাচ্ছে। হিয়ান রমণীকে তার কাছ থেকে সরাতে চাইছে। তার বন্ধুকে খুঁজতে এসেছিল সে এই রুমটিতে। খ’চ’খ’চ আওয়াজ অনুসরণ করে বারান্দায় আসা হয় তার। ‘কে ওখানে?’ প্রশ্নটি ছুঁ’ড়ে হিয়ান বারান্দার দিকে এগোয়। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুনরায় একই প্রশ্ন করল। বাঁ পা ফে’লে বারান্দায় প্রবেশ করতেই আ’চ’ম’কা রুম সহ সেখানকার লাইট অফ হয়ে গেল। এমন ঘ’ট’না’য় হিয়ান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। ভূ’তে বিশ্বাসী নয় সে। বিয়ে বাড়িতে এমন ঘ’ট’না ভৌ’তি’ক বলে ঠেকছে না তার মনে। প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করার পূর্বেই হঠাৎ রিনিকঝিনিক চুড়ির শব্দ জড়িত দু হাত তার বক্ষে হাত রেখে দেয়ালের সাথে শ’ক্ত’পো’ক্ত ভাবে মিশিয়ে ধ’র’ল। হিয়ান হাতটি সরাতে চাইলে রমণীর হাত থেকে রিনিকঝিনিক শব্দ তী’ব্র হতে থাকে। চুড়ির শব্দ বুঝতে পেরে আপাতত হিয়ান তাকে রমণী হিসানে গন্য করল। হিয়ান তার হাত বুকের কাছ থেকে সরানোর চেষ্টায় বে’কু’ল হয়ে উঠে। কিন্তু সেই রমণীও প্রবল ব’ল প্রয়োগ করে হাত স’রা’তে দিচ্ছে না। হাত সরানোর ফলে হা’তা’হা’তি’তে তার চুড়ির সাথে অন্য চুড়ির সং’ঘ’র্ষে রিনিকঝিনিক শব্দ তী’ব্র’তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বালক-বালিকার মধ্যকার পার্থক্য আমরা জানি। সেজন্য রমণী হিয়ানের শ’ক্তি’তে পেরে উঠছে না। তবে বোঝা যাচ্ছে সে হার মানার পাত্রী নয়। হিয়ানকে কা’বু করার চেষ্টায় শ’ক্ত’ভা’বে জো’রে জ’ড়ি’য়ে ধ’রে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে যায় হিয়ান। জোরে ধা’ক্কা দিতে চাইলে এক কোমল হাত তার মুখের উপর রেখে চা’প সৃষ্টি করল। হিয়ান মৃদু গলার আওয়াজ শোনতে পেলো রমণীর। সে-ই আওয়াজ মৃদু হলেও কণ্ঠে ক্রো’ধ, অ’ভি’মা’ন বিদ্যমান!
‘সত্যিটা যাচাই না করে হারিয়ে গিয়েছিলেন। আপনার জন্য আমি..। শা’স্তি পেতে হবে। ইউ ফি’নি’শ!’
গলার আওয়াজ আচমকাই থেমে যেতেই রমণীটি হিয়ানের শার্টের কলার ধরে টে’নে রুমের মেঝেতে ধা’ক্কা দিয়ে ফে’লে দেয়। হিয়ান নিজেকে সামলাতে গিয়েও না পেরে ফ্লোরে কাৎ হয়ে পড়ে যায়। এদিকে রমণীটি জো’রে শব্দ তুলে বারান্দার দরজা ব’ন্ধ করে দেয়। হিয়ান দ্রুত গতিতে ফ্লোর থেকে ওঠে বারান্দার দরজা খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু দরজা বাহির থেকে লাগানো। বরাবর কয়েক বার চেষ্টা করেও সে দরজা খুলতে পারল না। তার উদ্দেশ্যে হাঁকিয়ে ডেকেও সাড়াশব্দ পেল না।

তখনই ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। বের করে দেখে হৃদয় কল দিয়েছে। হিয়ান এক পলক ফোনের পানে তাকিয়ে, ফের বারান্দার দরজার পানে তাকায়। তার মধ্যে এখনো উত্তেজিত ভাব অবশিষ্ট। নিজেকে ধাতস্থ করে রিসিভ করে,’আমি আসছি’ এটুকু বাক্য বলেই ফোন রেখে দেয়। হিয়ান ফোনের ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে রুমটির চারদিকে সুইচবোর্ড খুঁজে। রুমটিতে শুধু এক সেট সোফা ছিল। তাছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র নেই। হিয়ানের নজর পড়ে ফ্লোরে। দুই টুকরো কাঁচের চুড়ি দেখতে পেল। তার সঙ্গে ধ’স্তা’ধ’স্তি’র একপর্যায়ে কাঁচের চুড়ি হয়তোবা ভে’ঙে গেছে। হিয়ান তার বলা কথাগুলো পুনরায় আওড়াতে লাগলো।
কে? কী কারণে ঐ কথা গুলো বলল? সে কী আমাকে চিনে? তার সঙ্গে কী পূর্বে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল? বড়ো প্রশ্নের সম্মুখীনে রেখে হারিয়ে গেছে সে। তার ভাবনায় ব্যা’ঘা’ত ঘ’টে হৃদয়ের কলে। বন্ধুর পুনরায় কল পেয়ে রুম ত্যা’গ করল।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে মানার সময় এদিক সেদিক নজর ফেলে একজনকে খুঁজছে হিয়ান। খুঁজতে খুঁজতে ততক্ষণে বন্ধুদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হৃদয় এক গাল হেসে হিয়ানের কাছাকাছি এসে বলে,
‘কিরে দোস্ত কাকে খুঁজছিস?’
‘কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়েছে নাকি?’ মেহেদি কথাটি সম্পূর্ণ করে হিয়ানের পিঠে চা’প’ড় মা’র’লো।
হিয়ান বিরক্ত হয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ধমকের স্বরে বলে,
‘ধ্যা’ত! এসব টপিক ছাড়া কি অন্য টপিক তোদের মাথায় আসে না? আমি সেই পিচ…। হৃদয় তুই কোথায় ছিলি এতক্ষণ?’
‘ছাদে ধোঁ’য়া উড়াতে গিয়েছিলাম।’ দু আঙুলের সহিত অভিনয় ভঙ্গিতে বলল হৃদয়।
‘বলেছি না এসব খাওয়া থেকে বিরত থাক।’ ক্রো’ধ নিয়ে বলল হিয়ান।
নিলয় হিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘কুল ব্রো, ছাড়। এমনিতেই অনেক গরম। তুই আবার গরম হয়ে যাস না।’
হৃদয় বলল,
‘চল আমরা গাড়িতে ওঠে বসি।’
‘আচ্ছা।’ বলে হিয়ান আগে হাঁটতে নিলে নিলয় কাঁধে হাত রেখে থামায়। বলে,
‘হিয়ান তোর শার্টের পিছনে লালচে দা’গ কিসের?’
‘কিসের দা’গ?’ হিয়ান কিছুটা উৎকন্ঠে জানতে চাইলো।
‘তুই দেখতে পারবি না শার্টের পিছনে দা’গ। কিন্তু দা’গ’টা কিসের? আসার সময় তো দেখলাম না।’ মেহেদি ভাবুক স্বরে বলল।
‘হ্যাঁ! কেমন র’ক্তে’র মতো লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে তাজা। ‘ হৃদয় বলে।
নিলয় হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘মেয়েদের লিপস্টিল মনে হচ্ছে দোস্ত..!’
‘থা’প্রে গাল লাল করে দেবো। ছবি তুলে দেখা আমাকে।’ হিয়ান আদেশ স্বরে বলল।
নিলয় ছবি তুলে হিয়ানের হাতে দেয়। জুম করে দেখে বুঝতে পারে দা’গ গুলো লালচে। হিয়ান শিওর হয় এটি র’ক্তে’র দা’গ। ম’স্তি’ষ্কে না’ড়া দিয়ে উঠে রমণীর কথা। হয়তো তার চুড়ি ভে’ঙে গিয়েছে এবং তার হাতও কেঁ’টে গিয়েছে। তাকে জড়িতে ধরার ফলে র’ক্তে’র দা’গ শার্টের পিছনে লেগেছে। শার্ট সাদা রঙের হওয়ার ফলে দা’গ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
‘কী ভাবছিস?’ নিলয়ের প্রশ্নে হিয়ানের চৈতন্য ফিরে। ফোন নিলয়কে ফিরিয়ে দিয়ে বলল,
‘হয়তো রং লেগেছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। এত ভাবার কিছু নেই। আর ঐ পিচ্চি মেয়েটি আমার সঙ্গে মজা করেছে। ওঁকেই খু্ঁজছিলাম তখন। বাদ দে, চল যাওয়া যাক।’ হিয়ান পুরো বিষয়টি বন্ধুদের আড়ালে রাখলো। বিষয়টি নিজের মধ্যেই রাখতে চাইছে। জানালে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাকে। এ মুহূর্তে সে নিজেই অচেনা রমণীকে নিয়ে প্রশ্নের সং’ক’টে রয়েছে।

তারা বাসে ওঠে বসে। ফ্রেন্ডের ভাইয়ের বিয়ের উপলক্ষে বউ আনতে বরিশাল শহরে আসা হয় ওদের। সেন্টারে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সেটা কেই বা জানত? সেন্টার ভর্তি মানুষ গিজ গিজ করছে। ইতিমধ্যে খাওয়া দাওয়া ও বিয়ে কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে। কিছুক্ষণ বাদেই বউ নিয়ে তারা রওনা হবে। সন্ধ্যা ছাড়িয়ে রাত হতে চলল। ঘড়িতে আটটা ছুঁই ছুঁই। হিয়ান, নিলয় সহ আরো কিছু বন্ধুরা একত্রে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন ওপর তলা থেকে একটি পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটি হিয়ানের নিকটে এসে বলে তার ফ্রেন্ড হৃদয় তাকে উপরে ডাকছে। হিয়ান সহ বাকি বন্ধুরা ছোট্ট মেয়েটির কথা সত্য ভেবে নেয়। কারণ একটু আগে হৃদয় বাথরুমে যাওয়ার কথা জানিয়ে দ্বিতীয় তলার লাস্টের রুমটিতে গিয়েছে। না আসার ফলে ছোট্ট মেয়েটির কথা অনুসরণ করে আড্ডা ছেড়ে সিঁড়ি বে’য়ে ওপরে আসলো। নাম ধরে ডেকে রুমটিতে প্রবেশ করল। মেহমান সকলে নিচে। কনে বিদায় দেবার আগে মুরুব্বিদের সঙ্গে আলাপনে ব্যস্ত ছিলেন সকলে। ওপরে আপাতত কারো আসা যাওয়া নেই। আরেক বার হাঁ’কি’য়ে ‘হৃদয়’ বলে ডাকে। কোনো সাড়াশব্দ নেই হৃদয়ের। ফিরে যেতে চাইলে বারান্দা থেকে খ’চ’খ’চ আওয়াজ শুনতে পেল হিয়ান। সে স্থি’র হয়ে দাঁড়িয়ে নজর নি’ব’দ্ধ করে সেদিকে। আওয়াজটি কিসের? বোঝার চেষ্টা করল। পুনরায় আওয়াজ শুনতে পেয়ে কৌতুহল বসত এগোয় বারান্দার দিকে। উপস্থিতি বোঝার জন্য একবার জিজ্ঞেসও করল। কিন্তু রেসপন্স নেই! তখনই ঘ’টে অ’স্বা’ভা’বি’ক ঘ’ট’না৷ এটি তার কাছে র’হ’স্য’ম’য়। এ রমণীর সঙ্গে নিশ্চয় তার কোনো পূর্বে সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কী কিসের সম্পর্ক ছিল? এবং কে সে?

বাসে বসে সরু নিশ্বাস টে’নে চোখ জো’ড়া হালকা ভাবে ব’ন্ধ করে নেয়। মনের আকাশে বি’শা’ল মেঘের আ’ভা’স। হঠাৎ-ই প্রিয় মানুষটির কথা মনে উঠল। এক সময় যাকে মনের কোঠরে স্থান দিয়েছিল। আজও তার স্থান সেখানেই রয়েছে। শুধু নেই সেই মানুষটি! তার হয়তো বিয়ে হয়েছে। এখন হয়তো-বা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত! ঠোঁটে বি’ষা’দ’ম’য় হাসি ফুটে। বড়ো নিশ্বাস নিয়ে চোখ মে’লে হেলান দেয়। ছোট্ট যাত্রার পথিমধ্যে আগের স্মৃতিতে বিচরণ করে আসে হিয়ান!
.
.
.
.
#চলবে?

#অন্তিম_প্রণয়`[১]
#সুমাইয়া_মনি

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। র’হ’স্য’ম’য় ভাবে গল্পটি সাজালাম। আশা করি নতুন গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। সাইলেন্ট রিডার্সরা সাড়া দিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here