অন্তিম প্রণয় পর্ব -০৪

#অন্তিম_প্রণয়`[৪]
#সুমাইয়া_মনি

ভোরের আলো ফুঁটেছে। প্রতিদিনকার মতো সূর্য উদয় হয় আবার অস্ত যায়। শুধু মানুষের জীবনের পরিবর্তনগুলো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। কখনো রক্তিম আভায় রাঙায়িত আবার কখনো ঘন কালো মেঘে রুপান্তরিত। বিছানায় এসে বসতেই শরীর কিছুটা ক্লান্ত থাকার কারণে চোখে ঘুম এসে ভর করে হিয়ানের। রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় এসে কখন যে একপাশ হয়ে শুয়ে পড়েছে বুঝতেও পারেনি। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ কানে বেসে আসছে। সাথে নিলয়ের কন্ঠের স্বরও শুনতে পায় হিয়ান। বিছানায় ওঠে বসে। পা বিছানার নিচে নামিয়ে এক দৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাথায় চিন্তা এসে উদয় হয় সেই অচেনা রমণীর। কে হতে পারে? এই একটি প্রশ্ন মাথায় বার বার এসে কড়া নাড়ছে। শার্ট খুলে আলনায় রেখে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর এক সাথে নাস্তা করে। নিলয়দের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় অতিবাহিত করে। কিছুক্ষণ পর একবারে রেডি হয়ে বের হয়। বৌ ভাতের অনুষ্ঠানের পর হিয়ান ঢাকায় রওনা হয়। লঞ্চে না এসে গাড়িতে এসেছে। ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে হিয়ানের রাত এগারোটা বেজে যায়। বাড়ি ওয়ালাকে বলে রাখে হিয়ানের মা। তাই গেটের চাবি তার কাছেই ছিল।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নেয়। মা ছেলের মাঝে বেশকিছুক্ষণ কথপোকথন হয়। খাওয়া শেষে হিয়ান রুমে এসে নিলয়কে কল দিয়ে বলে দেয় ঢাকায় পৌঁছাবার কথা। জার্নি করে আসার ফলে চোখে ঘুম খুব তাড়াতারি ধরা দেয়।
সকাল‌ আটটার দিকে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে। তাড়াতারি ওঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। পৌঁছে নিজের কামরায় এসে বসতেই নতুন অনেক প্রজেক্টের কাজ এসে উদয় হয়। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে উঠতেই মায়ের কল আসে। রিসিভ করে,
‘বলো মা।’
‘আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসিস। লিস্ট তোর শার্টের পকেটে রেখেছি। যাওয়ার সময় বলে দিবো, মনে ছিল না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে রাখি!’
‘হুম।’
ফোন কেঁটে দেয়। হিয়ান টেবিলের পাশ থেকে পানির গ্লাসটি হাতে নিয়ে পানি পান করে। তারপর আবার কাজে মনোযোগ দেয়। রাত আটটার দিকে হিয়ান বের হয়। বাড়ি ফেরার পূর্বে বাজারের গন্তব্যে হাঁটে। আজকে হাটবার দিন থাকায় বাজার এখনো বন্ধ হয়নি। বাজারের ভেতর গিয়ে সব তাজা সবজি কিনে। ইলিশ মাছ সাথে কিছু ছোট ছোট পুঁটি মাছও কিনে। শাক-সবজি ও বাকি জীনিস গুলো কিনে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিছু রাস্তা হেঁটে আসার পর রিকশা নজরে আসে। চড়ে বসল। গরমে ঘেমে জবজব শরীর। রুমাল দ্বারা কপালের ঘাম মুছে নেয়। রিকশা চলাকালীন পাশের রাস্তায় এক জোড়া যুবক-যুবতীর ওপর নজর পড়ে। সম্ভবত যুবকটি যুবতীর অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করছে। হিয়ান তাদের গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড হিসাবে ভেবে নেয়। চলন্ত রিকশায় যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ তাদের দেখতে তাকে। দৃশ্যটি চোখের গোচরে যেতেই ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে। রাতের ঢাকা শহরে নীরব গলি দিয়ে রিকশায় চড়ে ঘুরতে বেশ লাগে। মৃদু বাতাস দূর করে দেয় সারাদিনের ক্লান্তি। যুবক-যুবতীর কথা মনে উঠতেই তুর্যের মনে পড়ে ওর প্রিয় মানুষটির কথা। সে আনমনা হয়ে ভাবনায় হাতড়ায়।

অতীত..

‘হিয়ান এত ভালোবেসো না আমাকে। পরে বড়সড় বাঁ’শ খাবে। মানে ছ্যাঁ’কা।’
‘খাব! তাতে তোমার কী? তবুও তোমায় ভালোবেসে যাব যাব যাব।’
‘স্লোগান শুরু করে দিলে নাকি।’ হেসে জিজ্ঞেস করল ইরিন।
‘হ্যাঁ! আমার স্লোগান মানতে হবে, থুক্কু আমার ভালোবাসা মানতে হবে, মানতে হবে।’
‘থামো থামো। আচ্ছা যদি আমার বিয়ে হয়ে যায়। তখন কী করবে হু?’
হিয়ান নিরবে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে । অপর পাশ থেকে ইনির ঠিক সেটি অনুভব করেছে। সে বলে,
‘তুমি আমার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছো ইরিন। সবিই তো জানো। আগে কেমন ছিলাম। আর এখন কেমন হয়েছি আমি। যেদিন তোমার বিয়ে হবে। সেদিন তুমি আমাকে একটু সুযোগ নিয়ে একবার কল দিবে। আমি শুধু তোমাকে কিছু কথা বলব।’
‘কী কথা?’
‘এখন বলার কী আছে?’
‘বলো আমি শুনতে চাই। কারণ হায়াৎ, মত, বিয়ে এই তিনটি জীনিস আল্লাহর হাতে। কখন কী হয়ে যায় তা বলা যায় না। যদি আমি সেদিন তোমাকে কল দিয়ে না পারি। তখন? তাই আগে আগে বলে রাখো।’
‘না জানঠুস!’
‘ফা’জি’ল।’
‘সঙ্গে কিং যোগ করো কিং। ফা’জি’ল কিং!’
‘নাহ!’ বলতে বলতে অভিমান নিয়ে ফোর রেখে দেয় ইরিন।
হিয়ান ইরিনের অভিমান অনুভব করে হেসে দেয়। অনেক বাহানা দিয়ে ইরিনকে মানিয়েছিল সেদিন।

‘ভাইজান! আইসা পড়ছি।’
রিকশা চালকের কথায় হিয়ানের ভাবনার জগতে ভাঙ্গন ঘটে। তড়িৎগতি করে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগ হাতে বাসায় প্রবেশ করে। সিঁড়ি বেয়ে ফ্লাটের সামনে এসে কলিংবেল চাপতেই হিয়ানের মা দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দিতেই হিয়ানের ছোট খালাকে দেখতে পায়। তাকে দেখে হিয়ান কিছুটা অবাক। কারণ সে জানে না তার ছোট খালা ওদের বাড়িতে এসেছে।
‘কেমন আছেন খালা?’
‘ভালো বাবা, তুই কেমন আছিস?’
‘আলহামদুলিল্লাহ! একা এসেছেন নাকি খালু এসেছে?’
‘না, সে আসেনি। আমি শুধু মালাকে সাথে নিয়ে এসেছি।’
‘হঠাৎ! মা আমাকে জানায় নি।’
‘আমি নিষেধ করছি। তুই খুশি হসনি আমরা এসেছি তাই?’
‘তেমন নয় খালা।’ সোফায় বসতে বসতে বলল হিয়ান ।
‘তোর জন্য মেয়ে দেখা হয়েগেছে। মেয়ের ছবি নিয়ে এসেছি সঙ্গে করে।’
হিয়ান বেশ বিরক্ত হলো। বুঝতে না দিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। পিছন থেকে সে ডাক,
‘কোথায় যাচ্ছিস। মেয়ের ছবি দেখে যাহ!’
‘আমি দেখে কী করব? বাবা-মায়ের যদি পছন্দ হয়। তাতেই আমি রাজী।’ কথাটা বলে রুমে চলে আসল।
দু বোন মিলে কথা বলতে থাকে মেয়েটির বিষয়ে। হিয়ান পাখা ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ছয় মাস ধরে বিয়ের জন্য ওঁকে চা’প সৃষ্টি করছে সকলে। প্রথমে তো হিয়ান রাজি ছিল না। কিন্তু বাবা-মায়ের কঠোর জোরাজোরিতে রাজি হতে হয়। বিয়ে যে মেয়েকেই করুক না কেন। মনের মধ্যে ইরিনের জন্য সুপ্ত ভালোবাসা আজীবন রয়ে যাবে।

আজ শুক্রবার সরকারি ছুটি। হিয়ান ল্যাপটপে নতুন প্রজেক্টের কাজ করছিল। তখন রুমে তার বাবা আসেন। তাকে দেখে হিয়াম ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘তুমি আসলে কেন? আমাকে ডাকতে আমিই যেতাম।’
‘প্রয়োজন নেই।’ পাশের টুলে বসতে বসতে বলল।
‘কিছু বলবে?’
‘হ্যাঁ!’
হিয়ান ল্যাপটপ বন্ধ করে বাবার পানে তাকাল।
‘বলো?’
‘তোর খালা কাল সেদিন যে মেয়েটিকে দেখে এসেছে। আমাদের পছন্দ হয়েছে। কাল আমরা গিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে আসবো। তোর এতে কোনো আপত্তি আছে?’
‘নাহ! তোমাদের মতামতই আমি সম্মতি!’
‘বিয়ে দু সপ্তাহের মধ্যেই হবে। মেয়ে পক্ষরা দেরি করতে চাইছে না।’
‘একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?’
‘আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।’
‘যা ভালো মনে হয় করো।’
‘এজন্যই এসেছিলাম। যাচ্ছি!’
তিনি চলে গেলেন। হিয়ান কিছুক্ষণ মৌন হয়ে রয়ে আগের ন্যায় কাজ আরম্ভ করে। কিন্তু কেন জানি মনটা বিষণ্ণতা এসে ভর করল। কাজে মন দিতে পারল না। ল্যাপটপ বন্ধ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় হিয়ান। পকেটে দু’হাত পুরে নরম ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। অচেনা রমণীর কণ্ঠস্বর ইরিনের সঙ্গে মিলে না। এটা যে ইরিন নই। সেটা কনফার্ম! তবে কে হতে পারে?
স্কুল, কলেজ পড়াকালীন এমন কোনো মেয়েকে সে আ’ঘা’ত করেনি যে কি-না এ মুহূর্তে এসে শা’স্তি’যো’গ্য বলে তাকে দাবী করবে। ভেবে বুক ভরে নিশ্বাস নিলো।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here