অন্যরকম তুই পর্ব ৩

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্তকে অন্যান্য দিনের মতো আজ রাগী লাগছে না। খুব শান্ত হয়েই বোর্ডে অনন্ত অংক করাচ্ছে৷ হাতে বেন্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই খুব নিখুঁতভাবে অনন্ত বোর্ডে অংক করাচ্ছে। সব মেয়েরা অনন্তের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তুু অহনা অনন্তের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। অহনা শুধু অনন্তের বোর্ডের লেখার দিকে তাকিয়ে আছে। বোর্ডে লেখা শেষ হলে অনন্ত সবার অংক ঘুরে ঘুরে চেক করছে। অহনা ভেবেছিল অনন্ত আজ তাকে কিছু বলবে না। অহনাও সবার মতো স্বাভাবিকভাবে অনন্তের বোর্ডে দেওয়া অংক খাতায় লিখছিল। অহনার হাতের ব্যথা এখনও যায় নি তবুও অহনা ব্যথা হাতে খুব মনোযোগ দিয়েই অংক লিখছিল।
–ওড়নাটা বুকের আরেকটু উপরে তুলে দিতি তাহলে আরো ভালো করে সব ছেলেরা উপভোগ করতে পারতো।
এমন বাজে কথা শুনে অহনা চমকে পাশে ঘুরে দেখল অনন্ত তার পাশেই দাড়িয়ে আছে।
অহনার বুঝতে আর বাকি রইল না অনন্তই তাকে এ কথাটা বলেছে। এদিকে ক্লাসে ইতিমধ্যেই হাসাহাসি শুরু হয়ে গেছে৷ অহনা নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যি ওড়নাটা বুকের উপরে উঠে গেছে। লেখতে লেখতে অহনার খেয়াল ছিল না। তাই কোনোমতে তাড়াতাড়ি ওড়নাটা ঠিক করে পড়ে নিল। অহনা মুখে কিছু বলল না। কিন্তুু অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–এই ফালতু স্যারের কি খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই! বেটা লুচু তোর এতদিকে চোখ যায় কেন উফ অসহ্য। লেখতে লেখতে কখন যে ওড়নাটা উপরে উঠে গিয়েছিল টের পাই নি৷ দুর ভালো লাগে না৷ এই স্যারটাকে আমার একদম অসহ্য লাগে। ফালতু স্যার একটা।
অনন্ত নিজের ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে চলে গেল। অহনার সবগুলো ক্লাস করার পর যখন অহনা কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছিল। তখনই কেউ একজন পেছন থেকে অহনাকে ডাক দিতে লাগল
–অহনা… এই অহনা.. দাঁড়া।
অহনার কন্ঠটা চেনা চেনা মনে হলো তাই যখন অহনা পেছনে ফিরল তখন অহনা চমকে উঠল। এ যে আর কেউ নয় অনন্ত। অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে বলল
–স্যা স্যা স্যার আ আ আপনি?!!
–তোর হাতটা দেখি তো।
–কেন স্যার! আমার হাত দেখে আপনি কি করবেন?
–আহ্ বেশী কথা বলছিস কেন? হাতটা দেখা বলছি।
–না স্যার আমার হাত দেখতে হবে না। আমি এখন আসি স্যার।
এটা বলেই অহনা চলে যেতে নিলে অনন্ত রাগী কন্ঠে অহনাকে বলল
–তুই কি দাঁড়াবি নাকি কালকে কলেজে কঠিন শাস্তি পাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করবি?
মুহূর্তেই অহনা নিজের চোখ মুখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবতে থাকে
–না না না এ হতে পারে না! অনেক অপমান অনেক শাস্তি এই দানবটার কাছ থেকে আমি পেয়েছি আর নয়। তার চেয়ে ভালো নিজের হাতটা দেখিয়েই ফেলি।
অহনা পেছন থেকে ফিরে এসে অনন্তকে নিজের বাম হাতটা দেখাল। এটা দেখে অনন্ত খুব রেগে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি কি তোকে বাম হাতে মেরেছি যে বাম হাত দেখাচ্ছিস? তোর ডান হাতটা দেখা।
অহনা বাধ্য হয়ে ডান হাত দেখাল। অনন্ত পকেট থেকে একটা মলম বের করে অহনার হাতটা ধরে মলম লাগাতে লাগল। অনন্তের এই কান্ড দেখে অহনা মুহূর্তেই তার চোখ রসগোল্লা করে ফেলল।
–স্যার আপনি রাস্তায় আমার হাত ধরে মলম লাগাচ্ছেন! কেউ যদি এটা দেখে ফেলে তাহলে কি ভাববে স্যার! প্লিজ আমার হাতটা ছাড়ুন আমার হাতে আর ব্যথা নেই।
–তুই একদম চুপ থাক৷ সেদিন রাগটা আমার এতই উঠেছিল যে নিজের উপর কনট্রোল রাখতে পারি নি। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস অহনা।
অনন্তের কথা শুনে অহনা অবাক থেকে অবাক হচ্ছে। অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–না স্যার আপনি ক্ষমা চেয়ে আমাকে অপরাধী করবেন না। আপনি আমার শিক্ষক তাই আমি ভুল করলে আপনি আমাকে শাস্তি দিতেই পারেন। এতে ক্ষমা করার কিছুই নেই।
–অহনা তুই আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলছিস কেন? আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ?
অনন্তের এসব অদ্ভুত প্রস্নের উত্তর কি দিবে অহনা বুঝতে পারছে না৷ অহনার মুখে কোনো কথা নেই কিন্তুু অহনা মনে মনে ঠিকই বলল
–ইসস শখ কতো! কেন রে তোর দিকে তাকাতে আমার বয়েই গেছে ব্যাটা লুচু। মেয়েরা তো তোর দিকে খালি ক্রাশ খায়। আমি কচুও খাব না হুহ্।
–কিরে কিছু বলছিস না কেন?
–স্যার আমি এখন আসি।
এটা বলেই অহনা অরণ্যের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে গেল। অনন্ত অহনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। এখনও অনন্ত রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। অনন্ত মনে মনে বলল
–একবারও তুই জিজ্ঞেস করলি না অহনা আমি কেন হাতটা কাটলাম! আমাকে তুই এত ঘৃণা করিস!



#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here