অন্যরকম তুই পর্ব ৬

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃDoraemon
অহনার নিস্তব্ধতা দেখে অনন্তের বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব হতে লাগল। অনন্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তার ভালোবাসার মানুষ এভাবে চুপ করে আছে। অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো অহনা তুই চুপ করে আছিস কেন? আমি তোকে এতটা ভালোবাসি, আমার ভালোবাসার কথা শুনে কোনো উত্তর তুই কেন দিচ্ছিস না?
অহনা এখনো চুপ করে আছে। অনন্ত এবার অহনার দু বাহু ছেড়ে অহনার দু গালে আলতো করে হাতের স্পর্শ দিয়ে অহনাকে বলল
–অহনা প্লিজ তুই এভাবে চুপ করে থাকিস না! আমি তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি তুই আমাকে ক্ষমা করে দে অহনা। তুই শুধু আমাকে একবার বল তুই আমাকে ভালোবাসিস তাহলে আমি আর কোনোদিনও তোকে কস্ট দিব না অহনা। তুই আমাকে একটু ভালেবাসা দে অহনা৷
অহনা এবার অনন্তের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে খুব রেগে অহনা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–এজন্যই ছেলেদের দেখলে আমার শরীরে এলার্জি হয়। আমি এ কারণেই ছেলেদের বিন্দু মাত্র সহ্য করতে পারি না। আচ্ছা আপনি কি ভাবেন? ভালোবাসা বাজারের কোনো পণ্য যে চাইলেই টুপ করে পেয়ে যাবেন। আপনি এত সুন্দরী মেয়ে ছেড়ে শেষে কিনা আমাকে ভালোবাসবেন সেটা নেহাতই হাস্যকর। শুনেছিলাম আপনি বিদেশ থেকে খুব অল্প বয়সেই পড়াশোনা করে দেশে ফিরে শিক্ষক পেশাতে নিয়োগ হয়েছিলেন। তো বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে কি আপনি ছাত্রীর সাথে অসভ্যতা করার শিক্ষা শিখে এসেছিলেন? আপনাদের মতো ছেলেদের শিক্ষক হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই। বাবার টাকার ক্ষমতা, নিজের সুন্দর চেহারা আর নিজের রাগ আর দম্ভ দিয়ে আপনি সব মেয়েদের ভালোবাসা কিনতে পারলেও আমার মনে আপনার জন্য এক টুকরোও ভালোবাসা পাবেন না। কারণ আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আপনি আমার সাথে এতদিন যা যা অন্যায় করেছেন তার জন্য আমি আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারব না, আর ভালোবাসা তো দূরের কথা।
অনন্ত এতক্ষণ অহনার কথা চুপচাপ শুনছিল। অহনার বলা কথাগুলোতে অনন্তের মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ অনন্ত এখন অহনার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অনন্তের ভয়ংকর দৃষ্টি দেখে অহনা ভয়ে চুপসে যায়। অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই যেন কি বললি অহনা তুই আমাকে ভালোবাসিস না! তুই আমাকে ঘৃণা করিস?
–হ্যা হ্যা আমি আপনাকে ঘৃণা করি, ঘৃণা করি, ঘৃণা…..
অহনাকে আর বলতে না দিয়ে অনন্ত অহনার কোমর জড়িয়ে একহাতে অহনার পেছনের চুল আঁকড়ে ধরে অহনার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে নেয়।
অনন্তের এমন আচরণে অহনা অবাক হয়ে যায়। অহনা ভাবতেও পারে নি অনন্ত এমন করবে। অহনা অনন্তের পিঠে কিল ঘুষি দিচ্ছে তো দিচ্ছে কিন্তুু অনন্তকে কিছুতেই অহনা ছাড়াতে পারছে না। অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া এত জোরেই আঁকড়ে ধরেছে যে অহনার ঠোঁটে ভিষণ ব্যথা হচ্ছে৷ অহনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। অনেক্ষণপর অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–অহনা আমি এক বছর ধরে শিক্ষকতা করছি৷ বাবা চেয়েছিলেন
আমি বাবার বিজনেস দেখাশোনা করি কিন্তুু আমি তা শুনি নি। কিন্তুু এখন যদি তুই চাস আমি এই শিক্ষক পেশা থেকে নিজেকে বের করে আনব। তোর জন্য আমি আমার জীবনটাও দিতে পারি অহনা৷ তুই আমাকে একটু ভালেবাসা দে অহনা। আমি যে তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
অহনা এবার খুব রেগে গিয়ে অনন্তের গালে ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। অনন্ত এত রাগী যে কোনোদিনও কাঁদে নি৷ কিন্তুু অহনার থাপ্পড়ে অনন্তের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল৷
অহনা খুব রেগে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমার মনে হয় আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ। নাহলে কোনো সুস্থ শিক্ষক তার ছাত্রীর সাথে এমন অসভ্যতা করতে পারত না। আপনি নিজের মানসিকতা ঠিক করেন স্যার৷
এটা বলেই অহনা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ অনন্ত এখনোও সেখানেই দাড়িয়ে আছে৷ অনন্ত নিজের গালে হাত দিয়ে বলতে লাগল
–আমি ভাবতেও পারি নি অহনা তুই আমাকে এভাবে অপমান করবি! এভাবে তুই আমার গালে থাপ্পড় দিবি৷ আমার ভালোবাসাকে এভাবে তুই অবহেলা করবি।অনন্ত আহমেদকে কেউ কোনোদিন থাপ্পড় দেওয়ার সাহস পায় নি। কিন্তুু তুই আজকে সেই সাহস দেখালি। এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।
অহনা বাসায় গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে হাঁপাতে লাগল। অহনা ভাবতেও পারছে না যে সে অনন্ত স্যারকে থাপ্পড় দিয়েছে৷ অহনার মনে ভীষণ ভয় কাজ করছে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
— এটা আমি কি করলাম! শেষে কিনা আমি ঐ শয়তান দানব স্যারটাকে থাপ্পড় মারলাম! আমার মনে এত সাহস কোথা থেকে আসল! এরপর আমার আর রক্ষা নেই৷ আমি চাইলেই স্যারের ক্লাসটা না করতে পারি কিন্তুু আমি যে কারও কাছে প্রাইভেট পড়ি না! আমার যে প্রাইভেট পড়ার টাকাও নেই। কারণ আমার পরিবার যে ভীষণ গরীব। অনন্ত স্যার অনেক ভালো অংক বুঝায় তাই শত অপমান করা সত্তেও আমি তার ক্লাসটা করি। কিন্তুু এবার যে আমাকে স্যারের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কিন্তুু অবশ্য উনার সাহস হয় কি করে আমার ঠোঁটের সাথে এমন কাজ করার!
অহনা আয়নায় গিয়ে দেখল অহনার ঠোঁটটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। অনন্তের ঠোঁটের স্পর্শের কথা মনে পড়তেই অহনা ভয়ে কেঁপে উঠে।



#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here