অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ১৩+অন্তিম

#অন্যরকম_প্রেমানূভুতি
#অস্মিতা_রোদৌসি
#part____13

বাবা, মা, বড়আম্মু, বড়আব্বু আমি তোমাদের কিছু বলতে চাই।জানিনা তোমরা আমার কথাগুলো কিভাবে নিবে বাট এটাই সত্যি। কোনো সংকোচ ছারাই কথা গুলো বললো মিঠি।

____হুম বলো কি বলতে চাও।বললো মিহির বাবা।

____হুম মিঠি মা কি বলতে চাও তা র্নিরভয়ে বলতে পারো।বড়আব্বু বললেন।

___আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি।এবং তাকে আমি বিয়ে করতে চাই।

___কে সে???বললো মিঠির মা।

____রিদ ভাইয়া!”!

____কিহহহহহ।ফাজলামো করছিস তুই মিঠি আমাদের সাথে???বললেন রিদের মা।

___না আমি কোনো প্রকার ফাজলামো করছি না।আমি রিদ ভাইয়ে ভালোবাসি।এবং তাকেই বিয়ে করতে চাই।ব্যাস।

____মিঠি কি বলছো কার সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বলছো তা কি তোমার খেয়াল আছে???কিছুটা রেগে মেগে কথাগুলো বললো মিহির বাবা।

____আমি কিছু জানিনা বুঝিনা।আমি রিদ ভাইয়াকে ভালোবাসি এবং আমার তাকেই চাই।

____রিদ ও কি তোমায় পছন্দ করে??রশিদের আব্বু

____না।আমাদের মধ্য তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।কিন্তু আমি রিদ ভাইয়াকে ভালোবাসি।কাঠ কাঠ কন্ঠে জবাব দিলো মিঠি।

____মিঠি খুব বেয়াদব হয়ে গেছো??রিদ তোমার ভাই

___না মা।আমি রিদ ভাইয়াকে কখনো ভাইয়ের চোখে দেখিনি।

____আচ্ছা তুমি ঘরে যাও।শান্ত কন্ঠে বললো রশিদের বাবা মানে মিহির বড়আব্বু।

____জি। বলেই সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো মিঠি।

রুমে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়লো। আজ কথা গুলো বলতে কেনো জানিনা মিহির একটুও ভয় করেনি।সাধারণত সে তার বাবা মাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়।কারণ তারা খুব শাসন করেছে ছোট থেকেই মিঠি ও মেঘাকে।আদর পেয়েছে বেশি তার বড়আম্মু ও বড়আব্বুর থেকে।

কথাগুলো কোন সেন্সরে বলেছে মিঠি তাই বুঝতে পারছে না।নিজেকে কেমন যেন মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে। মাতালের মতো সব সত্য গড়গড় করে বলে দিয়েছে মিঠি।এখন এসব ভাবতেই হাত পা কাঁপছে মিঠির।কি হবে না হবে এসব নিয়ে তো চিন্তা পড়েই আছে।আরেক দিকে তার রিদ তাকে ভালোবাসে না।এটাই তাকে সর্বক্ষন কয়লার ন্যায় হৃদয়টা জ্বালাচ্ছে।
সবকিছুই এখন তার বিষাদ সময় লাগে।রিদ বর্তমান অবস্থা দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে মিঠির।

এসব ভাবতেই মিঠির চোখে জলে ভরে গেলো।হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো মিঠি।

_____________________________________

২ দিন হয়ে গেলো অভ্র আমার সাথে কথা বলছেনা প্রয়োজন ছাড়া।আমি আর সয্য করতে পারছিনা তার ইগনোর।কষ্ট হচ্ছে খুব।তার দুষ্টমি গুলো খুব মিস করছি।ইদানিং তাকে ছাড়া একটা মহূর্তো আমি থাকতে পারিনা।কেমন যেন সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তার বুকে মাথা না রাখলে ঠিকমতো ঘুম হয়না।

___তবে কি আমি???
হুম আমি আমার উওর পেয়ে গেছি।হ্যাঁ আমি ভালোবেসে ফেলেছি।অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছি।খুব ভালোবেসে ফেলেছি।

নিজেই নিজের প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছি।হ্যাঁ মিস্টার অভ্র আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আপনার স্বাভাবগুলো,রাগ,জিদ,কেয়ারিং, দুষ্টমি এসবের আমি প্রেমে পড়ে গেছি।নিজের অজান্তেই কখন যে আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেই জানিনা আমি।

কানে হেডফোন লাগিয়ে স্যাড গান শুনছি রুমে শুয়ে আর এসব ভাবছি।

তখনি পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম।নীলা আমার পাশে বসে আছে।কান থেকে হেডফোন খুলে উঠে বসলাম।

____কিরে নীলা কি হয়েছে এমন হুতুম পেঁচার মতো মুক করে রেখেছিস কেনো???

____মেঘা তোকে একটা কথা বলা হয়নি!!!

____কি?খানিকটা অবাক হয়ে বললাম আমি।

____আমি তোর ভাইকে ভালোবাসি।

____হুম তা তো আমি জানি।রিহান ভাইয়াও তোকে ভালোবাসে।

____রিহানের কথা বলিনি। বলেছি মুহিতের কথা।

___হোয়াট??

কথাটা শোনা মাএই আমি সপ্তম আকাশ থেকে পরার মতো অবস্থায় চলে গেলাম বলে মনে হলো আমার।কি বলছে এসব নীলা।মুহিত ভাইয়াকে নীলা ভালোবাসে??

____তোকে আমি লজ্জায় কথাটা বলতে পারিনি এতোদিন তার জন্য সরি রে।কিন্তু তোর ঔ খাটাশ ভাইটাকে কত বার প্রপোজ করেছি বাট সে একসেপ্ট করেনি।তাই আমি রাগের মাথায় রিহানকে বিয়ে করার সিন্ধান্ত নিয়েছি।কিন্তু এখন আবার তোর ভাই এই বিয়েতে বাধ সাধতেছে।

____কি!!এতকিছু হয়ে গেছে আর আমি কিছুই জানিনা!!!তুই আমাকে এর কানাকড়িও জানাস নি।

____ বললাম তো লজ্জায় বলতে পারিনি।

____তো ভাইয়া কি তোকে ভালোবাসে??

____হুম বাট সেটা সোজাসুজি মুখে প্রকাশ করবেনা খাটাশটা।মুখ বাঁকিয়ে বললো নীলা।

____এই এই মুখ সামলে কথা বল।তুই আমার ভাইকে লেন খাটাশ বলিস হ্যাঁ??

____এহ নিজে মনে হয় সাধু।তুই যে আমার ভাইকে খাটাশ,রাক্ষস,শয়তান আরো কত কি বলিস তাতে কিছু যায় আসেনা হ্যাঁ????

____তোর ভাই যেটার যোগ্য সেটাই বলেছি।

____তোর ভাই বুঝি খুব যোগ্যবান!!!হুহ।

____হুম আমার সব দিক দিয়েই পারফেক্ট বুঝছিস।কত মেয়ে চমার ভাইয়ের পিছনে লাইন দিয়ে আছে।

____আর আমার ভাই কেমন পারফেক্ট কতটা হ্যান্ডসাম কত মেয়ে তার পিছনে ঘোরে সেটা তুই ভালো করেই জানিস।এখনো কিন্তু অনেক মেয়ে ভাইয়ার পিছনে ঘোরে।কাল আসছে রিয়া আপু।তখন দেখবি কি কি হয়।তখনি আসবে আব আয়েগা মাজা।

____এই রিয়াটা আবার কে??

____আমার মামাতো একমাত্র আদরের মেয়ে রিয়া।মালোশিয়ায় থাকে।অভ্র ভাইয়া বলতে পাগল।যদি এসে শুনে অভ্র ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে!!তখন তো বাড়িতে টর্নেডো শুরু হয়ে যাবে।

____হুহ আমার জামাইয়ের দিকে যে কু নজরে তাকাবে আল্লাহ তার চোখ দুইটা কানা করে দিবে হুহ।

___ওমা তাই নাকি।এত ভালোবাসিস আমার ভাইকে??কবে থেকে ভালোবাসতে শুরু করলি রে হুম???চোখ টিপ দুষ্ট হেসে বললো নীলা।

____আচ্ছা চল ছাদে যাই।তুই ছাদে যা আমি কফি নিয়ে আসছি।বললাম আমি।

____ওকে চল।

_________________________]

রাত ১১ টা বাজে এখনো বাড়ি ফেরেনি অভ্র। খাবার টেবিলে সব খাবার ঢেকে রেখে ব্যালকানিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।

আজ অভ্রের রাগ ভাঙানোর জন্য তার পছন্দের খাবার
রান্না করেছি। মোরগ পোলাও,গরুর মাংসের কালা ভুনা,ছোলাবুটের ডাল,সবজি,ইলিশ মাছ ভাজা,ফিরনি,
আর চালতার আচার।সবগুলোই অভ্রের ফেবারিট।

আজ মোটা গোল্ড পাড়ের ব্লাক সিল্ক শাড়ি পড়েছি।মেকআপ করিনি শুধু_ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক, চোখে মোটা করে কাজল,নাকে একটা ডায়মন্ডের নোজপিন,একজোড়া স্টোনের ঝুমকো,গলায় শুধু অভ্রের দেয়া স্বণের চেন।আর অভ্রের দেয়া পায়েল ব্যাস একটুই।

কতক্ষণ ধরে অভ্রের অপেক্ষা করছি বাট তার আসার নাম নেই।ফোন দিয়েছি কয়েকবার।বাট সে রিসিভ করেনি।তাই রাগ করে আর ফোন দেই নি।

আজ আকাশে অজশ্র তারার মেলা বসেছে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে।সেই চাঁদের আলো পুরো চারপাশটা আলোকিত করেছে।রাতের আকাশ আমার খুব পছন্দের।তারা গুনতে বেশ লাগে।যদিও তারা গুনে শেষ করতে পারিনা।

মনটাকে ভালো করার জন্য গলায় সুর তুললাম____

আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই,তুমি তাই গোওও
আমারো পরানো যাহা চায়

এটুকু বলতে অভ্রের আসার ইঙ্গিত পেলাম কারণ।গাড়ির হরং বাজছে।

ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আমার।আমার এই তৃষ্ণাত্ব চোখ এখন অভ্রকে দেখার জন্য ছটছট করছে।তাকে সম্মুখে দেখে হয়তো আমার এই বেহায়া চোখের তৃষ্ণা মিটবে।হয়তো মিটবেনা আজীবন।

ব্যালকানিতে থেকে রুমে এসে কিছুক্ষণ কলিং বেলের জন্য অপেক্ষা করে নিচে নামলাম।অভ্র কলিং বেল বাজাচ্ছে বারবার।

দরজার কাছে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস নিলাম।কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে।কোনোদিন তো এত লজ্জা লাগেনি আমার অভ্রকে দেখে।তবে আজ এত লজ্জা কেন লাগছে!?হয়তো অভ্রকে ভালোবাসি বলে!!!

কাঁপা কাঁপা হাতে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।অভ্রের চোখের দিকে তাকালাম।অভ্র আমাকে দেখে হয়তো থমকে গেছে।কোনো প্রকার নড়াচড়া করছেনা।চোখের পলক ও ফেলছে না।তাতে আরো লজ্জা পেলাম আমি।

____এইযে মিস্টার??

কোনো সাড়া ছিলোনা অভ্র তা দেখে আবার বললাম

___অভ্র শুনছেন??নাহ এবারো কোনো সাড়া পেলাম না।

____অভ্রওওওও তার কানের কাছে চিৎকার করে বললাম আমি।

____ছিটকে পড়লো অভ্র।হয়তো আমার চিৎকারে ভয় পেয়েছে।

____দাড়িয়ে না থেকে ভেতরে আসুন।

____অভ্র কিছু না বলে ঢুকলো ভিতরে।
সোজা রুমে চলে গেলো।

____আর আমি ডাইয়িং টেবিলে চেয়ারে বসে আছি।
তার অপেক্ষায় আছি।ফ্রেশ হয়ে কখন নিচে আসবে মহারাজ।

____________

রিদ আমারা সবাই মিলে সিন্ধান্ত নিয়েছি যে মিঠির সাথে তোমার বিয়েটা এই পরের মাসে সেরে ফেলবো।

রিদ চমকে উঠলো। ডয়িংরুমে বাড়ির সবাই বসে আছে।চিন্তিত মুখ নিয়ে।এমন সময় কথাটা বলে উঠলো রিদের বাবা।

____আব্বু কি বলছো এসব??মিঠির সাথে আমার বিয়ে??

____হ্যাঁ।মিঠির সাথে তোমার বিয়ে।

____অসম্ভব।আমি মিঠিকে বিয়ে করতে পারবোনা আব্বু।

____কেন?

____কারণ আমি মিঠিকে কখনো বোনের চোখে ছারা অন্যচোখে দেখিনি।

____এটা কোনো ম্যাটার না রিদ।আর মিঠি তোমাকে পছন্দ করে।আর মিঠি পরিবারের ছোট মেয়ে।ও যদি সারাজীবন এ বাড়িতে থাকে তাহলে তো ভালোই।বললো রিদের মা।

_____নাহ আমি পারবোনা মিয়িকে বিয়ে করতে
পারবোনা।

____রিদ?আমি যা বলেছি তাই হবে।বুঝেছো??

____কিন্তু বাবা???।

____কোনো কিন্তু শুনতে চাইছিনা আমি।বুঝেছো।
রেগে বললেন রিদের বাবা।

রিদ তার বাবার কথায় মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে গেলো।
#অন্যরকম_প্রেমানুভূতি
#অস্মিতা_রোদৌসি
#part____14_(অন্তিম পর্ব)
আমি আপনাকে ভালোবাসি অভ্র।হ্যাঁ নিজের অজান্তেই আপনার রাগ,জেদ,কেয়ারিং কে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।ভালোবাসার প্রকাশ ব্যাক্তি ভেদে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।ঠিক তেমনই আপনার ভালোবাসার প্রকাশ অন্যরকম ছিলো। প্রথম প্রথম আপনাকে আর
আপনার ব্যাবহার গুলো বিরক্ত লাগতো।বাট কখন যে আপনাকে আর আপনার ব্যাবহারগুলোতে আমি আসক্ত হয়ে গিয়েছি।প্লিজজজ মাফ করুন আমায়।আপনার সাথে এতদিন খারাপ ব্যাবহারের জন্য।
ছলছল চেখ নিয়ে কথাগুলো বললাম আমি।

মেঘার কথাগুলো শুনে কেন আজ নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রমিক পুরুষ মনে হচ্ছে অভ্রের।হ্যাঁ সে পেরেছে মেঘার মনে তার জায়গা করে নিতে।হেরে যায়নি সে।নিজের নিখুঁত ভালোবাসার উপর তার বিশ্বাস ছিলো।
বিশ্বাস ছিলো একদিন না একদিন মেঘা তার ভালোবাসাটা বুঝবে।এবং সত্যিকারের ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারবে।আর মেঘা সেটা পেরেছে।

অভ্র কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মেঘার সামনে দাঁড়ালো। মেঘনার চোখের কোণে জমে থাকা মুক্তোর ন্যায় জল কণা সযত্নে মুছে ছিলো।অভ্রের স্পর্শে কিছুটা কেঁপে উঠলো মেঘা।চোখ বুঝে ফেললো মেঘা।

অভ্র নিচের ঠোঁট কামড়ে মেঘাকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো।যদিও এনাগাত ৩ বার সে মেঘাকে পর্যবেক্ষন করে ফেছেলে।মেঘার কপালে এসে পড়া ছোট ছোট চুলগুলো মৃদু বাতাসে দুলছে।তা দে সয্য হলোনা অভ্রের।চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিলো।চোখ মেলে তাকালো মেঘা।কান্নার ফলে চোখের কাজল হালকা চেপ্টে গিয়েছে চোখের চারিপাশে। কাণি নখ দিয়ে চোখে লেপ্টানো কাজল মুছে দিলো অভ্র।মেঘলা এদিকে মুগ্ধ চোখে অভ্রকে দেখে চলেছে।মুচকি হাসির ফলে অভ্রের ডান গালে টোল পড়ছে।মুচকি হাসি দিয়েই মেঘাকে খুন করার সাহস রাখে অভ্র।সিল্ক চুলগুলোর কয়েকটা চুল এসে কপালে পড়ছে।নীল টিশার্ট আর ব্লাক টাওজারে বেশ মানিয়েছে অভ্রকে।বেশ মায়াবি লাগছে আজ অভ্রকে।অভ্র আগেও যেমন ছিলো আজও তেমন।আগে অভ্র ভালোলাগতো না মেঘার।কিন্তু এখন খুব ভালো লাগে।তার কারণ ভালোবাসা।

অভ্রকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরলো মেঘাকে।অভ্রের বুকে মাথা রেখে যেনো অসিম সুখ খুঁজে পায়।শান্তিতে দুচোখ বন্ধ আসে।এমন শান্তি সে কোথাও পায়না শুধুমাত্র নামাজ ছারা।

অভ্রও তাকে দুহাতে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।দুজনেই চোখ বন্ধ করে ভালোবাসাটা অনুভব করছে।দুজন দুজনকে খুব করে পেতে চাইছে।দু মন মিশে একটি হয়ে গেছে।আজ দুজন পবিত্র ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হলো।

প্রায় ৫ মিনিট পর দুজনের ঘোর ভাঙলো।দুজন দুজনেকে ছেরে দূরে সরে দাঁড়ালো।লজ্জায় মেঘার গাল দুটো কেমন গলুমলু হয়ে গেছে।তা দেখে টেডি স্মাইল দিলো অভ্র।

অভ্র মেঘার হাত ধরে ধীর পায়ে একটু এগিয়ে দোলনায় বসলো।

আজ আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই মেঘা। যা তোমাকে জানা উচিত।তুমি প্লিজ আমার সব কথা শুনবে মন দিয়ে।

অভ্রের কথায় হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো মেঘা।

____তোমার আগেও আমার জিবনে একজন এসেছিলো।খুব ভালোবাসতাম তাকে খুব!!!তখন সবে অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে উঠেছি।এর কিছুদিন পর অর্নাস ফাস্ট ইয়ারের নবীনবরণ উৎসবে হাজার ছেলে মেয়ের মাঝে চোখ গেলো একটা নীল শাড়ি পরীহিতা মেয়ের উপর।তৎক্ষনাৎ আমি থমকে গেলাম।চোখ দুটো তার দিকেই স্থীর।কিছুক্ষণ পর মাইকের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার।মেয়েটার মুখের হাসির দেখেই প্রথম দিনেই তার প্রেমে পড়ে গেলাম।যাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইড।এভাবে বেশ কয়েকদিন মেয়েটাকে ফলো করলাম।বন্ধুবান্ধব আমার কান্ডে খুব অবাক।কারণ ভার্সিটির মেয়েদের বড়সর ক্রাশ ছিলাম আমি।সেই সুবাদে অনেক প্রপোস পেয়েছি বাট কাউকেই একসেপ্ট করিনি।কারণ আমার এসবে ফিলিং আসতো না।বাট সেই মেয়েটাকে দেখে অন্যরকম ফিলিং হয়েছিলো।
হঠাৎ একদিন মেয়েটাকে প্রপোজ করে বসলাম।মেয়েটাও সা_নন্দে একসেপ্ট করলো।কারণ সেও আমাকে মনেমনে পছন্দ করলো।চলতে লাগলো আমাদের প্রেম।প্রতিদিন ভার্সিটিতে দেখা করা,মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া।প্রতিদিন রাত ১২ টা ১ টা পর্যন্ত ফোনে প্রেমালাপ করা।এইভাবে একবছর চলে গেলো।
শ্রুতির উপর আমি আস্তে আস্তে আরো দূর্বল হয়ে পরলাম।হঠাৎ একদিন আমাকে এসে বললো আমার সাথে সে আর সম্পর্কো রাখতে চায়না।কারণ তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।সে তার বাবা মার কথা ফেলতে পারবেনা।

আমি বলেছিলাম সমস্যা নেই আমি তোমার বাবা—মায়ের সাথে কথা বললবো।কিন্তু সে এতে কিছুতেই রাজি না।কারণ তার বাবা নাকি আমাদের এই সম্পর্কো মেনে নিবেন না। অনেক বোঝানোর পরেও সে নারাজ।

সেদিনের পর থেকে শ্রুতির সাথে অনেক কনট্রাক করার চেষ্টা করেছি।কিন্তু পারিনি।প্রায় আধ পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কি করবো না করবো।কিভাবে শ্রুতির দেখা পাবো এনিয়ে।হঠাৎ একদিন রাতে আমার বন্ধু রাজিব ফোন দিয়ে বলতেছে শ্রুতি পালিয়েছে।তাও আমারি ঘনিষ্ঠ বন্ধু রায়হানের সাথে।আমার মাথায় বাজ পড়লো।হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।স্তব্ধ হয়ে গেলাম।শ্রুতি আমাকে ঠকালো।তার সাথে আমার বন্ধু রায়হান ও।কিভাবে পারলো তারা কিভাবে???সেদিনের পর খুব ভেঙে পরেছিলাম।বাট সেটা ভিতরে ভিতরে।
বাইরে থেকে নিজেকে খুব শক্ত প্রামাণ করেছিলাম।শ্রুতিকে ঘৃণা করতে শুরু করলাম শ্রুতিকে।

ভেবেছিলাম জিবনে আর কারো মায়ায় জড়াবোনা।শ্রুতির মতো মেয়েদের ঘৃণা করতাম আমি।কিন্তু নাহ তার কয়েক বছর তুমি এলে আমার আধার দুনিয়ায় আলো হয়ে।ভালোবাসার রাঙানো প্রদিব হয়ে।

প্রথম প্রথম তোমার বাচ্চামো গুলো দেখে খুব রাগ হতো।বাট ঠিক মনের অজান্তেই তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি সেদিন বুঝছি যেদিন তুমি রশিদের হাত ধরে ফুটপাতের রাস্তায় হাটছিলে।খুব রাগ হয়েছিলো আমার।সেদিনের পর থেকে অলওয়েজ আনার শুধু তোমার কথাই মনে পড়তো সনেয়ে স্বপনে জাগরণে তুমি ছিলে।আস্তে আস্তে অনুভব করলাম আমহ তোমায় ঠিক কতটা ভালোবাসাসি।যদিও জানতাম তুমি রিদ নামের বেঈমানকে ভালোবাসো।
এটাও জানতাম রিদ তোমায় ভালোবাসে না।ফাস্ট নাটক করছিলো তোমার সাথে।কথাগুলো বলেই বড় শ্বাস নিয়ে বিরতি নিলো অভ্র।

আমি অবাক হয়ে অভ্রের কথাগুলো শুনছিলাম।অভ্রের কষ্টটা আমি অনুভব করতে পারছি কারণ আমি ওই একি কষ্টের সাথে পরিচিত।খুব করে পরিচিত।আমিও যে ঠকেছি। হ্যাঁ ঠকিয়েছে আমায় রিদ ভাইয়া।

____তুমি জানো হুট করে তোমাকে কেন বিয়ে করেছি??

____না তো!!!অবাক হয়ে বললাম আমি।

____তার কারণ রিদ।রিদ আমাকে হুমকি দিয়েছিলো তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার।যেদিন তোমরা তোমাদের নানু বাসা গিয়েছিলে সেদিন আমাকে হুমকি দিয়েছিলো রিদ।তাই তার পরের দিনই সুযোগ বুঝে তোমায় বিয়ে করি।কারণ সেদিন রিদ বাসায় ছিলোনা।আমি চাইনি তোমাকে হারাতে।তোমাকে হারানোর ভয় আমার মনে জেঁকে বসেছিলো।তাই ওই সময় হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ওই কাজটা করতে বাধ্য হই।সরি বউ!!কান ধরে দুষ্ট হেঁসে বললো অভ্র।

অভ্রের মুখে বউ ডাক শুনে আমার মনে এক অসাধারণ ভালোলাগার শিহরণ বয়ে গেলো।এ কেমন এক মিষ্টি অনুভূতি!!! রিদ ভাইয়া এতটা খারাপ।খুব রাগ লাগছে তার উপর।এখন আবার আমার বোনের ঘারে চেপে বসেছে।আল্লাহ তুমি মিঠির মাথা থেকে এই রিদ নামে ভুত নামাও।

____হুম হয়েছে আর সরি বলতে হবে নাহ।আগে এসব বলতে এমন কিছুই হতো না।না আমি আপনাকে আমার জিবনের ভিলেইন মনে করতাম।মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।

আমার কথায় খিলখিল করে হেঁসে চলেছে অভ্র।আমি অভ্রর হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখছি।হঠাৎ তার গাল স্পর্শ করলাম।হাসি থেমে গেলো অভ্রের।

আমার কোমড়ের হাত রেখে তার কাছে টেনে নিলো।তার চোখ দুটো আমার চোখ দুটোয় আবদ্ধ। দুজনের মাঝে এক ইঞ্চিও দূরত্ব নেই।সব দুরত্বের অবসান ঘটেছে আজ।

আচমকা আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট দুটি চেপে ধরলো।
কেঁপে উঠলাম।কিছুক্ষণ থম মেরে থাকলাম।বাট অভ্রের ভালোবাসাময় স্পর্শে দমে থাকতে পারলাম না।
খুব যত্নে তার ভালোবাসাময় স্পর্শ গুলো অনুভব করতে লাগলাম।

প্রায় ৫ মিনিট পর মেঘার ঠোঁট ছেরে বড়বড় শ্বাস ছাড়ছে অভ্র।সাথে মেঘাও।অনেকদিন পর অভ্রের তৃষ্ণাত্ব হৃদয় তার তৃষ্ণা মেটাতে পেরেছে।নতুন করে তার শুভ্রপরিকে অনুভব করছে অভ্র।

এই চাঁদনি রাতে প্রিয় মানুষের পাশে বসে আছি।একটা রোমান্টিক জানতো গাইতেই পারি তাইনা??বললো অভ্র।

__অভ্রের কথায় মুচকি হাসলাম।

___আমার সাথে তোমাকেও গাইতে হবে।বললো অভ্র।

____হুম।

মেঘা___ বাঁচতে শিখেছে মন তোমাকে পেয়ে
তোমারি ভাবনায় পাই সুখ কুড়িয়ে!
বাঁচতে শিখেছে মন তোমাকে পেয়ে
তোমারি ভাবনায় পাই সুখ কুড়িয়ে!

অভ্র__জানিনা কিভাবে হয়ে গেছি তোমার।
তোমারি ছোঁয়া মন চায় বারে বার।
চলেনা চলি পথ দুজন মিলেএএ।

মেঘা__চেয়েছি পেয়েছি থেকো মন গহীনে
তারে না, বাঁচেনা মন তুমি বিহনে।

অভ্র__ চেয়েছি পেয়েছি থেকো মন গহীনে
পারে না বাঁচেনা মন তুমি বিহনে।

___________বাকিটুকু নিজের দায়িত্ব শুনে নেবেন।

গানটা গাইছে আর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশে আজ হাজারো তারার মেলা বসেছে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে।গোল মালার ন্যায় রুপোলি চাঁদটা অনবরত মিটি হেসে চলেছে।চাঁদের রুপলি আলো ক্ষানিকটা এসে পড়েছে দুজনের মুখে।মৃদু বাতাসে উড়ে চলেছে মেঘার লম্বা চুলগুলো।এ যেন এক অমায়িক সুন্দর সুখময় মহূর্ত!!!

মেঘাকে কোলে নিয়ে ছাদ থেকে রুমে এলো অভ্র।
রুমে ঢুকেই একদফা সারপ্রাইজ পেলো অভ্র।দুষ্ট হেসে চোখ মেরে। মেঘাকে বিছানায় বসিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো___বাহ আমার বউ তো দেখি এক ধাপ এগিয়ে আছে।এর আগে বাসর তো তোমার জন্যই হয়নি তাই আজ নিজ হাতে বাসরঘর সাজিয়েছে।আমি কিন্তু সারপ্রাইজড।

____লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি।লোকটা পারেও বটে।বেলাজ কোথাকার।

___মেঘার পাশে বসে মেঘার কানের দুল খুলতে লাগলো অভ্র।মেঘলা যেন লজ্জায় মিইয়ে গেলো।

তারপর মেঘাকে আস্তে করে শুইয়ে সেও মেঘার উপর সমস্ত ভার দিয়ে শুয়ে মেঘনার ঘারে মুখ গুজে দিলো।ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো মেঘার ঘাড়,মুখ,গলা,

মেঘা অভ্রের টিশার্ট খামছে ধরে চোখ বুঝে অভ্রের স্পর্শ অনুভব করছে।

কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসে বললো___মে আই???

অভ্রের কথায় কোনো রেসপন্স করলো না মেঘা।
অভ্র বুঝে নিলো নিরবত সম্মতির লক্ষণ।

ডুবে গেলো দুজন দুজনাতে।পূর্ণতা পেলো আজ দুজনের ভালোবাসা।

__________________এদিকে….

___রিহান আমি আপনাকে নয় মুহিত কে ভালোবাসি।একেকদিন মুহিতকে জেলাসহ ও ওর মুখ থেকে ভালোবাসি শোনার জন্য আপনার সাথে নাটক করেছি।আই এম রিয়েলি সরি।প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন।মিনতি কন্ঠে বললো নীলা।

____আমি সব জানি নীলা।তোমার আগে আমাকে সব বলেছে মেঘা।তিনদিন আগে আমাকে সব বলেছে মেঘা।রিহানের এমন কথায় চমকে উঠলো নীলা।

____কিহ!!!মেঘলা আপনাকে এসব বলেছে??

____জি ম্যাডাম।তবে মুহিত কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

____হুম জানি বাট লোকটা মুখে শিকার করতে চায়না।
আপনার পরিবারকে কি বলে বুঝাবেন??তার এই বিয়ের জন্য কত আশা করে আছে!

____আমি বলেছি এখন আমার তোমাকে ভালে লাগেনা তাই বিয়ে ক্যানসেল।তারা অবশ্য অনেক রাগারাগি করেছে।তবে আমার কথাই তাদের কাছে শেষ কথা।

___সরি।আমার জন্য আপনাকে কতকিছুই না ফেস করতে হচ্ছে।

____আরে সরি বলার কিছু নেই।তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখলে আমি অনেক খুশিই হবো।তোমরা সুখি হও।মলিন হেঁসে বললো রিহান।

____হুম।আপনি সুখি হন দোয়া করি।আপনার উপকার কখনো ভুলবোনা।অনেক ভালো আপনি।যে মেয়ে আপনাকে পাবে সে তো ২৪ ক্যারেট সোনার পাওয়ার মতো লাকি হবে।হেঁসে বললো নীলা।

___হুম।মলিন হেঁসে বললো রিহান।

____আচ্ছা বাই

___ওকে।গুড নাইট।

ওপাশ থেকে ফোন কল কাটার আওয়াজের হাফ ছাড়লো রিহান।বুকটা মোচর দিয়ে উঠছে।ভালোবাসার মানুষা তার ভাগ্যে নেই।নীলাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে রিহান।খুব করে চেয়েছিলো নীলাকে সে।নীলার নীল দুটো চোখের প্রেমে পড়েছিলো রিহান।মেঘার কাছে নীলার আর মুহিতের কথা শুনে তার অক্ষর রিদয় কাছের ন্যায় ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিলো।তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়েছে।
সে চায় তার ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকুক।
কিছু কিছু মানুষের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না।তাদের মধ্যে আমি হয়তো একজন। মলিন হেঁসে আকাশের দিকে চেয়ে বললো রিহান।

কেটে গেছে ১ মাস। নীলা আর মুহিত সাথে মিঠি আর রিদের বিয়ে।সবাই খুব খুশি।

রিদ নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে।কিন্তু মিঠিকে এখনো ভালোবাসতে পারেনি সে।মিঠি খুব চেষ্টা করছে রিদের ভালোবাসা পাওয়ার।
নীলা আর মুহিতের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।ওরাও খুব খুশি।আর এদিকে রিহান কানাডায় চলে গেছে।ওখানে থেকেই জব করবে সে।হয়তো ভালোবাসার মানুষটার থেকে পালানোর ধান্দা।পারবেনা চোখে সামনে ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো হতে দেখতে।

মেঘা আর অভ্রের দিন গুলো কাটছে ভালোবাসাময়।
দুজন দুজনকে ছারা অচল প্রায়।

সমাপ্ত…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here