অপূর্ণতা পর্ব ৪১+৪২+৪৩+৪৪

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪১

ডক্টর নার্সকে বলে,”আপনি ওনার সাথে থাকুন, যদি রোগীর কোন পবলেম হয় তবে অবশ্যই আমাকে ডাক দিবেন।এই বলে ডক্টর বাহিরে বের হয়ে আসে।

ডক্টর বাহিরে বের হতেই অদ্রিতা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,”ডক্টর ওনী এখন কেমন আছে,ওনার জ্ঞান ফিরেছে?”

ডাক্তার শান্ত স্বরে বলে,” রোগী এখন আউট অফ ডেঞ্জার।কালই ওনাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন।হাতের আর পায়ের ব্যান্ডিজ কালই খোলে দিবো। মাথার আঘাতটা একটু বেশি ড্রিপ তাই ১ সপ্তাহ সময় লাগবে শুকাতে।ওনার এখন একটু বেশি টেক কেয়ারের প্রয়োজন,এই বলে ডক্টর চলে যায়।

অদ্রিতা ভিতরে ঢুকেই আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
অদ্রিতা হঠাৎই আরিয়ানকে জরিয়ে ধরায় আরিয়ান ব্যাথ্যায় আহ করে শব্দ করে,সাথে সাথে অদ্রিতা তাকে ছেড়ে দেয়।

আরিয়ান শান্ত স্বরে বলে,” কান্না থামাও,আমি এখন ঠিক আছি।বাবা-মা কোথায়?”

অদ্রিতা করুন স্বরে বলে,” আপনার এক্সিডেন্টের খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।এখন ঠিক আছেন,বাবা বাহিরে এখনই আসবে।পরে সবাই আরিয়ানকে দেখে বাড়িতে চলে যায় কিন্তু তার ছোট ভাই রোহিত তার সাথে থেকে যায়।অদ্রিতাই তাদের চলে যেতে বলে।
পরের দিন বিকালে হাতের ও পায়ের ব্যান্ডিজ খুলে দেয়।অদ্রিতা আর রোহিত তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।”

কলিং বেল বাজাতেই অদ্রিতার শ্বশুড়ি দরজা খোলে দেয়।আরিয়ানকে দেখে ওনী তাকে জরিয়ে ধরে বলে,”এখন কেমন লাগছে আর এত রাতে কোথায় ছিলি?এক্সিডেন্ট কি করে হলো?আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার শ্বাশুর তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,”ওরা মাত্র এলো। আগে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নিক পরে কথা বলো।বউমা ওকে নিয়ে রুমে যাও।দুইদিন ধরে তুমি হসপিটালে আসো ফ্রেস হয়ে রেস্ট নাও।”

অদ্রিতা ছোট করে বলে,” জি বাবা।”পরে অদ্রিতা আরিয়ানকে রুমে নিয়ে যায়।আরিয়ানকে ব্রেডে শুয়িয়ে দিয়ে তাকে তার ফোন দেয় পরে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।

অদ্রিতা ওয়াশরুমে যেতেই আরিয়ান ফোন ওন করে।ফোন করতেই দেখে রাইশার অনেক গুলো ম্যাসেজ।সে রাইশাকে ফোন দিতেই রাইশা ফোন রিসিভ করে।

রাইশা চিন্তিত স্বরে বলে,”এই তোমার কি হয়েছিল,ফোন ওফ ছিল কেন এই দুই দিন?জানো আমার কত টেনশন হচ্ছিল তোমাকে নিয়ে। তুমি ঠিক আছো তো?”

আরে বাবা একসাথে এত প্রশ্ন করলে আমি কোনটার উওর দিবো।আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল।দুই দিন হসপিটালে ছিলাম, মাত্রই বাড়িতে আসছি।

রাইশা মন খারাপ করে বলে,”ওহ, তবে আগে কেন বলোনি? আমি হসপিটালে চলে আসতাম।আচ্ছা আমি এখন তোমার বাড়িতে আসছি।আর তুমি এখন কেমন আছো?”

আমি এখন ঠিক আছি,তোমাকে আসতে হবে না।

রাইশা ছোট করে বলে,”আচ্ছা,এখন তুমি রেস্ট নাও। বেশি কথা বললে আবার অসুস্থ হয়ে পরবে রাখি।”

আচ্ছা।

অদ্রিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আরিয়ানের শরীর মুছে দেয়।পরে তাকে খবার খায়িয়ে ঔষধ খায়িয়ে দেয়।

~~~এক সপ্তাহ পরে,,,,,,,,,,

এই এক সপ্তাহে অদ্রিতা আরিয়ানের যত্নের কোন কমতি রাখিনি।আরিয়ান এখন অনেকটাই সুস্থ।আরিয়ান এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েছে শুধু অদ্রিতার যত্নের কারণে।এই সাতদিন অদ্রিতা ছায়ার মতো আরিয়ানের পাশে ছিল।তাকে ঠিক মতো খায়িয়ে ঔষধ খয়িয়েছে। অবশ্য রাইশাও মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে আরিয়ানের খবর নিয়েছে। আজকে তার মাথার ব্যান্ডিজ খোলা হবে।তাই অদ্রিতা তাকে রেডি করিয়ে নিচে নেমে তার শ্বাশুড়িকে ডাক দেয়। মা আপনি রেডি তো।

হুমম,আরিয়ানের বাবা এখনই এসে পরবে।পরে আমরা হসপিটালে চলে যাবো।

আরিয়ান আস্তে করে বলে,”আমি তো এখন সুস্থই, নিজেই ড্রাইব করে যেতে পারবো।”

আরিয়ানের মা রেগে বলে,”একদম চুপ,নিজে ড্রাইব করেই তো এক্সিডেন্ট করলি।এখন কোন কথা নয়।
আরিয়ান আর কিছু বলে না,তার বাবা নিচে নেমে এলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।গিয়ে তার ড্রেসিং রুমে বসে।কিছুক্ষন পরে ডক্টর চলে আসে,ডক্টর এসে তার মাথার ব্যান্ডিজ খোলে দেয়।

আরিয়ানের বাবা শান্ত স্বরে বলে,” রোগী অবস্থা এখন কেমন,ঠিক আছে তো?”

ডক্টর ভরসা দিয়ে বলে,” He is now completely alright.চিন্তার কোন কারণ নেই।আমি তো অবাক হচ্ছি এত তাড়াতাড়ি কি করে সুস্থ হলেন তা ভেবে?”

আরিয়ানের মা মুচকি হেসে বলে,”এই সব কিছু সম্ভব হয়েছে শুধু বউমার জন্য।ওই তো রাতদিন এক করে ওর সেবা- যত্ন করেছে।”

ডাক্তারঃওহ,সত্যিই আপনি অনেক ভাগ্যবান নয়তো এখনকার যুগে এমন বউ পাওয়া যায় না।আর এই ঔষধ গুলো ১ সপ্তাহ খেলেই দুর্বলতা কেটে যাবে।এখন আপনারা আসতে পারেন।

ডক্টরের কথা শুনে আরিয়ান অদ্রিতার দিকে তাকায়। পরে কি মনে করে নিজেই মুচকি হাসে।

আরিয়ানের বাবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে,”ওকে ডক্টর।”এই বলে তারা বাড়িতে চলে আসে।অদ্রিতা আরিয়ানকে নিয়ে রুমে ডুকে পরে বলে,”আপনি শুয়ে রেস্ট নিন,আমি ফ্রেস হয়ে এসে আপনার শরীর মুছে দিচ্ছি।”

আরিয়ান শান্ত স্বরে বলে,”এত ব্যস্ত হতে হবে না।আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।ডক্টর তো বললেন।তুমি ফ্রেস হয়ে নাও পরে আমি ফ্রেস হয়ে নিচ্ছি।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এই কয়দিন আমার যত্ন নেওয়া জন্য।”

আরিয়ানের কথা শুনে তার খারাপ লাগলো তবুও বললো,”ধন্যবাদ কিসের,এইটা তোমার দায়িক্ত।আপনি আমার স্বামী, আপনার সেবা করবো না তো কার সেবা করবো।”এই বলে অদ্রিতা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।

অদ্রিতা ফ্রেস হয়ে এসে আবার আরিয়ানকে জিজ্ঞেস,আপনি কি একা একা ফ্রেস হতে পারবেন?

আরিয়ান ছোট করে বলে,”হুমম, পারবো।”

আচ্ছা তবে আপনি ফ্রেস হন, আমি নিচে গিয়ে আপনার জন্য স্যুপ নিয়ে আসি।

আরিয়ান মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি করে।অদ্রিতা নিচে চলে যায় আরিয়ানের জন্য স্যুপ বানাতে,তাছাড়া দুপুরে খাবারও তো তৈরি করতে হবে।আর আরিয়ানও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে বেডে শুয়ে থাকে আর অদ্রিতার কথা ভাবতে থাকে।সে অদ্রিতাকে যত দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে।এতটা নিস্বার্থ ভাবে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে তা অদ্রিতাকে না দেখলে সে হয়তো জানতেই পারতো না।কিন্তু কথায় আছে না দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা বুঝে না,আরিয়ানের ক্ষেএে তাই হচ্ছে।সে রাইশার রুপের মোহে পরে অদ্রিতার ভালোবাসা, কেয়ার কিছুই বুঝছে না।আরিয়ান অদ্রিতার কথা ভেবে যাচ্ছে।তার এত অবহেলা, অপমান করার পরেও মেয়েটা তাকে সুস্থ করার জন্য সব কিছু করলো।সারা রাত তার পাশে বসে থেকে তার সেবা করেছে,তার কখন কি লাগবে সব কিছুর খেয়াল রেখেছে।তার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এততা যত্ন তাকে করতো না।অদ্রিতা সত্যিই অনেক ভালো।তবে আমি কি তার সাথে অন্যায় করছি? তাকে ঠকাচ্ছি? আরও কিছু ভাবার আগেই রাইশার কল আসে,,,,,,,
. #গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪২

আরিয়ান অদ্রিতার কথা ভেবে যাচ্ছে বেশি কিছু ভাবার আগেই রাইশার কল আসে।

আরিয়ান ফোন রিসিভ করতেই রাইশা বলে,”কেমন আছো,ডক্টর আজ কি বলেছেন?”

এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, অদ্রিতার জন্য জন্যই আমি এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পেরেছি।
ডক্টরও কিছুটা অবাক হয়ে যায়,এত তাড়াতাড়ি আমি সুস্থ হয়ে যাবো তা ভাবেনি।আর এই সবই সম্ভব হয়েছে শুধু ওর সেবা আর কেয়ারে।আসলে অদ্রিতার মতো মেয়েই হয় না।

রাইশা আরিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”বাহ্! বউয়ের সেবায় তো দেখছি সুস্থ হয়ে গেছো।আর মুখেও তো দেখছি বউয়ের নাম ছাড়া অন্য কিছু নাই।ভালোই তো হলো এখন তো ওর সেবায় কথা ভেবে ওকে মেনে নিবে।মনে হচ্ছে যেন ওকে চোখে হারাচ্ছো,তবে আমি রাখছি।এখন তো আবার বউকে নিয়েই থাকবে,আমি আর ডিসর্টাব করবোনা।বাই”

আরিয়ান গম্ভির স্বরে বলে,”আরে না,তুমি তো জানোই ওকে আমি এখনো মেনে নিতে পারিনি।আর ওকে আমি চোখে হারাচ্ছি মানে শুধু ও আমার জন্য যা করেছে তা বলছি।”

রাইশা খুশি হয়ে বলে,” হুমমম,আর ওকে তোমার মানতেও হবে না।আচ্ছা এইসব কথা বাদ দাও কালকে কি অফিসে আসবে।”

হুমম,আসবো।

তবে এখন রাখি,কাল অফিসে দেখা হচ্ছে।তোমার সাথে কিছু কথা আছে।এখন তবে মেডিসিন খেয়ে রেস্ট নাও।

আচ্ছা,কাল দেখা হচ্ছে।অনেক দিন পরে আবার তোমাকে দেখবো ভাবতেই অনেক ভালো লাগছে।

এদিকে অদ্রিতা এখন একটাই চিন্তা,কি করে আরিয়ানকে সুস্থ করা,তার ভালো করে যত্ন করা।সে এখন আরিয়ানের জন্য স্যুপ বানাতে রান্নাঘরে এসেছে কিন্তু এদিকে যে সে কিছু খায়নি তার খেয়াল নেই।আরিয়ানের যত্ন করতে গিয়ে সে তার নিজের কথাই ভুলে গেছে।ইদানিং তার শরীরটাও ভালো না।মাথা ঘুরায়,ভালো করে খেতেও পারে না।কিন্তু কাউকে কিছু বলছে না।ভাবছে টেনশন একটু বেশি করছে তাই এমন লাগছে আর ঠিক মতো খাওয়াও তো হয় না।আরিয়ান ওকে সব- সময় অবহেলা করেছে, তার গায়ে হাত তুলেছে,তাকে অপমান করেছে তবুও সে তার দায়িত্ব থেকে সরে আসেনি।তাদের সম্পর্কটা তো পবিত্র।কবুল বলে তারা স্বামী- স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।সে আরিয়ান অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।সে সবকিছু করছে শুধু আরিয়ানের একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আরিয়ানের অদ্রিতার এই ভালোবাসা কেয়ার কিছুই চোখে পড়ছে না রাইশার মোহে পরে।মানুষ সত্যিই অনেক স্বার্থপর হয়।যে আপনার ভালো চায়,যে সবসময় আপনার পাশে থাকে তাকেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয়।তাকে সে তার প্রাপ্য মূল্য দিতে পারে না।আরিয়ান তার পুরোনো ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে সব ভুলে গেছে।সে যে আগে তাকে ছেড়ে চলে গেছে এখন তা তার মনে নেই।যে মেয়ে তার কেরিয়ারের জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেছে,সে দ্বিতীয়বার তার কাছে এসেছে তার নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।সে এইসব কিছু বুঝছে না।সে তার রুপের মোহে পরে আছে।শুধু আসক্ত হয়ে আছে তার বাহিরের চাকচিক্যে,স্মার্টনেস আর সো কল্ড আধুনিকতার নামে বেহায়াপনার নিকট।এইসব কিছু তার কাছে এতোটাই ইমপোর্টেন্ট যে সে এতদিনের অদ্রিতার অক্লান্ত পরিশ্রম, সেবা,ভালোবাসা আর বিশ্বাসকে অবহেলা করছে।এই সবকিছুই ভুলে গেছে। অদ্রিতার সরলতাকে সে তার দুর্বলতা ভাবছে।নিজেই অনিশ্চিত করে তুলছে তাদের ভবিষ্যৎকে।
.
.
অদ্রিতা স্যুপ নিয়ে রুমে চলে আসে।সে একটি টেবিলে স্যুপের বাটি রেখে পরে বলে,”আপনি ওঠে বসুন, আমি আপনাকে স্যুপটা খায়িয়ে দিচ্ছি।”

আরিয়ান শান্ত স্বরে বলে,” লাগবে না। আমি নিজেই খেতে পারবো।তুমি স্যুপের বাটিটা আমাকে দাও।”

আপনি অসুস্থ,পারবেন না।আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।

আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,”আজব তো,আমি বলছি তো খেতে পারবো।ডক্টর তো বললো এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।তোমার এত আধিক্ষেতা করতে হবে না।যত্তসব,,, একটু জোরেই বললো কথাগুলো।

আরিয়ানের ব্যবহারে সে নিস্তব্ধ হয়ে যায়।কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে সে।কিছু না বলে স্যুপের বাটিটা তার হাতে দিয়ে সে চলে যায়।এটাই হয়তো দুনিয়ায় নিয়ম। আপনি যাকে বেশি ভালোবাসবেন সেই আপনাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিবে।পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই,,,,,,

~~~পরের দিন সকালে,,,,,,,,

আরিয়ান রেডি হয়ে খাবার টেবিলে আসে।তার বাবা দেখে সে রেডি হয়ে আছে তাই জিজ্ঞেস করে,”তুই কি আজ অফিসে যাবি নাকি?তুই তো এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হসনি।”

হুমম,আর আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তুমি কোন চিন্তা করো না।অনেক দিন ধরে অফিসে যাওয়া হয়না। আজ একটা ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে তাই যেতে হবে।

তার বাবা আর কিছু বলে না,সবার খাওয়া শেষ হলে যার যার কাজে চলে যায়।আরিয়ানের খাওয়া শেষ হতেই সে অফিসে জন্য বের হতে নেয় কিন্তু পিছন থেকে অদ্রিতা তাকে ডাক দেয়।

আরিয়ান পিছনে ফিরতেই সে বলে,”আজ কি অফিসে না গেলে হয় না।আপনার শরীর তো এখনো দুর্বল তাই বলছি।”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,”আমি এখন ঠিক আছি। তোমাকে এত আমার চিন্তা করতে হবে না। আজ কিছু কাজ আছে তাই যেতে হবে।”

অদ্রিতা বিষন্ন স্বরে বলে,” ওহ আচ্ছা।আপনি কি এখনো আমাকে মেনে নেন? এখনো কি আপনার মনে আমার জন্য একটু ভালোবাসা জন্ম নেয় নি,এখনো কি আগের মতো আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না?”

আরিয়ান কন্ঠে গম্ভীর্যতা রেখেই বলে,”আমার মনে তোমার জন্য এখনো বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা জন্ম নেয়নি।আমি মেনে নিতে পারছি না তোমাকে আর কখনো পারবো কিনা তা জানি না।”
এই বলে সে চলে যায়।অদ্রিতার তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,”আল্লাহ যদি চায় তবে একদিন আপনি আমাকে ঠিক মেনে নিবেন আর এই আমাকেই ভালোবাসবেন।কিন্তু সেইদিন আপনি হয়তো আমাকে পাবেন না।সেদিন হয়তো আমি আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।শত চাইলেও তখন আপনি এই আমিটাকে আর পাবেন না।”

আরিয়ান অফিসে এসেই ফাইল খোলে বসে।অনেক দিন ধরে অফিসে আসে না অনেক কাজ পেন্ডিং হয়ে আছে।সে অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে এমন সময় রাইশা ভিতরে ঢুকে বলে,”বিরক্ত করলাম নাকি।তুমি তো দেখছি খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছো।”

আরে না,চেয়ারে বসো।তুমি না বলছিলে আমার সাথে তোমার কিছু কথা আছে,কি কথা শুনি?

তুমি তো জানোই নিউইয়র্ক থেকে আমি এখানে একটি সো এর জন্য এসেছিলাম।গত কাল সেই সো শেষ হয়েছে আর আমি সো এ জিটেছি।

আরিয়ান হাসি মুখে বলে,” Congratulations, তা পার্টি কবে দিচ্ছো?”

কালই দিচ্ছি আর পার্টিটে রাত ১০ টার মধ্যে উপস্থিত থাকবে।তোমাকে ছাড়া কিন্তু পার্টি শুরু করবো না আর পার্টির পরেই তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।নিশ্চয়ই তোমার তা ভালো লাগবে।

আরিয়ান অবাক হয়ে বলে,” কি সারপ্রাইজ বলো না?”

রাইশা মুচকি হেসে বলে,” বলে দিলে কি আর তা সারপ্রাইজ থাকবে!ওয়েট করো কালই জানতে পারবে”

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,” আচ্ছা।”
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৩_৪৪

রাইশা মুচকি হেসে বলে,” বলে দিলে কি আর তা সারপ্রাইজ থাকবে?ওয়েট করো কালই জানতে পারবে।”

আচ্ছা কিন্তু ওয়েট করা আমার একদম পছন্দ না।তা তো তুমি জানোই।তাই যদি বলে দিতে ভালো হতো।

রাইশা মুচকি হেসে বলে,” তুমি তো দেখছি ঠিক আগের মতোই আছো।একদমই চেঞ্জ হওনি,আর তুমি ভালো করেই জানো কি সারপ্রাইজ তা সময়ের আগে কিছুতেই তোমাকে বলবো না।তাই রিকোয়েস্ট করে কোন কাজ হবে না,হা হা হা,,,,,”

আরিয়ান কপট রাগ দেখিয়ে বলে,” এই তুমি এমন কেন?ভালো হবে না কিন্তু,,,, হুমম।”

রাইশা মজা করে বলে,” কি খারাপ হবে শুনি?”

আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে,তা তো দেখতেই পাবে।

রাইশা ন্যাকামি করে বলে,এমন সুখের দিনে কই তুমি আমাকে আরও একটু বেশি উৎসাহ দিবে তা না করে তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো।

আরিয়ান অবাক হয়ে বলে, “আরে ঝগড়া আমি কই করলাম? তুমিই তো শুরু করলে, আচ্ছা বাদ দাও।”

হুমম,আচ্ছা আমি এখন যাই।আরোও অনেককেই ইনভাইট করার বাকি আছে।তোমাকেই প্রথমে বললাম, ঠিক সময় চলে আসবে কিন্তু।

আরিয়ান ছোট করে বলে,” আচ্ছা,,, ”

রাইশা চলে গেলে আরিয়ান আবারও তার কাজে মন দেয় এমন সময় হঠাৎ নিলয় তাকে কল করে।আরিয়ান সাথে সাথে তা রিসিভ করে বলে,” হ্যালো স্যার, কেমন আছেন?”

আলহামদুলিল্লাহ।যেই জন্য আপনাকে কল দেওয়া, অফিসের কাজ কেমন চলছে?ওই খানে সব ঠিক আছে তো।

এখানে সব ঠিক আছে,আপনি কবে দেশে আসবেন?

এইতো আমার কাজ প্রায় শেষ। ৪-৫ দিনের মধ্যে চলে আসবো।আচ্ছা আপনার ওয়াইফ,মিসেস অদ্রিতা কেমন আছে?

হঠাৎ করে স্যার আবার অদ্রিতার কথা কেন জিজ্ঞেস করলো?নিলয়ে মুখে অদ্রিতার নাম শুনে সে কিছুটা অবাক হলো তবুও বললো,ভালো আছে।

নিলয় গম্ভীর স্বরে বললো,”আচ্ছা,আমি এখন রাখছি।কোন পবলেম হলে আমাকে জানাবেন।”

আরিয়ান ছোট করে বলে,”আচ্ছা।”নিলয় ফোন কেটে দেয়।

আরিয়ান কাজ কমপ্লিট হলে সে বাড়িতে চলে যায়।
আজ আরিয়ান একটু তাড়াতাড়িই বাড়িতে চলে যায়।রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে, যে যার রুমে চলে যায়।অদ্রিতা সব কিছু গুছিয়ে রুমে যায়,রুমে ঢুকে দেখে আরিয়ান বেডে শুয়ে আছে।সে কিছু না বলে বিছানা থেকে বালিশ আর কম্বল নিয়ে সুফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

~~~~ পরের দিন সকালে,,,,,,,,

আরিয়ান ফ্রেস হয়ে অফিসে চলে যায়।আজ তাকে পার্টিতে যেতে হবে তাই একটু দ্রুতই কাজ কমপ্লিট করতে হবে,তাই মনোযোগ দিয়ে কাজ শেষ করে।পরে আরিশাকে ডাক দেয়( তার পি.এ)

আরিশা এসে নম্রতা বজায় রেখে বলে,”Yes,sir. আপনি আমাকে ডাকছিলেন?”

জ্বি,এই ফাইলগুলো আমি প্রায় কমপ্লিট করে রেখেছি আর অল্প বাকি আছে।আপনি তা কমপ্লিট করে রাখবেন,কাল মিটিং আছে।কোন প্রকার ভুল যাতে না হয়।গট ইট।”

জ্বি স্যার,আপনি কোন টেনশন করবেন না।আমি সব কিছু গুছিয়ে রাখবো।

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,” আচ্ছা, আমি এখন যাচ্ছি। সব কাজ কমপ্লিট করে আপনি চলে যাবেন।”

জ্বি স্যার,,,,,,

আরিয়ান বাড়িতে চলে যায়।কেলিং বেল বাজাতেই খালা দরজা খুলে দেয়,সে সুজা রুমে চলে যায়।
অদ্রিতা বেলকনিতেই দাঁড়িয়ে ছিল দরজা খোলার শব্দেই সে রুমে ঢুকে আরিয়ানকে দেখে বলে,”আপনি আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন,আপনি ঠিক আছেন তো?”

আরিয়ান আস্তে করে বলে,” হুমমম,ঠিক আছি।”

আচ্ছা আপনি ফ্রেস হয়ে নিন,আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি।

আরিয়ান নিশ্বাস ছেড়ে বলে,” আচ্ছা।”

অদ্রিতা রান্নাঘরে গিয়ে আরিয়ানের জন্য কফি নিয়ে আসে।রুমে ঢুকে দেখে আরিয়ান সুফায় বসে আসে, সে তাকে কফি দিয়ে নিচে চলে যায়।সে ৯ টার দিকে আবার রুমে ঢুকে, রুমে ঢুকতেই সে অবাক হয়ে যায় আরিয়ান রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে একটা ব্লু সার্ট পরেছে সাথে ব্ল্যাক ব্লেজার ম্যাচিং করা প্যান্ট,সাথে হাতে ব্যান্ডেড ওয়াচ,সিল্কি চুলগুলো হাল্কা বাতাসে উড়ছে,সে একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান তার দিকে তাকাতেই সে অন্য দিকে তাকিয়ে তাকে প্রশ্ন করে,”আপনি এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন?”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,” আমার এক ফ্রেন্ডের পার্টিতে যাচ্ছি,ফিরতে অনেক রাত হবে।”

এই বলে সে চলে যায়,অদ্রিতা আরিয়ানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।আর নিজের মনে মনেই ভাবতে থাকে,

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে আমার যা চাওয়া- পাওয়া তার সবই অপূর্ণ থেকে যায়। আমার কোন চাওয়াই কখনো পূর্ণতা পায় না।এই #অপূর্ণতা গুলোই আমাকে হতাশ করে। আমাকে ভেতরে ভেতরে কুড়ে কুড়ে খায়।কিন্তু পরে মনে হয়,এই অপূর্ণতা আছে বলেই জীবনতা এত সুন্দর। জীবনের সব চাওয়া- পাওয়ার পূর্ণতা পেতে নেই।হয়তো জীবনে কিছুটা #অপূর্ণতা থাকা ভালো।
জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া যদি পূর্ণ হয়ে যায়,
সব যদি পেয়েই যাই,
তবে তো সব ইচ্ছেও শেষ হয়ে গেল।
আর ইচ্ছে শেষ হওয়া মানে তো,,
জীবনের সব স্বাদই শেষ হয়ে যাওয়া!
তাই থাকুক না জীবনে কিছুটা #অপূর্ণতা।হয়তো এই অপূর্ণতার মাঝেই লুকিয়ে আছে জীবনের পূর্ণতা আর এটাই হয়তো জীবনের রীতি!

আরিয়ান পার্টিতে চলে যায়,ভিতরে ঢুকতেই সে রাইশাকে দেখতে পায়।রাইশাকে দেখেই সে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ রাইশাকে অনেক সুন্দর লাগছে,সে একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে আছে যা পুরো পা পর্যন্ত ডাকা হলে কি হবে ড্রেসটার এক পাশ দিয়ে হাঁটুর উপর পর্যন্ত ফাঁড়া।যার ফলে তার ধবধবে সাদা পা দেখা যাচ্ছে। গোলাপি কালারের
ড্রেসটা তার সৌন্দর্য যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঠোঁটে ম্যাচিং লিপস্টিক,চুল গুলো একটু ফুলিয়ে ছেড়ে রেখেছে,মাঝে মাঝে উড়ে তার মুখের পড়ছে।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছি,একদম অন্য রকম লাগছে তাকে আজ।পুরো আমার মনের মতো।

রাইশা আরিয়ানকে দেখেই দৌড়ে তার কাছে আসে আর বলে,ওয়েলকাম টু দা পার্টি।আজ তোমাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।

আরিয়ান মুগ্ধ হয়ে বলে,” তোমাকেও আজ খুব সুন্দর লাগছে, আমি তো চোখই ফেরাতে পারছি না।”

রাইশা একটু মন খারাপ করে বলে, কেন অন্য দিনকি আমাকে দেখতে বাজে লাগে?

আরিয়ান ব্যস্ত হয়ে বলে,”আরে না,আমি কি তা বলছি?তোমাকে তো সব সময়ই সুন্দর লাগে।”

রাইশা হেসে বলে,” তুমিও না,মজাও বুঝো না।আমি তো একটু মজা করছিলাম,হি হি হি।আচ্ছা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন, ভিতরে চলো।জানো তোমার জন্য আমি আধা ঘন্টা ধরে ওয়েট করছি।এত দেরি করেছো কেন?”

আরিয়ান বিষন্ন কন্ঠে বলে,” জানোই তো বাড়িতে সবকিছু সামলিয়ে আমাকে আসতে হয়েছে।তাছাড়া রাস্তায় একটু জ্যাম ছিল,তাই একটু দেরি হলো।”

রাইশা আর কিছু না বলে আরিয়ানের হাত ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে যায় পরে মাইক নিয়ে বলে,”Hey guys, Attention please.”

রাইশা কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায় পরে রাইশা আবার বলা শুরু করে,আমি এতক্ষন ওর জন্যই ওয়েট করছিলাম।মিট মাই উড বি হাসবেন্ড এন্ড নাও মাই বয়ফ্রেন্ড মি. আরিয়ান চৌধুরী।আমরা খুব দ্রুতই বিয়ে করছি,সো কনগ্রেট আস্।

রাইশার কথা শুনে পার্টির সবাই আর আরিয়ানও অবাক হয়ে যায়। পার্টির অনেকই আরিয়ানকে চিনে আর তার বৌ ভাতেও গিয়েছে।এই কথা শুনে তারা কানাঘুষা করতে থাকে। আরিয়ান রাইশাকে অন্য পাশে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,”What are you saying? you know that i am married. Than how can this possible?”

রাইশা মুসকি হেসে বলে,”So what?তুমি কি আমার কথায় খুশি হয়নি বেবি?তুমিতো চাইতে আমি তোমার ওয়াইফ হই।তবে পবলেম কোথায়?”

আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,”তুমি বুঝছো না কেন,আমি এখন বিবাহিত। তোমাকে এখন বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।সব জেনেও কেন এইসব বলছোআর সবাই এখন কি ভাববে?”

রাইশা শান্ত স্বরে বলে,” আচ্ছা এখন এইসব কিছু বাদ দাও,পরে তোমাকে আমি সব কিছু বুঝিয়ে বলবো।এখন চলো পার্টিটা ইনজয় করি।”

আরিয়ান আর কিছু বলে না।রাইশা কেক কেটে আরিয়ানকে খাইয়ে দেয় তার পরে আরিয়ানের হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে গিয়ে বলে,”চলো ডান্স করি।আরিয়ানও কিছু না বলে রাইশার সাথে ডান্স করে।”

রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা বাজে।পার্টি,মিউজিক, খাবার- দাবার,ডান্স শেষে অনেকেই চলে গেছে।রাইশা এখনো পার্টিতে আছে।কয়েকটা ছেলে তাকে দেখে বাজে কমেন্ট করছে।

মেয়েটা দেখতে তো সেই,ফিগার দেখছিস্,পুরোই মাখন,,,,একটি ছেলে বললো।

হুমম,ঠিক বলছিস্,আজকের রাতের জন্য যদি পেতাম তবে রাতটা সপ্নের চেয়েও ভালো কাটতো।অন্য জন বললো।

আরও নানা বাজে কথা বলতে লাগলো,ছেলেগুলোর কথা শুনে আরিয়ান রাগে ফুসতে লাগলো।মন চাচ্ছে এগুলোকে মেরে এখানে পুঁতে রাখতে।কিন্তু সে চায় না কোন সিন ক্রিয়েক্ট করতে তাই কিছু বললো না।সে রাইশার কাছে গিয়ে বলে,চলো অনেক রাত হয়ে গেছে তোমাকে হোটেলে দিয়ে আসি।

আরিয়ানের কথা শুনে রাইশা তার দিকে তাকায় আর বলে আচ্ছা।একটু ওয়েট করো,
পরে মাইক নিয়ে বলে,”Hey guys, attention please.”

সবার তার দিকে তাকাতেই আবার বলে,আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আমার এমন একটি দিনে আমার পাশে থাকার জন্য।এখন আপনারা সবাই আসতে পারেন।পার্টি আজকের জন্য শেষ, সো বাই অল।

রাইশার কথা শুনে সবাই বাহিরে বেরিয়ে যায়।রাইশা আর আরিয়ানও বাহিরে বেরিয়ে আসে।পরে রাইশা আরিয়ানকে বলে,
.
..

চলবে,,,,,,,,,,,

(কালকে আমি গল্পটি দিতে পারবো না, তার জন্য সরি।তাই কেউ ওয়েট করে থাকবেন না,,,,)
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৪

রাইশার কথা শুনে সবাই বাহিরে বেরিয়ে যায়।রাইশা আর আরিয়ানও বাহিরে বেরিয়ে আসে।পরে রাইশা আরিয়ানকে বলে,’তুমিতো গাড়ি আনোনি।এক্সিডেন্টের পরে গাড়ি রিপেয়ারের জন্য দিয়েছো আর এত রাতে গাড়িও পাবে না।আমি গাড়ি এনেছি চলো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে।”

আচ্ছা,,,,,,

রাইশা গাড়ি চালাচ্ছে আর আরিয়ান মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।রাইশা তা খেয়াল করে বলে,
আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আজ তোমাকে একদম পরির মতো লাগছে,আমিতো চোখই ফেরাতে পারছি না।

ওহ তাই, আচ্ছা এখন নামো।নাকি গাড়িতে থাকার প্ল্যান আছে।আমরা এসে পরেছি।
রাইশার কথা শুনে আরিয়ান গাড়ি থেকে নামে তার পিছু পিছু রাইশাও গাড়ি থেকে নেমে যায়। রাইশাকে নামতে দেখে আরিয়ান বলে,তুমি গাড়ি থেকে নামছো কেন?

রাইশা একটু মজা করে বলে,” আজ তোমার সাথে তোমার বাড়িতে যাবো।আঙ্কেল – আন্টির সাথে দেখা করবো তো তাই।

আরিয়ান ভয় পেয়ে বলে,” কি বলছো এইসব? এত রাতে তোমাকে আমার সাথে দেখলে মা-বাবা কি ভাববে?”

রাইশা হেসে বলে,”আরে মজা করছি আর পার্টিতে আমি যা বলছি তা কিন্তু মজা ছিল না।সত্যিই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”

আরিয়ান বিষন্ন কন্ঠে বলে,” তা এখন আর সম্ভব নয়,আমি বিবাহিত। মা-বাবা কোন ভাবেই তা মেনে নিবে না।”

তুমি তো আমাকেই পছন্দ করো আর ওই মেয়েকে তো তুমি এখনো নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারোনি। আর বাকি রইল আঙ্কেল – আন্টির কথা, তুমি তাদের একমাএ ছেলে। হয়তো দুই- এক দিন রাগ করে থাকবে কিন্তু পরে ঠিকই মেনে নিবে।ততো দিন না হয় তুমি আমার সাথে নিউইয়র্কে গিয়ে থাকবে।দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে আর আমি কি এতোই খারাপ যে আমাকে মেনে নিতে পারবে না?

আরিয়ান একটু ভেবে বলে,” কিন্তু অদ্রিতা,তার কি হবে?”

আর কোন কিন্তু নয়।আমার হাতে বেশি সময় নেই যাস্ট ১ সপ্তাহ।তুমি যদি চাও আমাকে বিয়ে করতে তবে ওই মেয়েকে তোমার ডিবোর্স দিতে হবে।আর তোমাকে আমি কোন কিছুর জন্য জোর করবো না।তুমি সিদ্ধান্ত নেও কি করবে?ওই কালো মেয়ের সাথে সারা জীবন সংসার করবে না আমার মতো কারো সাথে। ডিসিশন ইস ইউর,আমার আর কিছু বলার নাই।

রাইশা আর কিছু বলে না আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে।রাইশা হঠাৎই তাকে জরিয়ে ধরায় সে অবাক হয়।রাইশা তাকে ছেড়ে পরে তার কপালে একটা কিস করে চলে যায়।
আরিয়ান কিছুক্ষন রাইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাড়িতে ঢুকতে যাবে তখনই তার বেলকনির দিকে চোখ যায়।

বেলকনিতে তাকাতেই সেখানে কেউ দাঁড়িয়ে আছে,আবছা আলোতে তার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সে আর অন্য কেউ নয়,অদ্রিতা।স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অদ্রিতাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার অস্বস্তি হচ্ছে।এই শীতেও সে ঘামছে।মনে মনে ভাবছে,অদ্রিতা সব কিছু দেখেনি তো।এখন কি হবে।সে আর এক মূহুর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে বাড়ির ভিতরের আসতে থাকে।

অন্যদিকে রাত প্রায় দেড়টা বাজে এখনো ওনী আসছেন না।এমনেতেই ওনার শরীর খারাপ তার উপরে এত রাত করে বাহিরে থাকলে শরীর আরোও বেশি খারাপ করবে। সে আরিয়ানের কথা ভাবতে থাকে এমন সময় হঠাৎ গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে সে গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোটে সবকিছু দেখা যাচ্ছে।গাড়ি থেকে আরিয়ান নামার সাথে সাথেই তার মন খুশিতে ভরে যায় কিন্তু পরক্ষনেই একটি মেয়েকে তার সাথে বেরুতে দেখে তার মুখটা কালো হয়ে যায়।মেয়েটা যখন ওনাকে জরিয়ে ধরলো তখন মন চাচ্ছিল গিয়ে ঠাসিয়ে একটা চর মারি। কেমন নিলজ্জ, বেহায়া মেয়েরে বাবা।এত রাতে পরপুরুষের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার উপরে আবার তাকে জরিয়ে ধরে,,,ছিঃ ছিঃ,,,

আরিয়ান বেল ২-৩ বার বেল বাজাতেই খালা দরজা খুলে দেয়।ঘুম ঘুম চোখে আরিয়ানকে দেখে অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করেন,আরিয়ান বাবা আপনি এত রাতে কোথায় থেকে এসেছেন।আর এতক্ষনই বা কোথায় ছিলেন?

আরিয়ান কিছু না বলে উপরে চলে যায়।খালা মনে মনে বলে,বড়লোকদের যে কি কাজ থাকে জানি না বাপু।রাতবিরাতে কি যে করে।এত রাতে আমার ঘুমটা নষ্ট করলো।সে কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরে।

আরিয়ান রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।অদ্রিতার কাছে যায় আর বলে তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু নয়,আমি তো জাস্ট।

অদ্রিতা আরিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,আপনি তো কি?আর আমি ভাবছি তা যদি নাই হয় তবে ওই মেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরলো কেন আর কেনই বা আপনাকে কিস করলো?সেদিন যখন আমি জড়িয়ে ধরলাম তখন সাথে সাথে আমাকে চর মারলেন।আমার স্পর্শ সহ্য হয় না।কিন্তু আপনিও তো ওই মেয়েকে জরিয়ে ধরলেন,কে ছিল মেয়েটা?

আরিয়ান অদ্রিতার মুখের দিকে তাকাতেই দেখে, তার চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অসম্ভব রেগে আছে।অদ্রিতাকে এততা রাগ করতে সে আর কখনো দেখিনি।আজ প্রথম অদ্রিতার দিকে তাকাতে সে সাহস পাচ্ছে না।এখন সে কি বলবে তা তার জানা নেই।তাই চুপ করে আছে,

আরিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে সে আবার বলা শুরু করে,আপনার লজ্জা করলো না ঘরে বউ থাকতে এত রাতে একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরতে,তাকে জড়িয়ে ধরতে। আমি ভাবতাম আপনি রাগী হলে কি হবে আপনার মন অনেক ভালো আর একদিন ঠিক আমাকে মেনে নিবেন কিন্তু আপনার মন- মানসিকতা এত নিকৃষ্ট জানা ছিল না।আপনার বিবেকে কি একটুও বাঁধলো না।আপনি পরকিয়ায় জড়িয়ে পরবেন তা কোনদিন ভাবিও নি।তা মেয়েটা কে ছিল,আপনার রাক্ষিতা নাকি?নিলজ্জ, বেহায়া একটা মেয়ে।

অদ্রিতার কথা শুনে রাগে আরিয়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,,,,,
.
..

চলবে,,,,,,,,,
..
.,)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here