অপূর্ণতা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯+৪০

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৭

রাইশা মজা করে বলে,”তোমার জন্য এসেছি। তুমি তো ভালো নেই।তুমি খারাপ আছো শুনে কি করে থাকতে পারি বলো?তাই তো চলে এলাম।

রাইশার কথা শুনে আরিয়ান পুরোই অবাক হয়ে যায়। পরে বলে,”মানে,কি বলছো এইসব!”

আরে এত সিরিয়াস হচ্ছো কেন?আমি তো জাস্ট মজা করেছি।এখানে একটা সো এর জন্য এসেছি।

আরিয়ান ছোট করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে,” ওহ আচ্ছা। তাই বলো,তো এখানে কোথায় উঠেছো?”

একটি হোটেলে উঠেছি।ওইখান থেকেই ঠিক করে দিয়েছে আর কোন পবলেম হলে তুমি তো আছোই। তাই না?

হুমম,কোন পবলেম হলে আমাকে বলো। আমি হেল্প করার চেষ্টা করবো।এইসব নিয়ে একদম টেনশন করতে হবে না।

রাইশা একটু মন খারাপ করে বলে,” তা তো জানিই।আচ্ছা কালকে আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবে? অনেকদিন পরে দেশে এসেছি তো তাই একটু ঘুরতে ইচ্ছে হলো।তাই বললাম,তোমার যদি কোন পবলেম হয় তবে থাক। যেতে হবে না।

কি যে বলো না।আমার আবার কি পবলেম হতে পারে?

রাইশা মজা করে বলে,” না,মানে! তোমার তো নতুন বিয়ে হলো যদি বউকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার প্যান থাকে তাই বললাম।তবে তো মনে মনে আবার আমাকে বকবে।তাই আগেই থেকেই একটু সিউর হয়ে নিচ্ছি।”

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,” ওই মেয়েকে নিয়ে আমি ঘুরবো এটা কখনোই সম্ভব নয়।আর তুমি তো জানোই আমি ওকে স্ত্রী হিসেবে মানি না। তবে সব জেনেও এই সব কেন বলছো?

আরে বাবা সরি।অল্পতেই এত রাগ করো কেন? আচ্ছা তবে কাল সারাদিন ঘুরবো ঠিক আছে।তোমাকে কিন্তু সকাল সকালই আসতে হবে।মনে থাকবে তো,,,,

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,” আচ্ছা,তবে কাল সকালে তোমার হোটেলের সামনে চলে আসবো।তুমি রেডি থেকো।”

রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,” Yes, obviously.”

তাদের কথা বলার মাঝেই ওয়েটার খাবার নিয়ে চলে আসে।তারা খেতে খেতেই গল্প করতে থাকে।রাইশাকে আরিয়ান ভালোবাসতো।আরিয়ানের এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে তাদের প্রথম দেখা হয়।প্রথম দেখাতেই আরিয়ানের রাইশাকে ভালো লেগে যায়।রাইশা যেমন দেখতে সুন্দরী,তেমন স্মার্ট, শিক্ষিতা একজন মেয়ে।তাকে দেখে যে কেউই চোখ ফেরাতে পারবে না।প্রথম দেখায় যে কেউ তাকে ভালোবেসে ফেলবে।যেমনটা আরিয়ানের ক্ষেএে হয়েছে।তখন থেকেই তাদের মধ্যে কথা- বার্তা, দেখা-সাক্ষৎ শুরু হয়।তারা খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়।আরিয়ান তার প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়ে পরে।সে রাইশাকে অন্য কারো সাথে সহ্যই করতে পারতো না তাই একদিন সে রাইশাকে প্রপোজ করে আর রাইশার ও আরিয়ানকে ভালো লাগতো তাই সেও প্রপোজাল একসেপ্ট করে নেয়।তাদের দিনগুলো খুব ভালো ভাবেই কাটতেছিল। ৩ বছর যে কিভাবে চলে যায় তা তাদের দুইজনের কেউই বুঝতে পারেনি কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই রাইশা আরিয়ানকে বলে,
আমাকে নিউইয়র্কে যেতে হবে।আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল নিউইয়র্কে গিয়ে মডেলিং এর কোর্স কমপ্লিট করার।আজ আমি সেই সুযোগটা পেয়েছি।

তুমি এখন এত দূরে গেলে আমার কি হবে?তুমি তো জানোই আমি তোমাকে কত ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো বলো?

রাইশা করুন স্বরে বলে,”প্লিজ এইভাবে বলো না।তুমি যদি এইভাবে বলো তবে আমি কি করে যাবো?তুমি তো জানোই এটা আমার ছোটবেলার ড্রিম। তুমি কি চাও না আমি আমার ড্রিমটা পূরন করি?

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছলছল চোখে রাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,” আচ্ছা যাও।”

সেদিন আরিয়ান আর কিছু বলেনি। সেখান থেকে সোজা বাড়িতে চলে আসে।আর কিই বা বলতো সে?সেদিন সত্যিই তার কিছু বলার ছিল না।আজ ৪ বছর পরে তাদের আবার দেখা হলো। রাইশাকে দেখে তার অদ্রিতার কথা একবারের জন্যও মনে হলো না।রাইশাকে এতবছর পরে দেখে সে অনেক খুশি। ডিনার করা শেষ হলে সে রাইশাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে নিজেও বাড়িতে চলে আসে।
কলিং বেল বাজাতেই অদ্রিতা সাথে সাথেই দরজা খোলে দেয়।আরিয়ান একবারের জন্যও অদ্রিতার দিকে তাকায় না। কোন কথা না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে যায়।

আরিয়ানকে এইভাবে দেখে অদ্রিতার খারাপ লাগছে। সকালে সে রাগের মাথায় আরিয়ানকে অনেক কথা শুনিয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আরিয়ান তখন এতগুলো কথা বলা তার ঠিক হয়নি। এখন তার নিজের ভিতরেই এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করছে।এমনটা সে না করলেই পারতো। আরিয়ান তো তার ভুল বুঝতে পেরেছিল তারই উচিত হয়নি সেটাকে আরও বাড়তে দেওয়া। তাই সে দরজা লাগিয়ে আরিয়ানের পিছনে পিছনে রুমে চলে যায়।রুমে ঢুকে দেখে আরিয়ান ওয়াশরুমে চলে গেছে ফ্রেস হতে। অদ্রিতা রুমের ভিতরেই ওয়েট করতে থাকে আরিয়ানের জন্য।

আরিয়ান ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলে অদ্রিতা তার কাছে যায় আর বলে, সকালের জন্য ক্ষমা করে দিবেন।আমি হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছিলাম।আমার উচিত হয়নি আপনার সাথে তখন ওই ভাবে কথা বলা।সরি এমন ভুল আর হবে না।

আরিয়ান ছোট করে বলে,” হুমম,ঠিক আছে।”

আপনি নিচে আসেন আমি আপনার জন্য খাবার গরম করে দিচ্ছি।

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,”তার কোন দরকার নেই।আমি ডিনার করে এসেছি। কোন কাজ না থাকলে লাইট অফ করে দাও আমি ঘুমাবো।আরিয়ান আর কিছু না বলে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পরে।”

আরিয়ানের এমন ব্যবহারে অদ্রিতা কষ্ট পাচ্ছে। মনে মনে সে নিজেকেই দোষ দিচ্ছে।ভাবছে সে একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছে।তারই উচিত হয়নি আরিয়ানকে ওইভাবে কথা শুনানোর।তার সরল মন ভাবতেই পারছে না এই সব কিছুর পিছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে, যা তছনছ করে দিবে সবকিছু!
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৮

আরিয়ানের এমন ব্যবহারে অদ্রিতা কষ্ট পাচ্ছে। মনে মনে সে নিজেকেই দোষ দিচ্ছে। ভাবছে সে একটু বেশিই রিয়েক্টে করে ফেলেছে।আরিয়ানকে ওই ভাবে কথা বলা তার ঠিক হয়নি।অথচ আরিয়ান যে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।তার গায়ে হাত তুলেছে
সে কথা সে ভুলে গেছে।সে শুধু আরিয়ানের খারাপ লাগার কথাই ভাবছে নিজের কথা একটুও ভাবছে না।

অদ্রিতাও আর কিছু বলে না।বিছানা থেকে কম্বল আর বালিশ নিয়ে সুফায় গিয়ে শুয়ে পরে।সে ভেবেছিল আরিয়ান হয়তো তাকে ডাক দিবে,বিছানায় এসে শুতে বলবে কিন্তু আরিয়ানের অদ্রিতার দিকে কোন খেয়ালই নেই। সে একবারের জন্যও অদ্রিতার দিকে তাকায় না।অদ্রিতা সুফায় ঘুমিয়ে পরে,মাঝ রাতে অদ্রিতার ঘুম ভেঙে যায়।বিছানায় তাকিয়ে দেখে আরিয়ান বিছানায় নেই।বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখে,বেলকনির দরজা খোলা।সে আর কিছু না ভেবে বেলকনিতে চলে যায়।সেখানে গিয়ে দেখে আরিয়ান কারো সাথে কথা বলছে।সে কিছু না বলেই বেলকনি থেকে চলে আসে।অদ্রিতা ভালো করেই জানে এতো রাতে অফিসের কোন কল হবে না।সে একজন শিক্ষিত মেয়ে,সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে হয়তো পছন্দের কেউ হবে।নয়তো এত রাতে এভাবে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলতো না।তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আরিয়ান তাকে এখনো মেনে নেয়নি।তার সাথে সব সময় খারাপ ব্যবহার করে। এইসব কিছুই সে মেনে নিয়েছে কিন্তু এখন যদি আরিয়ান অন্য কাউকে পছন্দ করে তবে সে কি করে তা মেনে নিবে?একজন মেয়ে তার সব কিছুর ভাগ অন্য কাউকে দিতে পারে।কিন্তু সে তার স্বামীকে কখনোই অন্য কারো সাথে দেখতে পারে না।নিজের স্বামীকে অন্য কারো সাথে ভাগ করে নিতে পারে না।

এইসব কিছু ভেবেই তার মন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলিয়ে মনে মনে বলে,আমি হয়তো ভুল ভাবছি।ওনী কখনোই আমাকে ধোঁকা দিতে পারেন না।জানি ওনী একটু রাগি তাই বলে কি ওনার মনটা অনেক ভালো।আমাকে পছন্দ হয়নি তা স্বত্ত্বেও আমার মা- বাবার সাথে কত ভালো ব্যবহার করলেন।আমার ভাই- বোনের সাথে এমন ভাবে কথা বলেছেন মনে হয়েছে যেন ওরা ওনারই ভাই- বোন।ওনী কখনোই এমনটা করতে পারে না।হয়তো ওনার কোন পুরনো ফ্রেন্ড হবেন।অনেকদিন পরে যোগাযোগ হলো তাই কথা বলছেন।আমিই একটু বেশি ভাবছি।

অদ্রিতা অন্য সব বাঙালি মেয়েদের মতোই নিজেকে স্বান্তনা দিলো। ভুল ধারণা নিয়ে থাকলো যে তার স্বামী আর যাই করোক তাকে কখনো ঠকাতে পারে না।কিন্তু কাউকে এতটা অন্ধের মতো বিশ্বাস করাও ঠিক না।তার জন্য সব সময় পস্তাতে হয়।কষ্ট ভোগ করতে হয়। বিশ্বাসের মূল্য দিতে কেউ জানে না।

স্ত্রীরা স্বামীর একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব কিছু সহ্য করে। তার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব সময় অপেক্ষা করে কিন্তু স্বামীরা তাদের স্ত্রীকে কখনো বুঝে না। তাদের কাছে স্ত্রীর ভালোবাসা, বিশ্বাস আর অপেক্ষার কোন মূল্য থাকে না।সব সময় তারা শুধু তাদের অবহেলা করে যায়। আর দিনের পর দিন ঠকিয়ে যায়।যেমনটা আরিয়ান করছে অদ্রিতার সাথে। অদ্রিতা তার একটু ভালোবাসা, কেয়ার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করছে। তাকে এত অবহেলা, অপমান করা স্বত্বেও সে শুধু তারই কথা ভাবছে কিন্তু আরিয়ান তাকে ঠকাচ্ছে। সে রাইশার সাথে কথা বলছে অদ্রিতার কথা তো তার মনেই নেই।প্রায় ১ ঘন্টা পরে আরিয়ান রুমে ঢুকে দেখে অদ্রিতা সুফার উপরে বসে আছে। একা একা কি যেন ভাবছে।

অদ্রিতাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে তার রাগ উঠে যায়।মনে মনে ভাবে,এত রাতে উঠে আমার কথা শুনছিল।আমার উপর গোয়েন্দা গিরি করা। তাই ভ্রু কুঁচকে অদ্রিতার দিকে তাকিয়েই বললো,
তুমি এখানে বসে বসে কি করছো?জানো না কারো কথা লুকিয়ে শুনা ব্যাড ম্যান্নারস্।নাকি এইটুকুু জ্ঞান নেই ভিতরে। নাকি আমাকে সন্দেহ করে গোয়েন্দা গিরি করছো।এমনটা ভুলেও করতে যাবে না।আমি কার সাথে কথা বলবো না বলবো তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার জন্য কখনোই তোমাকে আমি কৈফিয়ত দিতে যাবো না।আর একদিন তোমাকে ঘোরের মাঝে নিজের কাছে টেনে নিয়েছি বলে ভুলেও ভাববে না আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি।আমি তোমাকে এখনো নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। আর কখনো মেনে নিতে পারবো কিনা তাও আমার জানা নেই।তাই ভুলেও আমার উপর স্ত্রীর অধিকার খাটাতে আসবে না।কথা গুলো ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও।

আরিয়ান আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রিতা তাকে থামিয়ে দেয়।সে তো আরিয়ানের কথা শুনে পুরোই অবাক হয়ে গেছে।সে তো এইসব কিছু ভাবেনি বা লুকিয়ে লুকিয়ে তার কথাও শুনেনি।হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে যায় আর অারিয়ানকে না দেখতে পেয়ে বেলকনিতে যায় কিন্তু সে যখন দেখে সে অন্য কারো সাথে কথা বলছিল তখন সেখান থেকে চলে আসে। ঘুম আসছিল না তাই সুফার উপর বসেছিল।সে তো তার কাছে কৈফিয়ত চায়নি। না সে কখনোর স্ত্রীর অধিকার খাটিয়েছে।এই ভেবে তার খারাপ লাগছে আর রাগও উঠেছে আরিয়ানের উপর তাই বলে উঠলো,

আমি কখনোই আপনার উপর স্ত্রীর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করিনি আর না কখনো করবো।আমি আপনার কথার শুনার জন্য এখানে বসে থাকিনি।হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গিয়েছে তাই বসে আছি।লুকিয়ে কারো কথা শুনার অভ্যাস আমার নেই আর না আমাকে আপনার ম্যান্নারস শিখাতে হবে। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা আমি জানি।আপনার কাছে আমি কোন কিছুর কৈফিয়ত চাইনি।আর না আপনাকে সন্দেহ করেছি।আপনি আমাকে মেনে নেননি তা আমি জানি হাজার বার এককথা বলতে হবে না।সে আর কিছু না বলে অন্য দিক ফিরে সুফায় সুয়ে রইলো।

অদ্রিতার অনেক কষ্ট হচ্ছে।তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।সব কিছু বিষাদময় লাগছে তার কাছে।সে তো তাকে কিছুই বলেনি তবুও তাকে এতোগুলো কথা শুনানোর মানে সে বুঝতে পারছে না।এইসব ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমিয়ে পরে।

অন্যদিকে অদ্রিতার কথা শুনে আরিয়ান স্তব্ধ হয়ে যায়।কিছুক্ষন চুপ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে পরে বিছানায় গিয়ে শুয়।মনে মনে ভাবতে থাকে অদ্রিতাকে অযথা এতোগুলো কথা শুনানো তার ঠিক হয়নি।কেন জানি তার নিজের ভিতরেই খারাপ লাগছে।কিন্তু অদ্রিতাকে কিছু বলে না।সেও ঘুমিয়ে পরে।

পরের দিন সকালে আরিয়ান সকালের নাস্তা খেয়ে রেডি হতে রুমে আসে। রাইশাকে নিয়ে আজ সে ঘুরতে যাবে ভেবেই তার মনে ভিতরে ভালো লাগা কাজ করছে।অদ্রিতাও সব কিছু গুছিয়ে রুমে চলে আসে। রুমে ঢুকেই দেখে আরিয়ান রেডি হয়ে আছে আর কোথাও যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে।

আরিয়ান রেডি হয়ে বের হতে নিলেই দেখে সামনে অদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে।তাকে দেখেই মূহুর্তের মাঝেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। অদ্রিতাকে তার এখন সহ্যই হয় না।তাই কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলে,”আমাকে আজ একটু অফিসের কাজে বাহিরে যেতে হবে।ফিরতে অনেক রাত হবে।”

আজ তো শুক্রবার।

অদ্রিতার কথা শুনেই আরিয়ানের রাগ উঠে যায়।সে ভ্রু কুচকে রাগে কিছুটা জোরেই বলে,
তো কি হয়েছে?কি বলতে চাইছো তুমি?আমি অন্য কোথাও যাচ্ছি আর রাতেই তো বললাম আমার কোন কাজের কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো না। তবে কোন সাহসে এখন আবার আমাকে প্রশ্ন করছো?আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।আমার লেট হচ্ছে,,,,

আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা স্তব্ধ হয়ে যায়। চুপচাপ সেখানে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।আসলে সে এখন কি করবে বা বলবে তাই বুঝতে পারছে না।তাই যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।

আরিয়ান দেখে অদ্রিতা সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। একচুলও নড়ছে না।তা দেখে তার রাগটা আরও বেড়ে যায়।তাই চিল্লিয়েই বলে,”আমি তো তোমাকে কিছু বলেছি।মুর্তির মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে সরে দাঁড়াও।আমার লেট হচ্ছে, ইডিয়ট।”
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৯_৪০

অারিয়ান দেখে অদ্রিতা সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। একচুলও নড়ছে না।তা দেখে তার রাগটা আরও বেড়ে যায়।তাই চিল্লিয়েই বলে,” আমি তো তোমাকে কিছু বলেছি।তাই মূর্তির মতো আমার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে সরে দাঁড়াও। আমার লেট হচ্ছে, ইডিয়ট।”

অদ্রিতা আর কোন কথা বলে না।সে আরিয়ানের সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।আরিয়ান নিচে নেমে তার মা-বাবাকে মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আরিয়ান যাওয়ায় সাথে সাথে অদ্রিতা নিচে নেমে আসে।সে সুফায় এসে বসে থাকে, আরিয়ানের ব্যবহার তাকে ভেতরে ভেতরে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। এখন তার খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু তাও করতে পারছে না।জীবনটা অাসলেই অনেক অদ্ভুত। এখানে ভালোবাসা, বিশ্বাসের কোন মূল্য নেই। মূল্য নেই ভালো মানুষের, এইসব ভাবছে আর মন খারাপ করে সুফায় চুপচাপ বসে আছে।তার শ্বাশুড়ি এসে দেখে অদ্রিতা সুফায় চুপচাপ বসে আছে, দেখে মনে হচ্ছে তার মন ভালো নেই।তাই তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,,,,
কি হয়েছে মন খারাপ করে বসে আছো কেন?

অদ্রিতা ছোট করে বলে,” এমনি,,”

অদ্রিতার শ্বাশুড়ি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,” সব কিছু ঠিক আছে তো।আরিয়ান কি তোকে কিছু বলেছে?”

না,মা।ওনী কিছু বলেননি,,,,,

তবে মন খারাপ কেন?বাড়ির কথা মনে পরছে বুঝি।

অদ্রিতা করুন স্বরে বলে,”হুমম,,,”

আমাকে কি তোর মা বলে মনে হয় না।বাড়ির কথা মনে পরলে আমার কাছে চলে আসবি।আমি তো তোর মা- ই।আচ্ছা আরিয়ান আজ বাড়ি ফিরুক বলবো তোকে নিয়ে একবার ওই বাড়িতে ঘুরে আসতে।

অদ্রিতা মুচকি হেসে বলে,”তুমি আর বাবা সত্যিই অনেক ভালো, বলে তার শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে।”

পাগলি মেয়ে আমার,বলে হেসে দেন।

অন্যদিকে আরিয়ান রাইশার হোটেলের সামনে গিয়ে রাইশা কল দিয়ে বলে নিচে আসতে।রাইশা ৫ মিনিটের মধ্যে নিচে চলে আসে।আরিয়ান রাইশাকে গাড়িতে উঠতে বলে আর রাইশাও গাড়িতে উঠে পরে।পরে আরিয়ান তাকে জিজ্ঞেস করে,”আজ কোথায় যাবে?”

রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,” তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।”

ওহ তাই!তবে চলো আজ সিলেটে ঘুরে আসি?

রাইশা অবাক হয়ে বলে,” তা তো এখান থেকে অনেক দূরে।আসতে আসতে তো অনেক রাত হয়ে যাবে।তোমার বউ আবার কিছু বলবে নাতো?ও তো আমার তোমাকে ভুল বুঝতে পারে।

আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,”সে কি বলবে,আর সে ভুল বুঝক বা না বুঝক তাতে আমার কিছু না।ওকে আমার একদম পছন্দ না।আমি যাস্ট ওকে সহ্য করতে পারি না।”

রাইশা মজা করে বলে,” তবে কি এখনো আমাকে পছন্দ করো নাকি?”

আরিয়ান মজা করে বলে,” উহু,,,,,তোমাকে কেন পছন্দ করতে যাবো?”

রাইশা মন খারাপ করে বলে,” কি!তবে আমাকে নিয়ে ঘুরতে কেন আসলে?থাক আমাকে নিয়ে তোমার ঘুরতে যেতে হবে না।”

আরিয়ান হেসে বলে,” আরে বাবা মজা করছিলাম। আমি তো তোমাকেই পছন্দ করতাম আর তোমাকেই নিজের স্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছি,কিন্তু,,,, ”

তুমি চাইলে এখনো হয়তো তা সম্ভব বলে রাইসা রহস্যময় হাসে।

আরিয়ান রাইসার কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে,”মানে,কি বলছো তুমি এসব?আমি এখন বিবাহিত। এখন তা কি করে সম্ভব?”

তা পরে জানতে পারবে,এখন যাওয়া যাক।

আরিয়ান ছোট করে বলে,” আচ্ছা,,,,, ”

পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে।বাহিরের অপরুপ দৃশ্য,সারি সারি গাছ।সব কিছু সবুজে ঘেরা,এইসব কিছু দেখতে দেখতে কখন যে জাফলং চলে এসেছি তার খেয়ালই হলো না।জাফলং পৌঁছেই আমি গাড়ি থামালাম।
আমরা জাফলং চলে এসেছি,এখন নামো।

রাইশা অবাক হয়ে বলে,” এত তাড়াতাড়ি, আর এইটা কোন রাস্তা?মানে আমি আগেও এখানে এসেছি,তখন তো মনে হয় অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।”

এখন আমরা গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্টে এসেছি।এ রাস্তা অধিক জনপ্রিয় আর এখান দিয়ে আসতে সময়ও অনেক কম লাগে, তাই এখান দিয়ে এলাম।

ওহ আচ্ছা, জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর।পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে সাদা স্বচ্ছ পানি গড়িয়ে নিচে পড়ছে।ঝড়নার দিকে তাকাতেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।সবুজ লতাপাতা ঘেরা পাহাড় থেকে স্বচ্ছ পানি নিচে পাথরে পরছে।বিভিন্ন রঙের সুন্দর সুন্দর পাথর,সে গিয়ে যেখানে পানি পরে তার থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো। স্বচ্ছ পানিতে তার পা ভিজে যাচ্ছে। সে আরও একটু বেশি পানিতে নেমে আরিয়ানকে পানি ছিটিয়ে দিলো।তুমি উপরে কি করছো নিচে নেমে এসো,ভালো লাগবে।

আরিয়ানও নিচে নেমে এসে স্বচ্ছ পানিতে দাঁড়ালো। কিছু এখানে ঘুরাঘুরি করে তারা উপরে উঠে গেল।পরে চা বাগানে গিয়ে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করি,রাইশা অবশ্য কিছু ছবিও তোলে।পরে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।আজ যদি অদ্রিতার জায়গায় রাইশা আমার স্ত্রী হতো তবে সত্যিই অনেক ভালো হতো।কত ইচ্ছে ছিল নিজের বউয়ের হাতে হাত রেখে ঝড়না দেখবো।একসাথে ঝড়নার পানিতে ভিজবো,এই পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথে তার হাতে হাত রেখে গল্প করবো।কিন্তু তা আর হলো কই।
এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।সন্ধ্যার পরিবেশটা আরও অনেক সুন্দর লাগছে।গাছের জন্য এখনই চারিদিকে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেছে।তবুও অদ্ভুত এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছে।সে আর কিছু না ভেবে গাড়ি স্টার্ট দিলো চলে আসার জন্য। প্রায় সাড়ে ১১ টার দিকে সে রাইশাকে তার হোটেলের সামনে নামিয়ে দেয়।

রাইশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, “আজ আমি অনেক খুশি। ভাবতেই পারিনি তুমি আমার সাথে আজ সারাটা দিন থাকবে,জাফলং এ গিয়ে অনেক ভালো লাগলো। আজ অনেক ইনজয় করলাম আর সব তোমার জন্য। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।আর কিছু না বলে আরিয়ানের গালে একটা কিস করে সে চলে যায়।”

রাইশা এমন একটি কাজ করবে তা আরিয়ান একদমই ভাবেনি।সে অবাক হয়ে কিছুক্ষন ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে পরে হেসে সেখান থেকে চলে যায়।

অন্যদিকে অদ্রিতা আরিয়ানের জন্য টেনশন করছে।প্রায় ১২ টা বাজে তবুও ওনী আসছেন না। ওনী তো কখনোই এত রাত করেন না,তবে এখনো কেন আসছে না?কেন জানি তার মন কু ডাকছে,মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটবে।
কিন্তু আরিয়ানকে যে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে সে কোথায় আছে তার সাহস সে পাচ্ছে না।সকালেই তার সাথে ওইভাবে কথা বলেছে।তাকে না করে গেছে তার কোন ব্যাপারে কথা না বলতে।এখন যদি আবার ওনাকে কল দেই তবে নিশ্চয়ই আবার রাগ করবেন,কিন্তু আমার যে অনেক টেনশন হচ্ছে ওনাকে নিয়ে।এখন আমি কি করি?মা- বাবাও তো ঘুমিয়ে গেছেন এত রাতে তাদের ডাকা ঠিক হবে না।

আচ্ছা একবার কল দিয়েই দেখি।আমার সাথে তো খারাপ ব্যবহারই করবে পবলেম নাই,আমার এইসব কিছুই সহ্য হয়ে গেছে,আর কিছু না ভেবে সে আরিয়ানকে কল দেয়।
.
..

চলবে,,,,,,,,,
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪০

আচ্ছা একবার কল দিয়েই দেখি।আমার সাথে তো খারাপ ব্যবহারই করবে পবলেম নাই,আমার এইসব কিছুই সহ্য হয়ে গেছে, আর কিছু না ভেবে সে আরিয়ানকে কল দেয়।২-৩ বার কল দেওয়া পরে আরিয়ান ফোন রিসিভ করে।

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,”ফোন কেন করেছো?”

অনেক রাত হয়েছে তো,তাই টেনশন হচ্ছিল।আপনি ঠিক আছেন তো,কখন আসবেন?

আমি ঠিক আছি,আর আসছি।এই বলে আরিয়ান ফোন কেটে দেয়।আর মনে মনে ভাবতে থাকে,আমি যা করছি তা করা কি আমার ঠিক হচ্ছে? আমার বউটা কালো হলে কি হবে সে আমাকে অনেক ভালোবাসে আর বিশ্বাস করে।আমার কি ঠিক হচ্ছে তার ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে খেলা।তাকে ঠকাচ্ছি না তো আমি,কিন্তু আমি-ই বা কি করবো?আমি যে কিছুতেই তাকে মেনে নিতে পারছি না।পারছি না তাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে।রাইশাকে যত দেখি ততোই আমি তার প্রতি আসক্ত হয়ে যাই।সত্যিই কি আমি রাইশাকে ভালোবাসি, না তার প্রতি আমার যা আছে তার সব কিছুই মোহ।এইসব ভাবছে আর গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ সে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বড় একটা ট্রাক আসছে,অনেক কষ্টে শেষ মুহূর্তে ব্রেক করে যার ফলে ট্রাক থেকে বেঁচে যায় কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি কারণ গাড়ি গিয়ে সামনের একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। তার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে সাথে সাথেই সে অজ্ঞান হারায়।মূহুর্তেই সেখানে লোক জমে যায়।কয়েকজন মিলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।একজন আরিয়ানের ফোন পায়।ফোনে নিশ্চয়ই তার বাড়ির নাম্বার আছে,এই ভেবে ফোন অন করে লাস্টের নাম্বারে কল দেয়।
কল দিতেই অদ্রিতা সাথে সাথে কল রিসিভ করে,

অপরিচিত -হ্যালো,আপনি কে বলছেন?এই ফোনটা যার ওনী এখন হসপিটালে আছেন।ওনার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।আপনারা তাড়াতাড়ি এই…….. হাসপাতালে চলে আসেন।

আরিয়ানের এ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে অদ্রিতা হুশ হারিয়ে ফেলে। এখন সে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তার হাত থেকে ফোন পরে যায়,কয়েক সেকেন্ড ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পরে তার হুশ আসে।সে কান্না করতে করতে তার শ্বশুর- শ্বাশুড়ির রুমের সামনে যায়। তার হাত-পা প্রচন্ড কাঁপছে।মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।অনেক কষ্ট করে সে তার শ্বাশুড়িকে ডাক দেয়।৩-৪ বার ডাক দেওয়ার পরে ওনী দরজা খোলে।

ওনী ঘুম ঘুম চোখে অদ্রিতার দিকে তাকায়, তাকিয়েই দেখে সে কান্না করছে।তিনি ব্যস্ত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে তোর,এত রাতে কান্না করছিস্ কেন?আরিয়ান কি তোকে কিছু বলেছে?”

অদ্রিতা কান্না করতে করতে বলে,”ওনার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।ওনী এখন এই…..হাসপাতালে আছেন।তাড়াতাড়ি চলুন আর কিছু বলতে পারছে না।কেঁদেই চলেছে।মাও কয়েক মুহূর্ত ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন।অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার অবস্থা দেখে আর কিছু বললেন না।ভিতরে গিয়ে বাবাকে নিয়ে এলেন।মাও আমার মতো কান্না করতে লাগলো।আমরা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম,গাড়িতেই বাবা আমার বাড়িতে ফোন করে সব জানিয়ে দিলেন।আমার তো সেই দিকে কোন খেয়ালই ছিল না।গাড়ি অনেক দ্রুতই চলছে তবুও মনে হচ্ছে রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না।অবশেষে হসপিটালে পৌঁছালাম।”

হসপিটালে ঢুকেই বাবা দৌড়ে রিসিপশনে গেলেন। ওইখানে একটি মেয়ে বসেছিল তাকে জিজ্ঞেস করলেন,”আমার ছেলে,আরিয়ান চৌধুরী কোন কেবিনে আছে?”

,,,,কে আরিয়ান চৌধুরী ( মেয়েটি বললো)

বাবা ব্যস্ত হয়ে বললেন,”একটু আগে যার এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে,আর এখন এই হসপিটালে ভর্তি আছে।”

ওহ,আচ্ছা। ওনী তো এখন আই.সি.ও তে আছেন।মেয়েটি স্বাভাবিক স্বরে বললো।

মেয়েটির কথা শুনে দৌড়ে আই.সি.ও সামনে চলে এলাম।আই.সি.ও এর সামনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার বের হয়ে আসার অপেক্ষা করছি।ডক্টর বের হতেই দৌড়ে তার কাছে গেলাম। ডক্টর ওনী এখন কেমন আছেন?

ডাক্তার স্বভাবিক কন্ঠে বললেন,”রোগীর অবস্থা তেমন ভালো নয়,২৪ ঘন্টা না কিছুই বলা যাবে না।ওনার অনেক ব্লাড লস্ট হয়েছে,আমরা রক্ত দিয়েছি।কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান ফিরে না আসে তবে আমাদের হাতে আর কিছু নেই।সৃষ্টিকর্তাকে ডাকেন,এই বলে ডক্টর চলে গেলেন।”

ডক্টর চলে যেতেই আমি ফ্লোরে বসে পরলাম।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছি না।ডাক্তারের কথা শুনেই আমার শ্বাশুড়ি অজ্ঞান হয়ে গেছে।ওনাকে একটি কেবিনে রাখা হয়েছে।স্যালাইন দিচ্ছে,বাবা মার কেবিনে সামনে বসে আছেন।ফ্লোরে বসেই আমি কান্না শুরু করছি,কিছুতেই কান্না থামাতে পারছি না।মনে মনে নিজেকে দোষ দিচ্ছি,আমার জন্যই হয়তো এমন হয়েছে। আমার জন্যই তো এত রাতে বাহিরে থাকেন।এইসব ভাবছি আর কান্না করছি,কিছুক্ষন পরেই আমার বাড়ির সবাই চলে আসলেন।মা আমাকে সান্তনা দিতে লাগলে,বাবা গিয়ে আমার শ্বশুরের পাশে দাঁড়ালেন।আমার ভাই- বোন বলতে লাগলো,আপু কেঁদো না।দুলাভাই খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবে।তুমি যদি ভেঙে পরো তবে অন্যদের কি করে সামলাবে।দুলাভাইয়ের দেখাশুনা কে করবে।

আমি কিছু না বলে চুপচাপ সেখান থেকে উঠে গেলাম।ওজু করে তাহাজ্জুদের নামাজে দাঁড়ালাম।মোনাজাতে অনেকক্ষন কেঁদেছি।আল্লাহ তোমার কাছে আমি আর কিছু চাই না শুধু আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও।আমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে,নিজেকে কোন মতে সামলাতে পারছি না।আবার দৌড়ে আই.সি.ওর সামনে এলাম।মা আমাকে ধরে সিটে বসালেন।মার কোলে মাথা রেখেই কান্না করছি।মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি তার খেয়াল নেই।সকালে ফজরে আজান দিলে মা আমাকে ডাক দেয়।কখন যে সকাল হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারিনি,আমি উঠে নামাজ পরে নেই।নামাজ শেষ করে মোনাজাতে একটি দোয়া করি ওনী যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।
নামাজ পড়া শেষ হলেই আই.সি.ওর সামনে গিয়ে দাড়াই।এখন ভিতরে কোন ডক্তর নেই,একজন নার্স দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভিতরে গেলাম।ওনার মাথায় ব্যান্ডেজ করা,হাতের ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা,মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানো,সাথে স্যালাইন আর রক্ত চলছে।ওনাকে এভাবে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারছি না।চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরতে লাগলো।আমার কান্নার আওয়াজ শুনে নার্স পিছনে তাকালেন।

নার্স ব্যস্ত হয়ে বললেন,”কি করছেন তা কি,আপনি এখন বাহিরে যান।ডাক্তার যদি দেখে আপনি ভিতরে এসেছেন,তবে আজ আর আমার চাকরি থাকবে না।আপনি প্লিজ বাহিরে যান।”

আমি বাহিরে চলে এলাম।সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি,আমার একপাশে মা বসে আছে।হসপিটালে এত মানুষ থাকতে দেয় না তাই রাতেই বাবা আর ভাই- বোন চলে গিয়েছে একটু পরে আবার হয়তো আসবে।আমার শ্বাশুড়ি মার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু ওনার শরীর এখনো দুর্বল তাই এখনো কেবিনে শুয়ে আছে আর স্যালাইন চলছে।

আরিয়ানঃ সকালেই আমার জ্ঞান ফিরলো।মাথায় পচন্ড ব্যাথা করছে।গত রাতের সব কথা মনে পরে গেলো।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা, হাতে স্যালাইন দেওয়া।চারপাশে তাকিয়েই বুঝতে পারি এইটা একটি হসপিটাল।আমার না এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল, তবে আমি হসপিটালে কি করে এলাম?আমাকে এখানে কে আনলো?উফফ,,,কিছু ভাবতে পারছি না।মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে।অক্সিজেন মাস্ক খোলে উঠে বসলাম।

নার্স অবাক হয়ে বলে,”ও মাই গড।আপনার এত তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে এসেছে।আপনি এ কি করছেন?আপনি শুয়ে থাকুন,আমি ডক্টর ডেকে আনি।”

এই বলে নার্স দ্রুত যায় ডক্টরের কাছে।ডাক্তার নার্সকে দেখে প্রশ্ন করে,” কি হয়েছে,আপনি এখানে কেন?”

রোগির জ্ঞান ফিরেছে।ওনী উঠে বসে আছেন,অক্সিজেন মাস্ক খোলে ফেলেছেন।

ডাক্তার ব্যস্ত হয়ে বলে,”ওহ,তাড়াতাড়ি চলুন।”

ডক্টর গিয়ে দেখে আরিয়ান উঠে বেডে বসে আছে।
আপনি উঠে বসে আছেন কেন?আপনি সুয়ে রেস্ট নিন,আপনি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হননি।নার্স আরিয়ানকে শুয়িয়ে দেয়।

ডাক্তার নার্সকে বলে,” আপনি ওনার সাথে থাকুন। যদি রোগীর কোন পবলেম হয় তবে আমাকে ডাক দিয়েন।এই বলে ডক্টর বাহিরে বের হয়ে আসে।”
.
..

চলবে,,,,,,
..

চলবে,,,,,,,,,,
..

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here