অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -০১

আত্মার আহুতি দিয়ে সেদিন বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। মা না থাকাই বড় ভাবির অত্যাচারে দুই বছরের ভালোবাসার মানুষের হাত টা ধরে সেদিন রাস্তায় নেমে ছিলাম। সারারাত ভালোবাসার মানুষটি বুকে মাথা রেখে দূর অজানা রাস্তায় পাড়ি জমিয়ে ছিলাম। হাতে হাত রেখে হাজারটা কথা দিয়েছিল সে। সারাটা জীবন নাকি আমার পাশে থাকবে। ভালোবাসার মানুষের মুখে এমন কথা শুনে, সেদিন আমার দুচোখের পানি বাঁধ মানেনি ।আমার চোখের জল নাকি তার হৃদয়ে রক্তক্ষনণ করে। আলতো হাতে চোখের পানি মুছে দেয় সে। আমার চোখের জল তাকে ঘুমোতে দেয় না। এমনটাই সেদিন বলেছিল। বাধ্য হয়ে হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছিলাম, হাজার কষ্টের মাঝেও এই চোখের জল আমি কোনদিন ফেলবো না। সেও আমার হাতে হাত রেখে আমার কপালে ভালবাসার পরশ একে দিল। আবারো তার বুকের বাম পাশে আমার স্থান করে দিল। আর আমি ও পরম আবেশে সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছিলাম। কষ্টের সময় যে মানুষটা আমাদের পাশে থাকে, ঐ মুহূর্তে বলা ছোট ছোট কথা গুলো হৃদয়ে গেঁথে যায়। আর সেটা যদি হয় সারা জীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি, তাহলে তো কথাই নেই। চোখ বন্ধ করে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় সেই মানুষটার সাথে। বাস চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেল। সম্ভবত গাড়ির টায়ার পাঙ্চার হয়ে গেছে। ভোর তখন 4:25 মিনিট। এখনি হয়তো আজান দিবে। পানির বোতলের মুখ টা খুলে সে আমার সামনে এগিয়ে ধরল। সৌজন্যমূলক একটা হাসি দিয়ে বোতলটা নিয়ে ডক ডক করে এক বোতল পানি শেষ করে দিলাম। রাতে খাবারের বদলে পেয়েছি শারীরিক অত্যাচার যার দাগ এখনও শরীরে বিদ্যমান ।খুব খিদা পেয়েছে। সে বাসে উঠার আগে কেনা রুটি আর কলা আমার সামনে দিয়ে বললো খেয়ে নাও। কোন সংকোচ ছাড়াই তা গ্রহণ করলাম আমি। ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত আমি খেয়ে যাচ্ছি। আর সে অপলক দৃষ্টিতে আমার খাওয়া দেখছে।

দূর থেকে আজানের ধনি ভেসে আসছে। সে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। বাসের কন্টাকটার কে জিজ্ঞাসা করল এখনো কতক্ষন লাগবে? কন্টাকটার বললো এখনো ঘন্টা খানিক সময় লাগবে। কিছু কিছু যাত্রীরা বাস থেকে নেমে দাঁড়ালো। উদ্দেশ্য তাদের নামাজটা সেরে নেওয়ার। নামাজ হচ্ছে বেহেশতের চাবিকাঠি। আমরা যেখানেই থাকি না কেন আমাদের উচিত আযান শোনার সাথে সাথে নামাজ কায়েম করা। আমার ভালোবাসার মানুষটি কখনোই নামাজ কাজা করে না । সেই হিসেবে আমি অনেক ভাগ্যবতী।

আমাকে গাড়ির ভেতর বসে থাকতে বলে সে নামাজের উদ্দেশ্য মসজিদ এর আজান অনুসরণ করে পথ ধরলো। ওযু করে নামাজ আদায় করে নিল। সেখানে একজন বয়স্ক ইমাম সাহেব আছেন। তার সাথে আমার ভালোবাসার মানুষটি কথা বলে আবার ফিরে এলো আমার কাছে। এসে হাঁসি হাঁসি মুখে আমাকে বলল- তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।এই ভোর বেলা আধো অন্ধকারে আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে সেটা হিসেব করতে আমি ব্যস্ত।সে আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলে,এত ভেবো না। আমার হাত ধরে যখন এসেছ, তার অমর্যাদা করবো না আমি কখনো। তার এগিয়ে দেওয়া হাতে, হাত রেখে আমিও বেরিয়ে পড়লাম অজানা উদ্দেশ্যে।

সামনে এগিয়ে দেখি একটা মসজিদ খুব সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো। সামনে অজুখানা যেখানে বসে সবাই অজু করে। আমার ভালোবাসার মানুষটি আমাকে বলল মাথায় কাপড় দিয়ে সুন্দর করে অজু করে এখানে আসতে যেখানে সে বসে আছে। তার কথা মতন আমিও ওজু করে তার সামনে এসে দাঁড়ালাম। ইমাম সাহেবকে দেখে একটা সালাম দিলাম। তিনি ও সৌজন্যমূলক আমাকে সালামের উত্তর করলেন। আমাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন তোমরা ওই কোনাতে বস। তার কথামত আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না এই মসজিদের কি করতে আমাকে আনা হলো। আর কি সারপ্রাইজ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার ভালোবাসার মানুষ আমার হাত ধরে, চোখে আশ্বস্ত করল। যার অর্থ “ভয় পেয়ো না”।
ইমাম সাহেব একটা লম্বা বড় খাতা এনে আমাদের সামনে চেয়ারে বসলেন। আমি বুঝতে পারলাম খাতাটা কিসের। আমার ভালোবাসার মানুষটি চোখে হাসলো। তার এই হাসিতে আমি বারবার তার প্রতি দুর্বল হয়েছিলাম।

ইমাম সাহেব আমাদের বিয়ে সম্পন্ন করলেন। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আমরা এখন স্বামী স্ত্রী। তিন কবুল বলে আমারা একে অপরের জীবনের সাথে বাঁধা পরে গেলাম। আর প্রতিজ্ঞা করলাম এই হাত কোনদিন ছাড়বোনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ফিরে এলাম বাসে। আমার চোখ থেকে অশ্রু অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছি। আজ আমার মা বেঁচে থাকলে এইভাবে বিয়ে করতে হতো না আমার।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। এখন ভোর 6 টা আরেকটু পরেই আমরা বাস থেকে নেমে পড়বো। শুরু করবো আমাদের নতুন জীবন।

আমি মেঘা মেহেরাব। একটু আগে আমার নামের পরিবর্তন ঘটেছে । মেঘা ইসলাম থেকে আমি হলাম মেঘা মেহেরাব। বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তান। আমার বড় একটা ভাই আছে। যে শুধু নামেই আমার বড় ভাই। বাবা বি আর টি সি কোম্পানিতে সরকারি কর্মরত একজন কর্মচারী। আমার বড় ভাই ঢাকায় খুব বড় একটা কোম্পানিতে ভালো পজিশনে চাকরি করে। টাকার পিছনে ছুটে ছুটে আজ সে অমানুষ পরিনিত হয়েছে। এখন বিয়ে করে বউয়ের কথায় উঠে আর বসে বাকি সবকিছু তার কাছে মিথ্যা মায়াজাল। আমি এবার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আমার উচ্চতা 5 ফুট 4 ইঞ্চি। সবাই বলে দুধে-আলতা গায়ের রং আমার। কথাটা কতটুকু সত্য আমি জানিনা। তবে আমার ভালোবাসার মানুষটির চোখে আমি এক শুভশ্রী। আমার এই কাজল কালো চোখ নাকি বারবার তাকে ঘায়েল করেছে।

আমার ভালোবাসার মানুষটির নাম কাব্য মেহেরাব। বাবা-মা কেউ নেই তার। আমার মতোই সেও অনাথ। তার মামা মামীর কাছে মানুষ সে। অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ায় খুবই মেধাবী। অনেকগুলো টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালায়। পাশাপাশি ছোটখাটো একটা কম্পিউটার দোকানে কম্পিউটার শিক্ষায় কিছু ছাত্র ছাত্রীদের। উচ্চতা 6 ফুট 2 ইঞ্চি। উজ্জল শ্যামবর্ণ গায়ের রং। আর তোর মুখের হাসিটা অনেক সুন্দর। আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তাইতো আমার ভাবির উততাচার এর কথা জানতে পেরে আমাকে নিজের করে নিতে চায়। তার সিদ্ধান্তে অনড় সে। একি পাড়ায় থাকি আমরা, সেই সুবাদে আমাদের পরিচয়।

হঠাৎ করেই ব্রিজের মাঝখানে এসে অন্য একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে আমাদের গাড়িটি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এমন হওয়াই দিশেহারা হয়ে পড়ে সবাই। জানালার কাচ ভেঙে অনেকেই বাইরে পড়ে যায়। কেউ কেউ সামনে এমনভাবেপরে যে মুখ থুবরে যায় অনেকের। কারো শরীরে অজস্র কাঁচের টুকরো ঢুকে যায় । কেউ কেউ সামনে ছিটকে পড়ে রাস্তার ওপর পড়ে যায়।আমার মাথার উপর থেকে রক্তের লহু গড়িয়ে পড়ছে, আমার চোখে নাকে মুখে। আমিতো তো পাশেই পরে আছি, কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষটি জানালা ভেদ করে ব্রিজ এর পাশ দিয়ে নদীর মাঝ বরাবর পড়ে যায়। কাব্য নামটি উচ্চারণ আমি করতে পারিনা। তার আগে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। জ্ঞান হারাই আমি। তারপর……….

গল্পটার আসল কাহিনী এখনও শুরু হয়নি তাই ধর্য ধরে পড়ুন

#চলবে …….

গল্প: #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক:#কাব্য_মেহেরাব
পর্ব :০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here