অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -১১

গল্প: #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক: #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব:১১

প্রবীশ বাবু: আমি বললাম তো, ঘৃণা করি আমি মেয়েদের। মেয়েদের চোখের পানি আমার হৃদয়ের শান্তির খোরাক যোগান দেয়। খুব শান্তি লাগে এই বুকে।(বুকে হাত রেখে দেখালো)

আমার বুঝতে বাকী রইল না যে, তিনি অসুস্থ মষ্তিকের মানুষ। যার হৃদয় টা পাথরের তৈরি। তার কাছ থেকে আরও কত অত্যাচার যে সহ্য করতে হবে তার হিসাব নেই। তবে আমি কিছুতেই এই বাচ্চাটা নষ্ট করবো না।

কেটে যায় আরও দুই দিন। বিপদের সময় একমাত্র আল্লাহ তাআলা তার বান্দার প্রতি সহায়ক হন।আর নামাজ আদায় ছাড়া এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তাই গত দুই দিন ধরে এক হিসাবে নামাজের উপর ই আছি। যার জন্য যেটা ঠিক আল্লাহতালা তাকে সর্বদা সেটাই দেন।

নানান প্লান পরিকল্পনা প্রবীশ বাবুর। তবে কোনো ভাবেই আমি বাচ্চা টা নষ্ট করবো না, তিনি খুব ভালো করেই বুঝে গেছেন। হতাশা হয়ে তিনি মেনে নিলেন আমার বাচ্চাকে তিনি কিছু করবেন না। কয়েকদিন ধরে সেও আমার গায়ে হাত তোলে না। হঠাৎ করে সকালে তিনি আমার রুমে এসে দাঁড়ালো।

বিষয় টা খুব খটকা লাগলো আমার কাছে। কি চাইছেন তিনি এত সকালে আমার কাছে? আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে তিনি আমার সামনে কিছু শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলেন।

প্রবীশ বাবু: পাঁচ মাস উপলক্ষে গর্ভবতী মেয়েদের কি জানি করা হয়। আমার ঠিক সেটা জানা নেই। তাই তোমার জন্যে আমি কিছু এনেছি। ফ্রেশ হয়ে এইগুলা পরে নিচে আসো। সামনেই দেবী কে বিসর্জন দেওয়া হবে। আমি চাই তার আগে তোমার….( থেমে গেলেন তিনি)

মেঘা: তার আগে আমার কি…?(তার অসম্পূর্ণ কথাটি জানতে চাইলাম)

প্রবীশ বাবু: তোমার অনুষ্ঠান শেষ করতে চাই।আর হ্যাঁ ছোট একটা বক্স আছে তাতে সিদূড় আছে ওটা ও পরে নিও।

মেঘা: আপনি পাগল হলেন? আমি মুসলিম মেয়ে হয়ে সিদূড় পারবো? এইতো কিছুক্ষণ আগে এই দুই হাত আল্লাহর দরবারে তুলেছিলাম।আর সেই হাত দিয়ে আমি সিদূড় পারবো?

প্রবীশ বাবু: ( চোখ শক্ত করে বন্ধ করে নিল, আবার তা মেলে তাকাল।যার অর্থ হচ্ছে, তিনি জানেন ই না আমি মুসলিম।) তুমি সনাতন ধর্মের নও?

মেঘা : না…..(সোজাসাপ্টা উত্তর দিলাম)

প্রবীশ বাবু: তার মানে মুসলিম প্রস্টিটিউট?

মেঘা: পতিতা?(ছন্দ আকারে বললাম)

আমায় তুই পতিতা বানিয়ে,
বিচার দিশ আমারি নামে।
ভদ্র হলি তুই সূর্য দেখে,
ধর্ষন করিস জ্যোৎস্না রাতে।
থাকতাম যদি তোর সমাজে,
সাজতাম না তো খোলা সাজে!
ঠোটে রঙ আর খোলা গায়ে,
থাকতে হয় যে পেটের দায়ে।
আমার চোখের নোনতা জলে,
তোদের রাতের মধু মিলে।
সপ্ন ছিল ছোট্ট বেলায়,
থাকব কোন অট্টালিকায়।
সপ্ন আমার ভাংতে হল,
বাস্তবতা মানতে হল।
ঘুরতে হয় অন্ধকার জগতে,
পেটের খাবার রোজ মিলাতে।
যারা রাতে সুখ কিনে নেয়,,,,,
তারাই আবার মিছিল করে
জ্বালিয়ে দাও এই পতিতালয়।
যেই সমাজে ইভটিজিং আর ধর্ষনেতে ভরে রয়,
সেই সমাজি ধর্ষিতাকে
এলাকা থেকে তারিয়ে দেয়।
অতীতকালে তুই ধর্ষন করে,
ধর্ষিতা দিলি উপহার,,
পতিতাটাকে নিলাম বেছে,
এখন কেন আমার বিচার?
তোর মুখোশে লুকিয়ে আছে কতশত অন্যায়,,
ভদ্রতারি মিথ্যে সাজে ,
সব অপরাধ চেপে যায়।
পাপী আমি,
আমায় ফাসি দে ওহে সমাজ বিচারক,,,
বলব তবু দোষ আমার না,
দোষী তোরা ও আজীবন।

প্রবীশ বাবু: ডালিয়া…..?( জোরে চিল্লিয়ে) কতটুকু জানো তুমি আমাকে?

মেঘা: সেটাই তো? আপনি আমাকে কতটুকু চেনেন?

প্রবীশ বাবু:পরতে হবে না সিদূড়… । এগুলো পরে নিচে এসো। আমি জাস্ট এই রূপে তোমাকে দেখতে চাই।

মেঘা:আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি বেড়িয়ে গেল।

অধীর আগ্রহে চেয়ে অপেক্ষা করছেন প্রবীশ বাবু নিচে ডিভাইনে বসে। আর বার বার উপরে তাকাচ্ছেন। রামু চাচা কে কোন এক কাজে একটু বাহিরে পাঠিয়েছেন। খুব সম্ভব বাজারে। আজ সে শান্তি তে তৃপ্তি সহকারে খাবার খাবেন। তাই সব কিছু তার পছন্দ অনুযায়ী হওয়া চাই। বিষয় টা কাল রাতে হালকা শুনেছিলাম রামু চাচা বলেছিলেন,আজ না কি তার জন্য স্পেশাল কিছু। এই বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিলো না তাই জানতে ও চাইনি।বাড়িতে আর যারা কাজ করেন, তারা কাজ শেষ করে চলে যায়। তাই এই মুহূর্তে এই বাড়িতে আমি আর প্রবীশ বাবু ছাড়া আর কেউ নেই।

হঠাৎ আমার রুমে টেলিফোন এ কেউ ফোন দেয়। আমি ফোনের শব্দে চমকে উঠলাম। এখানে আসা থেকে আজ পর্যন্ত এই ফোন এই প্রথম বেজে উঠলো। আমি তো মনে করেছিলাম এটা হয়তো মোবাইল ফোন এর যুগে এটা হয়তো বেকার টেলিফোন।

এতদিন পর ফোন বেজে উঠায় ,কে ফোন করেছে ভেবে , রিসিভ করবো কি না ভাবছি। ওলরেডি ৩-৪ বার ফোন বেজে তা বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই নিচের থেকে কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ কানে আসে। আমি ভয়ে সিটিয়ে যায়।

দরজা না খুলে আমি জানালার পাশে গিয়ে হালকা হাতে পর্দা টা সরিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি, প্রবীশ বাবু ডিভিইনের পাশে থাকা বড় ভেইজ টা ফেলে দিয়ে রাগে ফুঁসছে , উপরে আমার রুমের দিকে তাকিয়ে। তার এই রূপ দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। জানালার পাশে আমাকে দেখে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার রুমের ফোনে আবার ফোন করলেন। আবার ফোন বেজে উঠায় চমকে উঠলাম। বুঝতে পারলাম ফোন টা প্রবীশ বাবুই দিচ্ছে। এখনো আমার দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে আছে। আমি দ্রুত গতিতে যেয়ে ফোন টা কানে ধরলাম।

প্রবীশ বাবু: কি ভাবো নিজেকে? আমার সময়ের মূল্য নেই? সেই কখন থেকে বসে আছি। কি বলেছিলাম তোমাকে আমি? কথাটা কানে যায় নি, তাই না? (এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন)

মেঘা: আসলে আমি….(কী উত্তর দেবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা)

প্রবীশ বাবু: জাস্ট ১৫ মিনিট! ১৫ মিনিটে তোমাকে দেবী রূপে আমার নিচে চাওয়া চাই। নো মোর এ ওয়ার্ডস।(দাঁতে দাঁত চেপে কথাটি বললেন, যা ফোনের এই পাশেই স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমি।)

মেঘা:…..(চরম বিপদের আশঙ্কা জেকে ধরলো আমার মনে। কি চাইছেন তিনি? আমাকে দেবী রূপে সাজিয়ে তো আর হসপিটালে নিয়ে যাবেন না? তাহলে?)

প্রবীশ বাবু: ওলরেডি এক মিনিট হয়ে গেছে…( রাম ধমক দিলেন)

আমি দ্রুত ফোন রেখে দিয়ে শপিং ব্যাগ থেকে সব গুলো বাহিরে বের করলাম। এত এত জিনিস দেখে খুশি হওয়ার বদলে আমার কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে। তবুও সাত পাঁচ না ভেবে দ্রুত গুছিয়ে নিলাম। এত অলংকার পরার অভ্যাস নেই আমার তবু ও সব গুলো পরে নিলাম। গাঢ়ো লাল রঙের পাড় সাদা শাড়ি, ভিতরে সোনালী রঙের আবরণ। ভারী গহনা।সব মিলিয়ে যে পরবে তাকে সাক্ষাত দেবী বলেই মনে হবে।

প্রবীশ বাবু নিচের থেকে বসে বসে একবার ঘড়ির দিকে তো একবার উপরে তাকাচ্ছেন। আমি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। প্রবীশ বাবু কেন, আমি আমার জীবনে এই ভাবে এতো সেজে কারোর সামনে ই কোনো দিন যায়নি।

দরজা খোলার শব্দে প্রবীশ বাবু উপরে চোখ তুলে তাকালো। সাদা শাড়ি লাল পাড়,লাল রঙের ব্লাউজ, হাত ভর্তি সোনালী রঙের চুরি।গলা থেকে বুকে পর্যন্ত অলংকার। খোলা চুল।চুলের সাথে ও গহনা।রুম ঝুম শব্দে স্লো শব্দে হেঁটে আসা মেঘা কে দেখে বুকের ভেতর কেমন একটা যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগলো। একটু পরে কি হবে ভেবে……. নাহ মন টা কিছু তেই সাঁই দিচ্ছে না।

হঠাৎ করে এইসব ভাবনার মাঝে এক চিৎকার করার শব্দ কানে গেলো প্রবীশ বাবুর। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল। দেখতে চাই না। কি হয়েছে। অজানা কিছু ই নেই তার। সব কিছু তার প্লান মোতাবেক হয়েছে। তাহলে মনে এত সংসয় কেন হচ্ছে বুঝতে পারছেন না। তবুও তার জেদ পুরণ করতে পেরে একটু শান্তি পেতে চাচ্ছে। কিন্তু শান্তির পরিবর্তে এমন কেন লাগছে। বুঝে উঠতে পারছে না। তাহলে কি সে জেদের বসে অনেক বড় ভুল করে ফেললো?

কিন্তু এমন কেন লাগছে? এই নারীজাতি যে কয়টি মেয়ে তার জীবনে পেয়েছে সবাই তাকে ধোঁকা দিয়েছে। নিজের চোখে এমন একটি ও নারী সে পাইনি যে বলতে পারবে তার ধারণা ভুল প্রমাণিত। কিন্তু এখন এমন টা কেন মনে হচ্ছে? নিজের মনের কথা দাবিয়ে রেখে মষ্তিক যা বলল সে তাই করেছে।বেশ করেছে। নিজের চোখে দেখতে চাই এই যন্তণা । তবে চোখ খোলার সাহস টা কেন হচ্ছে না?

তবুও অনেক সাহস সঞ্চয় করে যেই না চোখ খুলতে যাবে ওমনি ঠাসসসসসসস করে একটা শব্দ হলো…….

#চলবে …….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here