অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -২০

গল্প : #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক : #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব : ২০

প্রবীশ বাবু: কি ব্যাপার এখনো শুয়ে আছ যে, অসুস্থ নাকি মন খারাপ?

আমি চোখ বন্ধ করে জীবনের হিসেব নিকেশ মিলানোর চেষ্টা করছিলাম। কিছুতেই কিছু মিলছে না সব এলোমেলো হয়ে গেছে। হঠাৎ প্রবীশ বাবু আমার রুমে প্রবেশ করে এবং তার এমন প্রশ্ন করায় আমি অনেকটা চমকে গেলাম। শোয়া থেকে দ্রুত উঠে বসে পড়লাম ।

প্রবীশ বাবু : আস্তে আস্তে! এত ব্যস্ত হতে হবে না। আমি কোথাও চলে যাচ্ছি না।( মনে করলেন হয়তো আমি অসুস্থ।)

সকালে প্রবীশ বাবু না খেয়ে অফিসে চলে যাবার পর আমি নিচে আসি। রামু চাচার কাছে জানতে পারি সে নাকি চলে গেছে। অফিসের কোন একটা ফাইল রেখে চলে গেছেন। আমি আর রামু চাচা বসে গল্প করছিলাম। তখন অমিত বাবু অফিস থেকে ব্যাক আসে ফাইল টা নেওয়ার জন্য। আমি অমিত বাবুকে জিজ্ঞাসা করি ,রহিমার খালা চলে গেলেন যে আমাকে না নিয়ে? তার উত্তরে তিনি আমাকে বলেছিলেন, 50 লাখ টাকার একটা চেক নিয়ে তোমাকে চিরদিনের জন্য এইখানে রেখে গেছেন তোমার রহিমা খালা। সৌজন্যে মুলক আমি বললাম -ওহ!!

বুঝতে পারলাম প্রবীশ বাবু আমাকে একেবারের জন্য কিনে নিয়েছেন। কিন্তু আমাকে রেখে তার লাভ কি আমি আজও বুঝে উঠতে পারলাম না। এখনতো আর আমার উপর অত্যাচার করে না কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে না ।ভালো ব্যবহার করে ,আমার জন্য কেয়ার করে। এইসব হিসাব মেলাতে গেলে সব এসব যেন গরমিল হয়ে যায়।

মানুষটা কিন্তু খারাপ না। যদি খারাপ হতো যেখান থেকে আমাকে কিনে নিয়েছে তিনি ওই পশুদের মতো আমাকে ব্যবহার করত। অনেকবার সুযোগও পেয়েছে কিন্তু কখনও সেই সুযোগের অপব্যবহার তিনি করেননি। আমাকে স্পর্শ করেছে শুধু তার রাগ ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলার জন্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কখনোই আমাকে স্পর্শ করেনি। তবে এতটুকু বুঝতে পারলাম তার একজন সঙ্গী প্রয়োজন যে তার সঙ্গ দেবে। যার কাছে তিনি নিজের মনের কথা মনের দুঃখ শেয়ার করতে পারবে। আচ্ছা আমি যদি তার বন্ধু হয়ে তার পাশে থাকি ব্যাপারটা কি খারাপ হবে? আমি যদি কাব্যকে খোঁজার জন্য তার কাছে সাহায্য চাই সে নিশ্চয়ই আমাকে হেল্প করবে__

প্রবীশ বাবু : কি হল কথা বলছো না, আবার কোন ভাবনা রাজ্যে হারিয়ে গেলে ? নাকি আবার প্লান করছ কিভাবে পালিয়ে যাবে?

মেঘা : আসলে ঠিক তা নয়!( আমতা আমতা করে বললাম) আ আ আ আপনার এই ঋণ আমি আমার জীবনেও শোধ করতে পারবোনা।অনেক বড় উপকার করলেন আমার। কেন এত বড় উপকার করলেন খুব জানতে ইচ্ছে করে।

প্রবীশ বাবু : হয়তো নিজেকে ভালো রাখার জন্য।(মুখ ফসকে বলে দিলেন প্রবীশ বাবু)

মেঘা : ____(ভুরু কুঁচকে তার এই কথার মানে উদঘাটন করতে চাইলাম কিন্তু কিছুতেই পারলাম না আমি।)

প্রবীশ বাবু : (বুঝতে পারলেন তিনি মুখ ফসকে কি কথা বলে ফেলেছেন সেজন্য মেঘা চোখমুখ কুঁচকে ফেলল।তাই স্বাভাবিক হতে তিনি বলেন) থাক এত ভাবতে হবে না। আমার একটু কাম্পানির প্রয়োজন।

মেঘা : মানে___(কাম্পানির প্রয়োজন মানে কি জানতে চাইলাম)। আচ্ছা যাই হোক আপনি কি আমার ভাল বন্ধু হবেন?

প্রবীশ বাবু : ____(আমার এই কথায় তিনি হালকা হেসে দিলেন)

মেঘা : ___(এখানে আসার পর থেকে এই প্রথম আমি তার মুখে একটু হাসি দেখলাম। রাগী জেদি একগুঁয়ে টাইপ মানুষ মনে করেছিলাম তাকে। কিন্তু যখন থেকে জানতে পারলাম তার অতীত টা বিষাদ ময় আমার ধারনাটা পাল্টে গেল তার প্রতি। সামান্য বন্ধুত্ব করাতে তার মুখে হাসি ফুটেছে তাহলে সেই মানুষটিকে একটু ভালোবাসা দিলে মন্দ হয় না। হোক না সেটা বন্ধুত্বের ভালোবাসো।
একবার যদি তার সাথে আমি বন্ধুত্ব করতে পারি তাহলে প্রবীশ বাবুর মাধ্যমে আমি কাব্যকে খুঁজে বের করতে পারবো। আমি জানি প্রবীশ বাবু আমাকে সাহায্য করবেন।)

মেঘা : কি হলো কিছু বলছেন না যে?

প্রবীশ বাবু : আবারো হেসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন_

মেঘা : ___আমি আনন্দে প্রবীশ বাবুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত না ধরে প্রবীশ বাবুকে জড়িয়ে ধরলাম (কাব্য কে খুঁজে পাওয়া আশা মনে জন্ম নিল। আমার #অপত্যাশিত_ভালোবাসা কে আমি আবার ফিরে পাব ভাবতেই আনন্দে দিশাহারা হয়ে গেলাম।)

হঠাৎ মেঘার এমন কাজে প্রবীশ যেন আকাশ থেকে পড়ল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। বুকের ভেতর শ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে। হাত-পা প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন এক সাথে অন্যের জোড়া টা অনিমেষ এ ছেড়ে দিচ্ছে । নিজের পুরুষত্বর জাগ্রত হচ্ছে। নিজের হাত দিয়ে মেঘাকে আঁকড়ে ধরতে চাইল কিন্তু কোথাও কোনো এক বাধাতে সে আটকে পারল । নিজের গলাটা ভিজিয়ে নিল।

আনন্দে দিশাহারা হয়ে আমি একটু আগে প্রবীশ বাবুকে জড়িয়ে ধরেছি ,মনে পড়তেই তাকে ছেড়ে দুই পা পিছিয়ে গেলাম। চোখ তুলে তার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম তিনি কেমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ইতস্ত বোধ করে আমি বললাম_

মেঘা : আসলে…. আমি একটু ….

প্রবীশ বাবু : ___ ঠিক আছে কিছু বলতে হবেনা। আজ বিজয়া যদিও এই সবকিছু আমার কাছে কোন ম্যাটার করে না ।তবুও বলছি যাবে বিসর্জন দেখতে।

মেঘা : _____(মাথা নিচু করে নিলাম প্রবীশ বাবুর এমন কথায়। একজন মুসলমান মেয়ে হয়ে আমি কি করে পূজো দেখতে যেতে পারি? এখন যদি প্রবীশ বাবুকে এটা বলি যে আমি যাব না, উনি কি ভাববে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তবুও তাকে আমার না করতেই হবে কিন্তু কিভাবে বলব ভেবে না পেয়ে বললাম_) আসলে আমি মুসলিম , আর একজন মুসলিম হয়ে যায় এটা আমাকে মানায় না_

প্রবীশ বাবু : আচ্ছা সরি আমার মনে ছিল না। অন্য কোথাও যেতে চাও?

মেঘা : আপনি চাইলে আমরা অন্য কোথাও ঘুরতে যেতে পারি….

প্রবীশ বাবু : আচ্ছা তুমি গুছিয়ে নাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি রাতে আমার বাইরে ডিনার করবো।

মেঘা : মাথা নাড়িয়ে তাঁকে হ্যাঁ সম্মতি দিলাম।

মেঘা এবং প্রবীশ বেরিয়ে পড়ল লংড্রাইভে উদ্দেশ্য, রাতে কোন এক রেস্টুরেন্টে ডিনার করে তারপর বাসায় ফিরবে। মেঘা এবং প্রবীশকে গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে অমিত চোখ উল্টে রামু চাচা কে উদ্দেশ্য করে বলল

অমিত বাবু : যাহ বাবা __ আম-দুধ মিশে গেলো আর আমি আটি আঁধারেই থেকে গেলাম। একটু আমাকে নিয়ে গেলে কি সমস্যা হত। লং ড্রাইভে আমিও তো ইনজয় করতে চাই।(আফসোসের সুরে বলল) ইসস যদি আমার একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতো আজ, থাক সে কথা_

জানো রামু জেঠু এই প্রবীশ স্যার এর চক্করে পড়ে জীবনে একটা প্রেম ও করতে পারলাম না বিয়ে তো অনেক দূরের কথা। বাকি জীবনটা যে আমার কিভাবে কাটবে এটা নিয়ে আমি খুব টেনশনে আছি।

রামু জেঠু : তুমিও না অমিত বাবা কি যে বল। যাক অনেক দিন পর প্রবীশ বাবা মনে হয় নিঃশ্বাস নিতে পারবে। ছেলেটা কম কিছু সহ্য করেনি।
*
*
*
*
শহর থেকে অনেক দূরে এসেছে প্রবীশ এবং মেঘা, ঠান্ডা আবহাওয়া সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি নামবে নামবে এমন একটা পরিবেশ এখনকার সময়। গাড়িতে বসে কেউ কোনো কথা বলেনি । ড্রাইভিং সিটের সামনে ছোট যে কাচের অংশটুকু ছিল তাতে মেঘার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মুখের অংশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না মেঘার। বোরখা পড়ে এসেছে।মাঝে মাঝে প্রবীশ ছোট আয়নায় মেঘার দিকে তাকাচ্ছে আর ড্রাইভ করছে। কোন সাজ নেই মেঘার মুখে, শুধু চিকন করে চোখে শুধু কাজল দিয়েছে আর হালকা বাম্ব লাগিয়েছে ঠোঁটে। প্রবীশের কাছে খুব নিস্পাপ লাগছে মেঘাকে।

বাইরের ঠান্ডা বাতাস শো শো করে গাড়ির ভেতর ঠুকছে। মেঘার নাক চোখ মুখ পুরা ঠান্ডা হয়ে গেছে। হালকা নাক টানছে মেঘা যেকোনো সময় সর্দি লাগতে পারে। প্রবীর আশেপাশে তাকিয়ে রেস্টুরেন্ট খুঁজতে থাকলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটা রেস্টুরেন্ট খোলা পেল না।
আজ মহা বিজয়া ছিল। কোন রেস্টুরেন্ট খোলা নাই সবকিছুই বন্ধ সেই কথা প্রবীশ ভুলেই গেছিলে একেবারে। এখন কি করবে ভেবে না পেয়ে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলল_

প্রবীশ: আজ মনে হয় আর ডিনার করা হবে না। বাসায় না যাওয়া পর্যন্ত। আজ বিজয় ছিল বুজছো রেস্টুরেন্ট বন্ধ খাবারের জন্য মনে হয়না কোথাও কিছু খোলা পাবো না।

মেঘা :__ওহ আচ্ছা (এতক্ষণ মেঘা কাব্যের চিন্তা করছিলো। হঠাৎ করে প্রবীশের কথায় কিছু না বুঝে উত্তর দিল।)

প্রবীশ : কি করা যায় বলোতো__

মেঘা : আমার না খুব খিদে পেয়েছে_

প্রবীশ : তাহলে চলো বাসায় ব্যাক করি।

মেঘা : কিন্তু…..

প্রবীশ : কোন কিন্তু নেই বাসায় গিয়ে ডিনার করে নিও। সারাটা দিন মনে হয় না, কিছু খেয়ে থেকেছো।(গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে বলল)

মেঘা : এই দাঁড়ান দাঁড়ান দাঁড়ান দাঁড়ান দাঁড়ান….( জোরে চিল্লিয়ে বললো)

মেঘার এমন করাতে প্রবীশ আঁতকে উঠে দ্রুত গাড়ি থামায়।হাঁপিয়ে বলে_

প্রবীশ : কি হয়েছে চিৎকার দিয়ে উঠল কেন??

মেঘা : ঐ ঐ ঐ

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here