অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -১৯

গল্প : #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক : #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব : ১৯

দরজা খুলতেই একজন পুরুষ এবং মহিলা ভিতরে প্রবেশ করলো। মহিলাকে দেখেই আমার গলা শুকিয়ে গেলো। অমিত বাবু হাত মুছতে মুছতে এসে মহিলাকে দেখেই তিনি থমকে গেলেন।

রামু চাচা ওই মহিলা এবং পুরুষ কে জিজ্ঞাসা করলেন

রামু চাচা : জি কাকে চাই আপনাদের….?

মহিলাটি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। তার এই হাসির জন্য আমার বুকের ভেতর শ্বাস যেন খুব দ্রুত ওঠানামা করছে। অমিত বাবু রামু চাচা কে বলল রামু জেঠু উনাদেরকে ভিতরে আসতে.. দাও_।

রাব্বু চাচা তাদেরকে ভিতরে আসতে বলে, ডিভাইনে এসে বসতে বলল। মহিলাটি একবার আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে, সোজা ডিভাইনে গিয়ে বসে পড়ল। মহিলাটির পিছনে ঐ পুরুষ মানুষটি হয় তার পেছনে পেছনে গিয়ে তার থেকে এক হাত দূরত্ব বজায় রেখে তিনি ও বসে পরল।

কেমন একটা অজানা ভয় আমাকে গ্রাস করে নিল। ভয়ের চোটে আমার গলা দিয়ে মাথা মুখ দিয়ে তীর ঘাম ঝরছে। শাড়ির আঁচল দিয়ে সেই ঘাম মুছতে গেলেই মহিলাটি আমাকে বলে উঠল_

মহিলা : কিরে ডালিয়া …?এত করে ঘাবড়ে গেলি কেন আমাকে দেখে ? আয় না আমার পাশে এসে বোস…

প্রবীশ বাবু শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে মহিলাটি কে উদ্দেশ্য করে বললেন_

প্রবীশ বাবু : কোন দরকার নেই…..

মহিলাটি প্রবীশ বাবুকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। সাথে সাথে তার সাথে আসা সেই পুরুষ মানুষটিও। প্রবীশ বাবুর এমন উত্তরে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলল _

মহিলা : সাহেএএএ….ব… আ আপনি?

প্রবীশ : হুম আমি ! আমার বাসাতৈ এসেছো, অথচ আমাকে এক্সপেক্ট করছ না ।এটা কেমন কথা?

মহিলা : না মানে ….সাহেব …অনেকদিন ডালিয়ার সাথে দেখা হয়নি। মনটা অসহায় মেয়েটাকে দেখার জন্য আনচান আনচান করছিল । তাই ভাবলাম একবার দেখা করে আসি…… তাছাড়াও ডালিয়াকে ও তো একবার নিয়ে গেলেন না আমার সাথে একবারও দেখা করার জন্য।

প্রবীশ : তার কি কোন দরকার ছিল? তোমার চাহিদার অনুযায়ীর থেকে ও অনেক বেশি তুমিতো টাকা পেয়ে গেছো। তাছাড়াও মেঘার সাথে তোমার এমন কোনো সম্পর্ক নেই যে, তোমার মন তাকে দেখার জন্য আনচান আনচান করবে….

মহিলা : মেঘাআআআ..……? মেঘা কে…?(জানতে চাইলো মহিলাটি)

প্রবীশ : ওপপপপপস সরি , আপনাদের ডালিয়া……

মহিলা : কিন্তু ওর নাম তো ডালি….

প্রবীশ বাবু আর ঐ মহিলাটির কথা শুনে আমি আর সেখানে দাঁড়ালাম না,মাথা নিচু করে প্রবীশ বাবু র পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে আসলাম নিজের রুমে। একটু সুখ কি আমার কপালে সইবে না? যখন একটু ভালো থাকতে চায় তখনই আমার সাথে এমন কেন হয়? কাব্যর কথা খুব মনে পড়ছে। আজ কাব্য আমার পাশে থাকলে হয়তো আমার সাথে এমন কিছুই হতো না। দরজা বন্ধ করে কান্না করে দিল চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, কাব্য তুমি কোথায়…? নিয়ে যাও আমায় তোমার কাছে….

প্রবীশ বাবু আমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে যখন তার চোখের আড়াল হলাম তারপর পূর্ণ দৃষ্টি দিলে ওই মহিলার উপর। তারপর মহিলাটির সামনে গিয়ে সিঙ্গেল সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসেলেন।

রামু চাচা কিচেনে চলে গেলেন। অমিত বাবু প্রবীশ বাবুর পাশে এসে দাঁড়ালেন। মহিলাটি অমিত বাবুর দিকে তাকিয়ে আবার প্রবীশ বাবুর দিকে চেয়ে থাকলেন। প্রবীশ বাবু কি বলে সেটা শুনার অপেক্ষায়..

প্রবীশ বাবু : তারপর (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) কি মনে করে আসা হলো বলুন….?

মহিলা : আসলে মেয়েটাকে অনেক দিন দেখি নাই। সেজন্যই….

প্রবীশ : ওফফফফ….(শব্দটি মুখ থেকে বের করে ঘাড় কাত করে অমিতবাবুর দিকে তাকিয়ে নিজের বিরক্তটা প্রকাশ করল)

অমিত বাবু এই সকাল-সকাল এদেরকে দেখে প্রবীশের বিরক্তির কারণ বুঝতে পেরে মহিলাটি কে উদ্দেশ্য করে বললেন_

অমিত বাবু : বলছিলাম কি রহিমা খালা ..? কি বলতে এসেছেন সেটা বলে ফেললে ভালো হতো….

বসে থাকা পুরুষ মানুষটি গলা খাকারি দিয়ে কেশে উঠলেন। রহিমা খালা তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে অমিত বাবুর দিকে একবার তাকিয়ে প্রবীশ বাবুর দিকে তাকালেন।

পায়ের উপর পা তুলে এক হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে মুখের থুতনি ধরে আরাম করে বসে আছেন প্রবীশ বাবু। রহিমা খালার এমন চাহনি দেখে তিনি হাতের ইশারায় রহিমার খালা কে বসতে বললেন।

রহিমা খালার প্রবেশ বাবুর কথা মত বসে পড়লেন। প্রবীশ বাবুর দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি রাখল অমিত বাবুর উপর। অমিত বাবু তাকে নির্ভয় দিয়ে বললেন_

অমিত বাবু : বল খালা কিসের জন্য এসেছো? কিভাবে সাহায্য করতে পারি আমরা..?

রহিমা খালা : আসলে বলছিলাম কি ?অনেক দিন তো ডালি…

প্রবীশ বাবু :…….( ভুরু ভাঁজ করে রহিমা খালার দিকে শক্ত চোখে তাকালেন।)

রহিমা খালা: না মানে… মেঘা কে এখানে তো অনেক দিন রেখে দিলেন। এবার কি তাকে নিয়ে যেতে পারি…..

প্রবীশ বাবু 🙁 পায়ের উপর থেকে পা নিচে রেখে তেরে এসে রহিমা খালাকে বললেন_) প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টাকা দিয়েছি আমি আপনাকে। আরো কিছু লাগলে বলতে পারেন। কিন্তু মেঘাকে আমি আর আপনার কাছে পাঠাতে পারবোনা। ও এখানেই থাকবে আমার কাছে।

রহিমা খালা: দেখুন আপনি কিন্তু বলেছিলেন কিছুদিনের জন্য ডালিয়াকে এখানে আনবেন ।এমন কিন্তু কথা ছিল না।

প্রবীশ বাবু : অমিত এই মহিলাকে 50 লক্ষ টাকা দিয়ে দাও । এটা দিয়ে অনায়াসে তার বাকি জীবন পার করতে পারবে।দ্বিতীয়বার যেন এই মহিলা আমাকে তার মুখ না দেখায়। এরপর যদি মেঘার জীবনে তার ছায়াও আমি দেখি ,আমি কিন্তু অ্যাকশন নিতে বাধ্য হব।

50 লক্ষ টাকা একসাথে রহিমা খালা তার জীবনে কোনদিন দেখতে পারবে বলে স্বপ্নেও হয়তো ভাবেনি। কত সুন্দর করে কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই সে 50 লক্ষ টাকার একটি চেক নিয়ে নিল। তবে যাওয়ার সময় সে বললো মেঘার সাথে দেখা করবে।

রহিমা খালা আস্তে আস্তে উঠে আমার রুমে যায়। গিয়ে দেখে মেঘা দরজা লাগিয়ে বসে আছে। দরজার লক করলে, আমি এসে খুলে দেয় । তাকে দেখে আমি ঘাবড়ে যায়। আমার রুমটা চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার পর আমাকে তিনি বলে উঠলে

রহিমা খালা : কিরে ভালইতো মালদার পার্টি ধরেছিস দেখছি। ভালো থাকলেই ভালো। আমি চাই সব সময় তুই ভালো থাকিস। এই বয়সেই এসে কোন কেস কামারিতে জড়াতে চাইনা। বাকি জীবন বসে বসে খাওয়ার পাওনা আমি পেয়ে গেছি শুধু শুধু ঝামেলা করে কি লাভ বল?

মেঘা : …..(তার এই ভাবে এতো সহজ করে কথা বলা,আমাকে চিন্তায় ফেলে দিলো।ওল রেডি আমি আমার ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিয়েছি। কিন্তু তার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে না।)

কথাটা বলেইল রহিমার খালা চলে আসলো। আমি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

সকালে আমার আর নাস্তা করা হোলো না।প্রবীশ বাবু অনেকক্ষণ ধরে টেবিলে অপেক্ষা করে উপরে উঠে আসলেন। এসে দেখে আমি বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। তিনি আমাকে আর ডাকলেন না ।না খেয়ে ই তিনি অফিসে চলে গেলেন না।
*
*
*
রাতে__
প্রবীশ বাবু আমার রুমে এসে দেখলেন আমি এখনও শুয়ে আছি। তিনি ভাবলেন হয়তো আমি সারা দিন ই না খেয়ে দেয়ে শুয়ে আছি। আমার রুমে এসে তিনি আমাকে বললেন_

প্রবীশ বাবু : এখনও শুয়ে আছো যে, অসুস্থ নাকি মন খারাপ?

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here