অপ্রিয় পর্ব ৮+৯

৮+৯
#অপ্রিয়।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_৮

শাড়ী পরেছো কেন?শাড়ী যদি সামলাতেই না পারো,আর
পড়ে যাওয়া আঁচল যদি সব সময় আমারই তুলে দেয়া লাগে।

-আপনি তুলবেন নাতো অন্য কেউ তুলবে?

দিহান আমার কথা শুনে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো আমার দিকে।

আর আমি সরে গেলাম দিহানের সামনে থেকে।

আচ্ছা চলো চলো সবাই চলো।রেডিতো সবাই?
-হ্যাঁ আমরা রেডি।
-মুসাররাত কই?
-এই যে আমি।
-চলো চলো।

দিহানের মুখ থেকে মুসাররাত কই বাক্য টা শোনা মাত্রই রত্না আপুর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

আমরা বেড়িয়ে গেলাম ঘুরতে।

আমরা একটা পার্কে ঢুকলাম।সেখানে ঢুকতেই রত্না আপুর বর রত্না আপুর হাত ধরলো।

আর রত্না আপু তার বরের হাত থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নিলো।

আমি আর দিহান দূর থেকে দেখছি এসব।

রত্না আপুর বর দেখতে খুবই হ্যান্ডসাম।
যেকোন মেয়েই এমন বর চাইবে।
কিন্তু ওই যে ভালবাসা।ভালবাসার কারণে রত্না আপুর চোখে দিহান ছাড়া যে কাউকে ভালো লাগবেনা।

দিহান হাঁটছে আমার সাথে ঠিকই। কিন্তু ওর চোখ পড়ে আছে রত্না আপুর দিকে।

ওরা দুজনই সুযোগ খুঁজছে আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য।
কিন্তু কেউই সেই সুযোগ করে উঠতে পারছেনা।

কিছু ক্ষণ পর যখন আমরা সবাই আবার এক সাথে হলাম,তখন দিহান বলে উঠলো,

-আমি নাগরদোলায় উঠবো।
কে কে উঠবে?

আমি বললাম,আমি উঠবোনা।আমি ভয় পাই।
রত্না আপুর বরও বল্লো সে উঠবেনা।

রত্না আপু বল্লো রত্না আপু উঠবে।

তাই দিহান আর রত্না আপু দুজন নাগরদোলায় উঠতে চলে গেলো।

আমি আর রত্না আপুর বর দুজন দাঁড়িয়ে রইলাম।

-কেমন চলছে বিবাহিত জীবন?
-জ্বী চলছে।
আপনাদের কেমন চলছে দিনকাল?
-আর বলোনা,তোমার আপু তো আমাকে পাত্তাই দেয়না।
নতুন বিয়ে করলাম,বউ আদর যত্ন করবেকি তা না,দূরে দূরে রাখে শুধু।

আচ্ছা তুমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিলে কেন?
এখনো তো পড়ালেখাও শেষ করোনি বোধয়।

-ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন।
-তা বুঝলাম,
কিন্তু জানার ইচ্ছে খুব,তোমরা কি লাভ ম্যারেজ করেছো?

আমি ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বললাম,
আইসক্রিম খাবেন?চলুন আইসক্রিম খাই।

এদিকে রত্না আপু আর দিহান তাদের ভালবাসার মুহূর্ত উপভোগ করছে হয়তো।

আর আমি আর রত্না আপুর বর আইসক্রিম খাচ্ছি আর গল্প করছি।সে তার ছোট বেলার স্মৃতিময় কথা গুলো আমাকে বলছেন।
তার ভালো লাগা মন্দ লাগা পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে আমাকে সব বলতেছেন এক এক করে।

এত ক্ষণ কথা বলে বুঝতে পারলাম,রত্না আপুর বর দেখতেই ভালো না শুধু, খুব ভালো মনের মানুষও বটে।

আর রত্না আপু কিনা এই ভালো মানুষ টাকে ছেড়ে,তাকে দুঃখ দিয়ে দিহানের সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছে।

এদিকে রত্না আপু আর দিহান দুজন পারসোনালি কথা বলে নেয়।

-আগামীকাল ভোরেই আমরা দুজন পালিয়ে যাবো।
তারপর যা হবার হবে।(রত্না)
-তুমি সিউর?
-হুম সিউর।
আমি ওই হনুমানটার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবোনা।
তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা।
-আচ্ছা বাবু আচ্ছা।তোমাকে ওই হনুমানের সাথে থাকতেও হবেনা।
আমরা কাল ভোরেই পালাবো।

আমি আর রত্মা আপুর বর আইসক্রিম খেয়ে সেই আগের জায়গায় আবার এসে দেখি
দিহান আর রত্না আপু দুজন দুজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি একটু কাশি দিলাম,আর দুজন দুজনের হাত ছেড়ে দিলো।

-আমরা দুজন আইস্ক্রিম খেয়ে এলাম।
-ভালো করেছো।
চলো এবার আরেকটু ঘুরে বাসায় চলে যাই।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

কিছু দূর যেতেই দেখি ফুলের ক্রাউন নিয়ে একটা বাচ্চা ছেলে ঘুরছে।

যার যার ইচ্ছে কিনে মাথায় পরছে।কেউ বা আবার প্রিয়তমা দের কিনে মাথায় পরিয়ে দিচ্ছে।

হঠাৎ দিহান একটা ফুলের ক্রাউন কিনলো।

কিনেই রত্না আপুর মাথায় পরিয়ে দিয়ে বল্লো,
-দারুণ লাগছে তোমায় ক্রাউন টাতে।

আমি আর রত্না আপুর বর অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।

আর তখনই রত্না আপুর বর আরেকটা ক্রাউন ছেলেটার কাছ থেকে নিয়ে আমার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বল্লো,

-অসাধারণ লাগছে তোমায়।

আমি একটু হেসে বললাম,
ধন্যবাদ।

তারপর আমরা সবাই আবার হাঁটা শুরু করলাম।

রত্না আপুর বর আমাকে বলছে,

-মন খারাপ করেছো?
-নাতো।
-আরে ও কিছু না।মনে কিছু নিও না।
আমি দিয়েছিনা ক্রাউন কিনে তোমায়?তাহলে হাসো।নো মন খারাপ।

-হুম।

আমরা বাসায় চলে এলাম।
সন্ধ্যায় রত্না আপু সবার জন্য চা বানিয়ে আনলো।
চা এনেই সবার আগে দিহানের হাতে দিলো।

আমি রত্না আপুর বরের মুখের দিকে তাকিয়ে আমিও একটা কাপ নিয়ে তার হাতে দিলাম।

সাথে সাথে তার মলিন মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

রাতে আম্মু আর খালামণি সবাইকে ডিনারের জন্য ডাকলেন।

আমরা সবাই গিয়ে বসে পড়লাম।

তারপর আম্মুর হাত থেকে তরকারির ডিশ টা নিয়ে আমি মাছের বড় মাথাটা চামচে তুল্লাম,

-উঁহু প্লিজ আমি নিবোনা আমাকে দিওনা।(দিহান)
-আপনাকে কে দিচ্ছে?আমিতো দিচ্ছি আমাদের বাসার বড় জামাইকে।

নিন তো,প্লেট টা আগান।

-এর কি দরকার ছিলো?
-আমি দিয়েছি না?চুপচাপ খান।

দিহানের আর রত্না আপুর মুখ টা কেন ভাড় হয়ে গেলো বুঝলাম না।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে আমরা সবাই ছাদে গেলাম আড্ডা দিতে।

সবাই বল্লো গানের কলি খেলবে।

আম্মু বল্লো,আমি আর আমার বোন এক দলে।
আর মুসাররাত আর দিহান এক দলে।

আমি বলে উঠলাম,

না, আমি আর রত্না আপুর বর এক দলে।

সেও হাসি দিয়ে বল্লো হুম আমরা এক দলে।

রত্না আর দিহান এক দলে খেলুক।

সবাই বল্লো ওকে।

তারপর রত্না আপুর বর বললেন,আমি আগে একটা গান গাই তারপর শুরু করো সবাই।

সবাই বল্লো ঠিক আছে।

রত্না আপুর বর আমার দিকে তাকিয়ে গান গাইলেন,

-ভালবাসবো বাসবোরে বন্ধু,তোমায় যতনে…
দুধে আলতা গায়ের বরণ রুপ যে কাচা সোনা।আঁচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়েনা।

আমি তখনই হাসতে হাসতে আমার শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকলাম।

আর তখনই দিহান বলে উঠলো,

আমার মাথা টা ধরেছে।
আমি শুবো একটু।

-আরে ভাই মাত্রই তো খেলা শুরু হলো।আর এখনই চলে যাচ্ছেন?
-আপনারা খেলুন আমি যাই,ভালো লাগছেনা আমার।
-আমিও যাই আমারো ভালো লাগছেনা।
-তাহলে আর কি?
কাল খেলি।আজ সবাই গিয়ে রেস্ট নেই।

সবাই যার যার রুমে রেস্ট নিতে চলে গেলাম।

রুমে গিয়ে দেখি দিহান রুমে নেই।
তাই আমি
দিহান রুমে আসার আগেই আমার শাড়ী টা খুলতেছি,আর তখনই হঠাৎ করে ওয়াশরুম থেকে দিহান বেড়িয়ে আসে।

আমি চিৎকার দিয়েই দু হাত দিয়ে আমার মুখ ঢেকে ফেলি।
আর দিহান আমার কাছে এসে আমার শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বলে,

-আমি তোমার বর,বাঘ বা ভাল্লুক না ওকে?
-কি আপনি আমার?
-কিছুনা।আমি বাইরে যাচ্ছি,তুমি চেঞ্জ করে নাও।

আমি চেঞ্জ করে দিহানকে রুমে আসতে বলি।

শুয়ে পড়ি আমরা ঘুমানোর জন্য।

দিহান ভাবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।

কিছু ক্ষণ পর অনুভব করি দিহান আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে।

আর একটু পরেই দেখি দিহান আলতো করে আমার কপালে ওর ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলছে।
-বউ তুমি আমার,এইটুকু অধিকার তো আমার আছেই।আর শোনো,তুমি খুব ভালো মেয়ে।পারলে ক্ষমা করে দিও আমাকে।

তারপর দিহান শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

আর ভোর হতেই আমি রত্না আপুর বরকে ফোন দিয়ে বলি,
-ঘুম ভেঙেছে নাকি?তাড়াতাড়ি আসুন,এক্ষুণি আমাদের পালাতে হবে।

চলবে…

#অপ্রিয়।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_৯.

ভোর হতেই আমি রত্না আপুর বরকে ফোন দিয়ে বলি,
-ঘুম ভেঙেছে নাকি?তাড়াতাড়ি আসুন,এক্ষুণি আমাদের পালাতে হবে।

আর ওপাশ থেকে রত্না আপুর বরও বলে উঠলেন,
-আমিতো সারারাত ঘুমাই ই নি,শুধু ভেবেছি কখন ভোর হবে আর আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।

তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও আমি এক্ষুণি আসছি।

আমি কোন রকম ধীর পায়ে খাট থেকে নেমেই বাইরে আসার জন্য রওনা দিচ্ছিলাম।

পরক্ষণেই আবার একটু ব্যাক করে দিহানের কাছে গেলাম।

কি নিষ্পাপ লাগছে আমার অপ্রিয় বরটাকে।

ওর কপাল আর মুখের অগ্রভাগে হাত রাখলাম।রেখে বললাম,

-আমি চলে যাচ্ছি আপনার জীবন থেকে।
আপনার পথ এখন পরিষ্কার।ভালো থাকবেন রত্না আপুকে নিয়ে।সবাই আমাকে খারাপ বলবে তা আমি জানি।
কিন্তু আপনারাতো আর খারাপ থাকবেন না।তাই আমিই সরে গেলাম।
চাইনা আপনাকে কেউ খারাপ বলুক।

তারপর হন হন করে বেড়িয়ে চলে এলাম।

ওদিকে রত্না আপুর বরও রত্না আপুকে ঠিক একই ভাবে এই কথা গুলো বলেই বাইরে আসার জন্য রওনা দিয়েছে।আর সাথে এড করেছে এই অল্প একটু কথা,
আমাকে এ ক’দিন ঠকিয়েছো সমস্যা নেই।তোমার দিহানকে ঠকিওনা।
এক জন ছেলের জন্য তার বউকে কাছে পেয়েও এভয়েড করে চলা টা যে কতটা কষ্টের সেটা তুমি কোন দিনও বুঝবেনা।ভালো থেকো।

এদিকে আমি রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে এসে গেছি।
রত্না আপুর বরও এসে গেছে।

রত্না আপুর বর আমার হাত ধরতে কেমন যেন সংকোচ বোধ করছেন।
তাই আমি নিজেই তার হাত ধরে ফেললাম,

-মন খারাপ করবেন না।আমরা তো আমাদের প্রিয় মানুষ গুলোর ভালোর জন্যই ওদের ছেড়ে পালাচ্ছি।
তাছাড়া আপনি আর আমি দুজন দুজনকে ভালবাসি না তাতে কি?
ভালবাসা একদিন ঠিক হয়ে যাবে।
তবে ওরা তো সুখী হবে।এটাই বা কম কি?

-হুম তুমি ঠিকই বলেছো।তাছাড়া তুমি কিন্তু যথেষ্ট সুন্দরি।আবার লক্ষীও বটে।আমি কিন্তু সত্যিই লাকী হবো তোমাকে পেয়ে।দিহানের চোখে হয়তো সমস্যা যে তোমার মত হীরাকে চিনলোনা।
-আপনিও কম হ্যান্ডসাম না।
যে কোন মেয়ে আপনাকে নিয়ে সুখী হতে চাইবে।রত্না আপু আপনাকে হারিয়ে জীবনে বড় একটা ভুল করে ফেল্লো।
যাক গে, চলুন এবার পালাই।
কেউ ঘুম থেকে উঠে যাবার আগেই।

-চলো তাড়াতাড়ি।

-দাঁড়াও,(দিহান)
কোথায় যাচ্ছো তোমরা?
-আর তুমিই বা কোথায় যাচ্ছো?(রত্না)

-না মানে আমরা..
-আমরা মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছিলাম।
-তো আমাদের রেখে কেন?
-কি করবো?আমরা কি আর আপনাদের প্রিয় নাকি যে আপনারা আমাদের সাথে যাবেন।
তাই আমরা দুজনই যাচ্ছিলাম।
ভাবলাম আপনাদের দুজনের ঘুম ভাঙিয়ে কি লাভ।তাছাড়া যাবেনও না আপনারা।

-ওহ তোমরাও যাবে বুঝি?চলো চলো তাহলে।

-কোত্থাও যাবোনা আমি,আপনি আমার সাথে রুমে চলুন।(রত্না আপু রেগে)
-এ মা,কেন আপু?আমরা এখন হাঁটতে যাবোতো।
-কোত্থাও যাবিনা তুই,থাপ্পড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে ফেলবো।
চল আমার সাথে রুমে।

দিহান আমাকে হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে এলো।

-কি হচ্ছিলো এসব?
-আজব, কি হচ্ছিলো?
-তুই কোথায় যাচ্ছিলি?
-একবার বলেছিই তো।
-আবার মিথ্যা বলে, আমাকে রাগাস না কিন্তু,নইলে ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
-আমি আপনাকে কই রাগালাম?
তাছাড়া আপনি আবার রাগ ছাড়া থাকেন নাকি কখনো?
-মুসাররাত প্লিজ,
আমার মাথায় রক্ত তুলে দিসনা।
আমি খুব রেগে আছি।
-গুড,ভেরি গুড।
-মুসাররাত,(রেগে)

দিহান ওর দু হাত দিয়ে আমার দু কাঁধ শক্ত করে ধরে ওর বুকের কাছে এনে আমার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে বলে,

-আমাকে তোর কি মনে হয় হ্যাঁ?
ফেলনা কিছু মনে হয়?
নাকি খেলনা মনে হয়?
আমি তোর বর,তিন কবুল পড়ে বিয়ে করা স্বামী আমি তোর।এটা মাথায় রাখিস।

এ কথা বলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাইরে চলে যায়।

দিহানের চোখে আজ আমি প্রথম বারের মত জল দেখেছি।
লাল হয়ে ছিলো আজ ওর দু চোখ।
এমন লাল চোখ শুনেছি মানুষ রাগলে বা খুব বেশি আঘাত পেলে হয়।

ওই দিকে রত্না আপু তার বরকে বলছে,

-কোথায় যাচ্ছিলেন?
-বলেছিনা হাঁটতে।
-ফাইজলামি পাইছেন?নাকি আমাকে বোকা পাইছেন?
আমি কিচ্ছু বুঝি না,না?
মুসাররাতের সাথে কি হ্যাঁ?আমি কি মরে গেছি?আমি ছিলাম না তোর পাশে?আমাকে কেন ডাকলিনা?
বউ রেখে শালী নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে?

এবার খপ করে রত্না আপু তার বরের শার্টের কর্লার ধরে ফেলে।

-একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ।
আমি তোর রেজিস্ট্রি করা বউ,ওকে?
বাজারের কিনে আনা পুতুল না যে ভালো লাগলোনা চেঞ্জ করে আরেকটা নিয়ে এলি।
কথাটা মাথায় যেন থাকে।

রত্না আপুও তারপর কর্লার ছেড়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়।

একটু পরে আম্মু খালামণি আমাদের সবাইকে নাস্তা করতে ডাকে।

আমি গিয়েই মাত্র রত্না আপুর বরের কাছে বসবো,
আর দিহান আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে বসায়।
রত্না আপুও গিয়ে তার বরের পাশে বসে পড়ে।

আমরা নাস্তা করছি।

আর একটু পর পরই রত্না আপুর বর আর আমি চোখাচোখি করছি।
আর মিষ্টি করে হাসি দিচ্ছি।

কিছু ক্ষণ পর আম্মু আর খালামণি বলে উঠলেন,

তোদের বাবা আর আংকেল তোদের শপিং করার জন্য কিছু টাকা দিয়েছেন।
নাস্তা করেই তোরা চলে যাস শপিং করতে।
নিজেদের ইচ্ছে মত যা ইচ্ছে তাই কিনে নিস।

-আচ্ছা খালামণি।আমিতো দুই পায়ে খাঁড়া।
-জ্বী মা,আমরা নাস্তা করেই বেড়িয়ে যাবো।

দিহান আর রত্না আপু কোন কথাই বলছেনা।
নাস্তা শেষে আমি রুমে গিয়ে একটা শাড়ী বের করলাম,ও টা পরবো বলে।

-একটু বাইরে যান তো।
-কেন?
-আমি শাড়ীটা পরবো।
-তো আমার বাইরে কেন যেতে হবে?
-আজব,বাইরে যাবেন না?
-কেন যাবো?
-কারণ আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।
-আই এম ইউর হাজবেন্ড ওকে?
সো চেঞ্জ করতে হলে আমার সামনেই করতে হবে।
-তাহলে অন্য সময় কেন বেড়িয়ে যেতেন?
আর এখন কেন যেতে যাচ্ছেন না?
-উফফ জানিনা জানিনা জানিনা,আমি কিচ্ছু জানিনা।

দিহান বেড়িয়ে যায়।
আমি শাড়ী পরে নেই।

কিছু ক্ষণ পর দিহান রুমে আসে।
এসেই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

নিজের দিকে নিজেই কয়েক বার ঘুরেফিরে তাকালাম।কই নাতো আঁচল তো আজ ঠিকই আছে।কয়েকটা পিন দিয়ে আটকে নিয়েছি।

দিহান ধীরেধীরে আমার দিকে আসতে লাগলো।

আর আমি পেছন দিকে যেতে লাগলাম।ও আগাচ্ছে আর আমি পেছনে যাচ্ছি।
এক বারে দেয়ালের সাথে লেগেই গেছি আমি।
দিহান ওর মুখ টা আমার গালের কাছে আনতে লাগলো,আর আমার হার্টবিট বাড়তে লাগলো।
আস্তে আস্তে কানের কাছে ঠোঁট টা এনে

কিছু বলতে যাবে

আর তখনই রত্না আপু রুমে এসে পড়লো,

-হয়েছে তোদের?

আমি দিহান কে সরিয়ে দিয়ে বললাম।
-হুম রেডি আমরা।
-আজব,আসার আর সময় পেলেনা?
-কিহ?
-কিছুনা আপু।চলো।

আমরা সবাই শপিং করতে বেরুলাম।

মার্কেটে পৌছে গেছি।

শাড়ীর দিকে প্রথমে ঢুকেছি।

সবাই শাড়ী দেখছি।

রত্না আপুর বর একটা গাড় গোলাপি রঙের শাড়ী নিয়ে আমার দিকে আগাচ্ছে।

আর তখনই দিহান একটা লাল টুকটুকে শাড়ী নিয়ে আমার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলে,

-এই শাড়ীটা কেমন দেখোতো।
-আছে মোটামুটি।তবে ওই গোলাপি টা বেশি সুন্দর।

আর তখনই রত্না আপু গোলাপি শাড়ী টা নিয়েই বলে,এটা তাহলে আমি নিয়ে নিলাম।

-না, এটা দাও বলছি।
এটা মুসাররাত পছন্দ করেছে আগে,
তাই ওকে দাও ওটা।
তুমি দিহানের হাতের টা নাও।ওটা পরলে তোমাকে বেশি মানাবে।

-না আমি এটাই নিবো।ও নিক দিহানের হাতের টা।

-আপুই নিক ওটা আমি কোন শাড়ীই নিবোনা।

এই বলে আমি ওখান থেকে সরে আসলাম।
-দাঁড়াও মুসাররাত দাঁড়াও।
রত্না আপুর বর আমার আমার পেছন পেছন চলে আসলো।

আর এসেই বল্লো,

-এখন তো আটকাবার মত কেউ নেই।
এবার চলো তবে পালাইইইই…

-হি হি হি।
-হা হা হা।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here