অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব -০৩

#অপ্রিয়_প্রেয়সীর_ভালোবাসা –[৩]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________

-‘ দেখুন বিয়েটা যেভাবেই হউক না কেনো আমি এই সম্পর্কটাকে সম্মান করতে চাই আর বাকি পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কর মতন। এতে আমি একলা কিছু করতে পারবো না নিশ্চয়ই? আপনাকেও আমার পাশে থাকতে হবে।’

আয়মান এতোক্ষণ ভাবলেশহীন ভাবে থাকলেও তানহার শেষোক্ত কথাটি কর্নকুহুরে প্রবেশ মাত্রই দৃষ্টি গিয়ে নিবদ্ধ করলো তানহার উপর! বোধগম্য হবার চেষ্টা করতে লাগলো কিয়ৎক্ষন একি সেই তানহা? নাকি বদল ঘটেছে?

-‘ সম্মান কেনো আমি তো তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম কিন্তু তুমি বোঝোনি উল্টে আমাকে যাই হউক সে সব কথা বাদ দেওয়াই ভালো। জানিনা কি হতে চলেছে সামনে তবে প্রার্থনা করবো যাতে ভালো কিছুর প্রয়াস ঘটে।’

আয়মানের কথার পৃষ্ঠে কিছু বলার অবকাশ পেলাম না। খু্ব করে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে মনের কোনে উনি কি এখনো আমাকে ভালোবাসেন? পরিস্থিতির চা’পে পড়ে মনের ইচ্ছে মনেই রেখে দিলাম।

-‘ জল্পনা কল্পনা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হয়ে পাশে এসে শুয়ে পড়ো। আমাদের বিয়েটা সিনেমাটিক হলেও আমরা তো মানুষ তাই ওসব সিনেমাটিক কান্ডকারখানা আমার পছন্দ নয় আমি চাই সামনে এগোতে। বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে সিনেমার মতন কান্ড করবো। যদি পাশে এসে শুতে পারো তো শুয়ে পড়ো আর না হলে কিছু বলার নেই।’

আয়মানের কথা শেষ হতে না হতেই আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম উনার পাশে। উনি উল্টোদিক ফিরে রয়েছেন আমি ও উনার উল্টোদিক ফিরে শুয়ে রয়েছি। দু’জনেই নিশ্চুপ কারো মুখে কোনো কথা নেই কিংবা হাজারো কথা জমে আছে মন গহীন কোনে যে অপ্রকাশিতো হয়ে আছে!

____________________

আয়মান বরাবরই শান্তিপ্রিয় মানুষ। একাকীত্ব চুপচাপ থাকতেই বেশি পছন্দ তার। সকালবেলা মানুষের কোলাহলে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারলো না বিধায় ফ্রেশ হতে চললো ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমে যাবার সময় দেখতে পেলো তানহা খুব সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে! প্রায় তিন বছর পর এই মানুষটির মুখ আয়মান আজকে একেবারে ভালো করে গেথে নিচ্ছে মনের কোনে। চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে তানহার কপাল বরাবর হালকা করে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে যেনো খুব সন্তপর্নে যেনো তানহার ঘুম না ভাঙে।

সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠতেই দেখলাম আয়মান পাশে নেই একটু চোখ বোলাতেই দৃষ্টিগোচর হলো মহোদয় ড্রেসিং টেববলের সামনে বসে সাজুগুজু করছেন! আমাকে ঘুম থেকে ওঠতে দেখতে পেয়ে আমার কাছে এসে বসলো।

-‘ সুপ্রভাত। নতুন সকালের মতন নতুন ভাবে রঙিন হয়ে ওঠুক আমাদের জীবন। শাড়ি রাখা আছে রেডি হয়ে নিচে যেতে হবে। ‘

আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম শাড়ি পড়ার জন্য কিন্তু আয়ান পূর্বের ন্যায় সেই একই স্থানে বসে রয়েছে!

-‘ আপনি একটু বাহিরে যাবেন আমি শাড়িটা পড়তাম? শাড়িটা তো বেশ বড়ো ওখানে পড়লে ভিজে যেতে তাই বলছি।’

-‘ ঠিকআছে আমি বারান্দায় যাচ্ছি। ‘

আয়মান বারান্দায় যেতে তানহা শাড়িটার ভাজ খুলে দেখলো। একদম টুকটুকে গাঢ়ো গোলাপি রঙের শাড়ি দেওয়া হয়েছে। তানহা শাড়িটা গায়ে পড়ে নিতে বারান্দায় দেখতে পেলো আয়মান বসে রয়েছে। তানহা আয়মানের কাছে যেতেই দেখতে পেলো আয়মান বারান্দায় বসে স্মো’ক করছে!

আয়মানকে স্মো’ক করতে দেখে আমার চক্ষু যেনো চড়কগাছ! এটা কল্পনারও বাহিরে ছিলো উনিও এরকম হলেন!
আমি উনার কাছে যেতেই আরো স্পষ্ট করে দেখতে পেলাম নিচে পাঁচ ছয়টি সি’গা’রে’ট পড়ে রয়েছে মানে আমার এই শাড়ি পড়ার সময়টুকুতে উনি এতোগুলো খেয়েছেন।

-‘ এই ব’দ অভ্যাসের কথা তো আগে শুনিনি কখনো।’

পিছনে তানহার আকস্মিক বলার কারনে ভড়কে গিয়ে হাত থেকে সি’গা’রেটটি ফলে দেয় আয়মান!

-‘ তুমি এখানে এসেছো কেনো? তোমার তো শাড়ি পড়া শেষে।’

-‘ হ্যাঁ সেইজন্যই আপনাকে রুমে আসতে বলার সময় দেখালম আপনি স্মো’ক করছেন। এগুলো আগে দেখিনি কখনো তাহলে আজকে হঠাৎ? ‘

-‘ হঠাৎ! হাহ্ ভুল বললে হঠাৎ নয়! এটা আমার সঙ্গীই বলতে পারো! তুমি ছেড়ে গেলেও এটা আমাকে ছেড়ে যায়নি আমার সঙ্গ দিয়েছে! তুমি কি বুঝতে পারছো আদৌ এই যে তুমি টুকটুকে রঙের শাড়ি পড়ো আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছো তোমাকে ঠিক কতোখানি সুন্দর লাগছে অথচ আমি তোমাকে ছুঁতে অব্দি পারছি না এটা আমার কাছে কতোটা য’ন্ত্র’ণা’দা’য়ক? এই যে তুমি কালকে আমার পাশে শুয়ে ছিলে পুরো রাত এই রাত নিয়ে আমার কতো আশা ছিলো অথচ একটি বারও তোমাকে ছুঁতে পারা তো দূর তোমার সঙ্গে ভালো করে কথাও বলিনি এটা কতোটা য’ন্ত্র’ণা’দা’য়ক ছিলো আমার কাছে। এগুলো কি আদৌ বুঝো তুমি? বুঝবে না কারন তুমি তো আমাকে ভালোবাসা তো দূর কখনো পছন্দও করোওনি! যদি এগুলা বুঝতে তাহলে আজকে তোমার আর আমার মধ্যে এতোখানি দুরত্ব এতোখানি দেয়াল তৈরী হতো না! বুঝতে হবে না তোমাকে তুমি যেমন ছিলে তেমনি থেকো যদি নিজে মন থেকে কিছু করতে চাও তো ঠিক আছে জো’র করে কখনো কিছু হবে না!’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আয়মান দরজা খানি ধ’পাস করে প্রচন্ড জো’রে বন্ধ করে চলে গেলেন রুম থেকে! বোঝাই যাচ্ছে উনার রা’গ দরজার উপর দেখালো খানিকটা! আমি আসলেই বুঝলাম না উনার এতোটা রে’গে যাবার কারন। আমরা তো স্বামী স্ত্রী উনি চাইলেই আমাকে ছুঁতে পারেন কিংবা কথাও বলতে পারেন বলতে পারছেন না হয়তো সেই অতীত এসে বারংবার আমার বর্তমানটাকে আ’ঘা’ত হানে!

চুপচাপ বসে রয়েছি বেডের উপর। পুরো রুম জুরে আয়মানের ছবি কেবল। আমি ছবিগুলো দেখতে লাগলাম ঠিক তখুনি কারো ডাকে পিছন ফিরে ঘুরে তাকালাম।

-‘ তানহা মা আমি তোমার আরেকটা মা মানে তোমার শাশুড়ী মা! তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতন মুখ নেই তবুও বলছি ক্ষমা করে দিও পারলে আমাকে। তবে তুমি ভেবো না আমার বড়ো ছেলে আয়মান তোমার যোগ্য নয় ও নির্জনের থেকে অনেক ভালো আছে। ও ঠান্ডা মা’থার মানুষ নিজের মতন করে থাকতে পছন্দ করে তুমি একটু ওর সঙ্গে মানিয়ে নিও। তোমারা দু’জনের সহযোগিতায় এই সম্পর্কটা আরো দৃঢ় মজবুত হবে আশা করি তুমি বুঝেছো? ‘

-‘ জ্বি আমি বুঝেছি। তবে আপনি আমার গুরুজন আপনার ক্ষমা চাওয়ার কোনো দরকার নেই। কাজগুলো তো নির্জন একা করেনি আমার বোনও দায়ী আছে এতে তাই ক্ষমা চাইববন না।’

-‘ তাহলে নিচে আসো একটু পরেই তো তোমার পরিবারের মানুষজন চলে আসবে। ‘

নিচে যেতেই সবাই উৎফুল্ল হয়ে আমার কাছে আসতে লাগলো একে একে। সবাই এটা ওটা প্রশ্ন জিগেস করছে আমাকে জানতে চাইছে আমার সম্পর্কে। পুরো বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কিন্তু আমার দৃষ্টি কেবল খুঁজে চলেছে আয়মান নামক মানুষটিকে! তাকে খুঁজে ব্যার্থ হয়ে বসে রইলাম পূর্বের ন্যায়। মিরাকেও নিচে নিয়ে আসা হয়েছে মিরার পাশেই বসে রয়েছে নির্জন দু’জন খুব হাসি মুখে সবার সঙ্গে কথা বলছে। নির্জন বেশ হেসে হেসে কথা বলছে মিরার সঙ্গে! হয়তো ভালোবাসে এই কারনে কিন্তু নির্জন যদি মিরাকেই ভালোবাসে আমাকে বিয়ে কেনো করতে চেয়েছিলো? আর মিরা কেনো বিয়ের দিনই সব বলতে আসলো ও তো আগেও বলে পারতো সবটা তাহলে আয়মানের সঙ্গে আমার বিয়েটা হতো না এইসব প্রশ্নের উত্তর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।

এতো কিছু ভাবনার মধ্যেই দৃষ্টি গিয়ে স্থির হলো আমার বাবা নামক মানুষটির দিকে! বাবা আমার কাছে আসতেই ঝা’পটে ধরে নিলাম যেনো কতোকাল দেখিনি বাবাকে! মিরা বাবার কাছে যেতেই বাবা হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো!

-‘ তোমার জন্য কালকে আমার মান সম্মান টানাটানি হয়েছিলো। তুমি অন্য একজনকে ভালোবাসতেই পারো সেটা অ’ন্যা’য় নয় কিন্তু বিয়ের আগে প্রে’গন্যা’ন্ট হবার মতন ঘৃ’ন্য কাজ তার উপর সেটা নিজের বোনেরই বিয়ের দিন সবার সামনে ঘটা করে বলা এটা নিশ্চয়ই অ’ন্যা’য়? ভেবো না কালকে তোমার মা’থায় হাত রেখেছি বলে ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে! তুমি যে কাজ করেছো তাতে ক্ষমা কেনো তোমাকো আমার নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতে ভাবতে হচ্ছে। এখানে তানহার শশুড়বাড়ীতে এসেছি লোকজন আছে তাই কোনো সিনক্রিয়েট করবে না দূরে যাও এখান থেকে!’

মিরা কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো নির্জনও গেলো মিরার পিছু পিছু।

-‘ মিরা তুমি প্লিজ কেঁদো না। এইতো শুনলে না তোমার বাবাই তো বললো ভালোবাসা কোনো অ’ন্যা’য় নয়। আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি তাহলে আমরা কোনো অ’ন্যা’য় করিনি বলো। যে সত্যিটা সবার চোখের আড়ালে রয়েছে সেটা আরো কয়েকদিন আমাদের চালিয়ে যেতে হবে নতুবা যাদের জন্য এতোকিছু করলাম সেটা পূর্নতা পাবে কই বলো?

-‘ আমার আপুই আমার সবচেয়ে কাছের তার জন্য মিথ্যা কেনো তুমি যা বলবে আমি কাই করবো। শুধু চাই ও একটু ভালো থাকুক। ওর ভালোর জন্যই এতো কিছু করেছি আমি।’

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here