অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব -০৪

#অপ্রিয়_প্রেয়সীর_ভালোবাসা — [৪]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
________________________

চারপাশের বেষ্টনী ফুলে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে সেই মাঝখানে বসে রয়েছে তানহা টুকটুকে গাঢ়ো রঙের গোলাপি শাড়ি সঙ্গে গোলাপি রঙের গাজরা ফুল দেওয়া আছে মা’থায়। হালকা সাজও আছে। দূর থেকেই বিমোহিতো দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে রইলো আয়মান! ইশশ যদি কোনো অতীতের ছাঁয়া না থাকতো ওদের জীবনে তাহলে আয়মান এক্ষুনি গিয়ে তানহাকে একবার জড়িয়ে ধরতো। মনের আশা মনেই রেখে আয়মান তানহার পাশের চেয়ারে এসে বসলো। কিছুক্ষণ ছবি তোলার পর্ব শুরু হলো ছবি তোলা শেষ হলে খাওয়া দাওয়া সবকিছু শেষ করে এখন তানহার নিজের বাড়িতে যাবার পালা!

গাড়ির দরজা খুলে আপন মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছি অনেকক্ষন যাবত। পাশ দিয়ে সাই সাই করে অন্য গাড়ি গুলো চলে যাচ্ছে যেনো সামনে এগিয়ে যাবার প্রতিযোগিতা চলছে। গাড়ি থামানোর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো। চেয়ে দেখলাম বাড়িতে এসে পৌঁছে গেছি। আমাদের পিছনের গাড়িতে মিরা আর নির্জন আছে। বাড়িতে ঢুকে আত্নীয় স্বজন সবার সঙ্গে কথা বলে রুমে ঢুকলাম!

-‘ নিয়ম রক্ষার জন্য এসেছি তানহা কালকে সকাল হতেই চলে যাবো।’

-‘ কালকে সকালেই চলে যাবেন! একটা দিন অন্ততো থাকুন?’

-‘ এখানে থেকে বোর হচ্ছি! এখন তো সবে বিকেল তারপর রাত তারপর গিয়ে সকাল অবশেষে তারপর বাসায় যেতে পারবো! ‘

-‘ আপনার বোরিং লাগছে তো? বোরিংনেস কাটাতো চান?’

আয়মান তানহার কথা শুনে ভ্রু খানি কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে তানহাকো প্রশ্ন করলো।

-‘ তো তুমি কি আমাকে এন্টারটেইন করে বোরিংনেস কাটাতে চাচ্ছো?’

আয়মানের কথায় চম’কে ওঠলাম! আমি কি বললাম আর উনি কি বললেন? আমিও উনাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম

-‘ এসব বাদ দিন ফ্রেশ হয়ে চলুন আপনাকে সামনে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসছি। ‘

-‘ তোমার পিছু ঘুরতে ঘুরতে এই এলাকা গ্রাম সবই আমার চেনা হয়ে গেছে কিছুই বাদে নেই অচেনা।’

উনার কথা শুনে বিষম খেলাম! তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে একটু পরে রেডি হয়ে উনাকে নিয়ে নিচে গেলাম ঘুরার জন্য।
বাইরে বড়ো রাস্তা মোর ছেড়ে একটু দূর এগিয়ে গেলাম পাশ্ববর্তী গ্রামের দিকে। গ্রামগুলোতে এখন ধানের আমেজ প্রায়ই সব ঘরেই ধান রোদ দেওয়া হয়েছে কিংবা কেউ সিদ্ধ করতে ব্যাস্ত! স্নিগ্ধ কোমল প্রকৃতি। আমার পাশে হাঁটছে আয়মান মাঝে মাঝে আর চোখে উনার দিকে তাকাচ্ছি স্নিগ্ধ সতেজ বাতাস এসে আমাদের গায়ে দোলা দিয়ে যাচ্ছে! মুহুর্তটা ফ্রেমবন্দী করে রাখলে হয়তো মন্দ হতো না। আয়মান রাস্তা ধরে একটা দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি তাকিয়ে দেখছি উনাকে।

-‘ এভাবে আড়চোখে না তাকিয়ে সামনে থেকে ভালো করেই তাকিয়ে দেখতে পারো আমি তো আর অন্য কেউ না তোমার নিজেরই স্বামী! ‘

উনার কথা শুনে হঠাৎই ভড়কে উঠলাম। লজ্জায় আবদ্ধ করলাম নিজেকে। মা’থাখানি নিচু করে রাখলাম।

-‘ এতো লজ্জা পেতে হবে না তোমাকে চলো একটু বসি এবার। ‘

আয়মানের কথানুযায়ী একটা গাছের নিচে ঘাসের উপর বসলাম। আমার পাশে আয়মান আর আমাদের দু’জনেরই সামনে গ্রামের স্নিগ্ধ কোমল রূপ সঙ্গে সতেজ হাওয়া তো আছেই!

-‘ তুমি কি আমাকে আগের মতনই ভাবো তানহা?’

আমি বসে ছিলাম উনি আমার হাত দু’টো নিজের হাতের মধ্যে রেখে নিয়ে উপরোক্ত কথাটি বললেন।

-‘ নাহ্! আগের মতন মনে করি না আমি আমার ভূল বুঝতে পেরেছি।’

আয়মানের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো তানহার কথা শুনে। এ-ইতো চাই আর কিছু না! একবার সম্পর্কের প’তন ঘটেছিলো আবার না হয় শুরু করা যাক।
_____________________

মিরার বাবা মিরাকে ওসব কথা বললেও নিয়ম রক্ষার্থে তানহার সঙ্গে বাপের বাড়িতে আসে। মিরাদের বাড়িতে সবাই জয়েন ফ্যামিলি। মিরার, বড়ো ভাই আব্বু আর ওদের চাচা আর এক চাচাতো বোন, দাদীমা এই মিলেই ওদের ভরা ফ্যামিলি। পথিমধ্যে গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওদের আসতে দেরি হয় বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে দু’জনে বেরিয়ে পড়ে আগন্তুকের উদ্দেশে!

-‘ নির্জন আমার খুব ভ’য় হচ্ছে এবার যদি উনি আমাদের কে আরো ভ’য়ংক’র কিছু করতে বলেন তখন কি করবো বলো? অলরেডি এসব মিথ্যা প্রেগন্যান্সির কথা বলে আপুর বিয়ে তোমার ভাইয়ের সঙ্গে দিয়েছি যেখানে আমি জানি যে আপুর সঙ্গে আয়মান ভাইয়ের ঝা’মে’লা আছে! এখন কি বলবে ওই লোকটি আমাদেরকে?’

-‘ মিরা বরাবরের মতনই বলছি তোমাকে এসব নিয়ে মা’থা না ঘামাতে। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে! আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো ভাইয়ার পাস্ট সম্পর্কে আমি যা জানি সবটাই বলেছি তোমাকে, আমার ভাই বলে নয় তোমার বোনকে আমার ভাই নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসে যা আমি বুঝেছি। আমরা ওই মহিলার একটা গুটি মাত্র। পু’লি’শের সাহায্যও নিতে পারছি না দেখেছো তো? তুমি তো নিজেই দেখলে পু’লি’শের সাহায্য নিতে গেছি আর তোমার মায়ের আর তানহার কতো বড়ো এ’ক্সি’ডে’ন্ট হলো? এখন কোনো উপায় নেই আমাদের কাছে চলো এখান থেকে।’

মিরা আর নির্জন হাটতে লাগলো সামনে। ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে বড়ো রাস্তা ছেড়ে আর একটু হাঁটলে একটা জ’ঙ্গল পড়ে। ওই জ’ঙ্গলে একটা পো’ড়া বাড়ি আছে সেখানের উদ্দেশ্য।

ঘনো কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে বসে আছে এক মেয়ে! পড়েনে তার ছেলেদের মতন শার্ট প্যান্ট মুখে মাস্ক পড়া। একটা চেয়ারে বসে আছে সে তবে যেখানে মিরা আর নির্জন বসেছে সেইদিকের উল্টোদিক ফিরে বসে রয়েছে সেই মেয়েটি!

-‘ তানহা আর আয়মানের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে এখন আর তোমাদের কিছু করতে হবে না। এখন থেকে যা করবার সব আমি করবো আর তাও প্রকাশ্যেই করবো। তোমাদের আর কোনো কাজ করতে হবে না কিন্তু যদি ভুলেও কিছু বলেছো বাড়িতে তো তোমার বোনের যে অবস্থা হতে হতেও হয়নি সেটাই হবে বুঝেছো তো? বাড়ির সবাই যেরকম জানে তুমি তোমার বোনের বিয়ে ভে’ঙেছো নিজের সংসার পাতার জন্য ঠিক যেনো সেরকমটাই সবাই জানে! একটু বেফাঁস কিছু যাতে না বের হয়? ‘

-‘ ঠিকআছে ঠিকআছে আমরা সবকিছু বুঝতে পেরেছে কাউকে বলবো না কোনো কিছু। কিন্তু আপনি দয়া করে আর কারো ক্ষ’তি করবেন না আমরা কথা দিচ্ছি কিচ্ছু বলবো না কাউকে সবটা যেরকম আছে ঠিক সেইরকমই থাকবে কেউ কিচ্ছু জানবে না আমি কেনো এসব মিথ্যা প্রেগন্যান্সির নাটক করলাম। ‘

মেয়েটির নির্দেশ অনুসারে মিরা আর নির্জন ওই জায়গা থেকে বেরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

-‘ নির্জন সবই ঠিকআছে কিন্তু মেয়েটি কিন্তু স্বাভাবিক গলায় কথা বলেনি দেখলে তো? গলার আওয়াজ কিরকম মো’টা মানে ছেলেদের মতন করে কথা বলার চেষ্টা করেছে যেনো সত্যি উনার গলার আওয়াজ আমরা চিনতে না পারি। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কি বলোতো এর আগের বার কিন্তু উনি কোনো কথা বলেনি একজনের সাহায্যে আমাদের দিয়ে সব বুঝিয়েছেন ওই মেয়ের হয়ে সব কথা বলতো। মেয়েটা আজকেই সরাসরি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে তাও গলা মো’টা করে যাতে আমরা ধরতে না পারি!’

-‘ মিরা তুমি অতো ভেবো না তো। তুমি কি ভেবেছো এমনি এমনি ছেড়ে দিবো ওকে এখন সবাই আমাদে উপর রে’গে আছে আমরা যদি সবাইকে সত্যি টাও বলিও কেউ বিশ্বাস করবে না সবাই ভাববে নিজেদের সাফাই গাইছি তাই পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতে দাও তখন সব করা যাবে। ‘

মিরা নির্জনের কথায় সায় দুলিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। ধৈর্য্য ধরলো কখন সবটা সামনে আসবে আর তাদের প্রতি বাড়ির সবার ঘৃ’নার দৃষ্টি সড়বে।
________________

আমি আর আয়মান বসে ছিলাম আমাদের সামনেই তামান্না এসে দাঁড়ালো! তামান্না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাদের বিয়ের ক’দিন আগ থেকেই ও নিঁখোজ ছিলো ওদের এখানে বাসা ভাড়া করে থাকে ওর পরিবার নাকি গ্রামে।

-‘ কিরে তামু তুই এখানে? তাও আবার এই সময়ই?’

-‘ তোকে চম’কে দিতেই তো এখন এখানে এভাবে আসলাম!’

-‘ ইর্য়াকি করিস না তামু সত্যি টা বল খুলে? ‘

-‘ আরে শোন এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তোকে দেখতে পেলাম এতুটুকই।’

তামান্নাকে দেখতে পেয়ে আয়মান দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালো একটুখানি। আমি তামুর সঙ্গে একটুখানি কথা বলা শেষ করে আবারো আয়মানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আবারো পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম দু’জন। আমি উনার হাতটা আঁকড়ে ধরে হাটতে লাগলাম। উনার হাত ধরার সময় উনি আড় চোখে একবার আমার দিকে তাকালেন ব্যস উনার ওই মা’তা’ল করা চাহনিই যথেষ্ট ছিলো আমার নিজেকে লজ্জায় আবৃত করার জন্য।

#চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here