#-অপ্রিয় সে
#- সানজিদা সন্ধি
#-পর্বঃ৯
সিলিং ফ্যানটাকে আজ বড্ড বেশি আপন মনে হচ্ছে রিমুর। ছোট থেকে অবহেলা যেন তার নিত্যসঙ্গী। রিমুর জীবনে অনেক মানুষ এসেছে আবার চলেও গিয়েছে। অসংখ্য প্রিয় বস্তু তার কাছে এসেছে আবার নষ্টও হয়েছে । এগুলোর কোনোটার স্থায়িত্বই অবহেলার মতো দীর্ঘমেয়াদি নয়। সেই ছোটবেলা থেকে অবহেলা ওই যে তাকে আপন করে নিলো! আজ অবধি ছাড়লো না। সে বোধহয় রিমুর মায়ায় পড়ে গিয়েছে। আজীবনের সঙ্গি হতে চায় তার। তাই এতো কাল ধরে আগলে রাখছে তাকে।
গলায় থাকা জর্জেটের ওড়নাটা ফ্যানের সঙ্গে পেঁচিয়ে গলায় দিলো রিমু। তার পা এখন খাটের ওপরে থাকা একটা টুলের ওপর।
প্রেস কনফারেন্স শেষে ঘরে এসে হাঁপ ছাড়লো রূপম। সবাই তাকে এমন ভাবে চেপে ধরেছিলো যে মনে হচ্ছিলো সে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। জীবনে প্রথমবার এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তার প্রাণ ওষ্ঠাগত । এতকিছু যার কারণে হয়েছে তার মতামত নেওয়ার জন্য যখন মিডিয়ার লোকেরা রূপমকে ফোর্স করছিলো তখন মিশ্র অনুভূতিতে সে স্তব্ধ পাথর। তবে একটা জিনিস তার মাথায় ঢুকছেনা। একটা রাত সবকিছু কী করে চেঞ্জ করে দিতে পারে?
কিছু কিছু মানুষের মানসিকতায় নির্দিষ্ট কিছু জিনিস বা আচরণের প্রতি রাগ বা বিরক্তি বোধ থাকে। তার মধ্যে রূপমের যে বিষয়টা বিরক্ত লাগে সেটা হচ্ছে কলার ধরা। রিমু যেদিন রূপমের কলার চেপে ধরেছিলো সেদিন তার রাগ হয়েছিলো। রিমুর থেকে এই ধরনের আচরণ তো অকল্পনীয় তার কাছে। সেই রিমুই কলার চেপে ধরে যখন রূপমের উপর জোর গলায় কথা বলেছিলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো রূপম।
তবে চিরকুটটা রূপমই দিয়েছিলো রিমুকে। এটা তার বাম হাতের লেখা। সে দুই হাতেই লিখতে পারে। এবং বিষয়টা সে ছাড়া কেউই জানে না। যেটার ফায়দা সে তুলেছে। সে রেগে না গেলে হয়তোবা স্বীকার করতো৷ যা হবার হয়ে গিয়েছে ভেবে সে এসি ছেড়ে দিয়ে ধরাম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
বাহিরে রৌদ্রের ঝাঁজে চোখ মেলে তাকাতেও সমস্যা হচ্ছে সাদিয়ার। সে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকাতে নিলেই চোখে আলো এসে পড়ছে তার। আজকের দিনটা তার জন্য ভীষণ গুরত্বপূর্ণ। রিমু যে শেষ অবধি তার ভুলটা শুধরে নিয়ে নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করছে এটা তার জন্য ভীষণ প্রশান্তির বিষয়।
কিছু মানুষ থাকে তারা যেখানেই যাক না কেন সবার সমস্যা সমাধান করে দেয়। অথচ তাদের নিজের জীবনই সমস্যায় ভরপুর। সবাইকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেয়। সবার প্রচন্ড খেয়াল রাখে অথচ মানুষ তার থেকে শুধু ভালোবাসা আর যত্ন নিয়েই যায়। বিনিময়ে তাকে খুব কম ভালোবাসা দেয়। সাদিয়ার জীবনে এই রকম মানুষটা হলো রিমু। যেদিন থেকে রিমু আর সাদিয়ার বন্ধুত্ব হয়েছে সেই দিন থেকে রিমু তার সবটুকু দিয়ে সাদিয়াকে আগলে রেখেছে। রিমু সাদিয়ার জন্য যা যা করেছে সেটা সাদিয়া কখনোই ভুলতে পারবেনা। পক্ষান্তরে সাদিয়া কখনো রিমুর কোনো কাজে আসতে পারেনি। তবে সাদিয়া যে রিমুকে ভালোবাসে এটা সে নিশ্চিত।
পেছন থেকে কারো ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো সাদিয়া । ঋষি ডাকছে তাকে। সাদিয়া ঋষির দিকে তাকাতেই বাচ্চাদের মতো মুখ করে খানিকটা অভিযোগের সুরেই ঋষি বললো, ” আপনি তো ভীষণ পাষন্ড! আমাকে ফেলে দিয়ে কোমড় ভেঙে দিলেন অথচ একবারো খোঁজ নিলেন না? ”
রিমুর কথা ভাবার মুহুর্তে ঋষির আগমন আর অহেতুক বাড়িয়ে কথা বলায় রিমু চোখ মুখ কুঁচকে বললো, ” এ কেমন বিচার! এই তো আপনি দিব্যি দাঁড়িয়ে আছেন। কোমড় ভাঙলো নিশ্চয়ই এখন আমার সামনে না থেকে আপনাকে হসপিটালে থাকতে হতো। অ্যাম আই রাইট মিস্টার ঋষি চৌধুরী? ”
ঋষি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সে বুঝলো এই মেয়ের মাঝে কিছু তো স্পেশাল আছেই। অন্য কোনো মেয়ে হলে ঋষি চৌধুরী তার সাথে কথা বলছে ভেবেই সারারাত ঘুমাতে পারতো না আর সাদিয়া তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। বিষয়টা ঋষিকে আকর্ষিত করে তুললো সাদিয়ার প্রতি।
সাদিয়া আগের মতোই ভ্রু কুঁচকে বললো, ” আপনি এখান থেকে যান তো মশাই! না জানি কখন কোন রিপোর্টার কি নিউজ করে দেয়।”
ঋষি আর কিছু বলার আগে সাদিয়াই সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
রিমুর হাত কাঁপছে। সবকিছু একে একে মনে পড়ছে তার। সে ভাবছে কীভাবে মানুষ পারে একটা মানুষকে এতো যন্ত্রণা দিতে যাতে সে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে চায়? শেষবার সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চেয়ে যেই সে গলায় ফাঁস দিতে যাবে অমনিই কোথায় থেকে যেন ঋষি চলে এলো। রিমুর ঘরের দরজা খোলাই ছিলো। নিজের মন মানসিকতার উপর এতোটাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে রিমু যে ঘরের দরজা না আটকেই আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলো। ঋষি রিমুকে ধরে টুল থেকে নামানোর পরপরই প্রচন্ড রেগে থাপ্পড় মারতে গিয়েও থেমে গেলো। নিজেকে শান্ত করে আস্তে সে বললো, ” সরি!”
রিমুর এখন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে কয়েক সেকেন্ডর জন্য স্তব্ধ হয়ে রইলো। হুস ফিরেছে তার৷ একটু আগেই অভিমান , রাগ, জেদের কারণে সে কী জঘন্য পাপটাই না করতে যাচ্ছিলো৷ আল্লাহর হুকুমে ঠিক সময়ে ঋষি চলে এসেছিলো। নয়তো কী যে হতো।
ঋষি রিমুর দিকে তাকিয়ে বললো, ” এসব কী রিমু? আপনার মতো মেয়ে কী করে এই ধরনের কাজের দিকে ধাবিত হওয়ার কথা ভাবতে পারে? আপনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন? এটা কতটা জঘন্যতম পাপ আপনি জানেন না? আমি আপনার সম্পর্কে এতদিন যা যা শুনেছি সবটাই কী তাহলে ভুল? শুনেন! আমি রূপম, আপনাদের পরিবার সম্পর্কে কমবেশি অনেক কিছুই জানি। যতটুকু শুনেছি রূপম আপনাকে অনেক যন্ত্রণা দেয়। সে নিজেই স্বীকার করেছে। আপনি সব সহ্য করেও শক্ত থাকতেন। কখনো নিজের ক্ষতি করার কথা ভাবেননি। তাহলে এখন যখন নিজের কথা ভাবার পথে চলেছেন তখন কেন এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলেন? এতো সাহস কে দিয়েছে আপনাকে?”
রিমু কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না। তবে এতটুকু এই মুহুর্তে তার মাথায় আছে সে যা করতে যাচ্ছিলো সেই স্টেপ নেওয়ার কথা ভাবাও মহাপাপ হয়েছে তার। জীবনটা তো সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সেরা একটা উপহার। আল্লাহর আমানত। তবে সে কী করে পারলো এসব ভাবতে?
নিম্ন সুরে রিমু বললো, ” ভাইয়া কেউ যখন নিজের জীবনের উপর ভীষণ বিরক্ত হয় তখনই সে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। যাইহোক
যেটা বলছিলাম আমি ভুল করতে যাচ্ছিলাম। আপনি সেখান থেকে বের হতে সাহায্য করলেন তার জন্য ধন্যবাদ।
ঋষি ঘর থেকে চলে গেলো। তবে রিমু ভেঙে পড়লো একেবারে। জায়নামাজ বিছিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
আত্মহত্যার প্রবণতা কমবেশি অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। যারা নিজের জীবনের উপর হতাশ, বিরক্ত মানুষেরাই এমন করে। কিন্তু আত্মহত্যা কখনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। এতে হয়তো পৃথিবীর সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব কিন্তু পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আল্লাহ লিখে রেখেছেন। আত্মহত্যা যারা করে তাদের পরিবারের মানসিক অবস্থা খারাপ হয়। আশেপাশের মানুষজনের কথা তো আছেই।
সেজদারত অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়লো রিমু। আল্লাহর কাছে বারবার সে চাইছে আল্লাহ যেন তাকে ধৈর্য ধরার শক্তি দেন। রিমুর মনে একটা প্রশ্ন প্রায়ই জাগে। আল্লাহ কেন তাকে এতো বেশি কষ্ট প্রদান করেন। পরে সে নিজেই নিজেকে উত্তর দেয় আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা করেন। এটা ভেবেই সে একটু প্রশান্তি পায় মনে। হুট করে রিমুর ফোনে ক্রমাগত মেসেজের শব্দ আর অসংখ্য ফোনকল আসতে থাকে। রিমু উঠে ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের ওপারে থাকা মানুষটার মেসেজ দেখে রিমুর মনে হচ্ছে মরে গেলেই বোধহয় ভালো হতো।
#- অপ্রিয় সে
#- সানজিদা সন্ধি
#- পর্বঃ১০
আরিয়ান নামের একটা ছেলে তাকে একের পর এক মেসেজ আর ফোন দিয়ে যাচ্ছে। রিমু আরিয়ানকে খুব ভালো করে চেনে। সে যখন ক্লাস সেভেনে পড়তো তখন থেকে এই আরিয়ান তার পেছনে আঠার মতো লেগে আছে। রিমুকে না হলেও হাজার বারের মতো প্রেম প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কখনো রিমুর থেকে আশানরূপ উত্তর মেলেনি তার। বারবার প্রত্যাখিত হয়েও রিমুর পিছু ছাড়ার যেন নাম-গন্ধই নেই তার।
রিমু নজরকাড়া সৌন্দর্যের অধিকারী হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই অসংখ্য প্রেম প্রস্তাব পেয়ে এসেছে। কত শত ছেলে তার পেছনে পাগলের মতো ঘুরেছে। তার প্রত্যাখান পেয়ে যে কতজনের মন ভেঙেছে তার হিসাব নেই। তথাকথিত প্রেম প্রস্তাবে ভরপুর রিমুর জীবন। সবার থেকেই সে একটা কথা শুনেছে, ” ভালোবাসি।” তবে রিমু প্রচন্ডভাবে অনুভব করেছে কেউ তাকে ভালোবাসেনি। কারণ প্রত্যেকের কারণেই সে মানসিক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সবাই তার রূপের মোহে ক্ষনিকের জন্য রিমুর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। রিমুর কানে অনেক সময় এমন কথাও এসেছে যেই ছেলেটা কয়েকদিন আগেও তাকে পাওয়ার জন্য পাগলামি করতো সেই ছেলেটাই প্রত্যাখিত হওয়ার পরে সবাইকে বলেছে রিমু না কি ভালো নয়। সবকথা রিমুর কানে এসেছে। রিমু শুধু মুচকি একটা হাসি দিয়ে চুপচাপ থাকতো। ভালোবাসি কথাটা সবাই বলতে পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে কজন? যদিওবা সবাই সমান নয়। ভালো, খারাপ সবকিছুতেই আছে।
রিমু ভার্সিটিতে ওঠার পর পরই কোনো এক অজ্ঞান কারণে আরিয়ান হুট করেই হারিয়ে যায়। আবার আজই সে পাগলের মতো একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে রিমুকে। রিমু ফোনটা বন্ধ করতে যাবে এমন সময়ই আরিয়ান মেসেজ লিখলো, ” প্লিজ রিমু ফোনটা ধরো। আমি আরিয়ান। তোমার ভীষণ চেনা! ”
খুব জটিল কিছু ভেবে রিমু কল ব্যাক করলো। সাথে সাথে আরিয়ান বলতে লাগলো, ” প্লিজ রিমু যাই হোক না কেন তুমি রূপমকে বিয়ে করো না। আরিয়ানের গলার স্বরে তীব্র অস্থিরতা টের পেলো রিমু। এই কথার প্রতিত্তোরে সে কিছু না বলে সালাম দিলো আরিয়ানকে। সালামের জবাব দিয়ে সে একটু লজ্জিত বোধ করলো। এমন পাগলামি শুরু করেছিলো যে সালাম বিনিময় করতেও ভুলে গিয়েছিলো।
সালাম নেওয়ার পরে বেশ কিছুক্ষন আরিয়ানকে চুপ করে থাকতে দেখে রিমু বললো, ” আমি কী কোনোভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? আর আপনি এতদিন পরে হুট করে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। ”
আরিয়ান ভেবেছিলো, ” ফোন ধরে রিমু হয়তো ভীষণ কড়া কথা শোনাবে তাকে। ” কিন্তু আরিয়ান তো জানেই না রিমু ভীষণ রেগে না গেলে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। রিমু খুব কমই রেগে যায় কারো প্রতি। মানুষকে সে সহজে ঘৃণাও করতে পারে না। কিন্তু একবার যার উপর থেকে তার মন উঠে যায় পরবর্তীতে তাকে আপন করে নিতে অনেক সময় লাগে রিমুর।
আরিয়ানকে চুপ করে থাকতে দেখে রিমু আবার বলে ওঠে, ” কী হয়েছে বলবেন কী?”
আরিয়ান এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করলো, ” দ্যাখো রিমু আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা তুমি জানো। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আমি এবং শুধুই আমি। অন্য কেউ নয়। তোমাকে না পেলে আমি মরে যাবো রিমু। আমাকে আর মেরে ফেলোনা। ”
রিমু মনযোগ দিয়ে সবটা শুনে বললো, ” দেখুন জন্ম, মৃত্যু কিংবা বিয়ে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক
পূর্ব নির্ধারিত। তিনি যা চান সেটাই হবে। তবে আপনার অবগতির জন্য আমি জানিয়ে দিচ্ছি যে রূপম খানকে আমি বিয়ে করবোনা।
আরিয়ান যেন শান্তির প্রশ্বাস ফেললো। অতি উত্তেজনায় আরিয়ান আরেকটা কাজ করে বসলো। সে বললো, ” তোমার থেকে কতদিন দূরে থাকতে হয়েছে। তোমাকে ছেড়ে থাকার দিনগুলো আমার জন্য ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু কী করবো বলো! নয়তো রূপম খান আমার লেখাপড়ায় বাঁধা দিতো। ”
আরিয়ানের কথা রিমু কিছুই বুঝলো না। সে বললো রূপম খান কী করেছে? আর তার জন্য কেনই বা আপনার আমার কাছ থেকে দূরে যেতে হয়েছে?
আরিয়ান ভারী গলায় বললো, ” রূপম আমাকে থ্রেট দিয়েছিলো যেন তোমার আশেপাশে না আসি। নয়তো সে আমাকে মেরে ফেলবে। তাই এতদিন তোমার থেকে দূরে থেকে লেখাপড়াটা কমপ্লিট করছিলাম। কিন্তু যেদিন তোমার আর রূপম খানের বিয়ের বিষয়টা আমি নিউজপেপারে দেখেছিলাম সেদিন মনে হচ্ছিলো কেউ যেন আমার কলিজায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছিলো। কী করবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷ তোমার সাথে দেখা করতে তোমার বাড়ির সামনে যাই। বিষয়টা রূপম জেনে ফেলে কোনোভাবে। সে আমাকে আবার থ্রেট দেয়। আমি বাসায় এসে কয়েকঘন্টা পাগলের মতো কেঁদেছি শুধু। তোমাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবো ভেবে। আল্লাহর কাছে অনেক কেঁদেছি যেন তোমাদের বিয়েটা বন্ধ হয়। দেখো আল্লাহ আমার কথা শুনেছে। এবার আর ভয় পাবোনা। তোমাকে সম্পূর্ণ আমার করে নিবো। যা হয় হোক।
রূপম আরিয়ানকে থ্রেট দিয়েছিল এই বিষয়টা কেন জানি আষাঢ়ে গল্প মনে হচ্ছে রিমুর কাছে। রূপম কেন আরিয়ানকে রিমুর কাছ থেকে দূরে থাকতে থ্রেট দিবে? এতে কিইবা লাভ আছে তার। কিন্তু আরিয়ানের গলা শুনে রিমুর মনে হচ্ছে সে যা বলছে তা সত্যি। রিমুর মন আর মাথার ভেতরে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব বেজে গেলো। মন বলছে আরিয়ান সত্যি বলছে। কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে আরিয়ান মিথ্যা বলছে। রূপম কেন তাকে থ্রেট দিবে? অবশেষে মনের কথাকে সায় দিয়ে রিমু আরিয়ানকে সরাসরি বললো, ” আমাকে যদি পেতে চান তবে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিন। ” কথাটা বলার সময় রিমু বুঝলো তার শরীরের শক্তি হয়তোবা নিঃশেষ হয়ে আসছে। এদিকে আরিয়ান খুশিতে পাগলপ্রায়। সে পরদিনই আসবে বলে জানিয়ে দেয়।
এ কথা শুনেই রিমু কল কেটে ফোন অফ করে রাখে। তার মাথায় হঠাৎই আবার একটা প্রশ্ন আসে। মন জিজ্ঞেস করছে, ” রূপম তোর কে?” রূপম রিমুর কী হয় রিমু বোধহয় নিজেও জানেওনা। সব সম্পর্কের উর্ধে গিয়ে রিমু নিজেকে জবাব দিলো, ” রূপম ভাই আমার ‘অপ্রিয় সে ‘। আর কেউ নয়।”
রিমুর সুইসাইড এটেম্প্ট নেওয়ার বিষয়টি ঋষি সবাইকে জানিয়ে দেয়। সবাই হুড়মুড় করে রিমুর ঘরে আসতে থাকে। এতজনকে একসাথে দেখে রিমু ভাবতে থাকে সে আবার কী দোষ করলো। কিন্তু খানিক পরেই এ চিন্তা তার মাথা থেকে বের হয়ে যায়। সবাই এসেছে রিমুর প্রতি তাদের ভালোবাসা জাহির করতে। রিমু সবার আচরণে ভীষণ ভড়কে যায়। সবার হলোটা কী! এত ভালোবাসা কেন দেখাচ্ছে সবাই?
রেহনুমা বেগম এসে রিমুর হাত দুটো চেপে বলে, ” ঋষির কাছে শুনলাম তুই আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলি রিমু। এটা কী করে করতে পারলি? একবারো ভাবলি না তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা বাঁচবো কীভাবে? ”
রিমু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, ” এ কেমন আজব ব্যাপার মা! বেঁচে থাকতে যাকে কখনো গুরত্ব দাওনি সে মরে গেলে তোমাদের তো একটুও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এসব কথা বলে তোমরা কী অপমান করছো না আমাকে? এতো ভালোবাসা কেন জানি না নিতে পারছিনা। আর ভয় পেওনা তো। আমি তো মরিনি। মরলেও বা কী হতো! শুনো মা। বেঁচে থাকতে মানুষের কদর করতে হয় যেন সে বেঁচে থাকার আশা খুঁজে পায়। মরার পরে হা হুতাশ করে লাভ নেই। আর আমরা ভীষণ আজব জাতী বুঝলে? বেঁচে থাকতে মানুষের কদর করিনা। অথচ মরে গেলে আমাদের কতো শোক পালন। এসব আমার লোক দেখানোই লাগে।
রেহনুমা বেগম সহ সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো। রিমুর বলা প্রতিটা কথা তাদেরকে ক্ষত বিক্ষত করছে। রিমু বড্ড বেশিই অবহেলিত হয়েছে। সবাই সেটা বুঝতেও পারছে। তবে রিমুর মনে যে বাজে প্রভাব পড়েছে তার কোন প্রায়শ্চিত্ত করলে কাটবে জানে না কেউ। রেহনুমা বেগমের সাথে কথা শেষ করেই রিমু বললো, ” আমি সম্পূর্ণ সুস্থ সবল আছি। আমাকে নিয়ে এতো বেশি ভাবতে হবে না। আমাকে একা থাকতে দাও।
সবাই ঘর থেকে চলে যেতে উদ্যত হলো। সবার অনেক কথা বলার ছিলো রিমুর সাথে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। এতকিছুর পরও রিমুর অবচেতন মন একবার বোধহয় রূপমের দেখা পেতে চেয়েছিলো। কিন্তু রূপম তো আসলো না।
চলবে,,,,
চলবে,,,