#_অপ্রিয় সে
#-সানিজিদা সন্ধি
#পর্ব-৭
সারা দিন পরিশ্রম আর রাত জাগার কারণে ক্লান্তিতে শরীর অবশ হয়ে এলো রূপমের। রিমুর সাথে ঝামেলা হওয়ায় তার মেজাজও বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।
বেলা এগারোটা। রূপম ঘুম থেকে জেগেই শুনতে পেলো সারা বাড়িতে অত্যাধিক রকমের হট্টগোল। বিয়ে বাড়িতে হট্টগোল থাকা অতিব স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এই চেঁচামেচি ঠিক অন্য রকমের।
রূপম তার ফোনটা হাতে নিয়ে ডাটা অন করতেই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার থেকে আসা হাজার হাজার নোটিফিকেশনের ঝড়ে তাজ্জব বনে গেলো। সাথে রয়েছে হাজার হাজার মেসেজ।
রূপম দেশের নামকরা গায়ক। হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়ার তার। দেশ বিদেশে গান গেয়ে নাম কুড়িয়েছে সে। তার ফোনে প্রতিদিন অনেক নোটিফিকেশন আসেই৷ যেদিন থেকে তার বিয়ের অ্যানাউন্সমেন্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেদিন থেকেই নারী ফ্যান ফলোয়ারদের হাজার হাজার হৃদয় বিদারক মেসেজ পেয়েছে সে। সবাই অভিনন্দনও জানিয়েছে। তবে আজকের বিষয়টা ভিন্ন।
রূপম ডাটা অন করতেই চাপ লেগে একটা মেসেজ ওপেন হয়ে যায় তার।
মেসেজটা ঠিক এরকম ছিলো, ” যাক অবশেষে কেউ রূপম খানকে রিজেক্ট করলো। আমি তো ভেবেছিলাম সবাই তার জন্য পাগল। কিন্তু এতো দেখি অন্য কাহিনি। বাই দা ওয়ে রূপম খান। রিজেকশন পাওয়ার পর থেকে কেন জানি মিডিয়ার সামনে আসছেন না আপনি? অপমানিত হয়েছেন বুঝি? আহারে। দুঃখ লাগছে আপনার জন্য। যাইহোক এখন হবু বউ চলে যাওয়ার কষ্টে কাঁদতে থাকুন। টিস্যু লাগলে বলবেন। মেয়েটার সাহস আছে বলতে হয়।”
রূপম কিচ্ছু বুঝলোনা বিষয়টা। কাছের মানুষজনেরাও অসংখ্য মেসেজ পাঠিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার এক অনলাইন সংবাদ পড়ে রূপম সবটা বুঝতে পারলো। সেখানে বড় বড় করে হেডলাইন লেখা, ” দেশের বিশিষ্ট গায়ক রূপম খান তার হবু বউয়ের কাছ থেকে প্রত্যাখিত হয়ে হয়েছেন!”
হেডলাইন দেখেই পিলে চমকে উঠলো রূপমের। বিস্তারিত নিউজে বলা হয়েছে, ” বেশ কয়েকদিন ধরেই বিয়ের আমেজে মেতেছেন এদেশের জনপ্রিয় গায়ক রূপম খান। খুব একটা ধুমধামের সঙ্গে না হলেও বেশ নজরকাড়া ভাবেই তার বিয়ের এক একটা অনুষ্ঠান সুন্দভাবে পালিত হচ্ছিলো। রূপম খান কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মিডিয়া থেকে নিজের বিয়ের অনুষ্ঠান বেশ খানিকটা দূরেই রেখেছেন। তবে গমন মাধ্যম গুলো যে একেবারেই সরব নন তেমনটা নয়। আজ রূপম খানের বিয়ের দিন। সব ঠিকঠাক থাকলে হয়তো তিনি আজ নতুন জীবনে পা রাখতেন। তবে আজ সকালে রূপম খানের হবু বউ রাদিয়া হাসনাত রিমু তার পরিবারের সবাইকে জানান তিনি বিয়ে করবেননা। সেখানে উপস্থিত এক সাংবাদিককের উপস্থিতিতে তিনি সরাসরি বলেন, ” আমি রূপম খানকে বিয়ে করবোনা। ” খবরটা বাতাসের মতোই ছড়িয়ে পড়ে। গনমাধ্যমের কর্মীরা তাকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার এবং এমন পরিস্থিতিতে এসে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি কাউকে কিছু জানাননি। রাদিয়া হাসনাত রিমুর এই বক্তব্যের কারণ জানতে তার পরিবার এবং রূপম খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পাওয়া যায়নি। কেউই কিছু বলছেন না। রূপম খানকে সকাল থেকে বের হতে দেখা যায়নি। তাঁর পরিবারের একজন জানায় তিনি অসুস্থ রয়েছেন এবং তাকে যেন কোনোভাবেই বিরক্ত করা না হয়। বর্তমানে রূপম খানের বিয়ের বিষয়ে নানারকম সমালোচনা, জল্পনা কল্পনা চলছে। ”
আর কিছু পড়তে পারলোনা রূপম। তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। রিমু এমন কিছু করতে পারে এটা মাথাতেও আসেনি রূপমের। রিমু আগে থেকেই বিয়ের জন্য নারাজ ছিলো এটা সবার জানা। তবে সে যে জনসম্মুখে নিজের এই মতামত প্রকাশ করছে সেটা যেন বিশ্বাসই হতে চাচ্ছে না রূপমের। এখন হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তাকে নিয়ে নানানরকম আলোচনা, সমালোচনায় সয়লাব হয়ে যাবে গণমাধ্যম। আর সেসব ফেস করতে হবে ভেবেই জ্বর চলে আসলো রূপমের। সে কন্ট্রোভার্সিতে খুবই কমই জড়িয়েছে। চারদিকে তার শুধু সুনাম আর সুনাম। এসব কিছু কীভাবে হ্যান্ডেল করবে ভাবতেই কেমন যেন একটা যন্ত্রণা হলো রূপমের। ঠিক মাথার অগ্রভাগে। রূপম এখন ঘর থেকে বের না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। ঋষিকে ফোন করে সবটা সামলাতে বললো। ঋষি রূপমের খুব কাছের হওয়ায় সবটাই জানা তার রূপমের জীবন সম্পর্কে। ঋষিকে ফোনে সবটা বুঝিয়েই রিমুকে ফোন দিলো রূপম। রিমু রূপমের নম্বর দেখে প্রথমে ধরলোনা। কিন্তু রূপম ক্রমাগত ফোন দিলেই চলেছে। না পেরে রিমু ফোনটা তুলে সালাম দিলো।
রূপম সালামের জবাব দিয়েই বললো, ” তুই এই মুহুর্তে আমার রুমে আসবি। আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। ”
রিমু প্রথমে ভাবলো সে যাবে না। কারণ এই মুহুর্তে রূপমের মুখোমুখি হওয়ার কোনোরকমই ইচ্ছে নেই তার। কিন্তু তারপর কী ভেবে যেন রূপমের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
দরজার নক পড়তেই রূপম বললো, ” কে?”
রিমু জবাব দিলো,” আমি। ”
দরজা খুলেই হ্যাঁচকা টানে রিমুকে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ালের সাথে তার হাত চেপে ধরলো। রিমুর হাতে চুড়ি থাকায় সেগুলো ঘষা লেগে সে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো।
রূপম খুব ধীর গলায় জিজ্ঞেস করলো, ” তুই এটা কী করলি রিমু?”
সবটা বোঝার পরেও রিমু বললো, ” কী করেছি আমি? জানি না তো। আপনিই বলেন। ”
রূপম একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, “সাহস বাড়ার সাথে সাথে অভিনয় করাও শিখে গিয়েছিস ভালোই। আমি তোকে স্ট্রেট ফরোয়ার্ড মেয়ে হিসেবে চিনতাম। কিন্তু এখন দেখছি তুই ভালোই ভান করতে পারিস। এমন মুহুর্তে আমি কোন বিষয় নিয়ে তোকে জিজ্ঞেস করবো এটা বুঝতে নিশ্চয়ই বিজ্ঞানী হতে হবে না? আর কাল রাত থেকে কী আপনি আপনি করে যাচ্ছিস? খারাপ লাগছে তো আমার। তুমি করেই বল। যতো যাই হোক এমনটা শুনে অভ্যস্ত নই তো তাই। ”
রিমু বিদ্রুপাত্মক মুখের ভঙ্গি করে বললো, ” কাল রাতে যা করলেন তারপর কেন জানি! থাক। এবার মেইন পয়েন্টে আসি। আমার মনে হয় এতোক্ষণে আপনি পুরোপুরি জেনে গিয়েছেন আমি কী করেছি। আমি আপনার সাথে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঠিক হওয়া বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি। আমি কিন্তু কাউকে অনুরোধ করিনি। আমি নিজের অধিকার ফলিয়েছি। আমি খুব ভালো করে জানি আপনার সাথে আমার কখনোই বনবে না। তাই বিয়ে ভাঙলাম। ”
রূপম এইবার রেগে গেলো। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে সে বললো, ” এখন এই মুহুর্তেই কেন তোর অধিকার বোধ জন্ম নিলো? আগে নিতে পারেনি? তাহলেই তো আমাকে এতো ঝামেলা ফেস করতে হতো না।”
রিমু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,” আগেই অধিকার বোধটা জন্ম নিতো যদি নিজেকে নিয়ে একটুখানি ভাবতাম। আর আগে নিজেকে নিয়ে ভাবিনি মানে এখনো যে ভাববো না বা ভাবনা আসবে না সেটা ভাবলেন কীভাবে? আর বোধদয় মানুষের যেকোনো সময়েই আসতে পারে। আমার এখন এসেছে। সাহস বেড়েছে তাই অতীতের অপমান লাঞ্ছনাকে পুঁজি করে ভবিষ্যতে ভালো থাকার একটা দুয়ার খুলে দিলাম। একটা বিষয় জানেন রূপম ভাই? মানুষের জীবন বড্ড বেশি অদ্ভুত। অনেক সময় হাজার আঘাত পেলেও তারা নিজেকে শক্ত করে গড়ে তোলে না আর অনেক সময় ছোট কিছু আঘাত মানুষকে পাথর বানিয়ে দেয়। কালকে রাতে হয়তো আপনি যা করেছেন তা অত্যাধিক রেগে গিয়ে। তবে চিরকুট নিয়ে যেই মিথ্যাচারটা করেছেন সেটা আমাকে প্রচন্ড আঘাত করেছে।”
ঘুম থেকে ওঠার পরপরই রূপম যেসব দেখছে তাতে গতকালের ঘটনা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। সে আবারো রিমুকে সরি বললো। তবে রিমু নাছোরবান্দা। সে কথার মারপ্যাঁচে বারবার রূপমকে মনে করিয়ে দিতে লাগলো কাল রাতে সে কী অন্যায়টা করেছি। রূপম হাঁপিয়ে গেলো৷ সাথে ভীষণ ক্রোধে ফেটে পড়লো।
#-অপ্রিয় সে
#-সানজিদা সন্ধি
#-পর্বঃ৮
রূপম কল্পনাও করতে পারেনি তার সাথে এমন কিছু হবে বা রিমু এমন কিছু করবে। তবে মানুষ সবসময় যা ভাবে তা আসলে হয়না৷ রূপম রিমুর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ভাবছে একরাতের মধ্যে রিমুটা কতখানি বদলে গেলো। শান্তশিষ্ট, অভিমানী, কষ্ট পুষে রাখা মেয়েটা হয়ে গেলো একদম রাগী,বদমেজাজি আর প্রতিবাদী মেয়ে।
রিমু বোধহয় রূপমের মনের কথা বুঝতে পারলো। সে ভারী গলায় বললো, ” রূপম ভাই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সবাই ঘুরে দাঁড়ায়। আমার দেয়ালে পিঠ আগেই ঠেকে গিয়েছিলো কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছে হয়নি। তবে এখন মনে হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানো ভীষণ প্রয়োজন।
রূপম হকচকিয়ে গেলো । আজকের দিনটা তার জীবনের সবচেয়ে জঘন্য দিন। না জানি কতকিছু সহ্য করতে হবে তাকে। তবে কিছু করারও নেই। সে ঠিক করলো কোনোমতে ফ্রেশ হয়েই প্রেসের সামনে যাবে। কারণ যা হওয়ার তা হবেই। ভাগ্যে যা নির্ধারিত আছে তা কেউ ঠ্যাকাতে পারবে না। তাই যা হওয়ার আগেই হোক৷
রিমুর আর ভালো লাগছিলো না রূপমের ঘরে থাকতে। সে চলে যেতে উদ্যত হলেই রূপম তার হাত ধরে হেঁচকা টানে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। রিমু প্রথম কয়েক সেকেন্ড স্তম্ভিত হয়ে রইলো। কারণ রূপম তাকে কখনো এভাবে স্পর্শ করেনি। রিমুর মনে হলো তার যেন প্রচন্ড রকমের জ্বর আসছে। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে রূপমকে ধাক্কা দিলো সে। বেকায়দায় ধাক্কা খেয়ে খাটে গিয়ে পড়লো সে। রূপম এবার কিছু বলতে যাবে তখনই একপ্রকার চিৎকার করে রিমু বলতে লাগলো, ” আপনার সাহস হয় কী করে আমার গায়ে স্পর্শ করার? কোন সাহসে হাত ধরে বুকের কাছে নিলেন? আমি কি আপনার বিবাহিত স্ত্রী না কি যে আমাকে এভাবে স্পর্শ করার অধিকার রয়েছে আপনার? ”
রূপমও রেগে গিয়ে বললো, ” আগে বোধহয় তোকে স্পর্শ করিনি? এতো ওভার রিয়্যাক্টের কী আছে? ”
রিমু তার কন্ঠস্বর দ্বিগুণ করে বললো ওভার রিয়্যাক্ট মানে? আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন অথচ আমি কিছু বলবো না? শোনেন অনধিকার চর্চা করতে আসবেন না খবরদার। কাজিন কাজিনের মতো থাকুন। আমার কারো স্পর্শ সহ্য হয়না। আর কী যেন বললেন! আগেও স্পর্শ করেছেন তবে তা একান্তই স্বাভাবিক ভাবে বা আমাকে প্রহার করার উদ্দেশ্য। তবে আজকে যেটা করলেন সেটাতে আমি একদমই ভালো ফিল করিনি । নেক্সট টাইম এই ধরনের আচরণ করলে আমি কিন্তু খারাপ হতে বাধ্য হবো৷ আশা করি নিজের সীমা অতিক্রম করবেন না। ”
রূপম এবার হতাশ হয়ে গেলো। ভালো লাগছে না কিছু তার। কেউ কখনো তার সাথে এই ধরনের আচরণ করেনি। তবে অন্য কেউ হলেও মানতে পারতো রূপম৷ কেন যেন রিমুর থেকে এই ধরনের আচরণ সে সহ্যই করতে পারছেনা। কোথাও একটা ভীষণ অপমানিত বোধ করছে সে আর কোথাও যেন অসহায় বোধ করছে।
রিমু রাগে ফোসফাস করতে করতে চলে গেলো। রূপম ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
রূপমের চারপাশে এখন অসংখ্য ক্যামেরা। সাংবাদিকদের অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সে অসহায় বোধ করছে। রূপমের কাছে ক্যামেরা, সাংবাদিক, হাজার মানুষের ভীড় কোনো বিষয়ই নয়। এসব হ্যান্ডেল করে সে অভ্যস্ত। তবে আজকের বিষয়টা সম্পূর্ণ অন্যরকম। রিমু যে কাজটা করেছে তাতে রূপমের দিকে আঙ্গুল ওঠা খুব স্বাভাবিক। সবার মনে প্রশ্ন আসাটাও স্বাভাবিক যে কোনো ঘাপলা না থাকলে কী কেউ বিয়ে ভাঙে? আর সেটা বিয়ের দিন সকালেই?
সাংবাদিকদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,” স্যার আপনি বিয়েটা খুব একটা জমকালো ভাবে আয়োজন করেননি যতটা হওয়া উচিত ছিলো। কাছের মানুষজন আর বাহিরের সামান্য কিছু মানুষ নিয়েই আয়েজন করেছিলেন। এর কী বিশেষ কোনো কারণ আছে? ম্যাম কী আগে থেকেই বিয়েতে নাখোশ ছিলো? বা এই বিয়ে নিয়ে কোনো ঝামেলা? স্যার প্লিজ অ্যানসার দিন। ম্যাম আজকে কেন বিয়ে ভেঙে দিলো? ”
রূপম কোনো উত্তর দিতে পারলোনা। কী বলবে সে? কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সে বললো, ” বিষয়টা একান্তই পারিবারিক। আমাদের মধ্যে কিছু মিসঅ্যান্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। খুব শীঘ্রই রিমুকে আমার স্ত্রী রূপে দেখবেন ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ বলার মধ্যে সবাই ভীষণ অদ্ভুত একটা জোর পেলো সবাই। ”
সাংবাদিকদের কাজই হচ্ছে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তথ্য বের করা। তাই তারা একের পর এক প্রশ্ন করে যেতে থাকলো। রূপম ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে। মেজাজ খুইয়ে যাচ্ছে তার। জীবনে প্রথমবার এরকম অপমান, লাঞ্ছনা এবং অবাঞ্ছিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তার। তার ভেতরটা জলে পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু প্রকাশ করতে পারছেনা। হাসিমুখে সবটা সামলাতে হচ্ছে তাকে। মানুষের জীবন একেক সময় একেক পরিস্থিতিতে দাঁড় করায় তাকে। কখনো ভেতরে ভেতরে নিঃশেষ হয়ে গেলেও হাসিমুখে থাকতে হয়। আসলে এই হাসির আড়ালে কষ্ট লুকানোর অনুভূতিটা জঘন্য।
রিমুর আজকে ভেতর থেকে ভীষণ ভালো অনুভূত হচ্ছে। কানে হেডফোন খুঁজে সে গানে মত্ত হলো।
টুপ টাপ গুপ চুপ চাপ
টুপ টাপ খুব চুপ চাপ
আমি জানি একা নদী
অভিমানী তার চোখ
সাবধানে থাকি যদি
কথা নয় নাই হোক
পারিনা, ছাড়িনা (২)
পারিনা তার নাম
এ বোবা ঠোঁটে থাক
ঘুম ঘুম মৌসুম
ঘুম সুম এ মর্সুম
আমি জড়িয়ে থাকি যাতা
গায়ে লেগে ডাক নাম
বাজে ছড়িয়ে ফেলি যাতা
মুঠোর বাদাম
পারিনা, ছাড়িনা
পারিনা তার নাম
এ বোবা ঠোঁটে থাক।
গানটা শুনলেই অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে রিমুর। ভীষণ ভালো লাগে তার। অরিজিৎ এর গলায় যাদু আছে। মানুষকে আকর্ষিত করার জন্য যথেষ্ট। কানে হেডফোন থাকায় বাহিরের জগতে মন ছিলোনা৷ এদিকে তার মা রেহনুমা বেগম তাকে সমানে ডেকেই চলছেন। একপর্যায়ে তিনি রিমুর কান থেকে হেডফোন খুলে সেটাকে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। রিমুর প্রচন্ড রাগ উঠলো। কিছু সে চুপ করে রইলো। হাজার হোক মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার কিছুতেই সে করতে চায়না। তবে তার যে পরিমাণ রাগ উঠছে তাতে সে হয়তো আজকে একটা অকাজ করেই বসবে।
রেহনুমা বেগম স্থির গলায় বললেন, “রিমু তুই না কি রূপমকে ধাক্কা দিয়েছিস? ”
কথা বাড়ানোর ইচ্ছে না থাকায় রিমু ছোট্ট করে জবাব দিলো ” হু।”
রেহনুমা বেগম একপ্রকার তেড়ে এলো তার দিকে। রিমু আর সামলাতে পারলো না নিজেকে। আবারো চেঁচিয়ে উঠলো। বললো, ” তোমাদের গুণধর ছেলের প্রেস কনফারেন্স শেষ হলো বুঝি? তা কী কী ফেস করলো সে? এতো এতো প্রশ্নের জাঁতাকল আর সন্দেহের তীরের স্বাদ কেমন ছিলো? বাই ওয়ে তোমাদের ছেলের তো মেয়েলি স্বভাব। কোনো কথা পেটে চেপে রাখতে পারেনা। তা কেন ধাক্কা দিয়েছি সেটা নিশ্চয়ই বলেছে?
রেহনুমা বেগম বললো, ” না সে বলেনি!”
রিমু হেসে বললো মা ঘর থেকে বের হয়ে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও।
রেহনুমা বেগম বললেন, ” ভালোই বেয়াদব হয়েছিস ভালোই। মায়ের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় ভুলে গিয়েছিস?”
রিমুর সহ্যের সীমা অতিক্রম করায় সে নিজেই নিজেকে আঘাত করলো রুমে থাকা একটা লাঠি দিয়ে। রেহনুমা বেগম কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন। রিমুর আচরণ দেখে রেহনুমা বেগম অত্যাধিক কষ্ট পেয়েছেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্তানের বাজে আচরণ দেখলে সব বাবা মা আঘাত পায়। রেহনুমা বেগম ঘর থেকে দ্রুতপদে বেরিয়ে গেলেন আর রিমু ধরাম করে দরজা বন্ধ করে নিজেকে আঘাত করতে লাগলো। সে নিজের জীবনের উপর বিরক্ত। ভীষণ রকম বিরক্ত। একপর্যায়ে তার নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়ার ইচ্ছে হলো। একদৃষ্টিতে সে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
চলবে,,,
চলবে,,,,,