অপ্রিয় সে পর্ব ১৫+১৬

#অপ্রিয় সে
#পর্বঃ১৫
#সানজিদা সন্ধি

রূপমের মুখ থেকে “ভালোবাসি” কথাটা শুনে বুকটা ভীষণ মুচড়ে উঠলো রিমুর। ভালোবাসি শব্দটা রিমু আগেও অনেক শুনেছে। অনেকে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। কিন্তু রিমু কখনোই কিছু অনুভব করেনি। রূপমের কথায় ঘোর কাটলো রিমুর। সে বললো, ” কী ব্যাপার? কিছু বলছিসনা যে?”

রিমু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, ” আজকেই আমার বিয়ে ভাঙলো আর আজকেই আমাকে নিয়ে মজা করা শুরু করলেন? আর কতো রূপম ভাই? এবার তো মুক্তি দিন আমাকে। আমি আর ছাঁয়াও দেখতে চাইনা আপনার। আর হ্যাঁ সাদিয়া, সাজ্জাদ তোরা কী করছিস এখানে? শেষ অবধি তোরাও মজা নিতে চলে এলি? বাহ্! সুন্দর তো বিষয়টা। ঋষি ভাইয়া, রিংকি আপু তোমরাও? কেন একটা মেয়েকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেওয়া পর্যন্ত কী শান্তি নেই তোমাদের?

রিমুর কথা শুনে সবাই প্রায় সমস্বরেই বললো, ” রিমু ভুল বুঝিওনা। রূপম সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে।”

রিমু ঠান্ডা গলায় বললো, ” আপনারা দুদিনেই বোধহয় রূপম ভাইকে খুব বেশি চিনে ফেলেছেন। আমি তার সাথে এত বছর ধরে আছি আর আমি জানবোনা সে আমাকে ভালোবাসে না কি অপছন্দ করে? শোনেন এসব আজগুবি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করুন। আর রূপম ভাই দোহাই লাগে মুক্তি দিন আমাকে। ”

মুক্তি শব্দটা আনন্দের প্রতিক। তবে এই শব্দটাই আজ ভীষণ ভারী লাগছে রূপমের কাছে। সে মিনমিনিয়ে বললো, ” এতো কঠিন কাজ তুই আমাকে কীভাবে দিলি রিমু? আমি কী অত শক্তিশালী না কি যে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে মুক্তির স্বাদ, আনন্দ দিতে পারবো? তুই বড় পাষাণ রিমু। ভীষণ পাষাণ। এতো কঠিন কাজ কেউ কাউকে দেয়? এতো ভয়ানক আবদার কেউ করে কারো কাছে?”

রূপমের কথাগুলো কারো কান অবধিই পৌঁছালো না। তৃপ্তি রিমুকে বললো, ” দ্যাখো রিমু। রূপম সত্যি ভালোবাসে তোমাকে। আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড আর আমি জানবোনা বলো?”

রিমুর কন্ঠস্বর কঠিন হয়ে এলো। চোখমুখ শক্ত করে সে বললো, ” তৃপ্তি আপু একটা কথা বলি। মিস্টার রূপম খান আমাকে ভালোবাসে এ কথাটা আমার কাছে পুরো হাস্যকর লাগলো। সে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। ভালোবাসতে পারে না। আর যদি ধরেও নেই সে আমাকে ভালোবাসে তাতে আমি কী করতে পারি? আপনার কী মনে হয় আমার জীবন থাকতে আমি কখনো তাকে গ্রহণ করবো? আপনি আমার স্থানে হলে কখনো গ্রহণ করতেন তাকে? একটা মানুষ দিনের পরে দিন আমাকে কষ্ট দিয়ে এসেছে আর আজ একটা প্রপোজেই সব কিছু মাফ? জীবন এতো সহজ না কি? গায়ে হলুদের দিন সে আমার কাছে চিরকুট পাঠিয়েছিলো বিয়ে করবেনা বলে। সেই কথাটা যখন সবাইকে জানালাম সে অস্বীকার করলো চিরকুট দেওয়ার কথা। আপনি ভাবতে পারছেন আমার মানসম্মান কতটা বিঘ্নিত হয়েছে? ”

রিমুর কথা শুনে রূপমের গলা ধরে আসছে। মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি কেঁদে দিবে সবার সামনে। কিন্তু রূপম একটা ঢোক গিলে কান্না চাপালো। সে বললো, ” রিমু তোকে সাজরত অবস্থায় দেখতে আমার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিলো। কিন্তু তুই সাজলি না হলুদে। বিষয়টা আমার খারাপ লাগায় আমি ওই চিরকুট তোকে দেই টেনশনে ফেলার জন্য। পরে তুই যখন আমার কাছে এসে কলার চেপে ধরেছিলি তখন আমার রাগ হয়েছিলো বলে অস্বীকার করেছিলাম সব। রেগে গেলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। বড় বড় মাপের মানুষ ভুল করে ফেলে। কতো কাহিনী হয়ে যায়। আর আমি তো একজন সাধারণ মানুষ। রাগ সামলানো আমার পক্ষে কষ্টকর ছিলো। ”

রূপমের কথা শেষ হতে না হতেই রিমু বললো, ” সামান্য টেনশনে ফেলার জন্য আপনি এত বড় কথা বলেছিলেন আমায়? এগুলো কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে? আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। পাবলিক ফিগার আপনি অথচ আপনার এমন ব্যাবহার। শোনেন এরপর থেকে কোনো কাজ করতে গেলে হাজার বার ভাববেন। কোনো কথা মুখ থেকে বের করার আগে একটু ভেবে চিন্তে নেবেন। বলে না? ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না! বিষয়টা ঠিক সেরকমই। নয়তো কোনো ভুল কাজ হয়ে গেলে অনেক বেশি পস্তাবেন আপনি। ”

রূপম জবাব দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। তার নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কেন এই অঘটনটা ঘটালো সে? এখন তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহ কী তবে তাদের জোড়া ঠিক করে রাখেনি? নয়তো একটা ভুলের কারণে রিমু তার থেকে আরো বেশি দূরে সরে যাচ্ছে।

রূপমের চোখে চোখ পড়লো রিমুর। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো রিমু। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো রূপমের চোখটা বুঝি লাল হয়ে আসছে। কিন্তু কেন হলো এমনটা?

রিমু আর কথা না বাড়িয়ে নিচে যেতে নিলেই রূপম হেঁচকা টানে রিমুকে সামনে দাঁড় করালো। রিমুর হাতটা শক্ত করে ধরেছে সে। যেন কিছুতেই ছাড়বেনা। কিন্তু তার চোখ ভীষণ অসহায়। রিমু জোর গলায় বললো, ” হাত ছাড়ুন রূপম ভাই। আপনাকে তো একদিন বলেইছিলাম আমার এসব একদম পছন্দ নয়। তবে কোন সাহসে আর কোন অধিকারে হাত ধরলেন৷ ”

রূপম আস্তে করে বললো, ” ভালোবাসি রে। ভালোবাসার অধিকারে হাতটা ধরেছি। আজীবন তোর শাস্তি মাথা পেতে নিবো। প্লিজ দূরে সরিয়ে দিসনা আমায়। মরে যাবো রে। এই রিমু প্লিজ।”

রিমু অসহায় বোধ করতে লাগলো এমন পরিস্থিতিতে। কে জানতো কোনোদিন এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে তাকে৷ জীবন কাকে কখন কোন পরিস্থিতিতে দাঁড় করাবে কেউ জানে না। রিমু হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। রূপমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে কেঁদে দিবে। রিমু জোরগলায় কিছু বলতে পারলোনা। হাজার হোক মেয়ে মানুষের মন। মায়া, ভালোবাসা, দূর্বলতা দিয়ে ভরা।

রূপম রিমুর চোখে চোখ রাখলো। এদিকে রিমু চোখ সরিয়ে অন্য পাশে চেয়ে আছে। নিচ থেকে সবার ডাক আসলো। রূপম একটু অন্য মনস্ক হতেই রিমু হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।

রূপম ধপ করে ছাঁদে বসে পড়লো। বুকের পা পাশে তার চিনচিনে অনুভূতি হচ্ছে। মরে যেতে পারলে বোধহয় শান্তি পেতো সে।

সবাই নির্বাক। কারো মুখে কোনো কথা আসছে না। তৃপ্তি রূপমের কাছে এগিয়ে এসে
বললো, ” রূপম সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে শেখ। আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় ঠিক সময়ে। অসময়ে কিছু করে লাভ নেই। এখন চোখের জল ফেলা ছাড়া তোর কিছু করার নেই। ধৈর্য ধরে থাক৷ মেয়েকে যতো কষ্ট দিছিস তার হাজার গুন ভালোবেসে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা কর৷ আল্লাহ তোর সহায় হোক৷

তৃপ্তি আর সাজ্জাদ ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। ঋষি রূপমের পিঠে আলতো করে চাপড় দিলো৷ রূপম ঋষির হাত চেপে বাচ্চা ছেলেদের মতো কাঁদতে থাকলো। ছেলেরা সহজে কাঁদেনা। তাদের কান্না সহ্য করা অনেক বেশি কষ্টকর।

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সবাই। রিমু সবার মধ্যে বলে উঠলো আমি হোস্টেলে উঠবো আগামী কালকে। জানানো উচিত বলে মনে হলো। তাই জানালাম। রূপমের বুক পূনরায় মোচড় দিয়ে উঠলো৷ এটা কী বললো রিমু? সে বাড়িতে থাকবেনা কেন?

রূপম বললো, ” তোর কোথাও যাওয়া হবে না। এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার যেন কথা না শুনি কোন। এটাই প্রথমবার বলার সাহস দেখালি আর এটাই যেন শেষবার হয়। ”

রিমু রূপমের কথার জবাব দিলোনা৷ চুপচাপ নিজের খাবার খেতে লাগলো। রূপম বললো বড় অবাধ্য হচ্ছিস ফল কিন্তু ভালো হবে না।

আরিয়ান সারা ঘরে ভাঙচুর করছে। আর চিৎকার করে বলছে তোর ফল ভালো হবে না রূপম খান।
#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্বঃ১৬

সকালে উঠে রিমুর ঘরের সামন দিয়ে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো রূপমের। রিমুর ঘরের দরজায় তালা লাগানো। রূপম বুঝলো রিমু ভোরেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। সে দৌঁড়ে গ্যারেজে গেলো। যা ভেবেছিলো তাই স্কুটি নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে রিমু। রূপম রিমু রিমু করে দুই তিনবার ডেকে উঠলো এটা জানা সত্ত্বেও যে রিমু বাড়িতে নেই। মনের স্যাটিসফেকশনের জন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনের স্যাটিসফেকশনের জন্য মানুষ অযৌক্তিক কিছু কাজ করে থাকে। যেমন কারো বলা কথা একবার শোনার পরেও আরেকবার জিজ্ঞেস করে মনের খোঁড়াক মেটানোর জন্য। রূপমের ডাকাডাকি শুনে সবাই একপ্রকার জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কী হয়েছে?” রূপম বললো, ” রিমু বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে।” সবাইকে কিছুটা আশাহত দেখা গেলো। যেখানে সবাই চাইছে এত বছরের অন্যায় গুলো মিটিয়ে রিমুকে আপন করে নিতে সেখানে রিমু দূরে দূরে চলে যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। সবার মুখে কালো মেঘ যেন নেমে এলো। রূপম তার ঘরে এসেই রিমুকে ফোন করলো। একবার, দুবার, তিনবারের বেলায় ফোন রিসিভ হলো। শুরুতেই রূপম ধমকে বলে উঠলো, ” আমি তোকে বাড়ি থেকে যেতে নিষেধ করেছিলাম আর তুই চলে গেলি? তাও আবার যাওয়ার আগে কাউকে জানালিও না? কার কাছে যাচ্ছিস, কোথায় থাকবি। যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যায়? রিমু দায়সারাভাবে বললো, ” এতো কাহিনী করার কী আছে? মনে হচ্ছে আমি আহামরি কেউ। যার কিছু হওয়া না হওয়ায় কিছু যাবে আসবে? রূপম বিরক্ত হয়ে বললো, ” রিমু সবসময় ট্যারামি ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগছে ভীষণ। যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে সরাসরি। ” রিমু বললো আমার জানামতে আমি আপনাকে নিজে থেকে বিরক্ত করিনি। আপনি যেচে বিরক্ত হতে এসেছেন। আর যেসব কথা আপনার কাছে ট্যারামি মনে হচ্ছে সেসব আমার কাছে অতীব সাধারণ মনে হচ্ছে। আর ট্যারামির উদ্দেশ্যে আমি কিছু বলিনি। এগুলো আমার স্বাভাবিক কথা। যে যেভাবে নেবে আরকি! আর কী যেন বললেন? বিরক্ত লাগছে আপনার? বিরক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তো এতোটা দূরে সরে এলাম। আপাতত আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। আমি আমার এক বান্ধবীর কাছে আছি। আমার জীবন নিয়ে আপনাকে একটুও ভাবতে হবে না। ইভেন আপনাদের কাউকেই হবে না ভাবতে। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মত্ত আছি। রিমুর কথা কথাগুলো তীরের ন্যায় রূপমের হৃদয় ভেদ করে চলে গেলো। স্তব্ধ রূপম অসহায় হাসি হেসে বললো,” বাহ্ অনুপম ভক্ত। বেশ বললি! গুছিয়ে নে নিজের জীবন। শুভকামনা তোর জন্য। ” রিমু ফোন কাটতে উদ্যত হলো। গলার স্বর আস্তে করে বললো, ” এবার তবে রাখি?”
রূপমও হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে রেখে দিলো ফোনটা। এখন সবকিছু অনর্থক মনে হচ্ছে রূপমের কাছে। রূপমের অ্যাসিসটেন্ট তমাল বারবার ফোন করছে তাকে। রূপম ফোনটা সুইচ অফ করে অস্থির হয়ে গেলো। তার খারাপ থাকা আরো বেশি করে বাড়লো বোধহয়।

কালকের রাতের পরে বাড়িতে এসে দুদণ্ড শান্তি পায়নি সাদিয়া। রিমু যে তাকে ভুল বুঝেছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তার। সে তো রিমুর ভালো ভেবেই গিয়েছিলো সেখানে।
কিন্তু এই ভালো ভাবা যে রিমুর অপছন্দও হতে পারে এটা কেন ভাবেনি সাদিয়া? রিমুর ফোনে বেশ কয়েকবার ট্রাই করেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। সাদিয়া রূপমকে ফোন দিলো। কিন্তু রূপমের ফোনও সুইচ অফ। রেগে গিয়ে ফোন মেঝেতে আছাড় দিতে গিয়ে সাদিয়া ভাবলো ঋষিকে মেসেজ দিলে হয়তো কী হয়েছে জানতে পারবে। ঋষিকে মেসেজ দিয়েও সাদিয়া কিছু জানতে পারলো না। এখন তার প্রচন্ড অস্থির লাগছে। সবকিছু ভেঙে চুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

খানিক বাদে ফোন অন করে রূপম তমালকে ফোন ব্যাক করলো। তমাল জানালো কদিন পরে একটা শো এ জাজ হওয়ার জন্য ভীষণ অনুরোধ এসেছে। রূপম সরাসরি রিজেক্ট করে দিলো প্রস্তাব। তার যে মানসিক অবস্থা তাতে এ সময়ে কোনোকিছুতেই সে মনযোগ দিতে পারবে না । তমালের সাথে কথা শেষ করতে না করতেই ঋষির নম্বর ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। রূপম ফোন ধরতেই ঋষি। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো ফোন কেন অফ ছিলো? আর রিমুর কী অবস্থা? রূপম আহত গলায় বললো, ” রিমু বাড়ি ছেড়েছে। ” ঋষি আশাহত হয়ে বললো, ” সবার কারণে বদলে গেলো মেয়েটা। তারই বা কী দোষ! তার সাথে যা ঘটেছে তা তো আর খুব সুখকর কিছু নয়। যে কারণেই হোক তার সুখ বিনষ্ট হয়েছে তোদের কারণে। এবার তোদের সুখহীনতায় ভোগার কারণ সে-ই হবে। মিলিয়ে নিস কথাটা।”

ঋষি সাদিয়ার কাছে ‘অপ্রিয়’ হওয়ার পরেও প্রয়োজনে ঋষিকেই টেক্সট করতে হচ্ছে সাদিয়াকে। কোনো ভাবে যদি সে রূপমের সাথে যোগাযোগ করে রিমুর খোঁজটা দিতো তাকে। ঋষির কথা ভাবতে ভাবতেই সে নক দিলো সাদিয়াকে। ঋষি বললো, ” রূপমের নম্বর খানিক আগে খোলা পাওয়ায় ঋষি ফোন করেছিলো তাকে। আর রিমু রূপমের অবাধ্য হয়েই বাড়ি ছেড়েছে। কথাটা শুনে আরো বেশি খারাপ লাগলো সাদিয়ার। ক্যাম্পাসের কাছেই তার বাসা। রিমু কী একবারও পারতো না সাদিয়ার কাছে চলে আসতে? আর এতো বড় সিদ্ধান্ত সে সাদিয়াকে ছাড়া নিলো কীভাবে? সাদিয়া তাদের চেনা জানা বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলো আহানার বাড়িতে আছে রিমু। আহানা কাল রাতের বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়াতেই রিমু তার কাছে গেছে। আহানার বাড়ির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে নিলো সাদিয়া।

কালকের রাতের পর থেকেই কিছু ভালো লাগছে না রিমুর। রূপম তাকে প্রপোজ করবে এটা চিন্তা করা অসম্ভব তার কাছে। তবে কাল রিমুর সমস্ত ভাবনাকে ওলোট পালোট করে দিয়ে রূপম তাকে প্রপোজ করে বসলো। এটা কী সত্যি না কি মিথ্যা এটাই এখনো বুঝতে পারছে না রিমু। সবটা তার কাছে গোলক ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে বোধহয় কোনো সংশয়ের চোরাবালিতে আটকে গেছে।এখান থেকে উদ্ধার হওয়া ভীষণ জরুরি। তবে রূপম তাকে ভালো বাসুক বা না-ই বাসুক তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। এসবে সে কখনো ফিরেও চাইবেনা। আহানার বাসার কলিংবেল বেজে উঠতেই আহানা ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বললো, ” রিমু একটু গিয়ে দেখ কে এসেছে! ” আহানা একটা বাসায় নিয়ে একা থাকে। রুম মেটের ঝামেলা নেই বলে রিমুকে সে নির্দ্বিধায় ডাকতে পেরেছে। রিমু তার ভীষণ প্রিয় একটা মেয়ে। এই মেয়েটার জন্য আহানা সবকিছু করতে পারে। রিমু দরজা খুলে দেখলো সাদিয়া এসেছে। সাদিয়া ভেতরে ঢুকেই রিমুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর এক হাতে রিমুকে আগলে অন্য হাতে কান ধরে সরি বলতে লাগলো। অভিমানো মুখ ঘুরিয়ে নিলো রিমু। সে কখনোই ভাবেনি তারই বন্ধু বান্ধব তার অজান্তেই রূপমের সাপোর্টে যাবে। রিমু সাদিয়ার মুখোমুখি হয়ে সরাসরি বললো আমি কখনো ভাবিনি সাদিয়া তোরা রূপম ভাইয়ার পক্ষে যেতে পারিস। সব কিছু জানার পরেও তোরা কী করে পারলি? সাদিয়া বললো, ” রূপম ভাই তোকে ভীষণ ভালোবাসে রিমু। তুই যে সত্যিকারের ভালোবাসা পাস সে কারণেই। রিমু কপালে ভাজ ফেলে বললো আমার ভালোবাসার দরকার নেই। এতদিন অবহেলা পেয়ে পেয়ে ভালোবাসা সহ্য হবে না আর। সাদিয়া রিমুকে বললো এখনও অনেক কিছুই তুই জানিসনা রিমু। অনেক কথা অজানা আছে তোর। যেদিন জানবি সেদিন হয়তো অবাক হবি। ততদিন অবধি যেন ঠিক থাকে সবকিছু এই দোয়া করি। আর আমার এতদিনের ভালোবাসা বুঝি একদিনের ভুলের জন্য শেষ হয়ে যাবে? মাফ করে দে না রে রিমু। রিমু কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো সাদিয়াকে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দুই বান্ধবীকে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে দেখে আহানা অভিমানী সুরে বললো, “বাহ্ আমাকে ছাড়াই? কে আমি?” সাদিয়া আর রিমু তাকেও জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

চলবে,,
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here