#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-৬
খাওয়া দাওয়ার পর বিন্তী তুষারকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ব্যাপার টা কী হলো?”
“শিশির তোমার সঙ্গে যেতে চাইছে সেই ব্যাপার টা? ”
“হ্যাঁ। চাচা কী এক ডোজ দিয়েছে?”
“না। আমার মনে হয় একা বউকে পাঠাতে তোমার বরের খুব কষ্ট হচ্ছে তাই।”
বিন্তী বলল,
“ধ্যাৎ! অন্য কোনো ঝামেলা আছে। পেটে অন্য শয়তানি গুড়গুড় করছে। ”
“সে যাই হোক। তোমার সঙ্গে পারবে না। ”
বিন্তী চোখ সরু করে বলল,
“কমপ্লিমেন্টের জন্য থ্যাংকস। ”
***
পরদিন বিকালে দুজনের যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। তুষারের যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও শিরিন যেতে দিলো না। গাড়ির পরিবর্তে ওদের ট্রেনে করে যাবার ব্যবস্থা করা হলো। শিরিন ভালো করে বুঝিয়ে দিলো যে দু’দিন যেন কমপক্ষে থাকে। আর শিশির যেন একটু রয়েসয়ে কথাবার্তা বলে।
কমলাপুর থেকে দুজন ট্রেনে উঠলো। ট্রেনে উঠেই শিশির মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে গেল। বিন্তী একাই বসে আছে। পাশাপাশি দুজন বসে আছে কিন্তু কথাবার্তা হচ্ছে না। ট্রেন চলতে শুরু করলো। কিছু সময় এভাবেই কাটলো। একটা স্টেশনে ট্রেন থামতেই বিন্তী দুই প্যাকেট চিপস কিনলো। একটা নিজের জন্য রেখে অন্যটা শিশির কে দিলে শিশির নাক শিটকে বলল,
“আমি এগুলো খাই না। ”
“কেন? কম দাম বলে?”
“এসব টেস্টলেস জিনিসে অনিহা আছে।”
বিন্তী আর কথা বাড়ালো না। খেতে শুরু করলো। বিন্তীর খাওয়া দেখে শিশিরের মনে হলো ফিরিয়ে দেয়াটা ভুল হয়েছে। খেয়ে নিলেই হতো। লজ্জা, সংকোচে চাইতেও পারছে না।
পরের স্টেশনে ট্রেন থামলে শিশির উঠে দাঁড়ালো নামার জন্য। বিন্তী বলল,
“কোথায় যাচ্ছো?”
“কিছু খাবার আনতে। ”
“তাড়াতাড়ি এসো। ”
শিশির দাঁত বের করে বলল,
“না ওখানে থেকে যাব আরেকটা বিয়ে করার জন্য। ”
বিন্তী আর কিছু বলল না। শিশির নেমে গেল। কাছের দোকানগুলোতে ওর পছন্দের খাবার না পেয়ে প্ল্যাটফর্মের ভেতরের দিকে গেল। সেখানে লোকজন বেশী থাকায় একটু দেরি হলো। তখনই ঘটলো অঘটন। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। শিশির খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে দৌড়ে এলেও ট্রেন ধরতে পারলো না। প্যাকেট হাতে নিয়েই ট্রেনের পিছনে দৌড়াচ্ছে৷ বিন্তী জানালা দিয়ে তাকিয়ে হাত নেড়ে ডাকছে। ট্রেন চলে গেল। শিশির কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ওর কাছে না আছে বিন্তীর ফোন নাম্বার, আর না আছে ফেসবুক আইডি।
শিশির প্ল্যাটফর্মে বসে পড়লো। কিছু কৌতুহলী লোকজন এসে এটা, ওটা প্রশ্ন করছে। তাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলো এটাই নাকি ওই রুটের লাস্ট ট্রেন। এরপর আর ট্রেন পাওয়া যাবে না। শিশিরের মাথা কাজ করছিল না। সেই সময় তুষার ফোন করলো।
শিশির ফোন তুলেই বলল,
“ভাই ট্রেন মিস করছি। ”
“হ্যাঁ শুনেছি। ভাবী ফোন করেছিল। ”
“এখন কী করব? ফিরে আসব?”
“কী বলছিস? ভাবী একা একা যাবে? ”
“লোকজন বলছে এটাই লাস্ট ট্রেন। ”
“তুই ভাবীর সঙ্গে কথা বল। ভাবীকে আমি তোর ফোন নাম্বার দিয়েছি। এক্ষুনি হয়তো ফোন করবে। ”
শিশির ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গেই বিন্তীর ফোন এলো। বিন্তী বলল,
“শিশির তুমি ঠিক আছ?”
“ঠিক না থাকার কী আছে? ট্রেন মিস করেছি বলে হাটুমুড়ে কাঁদতে বসে যাব!”
“বারবার বলেছিলাম যে তাড়াতাড়ি এসো। এসব স্টেশনে ট্রেন বেশীক্ষন থাকে না। ”
“জ্ঞান দিও না তো। ”
“আচ্ছা এখন কী করবে?”
“আমি বাড়ি ফিরে যাই। তুমি একা চলে যাও। ”
বিন্তী কঠিন গলায় বলল, না। এরপর যে ট্রেন আসবে সেটাতে উঠে নেক্সট স্টেশনে নামবে। আমি সেখানেই অপেক্ষা করব। আমি একা কোথাও যাব না। ”
শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আচ্ছা।
ফোন রেখে শিশির ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন বাদে শিরিন ফোন করলো শিশির কে। তুষারের কাছে খবর যাওয়া মানে সারা পাড়া জানা। যেন মাইক নিয়ে সবাইকে বলে বেড়ায়।
শিশির ফোন তুলে ক্লান্ত গলায় বলল,
“হ্যালো। ”
“ট্রেনে উঠতে না উঠতেই তোর ক্ষিদে পেয়ে গেল? কী আক্কেল তোর। ”
শিশির অতিসন্তঃর্পনে দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলল,
“আমি কী জানতাম যে এভাবে ছেড়ে দিবে।”
“তুই নাকি অসভ্যের মতো ফিরে আসতে চাইছিস?”
“বিন্তীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পরের স্টেশনে নেমে ও অপেক্ষা করবে। ”
“হ্যাঁ সেটাই কর। ভুলেও বাড়িতে আসবি না। ”
শিশির ফোন রেখে দিলো। এই বিন্তী মেয়েটার সঙ্গে বিয়ে হবার পর থেকে মুসিবত যেন পিছু ছাড়ছেই না। আস্ত মুসিবত কপালে জুটেছে আর কী চাই জীবনে।
***
ট্রেন এলো সন্ধ্যার পর। সেই ট্রেনে শিশির উঠলো। বসার জায়গা পেল না তাই দাঁড়িয়েই যেতে হলো। দুইঘন্টা পর নেক্সট স্টেশনে পৌছালো। বিন্তী দেখলো শিশির প্ল্যাটফর্মের দিকে আসছে। খাবারের প্যাকেট এখনো সঙ্গে আছে। বিন্তী হেসে ফেলল। শিশির বলল,
“আমার অবস্থা দেখে তোমার হাসি পাচ্ছে?”
“হ্যাঁ। ”
“বেশ তাহলে প্রাণ খুলেই হাসো৷ গড়াগড়ি খেতে খেতে হাসো। ”
বিন্তী শব্দ করে হেসে ফেলল। রাত নয়টা বেজে গেছে ইতিমধ্যে। শিশির বলল,
“এরপর কী করবে?”
“এখানেই রাত টা পার করে দিলেই হয়। ”
“তুমি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছো?”
“না। ঘাড়ত্যাড়া লোকের সঙ্গে ইয়ার্কি করা যায় না। ”
শিশির কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। বিন্তী বলল,
“সাড়ে দশটায় বাস আছে। সেই বাস ধরতে হবে। ”
শিশির বিড়বিড় করে বলল,
“শালা বিয়েতে এতো জ্বালা আগে জানলে রাজীই হতাম না। তারচেয়ে ভিক্ষের থালা হাতে নিতে রাজী হওয়াই ভালো ছিলো। ”
বিন্তী হাসলো৷ দুজনেই বাস স্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিন্তী বলল,
“শিশির হাতে তো সময় আছে৷ ভালো করে খেয়েদেয়ে বাসে উঠো কেমন। মাঝ রাস্তায় বাস থামলে তখন আবার নামতে যেও না। এতো টেনশন নিতে পারব না।”
শিশির সিদ্ধান্ত নিলো আজ রাতে ও না খেয়ে থাকবে। এই মেয়ে নাহলে কথা দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়েই মেরে ফেলবে।
শিশির বলল,
“আমার জন্য তোমাকে কেউ টেনশন করতে বলেছে? তুমি গেলেই পারতে!”
“আমি তোমার মতো স্বার্থপর নই। ”
শিশির অবাক গলায় বলল,
“আমি স্বার্থপর! ”
“তা নয়তো কী? আমি একা একা এতো পথ যাব আর তুমি বাড়ি ফিরে যাবে। এটা স্বার্থপরের কাজ না। ”
শিশির দাঁত কিড়মিড় করে বলল, হ্যাঁ আমিই তো স্বার্থপর। এইজন্যই তো বিয়ে করে উদ্ধার করেছিলাম।
“আমিতো না করেছিলাম। শুনলে না তো। এইজন্যই বড়দের কথা শুনতে হয়। ”
শিশির রাগী চোখে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল,
“সেই ব্যটা খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। মাঝখান দিয়ে আমি ফেঁসে গেলাম। ”
বিন্তী হঠাৎ অন্যরকম গলায় বলল,
“বাড়ি থেকে ফিরে তোমাকে আর আমার জন্য কিছুই করতে হবে না। তুমি তোমার মতো, আর আমি আমার মতো। কথা দিচ্ছি যে আর কপাল চাপড়াতে হবে না। ”
“এই তুমি এতো কথা বলো কেন? শুনেছিলাম তো খুব ভালো মেয়ে!”
বিন্তী ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তাই?”
“হ্যাঁ। ভালো মেয়ে, ভালো মেয়ে করেই তো সবাই মুখে ফেনা তুলে ফেলল। আর আমিও নাচতে নাচতে বিয়েতে রাজি হলাম। ”
“আমি তো শুনেছি ভিক্ষের থালা হাতে নিতে পারবে না বলে রাজী হয়েছো। ”
শিশির চুপ করে রইলো। এই মেয়ের সঙ্গে কথায় পারবে না। কথা দিয়ে পরাস্ত করার জন্য বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসেছে শিওর।
বিন্তী বলল,
“শিশির তুমি নিজে কী খুব ভালো ছেলে?”
“মানে?”
“মানে আমি শুনেছি যে যেমন তার সঙ্গে জুটেও তেমন। আমি খারাপ হলে লজিক্যালি তুমিও খারাপ। ”
“তোমার সঙ্গে আসাই ভুল হয়েছে। উফ!”
“আর একটা কথা বলেই মিউট হয়ে যাব। তুমি যদি ভালো হতে তবে আমিও তোমার সঙ্গে ভালো হবার চেষ্টা করতাম। তুমি খারাপ তাই আমিও খারাপ। ”
শিশির মনে মনে বলল, তুই আর ভালো! তুই তো আস্ত ডাইনি। না ডাইনিরাও তোকে দেখলে লজ্জায় আত্মহত্যা করবে। তুই তার চেয়েও খারাপ। তোকে শায়েস্তা করার অস্ত্র আমার কাছে আছে। পাগলা কুত্তা লেলিয়ে দেব। কেঁদেও কুল পাবি না। পাগলা কুত্তার চেয়েও খারাপ জিনিস ঝুম্পাকে দিয়ে তোকে যদি শায়েস্তা না করিয়েছি তাহলে আমি নিজের নাম বদলে রাখব।
চলবে….