অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো পর্ব-৫

#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-৫

পথে যেতে যেতে বিন্তী আর তুষার গল্প করতে করতে গেল। তুষার প্রথমে একটু আড়ষ্টভাবে কথা বললেও খানিক বাদে মন খুলে কথা বলল। বিন্তীও হাসিমুখে তুষারের সঙ্গে কথা বলতে লাগলো।

দুজনেই নরমাল কথাবার্তা বলছে। পড়াশোনা, পছন্দের মুভি জনরা এসব। শিশির একটা কথাও বলল না কিন্তু কান খাড়া করে সব শুনলো। বিন্তী এতো কথা বলতে পারে দেখে অবাকও হলো। এই মেয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা ছাড়াও ভালো কথা যে জানে সেটা ওর ধারণা ছিলো না।

জ্যামে আটকে থেকে শেষমেস শপিংমলে পৌছালো। লিফটে ওঠার আগে বিন্তী জানালো যে লিফটে উঠতে ভয় লাগে।

শিশির বলল,

“এখানে লিফট ছাড়া আর অপশন নেই। তোমার শ্বশুর প্রধানমন্ত্রী না যে লিফট তুলে দিবে। ”

বিন্তীও কাটা কাটা গলায় জবাব দিলো,

“আমার শ্বশুরের ছেলেদের মধ্যে কেউ হাত ধরলেই হবে। লিফট না ওঠালেও চলবে। ”

তুষার সামনে এগিয়ে গিয়ে হেসে বলল,

“তোকে বলেছে। আমাকে না। ”

শিশির আর কথা বাড়ালো না। বিন্তীর কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। বিন্তীও বিনা বাক্যব্যয়ে শিশিরের হাত ধরলো আলতো করে।

একজন আরেকজনকে এই প্রথম স্পর্শ করা। পরিস্থিতি ভিন্ন হলে মুহুর্তটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। সম্পর্কের সমীকরণ কিরকম হবে কারোরই জানা নেই। হয়তো এই মুহুর্ত টা কারোরই মনে রইলো না।

প্রথম সিড়িতে পা রেখেই বিন্তী শিশিরের হাত টা খামচে ধরলো। মাঝারি সাইজের নখের আচড় লাগলে শিশির একটু বিরক্ত হলো বটে তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। অল্প কিছু সময়! ওই সময়টুকু বিন্তী হাত শক্ত করেই ধরে থাকলো। নিজের অজান্তেই শিশিরের হাত টা ভরসায় পরিনত হলো।

প্রথমে ওরা গেল শাড়ির দোকানে। তুষার বলল,

“ভাবী আমরা বাইরে থাকি। তুমি যাও। মহিলাদের দোকানে আমাদের যাওয়া ঠিক হবে না। ”

বিন্তী বলল,

“তোমরাও চলো। আমি একা একা কখনো শপিংমলে আসিনি। ”

অতঃপর দুজনেই বিন্তীর সঙ্গে গেল। বিন্তী শাড়ি বাছাবাছি করছিল। কোনো রঙ ই ঠিকঠাক পছন্দ করতে পারছে না। শিশির বিরক্ত হয়ে দেখছে শুধু, কিছু বলছে না। পাব্লিক প্লেসে এর সঙ্গে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো। কারণ কথা হজম করা এই মেয়ের ধাতে নেই। মুখ ছুটিয়ে কখন কী বেফাঁস কথা বলে ফেলে।

বিন্তীর শাড়ি বাছাবাছি দেখে তুষার বলল,

“ভাবী যেগুলো ভালো লাগছে নিয়ে নাও। তোমার শ্বশুর কিন্তু বউমার ব্যপারে একদম দিল খোলা। ক্যাশ টাকা না দিয়ে কার্ড দিয়ে দিয়েছে। তাই যা মন চায় নিয়ে নাও। ”

শিশির পাশেই ছিলো। তীর্যক হেসে বলল,

“যাহ! এবার তো একদম ফতুর করে ছাড়বে। মেয়েরা শপিং এর সময় বাপের টাকা ছাড় দিলেও অন্যদের ছাড় দেয় না। পরের টাকায় এরা দোকানশুদ্ধও কিনে ফেলতে পারে। ”

শিশির কথাগুলো একটু জোরে বলার কারণে বিন্তীর কানেও গেল। বিন্তী চুপ করে রইলো। তুষার বলল,

“চুপ কর তো। ”

“অভিজ্ঞতা আছে ব্রো। চুপ থাকার কিছু নেই। ”

তুষার শিশির কে কিছু বলল না আর। বিন্তী বলল,

“তোমাদের কিছু কেনার থাকলে কিনে ফেলো। আমার হয়ে গেলে আমি ফোন করব। ”

তুষার ভেবে দেখলো সেটাই ভালো হয়। শাড়ি কিনতে বিন্তী যে সময় লাগাচ্ছে, এরপর ওরা আর কিছু কেনার সময় পাবে না। তাই বিন্তীকে একা রেখে ওরা চলে গেল।

***
শিশির চার, পাঁচটা দোকান ঘুরে টিশার্ট, জুতা, সানগ্লাস কিনলো। এরপর তুষার আবার ঘুরে ঘুরে কিনলো। দুইঘন্টা পর ওরা শাড়ির দোকানের সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পেল বিন্তী দাঁড়িয়ে আছে। হাতে দুটো ব্যাগ। তুষার জিজ্ঞেস করলো,

“ভাবী হয়ে গেছে?”

“হু অনেকক্ষন আগে। ”

“তাহলে ফোন করলে না যে?”

বিন্তী হেসে বলল,

“তোমাদের কারোর ফোন নাম্বার তো আমার কাছে নেই। ”

দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। সত্যিই তো, বিন্তীর ফোন নাম্বার টা ওদের কাছে থাকা উচিত ছিলো। তুষার বলল,

“সরি ভাবী। একদম মনে ছিলো না।”

“আমারও মনে ছিলো না। সরি। ”

শিশির কোনো কথাই বলল না। ওর দৃষ্টি বিন্তীর হাতের দিকে নিবদ্ধ। মোটে দুটো ব্যাগ! এতেই কেনাকাটা শেষ! কিন্তু কোনো প্রশ্নও করলো না।

রেস্টুরেন্টে গেলে সেখানেও বিন্তী কফি ছাড়া কিছু খেল না। কিন্তু দুই ভাই গান্ডে পিন্ডে গিলল৷

ফেরার সময় তুষার গাড়ি চালাতে চাইলেও শিশির দিলো না। তুষার এবারও বিন্তীর পাশে বসলো। কিন্তু এবার আর গল্প জমলো না তেমন। টুকটাক একটা দুটো কথার পর পর ই বিন্তী চুপ হয়ে যেত।

****
শিরিন অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“মোটে তিনটে শাড়ি কিনেছ? আর কিচ্ছু না?”

বিন্তী হাসলো। বলল,

“আমার তো টুকটাক সব জিনিসই আছে। ”

“সে কী কথা! সেগুলো বিয়ের আগের। বিয়ের পর তো শ্বশুরবাড়ির জিনিসপত্র ব্যবহার করতে হয়। ”

“ওসব আসলে মিথ চাচী। আমার যেহেতু আছে তাই শুধু শুধু কিনে পয়সা নষ্ট করতে ইচ্ছে হয় নি। ”

“পয়সা নষ্টের কথা আসছে কেন? তোমার সঙ্গে যদি আগে থেকে কথাবার্তা হয়ে বিয়ে হতো তাহলে আমরা তো সব দিতাম ই। ”

“থাক। আমার আপাতত আর কিছু লাগবে না। লাগলে চেয়ে নেব। ”

শিরিনের ব্যাপার টা একদম ভালো লাগলো না। মেয়েটা বাপের বাড়ি যাবে, সেখানে লোকজন আসবে শ্বশুরবাড়ি থেকে কী দিলো দেখতে। তখন কী ওদের সম্মান থাকবে। সবাই তো ভাববেই যে লোক দেখানো ভালোমানুষ। বিন্তীর উপর প্রচন্ডরকম বিরক্ত হলো।

****
শিশির শুয়ে শুয়ে মোবাইলে গেম খেলছিল। গত দুই তিন দিনে ওর উপর ঘূর্নিঝড়, টর্নেডো সব বয়ে যাচ্ছে। আজ বিকেলে বিন্তীর বাবা আর ভাই এসেছিল। তাদের সামনে মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে বসে থাকতে হলো। বিন্তীর মা একটু অসুস্থ বলে তারা রাতে আর থাকে নি। চলে যাবার পর শিশির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। যেন আপদ বিদায় হয়েছে।

রাতে খেয়েদেয়ে বিছানায় শুয়ে গেম খেলছিল। এরমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে শিরিন এসে বলল,

“শিশির বিন্তীকে তুই কী বলেছিস?”

শিশির অবাক গলায় বলল,

“কিছু তো বলিই নি। আমি ওর সঙ্গে মেপে কথা বলি। ওই মেয়ে বেফাঁস কথা বলায় ওস্তাদ। ডেঞ্জারাস জিনিস। ”

“শপিংমলে শাড়ি কেনার সময় কী বলেছিস?”

শিশির এতক্ষনে ব্যাপার টা বুঝলো। বলল,

“এসে তোমাকে নালিশও করে ফেলেছে? যা শুনেছো সেটাই বলেছি৷ ”

“বিন্তী কিছু বলে নি। তুষার বলেছে। কী বলেছিস কেনাকাটা, টাকা পয়সা নিয়ে। ”

শিশির বিরক্ত গলায় বলল,

“আরে মা এতো জেরা কেন করছ? কী এমন বলেছি! বলেছি যে অন্যের পয়সা হাতে পেলে মেয়েরা দোকানশুদ্ধও কিনে ফেলে। নিজের টাকায় কেনার সময় হাত দিয়ে পয়সা বেরোয় না। ”

শিরিন আগে থেকেই রেগে ছিলো। এই কথা শুনে আরও রেগে গেল। বলল,

“তোর যে অনেক মেয়ে চেনা হয়ে গেছে তা তো জানতাম না। ”

শিশিরেরও এবার মেজাজ খারাপ হলো। বলল,

“কী শুরু করেছো মা? তোমরা আমাকে শান্তি দিবে না?”

“এক পাল্লায় সবাই কে মাপা ঠিক? তোর ভাষ্যমতে দুনিয়ার সব মেয়েই অমন। বিন্তীও তাই। তোর বাবার সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়েছিল তার টাকা পয়সা, স্ট্যাবলিশড ক্যারিয়ার দেখে। এরপর তো তাহলে আমাকেও ওই সব মেয়েদের লিস্টে ফেলবি তাই তো?”

শিশির বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। শিরিন বলল,

“এক হাতের পাঁচ আঙুল সমান না। আর মানুষ হাড়িতে সেদ্ধ হওয়া চাল না যে একটা টিপে বাকীগুলোও জাজ করবি। পরিস্থিতি খারাপ বলে মেয়েটা বিপদে পড়েছে, তাই বলে যা খুশি বলে দিবি!”

শিশির চুপ করে রইলো। শিরিন আর কিছু বলল না, চলে গেল।

মা যাবার পর শিশিরের খানিকটা খারাপ লাগলো। বিন্তী সম্ভবত সেকারণে আর কিছু কিনে নি। এই ব্যাপার টা বুঝতে ওর এতো সময় লাগলো!

মায়ের কথাই ঠিক। বিন্তীকে ও কতটুকুই বা চিনে! দুদিনের কথাবার্তা আর আলাপে তো আর একজন কে জাজ করা যায় না।

***
পরদিন সকালে খাবার টেবিলে শিশির মা’কে বলল,

“মা আমি বিন্তীর সঙ্গে যাব। ”

বিন্তী আর তুষার দুজনেই অবাক হলো। শিশির চোরাচোখে একবার বিন্তীকে দেখলো। কালকের ঘটনার জন্য সরি বলা সম্ভব না। ইগোতে লাগবে। তবে সঙ্গে গেলে যদি একটু খেসারত দেয়া যায়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here