#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-৪
বিন্তী শিশিরের থেকে বয়সে বড় এই খবর শুনে শিশির একদম মুষড়ে পড়লো। দৌড়ে গিয়ে মা’কে বলল,
“মা এসব কী শুনছি? বিন্তী নাকি আমার চেয়ে বড়?”
তুষার ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছিলো। শিশিরের কথা শুনে ছুটে এসে বলল,
“কী বলছিস? ভাবী তাহলে প্রিয়াংকা চোপড়া? ”
শিরিন বলল,
“বেশী বড় না। দুই তিন মাসের হবে মনে হয়। ”
শিশির আর্তচিৎকার করে উঠে বলল,
“পাঁচ মাস। এখন একটা বড় বউ নিয়ে আমাকে ঘুরতে হবে!
তুষার দাঁত বের করে হেসে বলল,
“এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার ব্রো। ”
শিশির কী করবে বুঝতে পারলো না। একদিকে বিন্তীকে সহ্য করতে পারছে না। অন্যদিকে বিন্তী বয়সে বড় শুনে কপাল চাপড়াচ্ছে।
***
বিন্তী ফোন টা খুলল। শিশিরের মা জানিয়েছে যে বাড়ি থেকে ও’কে ফোন করে পাচ্ছে না। বাবা, মায়ের নাম্বারে ফোন না করে বিন্তী ওর বোন ঐশির নাম্বারে ফোন করলো।
ঐশি ফোন ধরে বলল,
“আপা কেমন আছিস?”
“ভালো। ”
“ঘুমাচ্ছিলি?”
“হু। ”
“ওদিকে সব ঠিকঠাক? ”
“কী ঠিকঠাক হবে?”
ঐশি একটু চুপ থেকে বলল,
“তোর সঙ্গে যাই নি বলে রেগে আছিস? মায়ের শরীর খারাপ না হলে যেতাম। ”
বিন্তীর চোখে পানি এসে গেল। বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সবারই কিছু বন্ধু বান্ধব জুটে যায়। বিন্তীরও তেমন কয়েকজন ছিলো। তবে প্রানের বন্ধু যাকে বলে সেরকম কেউ হয় নি। যার সঙ্গে দুটো কথা বলে শান্তি পাবে। সেই জায়গাটা ঐশী পূরন করেছে। বয়সে দুজনের ব্যবধান থাকলেও সম্পর্কটা বন্ধুত্বেরই।
বিন্তীকে চুপ করে থাকতে দেখে ঐশী বলল,
“বাবা আর ইমন কাল সকালে যাবে। আমিও আসব। ”
বিন্তী চুপ করে রইলো। ঐশী বলল,
“মায়ের উপর রেগে আছিস! মায়েরা রাগ করলে ওরকম অনেক কিছু বলে। ”
“তাই বলে মরে যেতে বলবে?”
“ওসব মনে রাখিস না। ওরকম একটা সিচুয়েশনে মায়ের জায়গায় তুই থাকলে কী করতি একবার ভাব। ”
“তোরও কী মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি?”
“না। শোন আপা যে একদিন অপমান করে প্রশ্রয় পায়, সে সারাজীবন ওই কাজ করতেই থাকতো। খুব ভালো করেছিস। জীবন তো একটাই। কে কী ভাবলো সেসবের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ভালো থাকা। বাবা মায়ের উপর রেগে থাকিস না। তুই যেমন তোর জায়গায় ঠিক, তারাও তেমন তাদের জায়গায় ঠিক। ”
“হু। ”
“রাখছি। কাল দেখা হচ্ছে।”
“আচ্ছা।”
বিন্তীর খুব অসহায় লাগছে। এরকম জীবন তো ও কখনো চায় নি। সবসময় মাথাউঁচু করে বাঁচতে চেয়েছে। কিন্তু বিবাহিত জীবন টা শুরুই হলো করুনা দিয়ে। শিশিরের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ ওর কেমন হবে জানেনা। কিন্তু সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে যে শিশির ও’কে দয়া করেছিলো।
***
রাতে শিশিরের বাবা বিন্তীকে ডেকে পাঠালেন। বিন্তী গিয়ে বলল,
“চাচা ডেকে পাঠিয়েছেন?”
“হ্যাঁ বিন্তী। বসো। ”
বিন্তী বিছানার এক পাশে বসলো। শিশিরের বাবা বললেন,
“শিশিরের ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলতে চাই বিন্তী। বিয়ের আগে সময় এতো কম ছিলো যে বলা হয়ে ওঠেনি। ”
বিন্তী চুপ করে রইলো।
“শিশির জেদি আর একগুয়ে স্বভাবের। যেটা একবার করবে বলে ঠিক করে সেটাই করে। খুন করে ফেললেও সিদ্ধান্তে নড়চড় হয় না। এই যে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরজন্য কম মার খায় নি। তবুও শোধরায় নি। বলে যখন ম্যূড হবে, পড়াশোনার নাম শুনলে ভয় লাগবে না তখন আবার শুরু করবে। ”
শিশিরের বাবা একটু থামলেন। বিন্তী চুপচাপ শুনতে লাগলো।
“তোমার হয়তো মনে হতে পারে যে শিশির তোমার পারফেক্ট না। মনে কেন হবে, ওটাই সত্যি। কিন্তু একটা ব্যাপারে গ্যারান্টি দিচ্ছি শিশির কিন্তু খারাপ ছেলে নয়। ও উচ্ছৃঙখল হতে পারে কিন্তু খারাপ না। ”
বিন্তী চুপ করে রইলো। শিশিরের দোষ, গুন কোনোটাই শুনতে ভালো লাগছে না। ওর আগ্রহও নেই। তবুও একটা মানুষ আগ্রহ নিয়ে বলে যাচ্ছে যখন শুনতে হবে।
শিশিরের বাবা বললেন,
“তোমাদের দুজনেরই আসলে একটু সময় দরকার। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
বিন্তী মৃদু হাসলো। তারপর বলল,
“চাচা আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ ছিলো। ”
“হ্যাঁ বলো। ”
“আপাতত বউভাতের অনুষ্ঠান টা স্থগিত থাকুক। পরে নাহয় করলেন। ”
শিশিরের বাবা চুপ করে রইলেন। বিন্তী আবারও বলল,
“একটা অনুষ্ঠানে কতো আত্মীয়স্বজন লোকজন আসবে। তাদের সামনে হাসিখুশি থাকার অভিনয় চালিয়ে যাওয়া বোধহয় ঠিক হবে না। ”
“বেশ তবে তাই হোক। ”
“থ্যাংক ইউ। ”
“তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে কী ভাবলে?”
“এমবিএ কমপ্লিট করার ইচ্ছে আছে। ”
“এই বাড়িতে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না বিন্তী। তোমার যা ভালো লাগে তাই করো। সবার আগে নিজের ক্যারিয়ার কে প্রায়োরিটি দাও। বাকীসব গোল্লায় যাক। ”
বিন্তী হাসলো। শেষ কথাটা ওর খুব ভালো লেগেছে।
শ্বশুরের সঙ্গে কথা শেষ করে বিন্তী যখন বের হলো তখন শিশির আর তুষার ডাইনিং টেবিলে ভাত খাচ্ছিলো। বিন্তী তাকাবে না ভেবেও একবার তাকালো। দেখলো শিশির ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শিরিন ডেকে বলল,
“বিন্তী কাল তোমার বাবা, ভাই আসছে তো?”
“হ্যাঁ সেরকম ই বলল। ”
“তোমাদের তো মনে হয় ওখানে বেড়াতেও যেতে হবে। ”
বিন্তী কিছু বলার আগেই শিশির বলল,
“আমার কিন্তু কাজ আছে। আমি পারব না। ”
শিরিন ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে কী ও একা যাবে নাকি?”
“একা কেন তুষার যাবে। ”
তুষার বিরক্ত গলায় বলল,
“বিয়ের পর জামাই, বউ একসঙ্গে যায়। আমিও যেতে পারি। কিন্তু তোকে তো যেতে হবে। ”
শিরিন বলল,
“একদম ঠিক। ”
“আমার কাজ আছে। ”
শিরিন আরও কিছু বলার আগে বিন্তী বলল,
“তুষার কেন যাবে? ও’কে কী আমি বিয়ে করেছি। ”
শিশির বিন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার সঙ্গে এতো তেজ দেখাতে এসো না। আমি একবার না বললে সেটা আর হ্যাঁ হয় না। ”
শিরিন বলল, আস্তে বল। তোর বাবা শুনতে পাবে।
শিশির গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
“ক্লিয়ার কথা শোনো মা, আমি কিন্তু যাব না। তুষার কে পাঠাও। ”
তুষার আবারও বলল, গাধার মতো কথা বলিস না।
বিন্তী বলল, কী আর করার। তুমিই আমার সঙ্গে যেও তুষার। তবে আগে বুঝলে আমি তোমাকেই বিয়ে করার জন্য ঘোড়ার মতো লাফাতাম।
তুষারের মুখের খাবার কাশতে কাশতে পড়ে গেল। শিশির হা হয়ে তাকিয়ে আছে। শিরিন শব্দ করে হেসে ফেলল। বলল,
“শিশির এই মেয়ে তো দেখি তোর মতোই বদমায়েশ। ”
বিন্তী নিজের ঘরে চলে গেল।
***
পরদিন সকালে শিরিন জোর করে শিশির কে ঘুম থেকে ওঠালো। শিশির ঘুমঘুম গলায় বলল,
“কী সমস্যা মা?”
“আজ তাড়াতাড়ি ওঠ। তোর শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক আসবে। ”
“আমি কী করব?”
“কিছু করতে হবে না। সেজেগুজে বসে থাকবি। ”
“মানে কী? আমাকে এসব কেন করতে হবে কেন?”
“আরে অনেক কাজ আছে। আগে ওঠ। বিন্তীকে নিয়ে মার্কেটে যাবি। ওর জন্য তো কিছু কেনা হয় নি। ”
“তুমি যাও। ”
“আমি গেলে রান্নাঘরের কাজ কে সামলাবে? তোর শ্বশুরবাড়ির লোকজন কী না খেয়ে থাকবে?”
শিশির একবার বলতে চাইলো তুষার কে পাঠাও৷ তারপর থেমে গেল। পাজী মেয়েটার তো মুখে কোনো কিছু আটকায় না।
শান্তির ঘুম পন্ড করে বিন্তীকে নিয়ে মার্কেটে যাবার জন্য রেডি হলো। তুষারও সঙ্গে যাচ্ছে। দুজনেই নাকেমুখে খেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। বিন্তী এলো মিনিট দশেক পর। বিন্তীকে দেখেই শিশির বলল,
“আসুন ম্যাডাম আসুন। ”
বিন্তী স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“আমি কী তুষারের পাশে বসব?”
তুষারের চোয়াল ঝুলে পড়লো। শিল আর নোড়া এক হয়ে ও’কে যেন পিষে ফেলছে।
শিশির কটমট চোখে তাকালো। বিন্তীর তাতে কোনো হেলদোল নেই। ও সত্যিই গিয়ে তুষারের পাশে বসলো।
চলবে….
(