#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_১৭
-“নারগিস বেগম দেখলো,সামিয়ার ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। নারগিস বেগম বারবার রিপোর্টটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে থাকে। বারবার একই বিষয় পরিলক্ষিত করতে পারে। তারপর নারগিস বেগম ডক্টরকে বলতে লাগে,আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। প্রতিত্তোরে জবাব দিলো,আজ পর্যন্ত আমাদের কোন রিপোর্ট ভুল বলে প্রমান হয়নি আশা করবো এটাও ভুল বলে প্রমান হবেনা। তারপর ডাক্তার চলে গেলো। আর নারগিস বেগমের চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগে। হয়তো তাদের জন্য অপেক্ষা করা ভয়ংকর সব পরিনত বাস্তব রুপ নিচ্ছে একে একে।
‘তখুনি হঠাৎ নারগিস বেগমকে চমকিয়ে,দিয়ে সামিয়া পিছন থেকে ডাক দিলো। নারগিস বেগমের সকল ঘোর কাটলো সামিয়ার ডাকে। মা,কি রিপোর্ট আসলো.? বেশি কি কোন গুরুতর সমস্যা.? নারগিস বেগম মৃদু হাসি দিয়ে (লেখক_আহম্মেদ_নীল) বললো,আরে মা তেমন কোন সমস্যা না। সামিয়াকে পুরো বিষয়টা বুঝতে না দিয়ে বললো,বেশি টেনশন করার কারনে তোমার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চিন্তা নেই ডক্টর বলেছে ঠিক হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। মা আমিও জানতাম,তেমন কোন সমস্যা হবে না। সামিয়ার কথা শুনে নারগিস বেগমের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠে,তার চোখ দিয়ে অশ্রু কনাগুলো গড়িয়ে পড়তে চাইলেও সে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। কারন নারগিস বেগম জানে,সামিয়াকে ভেতরে যে মরনব্যাধি ব্রেইন ক্যান্সারের বিরাজ ঘঠেছে,এটা যদি সামিয়াকে বলি,তাহলে সামিয়া আরো তারাতাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং মৃত্যুর দিকে ঢুলে পড়বে।
“একটু পর তারা চলে যায়,বাড়ির উদ্দেশ্য। তারপর নারগিস বেগম আর সামিয়া যে যায় রুমে চলে যায়। নারগিস বেগম নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে অঝড়ে মুখ চেপে কান্নায় ভেঙে পড়ে। নারগিস বেগম প্রায় ঘন্টা খানিক কান্না করে নিজেকে হালকা করে নেয়। তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবতে থাকে,ফারিয়ার সাথে করা সকল অন্যায় আর নির্যাতনের কথা। নারগিস বেগম বুঝতে পারছে তাদের ওপর নেমে আসছে সকল ভহংকার পরিনতি, যা তারা পাওয়ার যোগ্য। একটা মেয়ের সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার নারগিস বেগম ভেঙে দিয়েছে। নারগিস বেগমের মনে একরাশ ভয় কাজ করে তার কলিজার টুকরো ছেলের জন্য।
তার কিছু হয়ে গেলে নারগিস বেগম যে একদম একা হয়ে যাবে। ২০ বছর আগে তার স্বামীকে হারায় নারগিস বেগম,তখন আতিকের বয়স সবেমাত্র ৬ বছর। তারপর থেকে ছেলেকে নিয়েই তার সকল ভাবনা চিন্তা। তার একমাত্র সকল চাওয়া-পাওয়া তার ছেলেকে ঘিরে।
-‘নারগিস বেগম কোন দেরি না করে আতিকের নাম্বারে কল করে। কিন্তুু আতিক কল রিসিভ করেনা। নারগিস বেগমের মনে হাজার রকমের ভয়ের আগমন ঘটলো। অনেকবার কল করেও আতিকের হুদিস পেলো না। বিকাল ঘুনিয়ে সন্ধা হয়ে এলো। নারগিস বেগম মনমরা হয়ে বসে আছে নিজের রুমে। এই সময়ে এককাফ কফি নিয়ে সামিয়া হাজির হলো।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) নারগিস বেগমের এমন মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে সামিয়া বললো,মা আপনার কী হয়েছে.? মন খারাপ করে বসে আছেন, আপনি চাইলে আমাকে বলতে পারেন,আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। নারগিস বেগম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,তেমন কিছু না আতিককে নিয়ে ইদানীং আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলে ভুল বুঝায় সামিয়াকে। তাছাড়া যে তার কাছে আর কোন পথ যে। তিনি কেমন করে সামিয়াকে বলবে,তার যে মরনব্যাধি ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সে যে এই সুন্দর পৃথিবীতে আর বেশিদিন থাকতে পারবে না। নারগিস বেগম সামিয়াকে বুকে টেনে নেয়। সামিয়াও নারগিস বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে,আতিকের পরিবর্তন সামিয়াকে যে ভেতর থেকে কুড়ে কুড়ে শেষ করে দিচ্ছে । আতিকের বুকে মাথা রাখলে,আতিক বিরক্ত হয়। আর এদিকে নারগিস বেগম সামিয়াকে জড়িয়ে ধরে ভাবতে থাকে, না জানি আর কত বড় ভহংকার পরিনতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
-একটু পর সামিয়া নিজের রুমে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বেডের এককোণে বসে থাকে। রাত প্রায় ৯ টা বেজে যায় আতিকের আসার কোন নামচিন্তা নেই। আতিকের অফিস ছুটি হয় রাত ৮ টার সময়। আসতে ত্রিশ মিনিট লাগে। কিন্তুু আজ নয়টা পেরিয়ে যায়,কিন্তুু আজকে আসে না। সামিয়া আর দেরি না করে কল করে আতিকের ফোনে। অনেকবার কল করার পরও ওপাশ থেকে কলসা রিসিভ হয় না।
‘এদিকে আতিক অনেক ড্রিংক করে বাসায় ফিরে রাত এগারোটার সময়। ইদানীং সে প্রায় সময় ড্রিংক করে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে। গাড়ির শব্দ পেয়ে সামিয়া নিচে যায়,আতিক গাড়িয়ে ভেতরেই বসে থাকে। ড্রাইভার রেখেছে আতিকের মা,কারন ছেলে ইদানীং যে পরিমান ড্রিংক করছে,এতে করে সে রোড এক্সিডেন্ট করে বসবে বাসায় আসার সময়। ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দেয়,সামিয় আর নারগিস বেগম আতিককে রুমে নিয়ে যায়। তারপর আতিকের রুমে রেখে চলে যায় নারগিস বেগম। সামিয়া দরজা লাগিয়ে প্লেটে থাকা ভাত খাইয়ে দিতে গেলে আতিক প্লেটটা ছুড়ে ফেলে দেয়। সামিয়া ভাতের দানাগুলো গুছিয়ে রান্নাঘরে রেখে আসে,আর মেঝেটা পরিষ্কার করে আতিক এর পাশে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আর আতিক অনরবত ভুল বকে। ফারিয়া প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও,আমার জীবনে আর একবার ফিরে এসো,আমি তোমাকে আর কোনদিন হারাতে দিবো না। আমি খুব বড় অন্যায় করেছি আমার ডাইনি মায়ের কথা শুনে। আমি একটুও বুঝতে পারিনি,তোমাকে একটা সময় এতটা মায়ায় জড়িয়ে ফেলবো। কথাগুলো আতিক অনবরত বলেই চলেছে।
“এদিকে সামিয়া আতিকের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের বুকে টেনে নেয়। তবে কোন লাভ হয়না,বুকে টেনে নিলে নাকি মানুষ স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু আতিক বিপরীত। সামিয়া উপর বিরক্তিকর হয়ে যায়। তোর জন্য আমি আমার নিষ্পাপ ফারিয়াকে হারিয়েছি,একদম আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবি না কথাগুলো সামিয়াকে বলছে আতিক। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)এই প্রথমবারের মতো আতিক তাকে এমন সুন্দর মধুর বানী শুনালো। যা শুনে মুহূর্তে সামিয়ার দুচোখ বেয়ে অশ্রুকনাগুলো ঝড়তে লাগে। আর সেই চোখের পানি আতিকের মুখের উপর পড়তে আতিক সামিয়ার চুলের মুঠো ধরে শক্ত করে।
-‘সামিয়া ব্যাথার কুকড়িয়ে ওঠে। অনেক জোরে চুলের মুঠো ধরে। সামিয়ার দু নয়ন আতিক এর এমন কর্মকান্ডে ভিজে যায়। মাতাল অবস্থায় বলতে লাগলো,তোর জন্য আমি আমার ফারিয়াকে হারিয়েছি চিরতরে। আজ যদি তুই আমার লাইফে না আসতিস তাহলে আমি ফারিয়াকে হারাইতাম না।বলেই ফ্লোরে জোড়ে ফেলে দেয় বেড থেকে। সামিয়া আচড়ে গিয়ে পড়ে ফ্লোরে। অজ্ঞান হয়ে যায় সামিয়া আর আতিক বেডে শুয়ে পড়ে আর অনবরত ভুল বকতে থাকে। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)আতিক জোরে জোরে চেচিয়ে কথাগুলো বলছিলো সামিয়াকে,পাশের রুমে থাকা নারগিস বেগম দরজায় কান পেতে সবকিছু শুনে নেই। ছেলের এমন অমানুষিক নির্যাতন নারগিস বেগমকে হতভাগ করে তুলে। আতিক তো আগে এমন ছিলোনা।
-“দরজা খোল নীল,নীল দরজা খোল,কয়েকবার ডাকাডাকির পরও কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নারগিস আর তার বাড়ির দাড়োয়ান মিলে দরজা ভেঙে যা দেখলো,তা দেখার জন্য নারগিস বেগম মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। সামিয়া মেঝেতে পড়ে রয়েছে জ্ঞান হারিয়ে। নারগিস বেগম তড়িঘড়ি করে পানি এনে চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলে সামিয়ার জ্ঞান ফিরে। তারপর অনেকক্ষণ মাথায় পানি ঢালে নারগিস বেগম। মেয়েটার জন্য আজ তার খুব খারাপ লাগছে। জ্ঞান ফিরলে নারগিস বেগম সামিয়াকে নিজের রুমে নিয়ে যায়,কারন আতিকের যে অবস্থা এতে করে মাতাল অবস্থায় যে কোন সময় সামিয়ার সাথে বড় কোন খারাপ কাজ করে ফেলতে পারে। নারগিস বেগম সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,তার চোখে মুখে যে হাজারো চিন্তার ছাপ। নারগিস বেগমের চোখে যে ঘুম নেই,তার মনের মাঝে এক অজানা ভয় কাজ করছে সবসময় ছেলের এমন হাল আর তাদের সাথে দিনে দিনে যা ঘটতে চলেছে।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) সবকিছু বুঝতে পারছে,নারগিস বেগম। নিজের করা ভুলের জন্য হয়তো আজ তার প্রানের ছেলের এমন পরিনত হচ্ছে। নারগিস বেগম চেয়েছিলো,ফারিয়াকে আতিক এর জীবন থেকে সড়ালেই হয়তো তারা সুখের মুখ দেখবে,কিন্তুু এখন তো দিনে দিনে সবকিছু বিপরীতে যেতে শুরু করেছে। আদেও কি একটা নিষ্পাপ মেয়ের সংসার ভেঙে তার জীবনকে শেষ করে কেউ কখনো আদেও কী সুখি হতে পারে.? হয়তো না।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
________________
‘নীল পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো ফারিয়াকে। ফারিয়া সবকিছু দেখে মুগ্ধ হলো। আর সবথেকে বেশি মুগ্ধ হয়েছে,নীলের মতো এত কেয়ারিং একজন মানুষকে তার লাইফে পেয়ে। সন্ধা প্রায় সাতটা বেজে যায়,তখুনি ফারিয়ার বাবা আমিন সাহেব বলে আমরা বরং আজ উঠি। তখুনি ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে বেয়ায় সাহেব কি কথা বলেন এসব.?
রাতটা বরং আপনারা থেকে যান। তারপর রাত নয়টার সময় সকলে একসাথে ডিনার করে নেয়। ইমতিয়াজ চৌধুরী প্রতিদিন বারোটার সময় ডিনার করলেও আজকে সবাই একসাথে খাওয়ার জন্য নয়টার সময় ডিনারটা করে নেয়।
তারপর বিদায় নেয় সকলে। ফারিয়া নীলের সাথে এখন অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছে।
“দেখতে দেখতে আরো দুইটা দিন পার হয়ে গেলো। আজকে ফারিয়াকে নিতে আসার কথাটা নীলের পরিবারের। সকাল বারোটার সময় নীল আর তার বাবা -মা সহ সকলে ফারিয়াদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। দুপুর ২ টার সময় তাদের বাসায় এসে পৌছায়। ফারিয়ার পরিবার সবকিছু রেডি করে রেখেছে নাস্তা, পানি আর সবকিছু। বাসার কলিং বেল বাজতেই ফারিয়ার মা অহনা বেগম দরজা খুলে সবাইকে ভেতরে আসতে বলে। ফারিয়া নিজের রুমে বসে আছে। এখন সে বেশি হাটাচলা করতে পারেনা। বেবি হওয়ার আর মাত্র কয়েকমাস বাকি আছে। ভরা পেটে সে এখন একটু উঠাপাড়া কম করছে। নীলের আদেশ বেশি উঠা পাড়া করতে গিয়ে যদি পা পিচলে কিংবা কোন কারনে পড়ে যায় তখন বেবির সমস্যা হবে,যা নীল কখনোই চায়না। নীলের আদেশ বলে কথা,না মেনে কি আর রক্ষা আছে ফারিয়ার.?
-‘একটু পর ইমতিয়াজ চৌধুরী আর সাদিয়া বেগম ফারিয়ার রুমে আসলো। ফারিয়া নিজের পাশে থাকা ওড়নাটা মাথায় দেয়। তারপর কষ্ট করে তাদের সালাম করতে যায়। সাদিয়া বেগম বলে,আরে মা এত কষ্ট করে সালাম করার কোন প্রয়োজন নেই।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) তুমি আমাদের মেয়ে তাই সালাম করার কোন প্রয়োজন নেই। তাদের সাথে আলাপ করার পর ইমতিয়াজ সাহেব বাইরে চলে যায়,তারপর সোফায় বসে। আমিন সাহেব তার স্ত্রী অহনা বেগমকে বলে বেয়াইন কে ডাকতে নাস্তা করার জন্য। অহনা বেগমকে সাদিয়া বেগম বলে একটু পর যাচ্ছি। সাদিয়া বেগম ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করে,মা তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো.? এই সময় একটু কষ্ট কিংবা সমস্যা হবে এটা স্বাভাবিক। তবে চিন্তা নেই আজকে থেকে আমরা তোমার পাশে থাকবো,কোন সমস্যা হতে দিবোনা। আর আমাদের দাদুভাই যেদিন হবে, সেদিন থেকে তোমাকে আর এত কষ্ট সহ্য করতে হবেনা। আমরাই সারাদিন ওকে কোলেপিঠে করে রাখবো। সাদিয়া বেগমকে জড়ি ধরে সুখে অশ্রু কনাগুলো ফেলতে থাকে ফারিয়া।
-“আরে বোকা মেয়ে কেউ এমন কান্না করে। তারপর সাদিয়া বেগম চোখের পানি মুছিয়ে দিতে লাগে। তারপর ফারিয়াকে ধরে নিয়ে যায় সবার সাথে নাস্তা করার জন্য। ফারিয়াকে মনে মনে বলছে,হে আমার সৃষ্টিকর্তা তোমার কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি আমার নিজের মায়ের মতো একটা মা পেয়েছি আর নীলের মতো একটা সৎ জীবনসঙ্গী পেয়েছি। তোমার প্রতি হাজার হাজার শুকরিয়া। আমাদের মেয়েদের জীবনে সবথেকে বড় পাওয়া হচ্ছে, একজন ভালো মনের মতো শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি পাওয়া,যারা হবে নিজের মা বাবার মতো করে ছেলের বউকে দেখবে। আবার বউ হবে এমন,নিজের মায়ের মতো শ্বশুর শ্বাশুড়িকে দেখবে। সাদিয়া বেগম আগে ফারিয়াকে খেতে দেয়,তারপর নিজে সামান্য খায়। ফারিয়া যে এত ভালোবাসা আর নিতে পারছে না,তার কাছে সবকিছু কেমন যেনো স্বপ্ন মনে হতে লাগে। তবে এটা স্বপ্ন না।
‘সৃষ্টিকর্তা ফারিয়ার জীবন থেকে যা কেড়ে নিয়েছে তার থেকে উত্তম কিছু দিলো তা বুঝতে পারে। তখুনি ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে উঠে,,
চলবে কী.?#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_১৮
‘সৃষ্টিকর্তা ফারিয়ার জীবন থেকে যা কেড়ে নিয়েছে তার থেকে উত্তম কিছু দিলো তা বুঝতে পারে। তখুনি ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে উঠে,,ফারিয়া মা তুমি রেডি হয়ে নাও। ফারিয়াকে সাদিয়া বেগম বললো,আমার মেয়েকে আমি নিজ হাতে সাজিয়ে দিবো। তারপর সাদিয়া বেগম ফারিয়াকে নিয়ে যায় ফারিয়ার রুমে। তারপর ফারিয়া হাতে দুইটা সোনার রুলিবালা পড়িয়ে দেয়। প্রায় গোছানো শেষের দিকে৷ তারপর ফারিয়াকে নিজের সাথে নিয়ে আবার সবার মাঝে নিয়ে যায়।
ইমতিয়াজ চৌধুরী আমিন সাহেবের উদ্দেশ্য বলে,বেয়াই সাহেব আমরা আজ বরং উঠি। আমিন সাহেব বলে,এটা কোন কথার মতো কথা বললেন আপনারা.?
-‘তখুনি ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে,অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাদের। রাতের ভেতরে ফাইলগুলো রেডি করতে হবে। তাই সন্ধা নামার আগেই বাসায় ফিরতে হবে। আমিন সাহেব পরিস্থিতি বুঝতে পারলো, তাই আর জোরাজোরি করলো না। বিদায় নেওয়ার সময় ঘুনিয়ে আসলো। ফারির অহনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে,মা একদম কান্না করবে না,আমরা তো আছি তোমার পাশে। তুমি তো আমাদের মেয়ে। তাহলে কান্না করছো কেনো.? মা-বাবার জন্য যে ফারিয়ার ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে। যে মা-বাবা ফারিয়ার জন্য নিজের বাড়ি- ঘর ফেলে চলে এসেছে শহরে। সে বাবা-মাকে ছাড়া কেমন করে থাকবে ফারিয়া.? মেয়েদর জীবনটা যে সত্যি খুব বেশি অদ্ভুত। তাদের আসল বাড়ি তো স্বামীর বাড়ি। মা-বাবা সে যতই ভালোবাসুক না কেনো,তাকে নির্দিষ্ট সময়ের পর,যে সে বাড়ি চিরতরে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
-“তারপর আবারো আমিন সাহেবকে জড়িয়ে ধরে ফারিয়া। মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। মেয়ের জন্য তার চোখে টলমল করে পানি চলে আসে। মেয়েটা যে বড্ড বেশি অসহায়। আতিক নামক নরপশুর জন্য হয়তো আজ এমন দশা,তবে নীলের মতো একজন ছেলে তার জীবনে এসেছে এটার জন্য আমিন সাহেব ও ফারিয়া ভাগ্যবান। ফারিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার সাথে গাড়ি অবদি তার মা-বাবা নিয়ে যায়,তারপর তারা কান্না করতে করতে ইমতিয়াজ চৌধুরীর হাত ধরে বলে,আজকে থেকে আমার মেয়েকে দেখে রাখবেন,দয়াকরে কোন ভুলত্রুটি করলে মেয়েটাকে মাফ করে দিবেন। মেয়েটা যে বড্ড বেশি অসহায় বলেই অনবরত কান্না করতে থাকে আমিন সাহেব।
‘ইমতিয়াজ চৌধুরী বলে,আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। ফারিয়া আমাদের মেয়ে,তাই আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আর ভুলত্রুটি তো মানুষের জন্য, আর কখনো ভুল করলেও বাবা হিসাবে আমরা ওকে মাফ করে দিবো,একদম চিন্তা করবেন না। আমরা আছি সবসময় আপনাদের সাথে। কোন সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন,তারপর ফারিয়াকে গাড়ির ভেতরে তুলে নেয় নীল। ফারিয়া গ্লাস খুলে প্রানপ্রিয় মা-বাবাকে শেষবারের মতো দু নয়ন ভরে দেখে নেয়।তারপর ড্রাইভার গাড়ি স্টাট দেয়। একটু একটু করে ফারিয়া বাবার বাড়ির গন্তব্য হারিয়া নিজের স্বামীর বাড়ির গন্তব্যে পাড়ি দিতে থাকে। মা-বাবার কথা অনেক মনে পড়ে ফারিয়ার,দু চোখ বেয়ে অশ্রু কনাগুলো গড়িয়ে পড়ে। নীলের কাধে মাথা রেখে ফারিয়া কান্না করেই চলেছে। সাদিয়া বেগম বলে,ফারিয়া মা আর কান্না করোনা তো। বাসায় গিয়ে কল দিয়ে কথা বলিয়ে দিবো।
“এদিকে আমিন সাহেব আর অহনা বেগম বাসার ভেতরে গিয়ে মেয়ের জন্য মনমরা হয়ে বসে থাকে সোফায়। এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন মেয়েটা কাছে রয়েছে,কষ্ট তো হবেই। আমিন সাহেব অহনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,নীলের পরিবারের মতো মানুষ হয়না।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) আমাদের মেয়েকে কতটা ভালোবাসে তা তাদেরই আচারনে বুঝতে পারলাম। অহনা বেগম বলে,দেখো রেখো আমাদের মেয়েটা অনেক সুখে থাকবে নীলের পরিবারের কাছে। আমিন সাহেব সহমতে সায় জানালো।
-‘এদিকে দেখতে দেখতে চলে আসলো তাদের আসল গন্তব্যে। বাসার সামনে এসে গাড়িটা থাকলো,তারপর দারোয়ানকে বললো দরজা খুলে দিতে। ভেতরে ঢুকে গেলো গাড়ি। তারপর কয়েকজন সাজেন্ট এসে ফারিয়াকে শুভেচ্ছা জানালো। গাড়ি থেকে নামিয়ে সাদিয়া বেগম ফারিয়াকে নিয়ে যেতে লাগে দুইতলায়। সুন্দর পরিপাটি রুমটায় নিয়ে গেলো ফারিয়াকে, হাতে চাবিটা দিয়ে বললো,আজকে থেকে এই বাড়ির সবকিছু তোমার। আরে কি বলেন মা.? (লেখক_আহম্মেদ_নীল)আপনি থাকতে আমি পারবো না এত বড় দায়িত্ব নিতে। নাও বলছি। সাদিয়া বেগমের অনেক জোরজারির কারনে ফারিয়া চাবিটা নিতে একপ্রকার বাধ্য হলো। সাদিয়া বেগম বললো,বউমা তুমি এখানে বসো,আমি কাজের মেয়ে মিলিকে পাঠাচ্ছি তোমাকে সবকিছু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য।ফারিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। ফারিয়া রুমে বসে আছে এমন সময় নীলের আগমন ঘটলো। মে আই ক্যাম ইন ম্যাডাম.?মুচকি হাসি দিয়ে ফারিয়াকে বলে। ফারিয়া বলে,আপনার আবার অনুমতি লাগে নাকি.? ইয়েস ক্যাম ইন স্যার। তারপর নীল রুমের ভেতরে এসে ফারিয়ার পাশে এসে বসে।
-“তখুনি দরজায় টোকা মারে মিলি। নীল বিরক্তিকর হয়ে বলে কে। ভাইজান আমি মিলি, আপা আমাকে পাঠালো। নীল দরজা খুলে মিলিকে রুমে আসতে বলে। নীল ফারিয়াকে বলে,এটা আমাদের ছোট বোন মিলি। আমাদের বাসায়ি থাকে। তোমার কোন প্রয়োজন হলে তাকে ডেকে নিবে সাথে সাথে চলে আসবে। ফারিয়াকে সালাম দিলো মিলি। তারপর তার সাথে আলাপ করে নিলো। আজকে থেকে আমি কিন্তুু আপনাকে ভাবিজান বলে ডাকবো। ফারিয়া বললো,আচ্ছা বলেন সমস্যা নেই। আরে ভাবিজান আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন। হাজারো হলেও আমার ভাইজানের বউ।
‘নীল বলে মিলি মম তোকে কিসের জন্য পাঠিয়েছে তাই বল.? ভাইজান ভাবিকে সবকিছু চিনিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে। মিলি তোকে কষ্ট করা লাগবে না,আমি সবকিছু চিনিয়ে দিবো সমস্যা নেই। তারপর মিলি নীলের কথামতো চলে যায়। নীল আবার ফারিয়ার পাশে গিয়ে বলে,একদম কষ্ট পাবেনা। আমি অফিসের সময় টুকু বাদে তোমার সাথেই থাকবো। আর ওই সময়ে মম আর বাকিরা থাকবে। কোন সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে,লজ্জার কোনকিছু নেই আমার সাথে। ফারিয়া বলে আমার শাড়ি আর গহনা পড়ে কেমন কেমন লাগছে। নীল তাকে বলে সবকিছু পরিবর্তন করে নিতে সে বাইরে যাচ্ছে। তারপর ফারিয়া গহনাগুলো খুলে রেখে দেয়। একটু পর দরজা খুলে দেয়,আর একা একা হাটার জন্য চেষ্টা করে। নীল এসে বলে,এই এই তুমি কি করছো এসব.?
“আমি আবার কী করলাম.? এই যে একা একা হাটার চেষ্টা করছো। আর কখনো একা একা হাটার চেষ্টা করবে না,তোমাকে দেখাশোনার জন্য ৪ জন মানুষ রাখা হয়েছে। ফারিয়া রুমে ভেতরে দাড়িয়ে নীল বলে,আপনি আমাকে এত ভালোবাসেন কেনো,আমি আপনার এত ভালোবাসা যে নিতে পারছি না। তোমাকে ভালোবাসার কোন কারন নেই,আমার সবকিছু জুড়েই তো তুমি আছো। তোমাকে ঘিরেই তো আমার সকল স্বপ্ন। নীলের কথা শুনে ফারিয়া নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে প্রথমবারের মতো নীলকে জড়িয়ে ধরে। ফারিয়া খুব ভালো করে জানে যে, এটা তার নিরাপদ আশ্রয়। এই বুকটা যে তাকে আবার নতুন করে শান্তির আশ্রয় দিয়েছে।
-‘এই নীল ফারিয়াকে নিয়ে একটু বাইরে আসো তো। সাদিয়া বেগমের ডাকে ফারিয়া নীলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। তারপর নীলকে বলে চলুন আমাকে একটু ধরুন,মা ডাকছে আমাদের। ইস নীলের খুব রাগ হচ্ছে, মম আর ডাকার সময় পেলো না,রোমান্টিক মূহুর্তেই ডাকতে হলো। আর কয়েক মিনিট পর ডাকলে কি এমন ক্ষতি হতো.? শুধু শুধু রোমান্টিক সময়টা নষ্ট করে দিলো। দূর ভালো লাগেনা। কি এত ভাবছেন.? ফারিয়ার কথা নীলের সকল ভাবনার ঘোর কাটলো। তারপর ফারিয়াকে ধরে নিয়ে যায়,সাদিয়া বেগমের রুমে,যেখানে উপস্থিত ছিলো ইমতিয়াজ চৌধুরীও।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) অনেকক্ষণ গল্প করার পর,ফারিয়া বললো,আমি একটু হাটবো। সাদিয়া বেগম বলে আমি তোমাকে ধরছি,চলো তবে। আরে মা আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করা লাগবে না। আমি একাই হাটতে পারবো। তারপর ফারিয়া নিজে নিজে হাটতে থাকে। আর পিছনে পিছনে নীল যেতে থাকে। এই মেয়ে এত বেশি বুঝো কেনো তুমি.? এই সময়ে একা একা হাটা অনেকটা রিস্ক। হঠাৎ মাথা ঘুরে কিংবা অন্য কোন কারনে পড়ে গেলে বেবির তো সমস্যা হবে। আপনি আছেন তো আমাকে ধরার জন্য, নীলের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলে বলতে থাকে ফারিয়া।
‘ফারিয়ার হাতটা আলতো করে ধরে। চলুন না আমাকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে। মুখে একটু পানি দিবো। কেমন কেমন একটা লাগছে।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
_____________________
-‘নারগিস বেগমের রুমে রাতটা পার করে সামিয়া। সকাল হতেই সূর্যের আলো জানালা ভেদ কর আতিকের মুখের উপর পড়তেই,আতিক উঠে পড়ে। তারপর ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে বসে থাকে মনমরা হয়ে। এদিকে সকাল সকালে সামিয়া কোমড়ে ব্যাথা নিয়ে আতিক আর নারগিস বেগমের জন্য কফি তৈরি করে। প্রথমে নারগিস বেগমকে দিয়ে আতিককে দেওয়ার জন্য তার রুমে যায়। দেখে আতিক মনমরা হয়ে বসে আছে বেডে,আর ফোনটার স্কিনের দিকে তাকিয়ে। সামিয়া আসার শব্দ শুনে আতিক সামিয়ার কাছ বরাবর আসতেই আতিক মুখ তুলে তাকাতেই সামিয়ার চোখ পরে তার চোখের দিকে। আতিকের চোখগুলো রক্ত জবা ফুলের মতো লাল টকটকে হয়ে আছে,যা দেখে সামিয়ার হাত থেকে কফির কাফটা ফ্লোরে পড়ে যায়,তার অনেকটা অংশ ছিটকে আতিকের শরীরে পড়ে। আতিক রেগে বলে,তোমার কি চোখ নেই,অন্ধ নাকি.? নিজেকেই সামলাতে পাড়ে না আবার আমাকে কফি দিয়ে ভালোবাসা দেখাতে এসেছে। সরি বলে সামিয়া ভাঙা টুকরো গুলো তড়িঘড়ি করে তুলে নেয়। টুকরো গুলো তুলে নেওয়ার সময় গরম কফির পানি তার হাতটাতে ফুসকা করে ছাড়ে। সামিয়ার চোখর অশ্রু কনাগুলো অঝোরে পড়ে টুকরোগুলো তোলার সময়। স্বামীর এমন ব্যবহারে দিনেদিনে সামিয়া ভেতরেটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলছে,যা সে কাউকে বলতে পারছে না।
-“ফোসকা পড়া হাত নিয়ে সামিয়া ওগুলো ফেলে ওয়াশরুমের গিয়ে নিজের হাতে ঠান্ডা পানি দেয়,মুখচেপে কান্না করতে থাকে,যাতে তার কান্নার শব্দ কারো কান অবদি না পৌঁছায়। সামিয়া কত বড় ভুল করছে একটা সংসার ভেঙে, তা এখন হাড়েহাড়ে টের পারছে। আমাদের মানুষের নিতিই হচ্ছে এমন,,ভুল করার পর আমরা আমাদের ভুলগুলো ঠিকই বুঝি।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) কিন্তুু ভুলগুলো এমন সময়ে বুঝতে পারি,,সেই সময়ে ভুলগুলো হাজারো চেষ্টা করলেও তা আমরা শুধরাতে পারি না। আজ আতিকের পরিবারও সবাই সবার ভুলগুলো বুঝতে পারছে,,তবে তারা হাজারো চেষ্টা করলেও এখন,সেই ভুলগুলো আর শুধরাতে পারবে না।
‘সামিয়া ফুসকা পড়া হাতে পানি দিচ্ছিলো,এমন সময়,তার নাক থেকে আবার অনবরত রক্ত পড়তে থাকে। চোখে তার রাতের মতো আধার নেমে আসে। সবকিছু তার ঘোলা ঘোলা লাগে। নিজের শরীরের সবটুকু চেষ্টা দিয়েও সামিয়া নিজেকে দাড় কড়িয়ে রাখতে পাড়েনা। মা বলে ওয়াশরুমে আচড়ে পড়ে যায়। সামিয়া এমন চিল্লানো কন্ঠ শুনে নারগিস বেগম আর আতিক উঠে যায়।
“আতিক নারগিস বেগমের রুমে গিয়ে সামিয়াকে খুজতে থাকে। আর নারগিস বেগম যায় আতিকের রুমে। দুজন মুখোমুখি হয়ে বলতে লাগে,,,,
চলবে কী.?
(