“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৩)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৩)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
খাটের উপর তাকাতেই দেখলাম একটা শপিং ব্যাগ রাখা।। শপিং ব্যাগ দেখে প্রথমে অবাক হলাম।। ভাবছি এখানে কে শপিং ব্যাগ রাখলো!! কাছে গিয়ে শপিং ব্যাগটা হাতে নিয়ে দেখলাম ব্যাগে একটা নীল জামদানী শাড়ী আর অনেকগুলো নীল চুড়ি রাখা।। এবার অবাকটা একটু বেশিই হলাম।। কে রাখলো এগুলা আর কার জন্য।। হঠাৎ খেয়াল করলাম পাশে একটা কাগজ রাখা।। কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম এতে লেখা আছে—–

“শাড়ীটা পড়ে তাড়াতাড়ি ছাদে চলে আসো।।”

তার মানে এটা অর্ণবের কাজ।। উনি কেনো হঠাৎ আমার জন্য শাড়ী আনলেন আর শাড়ী পড়েই বা ছাদে যেতে বললেন কেনো!! সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।। আচ্ছা উনি কিভাবে জানলেন নীল কালার আমার ফেভারিট!!

এসব ভাবা বন্ধ করে রেডি হতে লাগলাম।। শাড়ী আর চুড়িগুলো পড়ে হালকা সেজে নিলাম।। সাজ বলতে শুধু লাল লিপ্সটিক আর চুলগুলো হাতখোপা করে নিলাম।। এইসব করতে করতে রাত বারোটার কাছাকাছি চলে গেলো সময়।।

এরপর তাড়াতাড়ি করে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।। ছাদে ঢুকতেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম।। ছাদটা পুরো বেলুন ফুল আর বিভিন্ন ধরনের লাইট দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে এইসব আর ছাদ কেনো এইভাবে সাজানো!! হঠাৎ চোখ পড়লো অর্ণবের দিকে উনি একটা নীল কালারের পাঞ্জাবী পরে দাড়িয়ে আছেন।।

আচ্ছা উনিও নীল পাঞ্জাবী পড়েছেন কেনো!! অবশ্য অনেক সুন্দর লাগছে উনাকে।। ফর্সা হওয়ায় আরো বেশি মানিয়েছে উনাকে পাঞ্জাবীটায়।। সবসময়ের মতো এখনো সিল্কি চুলগুলো কপালে পড়ে আছে।। আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো যে কেউ আমার জন্য নীল শাড়ী ও চুড়ি আনবে আর সেও আমার সাথে নীল পাঞ্জাবী পড়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।। কিন্তু উনি এসব জানলেন কি করে!! আমি তো এই কথা কখনো বলিনি উনাকে।। তবে!!

মিমকে দেখে অর্ণবের হার্টবিট কয়েকটা মিস হয়ে গেলো।। হা করে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে দেখছে মিমকে।।

মিমকে এতোটা সুন্দর লাগছে যা কখনো বলে বুঝানো যাবে না।। নীল শাড়ীতে যেনো নীল পরীর মতো লাগছে।। মনে হচ্ছে সাক্ষাত কোনো পরীকে দেখছি।। পুরো যেনো স্বর্গের অপ্সরীর মতো লাগছে।। হালকা সাজে আরো বেশি মানিয়েছে।।

আমাকে দেখে অর্ণব বলে উঠে

অর্ণবঃ ওখানে দাড়িয়ে আছো কেনো?? এখানে আসো।।

আমি উনার সামনে যেতেই উনি বলে উঠলেন

অর্ণবঃ Happy Birthday Mim. Many many happy returns of the day. Wishing you a day that is as special as you are. I hope you have a fantastic day and a fantastic year to come.

আমি উনার কথা শুনে পুরাই অবাক।। ভুলেই গিয়েছিলাম যে আজকে আমার বার্থডে।। উনার কথায় এখন মনে পড়লো।। উনি জানলেন কি করে আজকে আমার বার্থডে!! অনেক অবাক লাগছে সাথে অনেক খুশিও লাগছে যে উনি আমার বার্থডে পালন করছেন এতো সুন্দর এরেন্জমেনট করে।। আমি পুরা হা হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে আর মনে মনে অনেক খুশিও হচ্ছি।। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছো!! আসো কেক কাটবে।।

আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো কেক কাটার জন্য।। আমি কেক কাটার পর উনি আমাকে খাইয়ে দিলেন আর আমিও।। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে উনি এসব করেছেন আমার জন্য।। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম

অর্ণবঃ আপনি জানলেন কি করে আজকে আমার বার্থডে?? আর এসব আমার জন্য করেছেন!!

অর্ণব ভ্রু নাচিয়ে বললো

অর্ণবঃ বলা যাবে না কিভাবে জেনেছি।। আর এইসব তোমার জন্য সারপ্রাইজ ছিলো।।

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি উনি কি আসলেই এসব আমার জন্য করেছেন নাকি আমি কোনো ঘোরের মদ্ধে আছি।। আজকে অনেক খুশি লাগছে উনি আমার জন্য এতো কিছু করেছেন।।

হঠাৎ করে অর্ণব আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার চুলগুলো খুলে দিয়ে চুলে মুখ গুজলেন।। উনার এমন কাজে আমি তো শকড।। উনি কি করছেন এসব!! উনি বলতে লাগলেন

অর্ণবঃ জানো খোলা চুলে কতোটা ভালো লাগে তোমায়!! তোমার এই চুল আর মায়াভরা চোখ দেখে আমি প্রথম দিনই প্রেমে পরে যাই তোমার।। যা আমি কখনো নিজেও বুঝতে পারিনি।।

মীম তুমি খুব অবাক হচ্ছো তাইনা এসব দেখে?? অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক।। আজকে তোমাকে আমার মনের কথা বলবো।। যা এখনো বলা হয়ে উঠে নি।।
আমি জানি যে আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।। এক ঘরে, এক খাটে থাকা সত্ত্বেও আমি তোমাকে বুঝতে পারি নি।। আমি হিমু হয়ে রুপার জন্য অপেক্ষা করেছি অথচ রুপা যে আমার ঘরেই বর্ষার প্রথম কদম হয়ে ফুটে আছে সেটার খোঁজই কখনো রাখি নি।। যে মানুষটা আমাকে দূর থেকে ভালোবেসে সুখ পায়, কখনো কোনো দাবি করে না তাকেই কিনা আমি দূরে সরিয়ে রেখেছি এতদিন।।
আমি বারবার তোমার কাছে তোমার ভালোবাসার কথা জানতে চেয়েছি।। আর আমি এতটাই বোকা যে নিজেকে নিজেই চিনতে পারি নি।।

কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ অর্ণব আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে আমার হাত ধরে কান্না করতে শুরু করে।। আর বলতে থাকে—–

মিম তুমি কি এখন থেকে আমার রুপা হবে?? আমার কাছে থাকা বাকি চারটা পদ্ম ফুলের ভার নিবে?? আমার জন্য পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।। আমি না আসলেও রাগ করবে না।। আমি তোমার জন্য বর্ষার প্রথম কদম এনে দিবো।। তারপর একসাথে খালি পায়ে জ্যোৎস্না কুড়োতে যাবো।। বলো না মীম!! তুমি কি একটুখানি আমার হবে না!! বলো না মীম, তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না!!

অর্ণবের কথা শুনে মিমও অর্ণবের সামনে বসে কাঁদতে শুরু করে।।

মানব চরিত্র বেজায় জটিল।। তাকে আজ অবদি কেউ বুঝতে পারে নি।। পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে ভালোবাসার মানুষের চোখের পানি সহ্য করা।। কিন্তু সেটা যদি নিজের জন্য হয় তাহলে অদ্ভুত একটা ভালোলাগা কাজ করে।।

আমি অর্নবের মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম:

“”যদি ভালো না বাসো,
তবে আড়াল হয়ে যাবো।
দূর থেকে ভালোবাসার পরশ বুলাবো।
আর যদি ভালো বেসেই ফেলো,
তবে তোমাতেই মিশে রবো।
তোমার দুঃখটুকু নিয়ে,
আমার সুখ দিয়ে তোমার জীবন সাজাবো
কাছে হোক বা দূরে আমি তোমারই থেকে যাবো।””

কথাগুলো বলার পর অর্ণব আমাকে জড়িয়ে ধরলো।। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।। আমিও অর্ণবকে জড়িয়ে ধরলে ও আরও জোরে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।। মনে হচ্ছে আমাকে কেউ উনার কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে।। এই বুঝি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি হারিয়ে যাবো এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন।। আমিও বাধা দিলাম না আর।। আমিও তো এটাই চেয়েছিলাম উনি আমাকে মেনে নিবেন।।

অর্ণব আমাকে ছেড়ে দাড়িয়ে আমাকে দাড় করালেন।। এরপর উনি আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে আমার হাত ধরলেন।। উনি আমার হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং পরিয়ে দিয়ে বললেন——

মীম, আমি বলবো না যে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।। আমি তোমার জন্য সব করবো।।তুমি শুধু আমাকে অনুভব করে নিও।। আজ থেকে আমার প্রতিটি অনুভবে তুমি।

এই বলে অর্ণব আমার হাতটা উনার বুকের বা পাশে চেপে ধরলেন।।
আজ থেকে এইখানে শুধুমাত্র তুমি থাকবে।।শুধুমাত্র তুমি।।

উনার কথা শুনে শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আমার।। অর্ণব দাড়িয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমার কপালের সাথে উনার কপাল ঠেকালেন।।এবার উনার এমন কাজে অনেক লজ্জা লাগছে।।আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।।

হঠাৎ করে অর্ণব আমাকে কোলে তুলে নিলো আমি চোখ বড় বড় করে তাকালে উনি একটা চোখ টিপ দিয়ে ঘরে নিয়ে গেলেন।।

দুজনেই দুজনের মাঝে ডুবে গেলো।। এক ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলো দুজনেই।।
হোক না সময়টা অন্যরকম, শুধুই ভালেবাসার।।
·
·
·
চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here