#অবাধ্য_প্রেমের_গল্প (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
পূনরায় কলিং বেল-এর শব্দে কিছুটা কেঁপে উঠে আরশি। কারণ সে ভালোই জানে রিদ আসলে এখানে কোনো ঝামেলা বেধে যাবে নিশ্চিত।
আরিশা আপু এগিয়ে গেল দরজার দিকে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আরশি৷ পাত্র পক্ষের তারাও কথা থামিয়ে দরজার দিকে তাকালো। এর মাঝেই আরিশা আপুর গলা শুনতে পায় আরশি,
“আপনি কে? কাকে চাই?”
মাথা তুলে তাকালো আরশি। আরিশা আপু চিনতে পারেনি মানে রিদ আসেনি। তবে আড়চোখে ওদিকে তাকালো আগত ব্যাক্তিকে দেখার জন্য। আরো একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনতে পায়,
“আমি মাইশা। মিরাজ নামের কেউ কি এই বাসায় পাত্রি দেখতে এসেছে?”
আরিশা একবার ভেতরে থাকা ব্যাক্তিদের দিকে চোখে বুলিয়ে বলে,
“জ্বি, বাট আপনি তার কি হন?”
“তাহলে ভেতরে গিয়েই বলছি। সব বুজতে পারবেন।”
আরিশা আপুকে হাত দিয়ে সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল মেয়েটা। সবার সামনে গিয়ে মিরাজের দিকে চেয়ে বলে,
“এসব কি! আমার সাথে এতো বছর রিলেশন করে এখন বিয়ের জন্য অন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে?”
মিরাজ বসা থেকে উঠে বলে,
“মানে কি, কে আপনি? এখানে এসে এসব বলার সাহস পেলেন কোথায়?”
মেয়েটা বলে,
“কেন এখন আমাকে অচেনা লাগে? বিয়ে করার সাহস না থাকলে এতোবছর প্রেম করলে কেন? আমাকে বলোনি যে, তোমার বাবা মারা গেলে তখন বিজনেস সব তোমার হয়ে যাবে। এর পর আমাদের রিলেশনে আর কোনো বাধা থাকবে না। এখন সব ভুলে গেলে?”
মিরাজ কিছু বলতে যাবে তার আগই মিরাজের বাবা বলে,
“এসব কি মিরাজ? তুই আমার মৃত্যু কামনা করতি?”
মিরাজ বাবার দিকে চেয়ে বলে,
“বিশ্বাস করো বাবা, এসব মিথ্যা৷ এই মেয়েকে আমি চিনিও না।”
মেয়েটা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“আমি জানতাম তুমি এমনটাই বলবে। তাহলে আমাদের একসাথে সময় কাটানোর পিক গুলো সবাইকে দেখাই। তাহলেই সবাই বুঝবে তুমি আমাকে চেনো কি চেনো না।”
মেয়েটা ফোনের কয়েকটা পিক সবাইকে দেখিয়ে বলে,
“এই দেখুন, এটা আমাদের লং ড্রাইভে যাওয়ার ছবি। আর এটা যখন আমরা টুরে গিয়েছিলাম। আর এটা হলো, আমার এক খালাতো বোনের বিয়েতে। তাছাড়া আমাদের অনেক গুলো প্রাইভেট পিকচারও আছে। যদি আরো প্রমান চান, তাহলে সগুলোও দেখাবো।”
মিরাজের বাবা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে বলে,
“থাক, যা বুজার বুঝে গেছি আমি।”
সবাই মিরাজের দিকে তাকালো। আরশির বাবা বলে,
“এমন একটা ছেলেকে আমি আমার মেয়ের জন্য বেছে নিয়েছি ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
মাইশা কিছুটা কাদু ভাব নিয়ে বলে,
“আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট না করলেও পারতে মিরাজ।”
বলেই সোজা বের হয়ে গেল সেখান থেকে। আর এক মুহুর্তও দাড়ালো না। আরশির বাবা থমথমে গলায় আরিশার দিকে চেয়ে বলে,
“আরশিকে নিয়ে ভেতরে যা।”
তারপর মিরাজের বাবার দিকে চেয়ে বলে,
“এখানে আপনার আর কিছু বলার আছে?”
মিরাজের বাবা লজ্জিত ভাব নিয়ে বলে,
“আমি লজ্জিত আমার ছেলের জন্য। যদি অনুমতি দেন তো আমরা এখন আসছি।”
আরশির বাবা মুখে না বলে গম্ভির ভাবে মাথা নাড়িয়ে স্বম্মতি দিল।
মাইশা গেট পেড়িয়ে রাস্তার এক পাশ ধরে দ্রুত পায়ে হাটছে। কিছুটা দুরে গিয়ে একটা গাড়িতে উঠে গেল সে। রিদ পানির বোতলের শেষ অংশ টুকু খেয়ে নিল। টেনশনে একটু একটু পানি খেতে খেতে অলরেডি পুরো বোতল শেষ। শেষ পানি টুকু খেয়ে মাইশার দিকে চেয়ে বলে,
“কাজ হয়েছে?”
“হুম, একদম যেমনটা আপনি চেয়েছিলেন।”
“এডিট করা পিক গুলো তারা বুঝতে পারেনি তো?”
“আমি কোনো কাজে ধরা পরার মতো মেয়ে না।”
রিদ একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
“হুম তাই তো আপনাকেই কাজটা দিয়েছি। এই নিন শর্ত অনুযায়ি বিশ হাজারই আছে। আর হ্যা, কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবেন। মিরাজ নামের লোকটা অবশ্যই আপনাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।”
মাইশা একটু হেসে বলে,
“দশ মিনিট পর আমি আপনার সামনে এসে দাড়ালে আপনি নিজেই আমাকে চিনতে দশ মিনিট লাগবে। এই অভিজ্ঞতা আমার ভালোই আছে।”
,
,
“এমন একটা ছেলের কাছে তুমি আমার মেয়েটাকে তুলে দিতে চেয়েছিলে? আর বলেছিলে, এই ছেলে আমার ভাইয়ের ছেলের থেকে হাজার গুনে ভালো। এখন দেখাই যাচ্ছে কেমন ভালো।”
গরম তেলে পানি পরার মতো অবস্থা হলো আরশির বাবার। অনেকটা ক্ষিপ্ত হলেও প্রতি উত্তরে কিছু বললো না সে।
তাদের পারিবারিক ঝামেলাটা শুরু হয়েছিল একটা ব্যাবসায়িক ঝামেলাকে কেন্দ্র করে। এক সময় একই পরিবারের মতো ছিল তারা। তারা দুজন ছিল বিজনেস পার্টনার। ঐ ঝামেলার পর আলাদা হয়ে যায় তারা। এরপর আরশির বাবা আর কখনো ঐ বাড়িতে পা রাখেনি। যেতে দেয়নি আরশির মাকেও। দুজন পুরুষ মানুষের রাগকে কেন্দ্র করে এখন দুই পরিবারই আলাদা হয়ে আছে।
বেলকনিতে গিয়ে রিদকে কল করে আরশি। যেন খবরটা জানানোর জন্য আর অপেক্ষাই করতে পারছিল না সে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই আরশি বলে উঠে,
“সম্মন্ধ ভেঙে গেছে।”
রিদ ওপাশ থেকে স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“আচ্ছা তাই নাকি, কিভাবে!”
আরশি খুশি মনে বলে,
“সে এক অসাধারণ কাহিনি। পাত্র পক্ষ এসেছিল, বাবা কথাবার্তা বলছিল, সব ঠিকটাকই চলছিল। এর মাঝেই হুট করে একটা মেয়ে এসে ভিলেনের মতো এন্ট্রি নিল। মেয়েটা চিল, ঐ ছেলেটার প্রেমিকা। তারপর কি একটা সিন ছিল ওটা। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল, মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু সবার সামনে দেখে পারিনি।”
“আচ্ছা।”
রিদকে এমন স্বাভাবিক থাকতে দেখে আরশি অবাক হয়ে বলে,
“আপনি কি একটুও অবাক হন নি?”
“হুম হয়েছি তো। এতোটাই অবাক হয়েছি যে, খুশিতে ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি। তাই কিছু বলতেও পারছি না।”
আরশি একটু হেসে দিয়ে বলে,
“এখন আপাতত আমি নিশ্চিন্ত। এমন একটা ঘটনার পর মনে হয় না বাবা আর সহজে আমার জন্য পাত্র নিয়ে আসবে। এবার পাত্র খুঁজতে হলেও ভালো মতো খোঁজ নিয়ে তারপর আনবে। সো, আপাততঃ আর প্যারা নেই।”
“আচ্ছা, তাহলে দেখা করো।”
“কিভাবে! আমার বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ।”
“কালকে আরিশা আপুর সাথে তার বাসায় চলে আসো। তারপর ওখান থেকে বের হবো আমরা। তাহলে আর কেউ সন্দেহ করবে না।”
“শয়তানি বুদ্ধি গুলো যেন সব সময় আপনার মাথায় সেভ করা থাকে। সময় বুঝে একটা একটা বের করেন।”
“আজ তোমাকে একদম টিয়া পাখির মতো লাগছে।”
“কিভাবে?”
“টিয়া পাখির মতোই বকবক করে যাচ্ছো।”
“আর আপনাকে আমার অদ্ভুত লাগছে।”
“কেন?”
“সারা জীবন তুই তুই বলে এখন হুট করে তুমি বলে সম্বোধন করছেন।”
“আমার বৌকে আমি তুই, তুমি, আপনি যা ইচ্ছে তাই বলবো, তোমার সমস্যা কি?”
“কোনো সমস্যা নেই তো।”
“তাহলে কি শুনতে খারাপ লাগছে?”
“না, অদ্ভুত লাগছে। আপনার মতোই অদ্ভুত।”
,
,
গতকাল থেকেই আরশির মনটা একদম ফুরফুরে। দেখে মনেই হচ্ছে না এই কয়েকদিন এতটা চাপ নিয়ে ছিল। যেন মুহুর্তেই বসন্ত নেমে এলো। আরিশা আপুর সাথে যাওয়ার কথা বললে অমত করেনি তারা। আরিশার দুই দিন থাকার কথা হলেও পরদিন সকালেই আরশিকে নিয়ে চলে যায় সে।
দুপুরে খাবারে তাদের সাথে রিদও ছিল সেখানে। রিদ খেতে খেতে বলে,
“জানো আপু, তোমার হাতের রান্না খাওয়ার সময় আমি একটা কথা ভাবি। তোমার হাতে কি এমন জাদু আছে, যার জাদুকরি প্রভাব রান্নাতেও ছড়িয়ে পরে।”
আরিশা আপু খেতে খেতে বলে,
“যদি কখনো শুনি, তুই পাম দেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে এ্যাওয়ার্ড পেয়েছিস, তাহলে আমি একটুও অবাক হবো না। এখন কিছু বলতে চাইলে সরাসরি বলে সে।”
“বিকেলে আরশিকে নিয়ে বাইরে যাবো। যদি বাসা থেকে ফোন দেয় তাহলে বলবে যে আরশি তোমার সাথেই আছে। এতটুকু হেল্প করলেই হবে।”
“সব সময় তোদের দুজনের দালালি করে আমার লাভ টা কি? আমি কি পাবো?”
“আচ্ছা কি চাও বলো।”
“রাতের খাবার রান্না করব না, ফেরার সময় পার্সেল করে নিয়ে আসিস।”
“অন্য কিছু চাইলেও পারতে, এটা তো আমি এমনিতেই নিয়ে আসতাম।”
“আচ্ছা তাহলে সাথে অন্য কিছু বলি।”
“চান্স একটাই ছিল। হিহিহি।”
,
,
ফুল জিনিসটা বরাবরই পছন্দ আরশির। একটা খুল দোকানের সামনে আসতেই মনে পরলো তা। গাড়ি থামিয়ে আরশিকে নিয়ে সেই দোকানের সামনে দাড়ায় রিদ। তাজা ফুল গুলোর থেকে সুন্দর কয়েকটা ফুল আরশির চুলে আটকে দিল তা। কয়েকটা তাজা গোলাপ তার হাতে দিয়ে দোকানদারকে দাম পরিশোধ করে দিল। আরশির দিকে একবার ভালো মতো চেয়ে নিল সে। মুখ দিয়ে অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে তার। এসব যেন ক্ষনিকের পাগলামো। অথচ এই পাগলামোতে মেতে একবারের জন্যও খেয়াল করেনি কিছুটা দুর থেকে রিদের বাবা গাড়ির কাচ নামিয়ে গম্ভির হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
To be continue…………….