অবাধ্য প্রেমের গল্প পর্ব -০৩

#অবাধ্য_প্রেমের_গল্প (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আড়াল থেকে নিজের বিয়ের কথা শুনেই বুকটা কেঁপে উঠল আরশির। একটা মেয়ে ম্যারিড হওয়ার স্বত্তেও অন্য বিয়ের কথা চলছে। এটা কোনো ভাবেই স্বাভাবিক কোনো বিষয় না। বুকটা ধুকপুক করছে আরশির। কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না তার। এই মুহুর্তে সব স্বীকার করাটা আগুনে ঘি ঢালার মতোই।
এমনটাও তো নয় যে খুব বেশি সময় আছে। আজকেই পাত্র পক্ষ চলে আসবে, সময় কই? তারা যদি পাত্রি পছন্দ করে ফেলে? বাবাও যদি বিয়ের বিষয়ে এগিয়ে যায়? তাহলে ঝামেলাটা আরো জটিল হয়ে দাড়াবে।
মাথার ভেতর সব যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আরশির। ইচ্ছে করছে বাবার সামনে গিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে, দু’চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে দিতে,
“বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আপনি তাদের নিষেধ করে দিন। কারণ আমি অলরেডি ম্যারিড। গতকাল আমি আর রিদ ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছি। আমি এখন অন্যজনের বিবাহিত স্ত্রী। আপনি এই বিয়ের কথাবার্তা বন্ধ করুন।”
এক নিশ্বাসে এমনটা বলে, অতঃপর একটা ঝড়ের অপেক্ষায় চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তার। তারপর যা হওয়ার হোক। কিন্তু এমন সাহস তার কোনো কালেই ছিলো না। তেমন করে এখনও নেই।

চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে থাকতে কলিং ব্যাল এর শব্দ শুনতে পায়। মা-বাবা কথা বলার মুহুর্তে মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বাইরে আরিশা আপু দাড়িয়ে। মাকে দেখে একটু হসে জড়িয়ে ধরে অতঃপর ভেতরে এসে বাবাকে সালাম দিল সে। আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে আরিশা আপুকে দেখে একটু আশার আলো জেগে উঠলো আরশির ভেতর। না চাইতেও যেন একটু স্বস্তি অনুভব হয় তার।

“গতকাল রাতে তোমাদের জামাই হুট করে অফিসের কাজে তিন দিনের জন্য চট্টগ্রাম চলে গেছে। ভাবলাম সময়টা এই সুজুগে তোমাদের সাথে কাটিয়ে যাই। সবাইকে মিস করছিলাম খুব।”
আরিশার কথায় মা একটু মুচকি হেসে বলে,
“ভালো করেছিস মা। তাছাড়া তুই একদম সুন্দর একটা সময়েই এসেছিস।”
“কেন মা, বিশেষ কোনো কিছু নাকি?”
“মাত্র তোর বাবার সাথে একটা বিষয়ে কথা হচ্ছিল। বিকেল বেলায় আরশিকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ।”
মুহুর্তেই আরিশা চমকে বলে উঠে,
“আরশিকে দেখতে আসবে মানে!”
তাকে এতটাই আশ্চর্য দেখালো, বাবা-মা দুজনই অবাক হলো কিছুটা। তা লক্ষ করে মুহুর্তেই আরিশা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“মানে আরশির বিয়ের বিষয়ে কথা হচ্ছে অথচ আমি কিছুই জানিনা! ছেলে কি করে? দেখতে কেমন?”
মা এবার একটু হাসি মুখে ফোনটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এটা ছেলে। নাম মিরাজ। নিজেদের বিজনেস আছে। ছেলেও নাকি খুব ভদ্র।”
ছেলের সম্পর্কে আরো নানান কথা শুনে, জোরপূর্বক একটা হাসি দেয় আরিশা। ফোনটা মায়ের হাতে দিয়ে বলে,
“আরশি কোথায়?”
“তার রুমেই আছে। যা তোরা কথা বল, আমি নাস্তা রেডি করছি।”

কথা না বাড়িয়ে আরিশাও চুপচাপ চলে গেলো সেদিকে। আরশির রুমে ঢুকেই দেখে মেঝেতে পা ছাড়িয়ে বিছানার এক পাশে বসে আছে সে। আরিশা দরজা লাগিয়ে তার পাশে গিয়ে বসল।
“এগুলো কি শুনছি? একটা বিষয়ের সমাধান না করতেই আরেকটা সমস্যা এসে হাজির।”
আরশি শান্ত ভাবে বলে,
“সবই তো শুনলে। এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“রিদ কি জানে এটা?”
“জানাই নি। গতকল থেকে আর কথা হয়নি। এখন ফোন বন্ধ করে রেখেছি।”
“পা’গল নাকি তুই?”
“তো কি করব? এক ঝামেলার মাঝে তাকে এখন এসব বলি, আর সে এখানে এসে আরেকটা ঝামেলা বাধিয়ে দিক। তাকে আমি ভালো করেই চিনি, এসব বললে এখানে এসে উল্টা আরো ঝামেলা বাড়িয়ে বসবে।”

সকালটা পার হলো দুঃশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে। আরশি দুপুরের দিকে ফোন অন করে দেখে রিদের ৩ টা ম্যাসেজ।
‘ফোন অফ কেন?’
‘বলেছি না, বিষণ্নতা তোমার একদম মানায় না।’
‘আমি থাকতে তোমার এতো দুঃশ্চিতা কিসের?’
এখনো অনলাইনে আছে। রিপ্লাই কি দিবে বুঝতে পারছে না সে। ভাবতে ভাবতে রিপ্লাই দিল,
‘কিছু না, ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই ফোন বন্ধ করে রেখেছি।’
রিদ সিন করে আর রিপ্লাই দেয়নি। এর মাঝেই কল আসলো আরশির ফোনে। কি বলবে তা ভেবে কিছুটা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করল সে।
“তুমি কি কোনো কারণে খুব বেশি আপসেট?”
“উহু।”
“মিথ্যা বলবে না একদম।”
নিরব রইল আরশি। এর মাঝে ওপাশ থেকে রিদ পুনরায় বলে,
“ছেলেটাকে তুমি চেন?”
কিছুটা চমকে উঠলো আরশি। বুঝতেই পারছে রিদ সব জেনে গেছে। তাই নরম স্বরে বলে,
“উহু, বাবার পরিচিত।”
“আমাকে বলোনি কেন এসব?”
“খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই আপনাকে বলতে সাহস পাইনি।”
“তাহলে নিজে থেকেই সব সিদ্ধান্ত নাও। আমার আর প্রয়োজন কি?”
“স্যরি।”
“এক কাজ করো, একবারে ঐ ছেলেটাকে বিয়ে করে তারপর এভাবে বলবে, স্যরি। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“এখন কি করব আমি?”
রিদ এবার কিছুটা শান্ত ভাবে বলে,
“তোমার বাবা যা বলে, তাই করবে। নরমালি একটা মেয়ে যা করে তাই। এর আগে আমাকে আর ফোন দিবে না।”
“কিন্তু,,,,,,”
লাইন কেটে গেল। দুঃশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেল আরশির। এবার আবার নতুন করে ভুল বুঝাবুঝির একটা ঝামেলা এসে যোগ হলো না তো? যেন সব ঝামেলা তার জন্যই তৈরি হয়ে আছে। তারা একটু পর পর মিষ্টি করে বলে, মে আই কামিং ম্যাম?

বিকেল হয়ে এলো। আরশির দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে আরো বেশি। এবার কি হবে তা ভেবেই কুল পাচ্ছে না। একবার ভাবছে, খুব বাজে ভাবে সেজেগুলো পাত্রের সামনে যাবে। যেন পাত্র তাকে দেখেই রিজেক্ট করে দেয়। কিন্তু বাবার ভয়ে তাও পারছে না।
সবার খুব ব্যস্ততা। কাজের মেয়েটা সব কিছু মুছে গোছগাছ করে রেখেছে। বাবা ফিরে এসেছে সেই দুপুরেই। তাই পরিবেশও একদম নিরব। সব সময় এমনটাই হয়। বাবা বাসায় থাকলে সব কিছু নিরবই থাকে।
আরিশা আপুকে ডেকে বাবা গম্ভীর ভাবে বলল, আরশিকে সুন্দর মতো রেডি করে রাখতে। বাবার কথা মতো আরিশাও চুপচাপ চলে গেল সেখান থেকে। মায়ের কাছে গিয়ে বাবা গম্ভির ভাবে বলে,
“সব ঠিকঠাক আছে তো?”
“হ্যা, সবই রেডি।”
“ভালো, তাদের সম্মানের যেন ত্রুটি যেন না হয়।”
বলেই বাবা বাইরের দিকে গেল। তারা আসতে দেড়ি করছে কেন তা দেখতে।

দেখতে দেখতে মেহমানরাও চলে এসেছে। ফর্সা একটা ছেলেও আছে সেখানে। হয়ত সেই পাত্র। পাত্রের ছবি দেখেনি আরশি। তবুও বুঝতে অসুবিধা হলো না। তার মন পড়ে আছে অন্য জায়গায়। বারংবার দোয়া করছে সবকিছু যেন ভালোই হয়। কোনো ভাবে এই বিয়ে ভেঙে গেলে সে চার রাকাত নফল নামাজ পড়বে।

সব ঠিকঠাকই চলছিল। এর মাঝে কলিং বেল বেজে উঠে। কথাবার্তা অফ হয়ে যায় সবার। আরশির বুকটা ধুক করে উঠলো। রিদ ভাই চলে এলো নাকি? সে কি এখন খুব বড়ো একটা ঝামেলা বাধিয়ে দিবে? ভাবতেই ভয়টা আরো গাঢ় ভাবে ঘিরে ধরলো তাকে। না জানি এবার নতুন করে আবার কোন ঝামেলা বাধতে চললো।

To be continue…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here