অবাধ্য প্রেমের গল্প পর্ব -০২

#অবাধ্য_প্রেমের_গল্প (পর্ব ২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদের সাথে দেখা করা ও লুকিয়ে বিয়ে করার বিষয় কোনোটাই আরিশা আপু জানে না। অথচ বাবার ভয়ে আরিশা আপুর সাথে দেখা করার কথা বলেছিল শুধু এই যাত্রায় রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। কে জানতো বাবা সত্যতা যাচাই করতে আরিশা আপুকে ফোন দিয়ে বসবে।
ভয়ে সারা শরির কাঁপছে আরশির। বুকের ভেতর করা ধুকপুক আওয়াজ যেন তার কান অব্দি পৌছে যাবে একটু পরই। হয়তো কিছুক্ষণ পরই বাড়িতে একটি বড়ো ঝড় শুরু হয়ে যাবে।
এই মুহুর্তে আরিশা আপুর ফোন যেন বিজি থাকে, ফোন যেন তার কাছে না থাকে, অথবা বন্ধ থাকে এই দোয়া করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নেই। আরশি দু’চোখ বন্ধ করে এমন কিছু হওয়ার জন্যই দোয়া করছে বারংবার। কিন্তু এমনটা কিছুই হলো না। একবার কল দিতেই রিসিভ করল আরিশা আপু। এবার আর ভালো কিছু হওয়ার আশা নেই।

ওপাশ থেকে সালাম দিল। বাবা সালামের উত্তর দিয়েই প্রশ্ন করে বসে,
“আরশি কি এতোক্ষণ তোর সাথে ছিল?”
আরশির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার উপক্রম। মনে হচ্ছে এখনই বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলে উঠবে, আমি খুব বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি বাবা।
কিন্তু এমন কিছুই করতে হলো না। ওপাশ থেকে আরিশা আপু শান্ত ভাবে বলে,
“জ্বি বাবা। আমি একটু শপিং-এ বের হয়েছিলাম বিকেলে। আপনাদের জামাই অফিসে ছিল তাই আরশিকে ফোন বললাম বিকেলে যেন আমার সাথে থাকে। কেন বাবা আরশির কিছু হয়েছে?”
বাবা কিছুটা নিশ্চুপ থেকে বলে,
“কিছু না, এটাই জানতে চেয়েছিলাম। যাওয়ার আগে বাসায় কাউকে বলে যায়নি। আচ্ছা এখন রাখছি। তোকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি।”
বলেই ফোন রেখে দিল বাবা। সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেল আরশির। কোনো ভাবেই এমন কিছুর আশা করেনি সে। এটা কিভাবে সম্ভব? আরিশা আপুর সাথে লাষ্ট বার দেখা হয়েছে মাস খানেক আগে। অথচ এই মুহুর্তে আপু কত সুন্দরেই মিথ্যা একটা কাহিনী সাজিয়ে ফেলল। আবার তা আরশির বলা কথার সাথেই মিল রেখে। কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।

এর মাঝে মা এসে বাবার দিকে চেয়ে বলে,
“অজথাই মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহার করলে তুমি। আমার মেয়েদের আমি চিনি না? কখনো কি বাবা মায়ের অবাধ্য হয়েছে তারা?”
বাবা কিছুটা নিশ্চুপ থেকে পরক্ষণে বলে,
“তাকে নিয়ে ভেতরে যাও। এমন কিছু হলে মা মেয়ে দুজনকেই এর মাশুল দিতে হতো। একটা মেয়েক দেখে রাখতে পারো না।”
আরশিকে নিয়ে চুপচাপ ভেতরে চলে গেলো মা। রুমে এসে বলে,
“বাসার বাইরে যাওয়ার আগে আমার বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করলি না?”
আরশি মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বলতে পারিনি তোমায়। আর তখন তুমি ঘরে ছিলে না। তাই বলতে পারিনি।”
“হুম বিকেলের দিকে একটু ছাদে বসেছিলাম গায়ে রোদ লাগাতে। তো দু’বোন আর কি কি করলি পুরো বিকেল? আসার সময় আরিশাকে নিয়ে এলি না কেন?”
আরশি মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“খুব ক্লান্ত লাগছে মা। বাবা আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে আসায়, আর এমন একটা কাহিনি ঘটে যাওয়ায় একটু বেশিই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।”
“আচ্ছা তোর জন্য নাস্তা রেডি করছি। ফ্রেশ হয়ে নে।”
বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল মা। খাটের এক পাশে বসে বড়ো বড়ো কয়েকটা শ্বাস নিল আরশি। যেন পৃথিবীকে নিশ্চিত আ’ঘাত করতে আশা একটা উল্কাপিণ্ড একটুর জন্য পাশ দিয়ে চলে গেল।
দ্রুত ফোন নিয়ে আরিশা আপুর নাম্বারে ফোন দেয় সে। আগের মতোই একবার কল হতেই ফোন রিসিভ করে আপু। প্রথমেই উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
“কি হয়েছে বাসায়, আর বাবাকে এমন উত্তেজিত মনে হচ্ছিল কেন?”
আরশি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে,
” রিদ ভা,,, মানে ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
“হুম বাবা যখন তোর কথা জিজ্ঞেস করলো তখনই বুঝেছিলাম, এমন কিছুই হয়েছে। আর বাচার জন্য আমার নাম বলেছিলি।”
“হুম। কিন্তু তুমি মিথ্যে বললে কেন?”
“মিথ্যে না বললে যে আমার বোনটা বিপদে পড়তো। তাই এমনটা বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে।”
“ছোট থেকে তুমি কখনোই আমাকে কষ্ট পেতে দাও নি। কিন্তু এবার বাবা সত্যি টা জেনে গেলে তখন তুমিও বাবার কাছে অপরাধী হয়ে যাবে আপু।”
“বাবা এটা কিভাবে জানবে? আর কি এমন হয়েছে বলতো। তুই তো জানিসই রিদের পরিবারকে বাবা কতটা অপছন্দ করে। সেই সুবাদে রিদকেও বাবার পছন্দ না। আর রিদের পরিবারও এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তা জেনেও কেন তোরা এখনো একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখছিস?”
“আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না আপু। ছোট বেলা থেকে তাকে ভেবেই বড়ো হয়েছি।”
আরিশা আপু একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
“তোদের শেষ টা কেমন হবে তা আমি এখনও বুঝতে পারছি না।”
আরশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে থেকে মুহুর্তেই কাঁন্না করে দিল। অপর পাশ থেকে আরিশা কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
“কি হলো কাঁদছিস কেন!”
“আপু আমরা,,,,,”
“তোরা কি!”
“আমরা হয়তো খুব বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি আপু।”
আরিশা আপু এবার অনেকটাই উত্তেজিত ভাবে বলে,
“কি করেছিস তোরা?”
“আমরা,,,,,,, আমরা কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি আপু।”
“কিহ্,,,!”
“হুম আপু, আজকে বিকেলে। তার দুই বন্ধু, আমরা দুজন আর তুমি আরা এই পাঁচজন জানি শুধু।”
“এমন একটা বিষয় অন্তত আমাকে জানাতে পারতি।”
“হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত। তাই তোমাকে বলতে পারিনি। আমার এখন খুব ভয় হচ্ছে আপু।
“তোরা দুজনই পাগল। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিতে গেলি? এমনিতেই দুই পরিবারের মাঝে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হয়ে আছে। এখন তোরা আবার আরেকটা জড়িয়ে ফেললি।”
আরশি হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠে বলে,
“আমি এখন কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না আপু। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে মরে গেলেই আর কোনো সমস্যা থাকতো না।”
“এমন অজথা বকলে চ’র দিব একটা।”
“আমি কি করব আপু? বাবা এমনিতেও আমার আর ওর বিষয়টা নিয়ে অনেক ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।”
“আপাতত সবই গোপন রাখ। পরিস্থিতি আগে কিছুটা শান্ত হোক। এখন এসব বলার উপযুক্ত সময় নয়। আমি দেখছি কি করা যায়। এখন শান্ত হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নে। আপাতত বাসায় কাউকে এই বিষয়ে বলবি না। আমি রিদের সাথে কথা বলবো। সমস্যা যেহেতু আছে, অবশ্যই এর সমাধানও আছে। এখন বিশ্রাম নে, দুঃশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।”
“আচ্ছা।”

ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে চলে গেল রিদ। মা তার জন্য চা বানাতে ব্যস্ত। রিদ শান্ত ভাবে বলে। সকালে ও সন্ধায় তোমার হাতের চায়ের মতো মতো প্রশান্তি আমাকে কোনো কিছুই দেয় না মা। মনে হয়, তোমার হাতের চাই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেষ্ট।
মা কিছুটা হেসে বলে,
“পাম দেওয়ারও একটা লিমিট থাকে।”
“সত্যি বলছি মা। তোমার হাতের হাতের চা সব থেকে বেষ্ট। তবে আরশি থাকলে তোমাকে আর কষ্ট করতে হতো না। সে আমার সাথে তোমার জন্যও বানিয়ে আনতো। ভাবো তো, আমি আর তুমি বসে বসে গল্প করছি। এমন সময় আরশি সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। তারপর সে এক কাপ চা তোমার হাতে তুলে দিল। আর তুমি পায়ের উপর তা তুলে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললে, তোমার হাতে সত্যিই জাদু আছে মা। তাহলে কেমন হতো বলো তো।”
মা এবার রিদের দিকে বরাবর তাকিয়ে বলে,
“তারপর তোর বাপ এসে আমাদের তিনজনকেই চায়ের কাপে ডুবিয়ে মা’রতো। আর এমনটা কখনোই হবে না। আর তা বুঝার জন্য তুই এতটাও অবুঝ না।”
“বাবা যতই একরোখা হোক। আমার লাইফে আরশি ছাড়া আর কোনো মেয়ে আসবে না। তোমাদের এই ফ্যামিলি প্রব্লেম কখনোই আমাদের জীবনের বাধা হতে পারবে না মা। হয়তো সব সেক্রিফাইজ করে দুই পরিবার আবার আগের মতো হয়ে যাবে। নয়তো আমাদের দুজনকেই চিরতরে হারিয়ে ফেলবে। বাচার রাস্তা, নয়তো ম’রে যাওয়ার রাস্তা, যে কোনো একটা দুজন এক সাথেই পাড়ি দিব আমরা। আর তা তোমাদের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করবে।”
মনে জমে থাকা আক্ষেপ বিরতিহীন ভাবে বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো রিদ। মা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছেলের চলে যাওয়ার দিকে। রিদ যে ছোট বেলা থেকেই ঘাড়ত্যারা এটা তার অজানা নয়। সে কোনো কিছু চাইলে তা পেয়েই ছেড়েছে। তবে এবারের বিষয়টা খুব বেশিই জটিল।

পরদিন সকালে চায়ের কাপে চুমুক দেয় আরশির বাবা। চায়ের কাপটা সামনে রেখে আরশির মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“আজ দুপুরেই বাসায় ফিরব আমি। বিকেলে বাসায় কিছু মেহমান আসবে আরশিকে দেখতে। তাকে সব কিছু বুঝিয়ে তৈরি করে রাখবে।”
পাশ থেকে আরশির মা শান্ত ভাবে বলে,
“হুট করে এমন সিদ্ধান্ত, আরশির মত নেওয়াটাও তো দরকার তাই না?”
মায়ের এমন কথায় অনেকটাই কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো বাবা। কঠিন গলায় বলে,
“আমার সিদ্ধান্ত কি সিদ্ধান্ত নয়? আমাদের প্রয়োজন একজন ভালো ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেওয়া। এখানে তার সিদ্ধান্তটা কি, তা আমার ভালো করেই জানা আছে। যা বলেছি, চুপচাপ তাই করবে। দ্বিতীয় কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।”

ড্রয়িং রুমে বাবা-মায়ের সবটা কথাই শুনেছে আরশি। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। বিপদ আসলে সব দিক থেকেই একই তালে আসে।
তার কষ্ট গুলো সবার আড়ালেই। দরজার সাথে হেলান দিয়ে চোখ দুটু বুজে রইল সে। কিভাবে রক্ষা পাবে সে? আদৌ এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে তো?

To be continue………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here