অবাধ্য প্রেমের গল্প পর্ব -০৬ ও শেষ

#অবাধ্য_প্রেমের_গল্প (অন্তিম)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

গালে হাত দিয়ে বাবার দিকে তাকালো আরশি। বাবার রক্তিম চোখ দেখে পূনরায় মাথা নিচু করে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে সে। বাবা আরিশার দিকে চেয়ে বলে,
“তোকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি। আর শেষে কিনা এভাবে বাবার বিশ্বাসের মূল্য রাখলি?”
আরিশা চুপ করে দাড়িয়ে আছে এক পাশে।
বাবা নিশ্চুপ হয়ে উত্তপ্ত ভঙ্গিতে কয়েকটা শ্বাস নিলো। এর মাঝে মাও এসে প্রবেশ করল ঘরে। মাকে দেখে কিছুটা সাহস পেলো আরিশা। বাবার দিকে চেয়ে বলে,
“হয়তো তোমার জায়গা থেকে তুমি ঠিক বাবা। নিজের জেদের খাঁচা পরিবারের উপরও দিয়ে রেখেছো তুমি। অন্তত আরশির দিকে একবার তাকাও। তার জীবন নিয়ে তার মতের একটুও মূল্য নেই তোমার কাছে?”
বাবা এবার রক্তিম চোখে আরিশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়। আরিশা মাথা নিচু করে নিল। নিচু থাকা অবস্থায় বলে,
“তারা বিয়ে করে নিয়েছে বাবা। তোমার যদি এতোই রাগ থেকে থাকে, তাহলে আমাদের দুজনকে এখনই মেরে ফেলো। মৃত কবর দাও।তবুও অন্ততঃ কাউকে জিবিত কবর দিবে না বাবা। তুমি তো এমন ছিলে না। সামান্য একটু কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে কেন দুটি জীবন নষ্ট করে দিতে চাইছো? এর আগে তুমি নিজেই তো ছোট বেলা থেকে তাদের দুজনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলে।”
আরশির বাবার রাগ হলেও এসব কোনোটাই মিথ্যা নয়। তাদের বিয়ে ছোট থেকেই পারিবারিক ভাবে ঠিক করে রাখা হয়েছিল। শুধু সম্পর্কের ফাটল ধরে ঐ ঝামেলাকে কেন্দ্র করেই।
,
,
২ বছর পর।
সেদিন বাবা চলে গিয়েছিল গম্ভির মুখে। তার মেয়ে তাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। কিছুটা হার্ট করেছিল তাকে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েকদিন পর মেনে নিয়েছে সব। রিদও তাকে নিয়ে গিয়েছিল তার বাসায়। সব ঠিকঠাক থাকলেও বাবা বিয়ের পরের এই দুই বছর এক বারের জন্যও এই বাড়িতে আসেনি।
লোকটা খুব বেশিই অভিমানি। বাসায় ফোন দিয়ে বাবার সাথে কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে চলতো বাবা। যা খুব বেশিই কষ্ট দিত আরশিকে। কষ্ট হতো খুব। চাপা কষ্ট। তবে এই কষ্ট দুর করার ছোট একটা শান্তনা ছিল তার। এই বাড়িতে তার আরো দুইটা বাবা মা আছে। তারা কখনো তাকে অবহেলা করেনি।

আজ তার জীবনে দুইটা খুশি ধরা দিয়েছে একসাথে। বিকেলে তাকে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছিল। রিদ সারাক্ষণ তার পাশে বসে ছিল। প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি অনুভব করছে আরশি। রিদ তার এক হাত মুঠো করে ধরে রেখে কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,
“আর একটু সহ্য করো। জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়টা দেখতে পাবে। আর ভয় পাবেনা একদম। এই যে আমি তোমার পাশেই আছি।”

আরশির জীবনে সবচেয়ে আনন্দের একটা দিন আজ। যখন দেখলো, বাবা সব অভিমান ভুলে আজ তার নাতিকে কোলে তুলে নিয়েছে। নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়ে তার হাস্যজ্জল মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তবে বাবা এখনো আরশির সাথে কোনো কথা বলেনি। বাবার মুখে কিছু শোনার জন্য চতক পাখির মতো চেয়ে আছে সে। তখনও বাবা তাকে উদ্দেশ্য করে কিছুই বলেনি।

যখন তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। বিয়ের পর এই প্রথম বাবা তার নাতিকে কোলে নিয়ে এই বাড়িতে পা রেখেছে। আরশির জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্ত হয়তো এটাই।
এতো বছর পর দুই পরিবার এক হওয়াটা খুব কাছ থেকেই দেখছে সবাই। এক সময় ভেবেছিল এই দিনটা আর কখনো আসবে না।
বাবুকে কোলে নিয়ে বাবা তার পাশে এসে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই চোখ বন্ধ করে নেয় আরশি। এই মুহুর্তে বাবাকে কি বলা উচিত, কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে।
চোখ থেকে কিছু পানি গড়িয়ে পরতেই কেঁদে বলে উঠে,
“স্যরি বাবা। আমি তোমাকে হয়তো খুব বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
বাবা আজ গম্ভির নেই। মুখে মুচকি হাসিটা ধরে রেখেছে আজ। দুচক পুনরায় বন্ধ করে নেয় আরশি। সত্যিই আজ দিনটা সুন্দর একটা দিন।

খাবার নিয়ে আরশির পাশে এসে বসলো রিদ। খুব যত্ন করে আরশিকে খাইয়ে দিচ্ছে সে। তার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে,
“আজ খুব বেশিই হ্যাপি মনে হচ্ছে তোমাকে। যেন আকাশের হাস্যজ্জল চাঁদটা আমার সামনে এসে বসে আছে। আর তার পাশে একট ছোট্ট তারা।”
আরশি কিছুটা হেসে বলে,
“বাবার এমন হাসি মুখটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম অনেক দিন। তবে এতো তাড়াতাড়ি সব খুঁশি এসে একসাথে ধরা দিবে তা ভাবতে পারিনি।”
কিছুটা হাসলো রিদ। আরশি খেতে খেতে বলে,
“আপনি আজ কতটা খুশি।”
“পরিমাপ করার কোনো যন্ত্র থাকলে বলতে পারতাম। তবে সব কিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে আমার কাছে।”
“কি অদ্ভুত মনে হচ্ছে!”
“আমার সেই পিচ্চি আরশিটা এখন মা হয়ে গেছে। এটাই আমাকে ভাবাচ্ছে খুব।”
আচমকাই এমন কিছু শুনে হেসে উঠলো আরশি। সেই সাথে বিষমও উঠে গেল ক্ষনিকটা। রিদ তার মুখের সামনে পানি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“খাওয়ার সময় এমন করাটাও এক ধরণের বাচ্চামো।”
আরশি পূনরায় হাসলো। মনে হচ্ছে এই হাসি জনম জনম ধরে হেসে আসছে সে। তাদের এই অবাধ্য প্রেমের গল্পতে কষ্ট বলে কিছুই ছিল না। চারদিকে সবাই খুব হ্যাপি আজ। খুুব বেশিই মনে হচ্ছে।

~ সমাপ্ত।

~ গল্পটা শুরু করার পর অনেক ব্যাস্ততায় গিয়েছে সময়টা৷ সেই সাথে বেশি গ্যাপ দেওয়ায় গল্পটাও খাপছাড়া হয়ে গেছে। চাইলেও নিজের মতো করে লিখা হয়নি আর। তাই অল্পতেই ইতি টেনি দিলাম। হয়তো শেষ পর্ব দেওয়ার পর এই গল্পটা ডিলিটও করে দিতে পারি। পূনরায় আপনাদের মাঝে বড়ো কোনো গল্প নিয়ে রেগুলার হবো। এই গল্পটার জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। সব সময় যারা আমার পাশে থাকেন ভালোবাসা রইল সবার প্রতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here