অবেলায় তুমি পর্ব -১০

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১০)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ ঠিক করে যতো ঝড়ঝাপটা আসবে আসুক, কিন্তু তনুকে সে অন্য কারোর হতে দিবে না। যেভাবেই হোক তনুকে সে নিজের প্রিয়তমা বানিয়ে ছাড়বে। আকাশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তনুকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা সাজায়। এরপর একটা রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়ে। কিছু সময় পর আকাশ বাড়ি গিয়ে পৌঁছায়। বাড়ি পৌঁছে দরজার কলিংবেল চাপতেই আকাশের মা রহিমা বেগম দরজা খুলে দেয়। আকাশ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। রহিমা বেগম ছেলেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসতে দেখে জিজ্ঞাস করে,

–‘কিরে আকাশ তুই এই জলদি বাড়ি ফিরে আসলি? তুই না বলেছিলি তনুর সাথে কোথায় যেনো পার্টিতে যাবি। তাহলে এতো জলদি বাড়ি ফিরে আসলি যে? গিয়েছিস তো এক ঘন্টাও হয়নি। পার্টি কি শেষ হয়ে গিয়েছে নাকি?’

–‘না মা পার্টি শেষ হয়নি। আমি মাঝ পথেই চলে এসেছি।’

–‘ওমাহ কেন!’

–‘কারণ মা আমি একটা অঘটন ঘটিয়েছি।’

–‘অঘটন ঘটিয়েছিস মানে? কি করেছিস তুই?’

–‘মা আমি তনুর ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি। সকলের সামনে তনুর কথার বিরোধিতা করেছি।’

–‘তনুর কথার বিরোধিতা করেছিস মানে কি আকাশ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!’

–‘মা আমি তোমায় খুলে বলছি। তাহলে তুমি বুঝতে পারবে। আসলে মা আজ আমরা যেই পার্টিতে গিয়েছি সেখানে তনু নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আই মিন নিজের পছন্দের মানুষ সম্পর্কে সবাইকে জানানোর কথা ছিল। এবং সেই সঙ্গে তার পছন্দের মানুষটাকে সবার সাথে পরিচিয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের বিয়ের বিষয় নিয়েও এনাউন্সমেন্ট করার কথা ছিল। কিন্তু তনু হুট করেই আমাকে সবার সামনে নিজের প্রিয় মানুষ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। আর আমি সবার সামনে তনুর বিরোধিতা করে বলেছি আমি তার প্রিয় মানুষ না। যার কারণে তনুর অনেক অসম্মান হয়েছে। আর সে পার্টি থেকে চলে গিয়েছে।’

–‘আজব তুই এমনটা কেন করলি? সে তোকে নিজের প্রিয় মানুষ বলে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তোর তো আরো খুশি হওয়ার কথা। সেখানে তুই তাকে সবার সামনে অপমান করালি কেন?’

–‘মা আগে বাকি কথা টুকু শুনো। আমি তনুকে সাধে অপমান করিনি। আসলে সেই শুরু থেকেই আমি জানি তনুর একজন বয়ফ্রেন্ড আছে যার নাম সোহান। যাকে দেখলেই আমার গায়ে জ্বালাপোড়া করে। আর আজকের পার্টির মধ্যে সোহানের আসার কথা ছিল। আর তনু আমাকে নয় তাকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। যেটা শুনে আমার ভিতরটা খালি উথাল-পাতাল করছিল। সেই সঙ্গে চরম রাগ ও উঠছিল। তবে আমি নিজেকে কোনো রকমে সামলে রেখেছিলাম। কিন্তু কাহিনী ঘটে সোহান না আসায়। তনু কি করে সোহান না আসার কারণে হুট করেই আমাকে নিয়ে গিয়ে নিজের বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। যেটা দেখে আমার আরো প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। একে তো তার সাথে সোহানের সম্পর্ক রয়েছে। তার উপরে আজকে সোহানকেই সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোহান না আসায় আমাকে দিয়ে কাজ চালিয়েছে। তাই আমি রেগে গিয়ে সবাইকে বলে দিয়েছি তনুর বয়ফ্রেন্ড আমি নয় সোহান। যার কারণে তনুর চরম অপমান হতে হয়েছে। কিন্তু মা জানো এই কাজের কারণে পরবর্তীতে আমার নিজেকেই আফসোস করতে হয়েছে। কারণ আমি তখন ও জানতাম না আসল কাহিনী কি। পরবর্তীতে জানতে পারলাম সোহান তনুর বয়ফ্রেন্ড না। তনু সোহানের সাথে মিলে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের নাটক করে আমাকে কষ্ট দিতে চেয়েছে। তবে সত্যিকারত্বে সে আমায় এখনো ভালোবাসে। আর আজকের পার্টিতে সোহান নয় আমাকেই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছিল সে। মা বিশ্বাস করো তনুর মুখ থেকে সমস্ত সত্যি জানার পর আমি আফসোস করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’

–‘আকাশ তুই কাজটা একদম ঠিক করিস নি। মেয়েটা না হয় তোর উপরে অভিমান করে তোর থেকে প্রতিশোধ নিয়েছে। কিন্তু তুই তো তাকে ভরা মজলিসের সামনে লজ্জিত করেছিস। যেটা সত্যিই তোর উচিত হয়নি।’

–‘মা কি করবো বলো? আমি তো এতোসব জানতাম না! তার উপরে সোহানকে সবার সামনে পরিচয় দিবে তনু এটা নিয়ে আমার ভিতরে অনেক জেলাস হচ্ছিল। তাই রাগের মাথায় তনুর ইজ্জতে আঘাত করে বসেছি।’

–‘এখন কি করবি তুই? এমনিতেই মেয়েটা তোর উপরে অভিমান করে ছিল। তার উপরে আজকে যা করলি তাতে তো সে আরো দূরে সরে যাবে তোর থেকে।’

–‘মা হ্যাঁ আমি ভুল করেছি। তবে তাকে আমি আমার থেকে দূরে সরতে দিব না।’

–‘জানিনা কি ভাবে কি করবি! তবে মেয়েটাকে ভালোবাসা দিয়ে যে ভাবে হোক নিজের কাছে আগলে নে। না হয় কিন্তু সে যদি কোনো কারণে হারিয়ে যায়, তাহলে কিন্তু তোকেই কষ্ট পেতে হবে।’

–‘মা তুমি টেনশন করো না। আমি তনুকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে নিব।’

–‘আচ্ছা এবার গিয়ে কাপড় পাল্টে নে।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ নিজের মা’য়ের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। অপরদিকে তনুও আকাশকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। রুমের দরজা আঁটকে বসে আছে তনু্। মাথা ভর্তি রাগ উঠে আছে তনুর। আকাশ আজকে তনুকে সকলের সামনে যে ভাবে অপমান করেছে সেটা তনু কোনো ভাবেই ভুলতে পারছে না। আসাদ সাহেব এবং পার্টিতে উপস্থিত থাকা সকলের কাছে তনুর একটা সম্মান ছিল। কিন্তু আকাশ মুহূর্তেই মধ্যেই সেই সম্মানটা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। রাগে তনুর ইচ্ছে করছে নিজের মাথার সমস্ত চুল নিজেই টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। কারণ তার সম্মানহানি হওয়ার পিছনে আকাশে সাথে সাথে সে নিজেও দায়ী। সে যদি আকাশকে পার্টিতে নিয়ে না যেতো আর সবার সামনে আকাশকে তার বয়ফ্রেন্ড বলে পরিচয় না করাতো, তাহলে আজকে তাকে আর খারাপ সময়ের মধ্যে পড়তে হতো না। তিলে তিলে গড়া সম্মানে আজকে তার দাগ লেগেছে। তনু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সে আকাশকে কখনোই ক্ষমা করবে না। গত পাঁচ বছর আগের জন্য আকাশের উপরে তো প্রতিশোধ নিবেই, সেই সঙ্গে আজকের করা অপমানের জন্যেও সে আলাদা করে আকাশের উপরে প্রতিশোধ নিবে। আর প্রতিশোধটা সে যেমন-তেমন ভাবে নিবে না। সঠিক সময় মতন সে কড়া গন্ডায় আকাশের উপরে প্রতিশোধটা তুলবে। তনু সব কিছু সময়ের আওতায় ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সামলে নেয়। অযথা এখন ঐসব বিষয় নিয়ে ভেবে তনু আর মাথা নষ্ট করতে চাচ্ছে না। নিজেকে শান্ত করে রাতটা কাটিয়ে দেয়। পরেরদিন অফিসে গিয়ে চুপচাপ নিজের কেবিনে চলে যায় তনু। অন্যদিকে কেবিনে ঢুকার আগে এক নজর হলেও আকাশের দিকে তাকায়। কিন্তু আজকে আকাশের দিকে কোনো প্রকার না তাকিয়ে কেবিনে চলে যায়। আকাশ নিজের ডেস্কে বসে ছিল। তনু তার দিকে না তাকিয়ে কেবিনে ঢুকে যাওয়ায় বিষয়টা আকাশের কাছে কেমন যেনো লাগে। আকাশ সোজা ডেস্ক থেকে উঠে তনুর কেবিনে চায়। আকাশ তনুর কেবিনে যাওয়ায় তনু আকাশকে বলে,

–‘জ্বি বলুন কি কারণে কেবিনে এসেছেন?’

আকাশ তনুর মুখে আপনি ডাকটা শুনে চমকে উঠে। যেই তনু তাকে তুই ছাড়া কথাই বলতো না, সেই তনু এখন আকাশকে আপনি বলে সম্মোধন করছে। আকাশ আশ্চর্য হয়ে তনুকে প্রশ্ন করে,

–‘ম্যাডাম আপনি হটাৎ আমাকে আপনি করে ডাকছেন যে? আপনি তো আমাকে তুই ছাড়া কথাই বলতেন না।’

–‘সেই বিষয়ে আপনার না জানলেও চলবে।’

–‘ম্যাডাম না জানলে কখনোই চলবে না। আমার জানতেই হবে। আর আপনি আমাকে আপনি করে ডাকলে আমি আপনাকে তুমি করে ডাকবো।’

–‘সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আজ থেকে আপনাকে আমি আপনি বলেই ডাকবো।’

–‘তনু এটা কেমন কথা বলছো তুমি? আমি তোমার মুখ থেকে তুই বলে ডাক শুনতে অভ্যস্ত। কিন্তু এখন হুট করেই আপনি ডাকছো। আমার কাছে না বিষয়টা কেমন যেনো লাগছে!’

–‘আপনার কেমন লাগছে আর কেমন লাগছে না সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি এখন থেকে আপনি বলেই ডাকবো। আর আমি আপনাকে তুই বলে ডাকতাম অন্য কারণে।’

–‘অন্য কারণটা কি তনু?’

–‘কারণ হচ্ছে আপনাকে আমি পছন্দ করতাম। আপনার উপরে শত অভিমান দেখালেও মনে মনে আপনার জন্য ঠিকই ভালোবাসা ছিল। আর মানুষ মানুষকে কেন তুই বলে ডাকে সেটা আমি সঠিক বলতে পারবো না। হয়তো কেউ রাগ করে ডাকে। না হয়তো অন্য কোনো কারণ ও থাকতে পারে। তবে আমি যাদেরকে তুই বলে ডাকি, তাদেরকে মন থেকে ভালোবাসি বলে তুই বলে ডাকি। আমার তুই ডাকার পিছনেও ভালোবাসা থাকে। আর আপনাকে এতোদিন আমি তুই বলে ডাকতাম আপনাকে ভালোবাসি বলে। কিন্তু গতকালের পর আপনার উপর থেকে সমস্ত ভালোবাসা শেষ হয়ে গিয়েছে আমার। ভিতরে যে টুকু ভালোবাসা ছিল আপনার জন্য, সব উপড়ে বেরিয়ে গেছে আপনার গতকালের আচরণের কারণে। তাই আজ থেকে আপনাকে আমি আপনি বলেই ডাকবো। এবার বলুন কি কারণে এসেছেন কেবিনে?’

–‘তনু আসলে গতকালের জন্য আমি সরি।’

–‘আরেহ আকাশ সাহেব আপনি সরি বলছেন কেন? দোষটা তো আমি করেছি। গতকাল আপনাকে না নিয়ে গেলে এবং সবার সাথে ঐরকম ভাবে পরিচয় করিয়ে না দিলে কখনোই আমাকে ঐ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। তাই দোষ যা করার আমিই করেছি।’

–‘তনু প্লিজ অভিমান করো না। আসলে সোহানের বিষয়টা আমি মানতে পারছিলাম না। খুব জেলাসি হচ্ছিল নিজের ভিতরে এবং সেই সঙ্গে রাগ ও উঠেছিল তাই আসলে না বুঝে ঐরকমটা করে ফেলেছি। আর আমি ঐ সময় ভাবতেও পারিনি, যে আমার ঐরকম করার কারণে তোমার সম্মান নষ্ট হবে। রাগের মাথায় যা ভালো মনে হয়েছে তাই করে ফেলেছি। প্লিজ তুমি আর অভিমান করে থেকো না।’

–‘আকাশ সাহেব প্লিজ টপিক টা বাদ দিন। আর যা হয়েছে সেটা গতকাল চলে গিয়েছে। আমি আর এই টপিক নিয়ে কথা বলতে চাই না। আপনার আর কোনো কাজের কথা থাকলে সেটা বলুন। না হয় নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে থাকুন।’

তনু আকাশকে চলে যেতে বলে। কিন্তু আকাশ না গিয়ে উল্টো তনুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর তনুকে বলে,

–‘চেয়ার থেকে উঠো।’

–‘মানে কি?’

–‘মানে হলো চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াও।’

–‘আজব চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াবো কোন কারণে?’

–‘কারণ আমি তোমাকে দাঁড়াতে বলেছি। তাই তুমি উঠে দাঁড়াবে।’

তনু আকাশের কথা মতন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়৷ এরপর আকাশকে প্রশ্ন করে,

–‘হুম দাঁড়িয়েছি। এবার বলুন কি কারণে আপনি আমাকে দাঁড়াতে বলেছেন।’

আকাশ তনুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তনুর চেয়ারটা হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরায়৷ তারপর হুট করেই তনুকে বুকে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

–‘তনু আমি সত্যিই সরি। তনু আমি কখনোই চাইনি তোমাকে কষ্ট দিতে। কিন্তু যা হয়েছে তার জন্য আমি সত্যিই অনুতপ্ত। এবং ক্ষমাও চাচ্ছি তোমার থেকে। তনু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর এই যে নাও তোমাকে শক্তি করে জড়িয়ে ধরলাম। আগামীতে আর কখনো তোমাকে আমি কষ্ট দিব না। সব সময় এভাবে আগলে রাখবো। প্লিজ তুমি আমার উপরে আর অভিমান করে থেকো না।’

তনু খনিকের জন্য থমকে যায় আকাশের আচরণে। সেই সঙ্গে তনুর ভিতরেও কেমন যেনো এক ধরনের শিহরণ হচ্ছে। তনুর শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়ে গিয়েছে। তনু এক প্রকার আঁটকে গেছে আকাশের মায়াজালে। তবে কিছু সময় পর তনু নিজের মনকে সামলে নিয়ে আকাশকে বলে,

–‘ছাড়ুন আমায়। আপনার ভালোবাসা আর দরকার নেই আমার। আপনার কাছ থেকে এই জীবনে অপমান ছাড়া আর কিছুই পাইনি। পাঁচ বছর আগে না হয় যা করেছেন সেটা বাদ দিলাম। কিন্তু গতকাল যা করেছেন সেটার জন্য আমার মান-ইজ্জত ধুলোয় মিশে গেছে। এক চুটকিতেই সব শেষ করে দিয়েছেন আপনি৷ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজের একটা অবস্থান তৈরী করেছি। কিন্তু আপনি সব শেষ করে দিয়েছেন। আমার আর আপনাকে চাই না। ছাড়ুন আমায়।’

–‘তনুকে তোমাকে ছাড়ার উদ্দেশ্যে ধরিনি। আজীবন আগলে রাখার জন্য ধরেছি তোমাকে। তনু আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আগামীতে আর কখনো তোমার মান- সম্মানে আঘাত লাগে এমন কোনো কাজ আমি করবো না।’

–‘আগামীতে না হয় করবেন না। কিন্তু গতকাল যেটা করেছেন সেটার কি হবে? আসাদ সাহেবের কোম্পানি আর আমার কোম্পানি মিলে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। যার দরুন উনার সাথে আমার আরো বহুবার দেখা হবে। কিন্তু আমি আগামীতে আসাদ সাহেবের সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো বলতে পারেন?’

–‘না আমার জানা নেই আমার কি করা উচিত! তবে বিশ্বাস করো আমার তোমাকেই লাগবে। আর আমার তোমাকেই চাই।’

–‘কিন্তু আমার আপনাকে চাই না মানে চাই না। কাউকে প্রয়োজন নেই আমার। এবার ছাড়ুন আমায়।’

তনু আকাশকে ছেড়ে দিতে বলে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। তনু আকাশকে এখনো নিজের কাছে জিম্মি করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আকাশ তনুকে না ছাড়ায় তনু নিজেই এবার জোড়াজুড়ি করতে থাকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু তনু যতো ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে, আকাশ ততোই তনুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় হুট করে অফিসের ম্যানেজার খালেক সাহেব কোনো একটা কারণে তনুর কেবিনের দিকে আসে। খালেক সাহেব তনুর কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকার জন্য অনুমতি নিতে যাবে, তখনি সে দেখে আকাশ তনুকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে রেখেছে। খালেক সাহেব এই দৃশ্য দেখে অনুমতি ছাড়াই তনুর কেবিনের ভিতরে প্রবেশ করে দু’জনের কাছে চলে যায়। এরপর আকাশ থেকে তনুকে ছাড়িয়ে নিয়ে আকাশের কলার চেপে ধরে বলতে শুরু করে,

–‘এই বেয়াদব তোর কত্তো বড় সাহস তুই ম্যাডামের সাথে জোড়াজুড়ি করিস অশ্লীলতা করার জন্য? দাঁড়া তোর আজকে খবর আছে। এখন তোকে অফিসের সবার সামনে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে আবার অপমান করবো। তারপর কোষে একটা মা’ইর দিব। চল তুই আমার সাথে।’

ম্যানেজার আকাশের কলার ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক কদম সামনে পা ফেলতেই তনু সজোড়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–‘খালেক সাহেব এই মুহূর্তে ওর কলার থেকে হাত নামান। না হয় আপনার হাত আমি কব্জি থেকে কে’টে দু’টুকরো করে ফেলবো। আপনি কোন সাহসে ওর গায়ে ওর গায়ে হাত দিয়েছেন? এতো বড় আস্পর্ধা কি করে হয়েছে আপনার?

খালেক সাহেব পুরো থতমত খেয়ে যায় তনুর কথায়। তিনি তনুকে বাঁচাতে আসলো, কিন্তু তনু তাকেই উল্টো ঝাড়ি দিতে শুরু করেছে। খালেক সাহেবের মতন আকাশ ও থতমত খেয়ে যায় তনুর কথাবার্তা শুনে। কারণ সে তনুকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। তনুর তাকে এখন বাটাম দেওয়ার কথা। কিন্তু তনু তা না করে উল্টো অফিসের ম্যানেজার খালেক সাহেবকেই বকছে। খালেক সাহেব আর আকাশ দু’জনেই হতভম্ব হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। তনুর কথাবার্তা সব কিছুই কেমন যেনো তাদের মাথার উপর দিয়ে
যাচ্ছে…….

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here