#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_N_K_Orni
বৃষ্টি দরজা খুলে সামনে তার বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খুবই অবাক হয়। সে অবাক হয়ে বলে উঠল,
— বাবা তুমি? এতো সকালে কিভাবে এলে?
বৃষ্টির কথা শুনে রাদিব সাহেব হালকা হেসে বলে উঠল,
— এই তো তোর সাথে কিছু দরকার ছিল রে মা। তাই চলে এলাম।
— ওহহ ভেতরে এসো।
বলেই বৃষ্টি দরজার কাছ থেকে পিছিয়ে গেল। রাদিব সাহেব ভেতরে ঢুকলেন। বৃষ্টি দরজা লাগিয়ে দিল। তখনই মিসেস রায়া রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— কে এসেছে রে বৃষ্টি?
— তুমি এসেই দেখো ফুফি।
বৃষ্টির কথা শুনে মিসেস রায়া ওখানে এসে দেখে রাদিব সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। রাদিব সাহেবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস রায়া অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— ভাইয়া তুমি? তুমি এতো সকালে কিভাবে এলে?
— কাল রাতের দিকে রওনা দিয়েছিলাম।
— কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে? সকালেও তো আসতে পারতে। এসে কষ্ট করে রাতে আসা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি।
— না রে কিছু দরকার আছে বৃষ্টির সাথে। তাই আজকে আমি বৃষ্টিকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে চাই।
— আচ্ছা সেসব কথা পরে হবে। আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর ব্রেকফাস্ট করে নেও। তারপর ওসব কথা হবে।
মিসেস রায়া এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— বৃষ্টি মা যা তো তোর বাবাকে নিয়ে রুম যা।
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলল,
— হুম।
তারপর বৃষ্টি ওর বাবাকে নিয়ে ওর রুমে গেল। রাদিব সাহেব ফ্রেশ হয়ে এসে সবার সাথে ব্রেকফাস্ট করলেন। তারপর রুমে এসে বৃষ্টিকে বললেন,
— বৃষ্টি মা যা তো তাড়াতাড়ি তোর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নে আর তৈরি হয়ে নে। তুই আজকে আমার সাথে বাসায় যাচ্ছিস।
— কিন্তু বাবা হঠাৎ?
— আমার তোর সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ আছে। তাই তোকে আজকেই বাসায় যেতে হবে। পরে না হয় ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে কলেজের নোট নিয়ে নিস।
— বাবা তুমি ওই বিষয়ে চিন্তা করো না। কলেজ থেকে কিছু দিনের ছুটি দিয়েছে।
— ওহহ তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নেই। তুই তৈরি হয়ে জিনিসপত্র গুছিয়ে নে। আমি আসছি।
বলেই রাদিব সাহেব বেরিয়ে গেলেন। রাদিব সাহেব বের হতেই বৃষ্টি তার বাবার কথা মতো তৈরি হওয়ার জন্য দরজা লাগিয়ে দিল। এদিকে রাদিব সাহেব বের হতেই মিসেস রায়া ওনার কাছে এসে দাঁড়ালেন। তারপর রাদিব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— ভাইয়া তুমি আজই এলে। আর এখনই বৃষ্টিকে নিয়ে চলে যেতে চাইছ। এটা ঠিক না। আজকে থেকে যাও।
— না রে হবে না। আমার খুব তাড়া আছে।
— কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে বৃষ্টিকে নিয়ে যাচ্ছ যে?
— আমার ওর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। এই জন্য তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আমি ওকে যখন দিতে আসব তখন তোকে সবটা বলব। এখন আর ওই বিষয়ে প্রশ্ন করিস না।
— আচ্ছা।
বৃষ্টি তৈরি হয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিল। তারপর রাদিব সাহেবের কাছে গিয়ে বলে উঠল,
— বাবা আমি তৈরি।
বৃষ্টির কথা শুনে রাদিব সাহেব হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— ওহহ তুই তৈরি। তাহলে চল বেরিয়ে পরি।
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,
— হুম।
এরপর বৃষ্টি মিসেস রায়া আর আয়নার থেকে বিদায় নিয়ে রাদিব সাহেবের সাথে বেরিয়ে পড়ল। রায়হান সাহেব আর অভ্র বাসায় না থাকায় তাদের সাথে বৃষ্টির দেখা হলো না।
বিকালের দিকে বৃষ্টি আর রাদিব সাহেব বাসায় পৌছালো। রাদিব সাহেব দরজায় কলিং বেল দিতেই মিসেস সানিয়া এসে দরজা খুলে দিলেন। দরজায় রাদিব সাহেবের সাথে বৃষ্টিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিসেস সানিয়া অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। মিসেস সানিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাদিব সাহেব কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
— এভাবেই দরজার সামনে হা করে দাঁড়িয়ে থাকবে? নাকি আমাদের যেতেও দিবে?
রাদিব সাহেবের কথা শুনে মিসেস সানিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজার কাছ থেকে সরে দাঁড়ালেন। মিসেস সানিয়া সরে দাঁড়াতেই রাদিব সাহেব আর বৃষ্টি ভেতরে ঢুকল। বৃষ্টিকে ঢুকতে দেখে মিসেস সানিয়া ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে মনে মনে বলে উঠলেন,
— ওহহ তারমানে বৃষ্টিকে আনার জন্য কালকে এতো রাতে উনি বেরিয়ে গিয়ে ছিলেন। এবার বুঝেছি। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টিকে আনার মানে বুঝলাম না? জানি না ওনার মাথায় কি ঘুরছে?
বৃষ্টি তার রুমে চলে এলো। দরজা লাগিয়ে একপাশে ব্যাগটা রেখে রুমের চারিদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর রুমের উপরের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,
— কতোদিন পর নিজের রুমে এলাম। উফফ অনেক মিস করেছি আমার রুমটাকে। যতই সুন্দর রুমে থাকিনা কেন? নিজের রুমই বেস্ট।
— নাহহ পরে রুম দেখব। আগে যাই ফ্রেশ হয়ে আসি।
বলেই বৃষ্টি একটা ড্রেস নিয়ে রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে বৃষ্টি হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তারপর বলতে লাগল,
— কলেজ থেকে কিছুদিনের ছুটি দিল। ভাবলাম একটু ভালো করে ঘুমাব। কিন্তু তা আর হলো না। বাবা এসে আমার ঘুমে পানি ঢেলে দিয়ে গেল। কিন্তু কথা হচ্ছে বাবা হঠাৎ এভাবে আমাকে নিয়ে এলো কেন? কাহিনীটা কি?
বৃষ্টি একা একাই এসব বলছিল তখনই সে তার রুমের দরজায় নক করার আওয়াজ শুনল। রাদিব সাহেব দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠলেন,
— বৃষ্টি মা রুমে আছিস তো? দরজাটা খোল।
রাদিব সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। বৃষ্টি দরজা খুলে দিতেই রাদিব সাহেব ভেতরে প্রবেশ করলেন। তিনি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— বৃষ্টি মা ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলেছিস। এবার চল খেয়ে নিবি।
— হুম।
এরপর বৃষ্টি আর রাদিব সাহেব খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে রাদিব সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। বৃষ্টি তখনও খাচ্ছে। বৃষ্টি বরাবরই আস্তে আস্তে খায়। এরপর রাদিব সাহেব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— বৃষ্টি তোর খাওয়া শেষ হলে রুমে আসিস।
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলল,
— আচ্ছা।
রাদিব সাহেব রুমে চলে গেলেন। বৃষ্টি খাওয়া শেষ করে খাবার উঠিয়ে রাখল। তারপর রাদিব রুমের দিকে যেতে লাগল। তখন সে দেখল তার বাবার পাশের রুমে মিসেস সানিয়া ঘুমিয়ে আছেন। মিসেস সানিয়ার ঘুমানোর অবস্থা দেখে বৃষ্টি মুখ টিপে হাসল। তারপর তার বাবার রুমে চলে এলো। রাদিব সাহেব তার বিছানায় বসে ছিলেন। বৃষ্টি গিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
— বাবা আমি এসেছি। তুমি আমাকে কিছু বলার জন্য ডেকেছিলে। বল কি বলবে?
বৃষ্টির কথায় রাদিব সাহেব বৃষ্টির দিকে তাকালেন।
তিনি বললেন,
— বলছি।
বলেই রাদিব সাহেব উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর এসে তিনি বারান্দায় চলে গেলেন। বৃষ্টিও তার বাবার পিছুপিছু বারান্দায় চলে গেল। বারান্দায় থাকায় চেয়ারের মধ্যে রাদিব সাহেব একটা চেয়ার টেনে বসলেন। তিনি বৃষ্টিকেও বসতে বললেন। বৃষ্টিও বসল। রাদিব সাহেব বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— তুমি ওখানে গেছ অনেক দিন হয়ে গেছে। ওখানে গিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছ। নতুন করে সবকিছু শুরু করেছ। এদিকে আসিফ কিন্তু সায়েরার সাথে ভালোই আছে। ও আসলে কখনো তোমাকে ভালোই বাসেনি। যাইহোক ওর কথা বলতে চাই না। যে গেছে সে গেছে। তাকে নিয়ে ভাবার আর তার জন্য বসে থাকার কোনো মানে হয়না। তাই আমি তোমার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আসা করি তুমি তার কোনো আপত্তি করবে না?
রাদিব সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে উঠল,
— কি সিদ্ধান্ত বাবা?
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )