অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব -১২

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_১২
#লেখিকা_N_K_Orni

মিসেস সানিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে দেখেন একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। তার মাথায় হুডি দেওয়া সাথে মুখে কালো মাক্স পরা আর চোখে সানগ্লাস। মিসেস সানিয়া অবাক দৃষ্টিতে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই লোকটা গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

— মিস্টার রাদিব আহমেদ বাসায় আছেন?

লোকটার কথায় মিসেস সানিয়া কিছুটা নিচু স্বরে বলে উঠল,

— হ্যাঁ বাসায় আছেন। আপনি ভেতরে আসুন। আমি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি।

বলেই তিনি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন। লোকটা ভেতরে ঢুকল। মিসেস সানিয়া পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখলেন সোফা এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। তিনি তাড়াতাড়ি গিয়ে সোফা ঠিক করে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— আপনি বসুন। আমি এক্ষুনি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি।

মিসেস সানিয়ার কথা শুনে লোকটা গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

— তার কোনো দরকার নেই। আপনি বরং ওনার রুমটা একটু দেখিয়ে দিন। আমি নিজেই ওনার সাথে কথা বলে নেব।

মিসেস সাথে সাথে আপত্তি করে বলে উঠলেন,

— তা কি করে হয়? আপনি বরং ব…

মিসেস সানিয়া পুরোটা বলার আগেই লোকটা কিছুটা কঠোরভাবে বলে উঠল,

— আমি আপনাকে বললাম তো রুমটা দেখিয়ে দিন। আমার ওনার সাথে কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে।

লোকটার কথায় মিসেস সানিয়া কিছুটা ভয় পেলেন। তিনি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলেন,

— আচ্ছা চলুন।

তিনি লোকটাকে রাদিব সাহেবের রুমে নিয়ে গেলেন। লোকটা রাদিব সাহেবের রুমে ঢুকতেই রাদিব সাহেব দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,

— কে আপনি?

লোকটা এবার তার চোখের সানগ্লাস আর মুখের মাক্স খুলল। তাকে দেখে রাদিব সাহেব বলে উঠলেন,

— ওহহ আপনি। ভেতরে আসুন।

লোকটা ভেতরে চলে গেল। মিসেস সানিয়া পেছনে দাঁড়িয়ে থাকায় লোকটার মুখ দেখতে পেল না। লোকটা ভেতরে ঢুকে যেতেই রাদিব সাহেব গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। মিসেস রায়া রাদিব সাহেবের দরজা লাগানো দেখে অবাক হলেন। তিনি কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলেন। তিনি দরজা দিয়ে আবার সোফায় গিয়ে বসলেন। তিনি মনে মনে বলে উঠলেন,

— ওই লোকটার সাথে কি এমন কথা যে দরজাই বন্ধ করে দিতে হবে? কে জানে কি বিষয়ে কথা? আর ওই লোকটাও যেন কেমন? এই দুপুরের দিকে মাথায় হুডি দিছে সাথে মুখে মাক্স। চোখের সানগ্লাসটা না হয় মানা যায়। কিন্তু বাকি গুলো? লোকটার মনে হয় উগান্ডার প্রাণী সাজার ইচ্ছা?

তিনি এসব মনে মনে বলতে বলতে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে বিরবির করে বলে উঠলেন,

— আচ্ছা লোকটা কে? আর ওনার কাছেই বা তার কাজ? লোকটার চালচলনে কেমন যেন মাফিয়া মাফিয়া ভাব? কি গলা রে বাবা? আমি তো শুনেই ভয় পেয়েছিলাম। লোকটা মনে হয় মাফিয়া? আবার পুলিশও হতে পারে? কিন্তু তার এখানে কি কাজ? আমাকে ধরতে আসেনি তো? আরে আমাকে কেন ধরতে আসবে? আমি তো কিছুই করিনি? ধুরর খালি উল্টাপাল্টা ভাবছি। ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি বরং মন দিয়ে টিভি দেখি।

মিসেস সানিয়া টিভি দেখায় মনোযোগ দিলেন। অনেকক্ষণ পর তিনি দরজা খোলার আওয়াজ পেলেন।

— হয়তো লোকটা বের হয়েছে? ওনাদের কথা মনে হয় শেষ?

তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন প্রায় এক ঘন্টার বেশি হয়ে গেছে। তিনি মনে মনে বলে উঠলেন,

— এতোক্ষণ এই লোকটার সাথে কথা বললেন? আচ্ছা লোকটা গোয়েন্দা না তো? কিন্তু গোয়েন্দা এখানে কেন? আয় হায়।

তিনি এসব ভাবতে ভাবতে ওই লোকটা আর রাদিব সাহেবকে একসাথে আসতে দেখলেন। লোকটা এবার রাদিব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— তাহলে আজকে আমি আসি?

— সে কি এখনি চলে যাবে? বাসায় প্রথম বারের মতো এলে। অন্তত লান্সটা করে যাও।

— না আঙ্কেল অন্য একদিন। আজ আমি আসি।

বলেই লোকটা দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে গেলেন। মিসেস সানিয়া বাঁকা চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। লোকটা চলে গেলে রাদিব সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তিনি রুমের দিকে যেতে নিলেই মিসেস সানিয়া পথ আগলে দাঁড়ালেন। মিসেস লোকটা ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন,

— লোকটা কে ছিল?

রাদিব সাহেব কিছুটা বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলেন,

— সেটা তোমার না জানলেও চলবে।

বলে তিনি পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলেন। বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর থেকে রাদিব সাহেব কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। শুধুমাত্র অফিসে যাওয়ার জন্যই রুম থেকে বের হন। তাছাড়া খুব একটা তিনি রুম থেকে বের হন না। মিসেস সানিয়া এসব বিষয়ে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে আবারও আগের কাজে মনোযোগ দিলেন।

—————–

কলেজ থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল বৃষ্টি। প্রতিদিন সকালে কলেজে যেতে হয় তাকে। এই একই রুটিন রুটিনে সে কিছুটা বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিছু ঝামেলার কারণে কলেজে পনেরো দিনের ছুটি দিয়েছে। এটা ভেবেই তার ভিষণ আনন্দ হচ্ছে। কিছু দিনের জন্য কলেজে যাওয়ার ঝামেলা থাকবে না। এই কলেজে যাওয়ার জন্য তার ঠিকমতো ঘুম হয়না। বৃষ্টি পারলে সারাদিনই ঘুমিয়ে থাকতে পারে। তাই সে ভেবেছে এই পনেরো দিন ঘুমিয়ে কাটাবে। বৃষ্টি বিছানায় শুয়ে এসব ভাবছিল। তখনই মিসেস রায়া রুমে আসেন। তিনি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— কিরে বৃষ্টি শুয়ে আছিস যে? যা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়?

— না ফুপি আমি খাব না। খুব ঘুম পাচ্ছে।

বৃষ্টির কথা শুনে মিসেস রায়া বলে উঠলেন,

— এবার কিন্তু মারব। তুই বাইরের ড্রেসও বদলাস নি। যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। আগে খেয়ে নে। তারপর যতক্ষণ খুশি ঘুমাস। যা যা যা।

মিসেস রায়ার কথায় বৃষ্টি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে উঠে বসল। তারপর একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। বৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে চলে গেল। খেতে এসেই সাথে সাথে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর ঘুমের জগতে চলে গেল।

পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে বৃষ্টি আয়নার মুখ দেখতে পেল। আয়না তার দিকে হাস্যজ্বল মুখে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে বসল। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

— কি ব্যাপার আয়না? ডাকলে কেন? আমাকে একটু ঘুমাতেও দিবে না?

বৃষ্টির কথা শুনে আয়না বড় বড় চোখ করে তাকালো। তারপর অবাক হয়ে বলে উঠল,

— আপু তোমার মাথা কি নষ্ট হয়ে গেছে? তুই দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছ। তারপরও এই কথা বলছ।

— ওহহ মাত্র দুই ঘন্টা।

বৃষ্টির কথা শুনে পাশ থেকে কেউ একজন খিকখিক করে হেসে উঠল। বৃষ্টি পাশে তাকিয়ে দেখল অভ্র দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি চোখ মুখ কুচকে অভ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র এবার বলে উঠল,

— ভাবলাম তোদের দুজনকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাব। কিন্তু বৃষ্টি যেহেতু ঘুমাতে চায় তাই আমি বরং শুধু আয়ুকে নিয়েই যাই।

ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে বৃষ্টির মুখ উড়ে গেল। সে এক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর তাড়াতাড়ি করে বলে উঠল,

— না না আমি যাব।

— তাহলে তাড়াতাড়ি গিয়ে তৈরী হয়ে নে।

বৃষ্টি তাড়াতাড়ি একটা ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল। বৃষ্টির এই তাড়াহুড়ো দেখে অভ্র আর আয়না হেসে ফেলল।

পরদিন সকালে বৃষ্টির কলেজ না থাকায় সে মিসেস রায়াকে ব্রেকফাস্ট তৈরির কাজে সাহায্য করছিল। তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। মিসেস রায়া বলে উঠলেন,

— এতো সকালে কে এলো? বৃষ্টি তুই একটু গিয়ে দেখ তো মা।

— আচ্ছা।

বলেই বৃষ্টি চলে গেল দরজা খুলতে। বৃষ্টি দরজা খুলে দিল। সামনে তাকিয়ে সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে সে কিছুটা অবাক হয়ে গেল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর এতোদিন গল্প না দেওয়ার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here